#এই_মন_তোমারি
#পর্ব_০২
#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন
-” হেই দস্যি মেয়ে ওপেন ইউর আইজ। প্লিজ টক টু মি ।শাফয়াত সূরার থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে চিন্তিত স্বরে বললো, যাহ্ বাব্বা আমি পুলিশ অফিসার শোনা মাত্র সেন্সলেস হয়ে গেল। শাফায়াত সূরা কে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে উঠতে যাবে এমন সময় সূরার হাতের দিকে তার নজর পড়ে। ফর্সা হাতে কেমন কালসিটে দাগ পড়ে আছে।যা দেখে শাফায়াতের পা থমকে গেল।নড়তে পারলো না সূরার কাছ থেকে। শাফায়াত সূরার কাছে এগিয়ে এসে ইতস্তত বোধ করে সূরার শাড়ির আঁচল টা সরিয়ে দিতেই দেখলে পেল সারা শরীরে এমন অসংখ্য দাগ রয়েছে।দেখে মনে হচ্ছে কোনো মারের দাগ, জায়গায় জায়গায় র’ক্ত জমাট বেঁধে আছে। আবার কোথাও কোথাও ফোস্কা পড়ে গেছে।যা গরম তেল ছিটে লেগে হয়েছে বা কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে গরম কিছু চেপে ধরেছে।সব দেখে যেন শাফায়াতের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।সে ভাবতেও পারে নি এমন চটপটে স্বভাবের একটা মেয়ে এতো অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছে।সে সূরা কে পার্সোনাল ভাবে চেনে না বলা চলে। ইনফ্যাক্ট বিয়ের আগে দেখেও নি। শাফায়াতের নানু খুব অসুস্থ হওয়ার শাফায়াত অফিস থেকে তিন দিনের ছুটি নিয়ে সপরিবারে গ্ৰামে তার নানু বাড়ি গিয়েছিলো। সপরিবার বলতে তার আম্মি নাজমা দেওয়ান,বাবা শফিকুল দেওয়ান আর একমাত্র আদরের বোন নুজাইফা দেওয়ান। কিন্তু সবাই গ্ৰামে গিয়ে দেখে নানু একদম সুস্থ্য আছেন।তার নাকি মেয়ে ,জামাই নাতি নাতনি সবাইকে একসাথে দেখার ইচ্ছা জেগেছিলো ,তাই অসুস্থ্য হওয়ার মিথ্যা কথা বলে সবাইকে একসাথে করেছে। অবশ্য গ্ৰামে এসে মন্দ লাগে না শাফায়াতের। গ্ৰামে সবার সাথে দুই দিন খুব ভালো আনন্দঘন মূহুর্তের মধ্যে দিয়ে পার করে শাফায়াত। তৃতীয় দিন শাফায়াত সবাইকে গ্ৰামে রেখে নিজে শহরে ফেরার জন্য রেডি হয় এমন সময় নাজমা দেওয়ান শাফায়াতের কাছে এসে বললো,
-” আমার একটা অনুরোধ রাখবি শাফি?”
-” এমন করে বলছেন কেন আম্মি? এমন টা কখনো হয়েছে যে আমি কখনো আপনার কথার অবাধ্য হয়েছি? ”
-” আমি জানি তো আমার শাফি আমাকে কতো ভালোবাসে। আমার কতো খেয়াল রাখো। আমার সব আবদার মেনে নেয়।তাই তো এই শেষ একটা আবদার তোর কাছে করছি। তুই প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিস না।”
-” শাফায়াত নাজমা দেওয়ান কে জড়িয়ে ধরে বললো, আপনি বলুন না আম্মি আমার কি করতে হবে।আমি কিভাবে আপনাকে খুশি করতে পারি?”
-” বিয়ে করতে হবে তোকে।একটা জীবন্ত লাশ কে সুন্দর একটা জীবন উপহার দিতে হবে। আমি অনেক আশা নিয়ে তোর কাছে।প্লিজ শাফি আমাকে ফিরিয়ে দিস না।”
-” সরি আম্মি।আমি কখনো আপনার কথার অবাধ্য হয় নি। কিন্তু আজ আমি আপনার কথা রাখতে পারলাম না।বিয়ে কোনো ছেলেখেলা নয় আম্মি।বিয়ে সারাজীবনের ব্যাপার। যেইখানে সারাজীবনের প্রশ্ন সেইখানে হুট করে চেনা না জানা না এমন একটা মেয়েকে আমি কিছুতেই বিয়ে করতে পারবো না আম্মি।”
-” মেয়েটা খুব অসহায় শাফি।বাবা মা কেউ নেই।এই পৃথিবীতে যার বাবা মা নেই তার মতো অসহায় দ্বিতীয় আর কেউ নেই। মেয়েটাকে দেখে কেন জানি আমার আপন মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমার কাছের কেউ।
-” দেখেন আম্মি আমাদের আশেপাশে এমন অসংখ্য অসহায় মেয়ে আছে।তার মানে তো এটা নয় যে সব অসহায় মেয়েদের আপনার ছেলের বউ করবেন।”
-” তোর এক লাইন বেশি বোঝা অভ্যাস এখনো গেলো না শাফি। আমি সব অসহায় মেয়েদের বিয়ে করতে বলি নি তোকে। শুধু এই গোলাপ টা ফোঁটার আগেই পাপড়ির গুলো ঝড়ে দিতে দিস না।মেয়েটার কাকি শুধুমাত্র টাকার লোভে একটা দুই বাচ্চার বাপের সাথে বিয়ে ঠিক করছে।ওর কাকা মনিরুল আমার হাতে পায়ে ধরে বারবার বলেছে ,আমি যেন কিছু একটা করি।আমি যেন মেয়েটার জীবন নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচায়। তুই তো জানিস এই গ্ৰামে তোর নানুর কতো নামকাম রয়েছে।সবাই আমাদের কতো সম্মান করে।আমি সবাইকে বলে এসেছি মেয়েটাকে আমি আমার ছেলের বউ করে ঘরে তুলবো। এখন তুই যদি এই বিয়ে টা না করিস ,সবার সামনে আমার লজ্জায় আমার মাথা কা’টা যাবে।তোর নানুর সম্মানে আঘাত লাগবে। তুই কি চাস শাফি তোর মায়ের অসম্মান হোক? লোকে তাকে ছিঃ ছিঃ করুক?”
-” শাফায়াত তার মায়ের অসহায় মুখ দেখে পারে নি বিয়েতে না করতে।একদম অপ্রস্তুত ভাবে বিয়ে টা হয়ে যায় তাদের। পুরোনো কথা মনে হতেই নাজমা দেওয়ান এর প্রতি অভিমান হয় শাফায়াতের।তিনি তাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে একটা গাইয়া বিচ্ছু মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছেন।যে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে তার মতো একজন পুলিশ অফিসারের অবস্থা নাজেহাল করে দিয়েছে।তার মুখ ছিঁড়ে দেওয়ার হু’ম’কি দিয়েছে। শাফায়াত গ্লাসে পানি এসে সূরার চোখে মুখে পানির ছিটা দিয়েই সূরা শাফায়াতের হাত ধরে বললো, আমাকে দয়া করে আর মারিস না। এইভাবে মা’র খেতে খেতে আমি তো ম’রে যাবো।”
-” হে ইউ আমি তোমাকে কখন মারলাম? উল্টো তুমি আমার মুখ ছিঁড়ে দিতে চেয়েছো। বিচ্ছু একটা।”
-” সুন্দর ব্যাডা মানুষ তুই? আমি ভাবছি আমার কাকি। স্বপ্নে দেখছিলাম আমার ঘুম থেকে একটু উঠতে দেরি হয়ে গেছে।তাই কাকি আমার মুখে গরম পানি ছুঁড়ে মা’র’ছে। ”
-” ডোন্ট প্যানিক। আমি তোমার কাকি না।”
-” পিকনিক? পিকনিক মানে সূরার খুব ভালো করে আছে হু। গ্ৰামে থাকতে কাকির হাঁড়ি থেকে চাল ডাল চুরি আমার বন্ধুদের সাথে কত্তো পিকনিক করছি। অবশ্য পরে কাকির হাতে মা’র ও খেতে হয়ছে। তুই কি এখন আমার সাথে পিকনিক করবি? চল না সুন্দর ব্যাডা মানুষ আমরা পিকনিক করি। অনেক দিন চাল ডাল চুরি করে পিকনিক খাওয়া হয় না।”
-” ওহ্ গড!এ কার পাল্লায় পড়লাম আমি? আমি বললাম প্যানিক। আর সে শুনেছে পিকনিক।যাই হোক তুমি পুলিশের কথা শুনে অজ্ঞান হয়ে গেলে কেন?”
-“তুই কোনো পুলিশ না তাই না রে? আমাকে মিথ্যে পুলিশের ভয় দেখায়ছিস তুই?”
-” তোমাকে মিথ্যা কেন বলতে যাবো আমি? আমি সত্যিই একজন পুলিশ অফিসার।তাই আমার সাথে কোন প্রকার ঝামেলা করলে আমি সোজা তোমাকে জেলে ঢুকিয়ে দিবো।”
-” আল্লাহ গো এইডা আমার কি সর্বনাশ হইলো গো। আমি যদি জানতাম আমার পুলিশের সাথে বিয়ে হচ্ছে , আমি কিছুতেই এই সুন্দর ব্যাডা মানুষ রে বিয়ে করতাম না।প্রয়োজনে ঐ বুইড়া ব্যাডার বউ হতাম। সূরা মাথা চাপড়াতে চাপড়াতে বললো, আল্লাহ গো আমার আন্ডাবাচ্চা গুলো লুলা হবে গো।এ কি হয়ে গেল আমার জীবনে?”
-” আন্ডাবাচ্চার কথা শুনে কাশি উঠে গেল শাফায়াতের।সে বিরক্ত হয়ে বললো, কি সব আবোলতাবোল বকছো তুমি?”
-” আবোলতাবোল বকছি না রে সুন্দর ব্যাডা মানুষ। আমার বন্ধুদের থেকে শুনছি পুলিশ নাকি খুব খারাপ হয়। সবাইকে ধরে ধরে খুব মা’র মা’রে।আর মানুষের অভিশাপে তাদের ছেলেমেয়ে লুলা হয়।হায় আল্লাহ আমি তো লুলা পোলাপাইন এর মা হয়ে যাবো গো।”
-” এই সমাজ পুলিশ সম্পর্কে অত্যন্ত বাজে ধারণা নিজেদের মধ্যে পুষে রাখে।তারা সবসময় পুলিশের নে’গে’টি’ভ দিকগুলো তুলে ধরে।তারা দেখতে পায় পুলিশ একটা লোক কে মা’র’ছে । কিন্তু কেন মা’র’ছে? সে কি অপরাধ করেছে এটা কখনো জানতে চায় না। আমরা এটা জানি হিংস্র জীবজন্তু যাদের মানুষের মতো বোধবুদ্ধি নেই। তবু ও তারা ততোক্ষণ না একজন মানুষের উপর আক্রমণ করে , যতোক্ষণ না মানুষ তাকে আঘাত করে। যেইখানে জীবজন্তু কোনো কারণ ছাড়া কাউকে আঘাত করে না। সেইখানে একজন বোধবুদ্ধি সম্পূর্ণ পুলিশ অফিসার কেন নিরিহ মানুষের উপর অত্যাচার করবে? পুলিশের কাজ নাগরিকদের সুরক্ষা নিরাপত্তা প্রদান করা।এই পুলিশের জন্যই সাধারণ জনগণ নিরাপদে চলাচল করতে পারে। এমনকি ঈদের দিন যখন সবাই নিজেদের পরিবার , আপনজন নিয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে তখন সেই পুলিশ নিজের আনন্দ উৎসব বিসর্জন দিয়ে সাধারণ জনগণ কে পাহারা দেয়। যেন তাদের আনন্দ উৎসবে কোনো ত্রুটি না হয়। নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে অন্যদের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা।এসব কাদের জন্য করে পুলিশ? সাধারণ জনগণের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য । কিন্তু দিন শেষে পুলিশের বদনাম ছাড়া সুনাম হয় না।এসব কথা সূরা কে বলতে গিয়ে নিজের মধ্যে রেখে দেয় শাফায়াত।কারণ সে জানে সূরা তিল কে তাল বানাতে খুব এক্সপার্ট। কিছু একটা ভেবে শাফায়াত নিজের ফোন সূরাকে দেখিয়ে বললো,
-” তুমি এতোক্ষণ পুলিশের নামে যে খারাপ খারাপ কথাগুলো বলছো , সেগুলো আমি ফোনে রেকর্ড করে রেখেছি। এরপর যদি আর একটা ও বাজে কথা বলো না আমি প্রমাণ সহ তোমাকে জেলে ভরে দিবো। এখন আর একটা কথা ও না বলে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়ো।”
-” তুই কোথায় যাচ্ছিস আমাকে ছেড়ে?”
-” আমি পাশের রুমে যাচ্ছি। তোমার মতো একটা মেয়ের সাথে একই বিছানায় জাস্ট ইম্পসিবল বলে শাফায়াত রুমের বাইরে পা রাখার আগেই সূরা এসে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।
পরের পর্ব https://www.facebook.com/100086452137176/posts/253947880830281/?app=fbl
আমার গ্ৰুপ : নূনের গল্প সাম্রাজ্য-Nuzaifa Nun ❤️