#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_৩১(সমাপ্তির প্রথমাংশ)
তাবাসসুম আফরাজ কে গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ব্যাগ হাতড়ে সিরিঞ্জ-টা বের করে। চোখে তীব্র নেশা নিয়ে ধীরপায়ে সামনে আগায়। আফরাজ ফোনে হেড-স্যার এর নাম্বারে কল দিচ্ছে। কিন্তু তিনি কল ধরছে না দেখে বারংবার কল দিয়ে যাচ্ছে। তাবাসসুম তার পেছনে এসে ঘাড়ের কাছে সিরিঞ্জ-টা লাগাতে গিয়েও পারল না। তৎক্ষণাৎ গাড়ির পেছনে লুকিয়ে পড়ে। কেননা হেড-স্যার চলে আসেন। তিনি এসে আফরাজ এর সাথে ‘হাই-হ্যালো’ বলে ভেতরে নিয়ে যায়। তাবাসসুম চোখের নেশা নিয়ন্ত্রণ করে সিরিঞ্জ-টা ব্যাগে রেখে দেয়। কিন্তু নিজের সাথে হওয়া অপমানের শোধ তুলতে নতুন ফন্দি আঁটে। শিক্ষক-মণ্ডলীর কাছে নতুন নিয়ম জারি করে। নিয়ম বাস্তবায়নের জন্য সে বাসায় থাকাকালীন কৌশলে নাজীবার চোখ ফাঁকি দিয়ে তার লেকচার খাতা চুরি করে খাতার কিছু পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলে ছিল। যা নাজীবার অজানা। ক্লাসে নাজীবা মনযোগ সহকারে ফিজিক্স ক্লাস করছে। তখনি ফিজিক্স স্যার পূর্বের লেকচার কপি চেক করতে চাইলেন। নাজীবার দিকে এগিয়ে এসে তার খাতা দেখার আক্ষেপ করেন।
“মিসেস নাজীবা আপনার ফিজিক্স লেকচারের কপি কোথায়?”
স্যারের কথা শুনে হাস্যজ্জ্বল মুখশ্রী নিয়ে ব্যাগ খুলে খাতা বের করলে দেখতে পেল তার খাতার কিছু অংশ ছেঁড়া। ভয় পেল নাজীবা। পুনরায় খাতা উল্টে পাল্টে চোখ বুলাল। নিজের মাথায় জোড় দিয়ে ভেবেও কুল পেল না। স্যার কিছু বলার পূর্বেই ক্লাসরুমে প্রবেশ করলেন মিস তাবাসসুম। অন্য ম্যাম কে দেখে ছাত্র-ছাত্রীগণ কিছুটা উদগ্রীব হয়ে পড়ল। তাবাসসুম মনেমন বেশ খুশি। আজকে অহেতুক রুলস সে ফলেছে টিচার্সের উপর। তাবাসসুম কলিগদের সঙ্গে অন্তমর্মী স্বরূপ আচরণ করে বলে তারা তাকে সম্মান দেয়। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) সেই প্রেক্ষিতে তাবাসসুম নোটিশ পড়ে শোনাতে নাজীবার ক্লাসরুমে এসেছে। নাজীবাও স্থীর দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। গলা ঝেড়ে তাবাসসুম বলে,
“আজকের নতুন নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সবাইকে স্যার/ ম্যাডামের দেওয়া লেকচারার কপি কালেক্ট করে রাখতে হবে। নাহলে তার উপস্থিতির নামে ক্রস মার্ক করা হবে। এতে স্টুডেন্ট’স এর ১০পাসেন্ট করে মার্কিং করার আদেশ জারি করা হয়েছে। সেই সাথে শাস্তি আবশ্যক। তাই সকল টিচার্স কে অনুরোধ করা হচ্ছে আজ থেকে এ প্রসেস চালু করতে। ধন্যবাদ।”
কথা শেষ করে তাবাসসুম ক্লাসে উপস্থিত তার কলিগের দিকে তাকিয়ে বলে,
“এখন স্যার আশা করি আপনি আপনার কাজ পরিপূর্ণ ভাবে পালন করবেন। মতের বিরোধ যাবেন না। যে লেকচার কপি দেখাতে পারবে না তাকে অত্যন্ত দশমিনিট কানে হাত চেপে ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।”
কথাটুকু বলে তাবাসসুম বাঁকা হেসে নাজীবার দিকে একপলক চেয়ে চলে যায়। নাজীবার খারাপ লাগছে সে উপস্থিত থেকেও তার নামের পাশে ক্রস মার্কিং দেওয়া হয়েছে। স্যার অসহায় দৃষ্টিতে নাজীবার দিকে চাইলেন। তিনিও আদেশের বিরোধ যেতে পারবেন না। নাজীবা কে না চাইতেও শাস্তির দাবি মান্য করতে হলো। কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। এতে স্যার লজ্জিত বোধ করলেও কিছু বলতে পারেন না। কিন্তু নাজীবা-র সঙ্গ দেয় কয়েকজন ছেলেমেয়ে। যা দেখে নাজীবা হাসল। কেননা যারা দাঁড়িয়েছে তারা নাজীবা-কে হাসির পাত্রী হওয়া থেকে রক্ষা করেছে। জানালার বাহির থেকে এ দৃশ্য দেখে রে’গে জ্বলে যাচ্ছে তাবাসসুম। মাটিতে পা’রা মে’রে সেখান থেকে সরে যায়।
অন্যথায়, হেড-স্যার এর সামনে কপালে হাত রেখে বসে আছে আফরাজ। হেড-স্যার ঘামছেন। তিনি ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলেন,
“আসলে আফরাজ বাবা প্রিন্সিপাল স্যার আমার অনুপস্থিতিতে এসে ছিলেন। কিন্তু আমি আসার পর পর চলে যান। আমি তো এসবের কিছুই জানি না।”
“আপনি আমার বাবার বয়সী তাই বয়সের দিকে তাকিয়ে আপনার সঙ্গে বেদম প্রহার করছি না। বরং সতর্ক করছি পরবর্তীতে আমার স্ত্রীর সঙ্গে কোনো প্রকার অশ্লীল কর্ম হয়ে থাকে। তবে আপনার এই ভার্সিটি ভার্সিটি হিসেবে থাকবে কিন্তু আপনি আর হেড-স্যার থাকবেন না। আপনার কুকীর্তি ফাঁস করে দেওয়া আমরা একসেকেন্ড এর ব্যাপার। সো বি কেয়ারফুল স্যার।”
আফরাজ দাঁড়িয়ে যায়। তাকে দেখে হেড-স্যার ও দাঁড়িয়ে বাহির পর্যন্ত ছেড়ে দেয়। হঠাৎ তার মুখোমুখি হলো তাবাসসুম। স্বেচ্ছায় হাত ধরতে গেলে আফরাজ দূরে সরে গেল। হাত গুটিয়ে নিল তাবাসসুম। তবুও দ্বিরুক্তিময় গলায় বলে,
“তোমার প্রথম বউ তো ক্লাসে তাই দ্বিতীয় বউয়ের সাথে আলাপ করতে সমস্যা থাকার কথা নয়। একটুও মন চাই না তোমার প্রথম ভালবাসার…”
তাবাসসুম কে মাঝপথে থামিয়ে আফরাজ নিজেই বলতে লাগল।
“না প্রথম , না দ্বিতীয় আমার ভালোবাসার একমাত্র রমণী হলো আমার বিবিজান। তুমি ছিলে সাময়িক সময়ের মোহজাত প্রডাক্ট। যার মূল্য ছিল মুখের কথায়,যার মূল্য ছিল ভোগের বস্তুতে এবং যার শরীর নিজেই হেয়তায় বিক্রি করেছে। তোমার আর আমার বিবিজান এর মাঝে বিস্তর ফারাক। এই ফারাকের সীমানা কখনো তুমি পেরিয়ে যেতে পারবে না।
সে আমার #অন্যরকম_হৃদয়ের_আঙিনায়_ঘুমন্ত_পরী।
এখনো বলছি সময় আছে শোধরে নাও নিজেকে। নাহলে তুমি আর তোমার মায়ের চেহারা লোকানোর স্থান খোঁজে পাবে না। এই আফরাজ ফাহিম তার কথায় অনড়।”
কথাটুকু বলে আকস্মিক তাবাসসুম এর মুখের কাছে এলো আফরাজ। হিংস্র চাহনি নিয়ে বলে,’দোয়া করো চেয়ারম্যানের যে অবস্থা হয়েছিল সে অবস্থা যেনো তোমাদের সাথে না হোক। বাঁচতে চাইলে রাস্তা অনেক খোলা,মরণ চাইলে সোজা নরকের রাস্তা দেখাবো।’
পকেটে হাত গুঁজে শিস বাজাতে বাজাতে গাড়ির কাছে চলে গেলো। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
তাবাসসুম স্তদ্ধ হয়ে চেয়ে রইল। ক্ষোভের চেয়েও বেশি তার মনেপ্রাণে হিংসার স্তর পর্যায় বেড়ে চলেছে। যতবার সে আফরাজ এর নিকটে যেতে চেয়েছে ততবার আফরাজ তার অতীতের কথা টেনে নাজীবার সঙ্গে তুলনা করেছে। তার চোখ-মুখে শোধরানোর কোনো ভাবান্তর নেই। বরং সে এবার প্রাণ নিয়েই ছাড়বে। বিরবিরিয়ে আফরাজ এর দিকে চেয়ে বলে,
“হয়ত তুমি স্বেচ্ছায় আমাকে মেনে নেবে নাহয় তোমার নাজীবার এমন অবস্থা করব যাতে সে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে দেয়।”
ব্যাগ থেকে ফোন বের করে এক মেয়ে কে ডাক দেয়। পুষ্প নামের এক মেয়ে এসে হাজির হলো ক্যান্টিনে। তার আগমনের সহিতে তাবাসসুমও হাজির হলো। সে পুষ্পর হাতে দশ লাখ টাকা দিয়ে বলে,
“তোমাকে নাজীবার পিছু নিতে হবে। ক্লাস শেষে আমি চাই তুমি এক বাচ্চাকে ডেকে তাকে পুকুরপাড়ের দিকে নিয়ে যাবে। তারপর সুযোগ বুঝে তাকে পুকুরপাড়ে ধাক্কা মে’রে পালিয়ে যাবে। আমি কন্ট্রোলার রুমে গিয়ে ক্যামেরার ফুটেজ অফ করে দেবো। কোনো অসুবিধা হবে না। পুকুরের পানি খুব গভীর। আমি চাইছি আজ আমি যেমন অপদস্থ হয়েছি তেমনি নাজীবাও অপমানিত লাঞ্ছিত হোক। তার শরীরের দিকে যেনো শকুনের নজর পড়ুক। বুঝতে পেরেছো কি বলেছি? আর শোনো মুখে ঘোমটা দিয়ে বেশ-ভূষা পরিবর্তন করে যাবা। যেনো সন্দেহের অবকাশ না থাকে। সবচেয়ে বড় কথা তোমাকে রিসোর্টেও যেতে হবে। তার প্ল্যানিং আমি রাতে কলে বুঝিয়ে দেবো। ঐ কাজের পর বাকি দশ-লাখ টাকা পে করব।”
পুষ্প বাঁকা হেসে মাথা নেড়ে দাঁড়িয়ে যায়। তারা সম্পূর্ণ মুখ ঢেকে কথা বলেছে বলে কেউ তাদের চিনতে পারল না। পুষ্প নাজীবার ক্লাস রুমের পাশে থাকা চেয়ারে বসে ফোন ঘাঁটছে। ভাব এমন যেনো সে এ ভার্সিটির স্টুডেন্ট। নাজীবা বের হতেই আফরাজ কে গাড়ির ভেতর বসারত দেখতে পাই। মুচকি হেসে এগোতে নিলে কেউ তার বোরকার হাতা ধরে টান দেয়। থেমে যায় নাজীবার কদম। চোখের দৃষ্টি সেই মালিকের দিকে নিলে দেখল এক বাচ্চা তাকে ইঙ্গিতে পুকুর পাড়ের দিকে যেতে ইশারা করছে। ব্যাপারটায় কেমন যেন মনে হলো তার। সেও ইশারায় না বোধক মাথা নেড়ে চলে যেতে গেলে বাচ্চাটা কেঁদে দেয়। এতে সে অস্থির হয়ে ‘ঠিক আছে যাচ্ছি যাচ্ছি’ বলে উল্টো দিকে পা ফেলে পুকুরপাড়ের দিকে পা বাড়ায়। আফরাজ সময় দেখে চোখ ফিরিয়ে দেখল নাজীবা গাড়ির কাছে না এসে অন্য খানে যাচ্ছে। চিন্তিত হলো। তৎক্ষণাৎ গাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে নাজীবার পিছু নিতে চাইলে কিছু মেয়েরা হৈচৈ করে তার সামনে এসে পড়ে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) বিরক্ত হলেও শান্ত মনে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। তার চোখের দৃষ্টি সম্পূর্ণ নাজীবার দিকে। কিন্তু মেয়েটাও কেমন একটুও পিছু ফিরছে না! মেয়েদের সামলে উঠতে না উঠতে ছাত্রদল কিছু শলাপরামর্শ করতে চলে এলো। আফরাজ পড়ল যেনো মাইঙ্কার চিপায়। কোনো প্রকার গার্ডস আনেনি। এখন লোকগণের সমাহার শেষ হচ্ছে না।
নাজীবাকে পুকুরপাড়ে রেখে বাচ্চাটি কোথায় যেনো পালালো। সে উঁকিঝুঁকি মে’রে দেখার চেষ্টা করে। তবে কাউকেও চোখে পড়েনি তার। না পারতে ফিরে যেতে মুখ ঘোরানোর পূর্বেই তার পিঠে জোরালো ধাক্কা লাগে। পা পিছলে পানির উপর আঁচড়ে পড়ে। পানির গভীরতা অনেক। সে তার শরীরের ভর উপরে রাখার চেষ্টা করে চিল্লিয়ে ‘বাঁচাও প্লিজ’ বলে উঠে। আফরাজ ছাত্রদলের নানান কথার জবাব দিতে দিতে ক্লান্ত। তার উপর মেয়েদের গ্যাঞ্জাম। ক্যাচাল সহ্য হলো না তার। হঠাৎ ফোনে কল আসায় আফরাজ তাদেরকে হাতের ইশারায় থামতে বলে ফোন রিসিভ করে। অপরপাশ থেকে নাদিম উত্তেজিত গলায় বলে,
“আফরাজ নাজীবা কোথায়? আমি এসে থেকে দেখছি নাজীবা ভার্সিটির ভেতরে নেই।”
বজ্রপাতের ন্যায় শোনালো কথাটা। তৎক্ষণাৎ গা’র্ন বের করে আকাশের দিকে শু’ট করে। শব্দের সমাগম থেমে যায়।ছাত্রদল পেরিয়ে নাজীবার যাওয়ার পথে দৌড় লাগায়। ছাত্রদল বিষয়টা ঘেঁটে দেখতে আগায়। আফরাজ ছুটে এসে দেখে নাজীবা ডুবচ্ছে। ‘নাজীবাআআআ’ চিৎকার করে ডেকে উঠে আফরাজ। পরণের শার্ট খোলে ঠান্ডা পুকুরের পানিতে ঝাঁপ দেয়। নাজীবার মুখটা পানির ভেতর ডুবে যায়। আফরাজ সাঁতরে নাজীবার কাছে গিয়ে কোলে নেয়। খেয়াল করে দেখল চোখ বন্ধ, জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছে মেয়েটা। পুকুরের ধারে গিয়ে ফেলে যাওয়া শার্টটা বিবিজান এর শরীরে জড়িয়ে জোরে জোরে বুকের উপরে চাপ প্রয়োগ করে। প্রচন্ড চাপের ফলে জোরালো তেজে নাজীবা কাশতে লাগে। মুখের থেকে লাগাতার পানি বের হতে থাকে। যা দেখে আফরাজ আলতো হাতে বিবিজান কে জড়িয়ে ধরে স্থীরভাবে মাটির উপরে বসে থাকে। নাজীবা শরীর ঠান্ডায় তড়তড় করে কাঁপছে। আফরাজ বিবিজান কে কোলে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসায়। গাড়ির হিটার অন করে দেয়। যার হাওয়ায় মোটামুটি স্বস্তি পায় নাজীবা। আফরাজ বাহিরে ভার্সিটির লোকগণের দিকে গম্ভীর নজরে তাকিয়ে বসে পড়ল। বাক্যহীন গাড়ি চালু করতেই আফরাজ বাসার রাস্তার দিকে গাড়ি ঘোরায়।
তাবাসসুম বেশ খুশি হলো। নাজীবার পানিতে জুবু-থুবু শরীরের ছবি তুলেছে সে। এই ছবিই সে খদ্দরের কাছে পাঠিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতাবে। খদ্দর চাইলেই লোক লাগিয়ে নাজীবা-কে হাতড়ে খদ্দরের কাছে পাঠাবে। কেননা তার ইচ্ছে করছে না এত সহজে নাজীবা-কে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে! সে শোধ তুলবে। এত মাস যাবত হয়ে আসা অপমানের শোধ গুণে গুণে নিতে চাই সে।
____
ঘণ্টাখানেক পর শরীর কাঁপিয়ে জ্বর এলো নাজীবা-র। তার পাশে জলপট্টি এনে বসে আফরাজ। বাসার কাউকে ব্যাপারটা জানাল না। হিতে চিন্তায় পড়বে বলে! আকবর এর মাঝে এসে ওষুধপত্র দিয়ে চলে গিয়েছে। নাজীবা-র শরীরের তাপমাত্রা মেপে আস্তেধীরে জলপট্টি দিতে লাগে। রাফি লাগাতার কল-ম্যাসেজ করে যাচ্ছে। এতে আফরাজ অসহায় ভঙ্গিতে ফোনের দিকে একপলকে তাকিয়ে পুনরায় বিবিজান কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অন্যথায়, রাফি কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। আকবর স্যারের রুমে প্রবেশ করবে কি করবে না সেটা ভেবে ভীতি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রুমের দরজায় কাঁপা হাতে নক করল। আকবর সবেই কুসুমাকে ওষুধ সেবনের জন্য ওষুধ হাতে নিয়ে ছিল। কেউ আসায় কুসুমা উঠতে চাইলে আকবর বারণ করে দিল। সে নিজ দায়িত্বে গিয়ে দরজা খুলল। বাহিরে রাফিকে ঘাবড়ানো নজরে চেয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকায়। রাফির নজর আকবর স্যারের হাতের উপর পড়ে। হাতে সেই ওষুধ দেখে তৎক্ষণাৎ ঢোক গিলে বলে,’স্যার আপনার হাতের ওষুধটা ভুল। এটা তাবাসসুম এর মা পরিবর্তন করে দিয়েছে। আসলটা আমি কিনে এনেছি। হিয়া চুন্নী ম্যামের আসল ওষুধ ফেলে দিয়েছে।’
কথাগুলো শুনে হতভম্ব হয়ে গেল আকবর। হাতে থাকা ওষুধ উল্টেপাল্টে দেখে পকেটে ফুরে নেয়। ফামের্সীতে গিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখবে কিসের ওষুধ ঐ ডাইনি মহিলা রেখেছিল? মনেমন কথা ভেবে রাফির হাত থেকে ওষুধ নিয়ে তার পিঠ চাপড়ে সাবাসী দিয়ে যেতে বলল। তৃপ্ত শ্বাস ফেলে দরজা বন্ধ করে কুসুমার কাছে আসে। সে প্রশ্ন করতে চাইলে আকবর তাকে চুপ করিয়ে ওষুধ খাওয়ে দেয়। কোনো কথাবার্তা ছাড়াই ঘুমাতে বলে আকবর। স্বামীর আদেশে মুখ ফুলিয়ে কুসুমাও চোখ বুজে নেয়।
নাজীবা-কে হালকা পাতলা বিস্কুট খাওয়ে ওষুধ সেবন করালো আফরাজ। বালিশে শুয়ে দিয়ে জলপট্টি দিল পুনরায়। প-ট্টি পানিতে ভিজিয়ে নাজীবার কপালে মেলে দেয়। পরণের শার্ট পরিবর্তন করে ফোন হাতে নেয়। রাফির নাম্বারে কল লাগায়। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)সে কল রিসিভ করে পুরো ঘটনা খুলে বলল। এমনকি তার বাবা-মায়ের গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ নতুন কিনে আগের স্থানে রেখেছে বলে জানায় রাফি। শুনে কপাল বুড়ো আঙুল বুলিয়ে রাফিকে বলে,
“নাদিম ভাইকে বল রিসোর্টে আজ রাতেই যাবো। দেখি এই মেয়ে আর মেয়ের মা দু’জনে কত কান্ড ঘটাতে পারে? নাজীবার সঙ্গে হওয়া ঘটনাটা কোনো দুর্ঘটনা নয় বরং কারো জাল মনে হচ্ছে আমার। এই জালের মূলে যে, তাবাসসুম তা আমি হলফ করে বলতে পারি। দেখি তোকে যা বলছি কাজে লেগে পড়। অন্যান্য মেইডদের সাথে কানাঘুষা করে এই কথা ছড়িয়ে দেয় আমি আর নাজীবা রাতেই রিসোর্টে যাবো। ঠিক মাগরিবের পরপর।”
“ওকে স্যার আপনার কথামত কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।”
আফরাজ কল রেখে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরোলো। তখন নাজীবার শুকনো কাঁশির শব্দে এগিয়ে গিয়ে রুমাল দিয়ে নাক মুছে দেয়। পানি খাওয়ে পুনরায় বালিশে মাথা হেলিয়ে দেয় নাজীবার। জ্বরে কাবু হয়ে আছে মেয়েটা। তড়তড় করে কাঁপা বিবিজান এর ছোট শরীরে উষ্ণতার ছোঁয়া দিতে আফরাজ কম্বলের ভেতর ঢুকে বিবিজান-কে আঁকড়ে ধরে। উষ্ণ পুরুষেলী শরীরের লোমশ বুকে নাজীবা-র শরীরও কেঁপে উঠে। জ্বরের ঘোরেও স্বামীকে পরম আনন্দে উষ্ণতা অনুভব করার লোভে জড়িয়ে ধরে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। আফরাজ তার বিবিজান এর কান্ডে মৃদু হাসল। চোখের উপর চলে আসা ছোট চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দেয়। কপালে গভীর চুম্বন দিয়ে কম্বলটা ভালো করে মোড়ে নেয়। যেনো তার উষ্ণতা শুধু তার বিবিজান অনুভব করে যায়।
চলবে……
(কালকে ইন শা আল্লাহ শেষ পর্ব দেওয়া হবে।)