#রাগে_অনুরাগে
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব- ৮
– সময় প্রবাহ মান,,,কিন্তু এক এক সময় যেন মনে হয় সে একজায়গা তেই দাঁড়িয়ে আছে,,, যা অনেকের কাছে স্বাভাবিক লাগলেও অভ্রের কাছে লাগে না,,,এই যে কত সময় ধরে সে অপেক্ষা করছে অনুপমার জন্যে,,, কিন্তু অনুপমা আসছে না,,, মুহুর্তেই অভ্রের মনে হলো এখনই বুঝি সময় একজায়গা তেই দাঁড়িয়ে আছে,,, থেকে থেকে পেপার ওয়েটটা ঘোরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো অভ্র। হঠাৎ এক রিনরিনে কন্ঠস্বরে ও চিন্তার জগত থেকে বিরত হলো,,,
– আসবো??(অনু)
-আসার জন্যেই তো ডেকে পাঠিয়েছি অনু,,,(অনুর দিকে না তাকিয়েই পেপার ওয়েট টা ঘোরাতে লাগলো অভ্র)
– আসলে আমি একটু কাজ করছিলাম,,,(কথা টা শোনা মাত্রই পেপার ওয়েটটা থামিয়ে সেটা যথাস্থানে রেখে অনুর দিকে দৃষ্টিপাত করে , তারপর অভ্র বলে ওঠে,,)
– ব্যস্ত আছো নাকি??
– না তেমন না,,,কেন কিছু দরকার আপনার??
– হ্যাঁ আসলে কালকে একটা জায়গায় যেতে হবে আমাদের,,, তুমি রেডি থেকো ১০.৩০ টার মধ্যে,,
– কালকে তো হবে না আমার,,, মানে কলেজে একটু দরকারি কাজ আছে,,,,
– সমস্যা টা কোথায় অনু??(চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে প্যান্টের পকেটে হাত রেখে প্রশ্নটা করে অভ্র)
– অভ্রের কথায় অনু নিজের কপাল কুঞ্চিত করে বলে ওঠে “সমস্যা মানে? কি বলছেন মি.চৌধুরী আমি ঠিক বুঝতে পারছি না”???
– সত্যিই কি তুমি বুঝতে পারছো না?? আজ সকাল থেকেই দেখছি তুমি যেন কেমন একটা ব্যবহার করছো,,,,তাই সরাসরি জিজ্ঞাসা করছি সমস্যা টা কি???? সমস্যাটা কোথায় হচ্ছে তোমার????
– সমস্যা টা কিছুই না মি.চৌধুরী,,, আপনি অযথাই এত ভাবছেন,,আর আমি সত্যিই দুঃখিত মি.চৌধুরী কালকে আপনার সাথে আমি যেতে পারবো না,,,
– অনু যাওয়াটা খুব দরকার ছিল,,, নাহলে সমস্যা হবে,,,
-আমারো কালকে কলেজ যাওয়াটা ভীষণ দরকার মি.চৌধুরী,, আর দুঃখিত আমার জন্য কালকে আপনি সমস্যায় পড়বেন,,,আর তো কয়েকটা মাস মাত্র একটু সমস্যা নাই বা পোহালেন মি.চৌধুরী,,, তার পর আপনি আর আমি দুজনেই মুক্ত,,,(অনুর মনের মধ্যে জমে থাকা অভ্রের প্রতি অভিমান থেকে এত গুলো কথা এমনি এমনি শুনিয়ে দিলো অভ্রকে আর অনুর কাছ থেকে এমন কথা শুনে মুহূর্তে অভ্রের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো,,তারপর নিজেকে যথেষ্ট সামলে বলে,,,)
– ওয়েট ওয়েট অনু আমি তোমাকে কি এমন বলেছি যে তুমি এত গুলো কথা বললে??? দরকার নেই তোমার যাওয়ার,, আমি একাই চলে যাবো,,,আর সত্যিই তো আমি এত কেন ভাবছি কনট্রাক্ট অনুযায়ী আর তো মাত্র কয়েকটা মাস ব্যাশ তারপর আমি মুক্ত তোমার থেকে,,, আর তুমিও,,,,(কথা গুলো খুব গম্ভীর হয়ে শান্ত গলায় বললো অভ্র)
-……..(নিশ্চুপ)
– এখন তুমি আসতে পারো,,(একটু জোড়েই বলল)
– অনু কোনো কথা না বলে সোজা ঘরে চলে যায়,,,
– আজ তোমার ব্যবহারে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি অনু,,,, তুমি যখন চাও আমার থেকে দূরে যেতে তবে তাই হোক,,,আমিও চাই না আমার জন্য অযথাই তুমি অসস্তিতে পড়ো,,,,
___________________________________________
– মৃদু মন্দ বাতাসে চুল গুলোকে উড়িয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে এই প্রকৃতি,,,,প্রকৃতির এই কালো আকাশেও আজ পূর্ণ চন্দ্র উদিত হয়েছে আর তার সাথে যোগ দিয়েছে অসংখ্য নক্ষত্র,,যা এই কালো আকাশে আলোর ছটা দিচ্ছে,,,আর সেই অসংখ্য নক্ষত্রদের ভিড়ে একজোড়া চোখ খুঁজে চলেছে তার মাকে,,,সেই যে ছোটবেলায় মাকে হারানোর পর থেকেই যখন ওর মায়ের কথা মনে পড়তো ,,,আর কাঁদতো তখন একদিন পিসি ওকে বলেছিলো,,,
– অনু দেখ ঐ যে চাঁদটা আছে না,,ঠিক তার পাশে যে নক্ষত্র টা জ্বলজ্বল করছে ওটা হচ্ছে বৌমনি মানে তোর মা,,,তুই তোর সব মনের কথা আমাকে কিংবা ঐ নক্ষত্র টাকে বলতে পারিস,,,এখন আর কাঁদিস না সোনা মা আমার,,,,চল নীচে চল,,,খেয়ে নে,,তখন পিসির কথায় ছোট্ট অনু হাত দিয়ে চোখের জল মুছে বলেছিল,,,
– সত্যি পিসি?? ওটা আমার মা,,,তাহলে তো আমি রোজ মাকে দেখতে পাবো,,,বলেই হেসে উঠেছিল,,, ছোট্ট সে অনু বুঝতো না তখন,,ওর কথা শুনে পিসির চোখ সেদিন ছলছল করে উঠেছিল,,,, এমনই অনেকদিন গিয়েছে অনু মাঝে মাঝে সেই নক্ষত্র টাকে খুঁজে পেত না,, তখন সারারাত কান্নাকাটি করতো,,,এমনকি খেতোও না,,,,সেদিন অনুর বাবাও ওকে সামলাতে পারতো না,,,,,পুরোনো স্মৃতিচারণ করতেই অনু ম্লান হাসলো,,তারপর নিজের চোখের জল মুছে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,,,
– মা গো কেন আমাকে এই পৃথিবীতে একা করে চলে গেলে?? তুমি কি জানো মাঝে মাঝে আমার মনে একটা প্রশ্ন খুব ঘুরঘুর করে,,,আমার মনে হয় তুমি নেই বলেই হয়তো আমার জীবনে এত কষ্ট,,,,,ও মা জানো আমি না একটুও ভালো নেই,,, আমার মনটাও একটুও ভালো নেই,,,সব কিছু ঠিক হয়েও যেন হচ্ছে না,,, আমার খুব ইচ্ছা করে জানো তোমার আদর খেতে,,,তোমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে,,,আমার মনে হয় এই বুঝি তুমি তোমার আদর মাখানো হাত আমার মাথায় রেখে বলবে যে অনুমা এইতো আমি,, দেখ আর কোনো কষ্ট নেই,,,কিন্তু তুমি বলো না,,, একটা বারের জন্য হলেও আসোনা আমার কাছে,,,, কেন আসোনা মা?? বলো না,,,,
– অনু অনু খেতে আয় রাত হয়েছে অনেক,,আর এসময়ে ছাদে কি করছিস????(আশার ডাকে অনুর ভাবনায় ছেদ ঘটে,,ও দ্রুত জবাব দেয়,,,)
– যাচ্ছি মা,,,তারপর নিচে নেমে ডাইনিং টেবিলের দিকে যেতে যেতে বলে,,,,মুন্নী মাংসটা গরম কর তোর দাদাভাই এর জন্য যেটা রেখে ছিলাম ফ্রিজে,,,আর মা আমি একটু ঠান্ডা বাতাস খেতে গিয়েছিলাম ছাদে,,,
– তা বলে এত রাতে,,,কটা বাজে দেখেছিস?? মুন্নী মাংস গরম করার দরকার নেই অভ্র খাবে না বলেছে,,,,আমি অনেকবার বলেছি কিন্তু,,(আশা)
– ও ঠিক আছে মা তুমি খেতে শুরু করো আমি একটু আসছি,,মুন্নী তুই মাকে খেতে দিয়ে নিজেও খেয়ে নে,,,বাবার তো খাওয়া হয়ে গেছে মা??
– হ্যাঁ খাওয়া হয়ে গেছে,,তা তুই খাবি না,,,
– হ্যাঁ মা খাবো তোমরা শুরু করো আমি আসছি,,,(কথাটা বলেই অনু রান্নাঘরে চলে যায়,,তারপর মাংস গরম করে । একটা প্লেটে অল্প ভাত আর মাংস নিয়ে লাইব্রেরী রুমের দিকে গেল,,)
– আসবো???
– যদি বলি না??
– (অভ্রের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে অনু ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে)আপনি না বললেও এই মুহূর্তে আমাকে আপনার অবাধ্য হয়েই এই ঘরে প্রবেশ করতে হবে মি.চৌধুরী। আর দেখুন অযথা খাওয়ার উপর রাগ দেখাবেন না,,
– আমি রাগ দেখিয়েছি তোমাকে কে বললো অনু? আমি কি সেইরকম কিছু ইঙ্গিত করেছি???
– না করেননি তবুও আমার মনে হলো,,,এখন চটপট বড়ো করে একটা হা করুনতো,,,(বলেই প্লেটে ভাত মেখে এক লোকমা অভ্রের মুখে পুরে দিলো অনু,,অনুর এইরকম কাজে হতবাক হয়ে যায় অভ্র,,তারপর মুখের ভাত চিবিয়ে খেয়ে বলে,,,)
– ফালতু মায়া বাড়িয়ে কি লাভ অনু??,,,মুক্তি তো তুমি পেয়েই যাবে,,
– মি.চৌধুরী যতদিন এই বাড়িতে আছি ততদিন না হয় একটু মায়া বাড়ালাম,,ক্ষতিতো কিছু হবে না,,,(বলেই আবার অভ্রকে খাইয়ে দেয়)
– আমি তো আপনার থেকে দূরেই থাকতে চাইছি কিন্তু দেখুন পারছি না,,যতবার দূরে যেতে চাইছি ঠিক ততবারই আপনার কাছে আসতে বাধ্য হচ্ছি,,,(মনে মনে বলল অনু)
– অনু প্লেট টা এখানে রেখে যাও,,,,আমি খেয়ে নিতে পারবো,,,তোমাকে এত কষ্ট করতে হবে না,, যাও গিয়ে খেয়ে নাও,,,অনেক রাত হয়েছে,,,
– মি.চৌধুরী সরি,,,কাল কে সত্যিই আমার কলেজে কাজ আছে এবং সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ,,,নাহলে আমি আপনার সাথে অবশ্যই যেতাম,,,
– সরি বলতে হবে না,, আমি একাই চলে যাবো,,,এখন যাও খেয়ে নাও,,,
– ঠিক আছে আসছি আমি,,আপনি প্লিজ খেয়ে নেবেন,,(বলেই ভাতের প্লেট টা রেখে অনু চলে যায়)
__________________________________________
– রাতে খাওয়া দাওয়া করে অনু ঘরে এসে বিছানা করে,,তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে,,,ব্যালকনির দরজা খোলা থাকায় সেটা বন্ধ করতে যায় ও কিন্তু ব্যালকনির টবে রজনীগন্ধা ফুলের গন্ধে ওখানে না দাঁড়িয়ে আর থাকতে পারলো না অনু,,, আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে বেশ কিছুক্ষণ,,,তারপর নিজের মনেই বলে ওঠে,,,
– না হয় দ্বিতীয় বার সুযোগ দিলাম জীবনটাকে,, দেখিই না জীবন কোন দিকে নিয়ে যায় আমাকে,,,মি.চৌধুরীর মনে কি আমি এত দিনেও একটু জায়গা করে নিতে পারিনি??এই ভাবে একই বাড়িতে থেকে উনাকে অবহেলা করতে পারবো না আমি,,,,উনাকে অবহেলা করতে গিয়ে আমি নিজেই কষ্ট পাচ্ছি বেশি,,,দেখিনা এই কয়েক মাসে উনার মনে জায়গা করে নিতে পারি কিনা,,, তার পর যা হবে সেটাই মেনে নেবো,,,যদি চলে যেতে বলেন তাহলে চলে যাবো আর যদি,,
– আর যদি থেকে যেতে বলি,,,
– হঠাৎ এক ভরাট পুরুষালী কন্ঠ শুনে অনু স্তব্ধ হয়ে যায়,, তার উপর এই কন্ঠস্বরের মালিক যে অভ্র সেটা বুঝতেও অসুবিধা হলো না ওর,,,অভ্রের মুখে এমন কথা শুনে কয়েক মুহূর্তের জন্য অনুর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল,,,সামনে ফেরার মতো সাহস হয়ে উঠলো না ওর,,,আপনমনেই বলে,,,
– তবে কি উনি শুনে ফেললেন,,,এখন কি হবে,,ও ভগবান,,(অনু)
– কি হল?,,কিছু বললাম তো,,যদি থেকে যেতে বলি,,,??
– আসলে,,,মা,,নে,,(সামনের দিকে ফিরে নিচের দিকে তাকিয়েই তোতলাতে লাগলো অনু)
– সত্যিই তুই জীবনে শুধরাবি না,,,আমার বৌ বরং তোকে থেকে যেতেই বলবে হৃদয়,,,
– (অভ্রের কথায় অনু সামনে তাকায়) ও তার মানে উনি ফোনে কথা বলছিলেন,,, কিন্তু হৃদয়,, কোন হৃদয়,,,(মুহূর্তের মধ্যে অনুর বুকের ভেতর মোচর দিয়ে উঠে ,,চোখ ভর্তি হয়ে আসে টলমল জলে)
– ঠিক আছে রাখছি আমি,,,(ফোন টা রেখে সামনে তাকিয়ে দেখে অনু ওর দিকে তাকিয়ে আছে)একি অনু তুমি ঘুমাওনি??
– না আসলে,,এমনি ঘুম আসছিলো না তাই,,
– বেশি রাত জেগো না,,,ঘুমিয়ে পড়ো,,,নাহলে শরীর খারাপ করবে,,,
– এত রাতে ফোনে কার,, মানে,,
– ও তুমি চিনবে না,,,হৃদে আমার বন্ধু বিদেশে থাকে,,,আমার বাবার বন্ধুর ছেলে,,,আমার বিয়েতে ও আসতে পারিনি তাই ফোন করে ছিল,,ঘুমিয়ে পড়ো তুমি,,,( ক্যাবিনেটের উপরে ফোনটা রেখে ওয়াশরুমে চলে যায় অভ্র )
– অভ্রের মুখে হৃদয় নাম টা শুনে অনুর মনটা খারাপ হয়ে যায়,,, এক সময় এই নামটাই তো ছিল ওর জীবনের সব কিছু,,, বিছানায় শুয়ে এই সব কথা ভাবতে ভাবতে অনু ঘুমিয়ে পড়ে একসময়,,, আর এইদিকে অভ্র ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে অনু গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে,,, ও অনুকে সোজা করে ওর গায়ে চাদর টেনে দিয়ে দেয়,,,তারপর কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে অনুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে,,,
__________________________________________
-পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে অনু দেখে ও অভ্রকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে,,,এটা দেখার সাথে সাথেই ও সরে যায়,,,কেননা অভ্র যদি দেখে তাহলে ভুল বুঝবে,,,
-ভাগ্যিস উনি ঘুমাচ্ছেন,,,যদি এই ভাবে আমাকে দেখতেন তাহলে কি যে ভাবতেন,,,ইসসস(বলেই ওয়াশরুমে চলে যায়)
– হঠাৎ অভ্রের ঘুম ভেঙ্গে যায় মুখে জল ছিটকে আসায়,,,ও হালকা করে চোখ খুলে দেখে অনু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টাওয়াল দিয়ে চুল ঝাড়ছে,,,,আর যেহেতু বেডের খুব কাছে ড্রেসিং টেবিল রয়েছে সেহেতু অনুর চুল ঝাড়ার জল ওর চোখেমুখে লাগছে,,,হাত দিয়ে মুখে লেগে থাকা জলকে স্পর্শ করে সামনে তাকিয়ে অনু কে এমন অবস্থায় দেখে অভ্রের চোখ থেকে এমনিই ঘুম উড়ে যায়,,,,কারণ অনুকে আজ খুব সুন্দর লাগছিলো,,,অনু আজ একটা ব্লাক কালারের নেটের শাড়ি পড়েছে যার আঁচল একট করে ছেড়ে দেওয়া ফলে ওই আঁচলকে ভেদ করে ওর মেদহীন অনাবৃত পেটের নাভির ঠিক নিচে গাঢ় কালো তিলটা পরিলক্ষিত হচ্ছিলো,, যা অভ্রকে মুহূর্তেই কোনো ঘোরের মধ্যে নিয়ে যেতে সক্ষম এবং অনুপমার সারা শরীরে বিন্দু বিন্দু জল লেগে আছে সদ্য স্নান করার কারনে যা অভ্রকে পাগলপ্রায় করে তুলেছিল,,,সাথে সাথেই নিজের মনে অভ্র স্বীকার করে যে অনুকে খুব অল্পতেই সুন্দর লাগে,,,এই যেমন এখন খুব সাধারণ ভাবেই সেজেছে,,হাতে সিলভার কালারের চুড়ি,,কপালে একটা কালো টিপ,,,চোখে কাজল আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক,,, এই সাধারণের মাঝেও যেন অসাধারণ লাগছে অভ্রের কাছে ওকে,,,এবার আর অভ্র নিজেকে কনট্রোল করতে পারলোনা,,,
– (অনু যখন প্রায় রেডি হয়ে যায়,, তখনই বাঁধে বিপত্তি,, হঠাৎ করেই ব্লাউজের হুক খুলে যায়,,,) উফফ অসহ্য মুন্নী কে সেই কখন আসতে বলেছি,,,কিন্তু সেই মেয়ের সময় হলে তো,,ব্লাউজের হুক টা লাগাতেই পারছি না,,, দূর এই রকম পিছনে হুক থাকা ব্লাউজ আর আমি করবো না,,,সময় অসময়ে এই রকম সমস্যা হলে ভীষণ বিরক্ত লাগে দূর,,,ভাগ্যিস উনি ঘুমাচ্ছেন না হলে এই অবস্থায় উনার সামনে দাঁড়াতাম কি করে,,,,(কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই আচমকা পিঠে কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে অনু চমকে যায়,,, আয়নায় তাকিয়ে দেখে পিছনে অভ্র দাঁড়িয়ে আছে,,অভ্রকে এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুহূর্তের মধ্যে ওর শরীরে তড়িৎ খেলে যায়,,,তারপর অভ্রের হাতের স্পর্শ পেয়ে ও সাথে সাথেই চোখ বন্ধ করে ফেলে আর দু হাত দিয়ে নিজের শাড়ি খামচিয়ে ধরে,,,,)
– অনুকে চোখ বন্ধ করতে দেখে অভ্র মুচকি হেসে ব্লাউজের হুক লাগিয়ে দেয়,,,তারপর ফিতে দুটো ভালো করে বেঁধে দেয়,,,অনু তখনো চোখ বন্ধ করে থাকে,,,অভ্র ফিরে আসতে চেয়েও পারে না,,, অনুর উন্মুক্ত ফর্সা পিঠে নিজের অধরযুগল ছোঁয়াতেই কেঁপে ওঠে অনু,,,অভ্রের গভীর স্পর্শ পেয়ে মুহূর্তেই অনুর শিড়দাঁড়া বেয়ে যেন শীতল রক্তের স্রোত বয়ে যায়,,আর তার সাথে সাথেই অনু কেঁপে উঠে,,,অনুর এমন কেঁপে ওঠা দেখে খুবই সন্তপর্ণে অনুকে কোলে তুলে নেয় অভ্র তারপর বিছানায় শুইয়ে দেয় ওকে,,,
– অনুর নিজেকে যেন হালকা লাগছে,,, লজ্জায় যেন মুখ হয়ে উঠেছে রক্তিমময়,,চোখ যে সেই বন্ধ করেছে এখনো সেই চোখ খুলে সামনের মানুষটিকে দেখার সাহস হয়নি লজ্জায়,,, অভ্র অনুর এমন রক্তিমময় মুখ দেখে ওকে আরো বেশি লজ্জা দেওয়ার জন্য অনুর পেটের উপর থেকে শাড়িটা সরিয়ে দেয়,,,তারপর হাত দিয়ে আস্তে আস্তে করে স্লাইড করতে থাকে,,,দুজনেই যেন কোনো একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায়,,অভ্রের এই রকম আচরনে অনু চোখ বন্ধ করেই ওকে জড়িয়ে ধরে আর অভ্র অনুর সম্মতি পেয়ে অনুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,,, কিছুক্ষণ পরে অভ্রের নজর যায় অনুর অধরযুগলে যা আরো পাগল করে দেয় তার পাশে তিল টার অবস্থান দেখে,,,তারপর খুবই ধিরে ধিরে অভ্র সেখানে নিজের অধরযুগল ছুঁইয়ে দিল,,,এই রকম কিছু হবে অনু আশা করেনি,,,ওর মনে হল বুকের ভেতর হৃপিন্ড জোড়ে জোড়ে বারি মারছে,,,,শরীর পুরো হালকা হয়ে এসেছে,,, এমন সময়,,,
– বৌদিভাই ও বৌদিভাই(মুন্নী জোড়ে জোড়ে ডাকে অনু কে)
– মুন্নীর ডাকে হুশ আসে ওদের দুজনের ,,,অনু সাথে সাথেই চোখ খোলে,,,কিন্তু অভ্রের দিকে তাকায় না,,,আর এইদিকে অভ্র বিরক্তি নিয়ে তাড়াতাড়ি অনুর উপর থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়,,,
– কি হয়ে যাচ্ছিলো??? এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়বো ভাবতেই পারিনি,,, ইশশ কি লজ্জা,, এবার আমি উনার সামনে যাবো কি করে?? আর একটু হলেই তো,,,ভাগ্যিস মুন্নী এসে ডাকলো,,,(নিজের গায়ের কাপড় ঠিক করে দরজা খুলে দিল অনু)
– এত দেরি হলো কেন দরজা খুলতে বৌদিভাই???
– শাড়ি পড়ছিলাম তো,,তাই,,,,আর তাছাড়া,,, তাছাড়া তোকে কখন থেকে ডাকছি একটু সা ,,সাহায্য করার জন্য,,,,
– ওওও এইজন্যে আমাকে ডাকছিলে?? তা তুমি তোতলাচ্ছো কেন???
– কোথায় তোতলাচ্ছি পাগল?? এখন যা আমার হয়ে গেছে,,,আর শোন তোর দাদাভাই ঘুম থেকে উঠে গেছে,, উনি আবার কোথায় যেন যাবেন,,তাই বলছি যে তুই খাবার গুলো টেবিলে দিয়ে দে,,আমি যাচ্ছি একটু পরে,,
– ঠিক আছে,,,(বলেই চলে গেল মুন্নী,,, আর মুন্নী যেতেই অনুপমা বুকে হাত দিয়ে বলে খুব বাঁচা বেঁচে গেছি আজকে তারপর আবার রেডি হতে লাগলো,,)
– কিছু সময় পর অভ্রকে ওয়াশরুম থেকে বেরোতে দেখে অনু সাথে সাথেই চুল বাঁধার কাজে মনোযোগ দেয়,,,লজ্জায় আর ও অভ্রের দিকে তাকাতে পযর্ন্ত পারছে না।
– অনুকে চুল বাঁধতে দেখে অভ্র পিছন থেকে বলে ওঠে,,,”চুল গুলো খোলায় থাকুক,,”
– অভ্রের কথার প্রতিউত্তরে অনু হম বলে চুল গুলো ছেড়েই নীচে চলে যায় তাড়াতাড়ি কেননা ওর পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না অভ্রের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার,,,আর যাওয়ার সময় বলে যায়
– মি.চৌধুরী ব্রেকফাস্ট টেবিলে ওয়েট করছি,,,
চলবে…..
(কপি পেস্ট করবেন না। যারা যারা পড়বেন সবাই রিয়্যাক্ট ও গঠনমূলক মন্তব্য করবেন)