কৃষ্ণবেণী #পর্ব_২৭(২) #নন্দিনী_নীলা

0
497

#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_২৭(২)
#নন্দিনী_নীলা

জায়ান তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বললেন,” তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছো?”

তৃষ্ণা মাথা দুলিয়ে বলল,” আমি আপনাকে কেন সন্দেহ করবো। আমি তো শুধু উনাদের এমনটা করার কারণ জিজ্ঞাসা করলাম। আপনি বলতে না চাইলে সমস্যা নাই।”

” দোষারোপ করার কারণ আছে তাই করেছে। উনারা বিরোধী পক্ষ। তোমার শশুর এর বিরোধী দলের নেতা উষসীর বাবা‌। তাদের মধ্যে অনেক রেষারেষি আছে। রাজনীতিতে বিরোধী পক্ষ মানে শত্রু। কিন্তু আত্নীয় তার জন্য সেটা কমে এসেছিল। এখন আবার এই ঘটনায় তা জাগ্রত হলো।”

“উষসী ভাবি আপনাদের বাড়ির ব‌উ হলো কি করে?”

” উষসী জোর করে বিয়ে করেছিল আয়ান কে। শর্ত দিয়েছি বাবাকে ভোটে নির্বাচিত করবে। আর নিজের বাবাকে পদত্যাগ করাবে। তাই হয়েছিল। আদরের মেয়ের জন্য তিনি মেয়ের শশুর কে জিতিয়ে দিয়েছিল। যাইহোক এসবে অনেক কাহিনী আছে পরে বলব সময় করে।”

তৃষ্ণা জায়ানের দিকে তাকিয়ে ভাবছে এই লোকটা সবসময় এই অনেক কাহিনী আছে বলে আর পরে কাহিনী বলেন না।

” কি হলো ওইভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”

” ভাবির মৃত্যুটা মানতে পারছি না। সেদিন ও মানুষটা কথা বলছিল হাসছিল আজকেই সেই আর এই পৃথিবীতে নেই। খুব কষ্ট হচ্ছে। এভাবে কেন চলে গেল।”

জায়ান কিছু বলার মতো পেল না। এই মৃত্যু ওর কাছে স্বাভাবিক লাগছে না। এর পেছনে আয়ানের হাত আছে ও জানে কিন্তু যথার্থ প্রমাণ এর জন্য কিছু বলতে পারছে না। আয়ান কেন উষসীকে মারলো ও কি জানে না এর জন্য কি ভোগ করতে হবে ওদের।

ওদিকে মিহির কল করে টাকা দাবি করছে। টাকা না‌ দিলে উর্মির ক্ষতি করে দিবে। ওই সাহস নিয়ে আমাকে নাকি ও হুমকি দেয় ভাবা যায়। ও উর্মির কোন ক্ষতি করবে না জায়ান জানে। ওর সেই সাহস নাই। শুধু টাকার লোভে এই কাজ করেছে। টাকা মানুষ কে কতটা নিচে নামিয়ে দেয় মিহির কে দেখলেই তো প্রকাশ পায়।‌ গ্রামের শান্ত শিষ্ট বোকা ছেলেটা ও টাকার লোভে জায়ান আহনাফ এর বোনকে কিডন্যাপ করার সাহস করেছে। সত্যি হাস্যকর। ওকে তুরি মেরে আমি ধ্বংস করে দিতে পারি ও নাকি আমাকে হুমকি দিয়ে ভয় দেখাবে।

এদিক টা সামলে তারপর ওদিকে যাওয়া যাবে। উর্মি না হয় তার ভালোবাসার মানুষটির আসল রুপ টা কাছ থেকে ভালো করে দেখুক, চিনুক।

বাসায় এসে থামলো গাড়ি। তৃষ্ণা জায়ানের সঙ্গে ভেতরে গেল। জায়ান তৃষ্ণাকে বলল,” তুমি উষসীর বাবা ভাই মায়ের খাবার তৈরি করতে বলো লিলি কে।”

তৃষ্ণা উষসীর মায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মহিলাটি কাঁদতে কাঁদতে বেহুঁশ অবস্থা। মেয়ে মারা গেছে মা সেটা কিভাবে মানবে। তার কষ্টটা যেন তৃষ্ণা অনুভব করতে পারছে। লিলি সবার জন্য ঠান্ডা পানি নিয়ে এলো। তৃষ্ণা উষসীর মাকে জোর করে একটু পানি খাইয়ে দিলো।

লিয়া সবার জন্য খাবার তৈরি করছে। ওর ও খুব খারাপ লাগছে। তৃষ্ণা এসে বলল,” তুমিও ভাবির জন্য কাঁদছো?”

” হ তার জন্য মন খারাপ হচ্ছে। কত অল্প বয়সেই চলে গেল।”

” তোমায় একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”

” করো।”

” তোমার কি আত্নীয় স্বজন কেউ নাই? তোমার ব‌র কোথায়?”

লিয়া অন্যমনষ্ক হয়ে বলল,” আমি প্রেম করে বিয়ে করেছিলাম। তাই পরিবারের কেউ আমার সাথে সম্পর্ক রাখে নাই। আর আমার ব‌র‌ ছিল এতিম। এই বাসায় কাজ করতো। এইখানেই নিয়ে এলো আমায়‌। ছিলাম এখানে। বড় সাহেবের সাথে থাকতো সে। তারপর এক ঝড়ে আল্লাহ তারে আমার কাছে থেকে কেড়ে নিলো। হঠাৎ এক ভোরে তিনি না এসে তার লাশ এলো বাড়িতে। সেবার বড় সাহেবের গায়ে কে জানি গুলি করতে আসে আমার স্বামী বড় সাহেবের জান বাঁচাতে নিজেকে উৎসর্গ করে।”
বলতে বলতে লিলি ও কেঁদে উঠল।

তৃষ্ণা তারে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দিতে চাইলো। কিন্তু সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কিছুই পেল না। কত জটিল এই জীবন সবার জীবনেই নতুন নতুন গল্প।
তৃষ্ণা চলে এলো সেখানে থেকে জায়ান ডেকে পাঠিয়েছে। ও‌ রুমে এসে দেখলো জায়ান সাদা পাঞ্জাবি পরে বসে আছে। চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে।
তৃষ্ণা এগিয়ে এসে জায়ানের ভেজা চুল মুছে দিতে লাগল। এজন্য জায়ান ডেকেছে তৃষ্ণা কে। চুলের পানিতে জায়ানের কাঁধ গলার কাছে পাঞ্জাবি ভিজে যাচ্ছে।
তৃষ্ণা বলে উঠল,” আপনি আজ না হয় একাই মুছে নিতেন। ভিজিয়ে ফেলেছেন শরীর। আর নয়তো আগেই পাঠাতেন ডাকতে।”

জায়ান উত্তর দিলো না। তৃষ্ণার পেটের উপর মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। তৃষ্ণা ছটফট করে সরে যেতে চাইলো। আচমকা এমন করাতে তৃষ্ণার সারা শরীর কেঁপে উঠল।
জায়ান দুই হাতে তৃষ্ণার কোমর জড়িয়ে ধরে আছে।
” কি হলো আপনার?”
জায়ান মাথা তুলে ফেলল। আর উঠে দাঁড়িয়ে বলল,” আমার দিকে তাকাও।”

তৃষ্ণা তাকালো জায়ানের দিকে।
” কি‌ হয়েছে আপনার?”
” আমাকে আর আয়ানকে চিনতে তোমার এখনো কি ভুল হয়?”
হঠাৎ এমন প্রশ্নে তৃষ্ণা চমকালো।
” হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন করছেন?”
” বলো।”
” আপনাকে আমি চিনতে পারি।”
” কীভাবে?”
” আপনার ওই লাল তিল নাই।”
” আয়ান যদি ওই তিল সরিয়ে আমার মতো হয়ে আসে তখন কি চিনতে পারবে?”
তৃষ্ণা থতমত খেয়ে গেল। ও জানে না চিনতে পারবে নাকি। চুপ করে গেল।
” আমার স্পর্শ তুমি চিনো? আমাকে অনুভব করতে পারো?”
তৃষ্ণা থমকে গেল। ও এসব কিছুই জানে না।
জায়ান তৃষ্ণার দুগালে হাত রেখে বলল,” এর জন্য দায়ী তো আমিই। আমি কি তোমার সেভাবে স্পর্শ করেছি? যে চিনবে!”
তৃষ্ণা তাকালো জায়ানের দিকে। জায়ান তৃষ্ণার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,” উষসীর মৃত্যুর পেছনে আয়ানের হাত আছে। ও কেন এই কাজ করেছে আমি জানি না। তুমি সাবধানে থাকবে। আমি ওকে ভয় না পেলেও তোমাকে নিয়ে ভয়ে থাকি।”
জায়ান বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
________________________

মিহির উর্মির পাশে বসে বলল,” তোমার ভাই তোমাকে সত্যি ভালোবাসে না। তোমাকে কিডন্যাপ করে কোন লাভ‌ই হলো না। চারদিন চলে যাচ্ছে তাকে কবে টাকার কথা বলেছি এখনো টাকাও দিলো না। তোমাকেও খোঁজার ট্রাই করছে না। কেমন ভাই গো। ও মনে পরছে ওটা তো তোমার আপন ভাই না। এজন্য হয়তো এতো টান নাই। সব ছিল উপরে উপরে তাই না।”

উর্মির হাত পা বাঁধা একটা চেয়ারে বসা, মুখটাও বাঁধা। ও কথা বলার জন্য উম উম করছে। মিহির উর্মির নিকটে মুখ এনে বলে,” কিছু বলতে চাও নাকি তোমার অকৃতজ্ঞ ভাইকে নিয়ে।”

উর্মি রাগে ফুসফুসে করছে। চোখ দিয়ে যেন ভষ্স করে দিবে মিহির কে। মিহির উর্মির মুখের বাঁধন খুলে দিলো। উর্মি জোরে শ্বাস নিতে লাগল।

” বলো কিছু তোমার ভাইকে নিয়ে।”

উর্মি থুথু মারলো মিহিরের মুখে। মিহির রক্ত বর্ণ চোখে তাকিয়ে মুখ থেকে থুথু মুছে উর্মির গাল চেপে ধরলো।
” ছিহ আমার ঘৃনা হচ্ছে। তোর মতো একটা ছেলেকে ভালোবেসে আমি এতোদিন কষ্ট পেয়েছি। তুই এতো নিচু। টাকার জন্য এমন জগন্য কাজ করলি। আমাকে কিডন্যাপ করলি। ভাই আমাকে বাঁচিয়েছে তোর মতো ছেলের হাত থেকে।”

মিহিরের মন যে কি চাচ্ছে। কি করতে মন চাইছে উর্মি কে ও নিজেই জানে না। শুধু মাত্র জায়ানের ভয়ে সব কিছু দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছে। নাহলে কি করতো ও নিজেও জানে না। মিহির রুমাল দিয়ে আবার উর্মির মুখ বেঁধে দিলো।

” তোমার মুখ খোলা টাই আমার সবচেয়ে বড় ভুল। থাকো তুমি এভাবেই‌।”

বলে মিহির রুম থেকে বেরিয়ে গেল। বাইরে থেকে শক্ত পোক্ত একটা তালা লাগিয়ে দিলো। ভেতরে বন্দি হয়ে র‌‌ইলো উর্মি।

উর্মির চোখ দিয়ে গলগলিয়ে পানি পরছে। ও আফসোস এ তাকাতে পারছে না। এমন একজন মানুষ কে ও কীভাবে ভালোবাসলো ভাবতেই নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে।
মিহিরের মতো নিচু ও নোংরা মন মানসিকতার একজন কে ও পাগলের মতো ভালোবেসে ছিল। ছিহ! কতটা সৎ ভেবেছিল ও মিহির কে। কিন্তু সে যে এতোটা লোভী ভাবতেও পারে নি। উর্মি কে কিডন্যাপ করেছে দ্বিতীয় বার দেখা করার নাম করিয়ে। জোভানের সাহায্যে উর্মিকে দেখা করাতে আনে। উর্মির রাজি হয় যাকে পাগলের মতো ভালোবাসে তার ডাকে সারা না দিয়ে পারেনি।
সেই সুযোগ টাই কাজে লাগিয়ে নেয় মিহির। জোভান দুজনকে একা রেখে চলে যায়। এদিকে মিহির পেছনে থেকে উর্মির মুখ ও হাত বেঁধে ফেলে। উর্মি আচমকা এমন কাজে স্তব্ধ হতভম্ব। কথা বলতে ও পারছে না। চাইলে ও পারছে না।
মিহিরের দিকে শুধু হতবাক চোখে তাকিয়ে থাকে।
মিহির ওকে গাড়ি করে বান্দরবান থেকে নিয়ে আসে। আর ওকে এই রুমটায় বন্দি করে রাখে।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here