তোমার_খোঁজে_এই_শহরে #পর্বঃ১১ #নবনী_নীলা

0
223

#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
#পর্বঃ১১
#নবনী_নীলা

“এই ফ্ল্যাটে আমার গার্লফ্রেন্ড থাকে, বুঝলেন?”
নিরব যদিও কথাটা ইয়াদকে সাবধান করার জন্যে বলেছে যাতে টয়াকে কেউ বিরক্ত না করে। এই ফ্ল্যাটের সবাইকে সে এই কথা বলে রেখেছে। তাই ইয়াদকেও বাদ দেয় নি।

ইয়াদের কথাটা শুনার সাথে সাথে ইচ্ছে করছে এক্ষুণি একটা চর মেরে ছেলেটাকে শিক্ষা দিয়ে দেয়। ইয়াদ নিজের রাগটা প্রকাশ করলো নীরবের সামনে সজোড়ে দরজা খুলে। ইয়াদের চোখ মুখ দেখে যে কেউ বুঝবে যে সে কতটা রেগে আছে।

নিরব আর কিছু বললো না কারণ তার এখন মনে হচ্ছে কথাটা বলা ঠিক হয়নি ভেবে চিন্তে বলা উচিৎ ছিলো। ইয়াদ দাতে দাত চিপে বললো,” আর কিছু ?”।
নিরব একটু হেসে না সূচক মাথা নেড়ে চলে গেলো।

ইয়াদ রুমে গিয়ে সোফায় গা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাগ সামলাচ্ছে। ছেলেটার এমন সাহস হয় কীভাবে? আর টয়া কেনইবা এই ছেলের সাথে ছিলো। এটা কি সেই ছেলেটা? ইয়াদের এই সব প্রশ্নের জবাব শুধু টয়াই দিতে পারবে। ইয়াদ উঠে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করলো কিন্তু রাগ কমছে না। ইয়াদ কিছু না ভেবেই রুম থেকে বেরিয়ে এলো।

তারপর টয়ার দরজার সামনে এসে বেল তার বাসার বেল বাজাতে লাগলো। টয়া গোসল সেরে বেরিয়েছে মাত্র, কলিংবেলের আওয়াজ শুনে সে ভেবেছে ঋতু এসেছে হয়তো। টয়া মাথা মুছতে মুছতে দরজা খুললো, খুলেই ইয়াদকে দেখে বিস্ময়ের সীমা রইল না।

এতো রাতে চাইছে টা কি? টয়া ভ্রু কুঁচকে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে রইল। টয়ার কিছু বুঝে উঠার আগেই ইয়াদ তাকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে চলে এলো।

টয়া বিস্ময় নিয়ে বললো,” আরে আরে! আপনি চাইছেন টা কি? ভিতরে যাচ্ছেন কেনো?”

ইয়াদ মহা বিরক্তি নিয়ে টয়ার দিকে তাকিয়ে একটা চেয়ারে বসলো। টয়া ইয়াদের আচরণ দেখে আরো রেগে গিয়ে বলল,” এ কেমন পাগলামি! একে তো অনুমতি ছাড়া ভিতরে এসেছেন আবার বিনা অনুমতিতে বসে পড়লেন।”

ইয়াদ রাগ সামলে সুন্দর করে হাসলো তারপর বললো,” তোমার বয়ফ্রেন্ড তো তোমাকে দেখে রাখতে বলে গেলো। তাই দেখতে এলাম ঠিক আছো কিনা?”

যদিও নিরব এমন কোনো কথা বলেনি কিন্তু টয়ার মুখ থেকে কথা বের করতে একটু চালাকি করেছে ইয়াদ। টয়ার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। এই বয়ফ্রেন্ড এলো কোথা থেকে? টয়া রেগে বলল,” আজেবাজে কথা বলবেন না।কিসের বয়ফ্রেন্ড? কোথাকার বয়ফ্রেন্ড? শুনুন আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই। এসব ট্রিক আমার সাথে করবেন না। এক্ষুনি বেরিয়ে যান বাসা থেকে।”

ইয়াদ তারপরও বললো,” নেই বললেই হলো নাকি? তোমার বয়ফ্রেন্ড নিজে আমাকে বলেছে।”

টয়ার রাগে গজগজ করছে। বলা নেই কয়া নেই কোথা থেকে আবার বয়ফ্রেন্ড উদয় হলো। আর রাতের বেলা এই লোকটা আবার সেই বয়ফ্রেন্ডের খোঁজ জানাতে এসেছে।

টয়া ভীষণ রেগে বলল,” কে সেই হতচ্ছাড়া? কে রটিয়েছে এসব?”

টয়ার কথায় ইয়াদ একগাল হাসলো তারপর বললো,” যে হতচ্ছাড়া তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিলো। সে নিজে বলেছে।”

টয়া অবাক হয়ে বললো,” নিরব বলেছে ?”

ইয়াদ মাথা নাড়িয়ে বললো,” ইডিয়েটটার নাম তাহলে নিরব!”

টয়া আরো রেগে বললো,” নিরব আমার খালাতো ভাই। ও এসব কেনো বলবে? আপনি ইচ্ছে করে এইসব বানিয়ে বলছেন।”

ইয়াদ চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে বললো,” ওই ইডিয়েটাকেই জিজ্ঞেস করো সে কি বলেছে।” বলতে বলতে ইয়াদ বেরিয়ে এলো। এভাবে ভিতরে যাওয়াটা তার উচিৎ হয় নি সে নিজেও বুঝতে পেরেছে।

টয়া চিন্তায় পড়ে গেলো, কথাগুলো টয়ার ঠিক হজম হচ্ছে না। ইয়াদ ফিরে এসে টয়ার মাথায় একটা টোকা দিয়ে বললো,” এসো দরজা বন্ধ করো।” টয়া হা করে তাকিয়ে আছে।
সে এতক্ষন ইয়াদকে নিজের রুমে বসিয়ে রেখেছে! তার উচিৎ ছিলো আরো আগে লোকটাকে বের করা। বাহ্ কি ভদ্রতার নমুনা জোর করে বাসায় ঢুকলো আবার নিজে নিজে চলে যাচ্ছে।

ইয়াদ দরজার সামনে এসে দাড়িয়ে গিয়ে বললো,”ইডিয়েটটার নাম যেনো কি?”

টয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,” আপনি কাকে ইডিয়েট বলছেন?”

ইয়াদ হাসো হাসো চেহারা করে বললো,” তুমি যাকে হতচ্ছাড়া বলেছিলে।”

” সে আমি বলতেই পারি, আপনি কেনো বলবেন? আর আমি আপনার সাথে এতো কথাই বা কেনো বলছি। আপনি প্লীজ যান।”

ইয়াদ মনে করে বললো,” ও হ্যা নিরব দেট ইডিয়েট । মনে পড়েছে।”

টয়া ইয়াদকে ঠেলে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। ইয়াদের এবার রাগ কমেছে, সে নিজের ফ্ল্যাটে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল। টয়া কিছুতেই বুঝতে পারছেনা নিরব এসব উল্টা পাল্টা কথা ইয়াদকে কেনো বলতে যাবে? নিরব যদি বলে থাকে তাহলে ওর বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে টয়া। আর এই ইয়াদ? এর কতো বড় সাহস হুট করে রুমে চলে এলো, যদিও ভদ্র ভাবে চলেও গেছে তাও সে আসবে কেনো? আমার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে এতো মাথা ব্যাথা কেনো উনার?

________________________

সকালে কলিং বেলের শব্দে ইয়াদের ঘুম ভাঙ্গলো এতো সকালে কে আসবে? ইয়াদ কোনো মতে চোখ খুলে উঠে এসে দরজা খুললো। দরজা খুলে ইয়াদ একটু চমকালো তার মা এত সকালে এখানে কি করছে? ইয়াদের মা ইয়াদকে সরিয়ে ভিতরে এসে সোফায় বসলো। ইয়াদ ঘুম ঘুম চোখে দরজা বন্ধ করলো। তার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না তার মা এখানে কেনো এসেছে।

ইয়াদের মা ঘাম মুছতে মুছতে বললেন,” বুঝলি ফজরের নামাজ পড়ে রওনা দিয়েছি তাই এতো তাড়াতাড়ি আসতে পেরেছি।”

ইয়াদ চুপ করে একপাশে বসে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে মায়ের কথা শুনছে। তারপর প্রশ্ন করলো,” মা বাবা কি করবে তুমি যে চলে এলে?”

ইয়াদের মা কটাক্ষ করে বললো,” কি করবে মানে? খেয়ে দেয়ে ঘুমাবে। সব রান্না করে বক্স ভরে ফ্রিজে রেখে এসেছি। আমি কয়েকদিন তোর কাছেই থাকবো বুঝলি।” ইয়াদ গালে হাত দিয়ে হা সূচক মাথা নাড়ল।

ইয়াদের মায়ের নাম মিলি আক্তার। তিনি ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,” বাপ বেটা হয়েছে একরকম।”

মায়ের কথায় ইয়াদ হাসলো তারপর উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে রেডি হয়ে ক্লিনিকে গেলো। যাবার আগে মাকে কোথাও বের হতে বারণ করেছে ইয়াদ কিন্তু কে শুনে কার কথা। মিলি আক্তার বের হয়ে কিছু কেনা কাটা করলেন। লিফটে উঠে টয়ার সাথে দেখা কেউ কাউকে চিনে না যদিও, তারপরও টয়া মিলি আক্তারকে সালাম দিলো। টয়া সাথে কথা বলে টয়াকে বেশ ভালোই লাগলো তার। কি মিষ্টি চেহারা!

টয়ার ওনার সাথে কথা বলতে ভালোই লাগছিলো কারন উনি অনেক আদর ভরা কণ্ঠে কথা বলে ঠিক তার বাবা যেভাবে বলে। লিফট থেকে বেড়িয়ে মিলি আক্তার যখন ইয়াদের দরজার লক খুলছিলেন সেটা দেখে টয়ার কেমন যেন লাগলো। টয়া তাকিয়ে রইলো।

মিলি আক্তার হাসতে হাসতে বললো,” এই ফ্ল্যাটে আমার ছেলে থাকে। এতো বদজ্জাত আর বলো না নিজের সুবিধা অসুবিধা কাউকে বলে না। আরে আমি মা আমাকে বল। আচ্ছা আমাকে বলতে মনে না চাইলে বিয়ে করিয়ে দেই বউকে বলিস সেটাও করতে রাজি না। এ কয়দিন কি খেয়েছে জানো? শুধু নুডুলস খেয়েছে। রান্নার কোনো জিনিস কেনার সময় পায়নি সে।” ইয়াদের মায়ের কথা শুনে কেমন জানি মায়া লাগছে টয়ার। মহিলাটা সব কথা কি অবলীলায় বলছে তাকে।

রাতে ইয়াদ বাসায় ফিরে মাকে না দেখে একটু চিন্তায় পড়ে গেলো। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর মিলি আক্তার বাসায় এলো। ইয়াদ এতোক্ষণে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে এলো।

তারপর রেগে বললো,” মা তোমাকে না আমি বারন করলাম বাসা থেকে বের হতে না।”

মিলি আক্তার বললো,” বাসা থেকে বের হবো না কোনো? আমি কি বুড়ি হয়ে গেছি যে বাসায় বসে থাকবো। ছেলের বিয়ে দেই নি, নতিনাতনির মুখ দেখিনি।”

ইয়াদ সরু চোখে বললো,”এবার বলো কোথায় গিয়েছিলে?”

” তোর সামনের ফ্ল্যাটের মেয়েটাকে কে দেখেছিস? কি মিষ্টি দেখতে!”

কথাটা বলতেই ইয়াদ চুপ করে থেকে, তারপর বললো,” হুম, তা কি হয়েছে?”

মিলি আক্তার সোফায় বসে বললো,” ওর কাছেই ছিলাম এতক্ষন। কি ভালো হাতের রান্না! আমাকে গরম মাংসের সঙ্গে পরোটা করে খাওয়ালো অসাধারন!” ইয়াদ নিজের মায়ের মুখে টয়ার প্রসংশা শুনে নিচের ঠোঁট চেপে হাসছে।

মিলি আক্তার ছেলেকে ব্যাঙ্গ করে বললো,” হাসবি না, একবার দেখলে বুঝতি। মেয়েটার নাম জানিস?” ইয়াদ দুইহাত বুকের কাছে ভাজ করে না সূচক মাথা নাড়ল। মায়ের কথা শুনতে বেশ মজাই লাগছে তার।

মিলি আক্তার বললো,” মেয়েটার নাম টয়া। নামটা মিষ্টি না! দেখবি ওর জামাই আদর ওকে টিয়া পাখি বলে ডাকবে।” ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। টিয়া পাখি নামটা তার মোটেও পছন্দ হয়নি। সে আর যাইহোক টিয়া পাখি বলে ডাকবে না।

মিলি আক্তার উঠে এসে বললো,” তোর সেই ঘড়িওয়ালিকে পেয়েছি? তোর ঘড়িওয়ালি কেমন দেখতে রে?”

ইয়াদ মায়ের কথায় হাসি থামিয়ে রাখতে পারলো না। মিলি আক্তার অবাক হয়ে বললো,” কিরে এভাবে হাসছিস যে?”

ইয়াদ হাসি থামিয়ে বললো,” যদি বলি তুমি তাকে চেনো?”

[ চলবে ]

#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122115225080106938&id=61553208165829&mibextid=2JQ9oc

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here