#_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি ।
#_পর্ব = ৩২
সজীব যতটা মারাত্মক ভেবেছিলে ততটা সমস্যা নয় , বৃষ্টি কাজের সময় অন্যমনস্ক হয়ে কাজ করতে গিয়ে বাম হাতে নিডেল ঢুকে গেছে । কিন্তু রক্ত দেখে বৃষ্টি তার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে তবে সজীব আসার আগেই তার জ্ঞান ফিরেছে ৷ মরিয়ম বৃষ্টির সাথেই ছিল তাই সজীব গেটের কাছে এসে কল দেবার সাথে সাথে বৃষ্টিকে নিয়ে গেটের কাছে আসলো । আগেই বৃষ্টির আজকে ছুটির গেইট পাশ অফিস মেডিকেল থেকে দেয়া হয়েছে । সিকিউরিটিকে দেখিয়ে সজীব এর সাথে বৃষ্টিকে দিয়ে মরিয়ম উপরে চলে গেল ।
সিএনজিতে উঠে বৃষ্টি সজীব এর ঘাড়ে মাথা রেখে চুপচাপ বসে রইলো । এখন অফিস টাইম তাই রাস্তা একদম ফাঁকা , মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে সিএনজি বৃষ্টিদের বাসার সামনে চলে এলো । সিএনজি থেকে নেমে বৃষ্টি সজীব এর হাত ধরে আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেয়ে উপরে যেতে লাগলো । হঠাৎ করে দোতলায় সিঁড়ির মধ্যে মামুনের সাথে দেখা হয়ে গেল । মামুন বৃষ্টিদের বাসায় গিয়েছিল সেখান থেকে ফেরার পথে সজীব আর বৃষ্টির মুখোমুখি হয়ে গেল ।
” মামুন বললো , কি হইছে বৃষ্টি ? অসময়ে বাসায় ? কোন সমস্যা ? তুমি কি অসুস্থ ? ”
” বৃষ্টি বললো , তেমন কিছু না মামুন ভাই আপনি কোথায় গেছিলেন ? ”
” তোমাদের বাসায় , আঙ্কেল কেমন আছেন সেটা নিজের চোখে দেখে আসলাম । ”
” ওহহ আচ্ছা , ঠিক আছে তাহলে যান আবার অন্য সময় কথা হবে । ”
” বেশি সমস্যা হলে বলো তোমাকে তাহলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো । ”
” না সমস্যা নেই সজীব এর সাথে ডাক্তারের কাছে গিয়ে তারপর ফিরলাম । আর তাছাড়া এমনিতেই আপনি বাবার অসুস্থতার সময় আমাদের অনেক উপকার করেছেন । তাই আপনাকে আর শুধু শুধু ঝামেলা দিতে চাই না তবে সত্যি সত্যি যদি কখনো দরকার হয় সাথে সাথে জানাবো । ”
” আচ্ছা ঠিক আছে ভালো থেকো সবসময় । ”
” আপনিও ভালো থাকবেন । ”
★★
সজীব আর বৃষ্টিকে একসাথে রুমের মধ্যে প্রবেশ করতে দেখে বৃষ্টির বাবা অবাক হয়ে গেল । ব্যস্ত হয়ে গিয়ে কিছু একটা বলতে চাচ্ছেন কিন্তু হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছেন ।
” বললেন , কি ব্যাপার মা বৃষ্টি ? আজকে অফিসে যাসনি ? ”
” বৃষ্টি আস্তে আস্তে বললো , গেয়েছিলাম বাবা কিন্তু হঠাৎ করে অসাবধানতায় কাজ করতে গিয়ে নিডেল ঢুকে গেল ৷ আর তুমি তো জানো তোমার মেয়ে রক্ত দেখে সহ্য করতে পারে না তাই অজ্ঞান হয়ে গেলাম ।
” বাবা বললো , কি সাংঘাতিক অবস্থা সজীব তুমি কি অফিসে ছিলে ? ”
” বৃষ্টি বললো , না বাবা সজীবকে আমার বান্ধবী মরিয়ম কল দিয়ে যেতে বলেছে নাহলে তো আসতে পারতাম না ৷ ”
” তা তো ঠিকই , আচ্ছা তুই বিশ্রাম কর আর সজীব তুমি সামনের ওই প্লাস্টিকের টুল টেনে বসো । ”
” সজীব বললো , না স্যার সমস্যা নেই আমি এখনই চলে যাবো আপনি ব্যস্ত হবেন না । বৃষ্টি বরং বিছানা ঠিক করে সুয়ে থাকুক কাল রাতে তো ভালো করে ঘুমাতে পারে নাই । ”
” কথাটা শুনে বৃষ্টি সজীব এর দিকে চোখ বড় বড় করে এমন ভাবে তাকালো যা দেখে সজীব এর মনে হলো যে বৃষ্টি তার মাথাটা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে । সত্যি সত্যি বৃষ্টি সজীব এর কথা শুনে রেগে গিয়ে বললো , বাসায় গিয়ে কি করবে জানতে পারি ? দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে তারপর যাবে আর মাও ততক্ষণে এসে পরবে । ”
” সজীব আর কিছু না বলে চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে রইলো । ”
এবার কিন্তু সজীব এর দিকে তাকিয়ে বৃষ্টির চরম হাসি পেয়ে গেছে কারণ এতবড় একটা মানুষ মাত্র একটা ঝাড়িতে চুপচাপ হয়ে গেছে । মেয়েরা সর্বদা তার কাছের মানুষটাকে শাসন করে নিজের মনের মতো রাখতে পছন্দ করে কিন্তু বেশিরভাগ মেয়ে সফল হতে পারে না ৷
বৃষ্টি বললো , চা খাবে ? ঘরে চা চিনি আছে তাহলে গরম করে আনি ? ”
” না দরকার নেই , আমি চা খাই না । ”
” বৃষ্টি বাবার দিকে তাকিয়ে দেখে তার বাবা পাশে ফিরে অন্য দিকে ফিরে আছে । তাই বৃষ্টি তার মুখটা সজীব এর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো ” এত রাগ করো কেন ? আমি তোমার বিয়ে করা বউ নই যে আদর করে রাগ ভাঙ্গাতে যাবো । ”
” সজীবও ফিসফিস করতে করতে বললো , আমি জানি কেউ আমার রাগ ভাঙ্গাবে না তাই বৃথা কারো সাথে রাগ করি না । ”
“তাহলে গাল দুটো টমেটোর মতো হয়ে গেছে কেন ?”
” জানিনা , একটা কথা বলবো ? ”
” বলো । ”
” কাল রাতে ঘুমাতে পারো নি বলে আজকে অফিসে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে তাই না ? ”
” হুম তা ঠিক । ”
” তাহলে এখন যেহেতু দুপুর একটা বেজে গেছে তাই দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরো তাহলে রাতের সেই ঘুমটা পুরন হবে । ”
” আর তুমি ? ”
” আমিও বাসায় চলে যাবো , তাছাড়া মামুন নামের ছেলেটা দেখে ফেলেছে আমি তোমার সাথে বাসায় এসেছি । বাহিরে গিয়ে না জানি রাগে কতটা গজগজ করতে আছে ? ”
” আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু শর্ত হচ্ছে আমি যতক্ষণ না ঘুমাবো ততক্ষণ তোমাকে থাকতে হবে । ”
” আমি থাকলে তুমি ঘুমাতে পারবে না । ”
” হিহিহি কেন ? ”
সজীব উত্তর দেবার আগেই তার পকেটে মোবাইল বেজে উঠলো বের করে দেখে মিতুর নাম্বার থেকে কল এসেছে ৷ প্রথম বার কেটে দিল কিন্তু দ্বিতীয়বার আবার যখন কল দিল তখন রিসিভ করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ।
” হ্যাঁ মিতু বলো । ”
” কেমন আছো ? ”
” এই তো আলহামদুলিল্লাহ তুমি কেমন আছো ? ”
” ভালো আছি , সকাল থেকে তো একবারও কল দিলে না অফিসে বসে মনটা খারাপ লাগছে তাই বাধ্য হয়ে জীবনে প্রথম সিম কোম্পানির কাছ থেকে ধার নিলাম । ”
” আসলে গতকাল রাতে ঘুমাতে অনেক দেরি হয়ে গেছে তাই সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গলো বারোটার পরে তাছাড়া বিকেলে কল দিতাম । ”
” কোথায় আছো ? ”
” বৃষ্টির বাসায় ? ”
” ওহহ আচ্ছা , বৃষ্টি আপু কি বাসায় ? ”
” হ্যাঁ , হাতের আঙ্গুলে নিডল ঢুকে গেছে তাই আমি গিয়ে নিয়ে আসলাম ৷ ”
” বেশি সমস্যা হয়েছে ? ”
” নাহহ তবে ও রক্ত সহ্য করতে পারে না তাই অজ্ঞান হয়ে গেছে । ”
” আজকে আমাদের বেতন ছেড়েছে , আগামীকাল তোমাকে আসতে হবে । ”
” ঠিক আছে যেতে পারবো সমস্যা নেই । ”
” খাওয়া হয়েছে ? ”
” না বাসায় গিয়ে করবো ৷ ”
” ঠিক আছে রাখি তাহলে ? ”
” আচ্ছা ঠিক আছে ভালো থেকো । ”
” বিকেলে দেখা করতে পারবে ? ”
” সঠিক বলতে পারি না । ”
” আচ্ছা ঠিক আছে আমি ছুটির পরে কল দেবো তুমি যদি ফ্রী থাকো তাহলে দেখা করিও । ”
” চেষ্টা করবো । ”
” আল্লাহ হাফেজ । ”
★★
” সজীব রুমের মধ্যে প্রবেশ করার সাথে সাথে বৃষ্টি বললো , কে ফোন করেছে ? ”
” সজীব বললো , মিতুর কল ছিল । ”
” স্পেশাল কোন কথা ছিল নাকি ? ”
” মানে ? ”
” রুমের মধ্যে রিসিভ করে কথা না বলে বাহিরে গিয়ে স্পেশাল ক্লাস করে আসলেন । তাই ভাবলাম মনে হয় স্পেনের কোন আলাপ আলোচনা করবেন । ”
” ধুর কি সব বলো তুমি ? ”
” তুমি বাসায় চলে যাও । ”
” কেন ? ”
” তাহলে কি করবে এখানে ? যাও বাসায় যাও । ”
” সজীব দেখলো বৃষ্টি একটুতেই রেগে গেছে কিন্তু এই মুহূর্তে সজীব এর চলে যাওয়া ঠিক হবে কিনা সজীব ভাবছে । কারণ সজীব যদি সত্যি সত্যি চলে যায় তাহলে বৃষ্টি মনে মনে বলবে ‘রাগ করে চলে যেতে বলার সাথে সাথে চলে গেছে ‘ তাই সজীব চুপচাপ রুমের মধ্যে বসে আছে । ”
এদিকে মামুন বাসা থেকে বেরিয়ে গলির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু সজীব বের হচ্ছে না দেখে তার রাগ বাড়তে থাকে । সে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে বসে আবার বেঞ্চ ছেড়ে উঠে একটু হাঁটাহাঁটি করে । তার সাথের বন্ধুরা সব কিছুই বুঝতে পারছে না তবে বিশাল কিছু ঘটতে চলছে সেটা বুঝতে পারছে । কারণ মামুন সচারাচর এমন করে না কিন্তু যখন কারো উপর প্রচন্ড রাগ করে মারামারি করে তখন তার পূর্বে এমন করার অভ্যাস আছে ।
চলবে….
বিঃদ্রঃ- আগামীকাল পবিত্র ঈদুল আজহা । শুধুমাত্র গল্প ছাড়া দেবার মতো তেমন কিছু নেই আমার । তাই ঈদুল আজহা উপলক্ষে স্পেশাল একটা এক পর্বে সমাপ্ত করা গল্প উপহার দিতে চাই । তাই আশা করি সবাই আমার সেই উপহার গ্রহণ করবেন ।
ঈদ মোবারক ।
যদি আপনার কাছে গল্পটা ভালো লাগে তাহলে লাইক দিয়ে সুন্দর একটা মন্তব্য প্রকাশ করুন ।
ভালবাসা অবিরাম অন্তহীন ।
লেখাঃ
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)