কৃষ্ণবেণী #পর্ব_৩৯ #নন্দিনী_নীলা

0
484

#কৃষ্ণবেণী
#পর্ব_৩৯
#নন্দিনী_নীলা

বকুল‌ ভয়ার্ত দৃষ্টি মেলে চেয়ে আছে আয়ানের দিকে। বকুল জড়ানো গলায় বলছে,,” আমারে এইহানে আনলেন ক্যান?”
আয়ান বকুলের কথায় পাত্তা না দিয়ে উঠে ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে রুমে কিছু খুঁজতে লাগে।বকুল কাঁপা পায়ে উঠে দাঁড়ায়। রুমের দরজার দিকে এক দুই পা করে হেঁটে যাচ্ছে। ওর শরীর মাত্রাতিরিক্ত কাঁপছে। ভয়ে জবোথুবো বুক নিয়ে দরজা কাছাকাছি এল।
” পালিয়ে যাচ্ছিস?”
ভয়ে আঁতকে দাঁড়িয়ে পড়ে বকুল। ভয় ঢোক গিলে বলল,,” আমি বুবুর কাছে যাব।”
আয়ান বাঁকা হেসে এগিয়ে এল। বকুলের সামনে এসে দাঁড়াল। বকুল ভয়ে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আয়ান একটা শয়তানি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে বকুলের দিকে।
বকুল কিছু বলতে যাবে আয়ান বকুলের মুখে একটা স্পে করতেই বকুল ঠলে পড়ে আয়ানের উপর। আয়ান বকুলকে সবার অগোচরে বের করে আনে।
সবাই তখন গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান এ ব্যস্ত ছিল সেই সুযোগ টাই কাজে লাগায় আয়ান।
বকুলের যখন জ্ঞান ফিরে ও নিজেকে একটা বিছানায় শোয়া অবস্থায় পেল। চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে ধরফড়িয়ে উঠে বসল। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে এলোমেলো চোখের পাতা মেলে চারপাশে তাকাল। ভাঙাচোরা একটা চৌকিতে ও শুয়ে আছে। রুমে একটা ভাঙা চেয়ার ছাড়া কিছুই নেই। বকুল লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল। এটা কোথায়? কিভাবে এল? আয়ানের কথা মাথায় আসতেই ও চমকে উঠল। তাহলে কি তিনিই এখানে নিয়ে এসেছে? কিন্তু কেন? কিভাবে যাবে বুবুর কাছে ও। ভয়ে ঠুকরে উঠল বকুল।‌ দরজার কাছে গিয়ে ধুপধাপ শব্দ করে বারি দিয়ে,’ কেউ আছেন?দরজা খুলেন দয়া ক‌ইরা।’ অসহায় কন্ঠে বলছে লাগে।
খট শব্দ করে দরজা খুলে গেল। বকুল বুকে হাত চেপে পিছিয়ে গেল। ভয়ে ওর সারা শরীর কাঁপছে। আয়ান গটগট পায়ে ভেতরে প্রবেশ করল।
” বকুল ফুল।”
বকুল আতঙ্কিত গলায় বলল,,” আপনে আমারে এটা কোথায় নিয়ে আসছেন? আমি বাড়িতে বাবা মায়ের কাছে যাব। আমি বুবুর কাছে যাব।”
” একসাথে তো দুই জায়গায় নিয়ে যেতে পারবনা।”
” আমাকে বাড়ি দিয়ে আসেন। আমি আর কোন দিন শহরে আসবে না। আমাকে ছাইড়া দেন।” কান্না করে দিয়ে বলল।
আয়ান বলল,,” বকুল ফুল তোমার সাথে আমার কিছু জরুরী কথা আছে। তুমি যদি আমার কথা মতো কাজ করো। তাহলে আমি তোমাকে তোমার বাড়ি দিয়ে আসব। আর যদি না শোন তাহলে তোমাকে মারতে আমার হাতটা একটুও কাঁপবে না। এমনিতেই তোমাকে কিডন্যাপ করে তোমার চোখে খারাপ হয়ে গেছি। তাই তোমাকে বাঁচিয়ে রেখে লাভ নেই।”
মৃত্যুর কথা শুনতেই বকুল আঁতকে উঠে। জন্ম নিলে মৃত্যু অবধারিত। তবুও মৃত্যুর কথা শুনতে অজানা ভয়ে কেঁপে উঠে সবাই। আর যখন তা দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে তখন তো কথাই নেই।
বকুল ভয়ে ঘামতে শুরু করে দেয়।
” আমারে মারবেন না। আমি কি করছি আমারে মারবেন ক্যান।”
আয়ান বলল,,” তুই কিছু করিস নাই। করছে তোর বোন তৃষ্ণা।”
বকুল চোখ কপালে তুলে বলল,,” বুবু কি করছে?”
” তৃষ্ণার জন্য আমাকে জায়ান এতো কষ্ট দিয়েছে। সামান্য একটু ছুঁয়েছিলাম বলে জায়ান অমানুষিক অত্যাচার করেছে আমায়। আমি আজও ভুলি নাই। একজন কে তার শাস্তি দিয়েছি এখন রয়েছে তোর বোন আর বোন জামাই।” মনে মনে বলল, উষসী কে মেরে তাও মনে জ্বালা একটু হলেও মিটেছে।”
” আমারে মাইরা ফালান। তাও ভালো কিন্তু আমার বুবুর কোন ক্ষতি আমি করতে দিমু না আপনেরে।”
” তুই আটকাবি আমারে?”
” দুলাভাই রে আমি সব ব‌ইলা দিমু।”
” হাহাহাহা কি করবে? কিচ্ছু করতে পারবে না। আর শোন তোর বোনের আমি কোন ক্ষতি করব না আর না তোর দুলাভাইয়ের শুধু আমারে একটা ফাইল এনে দিবি। তোকে আমি ব‌উ সাজাই নিয়ে যাব বাসায়। সবাইরে বিশ্বাস করাবি তুই আমার ব‌উ। আর বিশেষ করে তোর বোনকে। ওর সাথে মিশে জায়ানের রুম থেকে লাল একটা ফাইল আছে ওটা এনে দিবি। আমিই এই কাজ করতে পারতাম কিন্তু জায়ানের রুমে ঢুকার অনুমতি আমার নাই। আমি ঢুকতেই পারব না। কিন্তু তুই পারবি কারণ তোর বোন আছে।”
” কিসের ফাইল? সেটার জন্য এতো নাটক করতে হবে কেন? আমি আপনার ব‌উ সাজতে পারমু না।” রাগী গলায় বলল বকুল। কোন কিছু বিনিময়ে বুবুর ক্ষতি ও করতে দিবে না।
আয়ান বকুলের গলা চেপে ধরে বলল,,” আমার কথা তো তোকে শুনতেই হবে। যদি না শুনিস মরতে হবে।”
“আমারে মাইরা ফেলেন। আমি আমার বুবু আর দুলাভাই এর কোন ক্ষতি নিজে করতে পারব না।” হাঁসফাঁস করতে করতে বলল। এতো জোরে গলা চেপে ধরেছে যে ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে। চোখ উল্টিয়ে ফেলছি তখন আয়ান বকুলের গলা থেকে হাত সরিয়ে বলল,,” জানতাম তুই এতো সহজে রাজি হবি না। তোকে রাজি করানোর অস্ত্র ও আমার হাতে আছে। ওয়েট।”
আয়ান ফোনে কাউকে ভিডিও কল করল। তারপর স্ক্রিনে ভেসে উঠল বকুলের বাবা মায়ের প্রতিচ্ছবি। দুজন অপরিচিত লোক তাদের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে রেখেছে। বকুল ভয়ে চিৎকার করে উঠল,,” আব্বা আম্মা।”
আয়ান ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,,” বাবা মায়ের খুনের কারণ হতে চাও? নাকি আমার কথায় রাজি হবে বকুল ফুল? সিদ্ধান্ত তোমার তুমি রাজি হলে তোমার বাবা মায়ের প্রাণ বেঁচে যাবে। আর সাথে তুমি ও ছাড়া পেয়ে যাবে কাজ শেষ এ। শুধু মুখটা বন্ধ রাখতে হবে।কারো ক্ষতি হবে না।”
বকুল ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,” ছিহ আপনে এতো খারাপ!”
” এই বড় বড় কথা বলবি না। রাজি কিনা বল।আমার হাতে বেশি সময় নাই।”
বকুল বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা অনেক কথাই বলছে বকুল কিছুই বলতে পারছে না। কারণ আয়ান শয়তান সাউন্ড অফ করে রেখেছে।

বকুল কান্না করতে করতে নিচে বসে পড়ল। এসব কি হচ্ছে ওর সাথে। এসব দেখার জন্য বুঝি এতো আনন্দ নিয়ে এসেছিল শহরে। উনার ব‌উ সেজে ওই বাড়ি গেলে জোভান কে আমি মুখ দেখাব কি করে? আর বুবু এসব শুনে কি পরিমান রাগ করবে। আল্লাহ আমার তো মনে হচ্ছে এখন মরে যাওয়াই ভাল কিন্তু বাবা মায়ের মৃত্যুর কারণ আমি কিভাবে হবো?
আয়ান ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল,,” বকুল ফুল তুমি একটু বেশি করেই কাঁদো। বাবা মায়ের মৃত্যুর শোক পালন করা শুরু করে দাও।”
বকুল আঁতকে উঠে কান্না থামিয়ে বলল,,” না না আমার আব্বা আম্মা রে ছাইরা দেন। আপনি যা বলবেন আমি সব করমু। তাদের কোন ক্ষতি করবেন না দয়া ক‌ইরা।”
বকুল জানে না‌ ওই ফাইল দিয়ে কি করবে কিন্তু বুঝতে পারছে ওটা কোন দরকারি জিনিস।
বকুল রাজি হতেই আয়ান খুশিতে রুম ত্যাগ করে। আর বকুলের বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,,” আপনাদের ছোট মেয়ে আমার কাছে বন্দি ভুলেও এসব তৃষ্ণা বা জায়ান কে জানাতে যাবেন না। যদি জানিয়েছেন কাউকে তাহলে আমি কিন্তু আপনাদের আদরের মেয়ে বকুল কে খুন করে ফেলব। তখন সারাজীবন এর জন্য মেয়েকে হারাবেন। বাসায় ব‌উ করে নিয়ে যাব তখন এসে একটু ফ্যামিলি ড্রামা করে যাবেন। ওকে। আমার কথা মতো চললে আপনার মেয়েও ভালো থাকবে। আপনারা ও ভাল থাকবেন।”
তৃষ্ণার বাবা মা ভয়ে স্বীকার করতে লাগে। এমন পরিবারে তাদের তৃষ্ণা কে ব‌উ করে পাঠিয়েছে ভাবতেই ভয়ে কাঁপতে লাগে। ধনী পরিবার থেকে সমন্ধ আসতেই বিয়ে দিয়ে দিয়েছে একবার ভাল করে খোঁজ ও নেয়নি। যার ছোট ভাই এমন তার বড়ো ভাই না জানি কত খারাপ। জায়ান দের পরিবারের প্রতি তীব্র ঘৃণা সৃষ্টি হলো তাদের মনে।
দুই মেয়ের চিন্তায় তারা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। বকুলের জন্য কাউকে কিছু বলতেও পারছে না সইতে ও পারছে না।
আয়ানের সামনে এসে উপস্থিত হয় জায়ানের ড্রাইভার মজিদ এর।
মজিদ এসে বলল,,,” আয়ান স্যার এইবার আমার ছেলেটাকে ছেড়ে দেন। আমি তো আপনার কথা মতো জায়ান স্যার কে মিথ্যা বলেছি। বলেছি আমি তৃষ্ণা ম্যাডামের বোন কে আনিনি‌। সে আমার কথা বিশ্বাস ও করেছে।”
” ভেরি গুড। তোমার ছেলে বাসায় পৌঁছে গেছে। তুমি কথা রেখেছ আমিও কথা রেখেছি।”
মজিদ খুশি হয়ে ধন্যবাদ বলে বেরিয়ে আসতে পা বাড়ায়‌।
” তোমার ছেলেকে ছেড়ে দিলেও তোমাকে ছাড়তে পারব না মজিদ।”
মজিদ থমকে দাঁড়িয়ে পরে। আয়ান বন্দুক বের করে গুলি করে মজিদ কে। মজিদ দৌড়ে পালাতে চেয়েও পারে না। ঠাস করে ফ্লোরে পরে যায়।
মজিদ পরে গিয়ে বলল,,” আমি মরে গেলে আমার পরিবার কিভাবে চলবে স্যার।আমায় ছেড়ে দেন আমি আপনার সব কথা শুনব।”
” তুই আমার কথা শুনবি আমি জানি কিন্তু জায়ান তোর পেট থেকে কথা বের করার ক্ষমতা রাখে আমি তো রিস্ক নিতে পারব না।”

বকুলকে একটা শাড়ি এনে দেয় আয়ান তারপর ওকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
তারপর সবটা আয়ানের পরিকল্পনা মতোই চলে। বকুল আয়ানের হাতের পুতুল হয়ে যায়। বাবা মায়ের জন্য, আয়ান যা বলে তাই করে।
আয়ানের চোখের আড়ালে কাউকে এসব ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পারে না বকুল।
#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here