এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️ #লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️ — পর্বঃ২৭

0
700

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ২৭

নিকষ কালো অন্ধকারে ঘেরা চারপাশ। শীতের আমেজে ভরপুর রাত্রিটা। ফারিশ আনমনা একা একা ড্রাইভ করছে। হৃদয়ের অনুভূতি দারুণ। ফুড়ফুড়ে মেজাজ। হঠাৎই সেই মেজাজে তার সামনে হাজির হলো কিশোর। হাতের ইশারায় গাড়ি থামাতে বললো ফারিশকে। ফারিশ থামালো। গাড়ির কাঁচ নামিয়ে বললো,“আরে অফিসার সাহেব যে,

কিশোরের গায়ে পুলিশ ইউনিফর্ম নেই। কিশোর বললো,“আমাকে কি একটু লিফট দেয়া যায়। আসলে আমার গাড়িটা নষ্ট হয়ে গেছে।”

ফারিশ কিশোরের থেকে একটু দূরে থাকা কিশোরের গাড়িটা দেখলো। বেশি না ভেবেই বললো,“আসুন।”

কিশোর ঢুকে বসলো গাড়িতে। কিশোর বসতেই ফারিশ গাড়ি স্ট্যার্ট দিলো। কিশোর প্রশ্ন করলো,
“এত রাতে কোথা থেকে ফিরছেন?”

ফারিশের সোজা জবাব,“বউকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসলাম।”

ফারিশের কথায় কিশোর হাসলো। বললো,
“মজা করছেন?”
“এত রাতে আমি আপনার সাথে মজা করবো অফিসার সাহেব।”

কিশোর কিছুটা দ্বিধায় পড়লো। খানিকটা দ্বন্দ্ব নিয়ে বললো,
“কিন্তু আমি যতদূর জানি আপনি বিয়ে করেন নি। তাহলে?”
“ঠিকই জানেন। আমি সত্যি মজা করছিলাম।”

কিশোর থতমত খেল। নিজেকে সামলে শুঁকনো হাসলো। বললো,
“আপনি আসলেই একটা কনফিউশানে ঘেরা মানুষ।”
“আপনি যা মনে করেন। আমাকে একেক মানুষ একেক কিছু মনে করে। কেউ ভাই, কেউ মাফিয়া, কেউ বখাটে, কেউ ঔষধ কোম্পানির মালিক আরো কত কিছু কে জানে কিন্তু আসলে যে আমি কি তা কেউই জানে না।”
“তবে কি আপনি শিকার করছেন আপনি এগুলোর একটাও নন।”
“তা কখন বলেছি। ক্লিয়ার করে বলছি শুনুন আমি হলাম ফারিশ মাহমুদ। একজন ঔষধ কোম্পানির মালিক।”

কিশোর নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,
“তবে আমি কিন্তু জানি আপনি একজন মাফিয়া। তাও দেশ বিরোধী মাফিয়া।”

ফারিশের মুখচুখ স্বাভাবিক। সে মটেও ঘাবড়ালো না। উল্টো শান্ত করেই জবাব দিলো,“আপনি যা মনে করেন। আপনার মনে করায় তো আমি মানুষটা বদলাচ্ছি না।”

কিশোর চুপ হয়ে গেল। অনেকক্ষণ পর আবার বললো,“আপনি কি জানেন আপনার পাওয়া সেই ট্রেকে মেয়েমানুষ ছিল যাদের কি না বাংলাদেশ থেকে ব্যাংককে পাচার করার কথা ছিল।”

ফারিশ এবারও শান্ত। দ্বিধাহীন উত্তর,“সত্যি কি মেয়েমানুষ ছিল আমি তো জানতাম না।”

ফারিশের গা ছাড়া ভাবটা একদমই সহ্য হচ্ছে না কিশোরের। তবুও নিজেকে শান্ত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালালো। সফলও হলো। এবার ফারিশ প্রশ্ন করলো,“আচ্ছা আমার ট্রেকে যে মেয়েমানুষ ছিল তা আপনি কি করে জানলেন?”

কিশোর নড়েচড়ে উঠলো। বললো,
“জেনেছি কোনো একভাবে। আপনাকে জানাতে চাচ্ছি না।”
“যাক ভালো। চেষ্টা চালিয়ে যান। তবে একটা সত্যি কথা বলি। ফারিশ মেয়েমানুষ নিয়ে কিছু করে না। এই তথ্য আপনাকে যারা দিচ্ছে ভূয়া দিচ্ছে। হয়তো অন্যকেউ কাজটা করে আমাকে ফাঁসাচ্ছে। তাই শুধু শুধু আমার পিছনে পড়ে না থেকে সঠিক মানুষ খুঁজুন। আমি জানি গত পনের দিনে ঢাকার দশটা ভার্সিটির পনেরজন ছাত্রী নিখোঁজ। আপনি হয়তো এই বিষয়টায় আমার হাত আছে ভেবে আমার পিছনে পড়ে আছেন। পড়ে থাকুন আমার সমস্যা নেই। কারণ আমি যা করি না তাতে ধরা পড়ার মতো আমার বিন্দুমাত্র ভয় নেই। তাই এখনো সময় আছে আসল মানুষকে খুঁজুন। নয়তো পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। আপনার ওপর প্রেশার বাড়বে অফিসার সাহেব।”

কিশোর বিনিময়ে আর কিছু বললো না পুরো চুপ হয়ে বসে রইলো। ফারিশের শেষের কথাগুলো তার খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে। ছেলেটি কি সত্যিই, সত্য কথা বলছে। কিশোর বুঝতে পারছে না।’
—-
সূর্যের কিরণে ঝলমল করছে আদ্রিতার কক্ষ। গায়ে কম্বল জড়িয়ে আদ্রিতা ঘুমে বিভোর। আজ বৃহস্পতিবার। হাসপাতাল থেকে হাপ বেলার ছুটি নেয়া হয়েছে। এই ছুটিটা নেয়ার পিছনে একটা বিশাল কারণ আছে। কারণটা হলো মৃদুলের পাত্রী দেখতে যাওয়া। বেশ ঘটা করেই আজ মৃদুলকে নিয়ে পাত্রী পক্ষ দেখতে যাওয়া হবে। আদ্রিতারাও সঙ্গে যাবে। আদ্রিতার ফোন বাজলো। ঘুমটা ভেঙে গেল আচমকা। আদ্রিতা ফোনটা সাঁতরে নিয়ে ঘুমো ঘুমো কণ্ঠে বললো,“হ্যালো।”

অপরপাশের মানুষটি কিছু বললো না। আদ্রিতার চট করেই ঘুমটা চলে গেল। সে ফোনটা দেখলো আননোন নাম্বার। আদ্রিতা পুনরায় ফোনটা কানে নিয়ে বললো,
“কে বলছেন?”

এবার উত্তর আসলো,
“নাম না বললে কি কথা বলা যাবে না।”

তড়িৎ বুকটা কেঁপে উঠলো আদ্রিতার। বিস্ময়কর কণ্ঠে বললো,“মিস্টার বখাটে।”

ফারিশ চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো এবার। বললো,“আপনায় কতবার বলবো আমি বখাটে নই।”

আদ্রিতা মৃদু হেসে বললো,“জানি তো।”
ফারিশ তার ড্রয়িংরুমের সিঙ্গেল সোফায় বসলো। মৃদু হাসলো। বললো,
“একটা কথা বলবো ডাক্তার ম্যাডাম?”
“জি বলুন।”

সময় গড়ালো এক সেকেন্ড, দু’সেকেন্ড, চার সেকেন্ড ফারিশ কিছু বলছে না। আদ্রিতা দ্বিধায় পড়ে বললো,“আজও কি বলবেন না?”

ফারিশ বেশ আদুরে স্বরে বললো,
“কথাটা বললে কি কথাটা আপনি রাখবেন?”
“কথাটা রাখার মতো হলে আমি নিশ্চয়ই রাখবো।”

ফারিশ তাও দোনামনা করলো। ভিতর থেকে কথাটা বের করতে পারছে না। ফারিশ অনেকটা যুদ্ধ করে আবদার নিয়ে বললো,“আমাদের যতবার দেখা হবে ততবার কি আপনি আমায় রোজ দশ মিনিট করে জড়িয়ে ধরে রাখতে পারবেন ডাক্তার ম্যাডাম।”

ফারিশের কথা শুনে আদ্রিতার কেমন অনুভূতি হওয়া উচিত সে বুঝচ্ছে না। আদ্রিতার কথা আঁটকে গেল। নিশ্বাস হলো ভাড়ি। ফারিশ বললো,“কি হলো?”

আদ্রিতা জোরে নিশ্বাস ফেলে বললো,
“যদি না রাখি।”
“আমি কি আপনায় জোর করতে পারি।”

আদ্রিতা হেঁসে ফেলে কিছু বলে না। ফারিশও আর কিছু বললো না। অনেকক্ষণ চুপ থেকে বললো,“চলুন বিয়ে করে ফেলি।”

তড়িৎ চমকে উঠলো আদ্রিতা। হেঁসে হেঁসে বললো,“জোর খাটানোর ধান্দা।”

উচ্চ স্বরে হাসে ফারিশ। হাসির শব্দ মোবাইল থেকে আদ্রিতার কানেও গিয়ে বিঁধে। ফারিশ মাথা চুলকে বলে,“কিছুটা।”

আদ্রিতা মিষ্টি হেঁসে বলে,
“আপনি একটা পাগল।”

ফারিশ সিঙ্গেল সোফায় তার মাথাটা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে,
“জানি তো।”

আবারও হাসলো আদ্রিতা। ফারিশ ফিস ফিস করে বললো,“আমাকে পাগল বানানোর অভিযোগে আমার বুকের মধ্যিখানে এক নিস্তব্ধ জেলখানায় আপনার শাস্তি হোক।”

আদ্রিতা কি বলবে বুঝছে না। সে চুপ করে রইলো।’
—-
পাত্রপক্ষ বেসে পাত্রীর বাড়িতে বসে আছে মৃদুল,আশরাফ,মুনমুন, চাঁদনী,আদ্রিতা আর রনি। মৃদুল খুব নার্ভাস। কিভাবে কি বলবে বুঝছে না। পাত্রী হলো মৃদুলের বাবার বন্ধুর মেয়ে। বেশ আসা যাওয়া মৃদুলের বাবার এখানে। তার মেয়ে পছন্দ। শুধু মৃদুল পছন্দ করলেই হয়ে যাবে বিয়েটা। মেয়ে একজন পুলিশ। মৃদুল বেশ উৎকণ্ঠা নিয়ে বললো,“দোস্তরা আমার কি খুব শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে হবে। দুই একখান অশুদ্ধ কইলে সমস্যা আছে।”

মৃদুলের প্রশ্নে সবাই হেঁসে ফেলে। আদ্রিতা বলে,
“তোর যেমন ইচ্ছে তেমনই কথা বলবি।”
“আমার খুব নার্ভাস লাগছে মেয়েটা আমায় পছন্দ করবে তো।”
“এত প্যারা নিচ্ছিস কেন আমি আছি তো(রনি)

মৃদুল চোখ কুঁচকে বললো,“তুই আছিস মানে রনি ভুইলা যাস না মুন এইখানে আছে।”

রনি তাকালো মুনমুনের দিকে। মুনমুন চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। চাঁদনী উঠে এগিয়ে গেল বাড়ির দরজার দিকে কারো আসার নাম গন্ধ নেই। অদ্ভুত তো ব্যাপারটা। আশরাফ চাঁদনীর কান্ডে মৃদুস্বরে বললো,“চাঁদ এদিকে আয়।”

চাঁদনী গেল। আশরাফের পাশে চুপটি করে বসলো। বললো, “ওনারা কেউ আসছে না কেন? পাত্রীর মা সেই কখন বলে গেল মেয়ে আসছে। কই এখনো দেখি না ক্যান?”

এমন সময় হাতে ট্রে নিয়ে ভিতরে ঢুকলো এক বুড়ি মহিলা। গায়ে জড়ানো লাল ঢুকঢুকে শাড়ি, মাথায় সাদা চুল,চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। কোমড় নুইয়ে হাতে ট্রে নিয়ে কাঁপতে কাঁপতে আসছে বুড়িটি। মৃদুল তাকে দেখেই শক্ত করে চেপে ধরলো আশরাফের হাত। থমথমে কণ্ঠে বললো,“দোস্ত এ আবার নীলিমা না তো।”

আশরাফ নিজেকে যথেষ্ট ধাতস্থ করে বললো,“না এই মেয়ে নীলিমা হবে কেন এ নিশ্চয়ই পাত্রীর দাদি-টাদি হবে।’

বুড়ি মহিলাটি এক হাত ঘোমটা টেনে লাজুক ভঙ্গিতে সামনের চেয়ারে বসলো। আদুরে স্বরে বললো,“কি কইবেন কন আমিই নীলিমা।”

সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সবাই থতমত খেল। মৃদুল বললো,“আমনে নীলিমা।”

বুড়িটির লাজুক কণ্ঠস্বর,“জে আমি নীলিমা। আমনের আব্বার বন্ধুর মাইয়া।”

সঙ্গে সঙ্গে কুপকাত মৃদুল। কারণ সে জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়েছে বিছানায়। উপস্থিতি সবাই মৃদুলের কান্ডে হতভম্ব হয়ে গেল।’

#চলবে….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আজকের পার্টটা হয়তো খুব একটা ভালো হয় নি। এর জন্য আমি খুবই দুঃখিত। আসলে শরীরটা ভালো নেই। দু’দিন যাবৎ গল্প দিচ্ছি না তাই দিলাম।]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here