_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি । #_পর্ব = ৩৬

0
255

#_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি ।
#_পর্ব = ৩৬

” কখন কি করতে হবে সবকিছু আমি সময় নিয়েই তোমাকে জানিয়ে দেবো। কিন্তু তুমি পুরোপুরি ভাবে আমার প্রস্তাবে রাজি কিনা সেটা হচ্ছে বড় বিষয়। আর তুমি রাজি না হলেও সমস্যা নেই কারণ আমি একসাথে তিনটা প্ল্যান করেছি তার মধ্যে একটা যদি ফেইল করে তাহলে আরেকটা ব্যবহার করবো। তুমি হচ্ছ আমার পরিকল্পনার প্রথম অংশ প্ল্যান (A) যদি রাজি না হও তাহলে আমি প্ল্যান (B) প্রয়োগ করবো। তবে তুমি রাজি হলে সজীবকে পাবার সম্ভবনা আছে তোমার। ”

” আপনি কি আমাকে দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করতে চান? ”

” যদি তেমন মনে করো তাহলে তাই, সজীব অথবা বৃষ্টি দুজনের কারো কাছে আমি শত্রু হতে চাই না। তবে প্ল্যান B/C এর মধ্যে সজীব সামনে আমাকেই শত্রু হতে হবে কিন্তু তবুও বৃষ্টির সামনে শত্রু হওয়া যাবে না। কারণ বৃষ্টির সামনে শত্রু হতে গেলে তো তার ভালবাসা পাওয়া যাবে না। ”

” আমি যদি আপনার কথায় রাজি না হই তাহলে আপনি সজীব এর কোন ক্ষতি করে তাকে আপনার পথ থেকে সরাবেন তাই না? ”

” বাহহ, তোমার তো বেশ বুদ্ধি আছে। ”

” আমি আপনার প্ল্যান (A) শুনতে চাই। ”

” ঠিক আছে তারমানে তুমি রাজি? ”

” আগে শুনবো তারপর সিদ্ধান্ত নিতে চাই। ”

” ঠিক আছে সময় মতো সবকিছু জানানো হবে তোমাকে, দুদিন পর রমজান মাস শুরু হবে। আমি চাই না রমজানের মধ্যে কোন খারাপ কাজ আমরা করি, তাই যা কিছু করার সবকিছু ঈদের পরে করা হবে। তবে এরমধ্যে যদি পরিস্থিতিতে পরে আগে থেকে কাজ শুরু করতে হয় তাহলে তোমাকে আমি জানাবো। ”

” ঠিক আছে। ”

” আরেকটা কথা, সজীব এর সাথে তুমি কোন রকম খারাপ ব্যবহার বা সম্পর্ক ছিন্ন করবে না। বরং চেষ্টা করবে সবসময় বন্ধু হয়ে থাকার জন্য, যেন তুমি বললেই তোমার যেকোনো উপকার করতে চায়। ”

” ঠিক আছে তাই হবে। ”

” আসি তাহলে, আল্লাহ হাফেজ। ”

★★

বিছানায় শুয়ে শুয়ে বৃষ্টি রঙিন রঙিন কিছু স্বপ্ন কল্পনা করে। সেখানে সে মনে মনে সজীব এর সাথে কথা বলে। সে ভাবে ঘাটের নৌকা রবে দাঁড়িয়ে ফুলের পাপড়ি ঝড়ে হেমন্তের নীলাদ্রি পরিষ্কার বাতাস যেন তোমার আমার অপেক্ষা করে। হাতে রেখে হাত রব বসে দুজনে নৌকার গালিচায় নিরালায়। রুপকথার গল্প কে হার মানিয়ে তুমি আমি পৌঁছে যাব রঙিন স্বপ্নের ভুবন ভরা স্নেহময় বৃক্ষছায়ার ভালোবাসার সৃষ্টি নদীর মাজে আঁকাবাকা পথ ধরে। তোমার কাঁধে মাথা রেখে দেখব জোছনা ভরা রাত। চাঁদ টাকে সাজিয়ে রেখেছেন লক্ষ তারার মেলা ছোট বড়ো অজস্র স্নান। একসময় ঘুমিয়ে পড়বে ধরনীর বুক নিস্তব্ধতা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে নিশিযাপন বিহঙ্গের ডাক।

★ এগারোটার দিকে বৃষ্টি সজীব এর নাম্বারে একটা মেসেজ লিখলো।

কি করছো স্বপ্নের নায়ক,
ঘুম আসছে কি চোখে ?
কি করে ঘুমাও তুমি
একলা আমায় রেখে ?

আমি কিন্তু থাকতে পারিনা
তোমায় মনে পরে।
পারছি না আর তোমায় ছেড়ে
একলা থাকতে ঘরে।

★ সজীব মেসেজ পরে অন্ধকারে হেসে দিল, তার ঠোঁটের কোনে এখনো হাসি লেগে আছে। সজীব তাই মেসেজ রিপ্লাই লিখলো।

আর কিছুদিন সবুর করো
আসবো তোমায় নিতে।
রোজ নিশিতে জোৎস্না দোখবো
থাকবো তোমার সাথে।

সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গিয়ে
ডাকবে আমায় তুমি।
আলসে চোখে তাকিয়ে তখন
জড়িয়ে ধরবো আমি।

★ বৃষ্টি ভাবলো একটা মেসেজ লিখতে অনেক সময় লাগে তাই তারচেয়ে কল দিয়ে কথা বলা যায়। বৃষ্টি নাম্বারে কল দিল আর সজীব কল কেটে দিয়ে পুনরায় কলব্যাক করলো৷

” বৃষ্টি বললো, কি করছো? ”

” মাত্র বাতি বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পরলাম। ”

” কিছু ভাবছো নাকি? ”

” হ্যাঁ ”

” কি? ”

” বিয়ের পরে কতগুলো বাচ্চা নেবো তারপর কতদিন পরে বাচ্চা নেবো সেগুলো হিসাব করছি। ”

” যাহহ শয়তান। ”

” সত্যি বলছি। ”

” কতদিন পরে বাচ্চা নেবে? ”

” পাঁচ বছর পরে। ”

” এতদিন পরে কেন? ”

” তুমি আমি দুজন পাঁচ বছর খুব রোমান্টিক ভাবে কাটাব তারপর বাচ্চাদের আগমন হবে। নাহলে তার আগে বাচ্চা নিলে আমার প্রতি আর ভালবাসা থাকবে না তোমার তখন ৫০% সন্তানের কাছেই ট্রান্সফার হয়ে যাবে। ”

” তাই বলে পাঁচ বছর? ”

” হুম পাঁচ বছর ধরে জমি চাষ করবো তারপর ফসল উৎপাদন শুরু করবো। এতদিন ধরে চাষ করলে ফসল খুব ভালো পাওয়া যাবে। ”

” ছি ছি ছি, কত্তবড় খারাপ, ওই তোমার মুখে কি কিছু বাঁধে না? এমন করে কথা বলো কীভাবে? লজ্জা শরম কিছু নেই, শয়তান একটা। ”

” তুমি এখন কোথায়? ”

” ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছি, তুমি? ”

” তাহলে সমস্যা কি? রকি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে কারণ ও বিছানায় শুয়ে সাথে সাথে ঘুমিয়ে যায়। তাহলে তুমি আমি ছাড়া কেউ যখন শুনতে পাচ্ছে না তবে চাষবাস নিয়ে কথা বলতে সমস্যা কি? ”

” সাইফুল ভাইয়ের পাঠক পাঠিকা আছে, তারা তো সবকিছু পড়ে ফেলবে। ”

” তাতে কি হইছে? পাঠক পাঠিকারা বুঝি চাষবাস করবে না তাই না? হয়তো সবাই এখনো বিয়ে করে নাই তাই বলে কি আগে জানতে পারবে না? ”

” তুমি এগুলো বাদ দাও নাহলে কল কেটে দেবো। ”

” ঠিক আছে বাদ দিলাম। ”

” মায়ের সঙ্গে আলাপ হয়েছে আমার, মা আর আমি চাই যে তুমি প্রথম রমজানের দিনে খালাকে নিয়ে আমাদের বাসায় ইফতার করবে। ”

” প্রথম রমজানেই? ”

” হ্যাঁ প্রথম দিনই, কেন সমস্যা আছে নাকি? ”

” কি যে কও না? আমি তো রাজি। ”

” তাহলে আর কি? আগামীকাল খালার বাসায় গিয়ে এ বিষয় কথা বলবা। বাড়িতে জানানোর ব্যবস্থা করো তবে প্রথম রমজানে এসে কথাবার্তা হবার পরে মা-বাবা কে আসতে বলতে হবে। ”

” ঠিক আছে তাই হবে। ”

” সজীব? ”

” বলো। ”

” বেশি কিছু চাই না তোমার কাছে শুধু আমি তোমার কাছে সময়টুকু চাই, যা তুমি শুধু আমার জন্য বরাদ্দ রাখবে। ”

” আমার সকল সময় তোমার জন্য। ”

” তোমার বুক ভর্তি পশম তাই না? ”

” হুম কিন্তু কেন? ”

” শুনেছি যাদের বুকে বেশি পশম তাদের মায়াদয়া অনেক বেশি তাই সবসময় তুমি আমাকে ভালবাসবে তাই না? ”

” আমার নানার বুকে আমার চেয়ে বেশি পশম কিন্তু সে আমার নানিকে এখনো মাসের মধ্যে একবার করে গায়ে হাত তোলে। আমার নানি হচ্ছে নানার দ্বিতীয় স্ত্রী, নানার প্রথম স্ত্রী আত্মহত্যা করেছিলেন কারণ নানার অত্যাচার সহ্য করতে পারে নাই। তাহলে এবার বলো তো তোমার বুক ভর্তি পশম চাই নাকি সজীব এর ভালবাসা চাই? ”

” ভালবাসা চাই। ”

” কতটুকু? ”

” যতটুকু ভালবাসা পেলে আমি পৃথিবীর কোনকিছু আর খেয়াল থাকবে না। ”

” তুমি ঠিক ততটুকু সুন্দর
যতটুকু আমার কল্পনায়।
তুমি ঠিক ততটুকু রাগী
যতটুকু তোমায় মানায়।
তুমি ঠিক ততটাই প্রিয়
যতটুকু মনের পিঞ্জিরায়।
তোমায় ঠিক ততটাই ভালবাসবো
যতবেশি ভালবাসা যায় । ”

” বিয়ের পরে সামান্য অবহেলা করলে কিন্তু মরে যাবো আমি। ”

” বললাম তো অবহেলা করবো না এতটাই ভালবাসা সাজিয়ে দেবো কল্পনা করতে পারবে না। ”

” আচ্ছা কয়টা সন্তান নেবে তুমি? ”

” তিনটা। ”

” কেন? ”

” দুটো ছেলে আর একটা মেয়ে। প্রথম দুটো ছেলে হবে প্রথম তাদের একজন থাকবে দাদা-দাদীর কাছে আর একজন থাকবে নানা-নানুর কাছে। আর সবার ছোট একমাত্র কন্যা স্নিগ্ধা। ”

” বাহহ এতকিছু ভাবা শেষ? ”

” হুম। তবে এখন বাকিটা আল্লাহ আর তোমার উপর নির্ভর করবে। দেখা গেল তুমি প্রথমেই মেয়ে জন্ম দিয়ে বসলে তখন তো পরিকল্পনা বাতিল। ”

” হিহিহি, আল্লাহ যা দেবে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। ”

” ঘুমাবে কখন? ”

” তুমি যখন বলবে। ”

” ঠিক আছে তাহলে রাখলাম, শুভ রাত্রি। ”

” সকালে দেখা হবে। ”

” তাতো হবেই হবে, সেটা মিস হবে না। ”

” বায় লাভ ইউ। ”

” লাভ ইউ ঠু। ”

★★

বৃষ্টি কল কেটে দিয়ে দেখে তার পিছনে মিষ্টি দাঁড়িয়ে আছে, বৃষ্টিকে দেখে একটা হাসি দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো, ” প্রেম করছিলে বুঝি তাই না আপু? ”

” গরম লাগে ছাড় আগে, আর তুই এখনো ঘুমাসনি কেন? ”

” তোকে জড়িয়ে না ধরলে ঘুম আসে না তো। ”

” যখন গ্রামের বাড়িতে চলে যাবি তখন তো তোর দুলাভাইয়ের সাথে থাকবো। সেই সময় একা একা কীভাবে ঘুমাবি? ”

” আমি তোকে ছাড়া গ্রামের বাড়ি যাবো না, বিয়ে হলেও আমি তোর সাথে থাকবো। ”

” চুপ কর মিষ্টি, গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তোকে নতুন করে স্কুলে ভর্তি হতে হবে। এমনিতেই চট্টগ্রামে আসার পরে তোর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন গ্রামের বাড়ি গিয়ে এক বছর লস দিয়ে আবারও ভর্তি হতে হবে। আমাদের বলা একজন শিক্ষক সেটা ভুলে গেলে চলবে না। ”

” আচ্ছা আপু তুই বল ছোটবেলা থেকে কখনো আমি তোকে ছাড়া থেকেছি? এখন আমি তোকে ছাড়া কীভাবে থাকবো? তোকে ভালো করে জড়িয়ে ধরতে না পারলে আমার ঘুম আসবে না। ”

” গ্রামের বাড়ি গেলে আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যাবে।

” কচু হবে, তোকে ছাড়া কান্না করতে করতে চোখ নাক ফুলিয়ে ফেলবো তখন দেখবি তুই নিজেই গিয়ে আবার নিয়ে আসতে হবে। ”

” পাগলি বোন অমন করে বলে না। ”

” তাহলে বল আমাকে তোর সাথে সাথে রাখবি !”

” আচ্ছা ঠিক আছে যদি আমাকে ছাড়া থাকতে না পারো তাহলে আবার আমার কাছে নিয়ে আসবো। ”

” এইতো আমার লক্ষি সোনা আপু, বলেই মিষ্টি আবার জড়িয়ে ধরলো। ”

” বৃষ্টি বললো, একবার বলছি না গরম লাগে? ছাড় তাড়াতাড়ি আর রুমে চল অনেক রাত হয়ে গেছে। ”

” আচ্ছা ঠিক আছে। ”

” বিছানায় শুয়ে মিষ্টি বললো, ঈদের সময় আমাকে দুটি থ্রি-পিছ আর একটা শাড়ি কিনে দিতে হবে। ”

” তুমি তো পিচ্চি তাহলে শাড়ি দিয়ে কি হবে? ”

” রেখে দেবো, বড় হয়ে তারপর পরবো তোর বিয়ের আগের একটা চিন্হ রেখে দেবো। ”

” বিয়ের পরে বুঝি দেবো না? ”

” তখন তো আলাদা সংসার হবে তাই ইচ্ছে করলেই তো আর দিতে পারবি না তাই না? ”

” এত পাকা পাকা কথা বলিস কেন? আমার বিয়ের পরে তোর সব চাহিদা তোর দুলাভাই নিজেই পূরণ করবে। কারণ তার দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র শালি বুঝতে পারছো? ”

” তখন দেখা যাবে। ”

★★

পহেলা রমজানের দিন সজীব আর তার খালা বৃষ্টির বাসায় ইফতারে সময় আসতে পারে নাই। সজীব এর অফিস থেকে আসতে একটু দেরি হয়ে গেছে তাই তারা মাগরিবের নামাজ পরে বৃষ্টিদের বাসায় গেল।

রান্নার কাজ সবকিছু বৃষ্টি আগেই শেষ করেছে, তাই বৃষ্টি ফ্রী ছিল। সজীব আর তার খালা প্রবেশ করলো তাদের রুমে, খালাকে আর সজীবকে সামান্য নাস্তা দেয়া হয়েছে কারণ একটু পরে আবার ভাতের আয়োজন আছে। তাই ইফতার দিয়ে পেট ভরিয়ে খাবার নষ্ট করতে চায় না সজীব।

সজীব এর খালা চেয়ারে বসে আছে, বৃষ্টি বাবা তার খাটের উপর আধাসোয়া হয়ে বসে আছে। বৃষ্টির মা স্বামীর পাশে বসে আছে আর মিষ্টি তার বোনের সাথে দাঁড়িয়ে আছে।

হঠাৎ করে বৃষ্টি সজীব কে চোখের ইশারায় ডাক দিয়ে ছাঁদের কিনারে নিয়ে গেল। তারপর সেখানে গিয়ে বললো, ” বাসায় সামান্য খাবার পানি আছে, আজকে পানি দিয়ে যায় নাই এখনো। আমাদের বিল্ডিংয়ের পানি ভালো না তাই আমরা রাস্তার মুখের ওই পানির টাংকি থেকে কিনে আনি। তারা বাসায় পৌঁছে দিয়ে যায় অবশ্য ডেলিভারি চার্জ আছে। ”

” তাহলে আমি কি গিয়ে নিয়ে আসবো? ”

” তুমি সেখানে গিয়ে দেখবে কাউকে পাও কি-না, যদি না পাও তাহলে একটা রিক্সা করে নিয়ে আসবে আর রিক্সাওয়ালা কে বলবে তুলে দিতে। দরকার পরে টাকা বেশি দেবে সমস্যা নেই নাহলে ভাত খেতে গিয়ে পানি কম পরবে। ”

” ঠিক আছে আমি এখনই যাচ্ছি তুমি বরং খালার খোঁজ রেখো, তার সাথে কথাবার্তা বলো গল্প গুজব করো ঠিক আছে? ”

” সে তোমাকে বলে দিতে হবে না। ”

” আচ্ছা ঠিক আছে, এ কথা বলে সজীব বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। ”

|
|

বৃষ্টি ভিতরে গিয়ে দাঁড়াল, সে এই মুহূর্তে কি করবে ঠিক বুঝতে পারছে না। রুমের মধ্যে টেলিভিশন অন করা আছে কিন্তু ভলিউম কমানো।

” বৃষ্টির মা বললো, সজীব এর মা-বাবা সবাই কেমন আছে? তারা যদি আসতো তাহলে হয়তো আরো বেশি ভালো লাগতো। ”

” সজীব এর খালা বললো, আপা দুলাভাই আপাতত আসবে না, আমি এসেছি তাই কথাবার্তা বলে সব ঠিক হলে আপা আর মাহি আসবে। ”

” যাক আলহামদুলিল্লাহ, বৃষ্টি আমাদের ছেলে মেয়ে দুটোই সমান। আল্লাহ আমাদের দুটো মেয়ে দিয়েছেন তাই ছেলের দায়িত্বও আমার মেয়েকে পালন করতে হচ্ছে। তবুও মেয়ে হয়ে যেহেতু জন্ম নিয়েছে তখন বিয়ে তো দিতেই হবে, বর্তমানে দেশের অবস্থা খারাপ তাই বিয়ে দিলেই ঝামেলা শেষ। সজীব আর বৃষ্টি দুজন দুজনকে পছন্দ করে তাই আমরা আর আপত্তি করিনি। এখন আপনি এসেছেন তাই আপনার সাথে কথা বলে, যদি আমার মেয়েকে আপনাদের পছন্দ হয় তাহলে একটা সম্পর্ক তৈরী করা যায়। ”

” জ্বি সেটাই, সজীব যেহেতু পছন্দ করেছে তখন সেখানে তেমন কিছু বলার নেই। আচ্ছা সজীব কোই গেল? ”

” বৃষ্টি বললো, আন্টি সজীব একটু রাস্তার মোড়ে গেছে ওই পানির টাংকির ওখানে। আসলে আজকে পানি দিয়ে যায় নাই তাই বাসায়ও পানি কম আছে। আমি আর মা রান্না করতে ব্যস্ত ছিলাম নাহলে এক ফাঁকে নিয়ে আসতাম। আর তাছাড়া বাবা তো বেশি অসুস্থ নাহলে তো বাবা নিয়ে আসতে পারতো। ”

” ওহহ আচ্ছা ঠিক আছে। ”

” বৃষ্টির মা বললো, আজকে আমাদের এমন দুর্দিন দেখতে হতো না আপা। সবই আমাদের কপালে লেখা ছিল নাহলে বৃষ্টির বাবা যখন কলেজে শিক্ষক ছিলেন তখন আমরা রাজার হালে ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে তার সমস্ত টাকা এনজিও থেকে যখন আত্মসাৎ হয়ে গেল। আর উনিও স্টোক করে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পরে গেল, এসবই ভাগ্য। ”

” খালা বললো, ঠিক বুঝতে পারছি না। বিছানায় পরে গেল মানে কি? ”

” বৃষ্টি খানিকটা অবাক হয়ে গেল সে বললো, আমার বাবা স্টোক করার পরে এক সাইডে প্যারালাইজড হয়ে গেছে। তিনি এখন আর বিছানা থেকে একা একা উঠতে পারেন না। তাইতো বাবার কলেজের চাকরি চলে গেল আর আমি মা দুজনেই গার্মেন্টসে চাকরি নিলাম। বাবার অসুস্থতার কথা সজীব বলে নাই আপনাকে? ”

” সজীব এর খালা মুখ কালো করে বললো, নাহ বলে নাই যদি বলতো তাহলে হয়তো আসতাম না। ”

” কথাটা শুনে বৃষ্টি আর তার মা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর বৃষ্টি বললো, মানে? ”

” দেখ বৃষ্টি, সজীব আমার আপা দুলাভাইয়ের একটা মাত্র ছেলে। ওকে বিয়ে দিয়ে ওর বউ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকবে। কিন্তু তোমার কোন ভাই নেই আর তোমার বাবা অসুস্থ ব্যক্তি। তাই তোমার সাথে যদি সজীব এর বিয়ে হয়ে যায় তাহলে তোমার সম্পুর্ণ পরিবারের দায়িত্ব সজীবকে নিতে হবে তাই না? ”

” বৃষ্টি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। ”

” খালা বললো, আপা দুলাভাই তাদের একমাত্র সন্তানের এমন ঘরে বিয়ে জীবনেও দেবে না। কারণ তাহলে সারাজীবন তাকে শশুর শাশুড়ী নিয়ে থাকতে হবে। মা-বাবার সেবা করার আর সুযোগ পাবে না তাদের আপা দুলাভাই চাইলেও হয়তো এ সম্পর্ক মেনে নিতে পারবো না আমি। ”

” বৃষ্টির চোখ থেকে পানি বেরিয়ে গেল, মা-বাবার এমন অপমান সে আশা করে নাই। বৃষ্টির মা বললো, আমার স্বামীর অবস্থা সজীব জানে এবং সে তাই রাজি আছে বৃষ্টিকে বিয়ে করতে। ”

” আবেগে পরে হয়তো ও অনেক কিছু বলে, তাছাড়া তার বয়স অনেক কম। আপনারা বরং একটা কাজ করেন, বৃষ্টির জন্য এমন একটা ছেলে খুঁজে বের করুন যেই ছেলের মা-বাবা নেই। তাহলে সেই ছেলে আপনাদের সাথে রাখতে পারবেন, তাতে করে ওই ছেলে একটা পরিবার পাবে এবং আপনাদেরও একটা সমস্যা সমাধান হবে। দয়া করে আমাদের সজীব কে এসবের মাঝে জড়াবেন না। ”

” বৃষ্টির মা কিছু বলার আগেই বৃষ্টি বললো, আপনার ছেলেকে আমি বিয়ে করবো না। আপনাদের মতো মন-মানসিকতার অধিকারী পরিবারে বউ হয়ে যাবার কোন ইচ্ছে নেই আমার। ”

” মনমানসিকতা বলতে কি বোঝাচ্ছো তুমি? ”

” রচনার মতো বাড়িয়ে বলার ইচ্ছে নেই আমার, তবে কথা দিচ্ছি আপনার বোনের ছেলের আশেপাশে আর কোনদিন যাবো না আমি। আপনি এখন যেতে পারেন। ”

#চলবে….

কোমরের ব্যথার জন্য ঠিকমতো নামাজ পড়তে কষ্ট হচ্ছে, চেয়ারে বসে নামাজ পড়তে হয়, সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।

যদি আপনার কাছে গল্পটা ভালো লাগে তাহলে লাইক দিয়ে সুন্দর একটা মন্তব্য প্রকাশ করুন ।

ভালবাসা অবিরাম অন্তহীন ।

লেখাঃ
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here