#স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি
#পর্ব_৩৯(দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)
#অন্তিম_পর্ব
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
আরাভ কক্ষে এসে দরজা লাগিয়ে দিল। কোনো কথা না বলে বিছানায় গিয়ে বসল। স্মৃতি আঁড়চোখে আরাভকে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে। আরাভ মুখশ্রী গম্ভীর করে বলল,
–এমন বিড়ালের মতো অন্না পেরে লাভ নেই। আমি তোমাকে পাত্তা দিব না। আমি ভালো মতোই জানি তুমি জেগে আছ। স্মৃতি রাগান্বিত হয়ে উঠে বসল বিলম্ব না করে তড়িৎ গতিতে বলল,
–তারমানে আপনি কি বোঝাতে চাইছেন। আপনি মাছ আমি আপনাকে খাওয়ার জন্য অন্না পেরে বসে আছি!
–খাওনি বলছ?
–আপনার জ্বর কমেছে?
–আমার কথা এড়িয়ে যাচ্ছ কেন?
স্মৃতি কোনো উত্তর করল না রক্তিম চোখে আরাভের দিকে তাকিয়ে আছে। আরাভ স্মৃতির কানের কাছে গিয়ে বলল,
–এভাবে তাকিয়ে থেকো না প্রেমে পড়ে যাবে।
–মানুষ ভালো মানুষের প্রেমে পড়ে খারাপ মানুষের না।
–তারমানে কি বোঝাতে চাইছ আমি খারাপ।
–অবশ্যই কোনো সন্দেহ আছে।
–না নেই একটা ছেলে আর একটা মেয়ে এক কক্ষে থাকলে কি হয় জানো?
–আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমাকে ছোট বাচ্চা পেয়েছেন। গাল এগিয়ে দিব ঠোঁট এগিয়ে দিব।
–বাবা বাহ এক রাতেই এত সাহস হয়ে গিয়েছে। কিছু এগিয়ে দিতে হবে না। আমি-ই এগিয়ে আসছি। কথা গুলো বলেই আরাভ স্মৃতির দিকে অগ্রসর হলো। স্মৃতি বিছানার এক কোণে বসে আছে। তাড়াহুড়ো করে উঠে যেতে লাগলে আরাভ খপ করে ফেলল। স্মৃতির হাতের ভাজে হাত রেখে অধরযুগল এক করে দিল। কিছুক্ষণ পরে স্মৃতির কাছে থেকে সরে বসলো আরাভ। স্মৃতির ভিষণ লজ্জা লাগছে। সমস্ত মুখশ্রী রক্তিম বর্ন ধারণ করেছে। স্মৃতি সুযোগ পেতেই উঠে দরজার কাছে গিয়ে বলল,
–অসভ্য লোক একটা আপনার মতো অসভ্য পুরুষ দু’টো দেখিনি। কথা গুলো বলেই চলে গেল স্মৃতি। আরাভ মনোমুগ্ধকর হাসি দিয়ে মাথা চুলকতে চুলকতে বিছানায় শুয়ে পড়ল।
স্মৃতি খাবার খেয়ে এসে দেখল আরাভ ঘুমাচ্ছে। মানুষের শরীরে অসুখ এসে বাঁধা না দিলে কেউ কখনো ঘুম থেকে উঠে ঘুমায় না। মানুষ টা অসুস্থ থেকে-ও তাকে ভালো রাখার চেষ্টা করছে। কথা টা ভাবতেই স্মৃতির বুকটা প্রশান্তিতে ভরে উঠলো। সে আর কক্ষে প্রবেশ করল না মায়ের কাছে চলে গেল।
এর মাঝেই কেটে গিয়েছে বেশ কয়টি দিন। আরাভ আর স্মৃতির সম্পর্ক হয়েছে মধুময়। কথায় থাকে না মানুষের দুঃখের সময় হয় দীর্ঘ স্থায়ী আর সুখের সময় টা হয় ক্ষণিকের জন্য চোখের পাতা ফেলতে ফেলতে তা হারিয়ে যায়। ঠিক তেমনই আজ স্মৃতি ভয়ংকর কিছু জানতে চলেছে। কয়েকদিন ধরেই আরাভের শরীর টা ভালো যায় না। স্মৃতি জানতে চাইলে সব সময় এড়িয়ে যায়। স্মৃতি আরাভের জন্য দুধ গরম করে নিয়ে আসলো। আরাভ এক চুমুকে দুধ টুকু শেষ করে গ্লাসটা স্মৃতির হাতে ধরিয়ে দিল। স্মৃতি মজা করে বলল,
–একটা ছেলে আর মেয়ে এক কক্ষ থাকলে কি হয়? স্মৃতির কথা আরাভ মুচকি হাসলো। সে লাজুক হেসে জবাব দিল,
–গাল এগিয়ে দিব ঠোঁট এগিয়ে দিব।
–আমাকে আপনার মতো অসভ্য ভাববেন না।
–পুরুষ মানুষ বউয়ের কাছে অসভ্য হতে না পারলে সে কোনো পুরুষই না বুঝছো বউ।
–হ্যাঁ বুঝলাম আপনি কত ভালো বউ রেখে খালি চলে যান।
–ভাবছি এবার একবারে চলে আসব। আর সেখানে যাব না। যে কয়টা দিন বেঁচে আছি। প্রতিটি মুহূর্ত তোমার সাথে কাটাতে চাই।
–এমন ভাবে কথা বলছেন কেন? আরাভ কিছু বলার আগেই আরাভের ভিষণ কাশি শুরু হয়ে গেল। এক পর্যায়ে মুখ র’ক্ত উঠতে শুরু করল। তা দেখে স্মৃতি বেশ কিছুটা ভয় পেয়ে গেল। চিৎকার করে বাসার সবাইকে ডাকতে লাগলো। সবাই এসে তৎক্ষনাৎ আরাভকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো।
আজকে দেড় মাস পরে আরাভকে হসপিটাল থেকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। আরাভের ক্যান্সার ধরা পড়েছে। তা আরাভ বেশ আগেই টের পেয়েছিল। কাউকে জানতে দিবে না বলে নিজের কষ্টটা বুকের মধ্যে আড়াল করে রেখেছিল। কিন্তু ভাগ্য তার সহায় হলো না। সবাই সবকিছু জেনে গিয়েছে। ডক্টর আরাভের সময় দিয়েছে ছয়মাস প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। আরাভের অসুস্থতার কথা যেদিন থেকে স্মৃতি জেনেছে খাওয়াদাওয়া একদম ছেড়ে দিয়েছে। রাতে ঠিকমতো ঘুমোয় না। বাজে স্বপ্ন দেখে ঘুমের মধ্যে চিৎকার করে উঠে। আরাভকে হারিয়ে ফেলার ভয় তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। মেয়েটার জীবন থেকে সুখ একবারে মুছে গিয়েছে। আরাভ বিছানায় বসে ছিল। স্মৃতি মলিন মুখে কক্ষের একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। আরাভ স্মৃতিকে কাছে ডাকলে স্মৃতি আরাভের কাছে যেতে নারাজ। তবুও না গিয়ে উপায় পেল না। আরাভের পাশে গিয়ে বসলো। দুচোখ বেয়ে অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়ছে। আরাভ স্মৃতির অশ্রু গুলো যত্ন সহকারে মুছিয়ে দিয়ে বলল,
–তুমি এমন ভাব করছ যেন আমি এখনই ম’রে গিয়েছি। এভাবে নিজেকে শেষ করে দিয়ে, আমাকে তাড়াতাড়ি বিদায় করার চেষ্টা করছ?
–নেশার জগতে প্রবেশ করলাম আমি ক্যান্সার কেন আপনার হলো? আমার হলে কি খুব একটা ক্ষতি হতো। আমি জানি আপনি আমাকে কোনোদিন ভালোবাসেনি। আমি চলে গেলে আপনার কষ্ট হতো না। কিন্তু আপনাকে ভালোবেসে আমি সহস্র কষ্ট বুকে চেপে রেখেছি। আপনি চলে গেলে আমার কি হবে। এভাবে আমাকে একা করে দিয়ে আপনি চলে যাইয়েন না। আপনারে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না। আপনি খুব বড় বেইমান। তা না হলে বারবার আমাকে এভাবে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবতে পারতেন। আপনাকে আমি কোনোদিন ক্ষমা করব না। চারটা বছর ভালোবেসে কষ্ট পেয়ে গেলাম। কিন্তু আপনার সাথে চারটা বছর সংসার করতে পারব না। নিয়তি আমাদের এতটা অসহায় কেনো করে দিল। নিয়ম ভেঙে কত কিছুই না হয়ে যায়, রোদের মধ্যে বৃষ্টি হয়,দিনেও চাঁদ উদয় হয়! শুধু নিয়ম ভেঙে, আমাদের জীবন আর ভাগ্য কোনোটাই পরিবর্তন হলো না!
–কেউ সারাজীবন বাঁচতে আসেনি স্মৃতি। একদিন সবাইকে চলে যেতে হবে। আমরা কেউ সারাজীবন থাকবে না। এসব কথা ভেবে আমাদের সুন্দর মুহূর্ত গুলো নষ্ট করে দিও না। আল্লাহ চাইলে আমি আরো কয়টা দিন বেশি বাঁচতে পারি। তুমি শুধু শুধু ভেঙে পড়ছো সাথে আমাকেও ভাঙছো। তুমি তো অনেক শক্ত মনের মানুষ স্মৃতি। যে কঠিন সময় গুলো একা পার করতে পারে। তাকে আর কোনো অবস্থাতেই ভাঙা যায় না। তাহলে তুমি ভেঙে পড়ছো কেন? তুমি আমার শক্তি, তুমি আমার ভরসা তুমি ভেঙে পড়লে, আমার বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। আরাভের কথায় শান্ত হলো শাড়ির আঁচল দিয়ে আঁখি জোড়া মুছে নিল। আরাভ হাসোজ্জল মুখশ্রী করে স্মৃতিকে উদ্দেশ্য করে এসে বলল,
–আমার পাশে উঠে বসো তোমার কোলে মাথা রেখে একটু ঘুমোতে চাই। স্মৃতি বিলম্ব করল না। বিছানায় গিয়ে উঠে বসলো। আরাভ স্মৃতির হাত ধরে বলল,
–স্মৃতি আমি তোমাকে ভিষণ ভালোবাসি। আমি হয়তো আমার ভালোবাসা সঠিক ভাবে প্রকাশ করতে পারিনি। কিন্তু তোমার জন্য আমার মনে ভালোবাসার কমতি ছিল না। আমি বিয়ের আগেই আমার অসুস্থতার কথা জানতে পারি। আমি ভিষণ স্বার্থপর জানো। বেঁচে থাকতে তোমাকে হারাতে চাইনি। তোমার ভালোবার ভাগ কাউকে দিতে চাইনি। আমার শুধু মনে হয়েছে তোমার ভালোবাসা পাবার অধিকার শুধু আমার। তোমাকে পাবার লোভা সামলাতে পারিনি। আবেগের বসে তোমার জীবনটা আমি নষ্ট করে দিলাম। তুমি আমাকে শেষ বারের মতো একটা কথা দিবে স্মৃতি। আরাভের কথায় স্মৃতির অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো। সে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল,
–কি কথা?
–তুমি আমাকে কথা দাও। আমি মারা যাবার পরে তুমি কোনোদিন বিয়ে করবে না৷ তোমাকে আমি অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারব না। তুমি অন্য কারো হয়ে যাবে। কথাটা ভাবতেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। তুমি আমাকে কথা দাও স্মৃতি। আমি জীবনের শেষ নিশ্বাস শান্তিতে ত্যাগ করতে চাই। স্মৃতি কান্না মিশ্রত কণ্ঠে বলল,
–স্মৃতির শেষ অধ্যায়ে আপনি ছিলেন আছেন আর সারাজীবন থাকবেন।
–একটা বার তুমি করে এই কথাটা বলবে ভিষণ শুনতে ইচ্ছে করছে।
#স্মৃতির_শেষ_অধ্যায়ে_তুমি ছিলে আছ আর সারাজীবন থাকবে। স্মৃতির কথায় আরাভের বুকটা প্রশান্তিতে ভরে উঠলো। সে বিলম্ব করল না গভীর ভাবে আলিঙ্গন করল। স্মৃতির বুকে মাথা রেখে সময়টাকে অনুভব করতে লাগলো।
(সমাপ্ত)