মেঘের_আড়ালে_রোদ #পর্ব_7 লেখিকা #Sabihatul_Sabha

0
110

#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_7
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

শ্রাবণ আর আহনাফ পাশাপাশি এক নির্জন নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে। একটু পর অন্ধকার নেমে আসবে।

আজ এক সপ্তাহ শ্রাবণ বাসায় আসে না৷ আমেনা বেগম ছেলের টেনশনে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিলেন। আহনাফ তন্নতন্ন করে সারা শহর খুঁজেছে, এক পর্যায় খুঁজতে খুঁজতে শ্রাবণের বন্ধুর বাসায় পেলো৷

আহনাফঃ এভাবে নিজেকে আড়াল করে নিলে কি সব আগের মতো হয়ে যাবে..?
শ্রাবণ কিছু না বলে চুপচাপ পানির ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
আহনাফের ভীষণ রাগ হলো। এভাবে চুপ করে থেকে কি বুঝাতে চাচ্ছে!..??
আহনাফ আবার বলে উঠলো, ‘ আম্মু তোমার জন্য টেনশন করে। দাদিজান বার বার তোমার কথা জিজ্ঞেস করে ‘
শ্রাবণ হাসলো।
আহনাফ ভাইয়ের কষ্টটা বুঝতে পারছে।
আহনাফঃ নিজের মনের সব কথা চিৎকার করে এই নদীর তীরে বলে মনটা হাল্কা করো৷ যা হয়েছে ভুলে যাও। তখন চুপ করে মুখে তালা মেরে ছিলে এখন এমন লুকোচুরি খেলা বন্ধ করে বাসায় চলো।

শ্রাবণঃ চিৎকার করে নদীর তীরে সব বললেই কি আবার সব আগের মতো হয়ে যাবে..?
আহনাফঃ দিন দিন কি ছোটো বাচ্চা হয়ে যাচ্ছো..?
দুইভাই অনেক কথা বললো। শ্রাবণ বললো সে রাতে বাসায় আসবে আহনাফ জেনো চলে যায়।

শ্রাবণ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নদীর বুকে ভয়ে যাওয়া একের পর এক ঢেউয়ের খেলা।

নদীর স্রোত, সময় আর মানুষের জীবন যা দ্বিতীয় বার ফিরিয়ে আনা যায় না।

____________

এই এক সপ্তাহে মহুয়া দুইটা টিউশন ঠিক করেছে। সকালে একটা, সন্ধ্যায় আরেকটা। আরও একটার জন্য চেষ্টা করছে।

আজ সন্ধ্যায় টিউশন শেষ করতে একটু দেরি হয়ে গেলো। বাহিরে অন্ধকার হয়ে গেছে।

একটা গলি থেকে বের হয়ে সোজা হাঁটা শুরু করলো। একটু সামনে যেতেই মনে হলো ওর পেছনে কেউ আসছে।
ভয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। পা চালানোর শক্তি ফুরিয়ে গেছে পেছন ফিরে দেখলো না কেউ নেই। হঠাৎ মনে হতে শুরু করলো ভূত নয়তো!!.?
দ্রুত হাঁটা শুরু করলো আরেকটু সামনে গিয়ে আবার থেমে গেলো কেউ কি ওকে ফলো করছে!..? আস্তে আস্তে পেছন ফিরে সাহস করে বলে উঠলো, ‘ কে কে ওখানে!.? সাহস থাকলে সামনে আসো! দুর্বল, ভীতুদের মতো লুকিয়ে লুকিয়ে ফলো করছো কেনো কাপুরুষ।’

ল্যামপোস্টের আলোয় একটা ছায়া দেখলো। গলির আড়াল থেকে একটা ছেলে বের হয়ে আসলো।

মহুয়া উপর দিয়ে শক্ত থাকলেও ভেতর ভেতর ভয় পেয়ে গেলো। এখানে কি একজন নাকি আরও আছে!.?

ছেলেটা ধীর পায়ে মহুয়ার সামনে ব্যাস দূরত্ব রেখে দাঁড়ালো।

মহুয়া ভালো করে ছেলেটার দিকে তাকালো। লম্বা, কালো, চুল এলোমেলো, শার্টের উপরের দুইটা বোতাম খুলা, হাতে কিসের পুতির মালা, পাক্কা বখাটে ছেলে। ছেলেটাকে দেখে চিনতেও ভুল করলো না মহুয়া। এই ছেলের জন্যই না বুঝে আহনাফের গায়ে হাত তুলে ছিলো সে।

মহুয়া রেগে বলে উঠলো,’ আপনি আমার পিছু কেনো করছিলেন!..?’
~ কখন.? আমি তো এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম।
মহুয়াঃ মিথ্যা কথা আমার পছন্দ না। আমি সব সময় খেয়াল করছি কেউ আমাকে ফলো করছে আর সেটা আপনি আমি নিশ্চিত।
~ হ্যাঁ করছি তো..? আরও করবো। এখন থেকে ফলো নয় সামনাসামনি দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে কথা বলবো।
মহুয়াঃ আপনাদের মতো বখাটে ছেলেদের কাজেই এটা। যখন যেই মেয়ে দেখেন তাদের জীবন শেষ না করা অবদ্ধি শান্তিতে নিশ্বাস অব্ধি নিতে দেননা। আমার রাস্তা ছেড়ে দাঁড়ান।
~ আমি অন্য প্রেমিকদের মতো ঘুরায় কথা কই না। আমি সোজাসাপ্টা বলে দেই তোরে আমার ভাল্লাগছে। তোর সাথে প্রেম না আমি তোরে বিয়ে করমু। প্রমিজ তুই আমারে বিয়ে করলে আমি আর কোনো মেয়ের দিকে তাকামু না। ভালো না হয় পড়েই বাসিস আর ভালো না বাসলেও সমস্যা নাই আমি তো বাসি এটাই যথেষ্ট।

মহুয়ার রাগে শরীর কাঁপতে শুরু করলো।
মহুয়াঃ রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ান।
~ আমি উত্তরের অপেক্ষা করমু। তোরে রাগলে আরও বেশি সুন্দর লাগে।
মহুয়া রেগে ঠাসস করে রনির গালে একটা থাপ্পড় মেরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, ‘ রাস্তা ছাড়েন না হয় শুধু হাত নয় পায়ের জুতাও চলবে।’

রনি সরে যায় রেগে যাওয়ার বদলে মুচকি হেঁসে বলে উঠলো, ‘ রনির বউ রনির মতোই সাংঘাতিক । ‘

মহুয়া ব্যাগটা শক্ত করে ধরে দ্রুত মেইন রাস্তায় চলে আসে।
রনিও মহুয়ার পেছন পেছন আসছিলো তবে অনেকটা দূরে।

মহুয়া সামনে নির্জন কে ফোনে কথা বলতে বলতে এদিকে আসতে দেখে দ্রুত ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

নির্জন হঠাৎ ওর সামনে মহুয়াকে দেখে ভড়কে যায়। মুখ ফস্কে বলে ফেলে,’ ভাবি আপনি এখানে.!..? ‘

মহুয়া চোখ বড় বড় করে তাকাতেই নির্জন হাত দিয়ে মুখ চেপে বলে উঠলো, ‘ গালতিসে মিস্টিক আপু। আপনি এখানে..? ‘

মহুয়া আশেপাশে তাকায় না রনি নেই। শান্তির একটা নিশ্বাস ফেলে বলে উঠলো, ‘ টিউশন থেকে আসছিলাম।’

নির্জন সতর্ক চোখে মহুয়ার তাকানো খেয়াল করে। কিছুটা দূরে একটা ছেলের ছায়া দেখে মহুয়ার এমন ভয়ার্ত চেহারার মানে বুঝতে পারে।

নির্জনঃ চলুন আমিও বাসায় যাবো।
মহুয়াঃ চলুন।
নির্জনঃ আইসক্রিম, ফুচকা খাবেন.?
মহুয়াঃ না ধন্যবাদ।
নির্জনঃ আপনি টিউশন নিয়েছেন.?
মহুয়াঃ হুম।
নির্জন আরও অনেক কথা জিজ্ঞেস করলো। কথা বলতে বলতে বাড়িতে চলে আসলো।

নির্জন সোফায় বসলো আর মহুয়া নিজের রুমে চলে যাচ্ছিলো।
হালিমা বেগম নির্জনের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, ‘ কিরেএএ তুই না ফ্রেন্ডের বাসায় যাচ্ছি বললি আবার চলে আসলি যে.শরীর খারাপ .?’

মহুয়া বুঝলো ওর জন্যই নির্জন ফ্রেন্ডের বাসায় না গিয়ে আবার বাসায় ফিরে এসেছে।

______

মেঘলা রুমে থেকে বিরক্ত হচ্ছে। এখন সে চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিতো বা কারো মানি ব্যাগ চুরি করার ফন্দি আঁটত।কিন্তু এখন বিয়ে নামের কারাগারে বন্ধি হয়ে রুমে বসে বসে বোরিং হচ্ছে। রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে৷

নির্জন সিঁড়ির দিয়ে তাকিয়ে বোকার মতো তাকিয়ে রইলো।

শ্রাবণের শার্ট আর টাউজার পড়ে নিচে চলে এসেছে মেঘলা। চুল খোঁপা করা, হাতে ঘড়ি,গলায় রুপার ছোট্ট রকেট, শ্যামবর্ন গায়ের রং, ঠোঁটের নিচে কালো একটা তিল, লম্বায় ৫.৫ হবে। দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগছে। একদম মনে হয়না বখাটে মেয়ে। তখনি নির্জনের মনে পড়ে আজ থেকে ঠিক দুই মাস আগের একটা কাহিনি…..

নির্জন বন্ধুদের সাথে ভার্সিটির সামনে আড্ডা দিচ্ছিলো হুট করে কোথায় থেকে দৌড়ে একটা মেয়ে এসে ওর উপর পড়ে যায়।
নির্জন মাথায় প্রচন্ড ব্যথা পেয়ে হাত দিয়ে চেপে ধরে। রেগে মেয়েটাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে তাকায়।শার্টের উপর হাফ কটি,প্যান্ট, চুলগুলো উপরে করে জুটি বাঁধা, ঠোঁট গোলাপি, চোখ টানাটানা, নির্জন মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে মেয়েটার দিকে ।
মেয়েটা বার বার বলতে থাকে সরি! সরি! আমি সত্যি সরি ভাইয়া। ব্যাথা পেয়েছেন.?। আমি দেখতে পাইনি ফ্রেন্ডের জন্য এমনটা হলো বলেই মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে চলে যায়।

নির্জনের হুসস ফিরে বন্ধুদের ধাক্কায় সে আশেপাশে মেয়েটাকে খুঁজতে শুরু করে। সারা ভার্সিটিতে খুঁজেও আর এই মেয়েটিকে কোথাও পায় না।

মন খারাপ করে বাসায় এসে পকেটে হাত দিয়ে দেখে ওর মানি ব্যাগ টাকা, মোবাইল কিছুই নেই৷ সে ভেবে ছিলো মেয়েটিকে খুঁজতে গিয়ে হয়তো সব হারিয়ে ফেলেছে৷ আজ চোখের সামনে মেয়েটিকে দেখে তার আসল পরিচয় জেনে নির্জন বুঝতে পারলো আসলে সেদিন সবটা ইচ্ছে করেই হয়ে ছিলো। আর দশ হাজার টাকা, মোবাইল সব এই মেয়ে চুরি করে ছিলো। কে জানতো একদিন তাকে ফকির বানানো মেয়েটিই তার ভাইয়ের বউ হয়ে যাবে। শ্রাবণ বাসায় আসলে ভীষণ কড়া ভাবে সাবধান করে দিতে হবে সাংঘাতিক মেয়ে মানুষ থেকে দূরে টাকা, মোবাইল রাখতে।

হাতের তুরির শব্দে ভাবনা থেকে বের হয় নির্জন। মেঘলা ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
নির্জন ঠিক হয়ে বসতেই মেঘলা ওর পাশে বসলো।
নির্জনঃ তুমি আমাকে চিনতে পেরেছো.?
মেঘলা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, ‘ হ্যাঁ আমার দেবর।’
নির্জন নিজেকে একটু বড় বড় করে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,’ ভার্সিটিতে আমার টাকা, মোবাইল চুরি করে ছিলে!সেটার কথা বলছি.’
মেঘলাঃ কি বলছেন স্যার, আমি তো এই প্রথম আপনাকে দেখছি। আর আপনি কিনা আমাকে চোর বানিয়ে দিচ্ছেন!.?
নির্জন অবাক হয়ে বললো,’ স্যার..? আর এই প্রথম! তুমি তো সকালেও আমাকে দেখলে।

মেঘলা বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো। মুখে ইনোসেন্ট ভাব করে বলে উঠলো, ‘ আপনার ভাইয়ার চিন্তায় সব ভুলে যাচ্ছি।’
নির্জনঃ কিইই!..? ভাইয়ার জন্য আপনি চিন্তা করছেন.?
মেঘলাঃ এভাবে অবাক হচ্ছেন কেনো! বিয়ে যেভাবেই হোক তিন মাস উনি আমার স্বামী একজন বউ হিসেবে তো টেনশন হবেই। আমি অনেক দয়াবতী মেয়ে।

নির্জন ভাবলো,’ মায়াবতী শুনেছি কিন্তু এই প্রথম শুনলাম দয়াবতী। ‘

পেছন থেকে আমেনা বেগম রেগে হুংকার দিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমার বাড়িটাও কি এখন বস্তি হয়ে যাবে! এই বাড়িতে থাকতে হলে ভদ্র মেয়েদের মতো থাকতে হবে। এইসব কাপড় পড়ে চলাফেরা করা যাবে না। না হয় রুমেই জেনো বন্ধি হয়ে থাকে।

মেঘলা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
আমেনা বেগমঃ ডাইনীর মতো দাঁড়িয়ে না থেকে রুমে গিয়ে কাপড় চেঞ্জ করো। এটা ভদ্রলোকের বাড়ি বস্তি, বখাটে মেয়েদের বাড়ি নয়। তোমার জন্য আমার বাকি দুই মেয়ে নষ্ট হয়ে যাবে। ওদের থেকে দূরেও থাকবে। ছেলে দেখলেই তোমাদের মতো কিছু মেয়েদের চেহারার রং বদলে যায়। এই বাড়ির ছেলেদের থেকেও দূরে থাকবে। রুম থেকে প্রয়োজন ছাড়া বের হবে না।

মেঘলা বিরক্ত হয়ে আমেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে বলে উঠে,’ বাংলা ছবির দজ্জাল শাশুড়ী রিনা খান আমার কপালে জুটলো। মাত্র তিনটা মাস সহ্য করে নে মেঘলা।

নির্জন পকেটে হাত দিয়ে দেখলো ওর মানিব্যাগ নেই। শান্ত চোখে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মেঘলার যাওয়ার দিকে। কারন ওর মানি ব্যাগে মাত্র একশো টাকা আছে।
________

আহনাফ রুম থেকে বের হয়ে মোবাইল নিয়ে ছাঁদে চলে আসলো৷ কিছুক্ষন কথা বললো কারো সাথে।

ছাঁদের রেলিঙের উপর বসে আছে মহুয়া । আকাশের দিকে তাকিয়ে কান্না করছিলো। আহনাফের কন্ঠ শুনে ফিরে তাকালো৷

আহনাফ কারো সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে। ইংরেজিতে কথা বলছে যার জন্য বুঝতে অসুবিধা হলো না আহনাফ একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে যার নাম হিয়া। হয়তো গার্লফ্রেন্ড।

আহনাফ কথা শেষ করে রেলিঙের দিকে তাকিয়ে দেখলো কেউ বসে আছে। ঘোমটা দেওয়া দেখেই বুঝলো এটা মহুয়া।

আহনাফ না চাইতেও গিয়ে মহুয়ার থেকে দূরত্ব রেখে দাঁড়ালো।

আহনাফঃ সুইসাইড করার পরিকল্পনা করছেন..?
মহুয়াঃ জ্বি হেল্প করুন। এখান থেকে নিচে পড়লে ঠিক কতোক্ষন লাগবে দেহ থেকে প্রাণ যেতে!.?’
আহনাফ একবার নিচের দিকে তাকালো আবার মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ এখান থেকে নিচে পড়লে প্রাণ যাবে কে বলেছে..? এখানে থেকে নিচে পড়লে আপনার হাত, পা ভাঙবে, মাথা ফাঁটবে এর থেকে বেশি কিছু না। আপনি কেনো ম’রার পরিকল্পনা করছেন..?

মহুয়াঃ আমি একবারও বলেছি আমি ম’রার জন্য এসেছি!.?.
আহনাফঃ তাহলে নেমে আসুন।
মহুয়াঃ এভাবেই ভালো লাগছে।

আহনাফ মহুয়ার দিকে এগিয়ে গেলো। মহুয়া কিছু বুঝে উঠার আগেই আহনাফ মহুয়াকে ধাক্কা দিলো।

মহুয়া ভয়ে আহনাফের হাত শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো।মাথা থেকে ওড়না গিয়ে বাগানে পড়লো।
আহনাফ মুচকি হেঁসে মহুয়ার হাতটার দিকে তাকালো। চুল গুলো খুলে গেছে বাতাসে উড়ছে, ভয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে মহুয়া বলে উঠলো, ‘ কি করছেন আহনাফ উপরে তুলুন।’
আহনাফঃ বসার আগে ভেবে বসা উচিত আমরা কোথায় বসছি, যেদিকে পা বাড়াচ্ছি জায়গাটা আমাদের জন্য কতোটা সেফটি.?। অন্ধের মতো জীবনের ঝুঁকি নিতে নেই।একজন অন্ধ লোক ও পা বাড়ানোর আগে লাঠি দিয়ে বার বার বুঝার চেষ্টা করে আমি সঠিক পথে পা দিচ্ছি তো!.? এখন যদি এখানে আমি না থাকতাম .? ব্যাচুটে নামতে গিয়ে কিংবা পেছলে পড়ে যেতেন হাত ধরে বাঁচার জন্য কাউকে পেতেন না। কিছু করার আগে একবার ভালো করে ভেবে নিবেন লাস্টে ফলাফল কি হবে.?।

মহুয়াঃ আগে তো উপরে তুলুন না হলে এবার সত্যি গেলাম পড়ে। জ্ঞান দেওয়া বন্ধ করুন।
আহনাফ মহুয়াকে উপরে নিয়ে আসে। মহুয়া ভয়ে এখনো আহনাফের হাত শক্ত করে আঁকড়ে ধরে আছে।ভীষণ ভয় পেয়েছে।

আহনাফঃ এবার আমার হাত ছাড়ুন।
মহুয়া রেগে এক আকাম করে বসলো। আহনাফের বুকে রেগে একের পর এক থাপ্পড়, কিল মারতে শুরু করলো।
মহুয়াঃ বেয়াদব লোক আরেকটু হলে আমি পড়ে যেতাম।আমার থেকে দূরে দূরে থাকবেন। বলে উঠতে গিয়ে ধপাস করে আহনাফের উপরেই পড়ে গেলো।

আহনাফ মনে মনে হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো। নিজে বললো দূরে থাকবেন আর এখন নিজেই ওকে জড়িয়ে ধরে আছে।মনে মনে হাসলেও উপরে হাসি চেপে রাখলো। মহুয়ার সামনে হাসলে নিশ্চয়ই এখন আরও রেগে যাবে মেয়েটা।

মহুয়া লজ্জায় জলদি সরে গেলো। চুল গিয়ে আহনাফের ঘড়ির সাথে পেচিয়ে গেলো। মহুয়ার তো ইচ্ছে করছে চুল গুলোই কেটে ফেলতে।
চুল টানাটানি শুরু করলে আহনাফ মহুয়াকে থামিয়ে আস্তে ধীরে চুলগুলো ছাড়িয়ে বলে উঠে,’ এতো বড় চুল সামলান কিভাবে..? ‘
মহুয়াঃ যেভাবে এতোক্ষন আপনাকে সহ্য করেছি!! বলেই চুলগুলো ওড়নার মতো সামনে এনে দ্রুত পায়ে ছাঁদ থেকে নেমে গেলো৷

মহুয়া যেতেই আহনাফ বলে উঠলো, ‘ মেয়েটা আবার আমাকে অপমান করে গেলো..? আমি কি এতোটাই বোরিং যে আমাকে সহ্য করা চুলের মতো হয়ে গেলো!!.? বেয়াদব মেয়ে!!..

___________

গভীর রাতে দরজায় কড়া শুনে চোখ ঢলতে ঢলতে দরজা খুললো মেঘলা। এতো রাতে কে ওর রুমের সামনে!.?

দরজা খুলেই শ্রাবণ কে দেখে অবাক হয়৷ বিয়ের দিনের পর আজ দেখলো।
শ্রাবণ মেঘলার পাশ দিয়ে যেতেই মেঘলার চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসলো৷ কারণ শ্রাবণের শরীর থেকে বিশ্রী গন্ধ আসছে নিশ্চয়ই উল্টা পাল্টা কিছু খেয়ে এসেছে।

মেঘলা রেগে শ্রাবণের সামনে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ এ্যাঁই মাতাল আমার রুম থেকে বের হ!.’
শ্রাবণ চোখ ঘুরিয়ে মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ কি! কি বললি আরেকবার বল..? কে মাতাল.? তুই এই রুমে কেনো..? বের হ আমার রুম থেকে!।
মেঘলাঃ মাতাল কে মাতাল বলবো না কি সাধু বাবা বলবো.? এই রুম আমাকে দেওয়া হয়েছে রুম থেকে বের হন।
শ্রাবণ মেঘলার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে বলে উঠলো, ‘ আই ওয়ান্ট ডিভোর্স! একটা বস্তির, অশিক্ষিত, চোর, ছিনতাইকারীর সাথে আমি এক ছাঁদের নিচে থাকতে পারবো না আর না কখনো এক রুমে!। তোর মতো মেয়ে শ্রাবণ চৌধুরীর নখেরও যোগ্য না,আর না কখনো হয়ে উঠতে পারবে।কাল যখন আমার বন্ধু, পাড়াপ্রতিবেশি আমার বউ দেখতে চাইবে আমার লজ্জায় মাথা কা’টা যাবে। তোকে এই রুমের আশেপাশে দেখলে কি করবো আমি নিজেও জানিনা। আমার রুম আর আমার থেকে দূরে থাকবি।

ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে রেখেছে মেঘলা।

শ্রাবণ ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলো মেঘলার।

চলবে…..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here