#তোকেই_ভালোবাসি
#লেখনীতে_আমেনা_আক্তার_আখি
#পর্বঃ১১
মিথিলা ইফা যাওয়ার মিনিট খানিক পর মিহু ছাদে আসে।রাফসান কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ও গিয়ে দাড়ায় রাফসানের পাশে।রাফসান মিহুর দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে বলে ওঠে,,
“আচ্ছা তুমি এত শান্তশিষ্ট তোমার বোন এত উড়নচণ্ডী কেন?”
মিথিলা রাফসানের দিকে ফিরে ভ্রু কুঁচকে বলে,, “মানে?”
রাফসান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,, “তোমার বোন আজকে আমার মান-সম্মান খাইছে?”
মিহু প্রশ্নাত্তুর দৃষ্টিতে তাকাতে রাফসান সবটা বলে দেয়।রাফসানের কথা শুনে মিহু খিলখিল করে হেসে দেয়।রাফসান গোমড়া মুখে বলে,,
“হাসছো তুমি?”
মিহু হাসতে হাসতে বলে,,”তো কি করব?”
রাফসান মিহুর দিকে তাকায়।এক দৃষ্টিতে মুগ্ধ চোখে দেখতে থাকে তার অর্ধাঙ্গিনীকে।রাফসানকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিহু থামে।রাফসানের দিকে তাকিয়ে বলে,,
“কি দেখছেন?”
“দেখছি একটা মেয়ে এভাবে পেত্নীর মতো কিভাবে হাসতে পারে?”
মিথিলা ভ্রু কুঁচকে বলে,, “আমি পেত্নী?”
“তুমি বলছ!”
মিথিলা এবার রেগে গিয়ে বলে,, ” মিথুই ঠিক আছে।শুনুন বিয়ের আগে আপনার সাথে আমার নো দেখাদেখি।থাকেন আপনি?”
কথাগুলো বলে মিথিলা উল্টোঘুরে হাটা শুরু করে।রাফসান দৌড়ে মিহুর সামনে গিয়ে দাড়ায়।রাফসানকে সামনে দেখে মিহু রাগ নিয়ে বলে,,
“এই সরুন সামনে থেকে?”
রাফসান ভাব নিয়ে বলে,,”আহা কি দেখাদেখি শুরু করছ বলোতো।তুমি কিন্তু আমার বউ, সো আমি চাইলে এখনি তোমাকে আমার বাড়িতে নিয়ে যেতে পারি।”
“হাহ এসব ভাব অন্য যায়গায় দেখান।আমি যদি না যাই কিভাবে নিবেন আপনি?”
রাফসান মিহুর দিকে খানিকটা আগায়।কোমড় জড়িয়ে কাছে আনে।মুখমন্ডলে ফু দিয়ে বলে,,
“দেখতে চাও কিভাবে নিয়ে যাব!”
মিহু পিটপিট করে তাকিয়ে বলে,, “দরকার নেই ছাড়ুন!”
মিহু কথাটা বলতে দেরি রাফসানের ওকে কোলে ওঠাতে দেরি হয়নি।রাফসান মিহুকে পাঁজকোলে নিয়ে সিঁড়ির দিকে হাটা শুরু করে।মিহু চোখ বড়বড় করে বলে,,
“আরে নিচে বাবা,চাচ্চু সবাই আছে নামান আমাকে!”
“সমস্যা কি তাতে?দেখলে আমারি ভালো!”
“মানে?”
“মানে তারা দেখলো আমি তোমাকে কোলে নিয়ে ঘুরাঘুরি করছি।দেখলে ভাববে ছেলের হয়ত বউ ছাড়া চলছে না চলো আমরা ওদের বিয়েটা তাড়াতাড়ি দিয়ে দেই।পরে আমাদের বিয়েটা তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে বুঝলে?”
মিহু ঠোট টিপে হেসে বলে,, “যদি উল্টোটা হয়?”
“যেমন-”
“যেমন-আপনি আমাকে এভাবে কোলে নিয়ে হাঁটছেন তারা ভাববে আমার কি না কি হয়েছে।মানে কোথাও আছাড় খেয়ে পড়েছি ব্যথা লেগেছে তাই আমাকে এভাবে নিয়ে হাটছেন?”
মিহুর কথাটা শেষ হতে রাফসান ওকে নামিয়ে দেয়।মিহু প্রথমে ভ্রু কুচকালেও পড়ে দেখে তাদের সিড়ি নামা শেষ তাই রাফসান তাকে নামিয়ে দিয়েছে।মিহু রাফসানের দিকে তাকাতে রাফসান বলে ওঠে,,
“তোমার মুখ দিয়ে সবসময় ফালতু কথাই বের হয় তাই না!”
“হ্যা আমি ফালতু তাই ফালতু কথাই বের হয়!”
রাফসান এবার মিহুর কাছে গিয়ে ওর কপালে চুমু দিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,, “মায়াপরীর হুটহাট রাগতে নেই!রাগলেও এই মানবের সামনে না।হুটহাট রাগের পিছনে ওই মায়াবী চেহারাটা বড্ড কাছে টানে।”
রাফসান মিহুর কানের লতিতে একটা চুমু খায়।মুচকি হাসে প্রেয়সীকে দেখে।উল্টোঘুরে নিচে চলে যায়।মিহু রাফসানের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মুচকি হাসে।
———————————————————–
“ভাই ও কি রাজি হবে?”
ইকবাল হকের কথায় মিনহাজ হক চিন্তিত স্বরে বলে,,
“ও যতই রেগে থাকুক।বড় ভাইয়ের কথা কখনো অমান্য করবে না নিশ্চয়ই?”
“কিন্তু এতদিন পর,,,”
“আহা ইকবাল একবার বলেই দেখি?২০ বছরের আগের মইনুল আর ২০ বছর পরের মইনুল এক হবে না নিশ্চয়ই!”
“কথা বড় ভয়ানক জিনিস ভাই।প্রিয়জনদের ছোট ছোট কতগুলোও না হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়।সেই ক্ষত সহজে সারে না। সহজে ভোলাও যায় না!”
মিনহাজ হক এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।আসলেই প্রিয়জনদের দেওয়া দুঃখগুলো ভয়াবহ হয়।সে মুঠোফোনটা হাতে নিয়ে নিচে অযন্তে পড়ে থাকা একটা নাম্বারে ডায়াল করে।কয়েকবার ফোন করতে রিসিভ হয়।ওপাশ থেকে সালাম দিতে মিনহাজ হক সালামের উত্তর দেয়।জিজ্ঞেস করে,,
“কেমন আছিস ভাই?”
ওপাশ থেকে কোনো উত্তর আসে না কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে একটা কন্ঠস্বর ভেসে আসে।সে চাপা কন্ঠে বলছে,,
“ফোন কেন দিয়েছেন?”
“তোর ভাই আমি,তোকে ফোন দিতে পারিনা?”
ওপাশ থেকে তাচ্ছিল্য স্বরে বলে উঠল,, “ভাই!তা কোথায় ছিলেন এতদিন আপনারা?এতদিন পর ভাইয়ের পরিচয় দিতে এসেছেন!”
মিনহাজ হক কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থাকেন।নিরবতা ভেঙে বলেন,,
“তুই কি আমাদের কথা মনে করেছিস কোনোদিন?তোকে ফোন দিলেও ধরতি না।এখন বলছিস তোর খবর নেই নি!”
“নেওয়ার চেষ্টা করেছি আমি!”
“আচ্ছা ভাই যেটা হয়ে গেছে সেটা হয়ে গেছে।এখন সব মিটমাট করে নিলে হয় না!আর বাবাও তো,,,”
“দেখ ভাই একদম উনার কথা আমার কাছে বলবা না।এই ডাকটা শুনলেই না আমার গা ঘিনঘিন করে।উনার চেহারাটা চোখে ভাসে।বিরক্ত লাগে আমার।”
“আচ্ছা বলবো না। একটা কথা রাখবি?”
ওপাশের ব্যক্তিটি অনিচ্ছা সত্বেও বলে,, “কি?”
“দেখ পরের মাসের প্রথম সপ্তাহে মিহুর বিয়ে।আর কয়েকদিন আছে মাত্র।বলছি,,”
মিনহাজ হকের কথা শেষ হতেই ওপাশ থেকে মইনুল হক অবাক কন্ঠে বলে,, “মিহু মায়ের বিয়ে!”
“আকদ করা হয়েছিল।এখন ও বাড়ি নিয়ে যাবে।”
ওপাশ থেকে ভাঙা কন্ঠ শোনা গেল,, “ছোট্ট পুতুলটাও মনে হয় বড় হয়ে গেছে তাইনা ভাই?”
এপাশে মিনহাজ হক কিছু বলেন না।কিছুক্ষণ পর ওপাশ থেকে শোনা যায়,,
“আমি চেষ্টা করব আসার।তবে না যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।রাখি এখন!”
কথাটা বলে ওপাশ থেকে ফোন কেটে দেয়।মিনহাজ হোক মুঠোফোনটা নামিয়ে ইকবাল হকের দিকে তাকান।ইকবাল হক কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সবটা শোনার।মিনহাজ হক বুঝতে পেরে বলেন,,
“না আসার সম্ভাবনা বেশি!”
কথাটা শুনে ইকবাল হক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।মিনহাজ হোক উঠে যেতে সেও উঠে নিজ কক্ষে চলে যান।
——————————————
রাফসানরা বিকালে চলে গেছিল।রাতের খাওয়া-দাওয়ার জন্য সবাই নিচে নামতে মিনহাজ হক সবাইকে মইনুল হকের কথা বলেন।সবাই প্রথমে বেশ খানিকটা অবাক হলেও খুশি হন দ্বিগুন।খাওয়া-দাওয়ার এক পর্যায়ে মিথিলা খুশি হয়ে বলে ওঠে,,
“বাবা ছোট চাচ্চু, আকাশ ভাইয়ারা সত্যি আসবে?”
মিথিলার কথা শুনে সবাই তাকায় ওর দিকে।মিনহাজ হক মৃদু হেসে বলেন,,,
“বললো তো আসতে পারে।দেখি কি করে?”
মিনহাজ হকের কথা শুনে মুহুর্তেই মিথিলার মনটা খারাপ হয়ে যায়।মন খারাপ নিয়ে ছোট্ট করে বলে বুঝেছি।
খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই উঠে যেতে ইয়াশ মিথিলার কাছে গিয়ে বলে,, “তোর আকাশ ভাইয়া আসছে শুনে বেশ খুশি হয়েছিলি দেখলাম!”
মিথিলা একবার ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে বলে,,
“তো খুশি হবো না।প্রিয় মানুষ কতদিন পর দেশে আসবে খুশি হবোনা বলো!”
মিথিলা এই বলে চেয়ার থেকে উঠে যায়।ইয়াশ মিথিলার যাওয়ার পানে তাকিয়ে বিরবির করে আওরায়,,
“প্রিয় মানুষ!”
চলবে,, ইন শা আল্লাহ 🍁
#তোকেই_ভালোবাসি
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122116347122106938&id=61553208165829&mibextid=2JQ9oc