#উধয়রনী
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||বোনাস পর্ব-০১||
৭২।
মলিন মুখে বসে আছে লিনাশা। নায়ীব তার হাত ধরে তার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
“আমি তোমাকে এভাবে দেখতে পারছি না।”
লিনাশা নায়ীবের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তাহলে তোমার পেশেন্টের সাথে আমার দেখা করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করো।”
“আমি তোমাকে ফোন নম্বর দিয়েছি। আহিকে তুমি নিজেই কল করতে পারো।”
“তোমার কি মনে হয়, আমি দেই নি? দিয়েছি। কিন্তু কথা বলার সাহস হয় নি। ও হ্যালো হ্যালো করছিলো, আর আমি চুপ করে বসেছিলাম।”
“কেন করলে এমন?”
“এতো বছর পর ফোনে কথা বলা যায় না। সামনা-সামনি বসেই কথা বলা উচিত। আমাদের অনেক গ্যাপ হয়ে গেছে। প্লিজ, দেখা করানোর ব্যবস্থা করো। তুমি ওকে ফোন করে বলো আসতে।”
“তোমার ফ্রেন্ড তুমি বলতে পারছো না?”
লিনাশা নায়ীবের হাত এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে বলল,
“ধুর, যাও তো। লাগবে না তোমার হ্যাল্প।”
নায়ীব লিনাশার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে লিনাশার পাশে এসে বসলো। তারপর লিনাশার সামনেই আহির নম্বরে ডায়াল করলো। লিনাশা তা দেখে এক গালে হেসে নায়ীবের দিকে তাকালো। নায়ীব কানের কাছে ফোন নিয়ে লিনাশার দিকে ঘুরে বসলো। কয়েক সেকেন্ড পর কলটা রিসিভ হতেই নায়ীব বলল,
“আহি, আমি ডক্টর নায়ীব বলছি। তোমার সাথে কি আজ ইফতারের পর দেখা করা যাবে?”
আহি ভ্রূ কুঁচকে বললো, “হঠাৎ!”
“কেউ একজন তোমার সাথে দেখা করার জন্য উদগ্রীব।”
লিনাশা চোখ বড় বড় করে নায়ীবের দিকে তাকালো। নায়ীব মুখ চেপে হাসছে। লিনাশা নায়ীবের হাতে কামড় বসিয়ে দিয়ে চাপা স্বরে বলল,
“এটা কেন বলেছো? তুমি এটা ঠিক করো নি।”
ওপাশে আহি চুপচাপ হয়ে আছে। নায়ীব বলল,
“কি হয়েছে আহি?”
“ওকে একাই আসতে বলবেন। যেখানে আমাদের স্মৃতি জড়িয়ে আছে সেই জায়গায়।”
নায়ীব লিনাশার দিকে তাকালো। লিনাশা উৎসুক দৃষ্টিতে নায়ীবের দিকে তাকিয়ে আছে। নায়ীব কল কেটে লিনাশাকে বলল,
“তোমাদের স্মৃতি জড়িত স্থান কোনটা!”
“স্কুল!”
“ওখানে দেখা করতে বলেছে!”
“মার্কেটে?”
“তুমি তো বললে স্কুল।”
“স্কুল কি সন্ধ্যায় খোলা থাকে?”
“তোমাদের স্মৃতি জড়িত স্থান কি অনেকগুলো না-কি!”
“হ্যাঁ। স্কুল তো স্বাভাবিক স্মৃতি জড়িতই হবে। কিন্তু স্কুলের পাশে যেই শপিং মলটা আছে, আমরা প্রতিদিন ক্লাস শেষে ওখানে গিয়ে ফুচকা খেতাম। ইদের আগে একসাথে ওখানে গিয়ে শপিং করতাম। ওই মলের প্রায় সব দোকানদাররা আমাদের চিনতো। কলেজের পর সেই রেস্টুরেন্টটা ছিল আমাদের জন্য স্পেশাল, যেখানে তোমাকে নিয়ে গিয়েছিলাম। আরেকটা রেস্টুরেন্ট আছে, ওখানে আমরা চারজন একসাথে যেতাম। কিন্তু আমার আর আহির আলাদা কিছু জায়গা আছে। একটা পার্ক আছে ওখানে বসে বাদাম খেতাম আর প্রেমিক-প্রেমিকাদের প্রেম দেখতাম। দিনগুলো ভীষণ ভালো ছিল৷ কিন্তু হঠাৎ একটা ঝড় এসে আমার আর আহির জীবনটা শেষ করে দিয়ে গেলো। আর ও-তো এতো আনলাকি ছিল, যাকে ভালোবাসতো, সেই ছেলেটাই আমাদের ফ্রেন্ড পদ্মকে বিয়ে করে ফেলে। আহি পাগলের মতো ভালোবাসতো ছেলেটাকে।”
নায়ীব বলল, “এখনো ভালোবাসে।”
“জানি। এতো সহজে কাউকে ভুলে যাওয়া সম্ভব না। আর ওর ভালোবাসার গভীরতা অনেক বেশি। মেয়েটা যাকে ভালোবাসে, তাকে ভীষণভাবে ভালোবাসে। আর আফিফকে একটু বেশিই ভালোবাসতো।”
“বাদ দাও এসব। এখন তোমার উচিত ওর পাশে থাকা। আহির এই মুহূর্তে ভালো বন্ধু প্রয়োজন। তোমার জায়গাটা এতো বছর যে নিয়েছে সেটা বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি হয়ে গেছে।”
লিনাশা ভ্রূ কুঁচকে বললো, “মানে?”
“রাদকে চেনো?”
“রাদ কে?”
“তোমাদের স্কুলে পড়তো!”
“হ্যাঁ হ্যাঁ। কিন্তু রাদ এখানে কেন এলো?”
“ছেলেটাই আহির সাথে এসেছিল। ট্রিটমেন্টের পুরোটা সময় সে আহির পাশে ছিল। ছেলেটাকে দেখে আবার প্রমাণিত হয়ে গেল, ছেলে-মেয়ে কখনো বন্ধু হতে পারে না। তারা প্রেমে পড়তে বাধ্য। ছেলেটা আহিকে ভালোবাসে। ওর চোখে-মুখে ভীষণ অস্থিরতা দেখেছি আমি। মানসিক ভাবে সেও অসুস্থ। কিন্তু আহির দৃষ্টিতে রাদ শুধুই তার বন্ধু। যদি আহি বিষয়টা মেনে নিতে না পারে, কষ্টটা আহিরই বেশি হবে। মেয়েটা এমনিতে অসুস্থ। সে যদি জানতে পারে রাদ তাকে ভালোবাসে। আর সেই সম্পর্কটা যদি আহি মন থেকে মেনে নিতে পারে, তাহলে ওদের বন্ধুত্বে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হবে। আর এই দূরত্বে সবচেয়ে বেশি আহি কষ্ট পাবে। কারণ মেয়েটা অনেক দিক দিয়েই সাফার করছে।”
(***)
ইফতারের পর আহি আর লিনাশা সেই শপিংমলে চলে গেলো। লিনাশা আগে থেকেই সেই ফুচকার দোকানে বসা ছিল। আহিকে দেখেই সে উঠে দাঁড়ালো। লিনাশা জড়তার ভারে নুইয়ে পড়ছে। কিন্তু আহি এখনো সেই প্রাণবন্ত মেয়েটিই রয়ে গেলো। সে লিনাশাকে দেখেই তার দিকে দ্রুত এগিয়ে গেলো আর ঝাপ্টে জড়িয়ে ধরলো তাকে। লিনাশাও আহিকে জড়িয়ে ধরলো। দু’জনের চোখে অশ্রু। তারা আজ নিঃশব্দে কাঁদছে না। দু’জনই ফুঁপিয়ে কান্না করছে। যেন বহু যুগ পর দেখা হলো দুই বান্ধবীর। আহি লিনাশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
“প্লিজ, আমাকে ছেড়ে যাস না। সবাই শুধু আমাকে ছেড়ে চলে যায়। আমি তো পৃথিবীতে নিঃসঙ্গ থাকার জন্য আসি নি।”
লিনাশা আহিকে ছেড়ে তার চোখ মুছে দিলো। এরপর আহিকে চেয়ারে বসিয়ে তার পাশেই বসলো। আহি লিনাশার হাত ধরে বলল,
“সরি। একটু বেশি ইমোশনাল হয়ে পড়েছি।”
লিনাশা নিজের চোখ মুছে বলল,
“তোর বন্ধু হওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। আমি এমন সময়ে তোর হাত ছেড়েছি, যখন তোর সবচেয়ে বেশি আমারই প্রয়োজন ছিল।”
“তুই তো ইচ্ছে করে ছাড়িস নি। আমার ভাগ্যটাই এমন ছিল। আমি কাউকেই বেশিদিন কাছে পাই না। এখানে তোর কোনো অপরাধ নেই। সব অপরাধ আমার। আমি কবির সাহেবের মেয়ে। এটাই আমার জীবনের ভয়ংকর সত্য।”
লিনাশা আহির হাত ধরে বলল,
“এই সত্যটা এই মুহূর্তে ভুলে যা। মনে কর, আজ অনেক বছর পর আবার সেই চৌদ্দ বছরের আহি আর লিনাশা একে অপরের সাথে দেখা করতে এসেছে।”
আহি লিনাশার দিকে তাকিয়ে হাসলো। দু’জন বসে অনেক গল্প করলো। এতো বছরের জমানো কথাগুলো শেষ হতে হতেই কয়েক ঘন্টা পার হয়ে গেলো।
মার্কেট বন্ধ করে দেওয়ার তোড়জোড় চলছে। আহি আর লিনাশা সেখান থেকে বের হয়ে দেখলো নায়ীব গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নায়ীব আহি আর লিনাশাকে দেখেই তাদের দিকে এগিয়ে এলো। আহি বলল,
“থ্যাংক ইউ। আপনার জন্যই আমি লিনাশাকে ফিরে পেয়েছি।”
নায়ীব মুচকি হেসে বলল,
“এমন বন্ধুত্ব হারিয়ে যাক, আমি চাই না। এমন বন্ধু আজকাল হয়ও না। ইদানীং সবাই নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। কে আছে বান্ধবীর আঁকা ছবি ওয়ালে সাজিয়ে রাখে? কেইবা ফোনের স্ক্রিনে বান্ধবীর আঁকা ছবিটাই রাখে! কে আছে যার স্মৃতিতে পুরোনো বান্ধবীরা বেঁচে থাকে? সত্য তো এটা, বছর না ঘুরতেই যোগাযোগ বন্ধ। আর যোগাযোগ বন্ধ মানেই ভুলে যাওয়া। কিন্তু তোমাদের এতো বছরের দূরত্ব, অথচ কেউ কাউকে ভুলো নি। দু’জনই ল্যাভেন্ডার পছন্দ করে, দু’জনেরই প্রিয় ফুল কাঠগোলাপ।”
আহি আর লিনাশা হাসলো। দু’জনের ঠোঁটেই প্রশান্তির হাসি। এতো বছর পর আহি তার প্রিয় বান্ধবীকে ফিরে পাবে, তা সে আশায় করে নি। সৃষ্টিকর্তা তাকে নিরাশ করেন নি। সে যা চেয়েছে, তাই পেয়েছে। হয়তো সময়টা দীর্ঘ ছিল। আহি আকাশের দিকে তাকালো। বুক ভরে শ্বাস নিলো সে। আজ তার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। তার মন বলছে, সে সব ফিরে পাবে। হয়তো সময়টা আরেকটু দীর্ঘ হবে। কিন্তু একবার যেহেতু সৃষ্টিকর্তা তার এতোদিনের প্রার্থনা কবুল করে ছোট একটা ইশারা দিয়েছেন, তাহলে ভবিষ্যতেও তার পাশেই থাকবেন।
(***)
কয়েকদিন বেশ ফুরফুরে মেজাজে দিন কাটছে আহির। প্রতিদিন তিন ঘন্টা লিনাশার সাথে ফোনে কথা বলে সময় কাটায় সে। আর ইফতারের পর দু’জনই ইদের বাজার করতে বেরিয়ে যায়। যতোক্ষণ মার্কেট খোলা থাকবে ততোক্ষণ দুই বান্ধবী ঘুরাঘুরি করবে। পনেরো রোজার পর থেকে মার্কেট বন্ধ হবে আরো দেরীতে। এখন প্রায় দোকান সেহেরী পর্যন্ত খোলা থাকে। আহি আর লিনাশা সেই সময়টুকু ঘুরে ফিরে সেহেরী করে বাসায় ফিরে। তাদের প্রতিদিনের কথা যেন শেষই হচ্ছে না। বেশ কয়েকদিন যাবত মিসেস লাবণি এসব লক্ষ্য করছেন। লিনাশার সাথে আহির কথাবার্তা হয়, সেটা তিনি জানেন না। তাই লাবণি ধরে নিয়েছেন আহি রাদের সাথেই ঘুরাঘুরি করছে।
আজ ইফতার শেষে আহি নিজের রুমে এসে শুয়ে রইলো। লাবণি হুট করে রুমে ঢুকে বলে উঠল,
“আজ থেকে তোমার বাইরে যাওয়া বন্ধ।”
আহি ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“কেন? হরতাল ডেকেছে না-কি!”
“হ্যাঁ। হরতালই হচ্ছে।”
“জরুরি অবস্থা জারি করলেও আমি আপনার সকল আইন প্রত্যাহার করবো।”
“তুমি ইদানীং বেশ উড়ছো।”
“উড়ার সামর্থ থাকলে ধরতেই পারতেন না।”
“আহি, মুখে মুখে কথা বলবে না।”
আহি বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো। হঠাৎ কি ভেবে সে মিসেস লাবণির কাছে এসে তার হাত মুড়িয়ে দিয়ে বলল,
“আমাকে আপনি নিজের ইশারায় আর নাচাতে পারবেন না। আমি যা ইচ্ছে, করবো।”
মিসেস লাবণি আহিকে ধাক্কা দিতেই আহি সরে দাঁড়ালো। এরপর পাশ ফিরে টেবিলে রাখা ফুলদানিটা ফেলে দিলো। মুনিয়া খালা আর চুনি শব্দ শুনে উপরে উঠে আসার আগেই আহি ধপ করে ভাঙা কাঁচগুলোর উপর নিজের হাত চেপে ধরলো। লাবণি ভ্রূ কুঁচকে আহির কাণ্ড দেখছে। মুনিয়া খালা এসে আহিকে এই অবস্থায় দেখে তার দিকে দ্রুত এগিয়ে গেলেন। চুনি আর খালা মিলে আহিকে উঠিয়ে বিছানায় বসালো। আহি কাঁদো কাঁদো মুখে লাবণির দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি আপনার খেলনা নই। আপনি আমার সাথে যেমন ইচ্ছে তেমন করতে পারেন না।”
আহি এরপর চাপা স্বরে চুনিকে বলল,
“তাজওয়ারকে কল দিয়ে বলো, লাবণি আমাকে মেরেছে। আমি বলতে বলেছি এটা ভুলেও বলো না।”
চুনি মাথা নেড়ে চলে গেলো। এদিকে লাবণি তো হনহনিয়ে নিচে নেমে এসেছে। তিনি আহির বিরুদ্ধে এক গাদা অভিযোগ নিয়ে বসে আছেন। রিজওয়ান কবির বাসায় এলেই আহির ঠাঁট ছাড়াবেন এই আশায় নিজের ঘরে এসে অস্থিরভাবে পায়চারী করছেন। এদিকে চুনি তাজওয়ারকে ফোন দিয়ে ঘটনায় আরো মশলাযুক্ত করে বলল,
“তাজওয়ার ভাইজান, আমি চাঁদনি কইতেছি। আফারে বাঁচান। রক্তে বইয়া যাইতেছে ঘর। আম্মা আর আমি মিল্লা রক্ত পরিস্কার করতে করতে বেহুঁশ হই যাইতেছি। ছোট ম্যাডাম আফারে যে মারাটাই না মারলো। কেমন জল্লাদ! আমার চোখ ভিজা যাইতাছে। কইবার পারতাছি না আর। আপনে ছাড়া আফার আপন কেউ নাই। ভাইজান তাড়াতাড়ি বাসায় আইয়া পড়েন।”
তাজওয়ার কল কেটে তাড়াতাড়ি আহির বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো। চুনি আহির কাছে এসে বলল,
“আফা, বেশি কইয়া ফেলছি। রক্ত-টক্ত আরেকটু চাইপা চুইপা বাইর করন যাই না!”
“মানে!”
“ভাইজান রে কইছি আপনি মাইর খাই রক্তে মাখামাখি হই গেছেন।”
আহি হাতের তালুর দিকে তাকিয়ে বলল,
“চাঁদনি, আমার ব্যথায় হাত জ্বলে যাচ্ছে। আর তুমি আছো রক্ত আরো বের করার চিন্তায়। তবে এক কাজ করা যায়৷ ঘর পরিস্কার করার জন্য একটা বালতি নিয়ে আসো। এরপর আমার রঙের কৌটা থেকে লাল রং বের করে পানির সাথে মিশিয়ে দাও। অন্তত পানি দেখে ভাববে রক্ত মাখা ঘর পরিস্কার করেছো।”
“সস আছে ফ্রিজে। ওইটাও আনি!”
“পাগল! গন্ধ নাকে গেলেই বুঝবে এসব নাটক করছি।”
“আফা, আপনে কি সত্যিই নাটক করতাছেন?”
“হাতে কি মিথ্যে মিথ্যি কাটা দাগ দেখছো?”
“না, আফা। আগে ছোট মেডাম কিছুই কইলেই আপনে কাঁনতেন। আর আজ হাত কাইটা গেছে, আর আপনের চোখেমুখে শয়তানি হাসি।”
আহি ভ্রূ কুঁচকে চুনির দিকে তাকালো। চুনি দুই গালে হাত ছুঁইয়ে বলল,
“তওবা তওবা। শয়তান তো ছোট মেডাম। আফনে না। ওই ইংরাজি তো কই না। সিপ সিপ কি জানি।”
“স্লিপ।”
“হ হ ওইটাই। সিপ কইরা বাইর হই গেছে। মুখের দোষ। আমার না।”
আহি চোখ ছোট করে চুনির দিকে তাকিয়ে রইলো। এদিকে তাজওয়ার আহিদের বাসায় এসে সোজা আহির রুমে চলে গেলো। তাজওয়ারকে আসতে দেখে চুনি দৌঁড়ে এসে বলল,
“আফা একটু মুখটা বাঁকায় রাখেন। ভাইজান রে ওই শয়তান মেডামের বিরুদ্ধের ভালোমতো বুঝাই দিয়েন। কাঁনদেন আফা, কাঁনদেন।”
তাজওয়ার আহির রুমে এসে দেখলো আহি মুখ অসার করে বসে আছে। তাজওয়ারকে দেখে আহি ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“কেন এসেছো এখানে? যা, এই মুহূর্তে আমি তোমার অত্যাচার নিতে পারবো না।”
তাজওয়ার আহির কাছে এসে তার পাশে বসে বলল,
“কি হয়েছে তোমার?”
আহি ব্যথায় চোখ-মুখ কুঁচকে ফেলতেই তাজওয়ার আহির হাত উলটে দেখলো, হাতের তালুতে দাগ হয়ে গেছে। পাশে চোখ পড়তেই দেখলো বালতির পানিগুলো লাল হয়ে গেছে। চুনি বালতিটা উঠিয়ে নিয়ে বলল,
“স্যার, যে রক্ত!”
আহি চোখ বড় বড় করে চুনির দিকে তাকালো। তাজওয়ার আহির চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। চুনি চলে যেতেই আহি বলল,
“প্লিজ তাজওয়ার, আমাকে একা ছেড়ে দাও। একা ছাড়তে না পারলে খুন করে চলে যাও।”
“কি হয়েছে বলবে!”
“হরতাল ডেকেছে। আমি না-কি বাসা থেকে আর বেরুতেই পারবো না। অনেক বছর পর আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে পেয়েছি। সামনে ওর বিয়ে। ওর সাথে ইফতারির পর সময় কাটাচ্ছি। ওটাও মিসেস লাবণির সহ্য হচ্ছে না।”
“কোন ফ্রেন্ড?”
“লিনাশা।”
তাজওয়ার আহিকে ছেড়ে নিচে নেমে গেলো। তাজওয়ার যেতেই আহি আয়নায় নিজেকে দেখে ঠোঁট উল্টে বলল,
“রানীর উপর আইন চাপানোর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে মিসেস লাবণি। তোমার প্রিয় আদুরে হবু জামাই সাহেবই তোমাকে শায়েস্তা করতে এসেছে।”
আহি তার হাতের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এই হাতে আজ যন্ত্রণার মেহেদি পরেছি, শুধু আমার শত্রুদের হারানোর জন্য। আর আমি তোমাদের সবাইকে হারিয়েই মুক্ত হবো।”
চলবে-