#মায়ারণ্যে
#লেখিকা-মেহরুমা নূর
#পর্ব-১৬
★এরই মধ্যে এক সপ্তাহ কেটে গেছে। সবার জীবনেই কম বেশি পরিবর্তন এসেছে।
ইহান রোজই চেষ্টা করে যাচ্ছে তার ইরাবতীর মন গলানো। তবে ইরিনের ওপর তার খুব একটা প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। বরং দিনে দিনে ইহানের কাজকর্ম ইরিনকে চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে। তার মতে ইহান যা চাইছে তা অনুচিত। সে কখনোই তার মন কামনা পুরন করতে পারনেনা। এটা যে কখনোই সম্ভব না। ইহানের পাগলামিকে সে কখনোই সায় দিতে পারবে না। তার এই কলঙ্কিত জীবনের সাথে ইহানকে জড়িয়ে ওর জীবন টা নষ্ট করতে পারবেনা। ইহানকে দেওয়ার মতো যে তার কাছে কিছুই নেই। কিন্তু ইহানকে সে এই কথা কিছুতেই বোঝাতে পারছে না।
সাহিলেরও রাগ আজকাল সপ্তম সীমায়। কারণ টা যথাযথই সারা। রাইসার বিয়ের পর থেকেই সারা কেন যেন ওর থেকে দূরে দূরে থাকছে। পারতি পক্ষে সাহিলের সামনেই আসে না। সাহিল যখন বাসায় থাকে তখন সারা তার রুমেই বসে থাকে। অকারণে সারার এই আচরণ জাস্ট খেপিয়ে দিচ্ছে সাহিলকে। মন চাচ্ছে ঠাটিয়ে একটা দেই ওকে। ইডিয়ট একটা। মেয়েটা কখনো ওকে একটু বুঝবে না? ওকে না দেখে যে এই বুকে দহন হয় তাকি সে কখনো জানবে না?
এদের মাঝে সবচেয়ে বেশি দূর্বিষহ জীবন কাটছে অরণ্যের। নিজের জীবন নিজের কাছেই যেন বোঝা হয়ে গেছে। চারিদিকের সবকিছু বিষাদে রূপান্তরিত হয়ে গেছে ওর জন্য। সেদিনের পর আর মায়াকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি অরণ্যের। ফোন দিলে ফোন বন্ধ আসে। ভার্সিটিতে কয়েকবার গিয়েছে সেখানেও পায়নি। অরণ্য ভাবছে মায়া হয়তো সেদিনের ওর কথাগুলোর জন্যই ওর থেকে দুরত্ব বানিয়ে নিয়েছে। আমাকে হয়তো খারাপ ভাবছে সে। তাইতো আমার জীবন থেকে গায়েব হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি কি করবো? এই অসহনীয় যন্ত্রণা যে আমি আর সইতে পারছিনা। কিভাবে এই যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি পাবো আমি?
মায়ার অবস্থাও অরণ্যের থেকে ব্যাতিক্রম না। সেও একই যন্ত্রণায় জ্বলছে। অরণ্যের বিরহে কাতর মায়া শুধু চোখের অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। ফোনটার দিকে তাকিয়ে নিরবে চোখের পানি ঝাড়াচ্ছে মায়া। ওর মামী ওর আগের সিমটা নিয়ে নিয়েছে। মায়া জানে হয়তো অরণ্য ওকে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু ওর যে কোন উপায় নেই। সে যে অরণ্যের সাথে কোন যোগাযোগ রাখতে পারবে না। মায় ভাবতে লাগলো সেদিনের কথা।
ফ্লাসব্যাক,
সেদিন মায়ার মামী ওর হাত ধরে টেনে একটা রুমের ভেতরে নিয়ে যায়। তারপর রাগী কন্ঠে বলে।
–কি করছিলি তুই অরণ্যের সাথে হ্যাঁ? এখানে এসেই নিজের রঙঢঙ দেখাতে শুরু করে দিয়েছিস তাইনা?
মায়া কাঁদো কাঁদো গলায় বললো।
–মা মামী উনাকে সত্যি টা বলতে হবে। নাহলে অনেক বড়ো ক্ষতি হয়ে যাবে।
শিউলি বেগম চোখ বড়বড় করে বললো।
–কিহ্হ? পাগল হয়ে গেছিস তুই? আমাদের মাঝে কি কথা হয়েছিল তা ভুলে গেছিস তুই? তোর মামাকে দেওয়া ওয়াদার কথা ভুলে গেছিস?
–কি কিন্তু মামি, উ উনি আমাকে বলেছে উনি আমাকে ভালোবাসে। আর উনি আমাকেই বিয়ে করতে চেয়েছিল,রিয়াকে না।
মায়ার কথায় শিউলি বেগম খুব একটা অবাক হলেন না। তিনি তখন মায়া আর অরণ্যের সব কথা শুনেছেন। তাই তিনি তেজী সুরে বললেন।
–ও বললো আর তুই ঢ্যাঙঢ্যাঙ করে কোন কিছু না ভেবেই অরণ্যকে সবটা বলে দিতে চাচ্ছিস তাইনা? একবারও এর পরিণতির কথা ভাবলি না? ভাবলি না সত্যি টা সামনে আসলে কি হতে পারে? তোর মামার কথা একবারও ভাবলি না? তুই কি তোর মামাকে জেলে পাঠাতে চাস? এতো বছর ধরে তোকে লালনপালন করার এই প্রতিদান দিতে চাস তুই? এই বয়সে তাকে জেলের ভাত খাওয়াতে চাস?
মামীর কথায় মায়া দমে যেতে শুরু করলো। মায়া কখনোই ওর মামার কোন ক্ষতি চাইবে না। মামাকে ও নিজের বাবার মতোই ভালোবাসে। মায়াকে পুরোপুরি কনভিন্স করার জন্য ওর মামী আরও বলতে লাগলো।
–আচ্ছা তোর মামার কথা নাহয় নাই ভাবলি। অরণ্যের পরিবারের কি হবে? এসব কথা জানাজানি হয়ে গেলে অরণ্যের পরিবারের মানসম্মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ভেবেছিস একববারও? আরে এতো স্বার্থপর কিভাবে হতে পারিস তুই? যাদের সাথে এতোদিন থাকলি খেলি এখন তাদেরই মান ইজ্জত ধুলোয় মেশাতে চাস? অরণ্যের বড়ো বোনের জন্য এই পরিবার আগেও একবার লজ্জিত হয়েছে। এখন তুই আবারও সবার সামনে তাদের লজ্জিত করতে চাস? তুই জানিস অরণ্যের বাবার আগে একবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে? মরতে মরতে বেচেছেন তিনি। এখন এসব শোনার পর যদি উনার কিছু হয়ে যায় তখন কি করবি তুই? নিজেকে মাফ করতে পারবি তখন?
এবার মায়া সত্যি সত্যিই ভয় পেয়ে গেল। না না অরণ্যের পরিবারের কারোর কিছু হলে নিজেকে কখনোই মাফ করতে পারবে না ও। এই কয়েকদিনেই এই পরিবারের লোকজন ওকে কতো ভালোবাসা দিয়েছে। সেটা ও কখনোই ভুলতে পারবেনা। জীবন দিয়ে হলেও এদের কোন ক্ষতি সে হতে দিবে না।
মায়াকে ভয় পেতে দেখে শিউলি বেগম বাঁকা হাসলেন। তিনি ভালো করেই জানেন মায়ার ওপর এসব ইমোশনাল ব্লাকমেইলই কাজে লাগবে। তাইতো সে অরণ্যের বাবার মিথ্যে হার্ট অ্যাটাক এর কথা বলেছে। কারণ মায়া অনেক ইমোশনাল। সে নিজের জন্য কখনো কারোর ক্ষতি হতে দিতে চাইবে না।দরকার হলে নিজে কষ্ট ভোগ কথা কিন্তু অন্যের কোন ক্ষতি হতে দিবে না। শিউলি বেগম আবারও বলে উঠলো।
–আচ্ছা তারপরও যদি তুই সবকিছু ভুলে অরণ্যকে সবটা বলে দিস তাহলে কি হবে বল? সেকি খুশি খুশী তোকে মেনে নিবে তাই ভেবেছিস? কখনোই না। আর আজ যে ভালোবাসার কথা ও বলছেনা? তোর সত্যি টা জানার পর সেই ভালোবাসাই ঘৃণায় পরিবর্তন হয়ে যাবে। যখন জানতে পারবে তুই তাদের এতদিন ধোঁকা দিয়ে এসেছিস তখন অরণ্য সহ এই বাড়ির সবাই তোকে ঘৃণা করবে। তখন কি করবি তুই? আরে এসব ভালোবাসা টালোবাসা কিছুই না। আজ তুই সামনে আছিস তাই তোকে ভালোলাগছে। যখন তুই আর ওর সামনে থাকবিনা তখন দেখবি ও ধীরে ধীরে সব ভুলে রিয়াকে নিয়ে সুখে থাকবে। তাই বলছি মাথা থেকে এই সত্যি জানানোর কথা ছেড়ে দে। এতে সবার ক্ষতি ছাড়া ভালো কারোরই হবে না। তারচেয়ে সবকিছু যেমন চলছে তেমনই চলতে দে এতেই সবার মঙ্গল।
শিউলি বেগমের ব্রেন ওয়াশে মায়া কনভিন্স হয়ে গেল। সত্যি তো। মামী ঠিকই বলেছে। সত্যি টা জানলে সবার শুধু ক্ষতিই হবে। আর আমার জন্য সবার ক্ষতি হোক তা আমি কখনোই চাইবো না। আর ঠিকই তো, আমার ধোকার কথা জানলে আমাকে তখন ঘৃণা করবে অরণ্য। হ্যাঁ অরণ্য হয়তো কিছুদিন কষ্ট পাবে। কিন্তু আমাকে সামনে না পেলে একসময় ঠিকই আমাকে ভুলে গিয়ে নিজের জীবনে সুখী থাকবে। আর সবার খুশীর মাঝে আমার মতো একজন ব্যাক্তি অখুশি থাকলে তাতে খুব একটা যায় আসবে না।
এসব ভেবে মায়া সেদিন পিছিয়ে যায়। অরণ্যকে সত্যি টা আর জানায় না মায়া। আর না কখনো জানাবে। এটাই ডিসিশন নেয় সে। আর ওর মামীর সাথে চুপচাপ চলে আসে।
বর্তমান,
মায়া আজ এক সপ্তাহ পর ভার্সিটিতে এসেছে। এই কয়টা দিন নিজেকে একটু শক্ত করার চেষ্টা করেছে ও। যদিও কতটা সফল হয়েছে তা জানা নেই ওর। মায়া ক্যাম্পাসের মাঠ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। তখনই হঠাৎ পাশে তাকাতেই দেখলো বট গাছের নিচে তিন চারটা সিনিয়র ছেলেরা মিলে একটা মেয়েকে টিজ করছে। ব্যাপার টা দেখে মায়ার খুব রাগ হলো। মায়া ওদিকে এগিয়ে গিয়ে ছেলেগুলোর উদ্দেশ্যে বললো।
–এইযে ভাইয়ারা আপনারা সবাই মিলে একটা মেয়ের সাথে এমন অসভ্য আচরণ করছেন কেন? একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দাঁড়িয়ে এসব করতে আপনাদের লজ্জা করে না।
মায়ার কথায় মেয়েটি একটু সাহস পেয়ে মায়ার পেছনে গিয়ে লুকায়। তখন ওদের মাঝ এক ছেলে বিশ্রী হাসি দিয়ে বললো।
–আপনি কে ম্যাডাম? আর আপনাকে আমাদের ভেতর নাক গলাতে কে বলেছে?
এবার আরেকটা ছেলে বলে উঠলো।
–আরে বুঝস না ক্যান ভাই। আমরা তারে না লাইন মাইরা এই মাইডারে এপ্রোচ করতাছি তাই ম্যাডামের খারাপ লাগছে তাইনা ম্যাডাম? তা আগে কইবেন তো? তাইলে এক কাজ করেন আপনার মুখের নেকাব টা সরান আপনার মুখ দর্শন করি আমরা।
কথাটা বলেই ছেলেগুলো বিশ্রীভাবে হাসতে লাগলো। যা দেখে মায়ার শরীর রি রি করছে। মায়া রেগে গিয়ে ঠাস করে একজনের গালে চড় লাগিয়ে দিল। তারপর প্রতিবাদী কন্ঠে বলে উঠলো।
–খবরদার আর একটা বাজে কথা বললে সোজা প্রিন্সিপালকে গিয়ে কমপ্লেইন করে দিবো। তারপর দেখবো কার কতো দম। মেয়েদের সম্মান দিতে শিখুন। তারা আপনাদের মনোরঞ্জনের পুতুল না। আশা করি কথাটা মনে রাখবেন।
কথাটা বলে মায়া ওই মেয়েটির হাত ধরে ওখান থেকে চলে এলো। আর পেছন থেকে ছেলেগুলো ক্রোধে ফাটতে লাগলো।
____
রাত দশটা
অরণ্য বাসায় ফিরেছে। যদিও তার বাসায় ফেরার কোন ইচ্ছেই হয় না। তবুও দিনশেষে তাকে ফিরতেই হয়। নাহলে যে অরণ্যের মা চিন্তায় পড়ে যায়। আর পরিবারের খুশীর জন্য সে নিজের কষ্ট কাওকে বুঝতে দেয়না।
অরণ্যের মনটা আজ কেন যেন একটু বেশিই অশান্ত হয়ে উঠছে। কেন যেন মনে হচ্ছে কোন খারাপ কিছু হতে চলেছে। বারবার শুধু মায়ার কথা মনে পড়ছে। কিন্তু মনে পড়েই কি লাভ? মনকে তো বোঝাতে পারছে না যে মায়া তার থেকে অনেক দূরত্বে। অরণ্য রুমে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে নিজের ঘরি খুলতে লাগলো। রিয়া বেডে বসে ফোনে কথা বলছে। হয়তো ওর মায়ের সাথে কথা বলছে। হঠাৎ রিয়ার একটা কথায় ভ্রু কুঁচকে এলো অরণ্যের। রিয়া ফোনে বলছে,
–আরে মায়া এতরাতে এখানে আসতে যাবে কেন? গেছে হয়তো কোথাও দেখো গিয়ে।
একটু পরে রিয়া ফোন রেখে দিল। অরণ্যের বুকটা কেমন ধুকধুক করছে। রিয়া এভাবে বললো কেন? মায়া কি এখনো বাড়ি ফেরেনি? ব্যাপার টা না জানা অরণ্য শান্তি পাবে না। তাই অরণ্য রিয়ার দিকে তাকিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে বললো।
–কি হয়েছে? কোন সমস্যা? না মানে মায়া এতরাতে এবাড়িতে কি যেন বলছিলে?
রিয়া বললো।
–ওহ ওটা, আসলে মায়া নাকি ভার্সিটি থেকে বাসায় ফেরেনি এখনো। তাই মা ভাবছে আমাদের এখানে আবার এসেছে নাকি? ওর ফোনও নাকি বন্ধ আসছে।
রিয়া কথায় অরণ্যের বুক কেঁপে উঠল। মায়া এখনো বাড়ি ফেরেনি মানে? কোথায় গেল ও? কোন বিপদ হলো নাতো? অরণ্য রিয়াকে জিজ্ঞেস করলো।
–হয়তো কোন বান্ধবীর বাড়ি গেছে। খোঁজ নিয়ে দেখতে বলো।
–আরে ওর কোন বান্ধবী থাকলে না যাবে। আজপর্যন্ত ওর কোন বান্ধবী আমি দেখিনি। আর ওর অন্য কেন আত্মীয় স্বজনও নেই।
রিয়ার কথায় এবার প্রচুর ঘাবড়ে গেল অরণ্য। তাহলে কোথায় গেল ওর সন্ধ্যামালতী? ও সত্যি সত্যিই কোন বিপদে পড়লো নাতো? ভাবতেই ভয়ে গলা শুঁকিয়ে আসছে ওর। না না আ আমার মায়ার কিছু হতে পারে না। কিছুতেই না। আমি কিছু হতে দিবো না। অরণ্য হঠাৎ তড়িৎ গতিতে বাইরে চলে গেল। রিয়া শুধু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ভাবলো, এর আবার কি হলো?
অরণ্য বাইরে এসে দিশেহারা হয়ে যায়। কোথায় যাবে এখন সে? কোথায় খুঁজবে তার সন্ধ্যামালতীকে? সেতো মায়ার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। হঠাৎ অরণ্যের মায়ার ভার্সিটির কথা মনে পড়লো। হ্যাঁ ওখানে গিয়ে কোন খবর পেতে পারি। অরণ্য আর এক সেকেন্ডও দেরি না করে দ্রুত গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো।
মায়ার ভার্সিটির সামনে এসে দেখলো ক্যাম্পাসের গেট বন্ধ। অরণ্য গেটের দারোয়ান দের কাছে গিয়ে মায়ার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলো। কিন্তু তারা কিছুই বলতে পারলো না। অরণ্য আশেপাশে সব দোকানপাটে গিয়ে মায়ার ডিসক্রিপশন দিয়ে মায়ার কথা জিজ্ঞেস করতে লাগলো। কিন্তু কেউই কিছু বলতে পারছে না। অরণ্য পাগল হয়ে যাচ্ছে। কোথায় গেল মায়া?
অরণ্য আরও কিছু লোককে জিজ্ঞেস করতে লাগলো। তখনই দুটো মেয়ে সামনে দিয়ে হেঁটে আসছে। অরণ্য গিয়ে তাদেরও মায়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলো। তাদের মাঝে একটা মেয়ে বলে উঠলো।
–আরে ওই আপুটা তো আজকে আমাকে ওই বদমাইশ লোকগুলোর কাছ থেকে বাঁচিয়েছে।
অরণ্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
–বাঁচিয়েছে মানে?
মেয়েটা অরণ্যকে সবকিছু খুলে বললো। তারপর বললো।
–ভাইয়া ওই লোকগুলো মোটেও ভালো না। খুবই খারাপ। ওরা আবার আপুর সাথে কিছু করলো নাতো?
মেয়েটার কথায় অরণ্যের পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেল। আৎকে উঠলো মন মস্তিষ্ক। ওর মায়ার কিছু হলে কি করবে ও? না না কিছু হবে না ওর। আমি কিছু হতেই দিবোনা। অরণ্য নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বললো।
–আপনি কি ওদের কাওকে চিনেন?
–সবাইকে তো চিনিনা। তবে একজন কে হয়তো চিনি। উনি আমাদের ভার্সিটির ভিপি এর চ্যালা। অনেক সময় তার পিছু পিছু ঘুরতে দেখেছি। আসলে আমার বাসা এখানে পাশেই তাই দেখেছি।
অরণ্য চোয়াল শক্ত করে বললো।
–নাম কি তোমাদের ভিপির?
মেয়েটি ভিপির নাম বলে দিলো। অরণ্য মোবাইল বের করে ফেসবুকে ভিপির আইডি সার্চ করে বের করলো। সেখান থেকে কয়েকটা ছবি বের মেয়েটিকে দেখিয়ে বললো।
–দেখোতো এখানে ওই ছেলেগুলোর কেউ আছে নাকি?
মেয়েটি একটা ছেলের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বললো।
–হ্যাঁ হ্যাঁ ভাইয়া এই ছেলেটাই ছিল। আর আপু এই ছেলেটাকেই থাপ্পড় মেরেছিল।
–ওকে অনেক ধন্যবাদ আপু।
মেয়েটি চলে যেতেই অরণ্য ছবির ট্যাগে গিয়ে ওই ছেলেটার আইডি খুঁজে বের করলো। সেখান থেকে ছেলেটার নাম জেনে নিল। তারপর অরণ্য ওর এক বন্ধুকে ফোন করলো। যে হ্যাকিং করায় এক্সপার্ট। তাকে ফোন করে বললো।
–শোন একটা ইমার্জেন্সি এসে গেছে। তোকে একটা ফেসবুক আইডি দিচ্ছি। আমাকে ওর নাম্বার সহ পুরো ডিটেইলস দে রাইট নাও। আমার কাছে সময় নেই একটুও।
–ওকে ওকে ইয়ার এখুনি করছি।
দুই মিনিট পরেই সে ওই ছেলেটার সব ডিটেইলস দিয়ে দিল। অরণ্য এবার ওই ছেলেটার নাম্বারের লোকেশন ট্রেস করতে বললো। অরণ্য নিজেও ওই নাম্বারে কয়েকবার ফোন দিল কিন্তু ফোন রিসিভ হচ্ছে না। একটু পরেই অরণ্যের বন্ধু ওই ছেলেটার লোকেশন ট্রেস করে অরণ্যকে পাঠিয়ে দিল। অরণ্য দ্রুত সেই লোকেশনে রওয়ানা হলো। ওর সন্ধ্যামালতীর কোন ক্ষতি হতে দিবে না সে। অরণ্য এই ব্যাপারে পুলিশকে আগেই ইনভলভ করতে চাচ্ছে না। কারণ এতে করে মায়ার বদনাম হতে পারে।
____
চোখের ওপর পানির ঝাপটা পড়তেই চোখ কুঁচকে তাকানোর চেষ্টা করলো মায়া। কয়েক বার পলক ঝাপটে ভালো ভাবে চোখ মেলে তাকালো সে। তাকাতেই দেখলো কয়েক জোড়া শকুনির মতো চোখ ওর দিকে নজর গেড়ে দাঁড়িয়ে আছে। মায়া দেখলো ওর হাত পা বাঁধা। ছেলেগুলোর দিকে ভালো ভাবে তাকাতেই বুঝতে পারলো এরা ভার্সিটির সেই নোংরা ছেলেগুলো। যা দেখে মায়ার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল। ও কোথায়? আর এই লোকগুলো এখানে কি করছে? তখনই ওর মনে পড়লো, ও টিউশনি শেষ করে যখন বাড়ি ফিরছিল তখন রাস্তায় কেউ পেছন থেকে রুমাল মুখে চেপে ধরে। তারপর আর কিছু মনে নেই ওর। তাহলে কি এরা আমাকে কিডন্যাপ করে এনেছে। ভাবতেই আতঙ্কে মায়ার হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো। আতঙ্কিত কন্ঠে বললো।
–আ আপনারা আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন?
ওদের মাঝে একজন বিশ্রী হাসি দিয়ে বললো।
–কি ম্যাডাম সব তেজ শেষ? তখন তো খুব তেজ দেখাচ্ছিলেন। তা এখনো একটু দেখান না? আপনার তেজী রুপটা না হেব্বি লেগেছে আমাদের। তাইতো আপনার তেজের সম্মান জানাতে আপনাকে স্পেশালি নিয়ে আসা হয়েছে।
কথাটা বলেই সবাই উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো।
মায়া ভীতু স্বরে বললো।
–দে দেখুন ছেড়ে দিন আমাকে। নাহলে কিন্তু ভালো হবে না। আমি কিন্তু চিল্লিয়ে মানুষ জড়ো করে নিবো।
ওদের একজন তিরস্কার করে বললো।
–ওমা তাই নাকি? আমরা তো অনেক ভয় পেয়ে গেলাম। প্লিজ দয়া করে এমন করবেন না।
কথাটা বলে ওরা আবারও হাসতে লাগলো। তারপর সেই চড় খাওয়া ছেলেটা মায়ার সামনে এক হাঁটু গেড়ে বসে ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে বললো।
–তুই গলা ফাটিয়ে চিল্লালেও তোকে বাঁচানোর জন্য এখানে একটা কাক পক্ষিও আসবেনা। এটা একটা ঘন জঙ্গল। এখানে মানুষের কোন নাম গন্ধ নেই। তোকে বাঁচাতে এখানে কেউ আসবেনা। অনেক বীরত্ব দেখিয়েছিলি না তখন? এখন দেখি তুই নিজেকে আমাদের হাত থেকে কিভাবে বাঁচাতে পারিস।
মায়ার এবার ভয়ে জান বেড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম। শেষমেশ কি তাহলে এই নরপশুদের কাছে ওর সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস খোয়াতে হবে? না না এরচেয়ে যে মরনও ভালো। হে আল্লাহ আমাকে এই নরপশুদের হাত থেকে রক্ষা করো।
চলবে……
গল্প নিয়ে যেকোনো আলোচনা আড্ডা দিতে আমার গ্রুপে জয়েন হওয়ার আমন্ত্রণ রইল।
গ্রুপ
https://facebook.com/groups/170529085281953/