#অতিরিক্ত_চাই_তোকে
#পার্ট:০৫
আর্দ্র ভাইয়া আমার মুচকি হাসি দেখে ভ্রু কুচকালেন, তিনি আমাকে বলতে যাবেন তখনি তার ফোনে কল আসে! তিনি ফোন রিসিভ করে পাশে চলে যায়।
আর্দ্র ভাইয়া যাওয়ার পর আমি জলদি করে ফুচকা বিক্রি করা মামাটাকে বলি,,,
-“মামা এক প্লেট অনেক বেশি মরিচ দিয়ে বানাবেন, যাতে খেয়ে কান্না করে দেয়!”
আমার কথা শুনে লোকটি হতভম্ব হয়ে যায়। তিনি বলেন,,,,
-“কি কও মা, এতো ঝাল খাইতে পারবা?”
-“আরে মামা এটা আমার জন্য না, আমার সাথে যেই লোকটি এসেছে তারজন্য! আসলে তার মুখে কোনো স্বাদ নেই, তাই ডাক্টার বলেছে তাকে বেশি করে ঝাল খাওয়াতে তাহলেই স্বাদ ফিরে আসবে কিন্তু তিনি মানতেই চায় না, তাই আর কি। ”
আমার কথাটা তিনি বিশ্বাস করে ফেললেন।তিনি বললেন,,,
-“আচ্ছা মা তুমি খাড়াও আমি দিতাছি! ”
আমি মনে মনে বেশ হাসলাম।আর্দ্র ভাইয়ার কি হবে তা ভাবতেই আমার বেশ হাসি পাচ্ছে।
কিছুক্ষন পর আর্দ্র ভাইয়া আসলেন।
আমার প্লেটে ২ টা প্লেট দেখে তিনি চোখ ছোটো ছোটো করে জিজ্ঞেস করলেন,,,
-” ২ প্লেট খেতে পারবি?”
আমি মিষ্টি হেসে উওর দিলাম,,,
-“আমি কেন, আপনিও খাবেন তাই তো ২ প্লেট অর্ডার দিলাম! ”
তিনি আবারও নাক শিটকিয়ে বললেন,,,,
-“কখনো না!আমি এসব ফুটপাতের খাবার খাই না!”
-“প্লিজ আর্দ্র, আমার একটা রিকুয়েষ্ট রাখবেন না? ”
আমার কথা শুনে আমার হাত থেকে প্লেট নিয়ে বলে,,,
-“খাচ্ছি বাট আজকেই লাষ্ট এন্ড তোর জন্য ও ”
-“ওকে! ”
তিনি চামচ দিয়ে একটা ফুচকা মুখে দেয়ার পরই কেমন যেন কেঁপে উঠলেন।বুঝলাম ঝালটা বেশিই দেয়া হয়েছে।
কিন্তু অদ্ভুত ভাবে তিনি এক বারও থামলেন না গপগপ করে এক একেকটা ফুচকা খেতে লাগলেন।আমি আর ফুচকা বিক্রেতা মামা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।
আর্দ্র ভাইয়ার চোখ মুখ সহ নাকের ডগা পুরো রক্ত লাল হয়ে আছে তাও তিনি থামছেন না।ওনার মুখ এতোটাই লাল বর্ন ধারন করেছে যে সুই দিয়ে খোচা দিলে রক্ত পড়া শুরু করবে নিশ্চিত।
আমার এবার বেশ ভয় হলো।আমি তার কাছে গিয়ে বললাম,,,
-“প্লিজ থামুন!আপনার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে! ”
বাট তিনি কোনো রেসপন্স করলেন।পুরো প্লেট শেষ করে আমার হাতে এক হাজার টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বললেন,,,,
-“তোর খাওয়া শেষ হলে পে করে আসিস, আমি গাড়িতে বসছি। ”
বলেই চলে গেলেন।আমি চট জলদি করে পে করে দিলাম। আপাতত আমার খাওয়ার রুচি নেই। জানিনা আর্দ্র ভাইয়ার কি অবস্থা?
গাড়িতে গিয়ে নিজের সিটে বসলাম। আর্দ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি নিজের সিটে হেলান দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন আর একটু পরপর পানি খাচ্ছেন।কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না, ঝাল এতোটা বেশি দেওয়া হয়েছে যে আর্দ্র ভাইয়ার অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
আর্দ্র ভাইয়ার অবস্থা দেখে চোখে পানি চলে আসলো আমার।মনে মনে অনেক অনুশোচনা হচ্ছে, কেনো যে এমন করলাম!
(নোট:এমন কোনো কাজ করবেন না যাতে, পরে অনুশোচনা কাজ করে! যেকোনো কাজ করার আগে তা ভেবেচিন্তে করার চেষ্টা করুন)
আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না তার এমন অবস্থা, তাই চোখ বন্ধ করে নিজেকে শক্ত করে নিলাম।তারপর নিজের সিটবেল্ট খুলে তার ঠোঁট দুটো আকড়ে ধরে যতটুকু সম্ভব তার ঝাল কমানোর চেষ্টা করলাম।
আমার এমন কাজে আর্দ্র ভাইয়া চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে, হয়তো কখনো আশা করেনি আমি এমন কিছু করবো।
কিছুক্ষণ পর তার থেকে সরে এসে মাথা নিচু করে তাকে জিজ্ঞেস করলাম,,,
-“ঝাল কমেছে? ”
তিনি বাঁকা হেসে জবাব দিলেন,,,
-“হুম অনেকটা! ”
আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তার বাঁকা হাসির দিকে তাকিয়ে আছি। আমার খেয়াল ও নেই একটু আগে কি করেছি আমি।
তিনি আমাকে বললেন,,
-“এমন ঠোঁটের স্পর্শ পেলে প্রতিদিন ঝাল খেতে রাজি আছি! ”
আমি ঠিকভাবে বসে বললাম,,,
-“এটাই লাষ্ট ছিলো! আর আশা করবেন না, আমি এটা বাধ্য হয়ে করেছি! ”
-“সেটাতো বিয়ের পর দেখা যাবে! বাই দা ওয়ে থ্যাংকস ফর ইট! ”
আমার ঠোঁটের দিকে ইশারা করে বললেন তিনি।
কেনো যেনো হটাৎ ই প্রচুর লজ্জা করছে আমার। আর সাথে রাগও।
-“ধুর কেনো যেনো, বেটাকে ঝাল খাওয়াতে গেলাম! শেষে ফাসলাম তো আমিই! একে কখনো ঠিক করতে পারবো কিনা জানিনা! ”
মনে মনে কথাগুলো আওড়িয়ে নিজের চোখ বন্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলাম!
______________💙
আর্দ্র মুচকি হাসছে আর ড্রাইভ করছে।মাঝে মাঝে মায়রার দিকেও তাকাচ্ছে। আর্দ্র জানতো যে মায়রা ওর প্লেটে ঝাল মিশিয়েছে তা সত্যেও ও পুরো প্লেট শেষ করেছে।কেনো করেছে তা জানা নেই ওর। আর্দ্র মনে মনে বেশ খুশি বলা চলে।
_______________💙
মাইশা একটা হোটেল রুমে বসে আছে। মনের ভেতর চিন্তা থাকলেও মুখে হাসি ফুটিয়ে রেখেছে।
মাইশার মন বলছে “কোনো খারাপ কিছু হতে চলেছে ” কিন্তু মাইশা ঠিক করেছে না ওর সাথে কোনো খারাপ কিছু হবে না মেঘ ওকে মেনে নিবেই।
মেঘ হচ্ছে মাইশার বয়ফ্রেন্ড আর মাইশার অনাগত বাচ্চার বাবা।
মেঘ আজ একটু আগেই মাইশাকে ফোন করে এই হোটেল রুমটাতে আসতে বলেছে। কারন হিসেবে বলেছে বাচ্চার ব্যাপারটা দেখবে।
মাইশা মেঘের কথাটা শুনে বেশ খুশি হয়েছে কিন্তু ও আর কি জানে, মেঘ ওর জন্য যে মৃত্যু জাল পেতে রেখেছে।
________________💙
আমি বাসায় এসে এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলাম কারন আপাতত আর্দ্র ভাইয়ার মুখ দেখার সাহস আমার নেই। তাহলে নিশ্চিত লজ্জায় আজ আমার মৃত্যু হবে এন্ড তার পরদিন নিউজ পেপারের হেডলাইন হবে “বিখ্যাত শিল্পপতি রাসেল খানের মেয়ে লজ্জায় মারা গেছে ”
তখন ব্যাপারটা বেশ খারাপ দেখাবে, তাই আর্দ্র ভাইয়ার থেকে নিজেকে আড়াল করলাম।
_________________
রুমে এসে দরজা লাগিয়ে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিলাম। ঐ মূহুর্তের কথা মনে পড়তেই কেনো যেনো গাল গুলো লাল টকটকে হয়ে যাচ্ছে।
আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের গালে একটা থাপ্পড় দিলাম।
-“এতো বোকা কেনো তুই মায়রা? কেনো? শুধুমাত্র তোর জন্য আজ এই পরিস্থিতি হলো।ইশ কে জানে কালকে সকাল বেলা আর্দ্র ভাইয়ার সামনে কিভাবে মুখ দেখাবো! ”
________________🖤
হিংস্র সেই লোকটি টেবিলের ওপর পা তুলে বসে আছে। হাতে রিভলবার নিয়ে সে এক গভীর চিন্তায় মগ্ন।
তখনি লোকটির কেয়ারটেকার সাহেল এসে বলল,,,
-“স্যার! ”
লোকটি রিভলবার থেকে নিজের নজর সরিয়ে সাহেল কে স্ক্যান করে ওকে জিজ্ঞেস করে,,,,
-“এনি নিউজ? ”
-“জি স্যার! ”
-“বল! ”
-“স্যার ম্যাম কে যে গুলি করতে চেয়েছিলো, সেই লোকটা আজ রাতের ফ্লাইটেই সুইডেন যাচ্ছে! ”
-“তো তোরা বসে বসে কি করছিস, যা প্রস্তুতি নেয়া শুরু কর, আজ রাতেই ওনাকে ধরতে হবে! ”
-“ওকে স্যার! ”
সাহেল চলে যাওয়ার পর বাঁকা হাসে লোকটি।
-“লক্ষের অনেক কাছে চলে এসেছি! জাষ্ট আরেকটু অপেক্ষা দ্যান আমার মিশন সফল হবে! ”
________________🖤
মাইশা বসে ছিলো ঠিক তখনি মেঘের আগমন।মুখে রহস্যময়ী বাঁকা হাসি।
মেঘ দেখতে বেশ হ্যান্ডসাম।যেকোনো মেয়েই ওর ওপর ঘায়েল।হয়তো এই সৌন্দর্য দেখেই মাইশা ওর প্রেমে পড়েছে।
মেঘকে দেখে মাইশা দৌড়ে ওকে জরীয়ে ধরে বলে,,,
-“মেঘ আমি জানতাম তুমি কখনো আমাকে ফিরিয়ে দেবে না, তাই তো আমাকে ডেকেছো তাই না! ”
মেঘ মাইশাকে বেশ জোরে একটা ধাক্কা দেয়।যার কারনে পড়তে পড়তে বেঁচে যায় মাইশা।
মাইশা অবাক হয়ে মেঘের দিকে তাকায়।
মেঘ বলে,,,
-“কে বলেছে আমি তোর মতো একটা চিপ মেয়েকে এক্সেপ্ট করবো! আমি তোকে এখানে ডেকে এনেছি তোর বাচ্চা নষ্ট করতে যাতে ভবিষ্যতে আমার আর মিহির লাইফে কাটা হয়ে দাড়াতে না পাড়িস তুই! ”
মাইশা স্তব্ধ।
(বেশ বড় করে দিয়েছি পর্বটা! তাই গঠনমূলক মন্তব্যের আশায় রইলাম।দয়া করে নিরাশ করবেন না আমাকে! আসসালামু আলাইকুম ❤️💙🖤)