#শব্দহীন_প্রণয়কাব্য(উনিশ)
#Mst.Shah Mira Rahman
ছোট থেকেই বস্তিতে বেড়ে ওঠা ওমরের।মা রিয়ানা একজন প*তিতা।ওবাইদুল এর সাথে প*তিতালয় থেকে পালিয়ে এসে একটা ছোট্ট বস্তিতে আশ্রয় নেয়।প**তিতালয় থেকে পালিয়ে এলেও এই জীবন থেকে নিজেকে সরাতে পারেনি রিয়ানা।কিছুদিনের মধ্যে এখানে ও ওই একই কাজে জড়িয়ে পড়ল।দিনের মাঝে কত পরিচিত অপরিচিত লোক এসে তাকে নিয়ে ঘরের দরজা লাগাতো।ছোট্ট ওমর তখন নির্নিমেষ চেয়ে রইত সেই দরজার দিকে। ওবাইদুলের নিজস্ব ইনকাম বলতে কিছুই ছিল না।বউ যা কামাতো তা দিয়ে সংসারের পাশাপাশি তার ম*দ জু*য়ার আড্ডাখানা চলতো।দুজনের দুজনকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা জীবনের মাঝে অথৈ সাগরে ভাসল ছোট্ট ওমর।একা নিঃসঙ্গ ঘুরে বেড়াতো রাস্তায় রাস্তায়।এক বেলা খেলে আর এক বেলা খাবার জুটতো না। কিন্তু এভাবে আর কতদিন?ক্ষুদার জ্বালায় একসময় এ দোকানে ও দোকানে চু*রি করা শুরু করল। তবুও বাসায় যেত না পেট পুড়ে খাবার আশায়।চু*রি করত ধরা পড়তো।আবার চুরি করতো।সময় এভাবেই গড়ালো।একসময় চুরির পাশাপাশি আরো ছোটখাটো অন্যায় কাজে জড়িয়ে পরল।হাত দিয়ে টাকা ছুঁয়ে দেখল।নেশা লাগল তার টাকা ইনকামের।এর মাঝে বারো বছর বয়সে তার শরীরের পরিবর্তন চোখে পড়ার মতো।রিয়ানা অসম্ভব সুন্দরী রমনী।তারই আদল পেয়েছে ওমর।তার সৌন্দর্য ও শরীরি পরিবর্তন চোখে পরল রিয়ানার।কিভাবে চেয়ে থাকতো তার দিকে।ওমরের সেই দৃষ্টি সহ্য হতো না। বাড়িতে আসা কমিয়ে দিল।পনেরো বছর বয়সে তার মা তার সৌন্দর্য কে কাজে লাগালো।তার মাধ্যমে সুন্দরী মেয়েদের ফাঁসিয়ে নিজের কাছে এনে তাদের দিয়ে দে*হ ব্যবসা করাত।ছোট থেকে এই পরিবেশে বড় হওয়া ওমরের কাছে এসব কিছুই ছিল না।সে শুধু দেখল টাকা।যখন তার বয়স সতেরো বছর তখন তার মা রিয়ানা নিজেই তার রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে প্র*লুব্ধ করার চেষ্টা করে।রাগে শরীর রি রি করে ওঠে ওমরের।হাতের কাছে থাকা ছু*ড়ি দিয়ে একের পর এক আঘাত করে মায়ের শরীরে। র*ক্তাক্ত রিয়ানা ওখানেই শ্বাস ত্যাগ করে।ওমর চৌকি থেকে চাদর টেনে ঢেকে দেয় রিয়ানার অনাবৃত শরীর।এটাই ছিল তার জীবনের প্রথম খু*ন।নিজের মাকে হ*ত্যার দায় এসে পড়ে তার ঘাড়ে। পুলিশের হাত থেকে বেঁচে পালিয়ে যায় ওমর। নতুন শহরে নতুন নামে বাচে ওমর। কিন্তু টাকার নেশায় কিছুদিনের মধ্যেই আবার একই কাজে জড়ায়।ওই শহরের ই এক প*তিতা পল্লীর আম্মার সাথে তার পরিচয় হয়।প্রেমের জালে মেয়েদের ফাঁসিয়ে নিয়ে আসে আম্মার কাছে। বিনিময়ে টাকা নেয়।বাইশ বছর বয়সে তার পরিকল্পনা বড় হয়।এবার আর দেহ ব্যবসা নয় নারী পাচার কাজে হাত লাগায়। বিভিন্ন জেলা থেকে মেয়েদের অপহরণ করে তাদের বিদেশে পাচার করা হয়।তার কাজের কেনো প্যাটার্ন থাকে না বলেই পুলিশ সে অবধি এখনো পৌছাতে অক্ষম।অমর বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন পরিচয়ে পরিচিত। কখনো ডক্টর কখনো আইনজীবী কখনো চাকরিজীবী তো কখনো বেকার সেজে মেয়েদেরকে নিজের জালে ফাঁসানোই ছিল তার অন্যতম কাজ।আর এসব কাজে তাকে সহায়তা করল তার বাবা ওবাইদুল।সুলেমান কয়েকবছর যাবৎ স্টাডি করে তার বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করেছে।তাকে সাহায্য করেছে সিদ্ধান্ত।এ পর্যায়ে এসে তার সকল আস্তানায় সিল করেছে আইন।একশোর ও বেশি নারী উদ্ধার হয়েছে তার গোপন আস্তানা থেকে।তার সব লোকজন দের ধরা পড়লেও ওমর নিজেই এখনও লাপাত্তা।
____
সিদ্ধান্ত হসপিটালে।হাত থেকে গুলি বের করা হয়েছে।আপাতত সুস্থ।আনোয়ারের মৃ*ত্যুতে বুশরা বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে এলো।নিজের ভাইয়ের এই অবস্থা আবার চাচার মৃ*ত্যুতে ভেঙে পরে মীরা।হুমায়ূনের পর মীরা আনোয়ার কেই বাবা হিসেবে মেনেছে।সেই লোকটার এমন মৃ*ত্যু মানতে পারলো না সে।কেদে কেটে একসার হলো।সুলেমান সামলালো তাকে। সিদ্ধান্তর কোনো অনুভূতি কাজ করল না চাচার মৃ*ত্যুতে। সুলেমান যখন হসপিটালে তার কাছে এলো তখন মৃদু গলায় বলল,
“আমার বাবা নিরপরাধী ছিলেন।আপনি জানতেন।”
“হুম।”
“মিথ্যে কেন বলেছিলেন।”
“সত্যি বললে আজ এতদূর অবধি আসা হতো না। তোমার বাবা অপরাধী এটা ভেবে তুমি যেমন নিজেকে দমিয়ে রেখেছিলে যদি তুমি জানতে তোমার বাবা নিরপরাধী এবং তাকে ফাঁসিয়ে হ*ত্যা করেছে তোমার চাচা তাহলে তুমি নিয়ন্ত্রণ হারাতে।না চাইতেও এমন ব্যবহার করে ফেলতে যা তোমার চাচার চোখে সন্দেহজনক হতো।”
সিদ্ধান্ত চুপ করে রইল।সুলেমান সত্যি বলছে।নিজেকে হয়তো আটকাতে পারতো না সে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার শান্ত গলায় বলল,
“এসব কিছু মীরাকে জানানোর প্রয়োজন নেই।কষ্ট পাবে ও।”
_____
ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির প্রতি ঝোঁক ছিল দুই ভাইয়ের।তবে হুমায়ূন যতটা সুনাম অর্জন করেছিল আনোয়ার তা পারেনি।মনে মনে ঈর্ষা করত সে হুমায়ূন কে।তার ক্ষমতার লোভ ছিল।সেই লোভ থেকেই সে জড়ায় নারী পা*চার চক্রের সাথে।অল্প বয়সী মেয়ে সংগ্রহ করা তার কাজ ছিল।এর মাঝে পুলিশের নজর পড়ে তাদের ওপর। আনোয়ার ষড়যন্ত্র করে হুমায়ূন কে ফাঁসায়।সকল প্রমাণ তার বিরুদ্ধে কাজে লাগায়।স্ত্রী সন্তানদের ক্ষতির হুমকি দিয়ে চুপ করিয়ে রাখে তাকে। কিন্তু শুনানির পর সুলেমান আবার এই কেস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করে। হুমায়ূনের সাথে দেখা করে তাকে আশ্বাস দেয় দ্বিতীয়বার কেস রি ওপেন করা হবে।এসব কিছু জানার পর আনোয়ার হুমায়ূন কে পরিকল্পিতভাবে হ*ত্যা করে।হুমায়ূনের হার্টের অসুখ ছিল। সেটিকেই কাজের লাগায়। তার ওষুধ খাওয়ার মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হয়।যার ফলে কিছুদিনের মধ্যেই তার হার্টের সমস্যা দেখা দেয়।একসময় তা হার্ট অ্যাটাক এ পরিণত হয়।সঠিক সময়ে চিকিৎসার ওভাবে মৃ*ত্যুবরণ করেন তিনি।
____
সিদ্ধান্ত হসপিটালে জানতে পেরে সকাল ছুটে এসেছে। পরিবার পরিজনকে উপেক্ষা করে ঝাপিয়ে পড়েছে তার বুকে। সিদ্ধান্ত দেখল সকালের ক্লান্ত মুখশ্রী। সকাল কাঁদছে না।অথচ তার চোখ মুখ অগোছালো। সিদ্ধান্ত আলগোছে আগলে নিল সকালকে। সকাল জড়িয়ে আসা গলায় বলল,
“আর দূরে সরাবেন না প্লিজ।মরে যাবো।”
মির্জা বাড়ির সবাই অবাক হলো তাদের দেখে। সন্ধ্যা আহাজারি শুরু করে দিল।ছেলে মেয়েদের বিয়ে নিয়ে এতদিন সে চিন্তায় চিন্তায় মরতে বসেছিল অথচ তার ছেলেমেয়েরা তলে তলে ঠিক নিজেদেরটা বুঝে নিয়েছে।একজন জোড় করে বিয়ে করে বউ ঘরে তুলল। আরেকজন সেই তিন বছর আগেই বিয়ে করে বসে আছে।কিছুদিন পর এসে হয়তো কোলে বাচ্চা ধরিয়ে বলতো,
“দেখো মা,তোমার নাতি।একদম তোমার মতো হয়েছে তাইনা?”
সন্ধ্যা কে চুপ করালো শাহিন মির্জা। সত্য মিথ্যা সব পর্যবেক্ষণ করে ঠিক করা হলো আবার বিয়ে দেওয়া হবে তাদের।একমাস পর বড় করে অনুষ্ঠান করে তাদের বিয়ে হবে সাথে সালমান হায়াতের রিসেপশন ও হবে।সিদ্ধান্ত চোখ মুখ কুঁচকালো।এই বাপ ছেলে দুজনের জন্য এখন তাঁকে আরো একমাস অপেক্ষা করতে হবে বউকে ঘরে তুলতে।তিন বছর কি কম ছিল।এরা দুজন মিলে কি তাকে চিরকুমার বানিয়ে মারার পণ করেছে!
শোকের কাঁটা ছিঁড়ে ধীরে ধীরে সবাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করল।এরই মাঝে আরো একটি সুখবর হলো মির্জা বাড়িতে। হায়াত মা হতে চলেছে।কথাটা জানতে পেরে সালমান বাকরুদ্ধ।মির্জা বাড়ির সবাই হৈচৈ লাগিয়ে ফেলল।লজ্জায় হায়াত আড়ষ্ট হয়ে বসে রইল সোফার এক কোণায়। হায়াত কে একা পেল না সালমান বেশ কিছুক্ষণ। মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে এলো তার। হায়াত আড়চোখে একবার তার দিকে তাকাতেই শক্ত চোখে তাকালো সালমান। হায়াত পূর্ণ দৃষ্টি ফেলল তার ওপর। সালমান ইশারায় তাকে ঘরে যেতে বলল। হায়াত না না করল। সালমান চোখ গরম করে তাকাতেই বসার ঘর থেকে উঠে সুরসুর করে হায়াত ঘরের দিকে এগোলো।তার পিছু পিছু গেল সালমান। সবাই দেখল তাদের।মুখ লুকিয়ে হাসল কিছুক্ষণ।
____,
ঘরে এসেই হায়াত কে কাছে টেনে নিল সালমান। হায়াত মাথা নিচু করে চুপ করে রইল।
“আমাকে আগে বলিস নি কেন আমার বাচ্চার কথা।”
হায়াত এদিক ওদিক তাকালো।মৃদু কণ্ঠে বলল,
“আমার লজ্জা করে।”
“বাড়ির সবাই কে কেমনে বললি তাহলে?”
“আমি বলিনি সবাই বুঝে নিয়েছে।”
“না বুঝলে বলতি না?”
হায়াত মাথা নাড়ালো বলতো না।সালমান চট করেই কামড় বসালো তার গালে।
“তোর লজ্জা পাওয়ার শাস্তি এটা।”
“আমি মঞ্জুর করলাম।”
সালমান কামড় দেওয়া গালে ঠোঁট চেপে ধরল।
“আমার বাচ্চা তোর পেটে!”
“হুম।”
“আমার সুখ সুখ লাগে হায়াত।”
“আমার ও।”
সালমান তার মাথা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরল।হায়াত বলল,
“মরে যাবো।”
“যাহ্।”
হায়াত কামড়ে দিল তার বুকে।সালমান নড়ল না।বরং হাতের বাঁধন আরো দৃঢ় হলো।
এতো এতো খুশির মাঝে আয়াতের নিখোঁজ হওয়ার দুঃসংবাদ সব কিছু কে ধামা চাপা দিল। সালমান সুলেমান তখন ই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। সেদিন আর রাতে বাড়ি ফেরা হলো না তাদের।
চলবে🌺
আজ সত্যিই ভুজুং ভাজুং লিখছি 😐।