#তাসনিম_তামান্না
#প্রেমপ্রলয়
পর্ব-২২
জিমির আজ-কাল বাসায় আসলেই মনে হয়। জিমির অগোচরে কিছু হচ্ছে। আবার সেটা তাকে নিয়েই। অথচ সে জানে না। আজ-কাল লিলি, আর জিমির দাদি জিমির দিকে কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে দৃষ্টি গভির, মায়া ভরা, কিছু একটার আকুতি বা আবদার! জিমি ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। জিমি জানে এখনি লিলি আসবে কিছুক্ষণ উশখুশ করবে কিন্তু কিছু না বলে চলে যাবে। জিমি কথাটা ভাবতে না ভাবতেই মাথায় হাতের ছোঁয়া পেলো বুঝতে অসুবিধা হলো না যে লিলি এসেছে। জিমি চোখ বন্ধ করে থেকে বলল
-‘ আম্মু তুমি কি আমাকে এমন কিছু বলতে চাও যা আমাকে বলতে পারছো না?’
লিলি বেগম বোধ হয় চমকালেন। জিমি চোখ খুলে লিলির দিকে তাকালো লিলির এলোমেলো দৃষ্টি কিছুক্ষণ নিরব থেকে লিলি বলল
-‘ আসলে ছেলেমেয়েরা বড় হলে মা-বাবার একটা টেনশন থাকে….’
-‘ মানে? কোন টেনশনের কথা বলছ? বিয়ে? ‘
লিলি যেনো এবার সাহস পেলেন তিনি গড়গড় করে সব বলতে লাগলেন।
-‘ হ্যাঁ ছেলেটা ভালো বাবার ব্যবসা সামলায় তারা নিজে থেকেই বলেছে তারা তোকে বউ বানাতে চাই আমারও ছেলেটাকে খুব পছন্দ হয়েছে দেখতে সুন্দর তোর সাথে মানাবে তুই বলিস তো বিয়ের কথা আগাই?’
জিমি সবটা মন দিয়ে শুনলো। এবার লিলির চোখ চোখ রেখে বলল
-‘ আমার বিয়ে হয়ে গেলে তোমার শান্তি? ‘
-‘ শান্তি? হ্যাঁ মরেও শান্তি। আমি তোকে বিয়ে দিয়ে মরতে পারি তাহলে শান্তি পাবো মনকে বুঝ দিতে পারবো যে তোকে সামলানোর জন্য কেউ আছে। আর তোকে যদি বিয়ে না দিয়ে মরে গেলে মনকে বুঝ দিতে পারবো না’
-‘ যার সাথে বিয়ে হবে সে যে ভালো তার কতটুকু গ্যারান্টি দিতে পারবে তুমি?’
-‘ আমার বিশ্বাস সে তোকে সুখি রাখবে’
-‘ আচ্ছা তা আমার বিয়ে হয়ে গেলে তারা কি আমাকে চাকরি করতে দিবে?’
-‘ বিয়ের পরে চাকরি করে কি করবি?’
-‘ তোমরা খাবে কি?’
লিলি কি বলবেন খুঁজে পেলেন না আমতাআমতা করে বলল
-‘ সে একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে ঠিক’
জিমি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল
-‘ আম্মু এসব বাদ দাও তো আমি বিয়ে নিয়ে ভাবি না বিয়ে না করেও মানুষ বেঁচে থাকতে পারে’
-‘ মানে? তুই বিয়ে করবি না?’
-‘ নাহ্’
-‘ কিন্তু আমি তাদের কথা দিয়েছি আমি তাদের থেকে কথা ফিরাতে পারবো না’
জিমি তড়িৎ গতিতে উঠে বসে বলল
-‘ মানে? আমার কাছে না শুনে তুমি তাদের হ্যাঁ বলে দিলে? আমার কাছে শোনার প্রয়োজন বোধটুকুও করলে না?’
-‘ তোর কাছে শুনলেই বলবি বিয়ে করবো না তোর কাছে শুনে কি করবো? আমি এটাই যানি তুই এই বিয়েটা করবি ব্যাস আমি আর কিছু শুনতে চাই না’
জিমি কিছুক্ষণ স্ট্যাচু হয়ে বসে রইলো মাথার মধ্যে ফাঁকা ফাঁকা লাগলো। জিমি হঠাৎ বলে উঠলো
-‘ আম্মু ছেলেটা কে? নম্বর দাও কথা বলবো’
লিলি বেগম চমকালেন। ভ’য়া’র্ত কন্ঠে বলল
-‘ কেনো তুই নম্বর নিয়ে কি করবি? বিয়ে ভাংবি?’
-‘ নম্বর দিতে বলছি নম্বর দাও তুমি যেমন আমার কাছে শুনার প্রয়োজন বোধটুকুও করো নি আমি ও তেমন তেমাকে কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করছি না’
-‘ জিমি আমি চাই না তোর জন্য আমার মিলির ঘর ভাংউক’
জিমি কিছুটা অবাক হলেও বুঝতে অসুবিধা হলো না এটা সামি। জিমি একবার লিলির মুখের দিকে তাকিয়ে শুয়ে পড়লো ঘুম পাচ্ছে তার ঘুম থেকে উঠে না হয় ভাবা যাবে কি করবে। লিলি ও চলে গেলো নিজের রুমে।
____________
জিমি রাত ১টার দিকে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো। আস্তে আস্তে উঠে বসলো পেটে ক্ষুদা অনুভব হলো। জিমির মনে পড়লো সন্ধ্যায় বাসায় এসে বিস্কিট খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ছিল। জিমি উঠে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে কাছে আসতেই দেখলো প্লেটে খাবার ঢেকে রাখা। জিমি খেয়ে নিলো। রুমে এসে ফোন হাতে নিয়ে একবার ভাবলো সামিকে ফোন দিবে কি না রাত ও অনেক হয়েছে এতো রাতে কি একটা মানুষকে ডিস্টার্ব করা উচিত? জিমি সাত পাঁচ অনেক কিছু ভাবলো। জিমি মাথায় একটা কথা আসলো সামি জিমির ঘুমের মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করে তখন জিমির মেজাজ কই থাকে জিমি নিজেও জানে না জিমি শয়*তানি হাসি দিয়ে বলল
-‘ এবার দেখ খুব শখ না আমাকে বিয়ে করার? তোর বিয়ে করার শখ আমি মিটিয়ে দিবো’
জিমি সামির ফোনে কল লাগালো। জিমি সামিকে ফোন দিতে কেমন জানি আনইজি লাগছে। ওদের ফোন আলাপ কখনো দীর্ঘ হয় নি বলতে গেলে তেমন হয় ই নি সামির কন্ঠ শুনলেই জিমি ফোন কেটে ফোন অফ করে রেখে দিতো। জিমি সামির কাছে কল দিয়ে কানে ধরতেই বুকের ধুকপুকানি টের পেলো।
সামি ঘুমাইনি জিমির সাথে দেখা করে বাসায় এসে সারাদিন ঘুমিয়েছে আজ আর অফিস যায় নি। তাই অফিসের পেন্ডিং কাজ গুলো করছিলো। যেহেতু সারাদিন ঘুমিয়েছে তাই এখন আর ঘুম আসছে না। হঠাৎ ফোন বেজে উঠায় অবাক হলো এতো রাতে কে ফোন দিচ্ছে? ফোন হাতে নিয়ে আরও অবাক হলো জিমির নাম দেখে। সামির বিষময় যেনো কাটছে না। সামি মনে মনে বলল ‘জিমি তো ফোন দেওয়ার মেয়ে নয়।তাহলে ফোন দিলো কেনো? কোন বিপদ হয় নি তো?’ কথাটা ভেবেই চটপট ফোন রিসিভ করে বলল
-‘ জিমি আর ইউ ওকে? তোমার কিছু হয় নি তো? কি হলো কথা বলছো না কেনো? জিমি কিছু বলো! জিমি। হ্যালো জিমি!’
সামির কথা শুনে জিমি বেকুব বনে গেলো
-‘ সাট আপ আমার আবার কি হবে?’
সামি শান্ত হলো। কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলল
-‘ না মানে তুমি তো আমা….!’
-‘কিহ?’
-‘ কিছু না। তুমি কি কিছু বলবে ফোন দিলে যে?’
-‘ কেনো আমি ফোন দিতে পারি না? ডিস্টার্ব করলাম নাকি?’
-‘ আরে না আমি তো এমনি জেগে ছিলাম। বলো কি বলবা’
-‘ কাল আমার সাথে দেখা করতে পারবেন?’
-‘ তোমার কি হয়েছে? তোমার কি জ্বর আসছে? জ্বরের ঘোরে কি এসব বলছো?’
-‘ হঠাৎ এমন মনে হলো কেনো?’
-‘ তুমি নিজ থেকে আমার কাছে ফোন দিয়েছ আবার দেখা করতে বলছ তাই আর কি মনে হলো তুমি নিজের মধ্যে নাই’
-‘ আপনি বেশি কথা বলেন কিন্তু আমি জাস্ট শুনছি আপনি দেখা করতে পারবেন কি না?’
সামি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল
-‘ কোথায় আসতে হবে?’
-‘ আজ যেখানে দেখা হয়েছিলো সেখানে বিকাল ৫টাই’
-‘ আচ্ছা চলে আসবো’
-‘ ওকে রাখছি’
-‘ আরও কিছুক্ষণ কথা বলো প্লিজ।’
সামির আদুরে কন্ঠের প্রতিত্তোরে হ্যাঁ না কিছু বলতে পারলো না জিমি কিছুক্ষন নিরব থেকে কানে ফোন রেখে খট করে ফোন কেটে দিয়ে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিলো। জিমি ফোন কেটে দেওয়ায় সামি হাসলো।
চলবে