#তোকেই_ভালোবাসি
#লেখনীতে_আমেনা_আক্তার_আখি
#পর্বঃ৩
কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সতেরো বয়সী কিশোরী।হাতে ধোয়া ওঠা চায়ের কাপ।গ্রিল ভেদ করে একফালি রোদ এসে উঁকি দিয়েছে বারান্দায়।শীতের সকালে রোদের ঝলকানি পড়ল কিশোরীর সর্বাঙ্গে।সপ্তপর্ণে চায়ের কাপে চুমুক বসালো সে।তখন নিচ থেকে কর্কশ কন্ঠে শোনা গেল তার নাম ধরে কেউ ডাকছে।মিথিলা ভ্রু কুঁচকে চায়ের কাপটা নিয়ে নিচে চলে আসে।তিতলি হক এর সামনে গিয়ে প্রশ্ন করল,
“ডাকছিলে আমায়?”
মিথিলার দিকে একবার তাকিয়ে তিতলি হক চায়ের ট্রে টা মিথিলার হাতে ধরিয়ে দেয়।আদেশের সুরে বলে,
“সবাইকে দিয়ে আয়!”
মিথিলা দ্বিরুক্তি করে না।কয়েকদিন ধরে সে এইকাজটা করে আসছে।বলতে গেলে এই একটা কাজ ঠিকমতো করতে পারে সে।সবাইকে সকাল সকাল চা দেওয়া।কাজটা মন্দ না!
মিথিলা প্রথমে ইকবাল হকের রুমে গেল।তাকে চা দিয়ে এসে নিজের মা-বাবার বরাদ্দকৃত রুমের সামনে গিয়ে দাড়ালো।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতেই মন বিষন্ন হয়ে উঠল,কতদিন বাবাকে দেখা হয়না তার।কবে আসবে কে জানে?মিথিলা স্থান ত্যাগ করে ইয়াশের রুমের দিকে হাঁটা ধরল।রুমের সামনে এসে কিছুক্ষণ কিছু একটা ভাবল।
হালকা হাতে দরজাটা খুলে ভিতরে ঢুকে পড়ল।প্রথমেই চোখে পড়ল বিছানার উপর শুয়ে থাকা ইয়াশের উপর।চোখ পড়তেই কিশোরী মন বলে উঠল,
“ইশশ!কবে তোমার পাশের ওই খালি যায়গাটায় আমার যায়গা হবে?কবে তোমার ওই মুখশ্রী দেখে আমার সকাল শুরু হবে?”
মিথিলা কথাটা ভেবে মাথা ঝাড়া দেয়।চায়ের কাপটা নিয়ে বেডের পাশে টি-টেবিলে রাখে।চলে আসতে নিবে,কিন্তু বেহায়া চোখ বারবার ওই লোকটার উপরই পড়ছে।কালকে যে একটা চড় মারলো তবুও শিক্ষা হলো না!মিথিলা চোখ ফিরিয়ে চলে যেতে নিয়েও আবার ফিরে এসে ইয়াশের সামনে দাড়ায়।ইয়াশের দিকে হালকা ঝুঁকে পড়ে।দেখতে থাকে ঘুমন্ত মুখশ্রী।হঠাৎ কিশোরী মনে এক সুপ্ত বাসনা জাগে,হাত চালায় নিদ্রাচ্ছন্ন থাকা পুরুষটির অবিন্যস্ত চুলে।
আরেকটু ঝুঁকি ভালোবাসার পরশ আঁকে পুরুষটির ললাটে।মুহূর্তেই যেন লালাভ ছেয়ে যায় কিশোরীর মুখশ্রীতে।
এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে বের হয়ে যায় রুম থেকে।মুখশ্রীতে লজ্জাভাব যেন সরছেই না।
ধরে রাখা ট্রে টার দিকে তাকিয়ে ছুট দেয় বোনের রুমের দিকে।রুমে ঢুকে দরজা স্ব-জোরে বন্ধ করে দেয়।যার দরুন শুয়ে থাকা মিহু,ইফা দুজনে লাফিয়ে উঠে পড়ে।মিথিলার দিকে তাকিয়ে বিরক্তি সহিত মিহু বলে ওঠে,
“উফফ!মিথু তোর সাথে আমাদের কোন জন্মের শত্রুতা রে! এভাবে কেউ দরজা বন্ধ করে?বেয়াদব!”
মিহুর সাথে সুর ধরে ইফাও বলে ওঠে, “আসলেই মিথু আপু,এভাবে কেও দরজা বন্ধ করে?আরেকটু হলে তো দুজন তোমার দরজা আটকানোর শব্দতেই পটল তুলতাম!”
“তুই চুপ কর!পুঁচকে কোথাকার।”
“মিথু আপু একদম পুচকে বলবে না!এক বছরের বড় হয়ে ভাব নেও!”
“এক বছর কি কম মনে করিস নাকি?একটা বছরের বড় আমি তোর ভাব তো থাকবেই!”
“এ্যাঁ আসছে এক বছরের বড় হয়ে ভাব দেখাতে?আর আমি মনে হয় তার ভাব দেখতে বসে আছি!”
“বসে থাকবি কেন?দরকার পড়লে খাড়াইয়া খাড়াইয়া দেখবি?বেশি কষ্ট হলে শুয়ে শুয়ে দেখতে পারিস!”
দুজনের ঝগড়া-বিবাদ দেখে মিহু ধমক দিয়ে বলে, “ওই বান্দর দুইটা চুপ কর!”
মিথিলার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে, “আর মেডাম আপনার আমাদের এভাবে জাগানোর মানে কী?”
মিথিলা চায়ের কাপ দুটো রেখে মিহুর সামনে কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে বলে,
“জাগাবো না কি করব বলো?তুমি না-হয় আমাদের মান-সম্মান ডুবাতে পারো,আমিতো পারিনা!”
মিহু মিথিলার কথা শুনে বোকা হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“ঘুমের সাথে মান-সম্মানের কি সম্পর্ক!”
“কি সম্পর্ক মানে,তুই ঘড়ি দেখেছিস কয়টা বাজে?আটটা বাজতে চললো?”
“তো!”
“কিসের তো?দেখ চিল্লানোর জন্য তো তোকে তোর শ্বাশুড়ি ঝাড়ুপিটা করবে নিশ্চিত সাথে এই ঘুমানোর জন্য তোকে জুতাপিটা করবে দেখে নিস।আর তোকে যদি তোর শ্বাশুরি জুতাপিটা প্লাস ঝাড়ুপিটা করে তাহলে আমাদের বাড়ির মান-সম্মান কই থাকবে বল!”
মিথিলার যুক্তি শুনে মিহু ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।মিথিলা মিহুর দিকে তাকিয়ে মুখ বাকিয়ে বলে,
“কি এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?যাই হোক চা দিয়ে গেলাম এক চুমুকে খেয়ে নিও!”
কথাটা বলে,, মিথিলা যেভাবে বুলেটের গতিতে এন্ট্রি নিছিল বিপরীতে কচ্ছপের গতিতে বেরিয়ে গেল।মিথিলা যেতে ইফা বলে ওঠে,
“আপু আমার তো মনে হয়,তুমি তোমার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সাথে ঘুরতে গেলিছে এবারই তোমার হবু শ্বাশুরি তোমাকে অলরেডি জুতাপিটা প্লাস ঝাড়ুপিটা করে ফেলেছে!”
ইফার কথা শুনে মিহু চোখ রাঙিয়ে তাকায় ইফার দিকে।ইফা তাকানো দেখে বিছানা থেকে নেমে পড়ে।আড়মোরা ভেঙে বলে, “শান্তিতে ঘুমুতেও পারলাম না!দুই বান্দরনীর জ্বালায়।”
কথাটা বলে একমুহূর্ত না দাড়িয়ে ইফা স্থান ত্যাগ করে।মিহু ইফার যাওয়ার দিকে বালিশ ঢিল দিয়ে বলে, “বেদ্দপ মহিলাগুলি!”
————————————-
রাত্রে ড্রাইনিং টেবিলে আসতেই একটা খবর শুনতেই মিথিলার চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে।সবার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে সবাইকে একবার পর্যবেক্ষণ করে নেয়।কান খাড়া করে সব কথাই শুনে।না যা শুনছে ঠিকই শুনছে!
সবাই মিলে ঘুরতে যাবে কিন্তু যাবে কোথায় সেটাই ভাববার বিষয়।মিথিলা মনোযোগ দিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে সবার কথা শুনতে থাকে।এক পর্যায়ে ইকবাল হক তিতলি হকের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠ,
“ভাবি আপনি কি বলেন?এখন তো ওদের স্কুল,কলেজও বন্ধ!”
তিতলি হক একবার রুকমা হকের দিকে তাকায় ফের ইকবাল হকের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমি আর কি বলব ভাই,রুকমা যখন বলছে একবার যেতে তাহলে আমরা কি না গিয়ে পারি বলেন?”
তিতলি হকের কথা শুনে রুকমা হক মুচকি হাসেন।এদিকে মিথিলা শুধু এসবি শুনে যাচ্ছে কিন্তু কোথায় যাবে কেউ কিছু বলছে না!মিথিলা এবার পাশে বসা ইফার কানে কানে বলে,
“কোথায় যাওয়ার কথা হচ্ছে রে?!”
“আমি কি জানি,শুনতে থাকো!”
মিথিলা মুখ বাকায় ইফার উত্তরে।পাশে মিহু বসে খেয়েই যাচ্ছে যেন খাওয়াই তার একমাত্র কাজ।মিহুর থেকে যে এখন কিছু যানা যাবে না তা যানে।কেন যে পরে নিচে নামতে গেল?আগে আসলে সবটা শুনতে পারত।ধুরর!
একটু পরেই ইয়াশ এসে মিথিলার সামনের চেয়ারে বসে বসে।মিথিলা সেদিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরাইতে নিয়েও আবার তাকায়।ইয়াশ কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে!যেন আজকে প্রথম দেখছে ওকে।
সকালের ঘটনা মনে পড়তেই মিথিলা চোখ বড়বড় হয়ে যায়।এই ছেলে তখন আবার জেগে ছিল নাকি।পরক্ষণেই মনকে বুঝ দেয়, জেগে থাকলে তো তখনই মেরে তক্তা বানিয়ে দিত!
মিথিলা চোখ ফিরিয়ে নিজ খাওয়ায় মনোনিবেশ করে।খাওয়া শেষ হতেই একে একে সবাই উঠে যায়।মিথিলা হাত দুয়ে নিজ কক্ষে যেতে নিবে তখন ইয়াশ ওর পাশে এসে বলে ওঠে,,
“এখান থেকে সোজা আমার রুমে যাবি!দরকার আছে।”
কথাটা বলে ইয়াশ পাশ কাটিয়ে চলে যায়।মিথিলা চোখ মুখ কুঁচকে বলে নেয়।ওর বয়ে গেছে তার রুমে যেতে।মিথিলা ড্যাং ড্যাং করে নিজ রুমে চলে যায়।রুমে যাওয়ার সময় একবার মিহুর রুমে ঢোকে।কিন্তু বেচারি জামাইয়ের সাথে প্রেমালাপ করতে ব্যস্ত থাকায় মিথিলা চলে আসে।নিজের রুমে এসে দেখে ইফা ওর বিছানায় আরামে কম্বলের নিচে শুয়ে আছে।মিথিলা গিয়ে ইফার হাত ধরে বসিয়ে দেয়।
“উফফ!সমস্যা কি তোর এভাবে কেউ মতের দিতে কম্বলের নিচ থেকে উঠিয়ে দেয়।”ইফা বিরক্তি নিয়ে বলে ওঠে কথাটা।
“তোর রুম নেই যা তোর রুমে গিয়ে কম্বলের নিচে সাধু সেজে বসে থাক কেউ কিছু বলবে না!”
“এরকম করলা না অভিশাপ দিলাম তোর কোনোদিন বিয়া হইবো না,কাইল্লা জামাইও জুটত না তোর কপালে।”
বকবক করতে করতে ইফা রুম থেকে বেরিয়ে যায়।ইফা যেতে মিথিলা রুমের দরজা ভিড়িয়ে কম্বেলর নিচে এসে শুয়ে পড়ে।কানে ইয়ারফোন গুজে গান ছেড়ে দেয়।কেউ যে ওকে ডেকেছিল ভুলে বসে সেই কথা।
————————
কিছু একটা পড়ে যাওয়ার শব্দ হতে মিথিলা ধড়ফড়িয়ে উঠে পড়ে বিছানা থেকে।সামনে তাকাতে মুখটা হা হয়ে যায়।ভীত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
“ভাইয়া তুমি এখানে?”
চলবে, ইন শা আল্লাহ🍁
#তোকেই_ভালোবাসি
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122116347122106938&id=61553208165829&mibextid=2JQ9oc