প্রেম_আমার♥ #পার্ট-১১,১২♥ #Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥ . 🌺

0
444

#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-১১,১২♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
– Excuse me ভাইয়া! অগ্নি ভাইয়া কোথায় জানেন কি?
.
– অগ্নি ভাই? উনি তো কি একটা কাজ আছে বলে ফাংশন ছেড়ে বেড়িয়ে গেলেন। কেনো বলুন তো?
.
– একচুয়ালি, আমি উনার বোন।
.
– ওহ আপনি তাহলে অনন্যা?
.
– জ্বী ভাইয়া।
.
– আসসালামুআলাইকুম ভাবী থুক্কু আপু!
.
– ওয়ালাইকুম আসসালাম। এক মিনিট একট মিনিট আপনি আমাকে ভাবী বললেন কেন?
.
– না ইয়ে মানে মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেছে। সরি ভা…. না না অপু।
.
বলেই ছেলেটা দৌড় লাগালো। অদ্ভুৎ তো! উনার মাথায় বোধহয় গন্ডগোল ছিল। যাই হোক এখন আমি বাড়ি যাবো কিভাবে? গাড়ি আব্বুর কাছে অফিসে, বাইক তো ভাইয়ার কাছে আর আমার স্কুটিটা তো বাড়িতেই ফেলে এসেছি। দিন হলে প্রবলেম ছিল না কিন্তু রাত হয়ে এসেছে। এখন একা যাওয়াটা ঠিক হবে তো? তার থেকে বরং ভাইয়াকে একটা কল করি।
দুবার কল করার পরও ভাইয়া ফোনটা ধরলো না। সাদা বিলাইটাও যে স্টেজ থেকে নেমে কোথায় গেল আল্লাহ মালুম। এখন কি করবো আমি? থাক একাই যাই কি আর এমন হবে? একটা রিক্সা নিবো আর সোজা বাসায় গিয়ে নামবো।
ভেবেই হাঁটা ধরলাম রিক্সার উদ্দেশ্যে।
.
.
– অগ্নি কি ম্যাড হয়ে গেছে? ফোনটাও পিক করছে না! শিট! (রেগে)
.
নাফিজ নামক ছেলেটা যাকে অনন্যা অগ্নি কোথায় আস্ক করেছিল সেই ছেলেটা নীবিড়ের কাছে গিয়ে বলে উঠলো,
.
– ভাই ভাই অনন্যা আপু অগ্নি ভাইয়ের খোঁজ করছিলো। আমি বলছি ভাই একটা কাজে গেছে।
.
– এই নাফিজ ও কি একা ছিল নাকি?
.
– জ্বী ভাই। একাই তো ছিলো। সাথে তো আর কাউকে দেখি নি।
.
– ড্যাম ইট! (চেঁচিয়ে)
.
বলেই নীবিড় স্টেজের পেছন থেকে বেড়িয়ে ছুট লাগালো অনন্যার খোঁজে।
ভার্সিটির গেট থেকে বেরোতেই ওর মনে পড়লো অগ্নির ফোন থেকে অনন্যার নাম্বার নিয়ে রেখেছিল সে। তাই অনন্যার নাম্বার খুঁজতে লাগলো।
.
🍁
.
– আ…আপনারা কারা? এভাবে আমার পথ আটকালেন কেনো? প্লিজ সরে দাঁড়ান। আমি বাড়ি যাবো।
.
– হ্যা কি বলে রে মাল টা? সরে দাঁড়াবো?
বলেই ভয়ংকর ভাবে হাসতে লাগলো ৪ জন ছেলে মিলে।
.
( তখন আমি রিক্সা পাচ্ছিলাম না বলে এগোতে শুরু করেছিলাম। হয়তো সামনে পাবো এই আশায়। কিন্তু কিছুদূর এগোতেই আমার পিছু নেই কয়েকজন ছেলে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে এরা নেশাগ্রস্থ। ঢুলতে ঢুলতে এগিয়ে আসছিলো ওরা আমার দিকে। ওদের হাত থেকে বাঁচতেই দৌড় লাগাই আমি। আমাকে পালাতে দেখে তারাও আমার পেছনে ধাওয়া শুরু করে দেয়। এক সময় ছুটতে ছুটতে একটা ফাঁকা জায়গায় এসে পড়ি আমি। আর ওরা সুযোগ পেয়ে আমাকে ঘিরে ধরে আটকে দেয়।)
.
– দে…দেখুন পি….প্লিজ আমাকে যেতে দিন। নাহলে আমি কিন্তু চিৎকার করে লোক জড়ো করবো বলে দিলাম।
.
– তাই নাকি ফুল্টুসি! তুমি তো দেখি কোথাই বলতে পারছো না। চিৎকার কি করবে ডার্লিং? আজ তোমাকে কে বাঁচাবে সুন্দরী? (একজন বলে উঠলো)
.
– এতো সুন্দর খাসা মাল কি ছাড়া যায় নাকি? (অন্য আরেক জন)
.
বলেই বিকট শব্দে হাসা শুরু করলো মাতালগুলো।
আমার এদিকে জান বের হয়ে যাচ্ছে। গলা দিয়ে ভয়ের কারণে আওয়াজো বের হচ্ছে না। তাহলে কি আজই আমার সব শেষ হয়ে যাবে? কাল পত্রিকায় কি আমার বিদ্ধস্ত ছবির সাথে বড় বড় হেড লাইনে লেখা থাকবে,
” ভার্সিটি পড়ুয়া একজন ছাত্রী ধর্ষনের স্বীকার।”? না না আল্লাহ এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারেনা। এসব ভেবেই চোখ থেকে অঝড়ে জল গড়িয়ে পরছে। পায়েও শক্তি পাচ্ছি। কেমন যেন সবকিছু ঘোলাটে লাগছে।
.
এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো, আমি তাড়াহুড়ো করে রিসিভ করে “ভা…ভাইয়া, বাঁচাও” এটুকু বলতেই একজন হুট করে আমার ফোনটা এক ঝটকায় কেড়ে নিলো। নিয়েই আমার দিকে এগোতে লাগলো।
.
– এই এটাকে কি এখানেই খেয়ে ফেলবো নাকি আমাদের গোডাউনে নিয়ে যাবো?
– ভাই এখানেই কাজ সেরে ফেলো লোকজন এদিকটায় আসে না। আর মালটা এতোটাই হট যে আমার আর তর সইছে না।
.
বলেই একজন আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার হাত চেপে ধরলো। আমি ছুটাছুটির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে লাগলাম। গায়ে যতটুকু শক্তি ছিল তা দিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর ক্রমাগত চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু পারছিনা আমি।
আরেকজন এসে আমার শাড়ির আঁচলে হাত দিতে উদ্দ্যত হওয়া মাত্রই ঝড়ের গতিতে একটা বাইক আমার সামনে চলে আসে। হেলমেট লাগানো থাকায় মানুষটাকে চিনতে পারছিনা। আর চোখে আলো লাগায় সবাই চোখ ঢাকতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
বাইকটা আমাদের কেন্দ্র করে রাউন্ড দিতে লাগলো। তা দেখে ছেলেটা আমার হাত ছেড়ে দিলো।
.
– এ কে রে তুই? এখানে কাজ চলছে দেখতে পারছিস না? যা নিজের রাস্তা মাপ।
.
লোকটা বাইক থামিয়ে হেলমেট খুলতেই যেনো আমি প্রাণ ফিরে পেলাম। অজান্তেই ঠোটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো আমার। মনে মনে আল্লাহকে লাখ লাখ শুকরিয়া জানাতে লাগলাম।
.
– নিজের রাস্তা মাপতেই তো এসেছি। তা কি যেনো বলছিলি তোরা কাজ করছিস রাইট? হুম তো তোরা তোদের কাজ কর আর আমি আমার কাজ করি। সিম্পল।
.
ওদের মধ্যে একজন ইতিমধ্যে কাঁপা শুরু করে দিয়েছে। কাঁপাকাঁপা গলায় ছেলেটা বলে উঠলো,
– ভা…ভা…ভাই! আ..আমাকে মাফ করে দেন। আ…আমি বসের কথা এসে ভুল করে যাচ্ছিলাম। আ…আমার কোনো দোষ নাই ভাই।
.
নীবিড় ভাইয়া বাঁকা হেসে ছেলেটার কাছে গিয়ে ছেলেটার গাল টেনে বলে উঠলো,
– জানি তো আমি। ভয় পাস না। আমি কিচ্ছু করবো না তোদের। (সামনের দিকে তাকিয়ে) কিন্তু অনেক কিছুই করবো।
.
বলেই ছেলেটার হাত মুচড়িয়ে ধরে হিংস্র রূপ ধারণ করে বলে উঠলেন,
– এই হাত দিয়ে ওর আচল ধরতে গেছিলিস তাইনা?
ছেলেটা ব্যাথায় কুকিয়ে কাকুতিমিনতি কর‍তে লাগলো। নীবিড় ভাইয়ার ফেস দেখে আমি আরোও ভয় খেয়ে গেলাম যেন। উনার চোখ থেকে লাভা নির্গত হচ্ছে এমন লাগছে, লাইটের আলোয় তা স্পষ্ট। উনাকে এখন প্রচুর হিংস্র একজন প্রাণীর সাথে তুলনা করা যেতে পারে সহজেই।
.
বাকি ছেলেগুলোর মধ্যে যে লিডার সে বাকি ছেলেগুলোকে উদ্দেশ্য করে রেগে বলে উঠলো,
– এই তোরা দাঁড়ায় দাঁড়ায় কি দেখছিস? মার ব্যাটাকে।
.
বসের কথা শুনে তার বাকি চ্যালাগুলো এগোতেই নীবিড় ভাইয়া গর্জন করে উঠলেন, এগিয়ে গিয়ে দুজনের গলা শক্ত করে চেপে ধরলেন। ছেলেদুটো ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছে। দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে এমন অবস্থা। একটু আগে যার হাত মুচড়ে দিয়েছিলেন সেই ছেলেটা হাত ধরে রাস্তা পড়ে থেকেই তার বসকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
.
– বস উনিই সাদমান ভাই!
.
ছেলেটির কথা শুনে নিমিষেই বাকি তিনজনে ভয়ে জমে ফ্রিজড হয়ে উঠলো, তাদের বস কাঁপাকাঁপা গলায় বলে উঠলেন,
– সা…সা…সাদমান ভাই!!!
বলেই পালাতে নিলে নীবিড় ভাইয়া ছেলেদুটোর গলা ছেড়ে ওদের ফেলে দিয়ে ওদের বসকে ধরে ফেললো। উনার দুহাত নিজের হাতে ধরে মোচড় দিতে লাগলো আর ছেলেটা ভয়ে প্যান্ট ভিজিয়ে ফেললো।
.
তা দেখে নীবিড় ভাইয়া হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
– কিরে নাম শুনেই হাওয়া ফুসসসসস….! এক ঠ্যালায় প্যান্ট ভিজিয়ে ফেললি দেখছি। ছিঃ ছিঃ মেয়ে মানুষের সামনে ভয়ে হিশু করে দিলি? সেম অন ইউ।
.
বলেই আছাড় মেরে ছেলেটাকে ফেলে দিলো নীবিড় ভাইয়া! দিয়েই ছেলেটার বুকের উপর পা তুলে দিলো। ততক্ষণে বাকি ৩ জন নিজেদের জান নিয়ে হাওয়া।
.
– ভা…ভাই…! ছেড়ে দিন আমাকে। আর এমন ভুল হবে না ভাই কসম।
.
– হাহাহাহাহাহাহ! ছেড়ে দেবো আচ্ছা যা তোর মর্জি!
.
বলেই ছেলেটাকে উঠিয়ে সজোড়ে রাস্তার সাইডে থাকা টিনের ওপর নিক্ষেপ করেন। ছেলেটা ব্যাথা আহহহ করে উঠছে বারবার। উনি আবাও ছেলেটাকে উঠিয়ে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করেন। মারতে মারতে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন উনি রাস্তায়।
.
আমার এমনিতেই এসব মারামারি সহ্য হয়না। তারওপর যদি রক্তারক্তি হয় তাহলে তো আর কথায় নেই।
আমি আর সহ্য না করতে পেরে মাথা ঘুরে ঠাস করে পড়ে গেলাম। উনি আমার পরে যাওয়া দেখে ছেলেটাকে ছেড়ে এক ছুটে আমার কাছে এসে বসে পরেন। আমার মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে আমার গাল ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে আমার নাম চিৎকার করে বলতে থাকেন। এরপর আর আমার কিছু মনে নেই।
.
🍁
.
আমার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন নিজেকে আমার বেডরুমে আবিষ্কার করলাম। আমার এক পাশে আমার আম্মু আর একপাশে আব্বু। আম্মু নিঃশব্দে চোখের জল ফেলছে। ভাইয়া মুখ কালো করে অপরাধীর দৃষ্টিতে নিচের দিকে চেয়ে আছে। আর নীবিড় ভাইয়া দরজায় হেলান দিকে এক পা ভাজ করে এক হাতে দু আঙুল দিয়ে মাথায় স্লাইড করে চলেছেন।
.
আমি চোখজোড়া পিটপিট করে খুলে কাঁপাকাঁপা গলায় ভাইয়া কে ডেকে উঠলাম। এটা আমার অভ্যেস। আমার সাথে যাই হোক না কেন, ভাইয়ার সাথেই যতই ঝগড়া করি না কেন সবার আগে আমি ভাইয়াকেই ডাকি।
আমার ডাক শুনে ভাইয়া মুখ তুলে আমার দিকে তাকালো। চোখে জল চিকচিক করছে ভাইয়ার। ভাইয়ার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে যে সে এক ছুটে আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরতে চাইছে কিন্তু হয়তো কোনো কারণে, কোনো অপরাধবোধ থেকে আসতে পারছে না।
.
আম্মু আমার মুখে ছোট ছোট চুমু এঁকে দিতে দিতে বলে উঠলেন,
– অনু তুই ঠিক আছিস মা!
.
এদিকে আব্বু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।
.
আমি আম্মু আব্বুর দিকে তাকিয়ে এক নজর তাকিয়ে ভাইয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে উঠলাম,
– ভা..ভাইয়া..! আমার কা..কাছে আয়।
.
ভাইয়া আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না। এক ছুটে আমার কাছে এসে আমাকে নিজের বুকে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো,
– বোন, আমাকে মাফ করে দে রে। আর কক্ষনোও এমন ভুল হবে না আমার। তোর কোথায় লেগেছে বল আমাকে। ব্যাথা পাইছিস? আমার জন্য হলো তাইনা রে? আমি খুব পচা। তুই ঠিকই বলতি রে। আমি পচা খুব পচা! আমি আমার বোনটা কে আগলে রাখতে পারলাম না।
.
ভাইয়ার কথায় আমারও চোখ থেকে পানি পড়া শুরু হয়ে গেল। আমি হাত দিয়ে ভাইয়ার চোখের পানি মুছে দিয়ে মুখে হাসির রেশ টেনে বলে উঠলাম,
– ভাইয়া তুই তো বড়। এতো ধ্যামরা একটা ছেলে হয়ে কাঁদছিস! কুছ তো সারাম কার। আর আমি ঠিক আছি ভাইয়া। ঠিক সময়ে নীবিড় ভাইয়া চলে এসেছিল তো।
.
ভাইয়া কান্না থামিয়ে মুচকি হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে নীবিড় ভাইয়ার কাছে গিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরলো,
নীবিড় ভাইয়া, ভাইয়াকে শান্ত করার জন্য বলে উঠলো,
– আরে ব্যাপার না। ও শুধু তোর বোনই না আমারও…… বলে থেমে গিয়ে ভাইয়াকে খাটে এনে বসালেন। আর আম্মু আব্বুকে বলে উঠলেন,
.
– মামুনি, বাপী ডিনার এর ব্যবস্থা করো। সবাই না খেয়ে আছে সেই বিকেল থেকে।
.
আম্মু আর আব্বু ভাইয়ার দিকে অভিমানে ভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমাদের রেখে রুম ত্যাগ করলেন।
.
.
.
.
চলবে………………………❤
#প্রেম_আমার♥
#পার্ট-১২♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥
.
🌺
.
– শুনো মেয়ে তুমি আর আমাকে ডিস্টার্ব করবা না। ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া কাল তোমার জন্য আমার বোনের কতো বড় সর্বনাশ হতে পারতো?
লিসেন, এবার যদি তুমি আমাকে কল দাও ওর এনি টাইপ অফ কমিউনিকেশন করার ট্রাই করো, দেন আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।
.
– অগ্নি…প্লিজ আমার কথাটা একবার শুনো। (কান্না জড়িত কন্ঠে)
.
– নো ওয়েস। এন্ড নো মোর ওয়ার্ডস। জাস্ট স্টে ওয়ে ফ্রম মি। আল্লাহ হাফেজ!
.
বলেই অগ্নি ফোনটা কেটে নিজের চুল টেনে ছিঁড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ওদিকে নিত্য ভাবতেও পারেনি অগ্নিকে জোড় করে ডেকে নিয়ে গিয়ে সে এতো বড় একটা ভুল করে বসবে। নিত্যর এখন নিজের গালে নিজেকেই থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করছে। না জেনেই এতো বড় একটা ভুল হয়ে গেল। নিত্য অনন্যা কে সামনাসামনি না দেখলেও অগ্নির বোন হিসেবে অনেক স্নেহ করে। সবসময় অগ্নিকে জ্বালাতন করলেও অনন্যার খোজ খবর ফাঁকেফাঁকে নেয় সে। তার জন্য অনন্যার কতো বড় একটা বিপদ হয়ে যেতে পারতো ভেবেই ঢুকরে কেঁদে উঠছে সে।
.
.
– এইযে সাদা বিলাই…!
.
– হোয়াট ডু ইউ মিন বাই সাদা বিলাই?
.
– না মানে ওই দেখেন জানালায় একটা বিড়াল উঁকি মারছিলো। ওটাকেই সাদা বিলাই বলেছি। হেহে। (জোড়পূর্বক হাসার চেষ্টা করে)
.
– তা মিস অনন্যা, আমি যেখানেই থাকি সেখানেই তোমার সাদা বিলাই চলে আসে। ব্যাপারটা অদ্ভুত না? (এক সাইডের ভ্রু উঁচু করে)
.
আমি কিছুটা ভড়কে গেলাম। আসলেই আমার মুখের কোনো লাগাম নেই। উনাকে দেখলেই আমার পেট থেকে মুখে অটোমেটিক্যালি চলে আসে একটাই নাম, “সাদা বিলাই, সাদা বিলাই এন্ড সাদা বিলাই!”
.
– আসলে ভাইয়া, সাদা বিলাই লাভস ইউ টু মাচ! তাই আপনি যেখানে সাদা বিলাইও সেখানে তাই এরকম হয়। সাদা বিলাই আপনাকে ছাড়া থাকতেই পারে না। না না না।
.
আমার কথাটা শুনে নীবিড় ভাইয়ার মুখটা ঠিক দেখার মতো হয়েছে। উনি ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না উনার এক্সপ্রেশন টা ঠিক কি রকম হওয়া উচিৎ। উনি ভ্রু কুঁচকে কিছু একটা বলতে নিলেই ভাইয়া রুমে চলে আসে। আর উনার বলা হয়ে উঠেনা।
.
– কার ফোন ছিলো ভাইয়া?
.
– ফ্রেন্ডের রে…! আচ্ছা তোরা আয় খেতে আম্মু ডাকে।
.
আমি ঠোট উলটে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দুহাত বাড়িয়ে বলে উঠলাম,
– ভাইয়া…! কোলে…!
.
ভাইয়া আমার কথা শুনে চোখ বড়বড় করে ফেললো। ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,
– অনু তোর পায়ে ব্যাথা করছে?
.
নীবিড় ভাইয়াও আমার পায়ের দিকে ফিরে তাকালেন হয়তো বুঝতে চাইছেন কোথায় চোট পেয়েছি। আমি ওদের অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে বলে উঠলাম,
– আরে পা দেখে লাভ নাই, পা একদম ঠিক আছে। আসলে কোলে উঠতে ইচ্ছে করছে। হিহি। ডাইনিং টেবিল পর্যন্ত নিয়ে যা প্লিজ।
.
ভাইয়া আর নীবিড় ভাইয়া দুজনেই হেসে উঠলো আমার কথায়। ভাইয়া হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
– এতো বড় হয়েছিস তাও তোর বাচ্চামো গেলো না। (নীবিড় ভাইয়ার দিকে ফিরে) বুঝলি নীবিড় এর মাথায় এখনো বুদ্ধির বিকাশই হয় নি তাতেই ভার্সিটিতে পড়ছে। ভাবা যায়।
.
নীবিড় ভাইয়া মুচকি হেসে ভাইকে ইশারা করলো আমাকে কোলে নিতে। ভাইয়া আমাকে কোলে উঠিয়ে হাটতে নিতেই থেমে গেল। ভাইয়া হয়তো গায়ে শক্তি পাচ্ছে না। পাবেই বা কি করে বেচারার এমনিতেই হাই প্রেশার। আমার জন্য অনেক টেনশনে ছিল তাই হয়তো প্রেশারটা বেড়েছে। নীবিড় ভাইয়া, ভাইয়ার অবস্থা বুঝতে পেরে বলে উঠলেন,
.
– অগ্নি শরীর খারাপ লাগলে ছেড়ে দে। পড়ে তুইও পড়বি সাথে বোনেরও কোমড় ভাঙবি।
.
আমিও সাদা বিলাইয়ের কথায় যথারীতি সম্মতি দিয়ে ভাইয়াকে বলে উঠলাম আমাকে নামিয়ে দিতে। কিন্তু ভাইয়ার জেদ সে আমাকে কোল থেকে নামাবে না। যাই হয়ে যাক না কেন ঠিক পারবে সামলাতে। ভাইয়া মনে মনে কষ্ট পাচ্ছে এই ভেবে কোনো না কোনো ভাবে সে দোষী।
.
নীবিড় ভাইয়া আমাদের কাছে এসে ভাইয়ার কোল থেকে আমাকে নিজের কোলে নিয়ে বলে উঠলো,
– অগ্নি তুই পায়ের দিকটা ধর, আমি সামনে ধরতেছি। দু ভাই মিলেই ওরে কোলে নিয়ে যাই।
.
আমি তো সাত আসমান থেকে ধপাস করে পড়ে গেলাম। হায় রে কি হচ্ছে। দুজন এক সাথে আমাকে কোলে নিচ্ছে।
অগ্নি ভাইয়া হেসে দিয়ে আমার হাটুর নিচে ধরে কোলে নিলো। এভাবেই দুজনেই আমাকে নিয়ে যাচ্ছে। আর আমি আহাম্মকের মতো চেয়ে চেয়ে দেখছি দুজনকে। নীবিড় ভাইয়া ধরাতে কেনো যেন অন্যরকম একটা অনুভূতি হচ্ছে। হৃদপিন্ডটা খুব জোড়ে জোড়ে লাভ ডাব লাব ডাব করে উঠছে।
.
আমাদের ৩ জনকে এভাবে সিঁড়ি থেকে নামতে দেখে আম্মু আব্বুর মুখ গোলগাপ্পার সাইজ ধারণ করলো নিমিষেই। এভাবে কিছুক্ষণ হা করে মশা মাছি খেয়ে তারা দুজনেই একসাথে হু হা করে হেসে উঠলো।
আম্মু হাসতে হাসতে আব্বুকে বলে উঠলো,
.
– দেখো দেখো ছেলে দুটোর কান্ড দেখো। (আম্মু)
– হায়রে ও কি আটার বস্তা যে ওভাবে দুজনে মিলে কোলে করে আনছিস! (আব্বু)
.
আমি আম্মু আব্বুর কথায় মুখ ফুলিয়ে ভ্রু কুঁচকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম আমি। আমার মুখ ফোলানো দেখে যেনো সবার হাসিই দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ভাইয়া আর নীবিড় ভাইয়া আমাকে ডায়ানিং টেবিলের চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসে পড়লেন। আমার এক পাশে ভাইয়া আর এক পাশে নীবিড় ভাইয়া বসলেন। ভাব খানা এই আমি হলাম মেমসাহেব আর তারা আমার বডিগার্ড।
সবাই হেসে খেলেই ডিনার শেষ করে নিলাম। ভাইয়া খাওয়া শেষে প্রেসারের মেডিসিন নিয়ে নিলো।
.
– মামুনি আমি আসি তাহলে।
– বাবুই থেকে যা নাহয়।
– না মামুনি আজ না অন্য কখোনও। আর অগ্নি, টাইম মতো ভার্সিটি আসবি। তোর সাথে কিছু হিসেব বাকি আছে।
বলেই ভাইয়ার মাথায় চাটি মেরে চলে গেলেন।
.
🍁
.
ফোনটা হাতে নিয়ে ওয়াইফাই কানেক্ট করলাম। উদ্দেশ্য সাদা বিলাইয়ের আইডি খুঁজে বের করা। কিন্তু কি অদ্ভুদ সার্চ মেরে শুধু বিড়ালের ছবিই আসছে। ব্যাপারটা মাথায় ঢুকছে না আমার। একটু ভালো করে দেখতেই প্রমাণ পেলাম আমি কতো বড় উল্লুক! কি পরিমাণ গাধা, না না গাধা তো মেল জেন্ডার, আই মিন গাধী হলে আমি “সাদা বিলাই” লিখে সার্চ করছি!
জ্বীবে একটা কামড় দিয়ে নিজেই নিজের মাথায় একটা চাটি মেরে “সাদমান শাহরিয়ার নীবিড়” লিখে সার্চ করলাম।
প্রথমেই পেয়ে গেলাম কারণ ভাইয়ার সাথে মিউচুয়াল ছিল। প্রোফাইল পিকটা দেখে একটা বড় সড় ক্রাশ খেলাম। পিকটায় ভাইয়া আর সাদা বিলাই দুজন দুজনের কাঁধে হাত দিয়ে ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে রেখেছে। কি মারাত্মক সেই হাসি। একটা মেয়েকে এই হাসি দিয়ে কি সাংঘাতিক ভাবেই না খুন করতে পারেন উনি। ক্যাপশনে দেওয়া আছে, “পাগলে তু মেরা ভাই হ্যায়!” ইশশ কি বন্ধুত্ব! কারো নজর না লাগে।💕
.
হঠাৎ কভার ফোটোর দিকে চোখ পড়তেই দেখি একটা মেয়ে ভেংচি কেটে রয়েছে আর সাদা বিলাই মেয়েটার গাল টেনে শয়তানি হাসি মুখে ঝুলিয়ে রেখেছেন। এটা দেখে আমার কেন জানি বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। আর ঠিক তখনই কারেন্ট ঠাস করে চলে গেল আর ওয়াইফাই ও অফ হয়ে গেল।
আমি ফোন টা রেখে দিয়ে ঠোট উল্টে বসে রইলাম।আচ্ছা আমার এরকম ফিল হচ্ছে কেন? কিছুই ভালো লাগছেনা।
এসব ভাবতে ভাবতেই বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতে একসময় চোখজোড়া বুজে ঘুমিয়ে পড়লাম আমি।
.
🍂
.
সকাল সকাল ভার্সিটি গিয়েই রাত্রির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। ওকে গতকালকের সব ঘটনা খুলে বলতেই বেচারী কান্না করা শুরু করে দিয়েছে। একটু পর পর হেচকি তুলতে তুলতে বলে উঠছে,
.
– অনু রে…! সব আমার জন্য হলো। আমি আব্বুর সাথে কেনো গেলাম। আর আব্বুর সাথে তোকেও নিয়ে কেনো গেলাম না?
.
আমি গালে হাত দিয়ে ওর কান্না উপভোগ করছি। সত্যি বলতে আমার খারাপ লাগছেনা ব্যাপারটা। বেস্টু যখন ভ্যাতকান্দুরীর মতো কান্না করে এর থেকে মজার সিন বোধহয় আর দুটো হয় না। আমি বেশ কিছুক্ষণ ওকে কাঁদতে দিয়ে পরে বুঝিয়ে টুঝিয়ে থামালাম। আহারে বেচারী।
পরক্ষণে আমার সাদা বিলাইয়ের গার্ল ফ্রেন্ডের কথা মনে পড়লো, খুবই এক্সাইটমেন্ট নিয়ে একপ্রকার চেঁচিয়েই বলে উঠলাম,
.
– রাত্রি জানিস নীবিড় ভাইয়ার গফ আছে! অনেক সুন্দরী!
.
বাট দূর্ভাগ্য কথাটা শুধু রাত্রির কানে না, আমাদের আশেপাশে বসে থাকা কিছু মেয়েদের কানেও চলে গেছে। আর তা শুনেই তারা চোখ বড় বড় করে কানাঘুষো শুরু করে দিয়েছে। বেশ বুঝতে পারছি এখানে আর ১ সেকেন্ডও থাকা চলবে। না হলে মেয়েগুলো আমার ওপর ঝাপিয়ে পড়বে নির্ঘাত!
রাত্রিকে চোখের ইশারায় বললাম উঠতে। কিন্তু ও পাল্টা ইশারা করে বলছে “কেনো” আমি আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে রাত্রিকে একটা জোড়ে চিমটি কেটে ভো দৌড় দিলাম। সাথে সাথে মেয়েগুলো পেছন থেকে “এই আপু দাড়াও, এই মেয়ে” বলে চিৎকার করা শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু তাতে আমার পায়ের স্পিড আরোও বেড়েই চলেছে। আমাকে পালাতে দেখে রাত্রিও আমার পেছনে ছুট লাগালো।
এদিকে আমি আল্লাহ আল্লাহ করে যাচ্ছি যাতে আমি এই নিউজের প্রচারক তা গুণাক্ষরেও টের না পায়। নাহলে স্বয়ং শনি গ্রহ এসে হাল্লা বোল করবে আমার কপালে।
.
.
.
চলবে……………………❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here