#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৪০
১২১.
অর্পণ বাবা আমার এতো রাগ ভালো না।তুই শান্ত হ।
তুমি আমাকে শান্ত হতে বলছো।আর তাকে কেনোও কিছু বলতে পারো না?তার বেলায় তোমার মুখে তালা থাকে কেন?সে একশোটা দোষ করলে কিছু না।আমি একটা করলেই যদি সেটা অপরাধ তার কাছে মনে হয়।তবে তাই আমি।তাঁকে ব’লে দেও।আমার কিংবা আমার আপনজনদের দিকে হাত না বাড়াতে।তোমার বাপ জনাব জামশেদ উল্লাহ খান গদিতে বসে মানুষের র*ক্ত চু*ষচ্ছে।এসব করতে বারণ কর।গদিতে বসে এতটা খুশি হওয়া মানুষকে আমার দু-চোখে সয্য হয়না।তার এই খুশিকে দুঃখের পরিণাম করে ফেলব।
এসব কি বলছিস অর্পণ?আস্তে চিতকার কর।তোর বাবা ঘুমিয়ে আছে।এত রাতে হইচই করিস না।যাকে গালাগালি দিচ্ছিস।উনি সম্পর্কে তোর নানাজান হন।আর যাকে কাল পিট বলছিস সে তোর ছোট মামা হয়।
অর্পণ রাগে কটমট করতে করতে বলল,ওরা আমার ক*চু হয়।আমি এসব বেঈমানদের মনে রাখি না।তুমি ওদের হয়ে আমার সামনে সাফাই গাইবে না।রাত অনেক হয়েছে এখন ঘুমাতে যাও।ছেলের রাগ দেখে রাবেয়ার মুখে চিন্তার ছাপ।
রাবেয়া ছেলেকে শান্ত করতে গলাটা হালকা কেশে নরম গলায় বলল,
বলছিলাম কি বাপ?পুতুলকে একদিন আমাদের বাসায় নিয়ে আসব।তোর বাপ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে একা গেছে আমাকে নেয়নি।পুতুল তোর বাপকে তোর পরিচয়ের মাধ্যমে চিনে।আর আমাকে চিনে ডাক্তার ম্যাডাম ব’লে।সে নিশ্চয় ডাক্তার ম্যাডামকে না করবে না।আফটার অল যাব তার শ্বাশুরী হয়ে,কিন্তু তার সামনে প্রেজেন্ট হব তার ডাক্তার ম্যাডাম হয়ে।মায়ের কথা অর্পণের মনটা ভালো হয়ে যায়।নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বলল,
যাচ্ছো,যাও।কিন্তু ভুলেও আমার নাম বলে বসো না।কিংবা পুতুল মা,আমি তোমার শ্বাশুড়ি আম্মা।আমার পা ছুয়ে সালাম কর।তার সামনে এসব বলতে দেড়ি।আর আমার আদূরনী বউ মাটিতে বেহুশ হয়ে পড়তে দেড়ি করবে না।তখন আমার টেনশন,হাইপ্রেশার বেড়ে যাবে।সে আমাকে দু-চোখে সয্য করতে পারে না।তার কাছে আমি ওই টাইপ মহিলাদের মতো।ও-ই যে,গ্রামে কিছু কুটনি পাঁজি মহিলাদের মতো,যাদের অন্তরে বিষ আর মুখে মধু থাকে।অর্পণ কথাগুলো ব’লা শেষ করে গাল ফুলিয়ে উপরে নিজের বরাদ্দ রুমে চলে গেলো।এইদিকে ছেলের কাজে আর কথাবার্তায় রাবেয়া হাসতে হাসতে সোফায় বসে পড়লো।হায় আল্লাহ,তার ছেলে ব’লে কি?
সকালে মুরগী ডাকে গ্রামের মানুষের ঘুম ভেঙে গেছে।তারা ফজরের নামাজ পড়ে দিনের কাজগুলো তাড়াতাড়ি সেড়ে ফেলেছে।সকালের সূর্য সাথে তাদের দৈনিক উঠে পড়ার অভ্যাস।সকালের নাস্তা খেয়ে মাঠের কাজে নেমে পরে।আবার সূর্য পশ্চিম দিকে ডুবতেই যার যার নীড়ে ফিরে যায়।পুতুল নামাজ পড়ে ঘরটা সুন্দর করে গুছিয়ে নিয়েছে।আবার বাহির বের হয়ে দেখলো গাছের পাতা ঝড়ে মাটিতে পড়ে আছে।সেগুলো কুড়াতে,কোমড়ে ওড়না গুছে নিলো।উঠোনের শুঁকনো পাতাগুলো শোলার ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে দেয়।এরমধ্যে মামী উঠে রান্নাঘরে কাটাকুটি করছে।পুতুল হাত ধুয়ে সীলনূরে আদা,রসুন বেটে নিলো।পুতুলের বাটা শেষ।সূর্যের আলোতেই সরিষা,কালিজিড়া,বাদাম,শুকনো মরিচ,আস্ত হলুদ এগুলো বড় গামলায় আর বড় চেনিতে মেলে দিলো।এরপর আমের আচার,জলপাই আচার,চালতা আচার,বরই আচার
রসুনের আচার,বোটমরিচের আচার,সব বয়ামগুলো সারিভাবে রেখে ঘরে আসতেই মামীর ডাক শুনা গেলো।
পু.তু.ল।
পুতুল,মামীর ডাকে ঘর ছেড়ে আসে।মাথা ঘুমটা টেনে উঠোনে আসতেই মামী বলল,
রান্নাঘরে গিয়ে একটু বস।চুলায় ভাতের হাড়ি চড়ানো হয়েছে।একটু পর পর শুকনো কড়ি পাতাগুলো দিলেই হবে।আমি পুকুরের ঘাটে যাচ্ছি।তোমার মামার কাপড়টা ধুয়ে দিতে।পুতুল মাথা নাড়িয়ে জি বুঝাতেই।মামী ঘাটে গেলো।পুতুল নিজের মতোও করে চুলার মুখে পাতা দিচ্ছে।
১২২.
এইদিকে মিলন,সাজু নামাজ পড়ে।গ্রামের অলিগলিতে দুষ্টমি করে বাড়িতে ঢুকতেই চোখের সামনে আচারের বোয়ামগুলো দেখতে পায়।তাদের চোখে মুখে খুশির ঝলক।পুরো বাড়িটা আড়চোখে দেখে নিয়ে চুপিচুপি আচারের বোয়ামের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।ঢাকনা সরিয়ে ডান হাত ঢুকিয়ে দিয়ে চারদিকে তাকাতে লাগল।তাকে কেউ দেখছে কি-না।কিন্তু না কেউ নেই।আমের জেলি থেকে দুই,তিন পিছ নিয়ে সাজু হাতে দিলো।এবার জলপাই আচারের হাত দিয়েছে।এটা টক,জাল খাট্রামিঠা।একবার মুখে দিতেই জিহ্বা পানিতে ভরে উঠে।এত লোভনীয় আচার চোখের সামনে থাকলে কি মাথা ঠিক থাকে?মিলন,সাজুর অবস্থা তাই।জলপাইয়ের পুরো বয়াম নিয়ে পুকুরের ঘাটের দিকে দৌড় দিলো।বাকি আচার গুলো সেইভাবেই পরে রইল।তারা চলে যেতেই পিছনে ডুবন্ত সরষের তেলের আমটা বুদবুদ শব্দ করে মাটিতে পড়তে লাগল।এইদিকে রেনু,স্বাধীনের কাপড় ধুয়ে বাসায় আসতে নিলেই,দেখে তার বাঁদর দুই ছেলে পুকুরের বড় গাছটায় বসে চাকুমচাকুম করে কি জেনো খাচ্ছে?রেনু কাপড়ের বালতিটা ঘাটে রেখে তাদের সামনে গেলো।
হুম…হুম..মজা।ওই সাজু আচার খেয়ে মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে নিবি।পুকুর থেকে হাত ধূয়ে যাব।তাহলে মা,আর আপু বুঝতে পারবে না।আমরা আচার চুরি করে খেয়েছি।মিলনের কথা সাজু মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে আরেকবার জলপাই আচার খেতে মনযোগ দিলো।দুই ছেলের কথা শুনে রেনু গালে হাত দিয়ে বলল,
কি চোররে বাবা?একে তোও চুরি করে খেয়েছে।আবার কি সুন্দর মিথ্যা কথা বানিয়ে ব’লে যাচ্ছে?তবে রে হতচ্ছাড়া।রেনু এগিয়ে এসে দুই হাত দিয়ে দুইজনের কান টেনে ধরতেই আহহহ করে উঠে।মা’কে দেখেই তাড়াতাড়ি পাঞ্জাবি হাতা দিয়ে মুখ মুছে নিলো।সাদা পাঞ্জাবির হাতাতে আচারের দাগ স্পষ্ট।জলপাই আচারের বোয়াম পিছনে লুকিয়ে রাখার কত চেষ্টা।কিন্তু তাদের চেষ্টা বিফলে।রেনু দুই ছেলেকে ধরে বাড়িতে নিয়ে আসতেই পুতুল এগিয়ে আসে।তাদের এই অবস্থা দেখে বুঝতে বাকি নেই।এই চোরই সেই চোর।যারা এর আগেও বেশ কয়েকবার আচার চুরি করে খেয়েছে।এবং তাদের ধরা যায়নি।
পুতুল কোমড়ে দুই হাত রেখে রাগি চোখে তাকিয়ে রয়।বোনের রাগ দেখে মিলন,সাজু দুই কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল।সরি।কিন্তু তাদের আপুর রাগ কমলো না।বোনের রাগ ভাঙ্গতে ঠিক হলো মেলায় যাবে।
গ্রামে মেলা বসেছে।সে বিশাল আয়োজন।পুতুলের গায়ে কালো বোরকা।সে কিছু খাবে না।তবে পানি পুড়ি নাম শুনে লোভ লাগছে।বেল পুড়ি,চটপটি,ফুচকা তার ভীষণ প্রিয়।কিন্তু এই পানি পুড়িটা তাদের গ্রামে নামকরা হলে-ও কখনো খাওয়া হয়নি।এটা মেলায় বেশি পাওয়া যায়।কিন্তু অনেক আগে একবার মেলায় আসার পর আর মেলায় আসেনি।এটা নিয়ে দ্বিতীয় বার আসা হলো।এই পানি পুড়ি,ফুচকার থেকে অনেকটাই বড় থাকে।এরমধ্যে আলু,ডিম সেদ্ধ,আর দই থাকে।তার সাথে দেয় সাত রকমের টক পানি।পানির কালারগুলো দেখতে সুন্দর।এবং এক একেকটা পানির স্বাদ সম্পূর্ণ আলাদা।দারুণ খেতে।পানি পুড়ির প্রংশসা শুনে খেতে ইচ্ছে জাগে।মিলন,সাজুর মাঝে পুতুল রয়েছে।স্বাধীনও পুতুলের পাশাপাশি রয়েছে।ভীর ঝাপটা এরিয়ে সাবধানে হেঁটে এগিয়ে পানি পুড়ির দিকে আসতেই তাদের চোখ কপালে।এত ভীর।আপু দেখ,দেখ মেয়েগুলো কত বড় বড় হা করে মুখে দিচ্ছে।মনে হয় তাদের খাবার কেউ চুরি করে নিয়ে যাবে।আরে বাপ আস্তে খা।যেভাবে খাচ্ছিস।মনে হয় কত বছর ধরে বাসায় খাস না।তোদের বাপ,মা কি না খাইয়ে রাখে?রাক্ষস জানি কোথাকার?
মিলন রাক্ষস নয়?বল রাক্ষসী জানি কোথাকার?পুতুল দুই ভাইয়ের মাথায় হাত দিয়ে হালকা বারি দিতেই তারা চুপ।
এইদিকে এমপি সাহেব তার পুরনো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।কথা,হাসির মাঝেই চোখে পরে মেলার ভীর কম যেখানে সেখানে মিলন,সাজু,স্বাধীন সাথে আরেকটি মেয়ে বোরকা পরে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে।বন্ধুদের রেখে এগিয়ে আসতেই স্বাধীনকে বড় করে সালাম দিলো।এইদিকে অর্পণকে দেখে পুতুল অবাক চোখে একপলক তাকিয়ে চোখ সড়িয়ে নিলো।মিলন,সাজুর মনে লাড্ডু ফুটছে।স্বাধীনের সাথে কথা বলার মাঝেই তার প্রিয় রমণীর দিকে আড়চোখে কয়েকবার তাকিয়ে আবার কথা বলতে লাগল।
মেয়ের শখ হয়েছে পানি পুড়ি খাবে।এত ভীর দেখে রোড দিয়ে না এনে চকদিয়ে আনলাম।তারপরও এই দোকানেও ভীর দেখছি।মেয়ে খেতে না পারলে কিনে নিয়ে যাব।
পুতুল খেতে চেয়েছে কিন্তু খাওয়ার পরিবেশ এখানে নেই।এখন উপায়?আর বাসায় নিতে নিতে ঠান্ডা হ’য়ে যা-তা হবে।সেটা ভালো লাগবে না।
আপনার যদি কোনো সমস্যা না হয়।তাহলে আমার গাড়িতে বসে খেতে পারে।আমি আজ গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিলাম।আসলে আপনাদের গ্রামে কিছু কাজ ছিল সেটা শেষ করে বাড়িতে যাব।তখনই পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা হয়।এতখন কথা বললাম।
মেয়ের অস্তি বুঝতে পেরে স্বাধীন মেয়েকে ভরসা দিলেন।সে গাড়ির সামনে থাকবে।এবং মিলন,সাজু তার সাথে থাকবে।
মেলাতে ঘুড়া এবং খাওয়া শেষ হতেই পুতুল বাড়িতে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হলো।তাই স্বাধীন ছেলে,মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে যাবেন।
এইদিকে এমপি সাহেব দুই নাম্বারি করে দুই শালার পকেটে একশ করে টাকা ঢুকিয়ে দিলো।তার হাতের গোলাপফুল দেখিয়ে বলল,পুতুল অবধি পৌছাতে।স্বাধীন শুকনো খাবার কিনতে ব্যাস্ত।তখনই মিলন,সাজু পুতুলের হাতে গোলাপ তুলে দেয়।যার মানে এটা তারা তাদের আপুর জন্য কিনেছে।কত বড় ডাহা মিছা কথা!পুতুলও হাসি মুখে হাতে নিলো।
অর্পণ সামনে মাথার চুলগুলো চুলকে,মিষ্টি করে হেসে বিরবির করে বলল,
ভালোবাসিয়া গেলাম ফাঁসিয়া।
করতে হবে এবার বিয়া।
সোনারি চাঁন, পিতলা ঘুঘু।
যাবে কোথায় পালাইয়া।
চলবে…
এডিট কবে করেছি ঠিক মনে নেই?লিখায় প্রচুর বানান ভুল থেকে যাচ্ছে।গল্পটা শেষ হলে আবার এডিট করে বানান ঠিক করা হবে।
গল্পের সমাপ্তি আসবে খুব শ্রীর্ঘই।আর পুতুলের বিয়ে,সংসার,বাচ্চা এগুলো দেখাতে গেলে আরো পর্ব বাড়বে।আমি চাইছি তার ক্যারিয়ার দিয়ে গল্পটা শেষ করতে।আপনাদের মতামত জানতে চাই।বেশি বড় হলে পড়বেন।