#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-১৮
লিলি বেগম চিন্তায় শেষ কাল থেকে জিমি বাসায় ফিরে নি জিমির ফোনটাও বন্ধ কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। এদিকে রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে গেলো। ছুটির দিন হওয়ায় লিমন ঘুমাছে জিমির দাদি বসে তাসবি পড়ছে লিলি এখনো কাউকে কিছু বলে নি জানে শাশুড়ির বয়স হয়েছে জিমির ব্যাপারটা বলে তার চিন্তা বাড়িয়ে পেশার হাই করে আরে বিপদ। লিলি নিজেকে স্বাভাবিক রেখে কাজ করে যাচ্ছে আর পথ চেয়ে তাকিয়ে আছেন কখন ফিরবে তার মেয়ে। ভালো-মন্দ সব চিন্তারা হানা দিয়েছে লিলির মাথায়। কি করবে লিলি? মিলিকে কি একটা বার ফোন দিয়ে জানানো উচিত? বাসায় তো লিমন ছাড়া কোনো ছেলেও নাই। লিমন বাচ্চা লিমন-ই বা কি করবে? লিলি বেগম লিমনকে ঘুম থেকে উঠিয়ে বললেন
-‘ লিমন যা তো জিমির বন্ধুরা বাসায় আছে কি না। আর তারা জিমির কোনো খবর জানে কি না। এই মেয়েটাকে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই’
-‘ কেনো আম্মু কি হয়েছে? আপু কোথায়?’
-‘ সেটা তো জানি না কাল রাতেও বাসায় আসে নি মেয়েটা কোথায় আছে কি করছে কিছুই জানি না ফোনটাও অফ’
-‘ সেকি আম্মু তুমি আগে বলবা না দাঁড়াও আমি সবুজ ভাইয়া বাসায় আছে কি না দেখে আসি’
-‘ আর শোন আসার সময় জিমির সব বন্ধু গুলোর ফোন নম্বর নিয়ে আসবি’
-‘ আচ্ছা আম্মু তুমি টেনশন করো না আমি দেখছি’
লিলি জিমির খবর না পাওয়া পর্যন্ত নিজেকে শান্ত করতে পারবে না। লিলি পায়চারি করছে এ রুম থেকে ঔরুম পর্যন্ত। লিলি শাশুড়ি ড্রাইংরুমে এসে সোফায় আরাম করে বসে বলল
-‘ বউমা আমারে চা বানায় দাও তো সগাল থেইকা শরীরডা ম্যাজম্যাজ করতাছে।’
-‘ দিচ্ছি মা’
-‘ তোমার ছেমরিডা কই দেখতেছি না যে আজইকা। আইজ কি তাড়াতাড়ি আপিস চইলা গেছে না-কি আমার লগে দেখাও করলো না?’
-‘ মা আসলে খুব ভোরে উঠে চলে গেলো কি না-কি জরুরি কাজ আছে’
-‘ ও আইচ্ছা তুমি আমারে কড়া কইরা চা বানাই দাও’
-‘ আচ্ছা মা’
এর মধ্যে লিমন চলে আসলো। মেনডোর খোলা ছিলো বলে আসতে বাঁধা হয়নি কিছু। লিমন যেই কিছু বলতে যাবে লিলি বেগম ইশারায় লিমনকে চুপ করিয়ে দেয় লিমন ও বুঝে রুমে চলে যায়। লিলি তার শাশুড়ীকে চা দিয়ে লিমনের রুমে গিয়ে বলল
-‘ কি রে বাপ আমার জিমি কই? ওরাও কি সাথে গেছে?’
-‘ না আম্মু আপুর ফেন্ডরা তো সবাই বাসায় ওরাও কিছু জানে না লাস্ট ওদের দেখা হয়েছিলো কাল দুপুরে তারপর আর ওরা আপুর খোঁজ যানে না। আপু না-কি বলছিলো আমার কাজ আছে তোরা বাসায় যা তারপর ওরা আপুর কাছে ফোন দিয়েছিলো বাট আপু প্রথম প্রথম নেটওয়ার্ক বিজি থাকলেও এখন বন্ধ’
লিলি বেগম মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে পড়ে বলল
-‘ হাই আল্লাহ আমার মেয়েটা কোথায় গেলো? কোনো বিপদ হয় নি তো? আমার মেয়েটাকে সুস্থ রেখো আল্লাহ জিমিকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও আল্লাহ আর কিছু চাই না আল্লাহ’
____________________________________________
ছুটির দিন হওয়ায় সবাই সকালে বাসায় বসে চা আড্ডা জমিয়েছে। মিলি তার শশুরকে চা দিচ্ছিল মিলির শশুর বলল
-‘ মামনি তোমার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো এ বাড়িতে? আমিও বাসায় থাকি না তোমাদের সময় দিতে পারি না’
-‘ না বাবা নো সমস্যা হচ্ছে না’
-‘ কলেজে ভর্তি হবে কবে?’
মিলি থমকায় সে-তো পড়াশোনার আশা ছেড়েই দিয়েছিলো প্রায়। আবার যে শুরু করতে পারবে বা শশুর বাড়ির লোক মেনে নিবে আশাও করে নি কখনো। মিলির শশুর মিলির ব্যাপারটা ধরতে পেরে বললেন
-‘ এতো অবাক হওয়ার তো কিছু নাই। তুমি যদি চাকরি করতে চাও তবুও তোমাকে কেউ বাঁধা দিবে না আপাতত মাস্টার্স ভর্তি হয়ে নাও স্টাডি শেষ করো তারপর তুমি কি করবে সেটা নিতান্তই তোমার ব্যাপার’
মিলি যেনো কথা বলার শব্দ হারিয়ে ফেললো। তারমধ্যে জাকি মৃদুস্বরে টিভির স্কিনে তাকিয়ে বলে উঠলো
-‘ আমি যা দেখছি তোমরাও কি ঠিক তাই দেখছো?’
সামিও খাওয়া বাদ দিয়ে রেখে টিভির স্কিনে তাকালো। সবাই বিষফোড়া চোখে তাকিয়ে আছে। যেনো নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না।
____________________________________________
লিলি বেগম যখন মাথায় হাত দিয়ে বসেছিলেন। তখনি ফোন ঝংকার তুলে বেজে উঠলো। মনে কোনে কোথাও এক চিলতে আশা খুঁজে পেলেন জিমি ফোন করেছে ভেবে ফোন হাতে নিতেই দেখলেন মিলি ফোন দিয়েছে। লিলির এখন মিলির সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না তবুও ইচ্ছে না থাকার সত্ত্বেও ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে ‘হ্যালো’ বলতেই ফোনের ওপাশ থেকে মিলি প্রশ্ন ছুড়লো
-‘ আম্মু তুমি আগে থেকে সবটা জানতে তাই না? শুধু আমাকে ধোয়াসার মধ্যে রাখছো?’
লিলি বুঝতে পারলো না মিলি কিসের কথা বলছে বেশ বিরক্তও হলেন তিনি এই টেনশনের সময় হেয়ালি পনা তার মটেও পছন্দ নয়। লিলি বেগম রেগে বলল
-‘ কি সব বলছিস? কি লুকাবো তোর থেকে? এখন মজা আমার ভালো লাগছে না বরং বিরক্তি লাগছে’
মিলি অবাক হলো তাহলে কি মা’কে ও কিছু বলে নি জিমি। সবটাই নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে? মিলি নিজের মনেই প্রশ্ন করলো ‘এই মেয়ে আর কি কি লুকিয়ে রেখেছে?’
মিলি কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলল
-‘ টিভিটা খুলে নিউজ দেখো আম্মু। তোমার মেয়ে যে আর কি কি লুকিয়ে রেখেছে ঔ-ই ভালো জানে’
কথাটা বলে মিলি আর দেরি না করে ঠাস করে ফোন কেটে দিলো। লিলি বেগমও বেশ অবাক হলেন কি হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছে না। টিভিতে কি দেখবেন এখন। লিলি আর কিছু ভাবতে পারছে না কৌতুহল মিটাতে দৌড়ে গিয়ে টিভি চালু করে দিলেন। টিভির ব্রেকিং নিউজে হেডলাইনে বড়বড় করে লেখা ””’ এডভোকেট জামান সাহেবের খু/নে’র রহস্য উন্মোচন করেছেন তার ছোট মেয়ে সিআইডি জিমি আফরিন”’
লিলি সহ লিমন জিমির দাদি তাকিয়ে আছেন।
চলবে