তোকেই_ভালোবাসি #লেখিকা:#আমেনা_আক্তার_আখি #পর্বঃ২০

0
285

#তোকেই_ভালোবাসি
#লেখিকা:#আমেনা_আক্তার_আখি
#পর্বঃ২০

হক বাড়ি এখন মেহমানে ভরপুর।মিহুদের কম আত্নীয় থাকায় খুব কম লোকই এসেছে।মিহুর বিয়ের তিনদিন বাকি।আজকেই মিহুর নানুবাড়ির সবাই চলে এসেছে।মিহুর বাবারা তিনভাই কোনো বোন নেই বিধায় তাদের পরিবারের কেউ আসার নেই।মিনহাজ হক নীলাদের,রায়নাদের নেমন্তন্ন করেছেন।তারা রাতের ভিতর চলে আসবে বলেছে।মিথিলারা মিহুর রুমে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে।সাথে মিথিলার মামাতো দুই বোন,খালাতো ভাইও যোগ দিয়েছে।সবার আড্ডার মাঝে ইয়াশ আর আকাশও ওই রুমে ঢোকে।ইয়াশকে আর আকাশকে ঢুকতে দেখে প্রথমে মিথিলা উঠে পড়ে।মিথিলা উঠতে ইফাও উঠে পড়ে।দুজন সবাইকে বাহানা দিয়ে চলে যায়।আকাশ আর ইয়াশ একে অপরের দিকে তাকিয়ে রুমের ভিতরে যায়।মিহু দুজনকে দেখে বলে মন খারাপ করে বলে,,

“কিরে?তোদের তো দেখাই পাওয়া যায়।কোথায় থাকিস।আমি চলে যাবো তোদের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই?”

আকাশ আর ইয়াশ মিহির দুপাশে বসে পড়ে।ইয়াশ মিহুর দিকে তাকিয়ে বলে,, “তোর হিটলার বাপ তো আমাদের পেয়ে বসেছে।কালকে থেকে কাজ বোঝাচ্ছে!”

মিহু কপাল কুঁচকে বলে,, “হিটলার কি হ্যাঁ?আমার বাবার বিষয়ে কিছু বললে আমি কিন্তু চুপ থাকবো না!”

“হয়েছে হয়েছে বাবা পাগলি মেয়ে!”

আকাশের কথা শুনে মিহু ভেংচি কাটে।ফের দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে,, “কষ্ট পাবিনা দুজন?আকাশ না পেলেও ইয়াশ তুই?”

আকাশ সোজা মিহুর দিকে ঘুরে বলে,, “আমি এতদিন দুরে ছিলাম বলে কি তুমি চলে যাওয়াতে কষ্ট পাবোনা? এটা কিভাবে বলতে পারলে?”

“কষ্ট পেলে তো আর এতদিন দুরে থাকতি না?”

“আচ্ছা এতদিন তোমাদের থেকে দুরে থেকে কি আমরা সুখে ছিলাম?”

মিহু আকাশের চমাথার চুলগুলো হাত দিয়ে নেড়ে বলে,, “হয়েছি বুঝেছি তুই অনেক কষ্ট পাবি!”

“মিহু!”

“কি?”

ইয়াশ অন্যদিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবে মিহুর দিকে তাকিয়ে বলে,, “না কিছুনা!আসছি আমি?”

বলে ইয়াশ ওখান থেকে উঠে চলে যায়।মিহু ইয়াশের যাওয়ার পানে তাকিয়েই আকাশকে বলে,, “ওর আবার কি হলো?”

আকাশ ঘাড় উঁচিয়ে বলে,, “জানিনা!আচ্ছা আমি দেখে আসছি।”

আকাশ চলে যেতে মিহু ওর মামাতো দুই বোন আর খালাতো ভাইয়ের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়।

——————————————

মিথিলা নিজের ঘরে এসে ফোন ঘাটছিল।তার মন ফোনের থেকে নিজের ভাবনায় বেশি ছিল।ফোনের দিকে তাকিয়ে ভাবছিল কিছু।তখন রুমের দরজা খোলার শব্দে সেদিকে তাকায়।ইয়াশকে দেখে উঠে বসে।ইয়াশ দরজা চাপিয়ে দিয়ে মিথিলার কাছে আসে।বিছানা থেকে টেনে তুলে শক্ত কন্ঠে বলে,,

“সমস্যা কি তোর?পালাচ্ছিস কেন আমাকে দেখে?”

মিথিলা ইয়াশের থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,, “তোমাকে দেখে পালাবো কেন?তোমাকে দেখে পালানোর কোনো কারণ?”

“ইগনোর করছিস আমাকে?শোন ভাব কম কর! এতদিন আমার পিছনে ঘুরেছিস এখন ঢং করছিস?”

“ঢং করছি না তো?তোমার পিছু ছেড়ে দিয়েছি তোমার তো খুশি হওয়ার কথা।এতদিন তোমার পিছু ঘুরতাম বলে বিরক্ত হতে।এখন নিশ্চয়ই শান্তিতে আছো।”

“না শান্তিতে নেই!কারণ,,”

“কারণ,,”

ইয়াশ কিছুক্ষণ চুপ থাকে।মিথিলার দিকে তাকিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়া বলে ওঠে,,

“কারণ আমি তোকে ভালোবাসি।”

ইয়াশের কথাটা কর্ণকুহরে যেতে মিথিলা স্থির হয়ে যায়।একথাটা ও এতদিন শুনতে চেয়েছিল।আজকে শুনছে।হ্যাঁ ও ঠিকই শুনছে।ইয়াশ ওকে ভালোবাসি বলেছে।মিথিলা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইয়াশের দিকে।একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকাতে চোখেকোটরে অশ্রু জমাট বেধেছে।ইয়াশ সেদিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে চোখের কোটরে থাকা পানিটুকু মুছে দেয়।গালে হাত রেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে মিথিলার পানে।কিছুটা এগিয়ে মিথিলার কপালে চুমু আঁকে। মিথিলা চোখ বন্ধ করে স্পর্শটুকু অনুভব করে।কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে সামনে কাউকে দেখতে না পেয়ে আবার চোখ বন্ধ করে নেয়।ঠোটে মৃদু হাসি ফুটে ওঠে।

————————————————

নীলারা রাত্রে চলে এসেছে।তাদের আগে খেতে দেওয়া হয়েছে।মিথিলা ইফা মিহু মিহুর কাজিরনরা সবাই ড্রইংরুমের সোফায় বসে ছিল।মিথিলা গালে হাত দিয়ে নীলার দিকে তাকিয়ে আছে।নীলা সেটা খেয়াল করে খাওয়ার মাঝে মিথিলার দিকে তাকায়।মিথিলা তখনও নীলার দিকে তাকিয়ে ছিল।মিথিলার এভাবে তাকানো দেখে নীলা ভ্রু কুঁচকে নেয়।ও কিছুক্ষণ মিথিলার দিকে তাকিয়ে নিজের খাওয়ায় মনোনিবেশ করে।দুজনের চোখাচোখি দেখে পাশ থেকে ইফা টিটকিরি মেরে বলে,,

“নীলা আপুর দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?নীলা আপুর দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকলেই সে ভাইয়ার পিছু ছেড়ে দিবে না!”

মিথিলা ঘুরে ইফার দিকে তাকায়।কালকে রাত্রের মারামারির সারাদিন কেউ কারো সাথে একটা কথা বলেনি।ইফার কথা শুনে মিথিলা মাথা নাড়ায়।

“নীলাকে কিভাবে তোর ভাইয়ের পিছু ছাড়াতে হয়,সেটা আমি দেখে নিব।”

“কালকে না বললা আমার ভাই তোমার পিছু ঘুরে, তো আজকে নীলাকে নিয়ে এসব কেন বলছ?নীলা আপু বাইয়ার পিছু ঘুরুক আর না ঘুরুক তাতে তোমার কি?”

মিথিলা দাত চেপে বলে,, “সব কথা তোকে বলতে হবে?ওই নীলা তোর ভাইয়ের সাথে মিশলে আমার সহ্য হয়না।সো যদি তোর ভাইয়ের দিকে তাকায় আমি তো ছেড়ে দিব না।আর এখন তো আরো না!”

ইফা আর কথা বলেনা চুপ হয়ে থাকে।ও পাশে বসা মিহুর দুই খালাতো বোনের সাথে কথা বলায় যোগ দেয়।মিথিলা আবার নীলার দিকে তাকায়।নীলা তখনও খেয়ে যাচ্ছিলো।কিছুক্ষণ পর ইয়াশ আর আকাশ দুজনে নিচে আসে।ইয়াশকে দেখে নীলার বাবা ওকে ডাক দেয়।ইয়াশ কাছে গিয়ে তার ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে।

“তো দিনকাল কেমন যাচ্ছে?”

“এইতো বেশ ভালোই।আপনাদের কি অবস্থা?”

“আমরাও আলহামদুলিল্লাহ। তো এতরাতে দুজন কোথায় যাচ্ছো?”

“এইতো একটু বাইরে মামা।একটু পরেই চলে আসবো।”

ইয়াশ কথাটা বলতে নীলার বাবা ওকে যেতে বলে। ইয়াশ আর আকাশ সামনে মেইন দরজার দিকে হাটা দিতে নীলা ইয়াশদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে লজ্জামিশ্রিত হাসে।মিথিলা সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

—————————————-

মিথিলা ইয়াশের রুম পারি দিয়ে নিজের রুমে যাবে কিন্তু ইয়াশের রুমের দরজার সামনেই সে থেমে যায়।ভিতর থেকে আসা কথাগুলো কান পেতে শুনতে থাকে।

“শোনো বোঝার চেষ্টা করো?”

“নীলা প্লিজ?দেখো আমি বলছি তো আমি এসবের ভিতর নাই কারণ,,”

“কারণ কি ইয়াশ,বলো কারণ কি?দেখো আমার বাবা,ফুফু কিন্তু আমাদের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে!এখন তুমি রাজি না হলে কিন্তু,,,?”

“কিন্তু কি?”

বিয়ের কথা শুনে মিথিলা দুরে সরে আসে।জোরে জোরে শ্বাস ফেলে কয়েকবার চোখের পলক ফেলে।ইয়াশ আর নীলার বিয়ে।মেজোমা ওদের বিয়ে ঠিক করেছে?ইয়াশকে কি নীলার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে?
ইয়াশের সাথে নীলার বিয়ে কথাটা ভাবতে মিথিলার শরীর আসাড় হয়ে আসে।সে ওখান থেকে আস্তে আস্তে নিচের রুমের দিকে আগায়।মাথায় ঘুরপাক খায় নানা প্রশ্ন!

চলবে,, ইন শা আল্লাহ🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here