(১৮+এলার্ট)
#শব্দহীন_প্রণয়কাব্য(পনেরো)
#Mst.Shah Mira Rahman
রাত প্রায় দশটা।হসপিটালের সামনে গাড়িতে বসে মীরার জন্য অপেক্ষা করছে সুলেমান। কিছুক্ষণ পর মীরা বের হলো হসপিটাল থেকে।সাথে মিনহাজ ও।হেসে হেসে কথা বলছে একে ওপরের সাথে।সুলেমান চেয়ে রইল সেদিকে। মিনহাজ মীরার থেকে বিদায় নিয়ে নিজের গাড়ির দিকে গেলো।মীরা এগিয়ে এলো সুলেমানের কাছে।গাড়ির দরজা খুলে সুলেমানের পাশে বসে ঠোট প্রসারিত করে হাসল।সুলেমান চুপচাপ মীরার সিটবেল্ট বেঁধে গাড়ি স্টার্ট করলো।কিছুদূর যেতে সুলেমান নিজেই মুখ খুলল।
“কী এত কথা বলছিলে?”
মীরা বুঝল সুলেমান মিনহাজের কথা বলছে।মুখের হাসি বজায় রেখেই বলল,
“তেমন কিছু না।”
“যেভাবে হাসছিলে মনে তো হচ্ছে অনেক কিছুই।”
মীরা তাকালো সুলেমানের দিকে।মুখশ্রী গম্ভীর ধারন করে আছে।মীরা খানিকটা জ্বালাতে চাইল সুলেমান কে।শান্ত গলায় উত্তর দিল,
“ও আমার কলিগ সুলেমান।দুই একটা কথা তো হবেই।”
“হুম…কলিগ হওয়ার সাথে তোমাকে বেশ পছন্দ ও করে।”
“আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন?ও জানে আমি বিবাহিতা।আমার হাজবেন্ড আছে।এসব জানার পর ও আমার দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।একদিক থেকে বাদ দিলেও ছেলেটা অনেক বেশি আমায়িক।সবার সাথে হেসে খেলে কথা বলে।সবাই তাকে বেশ পছন্দ করে।এরকম একজন বন্ধু থাকাটাও ভাগ্য।”
সুলেমানের চোয়াল শক্ত হলো।মুখের অভিব্যক্তি একই রেখে বলল,
“কাল থেকে তুমি হসপিটালে আসবে না। তোমার ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করছি আমি।”
মীরা চমকালো। অবাক দৃষ্টি ফেলল সুলেমানের দিকে।
“ট্রান্সফার!কিন্তু কেন?”
“কারণ আমি বলছি।”
“সুলেমান সামান্য একটা বিষয় নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করছেন কেন আপনি?আমি তো মজা করছিলাম শুধু।”
“এটা নিয়ে একটা কথাও শুনতে চাই না আমি।”
“শুনতে হবে আপনাকে।আপনি সবকিছু আমার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন।কিন্তু কেন? আমার দোষটা কোথায়?”
মীরার কথা শেষ হওয়ার আগেই গাড়ি থেমে গেল।মীরা আশেপাশে তাকালো।তারা এপার্টমেন্টে চলে এসেছে।মীরা সুলেমানের দিকে তাকালো।সুলেমানের দৃষ্টি তখনও সামনে।মীরা হকচকিয়ে উঠল।
“আপনি যাবেননা উপরে?”
“না।”
“কেন?”
“কাজ আছে আমার।”
মীরা বুঝল সুলেমানের রাগ।এক হাতে সুলেমানের শার্টের কোণা খামচে ধরে বলল,
“না আপনি আমার সাথে যাবেন।প্লিজ সুলেমান প্লিজ।”
“আমার দেরী হচ্ছে মীরা।”
মীরার চোখ ছলছল করে উঠলো।গাঢ় অভিমানে মুখ ভার হলো।গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া জল গুলো হাতের উল্টো পাশ দিয়ে মুছে গাড়ি থেকেই বেরিয়ে গেলো।কিয়ৎক্ষণ সুলেমানের দিকে তাকিয়ে থেকেও আশানুরূপ কোনো ফল না পাওয়ায় মীরা হনহন করে এপার্টমেন্টের ভেতর ঢুকে পড়ল। সুলেমান ঠায় বসে রইল।প্রিয় নারীর মুখে অন্যকারো প্রসংসা কোনো পুরুষেরই সহ্য হয় না।আর সেই নারী যদি হয় তার স্ত্রী তার একান্ত ব্যক্তিগত নারী তাহলে তো কথাই নেই। সুলেমান এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করল।সাথা সাথে ফোনের মেসেজ টোন বেজে উঠল।
“এসে গেছি।এবার চলে যান আপনি।”
লেখাটির ওপর নজর বুলিয়ে সুলেমান গাড়ি স্টার্ট করলো।নিজের ঘরের জানালা দিয়ে তাকিয়ে রইল মীরা।নিষ্ঠুর লোক সত্যি সত্যি চলে যাচ্ছে।
____
রাত প্রায় বারোটা।নিস্তব্ধ নির্জন রাত।একটি শুনশান রাস্তার একপাশে গাড়ি থামালো সুলেমান।রাস্তার দুই ধারে ঘন জঙ্গল।দিনের বেলাতেও এখানে খুব একটা মানুষ আসা যাওয়া করেনা।রাতের বেলা তো কথাই নেই।এই আবছা অন্ধকার শুনশান রাস্তায় গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ঠোঁটে সিগারেট ধরালো সুলেমান।নিকোটিনের ধোঁয়া অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।তার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার সামনে দিয়ে একটি লোক চলে গেল।যাওয়ার সময় তার হাত থেকে ফাইলের ন্যায় কিছু একটা পড়ল। সুলেমান নড়ল না।রয়ে সয়ে নিজের সিগারেট শেষ করে তা রাস্তায় ফেলে পায়ের বুট দিয়ে পিষে ফেলল।অতঃপর এগিয়ে গেল সেই ফাইলের দিকে।নিচু হয়ে ফাইল হাতে নিয়ে গাড়ির দিকে গেল।জানালা দিয়ে ফাইল গাড়ির ভেতর রাখতেই কোথা থেকে তীব্র বেগে একটা বুলেট এসে লাগল সুলেমানের গাড়ির দরজায়। টার্গেট মিস বুঝল সুলেমান।সময় নষ্ট না করে ওপর পাশে গিয়ে গাড়ির আড়ালে বসল। কোমড়ের পেছন হতে সরকারি রিভলবার বের করে সাইলেন্সার লাগিয়ে খুব সন্তঃর্পণে তাকালো অপরপাশের ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঘেরা জঙ্গলের দিকে।কান খাড়া করে চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ম করলো।অতঃপর আবার নিজের জায়গায় বসে ফোন বের করে কল করল তার এসিস্ট্যান্ট আসিফ কে।সাথে সাথে রিসিভ হলো,
“স্যার!”
“আমাকে অ্যাটাক করেছে ওরা।”
“এখন কোথায় আপনি?”
“লোকেশন অন আছে আমার।”
“আমি এক্ষুনি পুলিশ নিয়ে আসছি।”
“সাথে এম্বুলেন্স ও এনো।”
সুলেমান ফোন কাটলো।হাতের রিভলবার আবার নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে সামনের জঙ্গলে মিলিয়ে গেল মুহুর্তের মধ্যে।
বেশ কিছুক্ষণের মাঝেই আসিফ পুলিশ ও এম্বুলেন্স নিয়ে হাজির হলো সেখানে। সুলেমানের গাড়ি দেখে থামল তারা।আশেপাশে কাউকে না পেয়ে এদিক ওদিক খুঁজল।এরই মাঝে দুই হাতে কালো মোটা মতোন দুটো লোককে টানতে টানতে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এলো সুলেমান।লোকদুটোর অবস্থা মর মর।পুলিশ দের দেখে পিচঢালা রাস্তায় ছুড়ে ফেলল তাদের।মুখে বলল,
“ওখানে আরো তিন জন আছে।ভালো ভাবে খাতির যত্ন করবেন এদের।আমি কাল আসবো।”
এম্বুলেন্সের সাথে আসা দুটো নার্স ধরা ধরি করে তাদের এম্বুলেন্সে ওঠাতে লাগলো।আসিফ এগিয়ে গেল সুলেমানের দিকে।
“স্যার আপনি ঠিক আছেন?”
“হুম।এদিকটা তুমি সামলাও আমায় যেতে হবে।”
“ওকে স্যার।”
সুলেমান আর এক মুহূর্ত দেরী না করে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল।নজর পরল গাড়ির দরজায়।স্ক্রেচ পড়ে গেছে।খানিকটা বেঁকেও গেছে। সুলেমানের চোয়াল শক্ত হলো।নিজের জিনিসের ওপর কোনো আঁচড় সহ্য হয় না তার।ঘুরে আবার ফিরে এলো ওই লোকগুলোর কাছে।তাদের মাঝে একজনের মুখ বরাবর ঘুষি বসালো।বাম হাত দিয়ে নাকের ডগায় ঘাম মুছে হিসহিসিয়ে শব্দ উচ্চারণ করল,
“ব্লাডি বা*স্টার্ড।”
এতক্ষণ যাবৎ আধমরা লোকটা সুলেমানের শক্ত হাতের ঘুষি খেয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ল।পুলিশ রা নার্সরা অবাক চোখে তাকিয়ে দেখল সুলেমান কে।সুলেমান পাত্তা দিল না তাদের দৃষ্টি।আবার এগিয়ে গেল নিজের গাড়ির দিকে।
_____
মীরা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।তার অবচেতন মন বলছে লোকটা আসবে।রাগ করে কখনোই তার থেকে দুরে থাকবে না সুলেমান।থাকতে পারে না।মীরা ঘড়ির দিকে তাকালো।একটা বাজে।এখনো আসছে না কেন?তাহলে কী সত্যিই আসবে না।মীরার কান্না পেল।সে কি এমন বলেছিল যার কারনে এত রাগ দেখাচ্ছে সুলেমান।তারও তো অভিমান হয়েছে।তার অভিমানের কি হবে?মীরার ভাবনার মাঝেই এপার্টমেন্টের সামনে একটি গাড়ি এসে দাঁড়ালো।চমকে উঠে সেদিকে তাকালো মীরা। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।দৌড়ে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খোলার আগেই দরজা খুলে দিল মীরা।সুলেমান অবাক হলো।মীরার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
“ঘুমাও নি এখনো?”
মীরা উত্তর দিল না ঝাপিয়ে পড়ল সুলেমানের বুকে। ফুঁপিয়ে উঠে বলল,
“আমি ভেবেছি আপনি আসবেন না।”
সুলেমান হাসল।দুই হাতে তাকে জড়িয়ে শূন্যে তুলে ভেতরে ঢুকল।দরজা লাগিয়ে তার সাথেই চেপে ধরল মীরার ছোট্ট শরীরটা।মীরা তাকালো সুলেমানের দিকে।চোখাচোখি হলো।মৃদু কণ্ঠে সুলেমান আবার প্রশ্ন করল,
“মিস করছিলে?”
মীরা এবার সুলেমানের বাদামী ঠোঁটের দিকে তাকালো।তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে গেল।শুকনো ঢোক গিলে বলল,
“হুম।”
সুলেমানের দৃষ্টি এলোমেলো হলো।বৈধ ইচ্ছেরা প্রবলভাবে হানা দিল। জড়িয়ে আসা কণ্ঠে উচ্চারণ করল,
“আমিও।”
আর এক মুহূর্ত দেরী নয়।দুই জোড়া অধর মিলিত হলো।শুষে নিতে চাইলো একে ওপরের সুধা।মীরা দুই হাতে জড়িয়ে ধরল সুলেমানের গলা। সুলেমান চুম্বনরত অবস্থাতেই তাকে কোলে তুলে ঘরে ভেতর এলো।বেডের ওপর ফেলল মীরার শরীরটা।দুই হাতে নিজের শার্ট খুলে ছুড়ে ফেলল দূরে কোথাও।ঘন ঘন শ্বাস নিতে থাকা মীরা তাকালো সুলেমানের শক্ত পক্ত শরীরের দিকে।সুলেমান ঝুঁকে এসে মুখ ডোবালো তার গলদেশে।নাক টেনে ঘ্রাণ নিল মীরার শরীরের। এলোমেলো অগোছালো মীরা সুলেমানকে নিজের আরো কাছে টেনে নিল।মিলে মিশে একাকার হলো দুটো শরীর দুটো মন।মধুকর হলো আরো একটি রজনী।
____
সালমান বাড়ি ফিরল রাত বারোটা বাজে। হায়াত তখন পড়ার টেবিলে বসে ঝিমুচ্ছে।তাকে এভাবে টলতে দেখে সেদিকে এগিয়ে গেল সালমান।হায়াতের হাত থেকে বই সরিয়ে নিয়ে একদৃষ্টে চেয়ে রইল তার দিকে।হায়াতের ঘুম হালকা হলো।চোখে মেলে সামনে তাকাতেই চমকে উঠল।নিজের এতো কাছে সালমান কে দেখে হুট করেই ভয় পেয়ে গিয়েছিল সে। সালমান বিরক্ত হলো।ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করল,
“এভাবে ঝিমুচ্ছিস কেন?ঘুমাতে সমস্যা কি?”
“তুমি এতো রাত করে বাড়ি ফেরো কেন? তাড়াতাড়ি ফিরলে সমস্যা কি?”
সালমানের ভালো লাগলো কথাটা।হায়াতের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
“কেন,বাবুর আম্মু কি অপেক্ষা করছিলো?”
হায়াত চমকালো।বসা থেকে উঠে বিছানার দিকে যেতে যেতে বলল,
“মোটেই না।”
সালমান আটকে দিল হায়াত কে।দুই হাতে পেছন থেকে জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল তাকে।কাঁধের ওপর ঠোঁট চেপে বলল,
“সত্যি!”
কেঁপে উঠলো হায়াত।নরম হলো হৃদয়। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটলো।ঘুরে দাঁড়ালো সালমানের দিকে।দুই হাতে গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
“আমি কখনো তোমার বাবুর আম্মু হবো না।”
সালমান হায়াতের নাকে নাক ঘষে বলল,
“তাহলে কার বাবুর আম্মু হবি?”
“আমার স্বামীর।”
সালমান হাসল। গলায় কৌতুক মিশিয়ে বলল,
“তোর স্বামীর হাত পা ভেঙে ফেলে রাখবো সাহস কত বড় আমার বউয়ের দিকে নজর দেয়।”
“হুহ,ওতো সহজ নাকি?আমার স্বামী অনেক শক্তিশালী আর অনেক সাহসী।দেখনি কেমন তোমার বউকে জোড় করে বিয়ে করেছিল।”
সালমান ঠোঁট কামড়ে হাসলো। হায়াত কে লজ্জা দিতে বলল,
“হুম,সাথে বাসর টাও।”
কিন্তু হায়াত কেনো জানি লজ্জা পেল না।খিল খিল করে হেসে উঠলো। সালমান তাকিয়ে রইল সেই সম্মহনী হাসির দিকে।
চলবে🌺