তোমার_খোঁজে_এই_শহরে #পর্বঃ২১ #নবনী_নীলা

0
206

#তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
#পর্বঃ২১
#নবনী_নীলা

“এসেছো নিজের ইচ্ছায় যাবে কি যাবে না কখন যাবে সেটা আমি ডিসাইড করবো।”,ইয়াদের কথা শুনে টয়া অগ্নি মূর্তি হয়ে তাকালো।

” আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন? আমার ভাল্লাগছে এসব। আমি বাসায় যাবো।”, অস্থির হয়ে বললো টয়া।

ইয়াদ খেতে নিবে এমন সময় জিজ্ঞেস করলো,” তুমি নিজের ডিনার শেষ করেছো? নাকি ওইসব ফেলেই এইখানে হাজির?”

ইয়াদের কথা শুনে টয়া বড়ো বড়ো চোখ করে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে রইলো। ইয়াদ মলিন চোখে তাকিয়ে থেকে বললো,” এভাবে তাকিয়ে থেকো না চোখ বের হয়ে আসবে। যা প্রশ্ন করেছি তার উত্তর দাও।” টয়া মুখ কালো করে বসে আছে। এইসবের উত্তর ফুত্তর সে দিতে ইচ্ছুক নয়।

এইদিকে টয়া না খেয়ে থাকলে ইয়াদ কি করে খাবে? এই মেয়ে যা জেদি না খেলে থাকবে তবু মুখে বলবে না। ইয়াদ চেয়ারটা টয়ার দিকে এগিয়ে নিয়ে আসতেই টয়া রাগী চোখে তাকালো, ইয়াদ সেটা গ্রাহ্য করলো না। ইয়াদ চামচে করে পাস্তা আবার টয়ার মুখের সামনে ধরে বললো,” নাও এটা শেষ করো।”

” আপনার আমার প্রতি এতো কেয়ার দেখাতে হবে না।”, রাগী চোখে তাকিয়ে বলল টয়া।

ইয়াদ না সূচক মাথা নেড়ে বললো,” কেয়ার কে দেখাচ্ছে? তুমি যে খাবারে উল্টা পাল্টা কিছু মিশাও নি তার কি কোনো গ্যারান্টি আছে ? তাই তুমি খেয়ে নিলে আমি নিশ্চিত হয়ে বাকিটা খেতে পারবো।” ইয়াদের মুখ থেকে এমন কিছু শুনবে টয়া ভাবেনি। সে হতবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,” আমি উল্টা পাল্টা কিছু মিশিয়েছি? এইজন্য বলে মানুষের উপকার করতে নেই। আপনি কি সবাইকে নিজের মতো মনে করেন। মানুষ এতো অকৃতজ্ঞ কিভাবে হয়?”, বাকিটা বলে শেষ করার আগেই ইয়াদ টয়ার মুখে দ্বিতীয় বারের মতন খাবারটা দিয়ে বললো,” এতো যে কথা বলো টায়ার্ড লাগে না?”

টয়া এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেনো পারে না এক্ষুনি ইয়াদকে কামড়ে দেয়। ইয়াদ চাইছে যতক্ষণ পারা যায় টয়াকে আটকে রাখে।

ইয়াদ খাবার শেষে নিজেই টেবিল গুছিয়ে নিচ্ছে। টয়া রেগে পুরো অ্যাটম বম হয়ে আছে। একেই বলে অতি চালকের গলায় দড়ি তারই বা দরকার কি ছিল এখানে আসার? এইবার জন্মের মত ফেসে গেছে। টয়ার ইচ্ছে করছে হাতুড়ি দিয়ে দরজাটা ভেঙে ফেলে। ইয়াদ প্রথমে ভেবেছিলো টয়াকে যেতে দিবে কিন্তু না এখন সে মত পাল্টেছে।

এর মাঝেই কলিং বেল বেজে উঠল টয়া দৌড়ে গিয়ে দরজার সামনে দাড়ালো। এবার কি করবে ইয়াদ দরজা তো তাকেই খুলতেই হবে ভেবেই উৎফুল্ল হয়ে গেলো টয়া। এই ফাঁকে টয়া কেটে পড়বে। ইয়াদ টয়ার হাব ভাব দেখে বুঝতে পারছে পালানোর জন্য টয়া প্রস্তুত কিন্তু এতো সহজে ইয়াদ তো ছাড়ছে না।

ইয়াদ দরজার ফাঁকে দেখলো বাহিরে রিতু দাড়িয়ে এবার তো দরজা খোলার প্রশ্নই উঠে না। ওই মেয়ে যদি সারারাত দাড়িয়ে থেকে বেল বজায় তাহলে থাকুক দাড়িয়ে। আজকে টয়াকে সে যেতে দিবে না।

ইয়াদ দরজা না খুলে দরজার সামনে থেকে চলে যেতেই টয়া চেঁচিয়ে বললো,” কি হলো আপনি দরজা না খুলে কোথায় যাচ্ছেন? আপনি দেখছি আসলেই একটা চেঙ্গিস খান। দরজাটা খুলে দিন। শুনতে পেয়েছেন? আমার ঘুম পেয়েছে আমি বাসায় যাবো।” বলেই দরজা নিয়ে ধাক্কা ধাক্কি শুরু করে টয়া।

ইয়াদ টয়ার দিকে ঘুরে তাকালো তারপর বললো,” ঘুম পেলে আমার রূমে গিয়ে শুয়ে পরো।”

টয়ার চেঁচামেচি করে কোনো লাভ নেই সেটা ইয়াদের কথায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। ইয়াদের চোখে মুখে বিরক্তির কোনো ছাপ নেই সে যেনো মজা পাচ্ছে।

” আমি কেনো আপনার রূমে ঘুমাবো? আমি তো বলেই দিয়েছি যে আমি আপনার সাথে থাকবো না। তাহলে জোর করেছেন কেনো? “,

এবার ইয়াদের একটু রাগ হলো টয়ার কথায়। ইয়াদ এগিয়ে আসতে আসতে বললো,”তোমার কথা কি আমাকে শুনতে হবে? শুনবো না আমি। কি করবে?”

টয়া খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে আজ তাকে এখানেই থাকতে হবে কিন্তু টয়া সেটা কক্ষনো হতে দিবে না।

” বলেছি তো থাকবো না “, বলেই টয়া পিছিয়ে যেতে লাগলো ইয়াদ অনেক কাছাকাছি চলে এসেছে।

টয়া দেওয়ালের সাথে লেগে দাড়িয়ে পড়তেই ইয়াদ দুপাশে হাত রেখে টয়ার দিকে ঝুঁকে আসলো। টয়ার হার্টবিট যেনো কেয়েকগুন বেড়ে গেছে। টয়া তাও রাগ দেখিয়ে বলতে যাবে তখন ইয়াদ ক্ষীণ গলায় বলল,” আমাকে এতো ভয় পাও কেনো? আমি কি তোমাকে খেয়ে ফেলবো?”

টয়া একটা ঢোক গিলে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,” এইসব বলে লাভ নেই।আমি থাকবো না। ”

ইয়াদ নিশব্দে টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে আর টয়া চোখ দেখছে। কি সেই রাগ ওই চোখ দুটোতে। ইয়াদ উঠে দাড়িয়ে গেলো তারপর টয়ার হাত ধরে বললো,” ঘুমাবে এসো।”

টয়া চিৎকার শুরু করতে লাগলো না না আমি যাবো না। ইয়াদ উপায় না পেয়ে টয়াকে কোলে তুলে নিলো। ইয়াদের হটাৎ এমন কাণ্ডে টয়া চোখ বন্ধ করে ইয়াদের জামার কলার খামচে ধরলো। ইয়াদ টয়াকে কোলে তুলে টয়ার দিকে ঝুকে বললো,” আর একটা চিৎকার দিলে তোমাকে কিন্তু আমি একদম ফেলে দিবো।”

টয়া দাতে দাঁত চিপে বললো,” আর আপনাকে বুঝি আমি ছেড়ে দিবো?”

ইয়াদ একটু হেসে বললো,” তুমি তো আমাকে ভয় পাও কি করবে?”

” আপনাকে ভয় পাওয়ার কি আছে? “, ইয়াদের কানের কাছে চেঁচিয়ে বললো টয়া।

” ভয় পাওয়ার কি আছে একটু পরই বুঝতে পারবে।”,বলে আড় চোঁখে তাকালো ইয়াদ।

টয়া একটা ঢোক গিলে বললো,” আমাকে নামান। আমি যাবো না।”

ইয়াদ টয়াকে নিজের রূমে নিয়ে এসে খাটের উপর বসিয়ে দিলো। তারপর দরজা আটকে দিতেই টয়া খাট থেকে নেমে দাড়িয়ে পড়লো। বুকের ভিতরটা যেনো কেমন করে উঠলো। ইয়াদ দরজা আটকে দিয়েছে কেনো টয়ার চোখ মুখে ভয়ের ছাপ চলে এসেছে। টয়া চেঁচিয়ে বললো,” একি আপনি দরজা বন্ধ করেছেন কেনো। দরজা খুলুন।”

ইয়াদ শার্টের বোতাম খুলে এগিয়ে আসতেই টয়ার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। টয়া ভয়ে পুরো শেষ হয়ে গেলো বুকের ভিতরটা কেমন জানি করছে।

ইয়াদ এগিয়ে আসতে আসতে পুরো শার্টটা খুলে ফেললো। টয়া একদম দেওয়ালে সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়লো। এবার বাঁচবে কিভাবে? টয়ার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। ঘনো ঘনো নিঃশ্বাস নিতে হচ্ছে। টয়া কিছু বলার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছে।

ইয়াদ কাছে এসে দাড়াতেই টয়া চোখ বন্ধ করে নিচের দিকে ঝুঁকে রইলো। কিছু বোঝার আগেই ইয়াদ টয়াকে কোলে তুলে নিলো। টয়া চোঁখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। ইয়াদ টয়ার কানের কাছে মুখ এনে বললো,” এবার ভয় পাচ্ছো বুঝি?”

টয়ার হাত ইয়াদের কাধে ছিলো এই কথা শুনে টয়া রাগ সামলাতে না পেরে ইয়াদের পিঠে জোড়ে এক খামচি বসিয়ে দিলো। ইয়াদ চোখ বন্ধ করে ফেললো খামচি দেওয়ার সাথে সাথে। ইয়াদ চোখ খুলে স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ টয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতেই টয়া ভয়ে জড়সড় অবস্থা।তারপর সরে গিয়ে বললো,” ভীতুর ডিম একটা।”,বলেই ইয়াদ হেসে ফেললো। ইয়াদ মোটেও চায় না তার ভালোবাসা টয়ার ভয়ের কারন হয়ে দাঁড়াক।

টয়া বোকা হয়ে গেলো। টয়ার ইচ্ছে করছে এক্ষুনি ইয়াদের ঘাড় মটকে দেয়। অসভ্য, বেয়াদব একটা ছেলে। টয়া চোখ বন্ধ করে হাতের মুঠি শক্ত করে রাগ সামলাচ্ছে। রাগ সামলাতে না পেরে টয়া বলে বসলো,” এসবের মানে কি?”

ইয়াদ অবাক হয়ে টয়ার দিকে ঘাড় ফিরলো ইয়াদের বুঝতে বাকি রইলো না যে এ মেয়েকে চুপ করানো বেশ কষ্টের কাজ। ইয়াদ একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,” কিছু না।”

টয়া বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে ইয়াদ তাকে ভয় দেখানোর জন্য এসব করেছে ভেবেই গা জ্বলে যাচ্ছে ওর। ইয়াদ কিছু করবেনা সে ব্যাপারে সে নিশ্চিত হয়েছে তাই কথার পিঠে কথা বলে বসলো,” আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন?” বলে টয়া উঠে বসতেই ইয়াদ হাত ধরে টয়াকে আবার বিছানার সাথে আটকে রেখে টয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো।

টয়া কিছু বলতে গেলো কিন্তু ইয়াদের চোখে চোখ পড়ায় চুপ করে গেলো। ইয়াদ হটাৎ যেনোএক ঘোরের মাঝে চলে গেলো। তারপর বললো,” এইসব করে কোনো লাভ নেই তোমাকে যেতে দিবো না। আর একবার যদি আমি থাকবো না বলে চেঁচামেচি করেছো তাহলে প্রতিটা সেন্টেন্সের ওয়ার্ড গুনে গুনে মাসুল দিতে হবে বুঝেছো?”

ইয়াদের কথা শুনে টয়ার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে। টয়া ইয়াদের দিকে ফিরতেই, ইয়াদ টয়াকে আশ্বস্থ করে বললো,” I mean it।,”বলেই ইয়াদ টয়ার উপর থেকে সরে গেল। টয়া আর কোনো কথা বললো না তার আর কিছু করার নেই সে ঠিকই বুঝেছে তাই সে চাপতে চাপতে বিছানার একদম কোনায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। চোখ বন্ধ করতেই তার বুকের ভিতরটা কেমন যেন একটা করে উঠলো।

_________________

সকালে টয়া ইয়াদের আগেই উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়। টয়ার চুল এলোমেলো হয়ে আছে চুল থেকে রাবারব্যান্ড খুলে সে আবার বোকা হয়ে গেলো। সে কোথায় ভেবেছিলো মেয়ের রাবারব্যান্ড আসলে টাকা বাধার রাবারব্যান্ড দিয়ে ইয়াদ তার চুল বেধে দিয়েছে। কি শয়তানি বুদ্ধি রে বাবা।

ভাগ্যিস সে ইয়াদের আগে ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। টয়া চোখ হটাৎ দরজায় লাগানো একটা পিংক স্টিকি নোট দেখতে পেলো টয়া এগিয়ে গিয়ে সেটা হাতে নিলো। সেখানে লেখা:

Password hint : আর্নিহা তাবাসসুম টয়া।

ইয়াদ রাতে উঠেই টয়ার জন্য এইটা লিখে রেখেছিল কারন সকালে সে জানে টয়া সকালে আবার অস্থির হয়ে পড়বে। ইয়াদ অনেক রাতে ঘুমালে তার সকালে উঠতে দেরি হয়। ইয়াদ চাইলে পাসওয়ার্ড লিখতে পারতো কিন্তু টয়াকে বিরক্ত করার সুযোগ তো হাতছাড়া করা যায় না। এদিকে টয়া পিংক স্টিকি নোট হাতে দাড়িয়ে আছে তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। এইখানে লেখা হিন্ট অর্নীহা তাবাসসুম টয়া কিন্তু পাসওয়ার্ড তো সব নাম্বার। অ্যালফাবেট দিয়ে কিভাবে কি করবে? লোকটা এবার এই ধং করতে গেলো কেনো? পাসওয়ার্ড ডিরেক্ট লিখলে কি হতো?

টয়া ভাবতে বসে গেলো। তিন নম্বরের পাসওয়ার্ড! এই হিন্ট দিয়ে কিভাবে কি করবে? হটাৎ টয়ার মনে হলো তার পুরা নামে কয়টা অ্যালফাবেট আছে গুনে দেখা যাক। অর্নিহাতে আছে ছয়টা তারপর তাবাসসুমে আছে আটটা তারপর টয়াতে আছে চারটা তাহলে পাসওয়ার্ড কি হবে 684। টয়া এটা বের করতেই কয়েকমিনিট ব্যায় করে দিলো। অবশেষে 684 দিতেই দরজা খুলে গেল। কি যে শান্তি লাগছে তার সেটা শুধু সে নিজেই জানে। তবে পাসওয়ার্টা কেনো টয়ার নামের সাথেই মিল করে রাখলো ইয়াদ?

[ চলবে ]

💜 আমার পরীক্ষা শুরু হয়েছে তাই গল্পটা দিয়ে সমস্যা হচ্ছে। তবুও চেষ্টা করে যাবো। আপনারা সবাই আমার জন্য একটু দোয়া করবেন। যেনো পরীক্ষাগুলো ভালোভাবে দিয়ে শেষ করতে পারি।💜

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here