#তোকেই_ভালোবাসি
#লেখনীতে_আমেনা_আক্তার_আখি
#পর্বঃ৪
“ভাইয়া তুমি এখানে?”
মিথিলা ভীতস্বরে কথাটা বলে একবার ইয়াশের দিকে তাকালো একবার নিচে পড়ে থাকা কাঠের স্কেলের দিকে।কাঠের স্কেল মেঝেতে পড়ে শব্দ হয়েছে।মিথিলা কানের ইয়ারফোন খুলে মাত্রই ঘুমানোর প্রচেষ্টা করছিল বিধায় ক্ষুদ্র আওয়াজ টুকু কানে যেতে ধড়ফড়িয়ে উঠে পড়ে।কিন্তু মিথিলা ভাবছে ইয়াশ এত রাতে ওর রুমে কি করছে।কোনো কি দরকার আছে ওর সাথে?মিথিলার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে ইয়াশ মিথিলার কাছে এসে হাত টান দিয়ে বিছানা থেকে নামায়।সামনা-সামনি দাড় করিয়ে বলে,
“তোকে আমার রুমে যেতে বলেছিলাম আমি,যাসনি কেন?”
ইয়াশের কথা শেষ হতে মিথিলা চোখ বড় বড় করে তাকায় ইয়াশের পানে।দেখেই মনে হচ্ছে রেগে আছে।মিথিলা কিছু বলার সাহস পায় না।চুপ করে ইয়াশের হাতে থাকা কাঠের স্কেলটার দিকে তাকিয়ে থাকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে।মিথিলাকে চুপ থাকতে দেখে ইয়াশ ধমকে ওঠে,
“কিরে কথা বলছিস না কেন?”
ধমক শুনে মিথিলা কেঁপে ওঠে।ইয়াশের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলে, “আসলে ভাইয়া আমার মনে ছিলনা!”
“মনে ছিলনা মানে?আমি তোকে সোজা আমার রুমে যেতে বলেছিলাম।ওটুকু যেতে যেতে নিশ্চয়ই ভুলার কথা না”
দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বলতে আবার ধমকের স্বরে বলে,”হাত টা সামনে দে?”
মিথিলা ভ্রুযুগল কুঁচকে বলে, “হাত বাড়াবো কেন?”
“অন্যায় করার পরও প্রশ্ন করছিস কোন সাহসে?হাত বাড়াতে বলেছি বাড়াবি!”
“না বাড়াবোনা না হাত?তুমি আমাকে এখানে মারার জন্য এসেছ তাইনা?কিন্তু তুমি আমাকে মারবে কেন?শুধু তোমার ডাকে তোমার রুমে যাইনি বলে!এতটুকুর জন্য মারার কি আছে?কোনো বড় অন্যায় তো করে ফেলেনি?”
“করিসনি কোনো বড় অন্যায়?”
ইয়াশের প্রশ্ন করার ধরণ দেখে মিথিলা চোখ ছোট ছোট হয়ে যায়।কি অন্যায় করেছে সে?মনে করার চেষ্টা করে,কিন্ত বৃথা হয়।তাই ইয়াশকেই প্রশ্ন করে,
“কি বড় অন্যায় করেছি আমি?”
ইয়াশ মিথিলার কথা শুনে ওর দিকে কয়েক কদম আগায়।মিথিলার হাত টেনে সামনে আনে। হাতে থাকা কাঠের স্কেলটা সামনে এনে ঠাসস্ করে মিথিলার হাতে বসিয়ে দেয়!মিথিলা চিল্লিয়ে ওঠে সাথে সাথে।হাত টেনে পিছনে নিয়ে আসে।মারা যায়গাটায় চোখ দেয় লাল হয়ে গেছে।চোখে টলমল পানি নিয়ে ইয়াশের দিকে তাকায়।মিথিলা তাকাতে ইয়াশ বলে ওঠে,
“একটা ছেলের রুমে গিয়ে তার ঘুমানোর সুযোগ নিয়ে তাকে চুমু খাওয়া কি বড় অন্যায় নয়।সেদিন তো বলছিলি আমার সাথে কথা বললে নাকি তোর মুখ দিয়ে শুধু ভালোবাসার কথা বেরোবে।তা মুখে বলতে পারছিস না বলে কি এখন আচরণে প্রকাশ করা শুরু করছিস তুই আমাকে ভালোবাসিস!”
ইয়াশ থামতে মিথিলা চোখ তুলে তেজী কন্ঠে বলে, “একটা চুমু খেয়েছি তো কি হয়েছে?ভালোবাসি জন্যই তো চুমু খেয়েছি!তাই বলে মারবে কেন?”
কথাটা বলে মিথিলা হাত পিছনে লুকিয়ে ফেলে।ইয়াশ ভ্রু গুটিয়ে তাকায় মিথিলার দিকে।এ মেয়ের সাহস দেখে ও শুধু অবাক হচ্ছে।মিথিলার হাত পিছন থেকে সামনে এনে টেনে রুম থেকে বেরিয়ে নিয়ে যায়।রুম থেকে বের হতে মিথিলা ইয়াশের থেকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে,
“কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?ছাড়ো আমার হাত?ব্যথা পাচ্ছি আমি?ভাইয়য়য়া!”
ইয়াশ মিথিলার হাত ছেড়ে দেয় রাগী কন্ঠে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, “একদম চিল্লাবি না!সবার তো দেখা দরকার তাদের বাড়ির মেয়ে কতটা ভদ্র।যে একটা ছেলের রুমে গিয়ে তার পারমিশন ছাড়া তাকে চুমু খেয়ে আসে!চল আমার সাথে?!”
সবার কথা মনে মিথিলার চোখ বড় হয়ে যায়।ফাকা ঢোক গিলে কয়েকটা।ইয়াশের থেকে আবার ঝাপটা মেরে হাত ছাড়িয়ে নেয়।ভীত স্বরে বলে ওঠে,
“ভাইয়া,আমি আর কখনো এমন করবো না!প্লিজ কাউকে কিছু বলোনা। দেখো আমি আর তোমার সামনেই যাব না।সত্যি বলছি তবুও কাউকে কিছু বলো না!”
ইয়াশ মিথিলার কথাটা তোয়াক্কা না করে আবার হাত ধরে নিয়ে যায়।এবার মিথিলা কিছুটা জোরে কেঁদে দেয়।কান্নার আওয়াজ পেয় ইয়াশ পিছনে মিথিলার দিকে তাকায়।চোখে মুখে বিরক্তি নিয়ে বলে,
“এসব ন্যাকামো বন্ধ কর।তোকে শিক্ষা না দেওয়া পর্যন্ত তুই ঠিক হবি না।চল!”
মিথিলা ইয়াশের হাত টেনে ধরে অনুরোধ করে বলে, “ভাইয়া কাউকে বলোনা।দেখ আমি আর কখনো এমন করব না প্রমিস।এবারের মতো শুধু মাফ করে দেও।”
ইয়াশ মিথিলার মুখের দিকে তাকায়।যতই হোক ওর মনে তো একটু মায়াদয়া আছে।ইয়াশ মিথালার হাত ঝাপটা মেরে সরিয়ে দেয়।ওর থেকে দূরে সরে বলে,
“নেক্সট টাইম এরকম কিছু করবি তো সবার সামনে নিয়ে তোর এই ভালোমানুষি বের করব!যাহ রুমে যা!”
শেষের কথাটা ধমকে বলে ওঠে ইয়াশ নিজ কক্ষে চলে গেল।মিথিলা ওখানে দাড়িয়ে নাক টেনে গাল ফোলায়।জীবনে কোনো একটা ভুল তো ও করেছিল তার জন্যই এই পুরুষের প্রেমে পড়ছে।যার দরুন জীবনটা ঝালাফালা হয়ে যাচ্ছে।
——————————
পরেরদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ড্রইংরুমে আসতে মিথিলা কিছুক্ষণ স্থিরচিত্তে দাড়িয়ে থাকে সামনের সোফায় বসা মানুষটার দিকে তাকিয়ে।হাতের তালু দিয়ে চোখ ঘষা দিয়ে আবার তাকায় সোফার দিকে।না যা দেখছে সত্যি দেখছে।মিথিলা মুহুর্তেই ছুটে যায় সোফায় বসা মানুষটার কাছে।লোকটিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।মধ্যবয়স্ক লোকটি মিথিলার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।মাথা উঠিয়ে আদুরে স্বরে বলে,,
“কি হয়েছে আমার মায়ের?বাবাকে দেখে খুশি হয়নি বুঝি!”
মিথিলা নাক টেনে মিনহাজ হকের দিকে তাকায়।আহ্লাদী কন্ঠে বলে, “এতদিনে বুঝি তোমার মায়ের কথা মনে পড়েছে?কথা নেই তোমার সাথে?”
মিনহাজ হক মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“কাজের চাপ ছিল মা!তাইতো আসতে পারিনি।দেখো এখন চলে এসেছি।”
বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে মিথিলা অস্পষ্ট স্বরে বলে, “হুম বুঝেছি!”
“কখন এসেছ?আমাকে একবার জানালেও না?!”
মিনহাজ হোক হেসে দিয়ে বলেন, “মধ্যরাতে এসেছি মা!তোমরা ঘুমিয়ে ছিলে তাইতো বলা হয়নি।ভাবলাম সকালেই সবাইকে সারপ্রাইজ দিব।”
“হয়েছে তোমার সারপ্রাইজ দেওয়া।”
“হ্যাঁ এইতো আমার মেয়ে আমাকে দেখে সারপ্রাইড হয়ে গিয়েছিল না।”
মিথিলা হেসে বলে,,”খুব হয়েছি!”
————————————-
একে একে সবাই ঘুম থেকে উঠে নিচে নামে।ইয়াশ,ইফা আর মিহু বাদে কেউই মিনহাজ হককে দেখে তেমন প্রতিক্রিয়া করে না;যেন তারা আগেই যানত মিনহাজ হক আজকে বাড়িতে আসবেন।মিথিলা সেসবে মাথা ঘামায় না।ও তো আজকে কাউকে চা ও দিতে যায়নি।একেতো কালকের ইয়াশের ব্যবহার আর ওর কথাগুলোর জন্য যায়নি।তার উপর মিনহাজ হক এসেছে।তাই আরো যায়নি।ইয়াশ ড্রইংরুমে এসে একবার মিথিলার দিকে তাকিয়েছিল কিন্তু মিথিলা রাগে,অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।ইয়াশের হাবভাব এমন মিথিলার মুখ ঘুরানোতে তার কিছু যায় আসেনা!
সবাই খাবার টেবিলে বসতে ঘুরতে যাওয়ার কথা উঠল।এবার মিথিলার বোধগম্য হলো মিনহাজ হোক তাহলে এর জন্যই এসেছেন।সবাই টুকটাক ঘুরতে যাওয়ার আলাপ করতে করতে খাওয়া শেষ হলো।
তারা কালকেই বেরোবে তাই সবাইকে ব্যাগ গুছিয়ে নেওয়ার কথা বলরো রুকমা হক। সবাই সম্মতি জানিয়ে যে যার রুমে চলে যায়।তারা ইয়াশদের মামা বাড়ি যাবে।এটা শুনতেই মিথিলার মুখ পানসুটে হয়ে যায়।গোমড়া মুখ করে নিজ কক্ষে চলে যায়।
চলবে, ইন শা আল্লাহ 🍁
#তোকেই_ভালোবাসি
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122116347122106938&id=61553208165829&mibextid=2JQ9oc