#নব_প্রেমের_সূচনা
#Sumaiya_Akter_Bristy
#পর্ব_৩৯
নাহিদ চৌধুরী মিনহাজের মাথা নিজের কোলে রেখে আহাজারি করে কেঁদে যাচ্ছেন। উনার আর্তনাদ শুনতে পেয়ে আশেপাশের লোকজন ছুটে এসেছে কি হয়েছে তা দেখতে।
আজ প্রথম বার নাহিদ চৌধুরী বুঝতে পারছেন স্বজন হারানোর বেদনা ঠিক কতোটা তীব্র। আজ প্রথম বার নাহিদ চৌধুরীর আফসোস হচ্ছে নিজের অতীত জীবনে করা কর্মকাণ্ডের জন্য। সেদিন যদি উনি মিনহাজকে ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে আরভীর কাছে না পাঠাতেন তাহলে আজ হয়তো মিনহাজ বেঁচে থাকতো। উনার ছেলে উনার চোখের সামনে প্রাণভরে প্রশ্বাস নিতো।
কারো ক্ষতি সাধন করে আমরা কখনোই সুখে থাকতে পারি না। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাক্তি প্রতিশোধ না নিলেও প্রকৃতি নিজের প্রতিশোধ নিতে ভুলে না। এই কথাটি আজ আরো একবার প্রকৃতি নাহিদ চৌধুরীর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। যার ফলে নাহিদ চৌধুরী বুঝতে পেরেছেন উনি ভুল ছিলেন। কিন্তু এখন বুঝে আর কি হবে? এখন যে আর উনার কাছে কিছুই অবশিষ্ট নেই। সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন উনি।
যেই ক্ষমতার লোভে উনি এতো মানুষ খুন করেছেন সেই ক্ষমতা আজ উনার হাতে নেই। যেই সম্রাজ্যের জন্য এতোকাল উনি অন্ধকার জগতে ডুবে ছিলেন সেই সম্রাজ্য আর উনার কাছে নেই। পরিশেষে ছিলো দুই ছেলে। তাদের মধ্যে একজন চোখের সামনে মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। বাকি রইলো আর একজন। কিন্তু নাহিদ চৌধুরীর জন্য সেও হয়তো ভালো নেই।
——
নোমান আহমেদ ও ইয়াসমিন আরভীদের বাড়ির ড্রয়িং রুমে বসে আছেন এবং তাদের সামনা সামনি বসে আছেন আফিফা আফরোজ ও আরভী।
এখানে আসার সময় সমুদ্রকে গভীর নিদ্রায় মগ্ন দেখে কেউ আর কিছু জানিয়ে আসেন নি সমুদ্রকে। সকাল সকাল’ই এসেছেন এ বাড়িতে। আশা নিয়ে এসেছেন ছেলেটা ঘুম থেকে উঠলেই হয়তো সুখবর দিতে পারবেন ছেলেটাকে।
ইয়াসমিন নোমান আহমেদকে ইশারায় বললেন মূল কথা শুরু করার জন্য।
নোমান আহমেদ ইয়াসমিনের ইশারা বুঝতে পেরে গলা খাকারি দিয়ে বললেন,”আপা আমরা কেন এসেছি তা হয়তো আপনি অনুমান করতে পারছেন। আমরা আসলে আপনার মেয়ের হাত চাইতে এসেছি আমাদের ছেলের জন্য। আমার ছেলেটা আপনার মেয়েকে অনেক বেশি ভালোবাসে। আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি আপনার মেয়ে আমার ছেলের সাথে সুখে থাকবে।”
“আপনার ছেলে সমুদ্রকে আমারও বেশ পছন্দ। কিন্তু বিয়েটা যেহেতু ছেলে-মেয়েদের তাই আমি চাচ্ছি ওরা এ বিষয় নিয়ে সামনা-সামনি বসে একবার কথা বলে নিক। নিজেদের মতামত একে অপরের সামনে পেশ করুক।” আফিফা আফরোজ বললেন।
ইয়াসমিন প্রতিত্তোরে কিছু বলবেন তার আগেই আরভী বলে উঠে,”কিন্তু তার আগে এখানে উপস্থিত প্রত্যেকটা মানুষের উচিত কিছু সত্য জানা।”
আরভীর এ কথায় আরভী সবার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। সবাই আরভীর দিকে প্রশ্নাত্মক চাহনি নিক্ষেপ করে। আরভী কি এমন সত্য সবাইকে জানাতে চায় তাই সবার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে।
“কি সত্য মা? তুমি নিঃসন্দেহে বলতে পারো।” ইয়াসমিন বলেন।
আরভী গভীর শ্বাস ফেলে বললো,”নাহিদ চৌধুরী আমার বাবার খুনী। উনার সাথে উনার ছেলে মিনহাজও জড়িত ছিলো। এবার আপনারাই বলুন আমি কিভাবে আমার বাবার খুনীদের আত্মীয়ের সাথে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হতে পারি?”
নাহিদ চৌধুরী আমার বাবার খুনি এই একটা কথাই যথেষ্ট ছিলো নোমান আহমেদ ও ইয়াসমিনকে হুট করে চমকে দেওয়ার জন্য। উনারা জানতেন নাহিদ চৌধুরী কেমন। তার জন্যই নাহিদ চৌধুরীর সাথে নোমান আহমেদ ও ইয়াসমিন সব সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছেন অনেক আগেই। কিন্তু মিনহাজ যে এসবের সাথে জড়িত তা মানতে কষ্ট হচ্ছে উনাদের। কেননা মিনহাজকে ছেলেবেলায় উনারাই তো মানুষ করেছেন। ছেলেটাকে তো কখনো ভুল শিক্ষা দেন নি উনারা! তাহলে মিনহাজ নিজের বাবার মতো হবে কেমন করে?
“মা তোমার হয়তো কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। মিনহাজ এসবের সাথে জড়িত থাকতেই পারে না। ছেলেটাকে ছোট থেকে দেখে এসেছি। এমনকি আমরাই তো ওকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি।”
“আপনারা চাইলে সমুদ্রকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।”
সমুদ্র ও নাহিদ চৌধুরীর মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে জানতে পেরে আফিফা আফরোজ অবাক হয়ে যান। উনি কখনো ভাবতে পারেন নি এই দুটো মানুষের মধ্যে কোনো প্রকার সম্পর্ক থাকতে পারে। কিন্তু কি সম্পর্ক এই দুজনের মধ্যে? তা জানতেই আফিফা আফরোজ আরভীকে জিজ্ঞেস করলেন,”সমুদ্রের সাথে নাহিদ চৌধুরীর কি সম্পর্ক?”
“মা, সমুদ্র নাহিদ চৌধুরীর ভাগ্নে আর হেমন্তই মিনহাজ। যে কিনা নাহিদ চৌধুরীর একমাত্র ছেলে।”
আরভীর এ কথায় আফিফা আফরোজ একদম স্হির হয়ে যান। বুদ হয়ে যান কিছু গভীর চিন্তায়।
“আরভী, মা। বিশ্বাস করো আমার ছেলেটা একদমই এসবে জড়িত নেই। উপরন্তু তোমাকে বড্ড ভালোবাসে ছেলেটা। আমার ছেলেটাকে বড় হওয়ার পর কখনো কাদতে দেখি নি। কিন্তু কাল দেখেছি সেটাও তোমার জন্য। তোমাকে হারানোর ভয় আমার ছেলেটাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে। আমি একজন মা হয়ে তোমার কাছে আমার ছেলের সুখ ভিক্ষে চাইছি। তুমি নাহিদের শাস্তি আমার ছেলেকে দিও না মা।”
“আমি জানি সমুদ্র এসবে জড়িত নেই। কিন্তু সমুদ্রকে দেখলেই আমার মনে পড়ে যায় নাহিদ চৌধুরী আমার বাবার খুনী। আর সেই খুনীর ভাগ্নে সমুদ্র। আমি পারবো না এরকম একটা সত্য মেনে নিয়ে সারাজীবন সমুদ্রের সঙ্গে ঘর করতে। আমাকে ক্ষমা করবেন আপনারা। এছাড়া,” সমুদ্র নাহিদ চৌধুরী ও মিনহাজকে বাঁচিয়েছে বলতে গিয়েও বললো না আরভী। কি দরকার শুধু শুধু এসব কথা সবাইকে জানানোর। সবাইকে জানালে তো আর নাহিদ চৌধুরী বা মিনহাজকে হাতের নাগালে পাবে না আরভী। তাই ভেবেই আরভী কথাটি বলতে গিয়েও থেমে যায়।
আরভীকে কথা সম্পূর্ণ না করে থেমে যেতে দেখে ইয়াসমিন শুধালেন,”এছাড়া?”
“নাহ, তেমন কিছু না। যাই হোক, আশা করছি আপনারা বুঝতে পারছেন আমার কথা। আমি তাহলে উঠি এবার। নগর ভবনে যেতে হবে আমাকে।” বলে আরভী উঠে বেড়িয়ে যায় বাড়ি থেকে। আরভী যাওয়ার সাথে সাথেই নোমান আহমেদ ও ইয়াসমিনও উঠে দাঁড়ালেন। মাথা নত করে আফিফা আফরোজকে বললেন,”আমরাও তবে উঠি। আর নাহিদের হয়ে ক্ষমা চাইতেও আমাদের লজ্জা করছে। যদিও নাহিদের সাথে আমরা সব রকমের সম্পর্ক বহুকাল আগেই ছিন্ন করে দিয়েছি। তবুও যদি সম্ভব হয় আমাদের মাফ করে দিবেন।”
আফিফা আফরোজ মুখ ফুটে কিছু বললেন না। স্হির হয়ে বসে রইলেন আগের মতো করেই। ভাগ্য আজ এ কেমন জায়গায় এনে দাঁড় করালো তাই ভাবছেন উনি। আরভীর জন্য সমুদ্র উপযুক্ত তা সমুদ্র ও আরভীর মধ্যকার সাপ-বেজির সম্পর্ক দেখেই বুঝেছেন উনি। আরভীকে যদি কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তা কেবল সমুদ্র। কিন্তু এক ভাইকে ভালোবেসে আরেক ভাইয়ের সাথে কিভাবে সংসার করবে মেয়েটা? বয়সও তো কম হয় নি। বিয়ের বয়স পেড়িয়ে যাচ্ছে। অথচ বিয়ের প্রতি বড্ড অনিহা জন্মেছে মেয়েটির। এভাবে তো আর চলতে দেওয়া যায় না। কাউকে না কাউকে তো বিয়ে করতেই হবে। এখন না হয় আরভীর কাউকে প্রয়োজন নেই। কিন্তু শেষ বয়সে তো প্রয়োজন। এছাড়া একটা ভরসা যোগ্য হাতে মেয়েটাকে তুলে দিতে না পারলে উনি যে মরেও শান্তি পাবেন না।
——
নোমান আহমেদ ও ইয়াসমিন বাড়িতে প্রবেশ করে দেখলেন সমুদ্র চুপচাপ ড্রয়িং রুমে বসে আছে। দৃষ্টি তার দরজার দিকেই নিবদ্ধ। সমুদ্র যে উনাদের জন্যই পথ চেয়ে বসে আছে তা বেশ বুঝতে পারছেন উনার।
“কি কোনো কাজ হয় নি তাই তো?” নোমান আহমেদ ও ইয়াসমিনকে প্রশ্ন করে সমুদ্র। সমুদ্রের প্রশ্নে ইয়াসমিন অসহায় চোখে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে ডানে-বামে মাথা নাড়িয়ে জানান দেন কোনো কাজ হয় নি। তা দেখে সমুদ্র শুকনো হেসে বলে,”আমি জানতাম আরভী কখনো রাজি হবে না। তাই তোমাদের না করে দিয়েছিলাম। কি প্রয়োজন ছিলো সকাল সকাল ওই বাড়িতে যাওয়ার?”
“আরভীর জায়গায় যদি আমাদের নিলু থাকতো তাহলে কি তুই রাজি হতি নিজের বোনকে এমন একটা পরিবারে তুলে দিতে যেই পরিবারের জন্য তোর বোন তার পরিবারের বট গাছ নামক ছায়াটাকে হারিয়ে ফেলেছে?” নোমান আহমেদ বললেন।
“তোমরাও দেখছি এখন একই সুরে আরভীর গান গাইছো। আরে আমি মানছি মামা অন্যায় করেছে। কিন্তু তাতে আমার দোষটা কোথায়?”
নোমান আহমেদ ও ইয়াসমিন এর প্রতিত্তোরে কিছু বলতে পারলেন না। নোমান আহমেদ শুধু জিজ্ঞেস করলেন,”মিনহাজ কি এসবের সাথে জড়িত?”
“জানি না তবে আরশাদ রায়হানকে খুনের সাথে ওর সংযোগ আছে।”
“আমরা কি ওকে সুশিক্ষায় মানুষ বানাতে পারি নি?” ইয়াসমিন কাদো কাদো হয়ে প্রশ্ন করলেন। যার উত্তর কারো কাছেই জানা নেই। তাই সবাই চুপ করে থাকাটাই শ্রেয় মনে করলো।
দুপুরে সমুদ্রদের বাড়িতে তন্ময় স্বপরিবার নিয়ে হাজির হলো। সকালে ঘুম থেকে উঠেই সমুদ্র তন্ময়কে ম্যাসেজ করেছিলো,”দুপুর দুটোর মধ্যে পরিবার নিয়ে হাজির না হলে আজ বিকেলেই আমার বোনকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিবো।”
বেচারা তন্ময় সমুদ্রের এই একটা ম্যাসেজ দেখে সব কাজ ফেলে রেখে কোনো রকম নিজের পরিবারকে মানিয়ে নিয়ে এসেছে এ বাড়িতে।
তন্ময়ের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। এর আগেও অনেক বার এ বাড়িতে আসা হয়েছে কিন্তু আজ একটু অন্য রকম লাগছে। এক ধরনের ভয় ও অস্হিরতা কাজ করছে মনের মধ্যে। কেননা আজ যে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।
একদিকে তন্ময় অস্হির হয়ে আছে অন্যদিকে নিলু। বাবা-মা কেমন প্রতিক্রিয়া করবে তা ভেবেই ভয়ে হাতের নখ কামড়াচ্ছে। যদিও তন্ময়কে ভালো ছেলে হিসেবেই জানে এ বাড়ির সবাই তবুও যদি বাবা-মা আপত্তি জানায় তাহলে কি হবে?
সমুদ্র, তন্ময় ও এই দুজনের পরিবার ড্রয়িং রুমে বসে আছে। আর নিলু নিজের ঘরে। দু পরিবারের কথার মাঝেই নোমান আহমেদ হঠাৎ বলে উঠলেন,”আমার মেয়ে যেহেতু তোমাকে পছন্দ করে তাই আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমার মেয়েকে বিয়ে করতে হলে কোনো প্রকার নেশা বা সিগারেট স্পর্শ করা যাবে না।”
এ কথা শুনে তন্ময়ের মা পারভীন নিজের ছেলের পক্ষ নিয়ে বললেন,”আপনারা একদিন নিশ্চিন্তে থাকুন ভাইজান। আমার ছেলে আজ পর্যন্ত কখনোই এসব স্পর্শ করে নি। আর আমি গ্যারান্টি দিতে পারি আপনাকে। সামনেও এসব কখনো স্পর্শ করবে না।”
নিজের মায়ের কথা শুনে তন্ময়ের ইচ্ছে করছে এখান থেকে উঠে এক দৌড়ে কোথাও একটা পালিয়ে যেতে। কেননা পারভীন না জানলেও নোমান আহমেদ বেশ ভালো করেই জানেন সমুদ্র ও তন্ময় একত্রিত হলে একটু-আকটু সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে থাকে।
তন্ময় মাথা চুলকাতে চুলকাতে ফ্লোরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। মাথা সোজা করে সমুদ্র বা নোমান আহমেদের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না লজ্জায়। তা দেখে নোমান আহমেদ সামান্য হাসলেন। এই দুই ছেলে যে কতটা বজ্জাত তা হারে হারে জানেন উনি। আর সমুদ্র তন্ময়ের কাধে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে উঠে,”সাধু সাধু। একদম পারফেক্ট।”
“তাহলে ভাইজান আপনাদের যদি কোনো আপত্তি না থাকে এই সপ্তাহেই ওদের কাবিন হয়ে যাক?” তন্ময়ের বাবা তানভীর বললেন।
“হ্যাঁ কেন নয়? তাহলে এ কথাই থাক। এই খুশিতে এবার তবে মিস্টি মুখ হয়ে যাক?” বলে তন্ময়ের বাবার মুখে মিস্টি তুলে দিলেন নোমান আহমেদ। আর ইয়াসমিন তন্ময়ের মায়ের মুখে।
এদিকে সমুদ্র পুরো মিস্টির বক্স হাতে নিয়ে একের পর এক মিস্টি তন্ময়ের মুখে পুড়ে যাচ্ছে। বেচারা তন্ময় সবার সামনে কিছু বলতেও পারছে না আবার এতো মিস্টি একসাথে খেতেও পারছে না। শুধু অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সমুদ্রের দিকে। আর তা দেখে সমুদ্র দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে,”আরে বেশি বেশি মিস্টি খা। তাহলে আমার বোনের সাথে মিস্টি মিস্টি কথা বলতে পারবি।”
সমুদ্রের উক্ত কথায় সবাই সমস্বরে হেসে উঠে।
সবার হাসির শব্দ পেয়ে নিলু এক দৌড়ে নিজের ঘরে চলে যায়। এতোক্ষণ পর্দার আড়ালে লুকিয়ে সবার কথা শুনছিলো। সব ভালোয় ভালোয় মিটে গেছে বুঝতে পেরে খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে নিলুর। পরিশেষে নিজের এই অদম্য ইচ্ছে মনের মাঝে আটকে রাখতে না পেরে গান ছাড়াই লাফিয়ে নাচতে লাগলো। আপাতত আশেপাশের কোনো দিকে ধ্যান নেই নিলুর। নিলু ব্যাস্ত নিজের খুশি উদযাপনে।
নাচতে নাচতে ঘুরে একসময় দরজার দিকে ফিরতেই দেখতে পায় তন্ময়ে বুকে হাত ভাজ করে দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে নিলুকে দেখে। তা দেখে নিলু লজ্জায় নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে।
তখন পর্দার নিচে নিলুর পা দেখতে পেয়েছিলো তন্ময়। নিলু চলে আসার পরেই কোনো রকমে বুঝিয়ে সুজিয়ে সমুদ্রের ঘরে আসার বাহানায় নিলুর ঘরের সামনে আসে। আর এসেই দেখতে পায় নিলু লাফিয়ে নৃত্য করছে।
নিলুকে থেমে যেতে দেখে এবার তন্ময় নিজেও নিলুর মতো করে লাফিয়ে উল্টোপাল্টা স্টেপ দিয়ে নাচতে থাকে। আর নিলুকে ইশারা করে তন্ময়ের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য।
তন্ময়ের ইশারা পেয়ে নিলু নিজেও হেসে তন্ময়ের সাথে যোগ দেয়। কিন্তু বেশিক্ষণ দুজন এক সাথে নাচতে পারলো না। মিনিট দুয়েকের মাঝেই সমুদ্র নিলুর ঘরে এসে কপাল কুচকে বলে,”পাগলের দল বিয়ের পর যতো ইচ্ছা লাফালাফি করিস। এর আগে যদি দুইটারে একসাথে দেখছি তাহলে যেভাবে বিয়ে ঠিক করেছি সেভাবেই বিয়ে ভেঙে দিবো।”
চলবে…