#অতিরিক্ত_চাই_তোকে
#মারিয়াম_আক্তার_সাদিয়া
#পার্ট:১৯ (অন্তিম পর্ব❤️)
আদনান মাহমুদ সহ তার লোকদের কে জেলে ভরে বেধরক পেটাচ্ছে রোহিত সহ অন্যান্য কয়েকজন পুলিশ।আজ রাজধানীর একটা হোটেল থেকে তাদের ধরা হয়েছে। রোহিত আদনান মাহমুদ এর চুলের মুঠি ধরে বলে,,,,
–বল তুই কেনো মায়রার ক্ষতি করতে চাস?কেনো বারবার ওর ওপর হামলা করিস, বল!
–কখনো বলবো না।
আদনান মাহমুদের কথাটা বলার সাথে সাথেই তার হাতে গরম শিক দিয়ে ছ্যাক দেয় রোহিত। আর্তনাদ করে উঠে আদনান মাহমুদ, তিনি বলেন,,,
–আহ বলছি, প্লিজ আর মারবেন না।
–বল জলদি।
আদনান মাহমুদ বলা শুরু করে,,,
–মায়রার দাদা আমাকে এতিম খানা থেকে নিয়ে এসে নিজের ছেলের মতো মানুষ করতে থাকেন, কিন্তু দিন যতো যাচ্ছিলো ততই আমি লোভি হয়ে উঠছিলাম তাই মায়রার আম্মু যখন প্রেগন্যান্ট ছিলো তখন থেকেই আমি ষড়যন্ত্র শুরু করি, মায়রার পাঁচ বছর যখন তখন আমি মায়রাকে দূরে সরিয়ে দেই আর তখনি আয়ানের বাবা মা মায়রাকে পেয়ে নিজ সন্তানের নামে বড় করতে থাকে।মায়রা কে দূরে সরানোর পর একদিন সুযোগ বুঝে মায়রার বাবা মা কে সরিয়ে দেই দুনিয়া থেকে।কিন্তু মায়রার দাদু কে মারতে পারিনি কারন সব সম্পওির দলিল তার কাছে ছিলো আর তিনি চাইছিলেন মায়রাকে সব সম্পওি দিয়ে দিতে, তাই আমি মায়রাকে মারার প্লেন শুরু করি কিন্তু প্রতিবারই কিভাবে যেনো প্লান ফ্লপ হয়ে যেতো।
–তোর প্লান ফ্লপ হতো আর্দ্রের কারনে।
আদনান মাহমুদ অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,,,
–মানে?
–মানে আর্দ্র বুঝতে পেরেছিলো মায়রার সাথে ঘটা এক্সিডেন্ট গুলো কাকতালিয় না কেও ইচ্ছে করে করছে তাই ও আলাদা একটা টিম তৈরি করে মায়রার সেফটির জন্য ।
রোহিত বাকি পুলিশদের ইশারা করে বেড়িয়ে যায়।ওর এখন আর্দ্রকে খুজতে হবে।
______________
মাইশা ওর সদ্য জন্ম নেওয়া ছেলেকে নিয়ে মেঘের ভর্তি হওয়া হসপিটালের কাছে দাড়িয়ে আছে। হাত পা প্রচন্ড পরিমানে কাপছে মাইশার।
মাইশা হসপিটালের রিসিপশন থেকে ইনফরমেশন নিয়ে মেঘের কেবিনের সামনে দাড়িয়ে আছে।
মেঘের অবস্থা ভালো না বলা চলে।ডাক্তার রা আশা ছেড়ে দিয়েছে।এখন ঔষধ দিয়ে যতটুকু বাচিয়ে রাখা যায় ওকে ওতটুকুই মেঘের হায়াত।
মেঘের কেবিনে প্রবেশ করে মাইশা।মাইশা মেঘের কাছে গিয়ে মাথায় হাত বোলায়, চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ওর।কারো স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে তাকায় মেঘ।মাইশাকে দেখে মেঘের চক্ষু চড়কগাছে।
মাইশা কেঁদে দিয়ে বলে,,,
–কেনো মিথ্যা বললে আমাকে?একটুও কি বলা যেতো না তুমি অসুস্থ, কেনো এতো কষ্ট দাও আমায় কি করেছি আমি বলো?
মেঘ কাঁপা কন্ঠে বলে,,,
–তুমি কষ্ট পাবে তাই আর বলা হয়নি।
–আর তোমার?তোমার কষ্ট হচ্ছেনা?
মেঘ কিছু বললো না।হটাৎ ই মাইশার বাচ্চাটা কেঁদে উঠে। মেঘ চোখ বড়বড় করে মাইশার দিকে তাকায়।মেঘ বললো,,,
–মাইশা ও আমাদের বাচ্চা?
–হুম।তোমার আর আমার ছেলে,
মেঘ নিজের সর্বশক্তি দিয়ে উঠে বসে ছেলেকে কোলে নিয়ে হাজারো চুমু দিতে থাকে। মেঘের কোলে যাওয়া মাত্রই বাচ্চাটা কাঁদা বন্ধ করে দিয়ে হাসতে থাকে।মেঘ বাচ্চাটার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে।মেঘ মাইশার দিকে তাকিয়ে বলে,,,
–ও কার মতো হয়েছে?
–তোমার মতো,
–সত্যি?
–হুম।
–আচ্ছা ওর নাম কি হবে?
–তুমি ঠিক করো।
মেঘ কিছুক্ষণ ভেবে বলে,,,
–শ্রাবন।
মেঘ নামটা উচ্চারন করার পরই হেসে উঠে ওদের ছেলে।হটাৎই মেঘের শ্বাস নিতে কষ্ট হতে থাকে।মাইশা অস্থির হয়ে ডাক্তার কে ডাকতে যাবে তখনি মেঘ মাইশার হাত ধরে বলে,,,
–আমার সময় শেষ মাইশা, তুমি আমাদের ছেলেটাকে মানুষের মতো মানুষ করো।ভালোবাসি মাইশা।
মেঘ কথাটা বলার পর আজীবনের জন্য চুপ হয়ে যায়।পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যায় বহুদূর। মাইশা নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।
_____________
আয়ানের বিয়ে হয়েছে আজ ৬ মাস হলো। আয়ান বিয়েটা করতে রাজি ছিলো না কিন্তু ওর ফ্যামিলি বেশ জোর করেই ওকে বিয়ে করায়।এতক্ষণ তার সাথেই খুনশুটি করছিলো আয়ান।আয়ান না চাইতেই নোড়াকে ভালোবাসতে বাধ্য। আয়ানের ভাবনার মাঝে এটা কখনোই ছিলো না যে, ও কখনো জান্নাতকে ছাড়া অন্য কাওকে ভালোবাসতে পারবে।কিন্তু নোড়া সেই অসম্ভব কে সম্ভব করে দেখিয়েছে, নিজের ভালোবাসার জালে আবদ্ধ করেছে আয়ানকে।
রোহিত আর্দ্র কে খুজতে খুজতে ঠিক ঐ জায়গাটিতে পৌঁছে যায় যেখানে আর্দ্র কে আটকিয়ে রেখেছিলো তীব্র।
রোহিত রুমটার দরজা খোলা মাত্রই আর্দ্র এসে জরীয়ে ধরে রোহিত কে। আর্দ্র বলে,,,,
–একদম ঠিক সময়ে এসেছিস, আমার এই মূহুর্তে তোরই প্রয়োজন ছিলো।
–আর্দ্র তুই এখানে কেনো?
–তীব্র আমাকে আটকিয়ে রেখেছিলো।
–তীব্র তোর ঐ ছোটোবেলার ফ্রেন্ড?
–হুম।
–ও তোকে আটকাবে কেনো?
— তীব্রের বোন তুবা ও আমাকে ভালোবাসতো কিন্তু আমি ওকে পছন্দ করতাম না এই সামান্য কারনে তুবা সুইসাইড করে আর তীব্রের মতে আমার কারনে তুবা মারা গেছে, আমি ওকে মেরে ফেলেছি তাই ও প্রতিশোধ নিতে চায়। তীব্র ওর বোনকে ওর জীবন ওর বাবা মার থেকেও বেশি ভালোবাসে।
আর্দ্র এতটুকু বলেই দৌড়ে বেড়িয়ে যায়।রোহিত পেছন থেকে আর্দ্র কে ডেকেছিলো কিন্তু ও না শুনে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যায় ওখান থেকে।
_______________
তীব্রর হাতে একটা তলোয়ার। ও বেশ যত্ন করে তুলে রেখেছিলো নিজের বোনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিবে এটা দিয়ে তাই।
তীব্র তলোয়ার টা নিয়ে মায়রার রুমের দিকে এগিয়ে যায়।রুমে ঢোকা মাত্রই মায়রাকে দেখে বাঁকা হাসি দেয় তীব্র।
তীব্রের হাতে তলোয়ার দেখে অনেক অবাক হয় মায়রা, ও অবাক হয়ে বললো,,,
–আপনি,, আপনার হাতে ওটা,,
–তোমাকে মারার জন্য!আমার প্রতিশোধ পূরণ করবো আজ।
মায়রা খেয়াল করে তীব্রের গলার স্বর অন্যরকম। ও কাঁপা কন্ঠে বলে,,,
–কে আপনি?আপনি আর্দ্র না অন্য কেও।আপনার চেহারা আর্দ্রের মতো কেনো?
তীব্র সব কিছু খুলে বলে মায়রাকে।সব কিছু শোনার পর মায়রা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তীব্রের দিকে মায়রা পালাতে যাবে তার আগেই তীব্র ওকে ধরে ওর পেটে ছুড়ি ঢুকিয়ে দেয়।
পাঁচবার ছুরিকাঘাত করার পর আর্দ্র এসে তীব্রের হাতে গুলি করে দেয়।মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মায়রা।পিছন থেকে রোহিত এসে তীব্রকে ধরে নিয়ে যায়।আর্দ্র জলদি করে মায়রার কাছে গিয়ে মায়রার মাথা নিজের কোলে নেয়।
আর্দ্র কান্না করে বলে,,,
–মায়রা,, তোমার কিছু হবেনা দেখো, হসপিটাল এ নিয়ে গেলেই তুমি ঠিক হয়ে যাবে।
মায়রা অনেক কষ্ট করে কাঁপা কন্ঠে বলে,,,,
–পৃথিবীতে থাকার সময় শেষ আমার আর্দ্র। আমি আর আপনার সাথে থাকতো পারবো না,আপনার বাচ্চার মা হতে পারবো না, আপনাকে অতিরিক্ত চাওয়া হতে পারবো না! ভালোবাসি আর্দ্র খুব ভালোবাসি, কখনো ভুলবেন না তো আমায়?
–মায়রা পাগলের মতো কথা বলিস না তো তোর কিছু হবেনা। তুই ঠিক হয়ে যাবি দেখিস।
মায়রা জোরে জোরে শ্বাস নিতে শুরু করে, আস্তে করে আর্দ্রের বুকে ঢোলে পড়ে ও।
৭ বছর পর,,,,
মায়রার কবরের সামনে দাড়িয়ে আছে আর্দ্র। হাতে পায়ে ওর শিকল পড়ানো।আর্দ্র আজ একজন মানষিক রোগী, মায়রা মারা যাওয়ার পর পরই পুরোপুরি পাগল হয়ে যায় আর্দ্র।
তীব্র তার কর্মকাণ্ডের জন্য ফাসির দড়িতে ঝুলেছে।মাইশা নিজের বাচ্চাকে আজ মানুষ করতে ব্যাস্ত, আয়ানের ও একটা মেয়ে হয়েছে।ওরা সবাই ভালো আছে, ভালো নেই শুধু আর্দ্র
আজকের দিনে মায়রা মারা যায় তাই এইদিনে মায়রার কবরের কাছে আর্দ্র কে না আনলে ও আরো বেশি পাগলামি করে।
আর্দ্র শিকল পড়িহিত অবস্থায় মায়রার কবরের কাছে গিয়ে বসে।আর্দ্র ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। ও বলে,,,
–কেনো আমাকে ছেড়ে গেলি মায়রা? আমার ভালোবাসায় কি কোনো কমতি ছিলো, এতো স্বার্থপর কেনো তুই? তোকে এতো ভালোবাসা দেওয়ার পরও চলে গেলি।
আর্দ্র একটু থামে।তারপর আবার বলে,,,
–ভালোবাসি মায়াপরি,অনেক ভালোবাসি একবার ফিরে আয়, কেনো বুঝিস না মায়াপরি #অতিরিক্ত_চাই_তোকে একবার ফিরে আয় মায়াপরি।
কাঁদতে থাকে আর্দ্র। ওর সাথে আসা ডাক্তার রাও কাঁদে।
#সমাপ্ত
(সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায়না। সব অতিরিক্ত চাওয়া কখনো পূরন হয় না।কিছু ভালোবাসা অপূর্ণ থাকে, আজীবনের মতো অপূর্ণ। তেমনি অপূর্ণ থাকবে #আর্দ্র মায়রার প্রেমকাহিনি।)
(সমাপ্তি টানলাম প্রথম পরিচ্ছেদের। ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ আসবে।সবাইকে ধন্যবাদ গল্পটা পড়ার জন্য। গল্প নিয়ে আজকে নিজেদের মত দিয়ে যাবেন।আসসালামু আলাইকুম ❤️)