#সে_আমার_চিত্তমহলের_প্রেয়সী
#সাবিকুন্নাহার_সুমী
#রাজনীতি+রোমান্টিক
#পর্ব:১১
(🚫দয়া করে কেউ কপি করবেন না। কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ 🚫)
—আনজারা রিকশা চালকের ভাড়া মিটিয়ে তালুকদার বাড়ির গেইটের সামনে দাঁড়াল।দারোয়ান তাকে দেখে পান চিবানো অবস্থায় অমায়িক একটা হাসি দিয়ে দরজা খুলে দিলো।
হাসির কারণে দারোয়ানের পান খাওয়া , লাল দাঁতগুলো দৃশ্যমান হলো।আনজারার মুখশ্রী মলি*ন। আনজারার পরীক্ষা শেষ হওয়ার আজ তিনসপ্তাহ চলে।স্বর্ণভাকে পরীক্ষা শেষ হওয়ার তিন দিন পর থেকেই আনজারা পড়ানো শুরু করেছে।এই,তিন সপ্তাহে আনজারার সাথে একদিন ও নাদমান এর দেখা হয়নি।নাদমান ব্যস্ততার কারণে এমনিও পার্টি অফিস থেকে বেশি বাড়িতে আসে না।তবুও, আনজারার সাথে সপ্তাহে এক দুইবার তার দেখা হতো। কিন্তু, এই তিন সপ্তাহে একপলক ও আনজারা, নাদমানের দেখা পায়নি। ইদানীং,নাদমান এর শূন্যতায় তার মন খারা*প হয়।আনজারার অক্ষিপটে বারংবার গম্ভীর মুখশ্রীর, শ্যামবর্ণের পুরুষটির অবয়ব ভেসে উঠে। একপলক নাদমানকে দেখার জন্য তার মনটা ছটফট করছে।।বাড়ির মেইন দরজা পেরিয়েই নাদমানদের ছোট খাটো একটা বাগান দৃশ্যমান হয়।তার সামান্যতম দূরেই নাদমানদের দুইতলাবিশিষ্ট বাড়িটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বাগানে সীমা তালুকদার, রাজিয়া তালুকদার বিকালের এই সময়টাতে চায়ের আড্ডায় বসেন।বাগানে তাদের একটা টেবিল রাখা বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তার উপর সুন্দর একটা ছাউনিও রয়েছে। আনজারা তাদের দুজনের সাথে সালাম বিনিময় করল।
রাজিয়া তালুকদার হাসি মুখে আনজারাকে বললেন,
~আনজারা মা কেমন আছো? বাড়ির সবাই ভালো আছে?
রাজিয়া তালুকদার প্রতিদিনই আনজারাকে এই একই প্রশ্ন করেন।
আনজারা ম*লিন মুখে বলল,
~আলহামদুলিল্লাহ আন্টি আমরা সকলেই ভালো আছি। আপনারা কেমন আছেন?
~আলহামদুলিল্লাহ আমরাও ভালো আছি।
সীমা তালুকদার অনুসন্ধানী চোখে আনজারাকে পরোখ করলেন।
~তোমার মুখখানা এমন শুকনো দেখাচ্ছে কেন মা?
~তেমন কিছু না আন্টি আমি ঠিক আছি।
সীমা তালুকদার আর আনজারাকে ঘাঁটালেন না।আনজারা বিদায় নিয়ে স্থান ত্যাগ করল।আনজারা যে নাদমান সাইক তালুকদার এর চিন্তায় চেহারার বেহা*ল অবস্থা করেছে সেটা সকলেরই অজানা রইল।ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করতেই নাবহান এর মুখোমুখি হলো আনজারা।আনজারা, নাবহান আর নাদমান এর মধ্যে কোনটা নাদমান আর কোনটা নাবহান সহজেই চিনতে পারে।
নাবহান সন্দি*হান দৃষ্টিতে আনজারার দিকে তাকিয়ে বলল,
~শুক্রবার না স্বর্ণভার ছুটির দিন? তাহলে, আজ পড়াতে আসলে যে আনজারা?
নাদমান এর চিন্তায় আনজারা ভুলেই গিয়েছিল আজ শুক্রবার।
আনজারা নিজেকে স্বাভাবিক করে উত্তর দিলো।
~তো কি হয়েছে শুক্রবার এ কি পড়ানো নিষেধ আছে? আমি আজ থেকে শুক্রবারে ও পড়াবো।
আনজারার এরকম কাঠখাট্টা উত্তরে নাবহান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকালো আনজারার দিকে।
আনজারা তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল।
নাবহান ঠোঁট উল্টিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
~এর, স্বামী নির্ঘাত এর উত্তর শোনে বেহুঁ*শ হয়ে যাবে।এই,মেয়ের স্বামী একে সামলাবে কি করে?
নাবহান অসহায় মুখশ্রী করে,
বাগানের দিকে চলে গেল। আনজারা কয়েক সিঁড়ি পার হওয়ার পর খেয়াল করল নাদমান মোবাইলে কথা বলতে বলতে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে। এতদিন পর নিজের মনে সদ্য জাগ্রত হওয়া প্রেমিক পুরুষকে দেখতে পেয়ে আনজারার মন খুশিতে নেচে উঠল। আনজারা তাড়াহুড়ো করে পা রাখতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে সিঁড়িতে পড়ল।
নাদমান পাশ কাটিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল।আনজারা অবাক, এই কেমন পুরুষকে সে মন দিলো!এই, কেমন নি*ষ্ঠুর পুরুষ?তার চোখের সামনে পড়ে গেল অথচ না উঠিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেল!আনজারা উঠে দাঁড়াল হাতের কনুই এর বেশ খানিকটা চামড়া জায়গা থেকে উঠে গিয়েছে। ছোপছোপ র*ক্ত দৃশ্যমান হলো আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে।নাদমান দরজা দিয়ে বাহিরে বের হবে,এমন সময় আনজারা নাদমানকে ডাকল।
~এইযে মাথা ন*ষ্ট, কা*না এমপি আমি পড়ে গিয়েছি একটু সহানুভূতি ও না দেখিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে আসলেন কেন?
নাদমান কল কেটে মোবাইল পাঞ্জাবির পকেটে রাখল।
গম্ভীর কন্ঠে বলল,
~যারা নিজের চোখ গুলোকে আকাশে রেখে হাঁটে তাদের জন্য সহানুভূতি দেখানোর কি খুব প্রয়োজন আছে?
আনজারা মলিন মুখে বলল,
~তাই বলে পাশ কাটিয়ে চলে আসবেন?
নাদমান আনজারার সন্নিকটে এসে দাঁড়ায়।
ভ্রু কুঁচকে বলল,
~আপনাকে কোলে নিয়ে স্বর্ণভার রুমে দিয়ে আসা উচিত ছিল নাকি?
আনজারা বড় বড় চোখ করে নাদমান এর দিকে তাকাল।
নাদমান এই, ধরনের কথা বলবে সে ঘুণাক্ষরেও ভাবনায় আনেনি।
নাদমান এরকম ত্যাড়া উত্তরে আনজারা অবাক।
নাদমান, আনজারাকে বলল,
~ঝগড়া শেষ আপনার? এখন দয়া করে স্বর্ণভাকে পড়াতে যান।আপনার সাথে কথা বলে আমার অনেক মুল্যবান সময় নষ্ট হয়েছে।
আনজারা,, নাদমান এর সাথে ত*র্কে লিপ্ত না হয়ে ধপাধপ পা ফেলে সিঁড়ি দিয়ে দুইতলায় উঠে গেল, স্বর্ণভাকে পড়ানোর জন্য।
নাদমান বাহিরে বের হয়ে গেলো।
আনজারা পিছনে ফিরে একপলক নাদমানকে দেখল।
আর, বিড়বিড় করে বলল,
~ঘাড়*ত্যাড়া এমপি।
*******
—-জেল থেকে বের হওয়ার পর তামিম অতি মাত্রায় ব্যস্ত থাকার কারণে তার বিখ্যাত আড্ডাস্থল রহমত চাচার চায়ের দোকান এ আসতে পারিনি।রাজনৈতিক বিভিন্ন কাজে নাদমান এর সাথে সেও ব্যস্ত ছিল।এই, কয়েকদিন রাফানকে দূর থেকে দেখলেও ভাব নিয়ে তার সামনে দাঁড়াতে পারে নাই তামিম।সেজন্য, তার মন, মে*জাজ ভালো না।তাই,আজ তামিম সময় পেতেই দৌড়ে আগে জেন্টস পার্লারে গিয়েছে। রাফান এর সামনে একটু সাজগোজ না করলে চলে?সে এখন জেল ফেরত রাজনীতিবিদ তার , সম্মানই আলাদা। চায়ের দোকান এর সামনের গলিতে দাঁড়িয়ে তামিম নিজেকে আরও ফিটফাট করে নিলো। তামিম তার চোখ থেকে চশমাটা হাতে নিয়ে পকেটে রাখল।নাদমান এর থেকে চু*রি করা সানগ্লাসটা চোখে পড়ল। তারপর একটা কাঁধ উঁচু করে মুখে হাসি বজায় রেখে চায়ের দোকান এর বেঞ্চিতে পায়ের উপর পা উঠিয়ে বসল।কিন্তু, আশেপাশে কোথাও রাফানকে দেখতে না পেয়ে তার হাসিখুশি মনে, মন খা*রাপ এসে হানা করল।সুয়ারেজ এর দলের ছেলেপুলেরাও আজ নেই। তামিম কিছু একটা ভেবে পকেট থেকে মোবাইল বের করল।রাফান এর নাম্বার তামিম এর মোবাইলে কালাচাঁন দিয়ে সেইভ করা।তামিম কল করতেই, কল রিসিভ করল রাফান।
তামিম রাফানকে ক্ষেপা*নোর জন্য বলল,
~ওরে কালাচাঁন কেমন আছিস? জেল থেকে এসেছি। আমি এখন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ।
রাফান অসহায় কন্ঠে বলল,
~ভট*কা তুই কোথায়?আজ তোর জন্য জেলে যেতে পারি নাই। তুই ঐদিন আমাকে একটা কল দিতি আমিও মারা*মারি করে জেলে যেতে পারতাম। আজ আমি বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ শুধু তোর কারণে হতে পারি নাই ভট*কা।
রাফান কল কেটে দিলো, তার দুইমিনিট পরই তামিম এর পাশে এসে বসল।তামিম ভূত দেখার মতো চমকে উঠে দাঁড়াল।
রাফান অনুসন্ধানী চোখে তামিম এর দিকে তাকাল।
তামিম জিজ্ঞেস করল,
~কিরে এভাবে তাকাচ্ছিস কেন?নজর লাগবে তোর কুদৃ*ষ্টিতে।
রাফান উঠে দাঁড়াল তামিম এর চোখ থেকে সানগ্লাস টা খুলল।
সানগ্লাসটা রাফান হাতে নিয়ে এদিক সেদিক ঘুরিয়ে দেখে বলল,
~তুই এমপির সানগ্লাস চু*রি করেছিস ভট*কা?এতো বড় অপরাধ!তোকে চো*রের দায়ে আমি পুলিশে দিব।
তামিম অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল রাফানের দিকে। সে একজন রাজনীতিবিদ হয়ে সামান্য চশমা চুরি*র দায়ে জেলে যাবে এই কখনো হতে পারে না।তামিম উপায়ন্তর না পেয়ে রাফানের হাতে কাম**ড় দিয়ে চশমা নিয়ে দৌড় দিলো।পিছনে রাফান ও দৌড় দিলো তামিমকে পাকড়াও করার জন্য।
*****
—নাদমান এখনো বাসায় ফিরেনি যদিও দুপুরে কিছু সময়ের জন্য এসেছিল স্বর্ণভাকে দেখার জন্য আবার ও তাড়াহুড়ো করে চলে গিয়েছে। স্বর্ণভা আজ বায়না ধরেছে রাতে রাজিয়া তালুকদার এর সাথে ঘুমাবে।যদিও অন্য সময় নাদমান বাড়িতে না ফেরা পর্যন্ত নাইসা অথবা জেসমিন এর রুমে ঘুমায় স্বর্ণভা। রাজিয়া তালুকদার স্বর্ণভার ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে কপালে চুমু খেলেন। রাত এগারোটায় নয়ন তালুকদার সহ, কবির তালুকদার, নাবহান সকলেই অফিস থেকে ফিরেছে।নাবহান ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করতে না করতেই স্বর্ণভাকে ডাকাডাকি শুরু করেছে।জেসমিন সকলকে বলল স্বর্ণভা ঘুমাচ্ছে। কবির তালুকদার ধীরপায়ে দরজায় করাঘাত করলেন। করাঘাত ও করলেন নিম্ন আওয়াজে যেন স্বর্ণভা ঘুম থেকে জেগে না যায়।
~ভেতরে আসব ভাবি?
রাজিয়া তালুকদার শাড়ির আঁচল টেনে ঘোমটা দিলেন মাথায়।
ধীর কন্ঠে বললেন
~ভেতরে আসো।
কবির তালুকদার শব্দ করলেন না।ধীর পায়ে স্বর্ণভার পাশে বসে স্বর্ণভার কপালে চুমু দিলেন।
নাবহানও ভিতরে প্রবেশ করে স্বর্ণভার কপালে চুমু দিলেো।
এটা তাদের রোজকার নিয়ম বাহির থেকে এসেই স্বর্ণভাকে ডাকাডাকি করে সবার শান্তি ন*ষ্ট করবে।স্বর্ণভাকে একনজর দেখে তারা দুজনেই ধীরপায়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
রাজিয়া তালুকদার হাসলেন।
নয়ন তালুকদার ঘরে প্রবেশ করে স্বর্ণভার ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে বি*রক্ত হলেন।
রাজিয়া তালুকদার এর দিকে তাকিয়ে বললেন,
~এই বাচ্চা এই রুমে কেন?আমি নিষেধ করেছি আমার আশেপাশে যেন এই বাচ্চাকে না দেখি।
রাজিয়া তালুকদার বরাবর শান্তি প্রিয় মানুষ। ঝা*মেলা তার একদমই পছন্দের বিষয় না।কিন্তু, নিজের স্বামীর মুখে এমন কথা শোনে তার দিকে হিং*স্র বাঘিনীর মতো তাকালেন।
বাজখাঁ*ই গলায় বললেন,
~পাষ*ন্ড পিতা রুপে নিজের পরিচয় তো পূর্বেই দিয়েছেন।এখন, নতুন করে এই নিষ্পাপ, অবুঝ বাচ্চাটার সাথে পাষ*ন্ডতা করে কেন অমা*নুষের পরিচয় দিচ্ছেন?
নয়ন তালুকদার বললেন,
~অ*সভ্য সন্তান লালন-পালন করেছি। তাদের সাথে সভ্য কিভাবে হব?যারা বাবার সম্মান রক্ষা করতে পারে না তাদের সন্তান বলে পরিচয় দিতেও আমার বিবেক এ বাঁধে।
রাজিয়া তালুকদার হাসলেন,
~আপনার ও বিবেক আছে?হাসালেন।
নয়ন তালুকদার প্রসঙ্গে পাল্টে বললেন,
~কয়েক মাসের মধ্যে আমি নাবহান এর বিয়ে দিব।
রাজিয়া তালুকদার বললেন,
~আপনার ছেলের থেকে অনুমতি নিয়েছেন?
নয়ন তালুকদার গর্ব করে বললেন,
~নাবহান আমার অনুমতি ছাড়া কোন কাজ করে না।আমার হ্যাঁ তেই আমার ছেলে হ্যাঁ বলবে এই আমি নিশ্চিত।
রাজিয়া তালুকদার তাচ্ছি*ল্যের হাসি হাসলেন।
******
দুই ঠোঁটের ফাঁকে জ্ব*লন্ত সিগা*রেট রেখে নিকোটিনের ধোঁ*য়া উড়াতে ব্যস্ত নাবহান। দৃষ্টি তার মোবাইল স্ক্রিনে। আজকাল অষ্টাদশীর জ্বা*লাতন যে তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন রাতের বেলা কাঙ্ক্ষিত কিশোরীর কন্ঠ শোনার জন্য যে নাবহান এর চিত্তমহল অস্থির হয়ে পড়ে।নাবহান ফিচেল হাসল।নাবহান এর অপেক্ষার মাঝেই মোবাইল এর রিংটোন বেজে উঠল। সাবিহা কল করেছে নাম্বারটা সেইভ করা নেই তবুও নাবহান এর নাম্বারটা মস্তিষ্কে গেঁথে গিয়েছে।
মোবাইল রিসিভ করে কানে ধরতেই মেয়েলি কণ্ঠটা নাবহানকে বলল,
~বাহ্,আজকাল আমার কলের অপেক্ষা ও করেন দেখছি।
নাবহান আশেপাশে তাকিয়ে দেখল সাবিহার উপস্থিত আছে কিনা।
~আমাকে আশেপাশে খুঁজে পাবেন না।তবে, আমার রুম থেকে আপনাকে দেখা যাচ্ছে।
নাবহান ঠোঁটের কোনে হাসি বজায় রেখে বলল,
~সুখেই তো আছো মেয়ে স্বেচ্ছায় অন*লে ঝাঁপ দিচ্ছ কেন?
সাবিহা দুষ্ট হেসে বলল,
~অন*লে একা ঝাঁপ দেওয়ার শখ নেই। আপনাকে আঁকড়ে ধরে ঝাঁপ দেওয়ার শখ জেগেছে।
নাবহান ধ*মক দিলো সাবিহাকে,
~পড়ালেখা নেই মেয়ে তোমার? রাত-বিরেতে জ্বালাতন করছ কেন?
সাবিহা বলল,
~আমার জ্বালা*তন উপভোগ করেন তাই জ্বা*লাই।
নাবহান কিছু বলবে তার পূর্বেই সাবিহা কল কেটে দিলো।এই,আর নতুন কি মুখের উপর কল কেটে দেওয়া মেয়েটার অভ্যাস।নাবহান হাসি মুখে মোবাইল পকেটে রাখল।সিগা*রেট হাত থেকে ফেলে দিয়েছে পূর্বেই।
নাবহান অন্ধকার ঢাকা রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলল,
~শোন, হে রাতের আকাশ আমি অষ্টাদশীকে আমার চিত্তমহলে স্থান দিয়েছি।সে আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তাকে, পাওয়ার জন্য অন*লে ঝাঁপ দিতেও আমি রাজি।
~এখানে চিৎ**কার না করে তোর আব্বুর নিকট গিয়ে মিনমিন করে বল তুই তোর অষ্টাদশীকে চিত্তমহলে স্থান দিয়েছিস।
নাদমান এর কন্ঠে নাবহান পিছনে ফিরে তাকাল,
~এই, আমাকে ভ*য় দেখাচ্ছিস নাদমান?
নাদমান হেঁটে নাবহান এর সন্নিকটে এসে দাঁড়াল। নাবহানের কাঁধে হাত রেখে বলল,
~ভী*তুকে নতুন করে কি ভয় দেখাবো?
*****
সিকদার বাড়ির আনাচে কানাচে আজ আনন্দের জোয়ার। সাইফুদ্দীন সিকদার আনন্দে আজ একদম ছোট্ট বাচ্চাদের মতো করছে।সকাল থেকে বাড়ির সকল কাজের লোকদের দিয়ে প্রাণপ্রিয় আদরের ছোট বোনের জন্য পছন্দসই বাজার করিয়েছেন তিনি। বোন,ভাগ্নী,বোনজামাই সকলের জন্য পছন্দসই রান্না করিয়েছেন । মরিয়ম বেগম ও বসে নেই সেও রান্নায় হাত লাগিয়েছেন।দশবছর এর অধিক সময় পর আদরের বোন,ভাগ্নি,বোন জামাই এর সাথে বসে সাইফুদ্দীন সিকদার নিজ বাড়িতে বসে গল্পগুজব করছেন।সুয়ারেজ সিকদার মাথা নত করে লাজুক মুখে সোফায় বসে আছে। আয়েশা বেগম ভাতিজার দিকে তাকালেন, মাঝে মাঝে তার গর্ব হয় সুয়ারেজ সিকদার তার ভাতিজা। এমন ভদ্র ছেলে এই যুগে হয় না,কি সুন্দর তার ভাতিজার মুখের হাসি,কি সুন্দর কথা বলার ধরণ এক কথায় অমূল্য রত্ন।এসব ভেবে মুচকি হাসলেন আয়েশা বেগম। সকলেই, একসাথে ডিনার করতে ডাইনিং এ বসেছে।সাইফুদ্দীন সিকদার নিজ হাতে আনজারাকে খাইয়ে দিচ্ছেন।সুয়ারেজ তার চোখ দিয়ে আনজারাকে এক প্রকার গি*লে খাচ্ছে। আনজারা মুখে লোকমা নেওয়ার সময় সুয়ারেজ এর চাহনি লক্ষ্য করল।মেজাজ তার তখনই বিগ*ড়ে যায়।
সাইফুদ্দীন সিকদার খাবারের লোকমা আনজারার মুখের সামনে ধরতেই আনজারা বলল,
~মামা আর খাব না পেট ভরে গিয়েছে।
সাইফুদ্দিন সিকদার বললেন,
~কিরে মা কি বলিস?এতো অল্প খাবার এ পেট ভরে গিয়েছে?
আনজারার পেটে ক্ষিধে থাকলেও সে আপাতত সুয়ারেজ সিকদার এর নোং*রা চাহনির কবল থেকে বাঁচার জন্য এই ডাইনিং থেকে উঠতে চাই।
সুয়ারেজ সিকদার পাশ থেকে কোমল স্বরে বলল,
~এত অল্প খাবার খেলে তো শুকিয়ে যাবি।
আনজারা, সুয়ারেজ এর সাথে কোন বাক্য বিনিময় করল না। তার, ইচ্ছে করছে পা থেকে জুতা খুলে সুয়ারেজ এর দুইগালে ঠাস ঠাস করে মার*তে।নিজের মা আর মামার সম্পর্কটা এতবছর পর ঠিক হয়েছে তাই আনজারা কোন ঝামে*লা করে পুনরায় তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরাতে চায় না।তাই সে চুপচাপ খাবার টেবিল থেকে উঠে যায়।মাহমুদ সাহেব, মরিয়ম বেগম, আয়েশা বেগম আনজারার অল্প খাবার খাওয়া নিয়ে মাথা ঘামালেন না।সুয়ারেজ মনোমুগ্ধকর হাসি দিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।বিশাল বড় রুমে আনজারাকে থাকতে দেওয়া হয়েছে। আনজারা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সুয়ারেজদের বিশাল বড় ফুল বাগানের দিকে তাকিয়ে আছে। পুরো বাগানে লাইট থাকায় সহজেই বাগান দেখা যাচ্ছে বেলকনি থেকে। আনজারা চোখ বন্ধ করে ফুলের সুভাস নিঃশ্বাস এর সাথে গ্রহণ করছে।দরজার করাঘাতে আনজারা চোখ খুলে ঘুরে দরজার দিকে তাকাল।সুয়ারেজ রুমের ভিতরে আসার জন্য আনুমতি চাচ্ছে।
~ভিতরে আসবো?
আনজারা বি*রক্ত কন্ঠে বলল,
~ভিতরে আসতে নিষেধ করলে কি আসা থেকে বিরত থাকবে?ঠিকই তো ঠেলেঠুলে ভিতরে আসবে।
সুয়ারেজ দরজা ঠেলে ভিতরে হেলেদুলে আসল।
সুয়ারেজ হাসিমুখে আনজারাকে বলল,
~সুন্দরী মেয়েদের ঘরে অবশ্যই অনুমতি নিয়ে আসা উচিত।
আনজারা বির*ক্ত মুখে প্রশ্ন করল,
~এতো রাতে কেন এসেছো?
সুয়ারেজ আনজারার আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে দেখল।
আবারও সে অমায়িক হাসি দিয়ে বলল,
~তোর দিনকাল কেমন চলছে জানতে আসলাম।
আনজারা রাগা*ন্বিত স্বরে বলল,
~আমাকে ফলো করার জন্য তোমার বেতনভুক্ত গুপ্তচররা কি তোমাকে ঠিকঠাক মতো আমার খবর দিচ্ছে না?এতো রাতে ঘুম নষ্ট করে আমার দিনকাল জানার জন্য এসেছো?
সুয়ারেজ এর মুখ গম্ভীর হলো,
~গুপ্তচর তোকে ফলো না করলে তো জানতেই পারতাম না এমপি নাদমান সাইক তালুকদার এর বাড়ি,গাড়ি সবজায়গায় তোর যাতায়াত। তা তোর যাতায়াত কি শুধু এমপির ড্রয়িংরুম পর্যন্তই?নাকি বেডরুমেও আজ কাল যাওয়া হচ্ছে?
সুয়ারেজ এর নোং*রা ইঙ্গিত আনজারার বুঝতে অসুবিধা হলো না।
ডাইনিং টেবিল এ মনে জাগা ইচ্ছেটাকে আনজারা পূরণ করল।সুয়ারেজ এর দুই গালে সপাটে দুইটা থা**প্পড় দিলো।
আনজারা অবজ্ঞার স্বরে বলল,
~ছিঃ ভাইয়া ভালো মানুষির আড়ালে তোমার এমন কুৎসিত রুপ ছিঃ।
সুয়ারেজ পৈশা*চিক হাসি দিয়ে বলল,
~এক বাচ্চার বাপের সাথে নোং*রামি করছিস আর আমি বললেই দোষ, আমার বালিকা বধূ। (বলেই চোখ টিপ দিলো।)
সুয়ারেজ হেলেদুলে রুম থেকে চলে গেল। মুখে তার তৃপ্তির হাসি। আনজারা থম মেরে দাঁড়িয়ে রইল।
*****
এতিমখানার এক কক্ষে নাদমান চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে। এতিমখানাটি নাদমান এর মালিকানাধীন। বাবা,মা হারা ছেলেমেয়ে গুলো এখানে নাদমান এর দায়িত্বে আছে।সেই, এতিমখানার এক কক্ষে নাদমান তার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মিটিং করছে। নাদমান এর সম্মুখে নাদমানের বিশ্বস্ত গুপ্তচর শফিক ফ্যাকা*সে মুখে বসে আছে।
নাদমান গম্ভীর কন্ঠে শফিককে বলল,
~হঠাৎ তলব করলে যে?কোন তথ্য পেয়েছো?
শফিক মলিন কন্ঠ বলল,
~ভাই মিজানের খবর পাওয়া গেছে?
নাদমান নড়েচড়ে বসলো। উৎকন্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
~হারা***মিটা কোথায়?
ভাই মিজান গত সাতমাস আগেই ফাঁ*সি দিয়ে আত্ন*হত্যা করেছে।
চলবে —-
(সকলে আজকের পর্ব নিয়ে মন্তব্য করবেন।মনে হচ্ছে লেখায় একটা বড় গ্যাপ দিতে হবে। গল্প কেমন জানি অগোছালো হচ্ছে)