#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_৩০ (সারপ্রাইজ)
নাজীবার প্রথম সেমিস্টারের রেজাল্ট দেখে স্তদ্ধ হয়ে গেল আফরাজ। নাজীবা দুই কোর্স সাবজেক্টে ফেইল করেছে। কিন্তু তা কেমনে সম্ভব? তার বিবিজান প্রতিনিয়ত এক্সামের জন্য যে খাটুনি খেটেছে তা বলে শেষ করা যাবে না। হঠাৎ কল আসায় ধ্যান ভাঙ্গল তার। ফোনের স্ক্রিনে হেড-স্যার এর কল দেখে। নিজেকে ধাতস্থ করে কলটি রিসিভ করল। অপরপাশ থেকে হেড-স্যার গম্ভীরতার সুরে বলেন,
“আফরাজ বাবা এসব কি নাজীবা মামুনি পড়াশোনা ঠিকভাবে করছে না কেনো? তার দু’দুটো কোর্সে ফেইল করার কারণে তাকে আবারো প্রথম সেমিস্টারের মধ্যে এডমিশন নিতে হবে। আপনি হাজবেন্ড আমি ভেবেছিলাম আপনি পুরোপুরি তাকে দায়িত্বে রাখবেন। কিন্তু…..।”
“আপনার হলে স্যার আমিও যদি কিছু বলতাম? মে আই?”
হেড-স্যার ভড়কে গেলেন। ঢোক গিলে ‘জ্বি জ্বি বলুন’ বলে তিনি তার সিটে বসে গেলেন। আফরাজ গাড়ির দরজা খুলে এক পা বাহিরে রাখল। বাসার দিকে তাকিয়ে থেকে বলতে লাগল।
“আপনি এত কথা শুনাচ্ছেন যেনো আপনি কথাগুলো মুখস্থ করে রেখেছেন। ফোন দিয়ে বলার জন্য তড়ফড় করছিলেন। আমি বলি কি শুনেন? আমার বিশ্বাসের মর্যাদা যারা দেবে না, তাদের নূন্যতম পরিমাণ ছাড় আমি দেয় না। এখন সে যেই হোক না কেনো!”
হেড-স্যার কে আর কিছু বলতে না দিয়ে কল কেটে দেয় আফরাজ। বাসার ভেতরে ঢুকে সকলের নীরবতা দেখে কিছুটা আঁচ করতে পারল। আকবর কুসুমা কে রুমে খাওয়ে দিয়ে বিশ্রাম করতে বলে বেরিয়ে এলো। জনাব ইসমাইল এর চেহারার মধ্যেও মলিনতা দেখা যাচ্ছে। আফরাজ ঠোঁট কামড়ে গলা ঝাড়ল। জনাব ইসমাইল আর মিসেস ফেরদৌসীর নজর ছেলের দিকে গিয়ে পড়ে। দু’জনেই নাজীবার খোঁজ রুমের দিকে ইশারা করে বোঝালেন। আফরাজ মাথা নেড়ে রুমের দিকে এগালো। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)দরজা খুলতে নিলে খেয়াল করল দরজা ভেতর হতেই বন্ধ। বিধেয় নম্র আদুরীয় গলায় ‘বিবিজান’ বলে ডাক দিল। পুনরায় ডাক দেওয়ার পূর্বেই দরজা খুলে দেয় নাজীবা। হাস্যজ্জ্বল মুখশ্রী দেখালেও তার মুখে কান্নার রেশ ফুটে আছে। বোধ হয় স্বামীর আগমন বুঝতে পেরে ব্যর্থ কান্না থামানোর প্রচেষ্টা করছিল। আফরাজ নিজ দায়িত্বে দরজাটা আটকে দেয়। বিবিজান কে কোলে নিয়ে বিছানার উপর বসালো। গালে হাত রেখে আদুরীয় গলায় আওড়ায়।
“বিবিজান কেনো কাঁদছে? এই সামান্য ফেইলের কারণে কাঁদতে নেই বুঝলে?”
“আপনি বলছেন আমি না কাঁদতাম? কেনো কাঁদবো না বলুন? আপনি জানেন আমি যা লিখেছি কারেক্ট লিখেছি। কোনো ধরনের ভুল হওয়ার চান্স ছিল না। হ্যা পুরোপুরি সিজিপি ফোর না দিলেও অত্যন্ত থ্রি পয়েন্ট নাইনের মধ্যে তো অবশ্যই আমার থাকার কথা। বুঝছি না কেমনে আমার ফেইল আসলো। বিশ্বাস করুন আমি সত্যি ভালো করে লিখেছি।”
বিবিজান বিলাপের সুরে বকতে বকতে আফরাজ এর বুকে ঘুমিয়ে পড়ল। হয়ত লাগাতার কান্না করেছে। ফলাফল যে পরীক্ষারই হোক না কেনো, খারাপ ফলাফল আসলে শোকাহত হবেই। আফরাজ বিবিজান-এর মাথা বালিশের উপর রেখে ফ্রেশ হতে গেলো। তার মনে হাজারো প্রশ্নের ঘুরপাক খাচ্ছে। সে নিজ চোখে দেখেছে নাজীবা পুরো একটা মাস মন দিয়ে পড়াশোনা করেছে। তন্মধ্যে তাবাসসুম কেও চোখে চোখে রেখেছিল। কারণ তার মনে আতংক ছিল যদি তাবাসসুম নাজীবার কোনো ক্ষতি করে দেয়! সে নির্ভয়ে কাজ করার জন্য বাসার মধ্যে গার্ডস বাড়িয়ে ফেলেছিল। তাবাসসুম কি করে না করে তার জন্য রাফিকে লাগিয়ে রেখে ছিল। তবে? মনের ভাবনায় ইতি টেনে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলের কাছে গেল। সবার মলিন মুখ দেখতে পেলেও তাবাসসুম আর তার মায়ের স্বাভাবিক আচরণ দেখে কিছু একটা ভাবল। চেয়ার টেনে বসে বলে,
“আমার মনে হচ্ছে এখানে কোনো ষড়যন্ত্র নিশ্চয় আছে।”
ভাতের লোকমা চিবিয়ে খেতে গিয়েও পারল না তাবাসসুম। ভর্য়াত নজরে একপলক নিজের মায়ের দিকে তাকালো। তিনি চোখের ইশারায় আশ্বাস দিলেন। একেবারে শান্ থাকতে ইঙ্গিত দিলেন। যা কারো নজরে না পড়লেও কুসুমা চোখে পড়েছে। সে স্বামীর প্লেটে খাবার দিয়ে তার হাতা চেপে কাছে আসতে ইশারা দিল। আকবর কান কাছে নিলে সে বলে,
“এই কালনাগিনী কিছু করলো না তো আবার?”
“আমার তো একেবারে ও এরে পছন্দ না। এই হয়ত সব ফ্যাসাদের মূল।”
আফরাজ নিশ্চুপে প্লেটে খাবার বাড়তে নিলে, তাবাসসুম নাজীবার অনুপস্থিতির সুযোগ নিল। গলা ঝেড়ে চামচ হাতে নিয়ে বলে,
“আফরাজ আমাকে দাও প্লেটটা। আমি বেড়ে দেয়।”
চামচটি আর ধরল না আফরাজ। মৃদু হেসে বলে,
“খাবারটা আমার বিবিজান এর জন্য।”
“ওহ ঐ ফেল্টুস মেয়ের জন্য দরদ দেখি শেষ হয় না তোমার।”
“আমি বিশ্বাস করি আমার বিবিজান হারতে শিখেনি,তার কদমে কাটা থাকলেও সে কাটা উপ্রে ফেলার দায়িত্ব আমার, তবুও আমার বিবিজান সর্ব ঊর্ধ্বে অন্যরকম হৃদয়াঙ্গণী। যার সাথে অন্য নারীর তুলনা হয় না। সে আমারি বিবিজান।”
খাবার বাড়া শেষে রুমের দিকে চলে গেলো সে। সকলের চোখ-মুখে হাসি প্রাধান্য পেলেও তাবাসসুম আর তার মায়ের চেহারায় ক্ষোভ স্পষ্ট। হাত ধুয়ে তৎক্ষণাৎ বাহিরে বেরিয়ে যায়। হিয়া দেয়ান থামাতে চেয়েও পারলেন না। তিনিও ক্লান্ত প্রায়। তার আর ছুটাছুটি করার মত শক্তি অবশিষ্ট নেই। সে চাইছে মৃত্যু।লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)ফাহিম পরিবারের সদস্যদের মৃত্যু আর তার আর তার মেয়ের রাজত্ব ধারণ। মিসেস ফেরদৌসী তাবাসসুম এর অনৈতিকতা দেখে মুখ বাঁকালেন। হিয়া দেয়ান এর দিকে তাকিয়ে বলেন,
“কেমন মেয়ে আপনার? যে আপনার কথা অব্দি শুনতে চাইলো না। উল্টো মুখ ঝামটা মে’রে চলে গেলো।”
“আপনারা যেমন আচরণ আমার মেয়ের সাথে করছেন তার এটুকু ক্ষোভ প্রকাশ করাটাও কম।”
“হাহ্ আমার দোয়া আমার সন্তানের সঙ্গে আছে। আল্লাহ নিশ্চয় ভালো কোনো ফলাফল রেখেছেন।”
___
রাতের নয়টা বাজছে,
নাজীবার ম্লান মুখশ্রী মোটেও সহ্য হচ্ছে না আফরাজ এর। সে বুদ্ধি করে একটা ওয়াইনের বোতল তার হাতে দিল। ওয়াইনের বোতল দেখে চমকে ‘আসতাগফিরুল্লাহ ছিঃ ছিঃ’ করে বোতলটা ছুঁড়ে মা’রল। আফরাজ হা করে তাকিয়ে রইল। ভাঙ্গা কাঁচের বোতল টির দিকে চেয়ে বিবিজান এর দিকে মুখ ফিরিয়ে বলে,
“বিবিজান তোমার প্লানমাফিক ওয়াইন এনে ছিলাম। তাও চারহাজার টাকা দিয়ে। এত সহজে নেশাধায়ক ওয়াইন কেউ দিতে চাই না। সেলারের পকেট গরম করে আনলাম একনিমিষে ছু’ড়মা’র করে দিলে। তোমার তো বলার হওয়া উচিৎ একবার মা’রার পরপরই বলিং হয়ে যেতো।”
নাজীবা মুখ ফুলিয়ে বলে,
“তাহলে আনলেন কেনো আমি কী আনতে বলে ছিলাম? যতসব অভদ্রতামি।”
আফরাজ তপ্তশ্বআস ফেলে ওয়াইন ভর্তি একটি গ্লাস নাজীবার হাতে দিল। সে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল ‘কি এটা?’
আফরাজ হাতের ইশারায় ওয়াইন বোঝাল। নাজীবা পুনরায় চিৎকার করে ফেলতে নিলে এবার আফরাজ ধরে ফেলল। বিবিজান এর হাত চেপে ধরে বলে,
“আরে বিবিজান তালাকনামা রেডি তোমার থেকে তাবাসসুম কে ওয়াইন খাওয়ে জ্ঞানশূন্য করে হাতের টিপসই নিতে হবে। তারপর এটা জমা দিয়ে দিলেই তাবাসসুম এর সঙ্গে আমার আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না।”
নাজীবা পুরো কথা বুঝতে পেরে ওয়াইনের গ্লাসটা ঠিক করে রাখল। রাতের খাবার পরিবেশন করা হলে নাজীবা স্বাভাবিক আচরণ করে। তাবাসসুম মনেমন ক্ষিপ্ত। কেননা মেয়েটার কান্নাকাটি করে ঘর উজার করা উচিৎ ছিল। আর সেখানে মেয়েটার স্বাভাবিক রুপ যেনো তার হজম হচ্ছে না। হিতে আর পাত্তা না দিয়ে তাবাসসুম খাবার বাড়তে গেলে তার ফোনে কল চলে আসে। চেয়ারম্যান মোস্তাক এর কল দেখে চোখ বড় হয়ে গেল তার। ঢোক গিলে পাশে বসারত মা’কেও ফোনে কল আসা ব্যক্তির নাম দেখালো। তিনি দেখে ঘাবড়ে গেলেন। ফোনটা কেড়ে নিয়ে সকলের সামনে ভান ধরে বলেন,
“মা’রে আমার শরীরটা খারাপ লাগছে। আমার জন্য তুই একটু খাবারটা বেড়ে রুমে নিয়ে আয়।”
কথার ইতি টেনে তিনি তৎক্ষণাৎ বসা থেকে দাঁড়িয়ে রুমের দিকে ছুটে গেলেন। আফরাজ সন্দেহাতীত নজরে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। সে পাশে বসা ম্লান মুখশ্রী নিয়ে বিবিজান কে খেতে দেখে তার মুখে এক লোকমা ভাত এগিয়ে দেয়। স্বামীর আদুরীয় যত্নতায় মুচকি হেসে নাজীবা খেতে লাগল। মিসেস ফেরদৌসী স্বামীর হাত আঁকড়ে ধরে নিম্ন গলায় আওড়ান।
“দোয়া করছি যাতে আমাদের ছেলে-বউমাদের মাঝে আর কোনো দূরত্ব না হোক।”
“চিন্তে করো না আফরাজ সামলে নেবে।”
অন্যথায় হিয়া দেয়ান ফোন রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে চেয়ারম্যান কর্কশ গলায় গা’লি ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, ‘মা** তুইও বিশ্বাসঘাতকতা করলি। তোর কারণে আমার রেপুটেশন ডুবে গেলো। তাইত বলি তুই দিনে কেন আমার কাছে এসেছিলি। এই তোর আমার সুখ দেওয়ার পথ? শুনে রাখ তোকেও ধ্বংস করে দেবো আমি। তুই আর তোর মা জেলের ভাত খাবি সারাজীবন মরে রাখিস।’
কথার সমাপ্তি টেনে চেয়ারম্যান ফোন কেটে দিল। তার পালানোর রাস্তা নেই বললেই চলে। তার স্ত্রী সন্তান সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তিনি বুঝতে পারছেন না কেমনে তার কীর্তিকলাপ ফাঁস হলো। কিন্তু তার ধারণা এসবের পেছনে নিশ্চিন্তে তাবাসসুম এর হাত রয়েছে। কেননা শারীরিক সম্পর্কের জোড় বেশিরভাগ ঘটেছিল তাবাসসুম এর সঙ্গেই। আজ দিনেও সে এসে আফরাজ এর নামে ক্ষোভ প্রকাশ করে শারীরিক ভাবে মিলিত হয়েছে। তাহলে তখনি বোধহয় সে ফুটেজ বানিয়ে ছেড়েছে। চেয়ারম্যান তড়িঘড়ি গাড়িতে যেয়ে বসে পড়েন। তার গাড়ির ইঞ্জিন চালু করার পূর্বেই পুলিশের গাড়ি তাকে আটক করে নেয়। প্রেস রিপোর্টার এসে ভীড় জমালো। তাদের রিপোর্টিং এ একটা কথায় বারংবার জিজ্ঞেস করা হচ্ছে ‘ভিডিও ফুটেজ গুলো সত্য কিনা?’ চেয়ারম্যান এর স্ত্রী সন্তানদের কথা চিন্তা করে হ্যা বলে দেন। কেননা তিনি চান না স্বামীর কুপথে তার সন্তানরাও পা দিক। বিধেয় হ্যা বলে তিনি সন্তানদের নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেলেন। চেয়ারম্যান ছুটাছুটির চেষ্টা করছেন। কিন্তু কেউ তাকে ছেড়ে দিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে উম্মাদনায় পুলিশের পকেট থেকে গু’লি নিয়ে সবার দিকে ট্যাগ করে বলেন,
“কেউ কাছে আসবি না। যেতে দেহ্ আমাকে। নাহলে…..।”
এক পুলিশ পা বাড়াতে নেওয়ায় চেয়ারম্যান গু’লি ছাড়ল। বাকি পুলিশরাও ক্ষেপে গেল। তারা পরপর গু’লিবিদ্ধ করে চেয়ারম্যান এর এনকাউন্টার করে দিল। খবরের মধ্যে এতক্ষণ যাবত হওয়া ঘটনার দৃশ্য কিংবদন্তি হয়ে দেখছিল ফাহিম পরিবারের সদস্যগণ। তাবাসসুম স্তদ্ধ। হিয়া দেয়ান এর হাতে থাকা ফোন স্পিকারে ছিল। সে শুনতে পেয়ে থমকে আছে। তৎক্ষণাৎ রুমের বাহিরে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে লাগে। কিন্তু খবরের দুরন্ত টেলিকাস্ট ভিডিও দেখে দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার মত অবস্থা তার। আফরাজ টিভি অফ করে হাতের আঙ্গুল টিপে ফোন হাতে নিয়ে রাফিকে কল দিল। রাফি কল রিসিভ করতেই আফরাজ ‘থ্যাংকস তোর পেমেন্ট পেয়ে যাবি।’ বলল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
রাফি খুশি হলো তার স্যারের খুশিতে সেও আপ্লুত। নাজীবার হাতে ফোন ছিল। তার ফোনে তাদের ডিপার্টমেন্টের এডভাইজার এর পক্ষ থেকে কল আসছে। আফরাজ চোখের ইশারায় কল রিসিভ করতে আশ্বস্ত করল। সে কল রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে মিসেস সেলিনা খুশির চোটে বলেন,
“নাজীবা তুমি ফাস্ট গ্রেটেড হয়েছো। তুমি কোনো সাবজেক্টে ফেইল করোনি। বরং ঐ দুই কোর্স টিচার্স এর কাছে তোমার খাতা চেঞ্জ হয়ে গিয়ে ছিল। তারা পুনরায় তোমার খাতা পেয়ে চেক করেছে। তুমি দুটো কোর্সেই এইটি ফাইভ মার্কস পেয়েছো। কংগ্রাচুলেশন মিসেস ফাহিম। তুমি সামনে নিউ সেমিস্টারের জন্য অভিজ্ঞ তা আমি নিঃস্বার্থে বলতে পারি।”
নাজীবার ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটল। কান্না চেপে ‘থ্যাংকিউ ম্যাম’ বলল। কল রেখে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল সে ফাস্ট গ্রেট পেয়েছে। জনাব ইসমাইল উচ্চ আওয়াজে ‘মাশাআল্লাহ’বললেন। মিসেস ফেরদৌসী ও মুচকি হেসে ‘আলহামদুল্লিল্লাহ্’বলে মিষ্টিমুখ করলেন। আফরাজ আড়চোখে তাবাসসুম এর দিকে তাকাল। তাবাসসুম এপাশ ওপাশ তাকিয়ে রুমে চলে গেলো। তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আফরাজ বলে,
“যার হৃদয়ে তুমি ছেদ করতে চেয়েছো, সেই হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার আঙ্গিনার রাণী আমার বিবিজান। তার প্রতি সদয় হলে তুমি রেহাই পেতে, কিন্তু তুমি নির্দয়তার পরিচয় দিলে। শাস্তি তোমার প্রাপ্য। কালকের সকালের অপেক্ষা করো। এই ঘরের থেকে জেলের ঘরে পাঠানোর রাস্তা তুমি নিজ হাতে তৈরি করেছো।”
নাজীবার হাসিমাখা মুখের দিকে চেয়ে আফরাজ ভাবনায় পড়ে গিয়েছিল। সবার ঘুমানোর সময় নাজীবা এক ফাঁকে জেগে উঠে। চোরের মত এদিক ওদিক তাকিয়ে রান্নাঘরে দৌড় দিল। রান্নাঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই হোঁচট খেয়ে পড়তে নিলে আফরাজ এসে ধরে ফেলল। নাজীবা দেখে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে স্বামীর গালে চুমু এঁকে দেয়। রান্নাঘরের দরজার পেছনে দু’জনে দাঁড়িয়ে যায়। আফরাজ বিরক্তিকর গলায় বলে,
“সারাক্ষণ এসবের ফাজলামিই তোমার মাথায় ঘুরপাক খাই? ভালো কোনো বুদ্ধি নেই তোমার? তোমার জ্বালায় না ঘুমও চোখে আসে না। এই আফরাজ ফাহিম যে কিনা নামকরা ব্যবসায়ী। তার থেকে তার বিবিজান এর জন্য রাতবিরাতে চোরের বেশে ছুটাছুটি করতে হচ্ছে।”
নাজীবা তার কোমর থেকে স্বামীর হাত সরিয়ে বলে,
“উফফ আপনি এসবের মজা কি বুঝবেন? জীবনে কখনো চুরি করে ছিলেন? আমি আর নাদিম ভাই করে ছিলাম। জানেন ঐসময় ভুঁড়িওয়ালা প্রতিবেশী সবসময় তার বাসায় আমের গাছ লাগাতো। আমি আর ভাইয়া মিলে আম চুরি করে এনে সেই মজা করে খেতাম।”
আফরাজ কপাল চাপড়ে বলে,’ইয়া আল্লাহ তুমি তো দেখি চুরুনিও। আর কি কি করছিলে জীবনে?”
নাজীবা তার কথার ঝুড়ি খুলতে নিলে আফরাজ তার মুখ চেপে হুঁশ চুপ করতে বলে। কেননা কারো পায়ের শব্দ কানে ভেসে আসায় তারাও এলার্ট হয়ে যায়। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)দেখতে পেল হিয়া দেয়ান রান্নাঘরে ঢুকে চুলার মধ্যে পাতিল রেখে দুধের পেকেট খুলে দুধ গরম করতে দিলেন। তিনি চুলার আঁচ কমিয়ে একপলক মেয়েকে দেখতে রুমের দিকে যান। মেয়ে তার ঘুমোয়নি। চিন্তাচেতনায় বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে। নাজীবা সেই সুযোগে ঘুমের ওষুধ দুধের উপর ঢেলে দেয়। আফরাজ তড়িঘড়ি বিবিজান কে কোলে নিয়ে রুমে চলে গেলো। হিয়া দেয়ান চৌপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলেন সব স্বাভাবিক আছে। ফলে তিনি মেয়ে আর তার জন্য গ্লাসে দুধ ঢেলে নিয়ে যান। রাতের তিনটার সময় চলছে, আফরাজ চোখ পিটপিট করে বিবিজান-কে দেখছে। বিবিজান তার ফোনে গেইম খেলছে। চোখ বন্ধ করার নাম নিচ্ছে না। আজ তার প্ল্যান সাকসেসফুল করবেই সেই পণ করে রেখেছে। গালে হাত দিয়ে বিবিজান-কে দেখতে দেখতেই ঘুমিয়ে পড়ল আফরাজ। নাজীবা ফোন রেখে স্বামীর কপালে ওষ্ঠজোড়া ছুঁয়ে দিলো। আস্তেধীরে তালাকনামা হাতে নিয়ে তাবাসসুমের রুমে গেল। তাদের বাসার সব দরজার ডুবলিকেট চাবি আছে। তাই সে নির্দ্বিধায় ভেতরে প্রবেশ করল। তাবাসসুম এর নাইটি পরা রুপ দেখে ঘৃণায় চোখ বুজে নিল নাজীবা। সে আন্দাজ করে ছিল মেয়েটা এমনি। তাইত স্বামীর ঘুমানোর আগ পর্যন্ত নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিল। সে চাই না তার স্বামী তাকে ছাড়া অন্য কারো শরীরের দিকে দৃষ্টিপাত করুক। নির্ভয়ে ঘুমন্ত তাবাসসুম এর টিপসই নিয়ে পুনরায় নিজ রুমে চলে এলো। দরজাও লক করে এসেছে। যেনো তারা টের না পায়। তালাকনামায় আফরাজ এর সাইন তো ছিলই এখন তাবাসসুম এর সাইনের জায়গায় টিপসই দেখে তার বুকে প্রশান্তির ঝড় বইল। বালিশের নিচে পেপার্স রেখে নিশ্চিন্তে স্বামীর বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল।
চলবে…….