তোকেই_ভালোবাসি #লেখনীতে_আমেনা_আক্তার_আখি #পর্বঃ১৩

0
320

#তোকেই_ভালোবাসি
#লেখনীতে_আমেনা_আক্তার_আখি
#পর্বঃ১৩

দীর্ঘ পনেরো বছর পর মইনুল হক নিজ স্বদেশের ভুমিতে পা রাখলেন।এয়ারপোর্ট থেকে বাইরে এসে নিজের জন্মভূমি মুগ্ধ নয়নে দেখতে থাকেন।চোখের কোটরে জলের আবির্ভাব।সেই পনেরো বছর আগে নিজের জন্মদাতা পিতার জন্য দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল সে।আজ দীর্ঘ পনেরো বছর পর আবার দেশের মাটিতে পা রাখলো।মইনুল হক হাতের কনুই দিয়ে চোখের কোটরে জমে থাকা পানিটুকু মুছে নেয়।পাশে থাকা আনোয়ারা হক নিজের স্বদেশের বুকে এসে চোখের পানি ছেড়ে দেন।সেও তো কবে থেকে প্রিয়জনদের সামনাসামনি চোখের দেখা দেখেন নি।সেও তো কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে নিজের জন্মভূমি ছেড়ে স্বামীর সাথে পাড়ি দিয়েছিল অচেনা রাজ্যে।
আনোয়ারা হকও চোখের জলটুকু শাড়ির আচল দিয়ে মুছে ফেলেন।গাড়ি আসতে আকাশ গাড়ির দরজা খুলে দেয়।আনোয়ারা হক মইনুল হক গাড়িতে উঠে বসে।
পিছনে আনোয়ারা হক, মইনুল হক,আসিফ আর সামনে আকাশ বসেছে।কিছুক্ষণ যেতে আকাশ মইনুল হককে প্রশ্ন করে,,

“বাবা, আমরা আমাদের বাড়ি যাব নাকি চাচ্চুদের বাড়ি।”

মইনুল হক অনেক আগে দেশে একটা ফ্লাট কিনে রেখেছিলেন।সেটা এখন ভাড়া দেওয়া।তবে একতলা তাদের জন্য বরাদ্দকৃত করে রেখেছেন।মইনুল হক কিছুক্ষণ ভেবে বলেন,,

“তোমার চাচ্চুদের বাসায় যাবো।তাদের যখন কথা দিয়ে ফেলেছি।”

আকাশ কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়ায়।পাশ থেকে আসিফ বলে ওঠে,,

“আচ্ছা বাবা আমার তো কারো চেহারা মনে নেই,আমি তাদের চিনবো কিভাবে?”

মইনুল হক ছেলের কথায় মৃদু হাসেন।মাথায় হাত রেখে বলে,, “বাড়িতে গেলে সবাইকে চিনতে পারবে?”

“আর কাউকে না চিনলাম,মিথেন গ্যাসকে কিন্তু আমি ঠিকই চিনব!”

আসিফের কথা শুনে মইনুল হক,আনোয়ারা হক জোরেই হেসে দেন।সামনে আকাশ ঠোঁট টিপে হাসে।সবার হাসি দেখে আসিফ মাথা চুলকে হেসে দেয়।

ঘড়ির কাটা ঘন্টা পেরুতে আকাশদের গাড়িটি একটি দু’তালাবিশিষ্ট বাড়ির সামনে থামে।আকাশ চোখের সানগ্লাস খুলে গাড়ি থেকে নেমে দাড়ায়।তাকিয়ে থাকে দুতলা বিশিষ্ট বাড়িটির দিকে।ছোটবেলার কত’না স্মৃতি জড়িয়ে তার,এই বাড়িটির সাথে।ছোটবেলার সেই হাসি,কান্না সবার সাথে ফাজলামো করা কত কিছু।বাড়ির রংটাও কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।ঠিক যেন আকাশের মনের রংয়ের মতো ফ্যাকাশে।আকাশ বেশ কিছুক্ষণ বাড়িটির দিকে তাকিয়ে থেকে তাচ্ছিল্য হাসে।গাড়ি থেকে লাগেজ ব্যাগপত্র সব বের করে।
আসিফ গাড়ি থেকে নেমে তখন থেকে হা করে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশ এটা দেখে ওর সামনে তুড়ি বাজায়।ভ্রু গুটিয়ে জিজ্ঞেস করে,,,

“এভাবে হা করে কি দেখছিস?”

“আমরা আগে এই বাড়িতে থাকতাম তাইনা ভাইয়া!”

“নাহ,আসমানে থাকতাম,ডাফার!চল ভিতরে।”

“এটা আমাদের বাড়ি তাইনা ভাইয়া?!”

আসিফ খুশি হয়ে কথাটা বললেও পিছন থেকে গম্ভীর গলার স্বর শুনে মাথা নুইয়ে নেয়।মইনুল হক সামনে আগাতে আগাতে বলেন,,

“এটা আমাদের না তোমার চাচ্চুদের বাড়ি তাই বেশি লাফালাফি করো না!”

মইনুল হক যেতে পিছন পিছন আনোয়ারা হক, আসিফ,আকাশ যায়।মইনুল হক মেইন দরজার সামনে গিয়ে কলিংবেল বাজাতে রুকমা হক এসে দরজা খুলে দেয়।সামনে থাকা চারটি মানুষকে দেখে রুকমা হক কিছুক্ষণ স্থির হয়ে ভুতের মতো দাড়িয়ে থাকে।আনোয়ারা হক রুকমা হককে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সে নিজেই গিয়ে জড়িয়ে ধরে রুকমা হককে।চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করেন,, “কেমন আছো আপা?”

রুকমা হক এবার আনোয়ারা হককে জড়িয়ে ধরে অশ্রু ছেড়ে দেয়।ভাঙা কন্ঠে বলে ওঠে,,

“কেমন আর থাকবো বল?সেই কবে ছেড়ে চলে গেছিস একবারো খবর নিয়েছিস আমাদের কেমন আছি?বেচে আছি না মরে গেছি?”

“আপা!”

“কিসের আপা!আমরা কি তোদের কিছু হই নাকি?”

রুকমা আর আনোয়ারা হকের কান্নার আওয়াজে সবাই রুম থেকে বেরিয়ে আসে।তিতলি হক আনোয়ারা হককে দেখে সেও গিয়ে জড়িয়ে ধরে আনোয়ারা হককে।মইনুল হক গিয়ে মিনহাজ হকের সামনে দাড়ায়।মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করে,,

“কেমন আছো ভাই?”

মিনহাজ হক মইনুল হকের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলেন,, “আলহামদুলিল্লাহ আছি কোনোরকম।তুই?”

“হাহ!আমি, আমিও আছি কোনোরকম!”

ইকবাল হকের সামনে গিয়ে বলেন,, “ভাই!তুমি কেমন আছো?”

ইকবাল হক মইনুল হককে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলেন,,
“তোদের ছাড়া কেমন থাকবো বল?”

সবাই বেশ কিছুক্ষণ কুশল বিনিময় করলো।কতদিন পর ঘরের ছেলে,বৌমা তাদের ছেলেরা ঘরে ফিরিছে।সবার খুশির সীমা নেই।হক বাড়ি আজ যেন পরিপূর্ণ।

বাড়িতে আসার পর থেকে আকাশের চোখ একজনকে খুজে চলেছে।কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটির যেন দেখা মিলছেই না।আকাশ চোখ ঘুরিয়ে এদিক ওদিক দোতলার দিকে তাকাচ্ছে।কিন্তু না কোথাও নেই।আর ও গাধার মতো এদিক ওদিক দেখছে ঘর থেকে বের হলে নিশ্চয়ই এখানে আসত।আকাশ একবার ভাববে মিহুকে জিজ্ঞেস পরক্ষণেই নিজের মনকে গালাগালি করে শান্ত করায়।মিহুকে কিছু জিজ্ঞেস করলে কি ভাবতো ও।আকাশের এতকিছু ভাবার মাঝে আসিফ এতে ওর পাশে ঠাস করে বসে পড়ে।

“মিথেন গ্যাসকে খুজছো ভাইয়া?”

আকাশ আসিফের দিকে একবার তাকিয়ে নিজের ফোন বের করে ফোনের দিকে নজর দেয়।স্বাভাবিক স্বরে বলে,,

“না তো কাউকে খুজছি না।বাড়িটা দেখছিলাম ওই আরকি!”

আসিফ ঠোট গোল করে বলে,, “ওওও!”

আসিফের বলার ধরণ দেখে আকাশ ভ্রু কুঁচকায়।সামনে তাকাতে খুশিতে চিল্লিয়ে বলে,,

“হেই ব্রো,,,”

আকাশ দৌড়ে সামনে গিয়ে ইয়াশকে জড়িয়ে ধরে।হঠাৎ জড়িয়ে ধরায় ইয়াশ ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যেতে নিয়েও সামলে নেয় নিজেকে।ও আকাশের পিঠে হাত রেখে জড়িয়ে ধরে।

“কেমন আছো?”

“এইতো আলহামদুলিল্লাহ!তোর কি খবর?”

“আবার আবার খবর! কোনোরকম বেচে আছি এটাই অনেক!”

ইয়াশ ভ্রু কুঁচকায়।দুষ্টু হেসে প্রশ্ন করে,,, “মেয়ে কি ছ্যাকা দিছে নাকি?ইশশ রে দেশে আসার আগেই ছ্যাকা খেয়ে আসলি।সো স্যাড, সো স্যাড।”

“ভাই!”

“আরে ফান করছি?”

বলে ইয়াশ হেসে দেয়।আকাশ হাসে ইয়াশের সাথে।পাশে আসিফ কোমড়ে হাত দিয়ে দুজনের কর্মকাণ্ড দেখে যাচ্ছে।ও এবার চোখ ছোটছোট করে বলে,,

“এই তুমি হিসু ভাইয়া না?”

ইয়াশ আসিফের দিকে তাকায়।চোখ বৃত্তাকার করে বলে,,

“হোয়াট হিসু ভাইয়া?”

আসিফ এবার বিজ্ঞানীদের মতো করে বলে,, “তোমার নাম ইয়াশ,ইয়াশ থেকে ইশু আর ইশু থেকে হিসু সিম্পল ব্যাপার স্যাপার!”

ইয়াশ কিছুক্ষণ বোকার মতো আসিফের দিকে তাকিয়ে থাকলো।ফের আকাশের দিকে তাকাতে আকাশ ফিক করে হেসে দেয়।আকাশকে হাসতে দেখে রেগে বলে,,

“এই তুই হাসছিস কেন?আর এই বাদরটাকে এসব শিখিয়েছিস তুই তাইনা?”

আকাশ হাসতে হাসতে বলে,, “আরে ভাই আমি শিখাবো কেন?ও নিজেই বাড়িতে থেকে এসব বানিয়েছে।মানে সবার নামের বারোটা বাজিয়ে নিয়ে এসেছে।হা হা হা!”

ইয়াশ নাক মুখ কুঁচকে বলে,, “তাই বলে হি,,,!”

“সুন্দর নাম না।তোমার তো খুশি হয়ে আমাকে পুরষ্কার দেওয়া উচিত ভাইয়া।”

আসিফের কথা শুনে ইয়াশ দাঁতে দাঁত চেপে বলে,, “পুরষ্কার তাই না! কালকে পেয়ে যাবি?”

“সত্যি!”

“ইয়াশ মিথ্যে বলে না!”

“ওকেহ,আচ্ছা এবার কয়েকটা খেয়ে আসি।বড়মা কখন থেকে ডাকছে?”

আসিফ চলে যেতে ইয়াশ আর আকাশ এসে সোফায় বসে।আকাশ একবার ভাবে ইয়াশকে মিথিলার কথা জিজ্ঞেস করবে।পরে কি ভেবে আর জিজ্ঞেস করে না।।
আকাশদের রাত্রের খাওয়া-দাওয়া শেষ হতে।সবাইকে সবার রুম দেখিয়ে দেওয়া হয়।সবাই গিয়ে শুয়ে পড়ে যার যার রুমে।

—————————————————

ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে মিথিলা রান্নাঘরে আসে।তিতলি হকের থেকে এক কাপ চা নিয়ে নিজের রুমের দিকে যায়।মাঝপথে ইয়াশের সাথে দেখা হয়।ইয়াশকে দেখে মিথিলা ভেংচি কাটে।ইয়াশের পাশ দিয়ে চলে যেতে চায়।ইয়াশ মিথিলার সামনে এসে ওর হাত থেকে চায়ের কাপটা কেড়ে নেয়।একবার চুমুক দিয়ে বলে,,

“থ্যাংস এটার দরকার ছিল এই মুহুর্তে। তুই আমার কত খেয়াল রাখিস রে মিথিলা!”

“ওটা আমার ছিল তুমি কেন নিলে?দাও আমায়!”

“এটার মধ্যে কি তোর নাম লেখা আছে।তোর কাছে কি প্রমাণ আছে এটা তোর।আর এখন তো আমি এটা এটো করে ফেলেছি এখনো কি খাবি এটা?”

মিথিলা সকাল সকাল বিরক্ত হয়।এই ছেলেও ওকে সকাল সকাল বিরক্ত করতে এসেছে যত্তসব।মিথিলা নিজের এলোমেলো চুলগুলো হাত খোপা করে কোমড়ের হাত দিয়ে দাড়ায় ইয়াশের সাথে ঝগড়া করার জন্য। ইয়াশ মিথিলাকে আড়চোখে একবার দেখে নিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলে,,

“কাল তোর প্রিয় মানুষকে না দেখে এত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেছিলি যে?তোর প্রিয় মানুষ তো বোধহয় কষ্ট পেয়েছে?”

মিথিলা প্রথমে ভ্রু কুঁচকে কিয়ৎক্ষনভাবে ইয়াশ কার কথা বলছে।আকাশের কথা মাথায় আসতেই মিথিলা চোখ বড়বড় করে বলে,,

“ছোট চাচ্চুরা এসেছে?”

“এমনভাবে চেঁচাচ্ছিস যেন তুই জানতিস না কালকে ছোট চাচ্চুরা আসছে?”

“ওহহ,যানতাম তো কালকে মাথা ব্যাথার জন্য ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।আচ্ছা আমি তাহলে আকাশ ভাইয়ার সাথে দেখা করে আসি।তুমি চা খাও!”

মিথিলা পিছন ঘুরে আকাশের রুমের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।কিন্তু পিছন থেকে ইয়াশ ডাকে আবার পিছন ফিরে।ইয়াশ কিছু বলতে নিবে তখনি আকাশের রুম থেকে জোরে কারো চিৎকারের আওয়াজ ভেসে আসে।ইয়াশ কিছু না বলে ভ্রু কুঁচকায়।এদিকে মিথিলা ইয়াশকে ফেলে আকাশের রুমের দিকে দৌড় লাগায়।পিছনে ইয়াশও যায়।

চলবে,, ইন শা আল্লাহ 🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here