মৃগতৃষ্ণিকা #পর্বঃ১৯

0
318

#মৃগতৃষ্ণিকা
#পর্বঃ১৯
ধরণীতে দিনের আলো কেটে গিয়ে অন্ধকার নেমে এলো। রাত যত গভীর হতে লাগলো ততই অন্দরমহলে সুলায়মান ও বেগম জুলেখার কক্ষের দুয়ার জুড়ে দুশ্চিন্তারা বিচরণ করতে লাগলো। এত বড় একটা কাজ আজ রাতে করতে চলেছে হেমন্তি আর সিরাজ দুজনেই ভীত হয়ে আছে। সিরাজ হেমন্তি ও আব্দুল চাচা সুলায়মান এর কক্ষের সামনে দাড়িয়ে আছে তালা ভাঙার বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে। আব্দুল ভীত স্বরে বলে উঠল – আমি কিন্তু ভিতরে যামু না বাজান।আমার ভয় করে যদি বেগম জুলেখারে দেখতে পাই তাইলে হয়তো আমি আইজই শেষ।

যদি বেগম জুলেখা যদি জানতে পারে আপনি তালা ভেঙেছেন তবে তো আর রক্ষা নাই চাচা!
কথাগুলো বলেই হেমন্তি ফিক করে হেসে ফেললো।
ভয়ে কাচুমাচু হয়ে আব্দুল বলে উঠল – না না বাপু আমি আর এসবের মধ্যে নেই।আ আ আমি বরং আমার কক্ষে কাঁথামুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ি!!!

– আরে চাচা তালা তো আগে ভাঙুক তারপর না হয়…….
সিরাজের কথা শেষ না হতেই আব্দুল চলে যেতে শুরু করলো।
– আরে আরেএএ
হেমন্তি কে উদ্দেশ্য করে সিরাজ বললো তুই আর ঠিক হবি না, তাইনা?নে এবার আব্দুল চাচার ভাগের কাজটা তুই কর।
হেমন্তি ও বাধ্যের মতো সিরাজের কাজে সাহায্য করছিলো।সিরাজ তালায় জোরে জোরে আঘাত করছিলো টু টাং শব্দে অন্দরমহল জুড়ে তোলপাড় শুরু হলো কেমন যেন পরিবেশটা অস্বাভাবিক আচরণ করছিলো ঝড়ের ন্যায় তীব্র গতিতে বাতাস বইতে লাগলো রাজবাড়ী তে। তবুও সিরাজ থামছে না প্রায় ঘন্টাখানেক সংগ্রাম করার পর অবশেষে জনাব সুলায়মান এর কক্ষের তালা ভাঙতে সক্ষম হলো ওরা।ঝড়ও হঠাৎ থেমে গেলো।
একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে হেমন্তিকে ইশারা করলো তার পেছন পেছন অনুসরণ করতে।
হাতে একটা মশাল নিয়ে ধীর পায়ে এগোতে লাগলো ওরা দুজন।
একটা শুকনো ঢোক গিলে বেগম জুলেখা ও সুলায়মান এর কক্ষে চোখ বুলাতে লাগলো সিরাজ, হুবহু একই আছে তাদের কক্ষটি।কত পরিপাটি!
হেমন্তি আর সিরাজ দুজন দুজনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে এরপর চোখে চোখে মত বিনিময় করে।দুজন দুদিকে পাতালঘরের চাবি খুঁজতে শুরু করলো হন্তদন্ত হয়ে পুরোটা কক্ষ জুড়ে খোঁজাখুঁজি করেও পাতালঘরের চাবি খানা খুঁজে পেলো না।দুজনেই হাঁপাতে হাঁপাতে মেঝেতে বসে পড়লো হুট করেই। সিরাজ বলে উঠল – নাহ্! এভাবে হবে কক্ষের দরজার তালার মতো করেই ভাঙতে হবে পাতালপথ।

সেখানে তো কোনো তালা নেই কেবল একটা চিহ্ন মাত্র খুবই নগন্য ছিদ্র যার দ্বারা পাতালঘরে যাওয়া যায়।আমরা তালা ছাড়া কি করে ভাঙবো? কথাগুলো বললো হেমন্তি। সিরাজ প্রতিত্তোরে বলল- পাতালপথটা আমাদের ভাঙতে হবে যে স্থানে চাবি দিয়ে খোলা হয় পাতালঘর সেই স্থান কুঠার দিয়ে খুঁড়ে ফেললে কেমন হয়?
– চেষ্টা তো করাই যেতে পারে।
সিরাজ অনবরত কুঠার দিয়ে সেই স্থানে আঘাত করে চলেছে কিন্তু না কোনোমতেই সেই স্থান খোঁড়া যাচ্ছে না।একটু ভাঙছেও না নড়ছেও না কোনো ক্ষতিই হচ্ছে না যেন।সিরাজ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে হেমন্তি ও যোগ দিয়েছে সাথে লোহার রড দিয়ে সেও চেষ্টা করছে পাল্লা দিয়ে কিন্তু না কোনোভাবেই পাতালঘরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না।একটা ইটের সন্ধানও এখন অবধি পাওয়া যায়নি ঘেমে নেয়ে সিরাজের গোসল করার মতে অবস্থা প্রায় ঘন ঘন শ্বাস নিতে শুরু করেছে হেমন্তি সিরাজকে দেখে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো – আমাদের মনে হয় থামা উচিৎ, আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে হয়তো এই রাস্তা খোলা সম্ভব নয়। তুই হাঁপিয়ে উঠেছিস এবার ছেড়ে দে পারবি না জনাব সুলায়মান এত কাঁচা কাজ করে যাননি।
হেমন্তির কোনো কথাই সিরাজ কানে নিলো না সে তার মতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শরীরের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে সে পাতালপথ ভাঙার বৃথা চেষ্টা করে চলেছে। সিরাজের হাত থেকে কুঠার আর লোহার রড টা মেঝেতে পড়ে তীব্র শব্দদূষণ করলো। আচমকাই এমন শব্দে হেমন্তি আঁতকে উঠল সিরাজ তার ডান হাত দিয়ে বুকের পাঁজর শক্ত করে চেপে ধরলো প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হচ্ছে তার বুকে ঠিক যেখানে কলিজা থাকে সেখানটায় আরও বেশি তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে আর সহ্য করা যাচ্ছে না সিরাজের চোখ দুটো বুজে আসছিলো মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। হেমন্তি অস্থির হয়ে সিরাজকে চেপে ধরে বসালো জিজ্ঞেস করলো বুকে কি প্রচন্ড ব্যথা করছে?
সিরাজ কোনো কথা বলে না তার চোখের আহত চাহুনি দেখে হেমন্তি বুঝে নিলো সিরাজের যন্ত্রণা।
দৌড়ে গিয়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে এলো সিরাজের মুখের সামনে ধরলো কিন্তু সিরাজ পানি পান করায় কোনো আগ্রহ দেখালো না সে ব্যথায় কাতর হয়ে আছে। তবুও হেমন্তি জোর করে এক ঢোক সমপরিমাণ পানি খাওয়ালো। আব্দুল চাচা আব্দুল চাচা বলে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো হেমন্তি। সিরাজ হাত চেপে ধরলো হেমন্তির, ভাঙা ভাঙা গলায় বলে উঠল – আ মা য় নিয়ে এত ব্যস্ত হতে হ হবে না আমি ঠিক আ ছিই।।।হাহ্
– খুব বেশি যন্ত্রণা হচ্ছে সিরাজ? হেমন্তির কন্ঠ ব্যকুল।

– না না। আমায় একটু সময় দে।

– সিরাজ! থামবি, আমি আব্দুল চাচাকে ডেকে আনি তোকে শুইয়ে দেই তাহলে হয়তো ভালো লাগবে।

– এই তীব্র যন্ত্রণায় আমি যদি মরে যাই!

কি বিষাদ মাখা বাক্যটা হেমন্তি সহ্য করতে পারলোনা মুখ চেপে ধরলো আচমকাই আকস্মিকভাবে চেপে ধরাতে সিরাজ এক দৃষ্টিতে অপলক চেয়ে রইলো।

– একদম চুপ। ভুলেও কোনোদিন এমন অলক্ষুণে কথা মুখেও আনবি না বলে দিলাম। শাসনের স্বরে বলে উঠল কথাগুলো।

চোখ থেকে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে হেমন্তির হাতে এসে স্পর্শ করলো।হেমন্তির চোখ থেকেও অশ্রু ঝরছে সিরাজের যন্ত্রণা যেন তার একার নয় এর ভাগিদার হেমন্তিও।

– ❝আমাকে বিনাশ করার আর কোনো অস্ত্র ছিলো না তোমার কাছে?? ❞

সিরাজ এর কথার অর্থ হেমন্তির মাথায় এলো না তবে সেদিকে তার খেয়াল নেই সে সিরাজ এর ব্যথায় কাতর অন্যকোনো উক্তি তার মন ঘোরাতে পারছে না।অস্থির হয়ে আব্দুল কে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো এত তীব্র গলার আওয়াজে পুরো অন্দরমহল যেনো কেঁপে উঠলো আব্দুল ও হন্তদন্ত হয়ে এক দৌড়ে এসে উপস্থিত হয়েছে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো- কি হয়েছে? কি হয়েছে?
হেমন্তি কান্নাভেজা চোখে চেয়ে রইলো আব্দুল এর দিকে বললো- চাচা সিরাজকে ধরে ধরে একটু বিছানায় শুইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন ওকে বুকের ব্যথায় ভীষণ পীড়া দিচ্ছে।
আব্দুল কথা না বাড়িয়ে সিরাজ কে ধরে ধরে জনাব সুলায়মান ও বেগম জুলেখার পালঙ্কে শুইয়ে দিলো এরচেয়ে বেশি দূরে যাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না।
হেমন্তি আব্দুলকে বললো একজন কবিরাজের ব্যবস্থা করতে। আব্দুল এই মধ্যরাতে বেরিয়ে পড়লো কবিরাজের খোঁজে, তার ভয়কে সে জয় করে এই মাঝরাতে বেরিয়েছে।
হেমন্তি সিরাজকে জিজ্ঞেস করলো – এখন কেমন লাগছে, খুব বেশি ব্যথা কি?
সিরাজ উত্তর দেয় না মাথা নাড়িয়ে কি বোঝাতে চাইলো বোধগম্য হলোনা হেমন্তির।
সিরাজ এর বুকে হেমন্তি হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো বললো চিন্তা করিস না এক্ষুনি কবিরাজ মশাইকে নিয়ে আব্দুল চাচা হাজির হবে একটু সহ্য কর।

হেমন্তির আকুলতা দেখে সিরাজের ওষ্ঠাধর জুড়ে হাসির ঝলকানি দেখা দিলো এত যন্ত্রণায় ছটফট করা মানুষটার মুখে হাসি দেখে ভড়কে গেলো হেমন্তি।
– কি হয়েছে?
– তোকে দেখছি!
– আমায়?
-হুম। এই মানুষ টা আমায় একদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলো হারানোর যন্ত্রণা আমি সেদিন হারে হারে টের পেয়েছিলাম আজ প্রকৃতি তাকে আমায় হারানোর যন্ত্রণা দিচ্ছে । কি নির্মম…….
আর বলতে পারলো সিরাজ না বাকশক্তি যেনো হারানোর পথে। হেমন্তি নতজানু হয়ে রইলো ধীর গলায় বললো- আমি তোকে হারাতে দিতে চাইনা আমায় হারিয়েছে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছি স্বপ্ন তবুও তোকে হারাতে দেইনি মনের মাঝে তোকে নিয়ে আবার স্বপ্ন বুনেছি।
কথাগুলো বলেই হেমন্তি খেয়াল করলো সিরাজ চোখ বুজে আছে কোনো সাড়াশব্দ নেই তার বলা কথাগুলো হয়তো শোনেনি আবার শুনতেও পারে।হেমন্তি ঝাঁকাতে লাগলো সিরাজকে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে কিন্তু না সিরাজ তার ডাকে সাড়া দেয় না হয়তো ব্যথার যন্ত্রণায় জ্ঞান হারিয়েছে।
কিছুক্ষণ পার হতেই আব্দুল হাঁপাতে হাঁপাতে কবিরাজকে নিয়ে পৌঁছেছে অন্দরমহলে। কবিরাজ মশাই কে নিয়ে সুলায়মান এর কক্ষে প্রবেশ করতেই হেমন্তি দৌড়ে এসে কবিরাজের পা জোড়া জাপ্টে ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো- যে করেই হোক আপনি সিরাজকে সুস্থ করে দিন কবিরাজ মশাই আপনি যা চান তাই দিবো দয়া করুন দয়া করুন আমায়!!! আহাহাহা আআআআ!

কবিরাজ মশাই হেমন্তি কে শান্ত হতে বললেন সে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে বলে আস্বস্ত করে। সিরাজকে ঘন্টাখানেক সময় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে বললো তার সমস্যা সে ধরতে পারছেনা তবে আন্দাজ করছে ভেতর এ বেশ জখম হয়েছে যা বাইরে থেকে বোঝা দায়।তরল জাতীয় পথ্য দিয়ে বলল আমি কিছুটা খাইয়ে দিয়ে যাচ্ছি বাকিটা তুমি নিয়ম করে তিনবেলা খাইয়ে দিও আমার মনে হয় সেরে যাবে। জ্ঞান ফিরলেই আমাকে জানাবে আমি এসে দেখে যাবো।
– কখন ফিরবে কবিরাজ মশাই?
-ধৈর্য ধরো মা শীঘ্রই জ্ঞান ফিরবে।।
এই মধ্যরাতে কবিরাজকে ডেকে এনেছে আব্দুল সেই আবার তাকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে এলো। সিরাজ এর মাথার পাশেই বসে বসে দোয়া পড়তে লাগলো হেমন্তি প্রার্থনা করছে খুব করে সৃষ্টিকর্তা যেনো তাকে নিরাশ না করে।
ভোর হয়ে এসেছে প্রায় ধরনীতে আলোর ঝলকানি উঁকি দিচ্ছে আব্দুল এসে আবার পৌঁছেছে সিরাজ এর জ্ঞান ফিরেছে কি না জিজ্ঞেস করতেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো হেমন্তি।
– চাচা আআআআ সিরাজ তো এখনও চোখ মেলে চাইলো না। একটা বার তাকাতে বলেন না চাচা আ আ!

আব্দুল হেমন্তিকে সান্ত্বনা দিতে দিতে বললো দেখবা শীঘ্রই সিরাজ বাবাজির জ্ঞান ফিরবো তুমি দোয়া করো মা।
অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে কিন্তু সে অপেক্ষা যেন শেষ হবার নয় এক একটা মুহুর্ত যেন এক যুগ সমান সময় নিচ্ছে।

-রূপা! রূপাকে ছেড়ে দাও আমার প্রাণ নিয়ে নাও তবুও রূপাকে ফিরে দাও!!”
কাঁদো কাঁদো স্বরে কেউ যেন কথাগুলো বলো উঠলো হেমন্তি পাশ ফিরে চেয়ে দেখলো সিরাজ বিরবির করে এসব বলছে।তারমানে সিরাজ এর জ্ঞান ফিরেছে কিন্তু জ্ঞান ফিরেই রূপার কথা বলছে বলে কিছুটা অবাক হলো হেমন্তি। ধড়ফড় করে সিরাজ এর মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো ঝুঁকে গিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল- সিরাজ! কি হয়েছে? ঠিকআছিস তো!
আচমকাই সিরাজ হেমন্তিকে জাপ্টে ধরলো চোখ বন্ধ অবস্থায় বলে উঠল – বিশ্বাস কর আমি রূপাকে তুলে দিতে চাইনি। বিশ্বাস কর!রূপাকে এনে দে আমার কাছে আমার রূপাকে আমি হারাতে চাইনা। আমায় ভুল বুজিস না হেমন্তি।
হেমন্তি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো সিরাজের কোনো কথাই বোধগম্য হয়না কিন্তু ফের প্রশ্ন করলো না বরং শান্ত করার চেষ্টা করলো সিরাজকে। শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল আমি আছি তো সিরাজ! আ আমি বিশ্বাস করি তো তোকে।শান্ত হ!
হুট করেই চোখজোড়া খুলে আবিষ্কার করলো হেমন্তি তার বক্ষদেশে। জাপ্টে ধরে আছে দুজন দুজনকে আচমকাই সিরাজ এক ঝটকায় দূরে ঢেলে দিলো হেমন্তিকে। আকস্মিক ধাক্কা খায় হেমন্তি এমন করে দূরে ঠেলে দেওয়াতে বুকে কিঞ্চিৎ ব্যথা অনুভূত হলো।
শুকনো ঢোক গিলে হেমন্তি অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সিরাজের দিকে। জনাব সুলায়মান ও বেগম জুলেখার পালঙ্কে শুয়ে আছে দেখে এক লাফে উঠে দাড়িয়ে পড়লো সিরাজ কপাল কুঁচকে নিয়ে বলল – একি আমি এখানে কেনো? এই পালঙ্কে আমার মতে ক্ষুদ্র মানবকে কি মানায়?

– মানা না মানার পরিস্থিতি তখন ছিলো না বুকের প্রচন্ড ব্যথায় তুই জ্ঞান পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছিস তখন তোকে নিয়ে বেশিদূর আগানো সম্ভব ছিলো না।

সিরাজ বুকে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে রইলো মনে পড়লো রাতের কথা। ভোরের আলো এসে অন্দরমহলে পৌছেছে সিরাজ আর দেরি না করে নিজের কক্ষের দিকে যেতে লাগলো। হেমন্তি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে।
__________
আজ মঙ্গলবার ফকির বাবাকে এই দিনেই পাওয়া যাবে। সিরাজ হেমন্তি কে তৈরি হতে বললো তারা এক্ষুনি বেরোবে নয়তো দেরি হয়ে যেতে পারে।আব্দুল কে নিয়ে সাথে নিয়ে ওরা বেরিয়ে পড়লো রাজবাড়ীর সবচেয়ে বিখ্যাত ফকিরের সন্ধানে তারা বেরিয়ে পড়লো। আব্দুল যেহেতু এই গ্রামেই বাস করে তাই তার চেনা-জানা রয়েছে একে একে দুজন ফকিরের সাথে সাক্ষাৎ হলো তাদের কিন্তু কেউ তারা পরিবানুকে চিনেন না বলে জানায়। আরো একজন ফকিরের সাথে তারা কথা বলে কিন্তু সেও পরিবানু কিংবা জোছনাকে চিনতে অস্বীকৃতি জানান। হতাশ হয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরতে লাগলো তারা এদিকে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে এলো। আছরের আযান পড়লো চারদিকে আর একজন ফকিরের সন্ধান মিললো তিনি একজন মহিলাকে নিয়ে তার খুপরি তে বসেছেন ওদের অপেক্ষা করতে বলা হলো।সিরাজ হতাশ স্বরে বলে উঠল -উনি যদি সেই ফকির বাবা না হন তবে আজকের মতো এখানেই সমাপ্তি ঘটবে আবার এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।
এই এক সপ্তাহে আরও সাতটি নিষ্পাপ শিশুর প্রাণ চলে যাবে আর আমরা কিচ্ছু করতে পারবো না।

হেমন্তি বললো- চিন্তা করিস না হয়তো উনিই আমাদের বলতে পারবেন সব ঘটনা। আশা রাখলে নিরাশ হবো না মনে হয়। জোছনার নাম শুনলেই তিনি চমকে উঠবেন সহজে স্বীকার করবে না কেউই তাকে ছলে বলে কৌশলে বাগে আনতে হবে।

যদি উনি জোছনার চিকিৎসা করিয়ে থাকেন তবে তো স্বীকার করবে নাকি।

চলবে,,,,,

#লেখাঃমুন্নি_ইসলাম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here