অদৃষ্টে_তুমি_আমি #লেখিকা_সিনথীয়া #পর্ব_৩

0
594

#অদৃষ্টে_তুমি_আমি
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_৩

এ টিমের ডিমার্টমেন্টে আলোচনা চলছেই। বিষয় একটাই: রিতভিক হাসান। পৃথা অনেক চেষ্টা করছে নিজেকে এসব থেকে দূরে রাখতে তবে তা পারছে না। কানের কাছে এভাবে গল্প চললে না শুনে থাকা যায়? অসহ‍্য লাগলেও শুনতে হচ্ছে। তবে ওর যে নিজের কোনো কৌতুহল নেই তা বললেও আবার ভুল হবে। বর্তমানের স্বাধীন কেমন, তা কেন যেন ওর জানতে ইচ্ছা করছে। মোট কথা, এখন পৃথা কি চাচ্ছে তা ও নিজেও বুঝতে পারছে না।
কোনো একজন নতুন সদস‍্য আসলে তাকে নিয়ে জানার কৌতুহল এমনিতেই থাকে। তারওপর যদি সেই সদস‍্য হয় কম্পানির মালিক, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। তার ব‍্যাকগ্রাউন্ড, পরিবার এমনকি পারসোনাল লাইফ নিয়েও আলোচনা চলছে পুরো দমে। এই পারসোনাল ডিসকাশনেই সতর্ক হয়ে গেল পৃথা। বাকিরা কি কি জেনেছে তা শোনার জন‍্য অজান্তেই কান আগিয়ে দিল। ইমরান বলছে,
– স‍্যারের পরিবারের সবাই বাইরেই সেটেল্ড। এখন ওখানেরই সিটিজেন তারা। বাবা মা দুজনেই আছেন। তার ছোট একটা বোনও আছে। স‍্যারের বেশ কাছের।
নিতা ইমরানের প্রশংশা করলো,
– বাহ্ ইমরান ভাই, আপনার এই জবে না এসে গোয়েন্দা হওয়া উচিত ছিল। এতো ইনফো পান কিভাবে?
– আরে ধুর! আজকালকার জামানায় এসব জিনিস বের করা কোনো কঠিন কাজ নাকি? নেটে সবই পাওয়া যায়।
-তাহলে এবার স‍্যারের পারসোনাল লাইফের ইনফো দেন ।

সবাই এ কাথায় নিতার দিকে তাকালো। রাশেদ বললো,
– ব‍্যাপার কি নিতা? রিতভিক স‍্যারের পারসোনাল লাইফ নিয়ে বোধহয় তোমার খুব ইন্টারেস্ট হচ্ছে? ওনাকে পছন্দ টছন্দ হয়ে গেল নাকি?
নিতা লজ্জা পায়,
– আরে না না রাশেদ ভাই। সেরকম কিছু না। আসলে স‍্যারের ব‍্যাপারে সবই যখন জানতে পারছি তখন এটা কেন বাদ যাবে? তাই জিজ্ঞেস করলাম আরকি। আমার ডিপার্টমেন্ট থেকে মাত্র আসলাম। সেখানেও স‍্যারকে নিয়েই কথা চলছে। বিশেষ করে ফিমেল ইমপ্লোয়িরা বেশ ইন্টারেস্টেড।
নুপুর এ কথায় হেসে দিল,
– হাহাহা। তা আর না হয়ে যায়? স‍্যার লবি দিয়ে যখন ঢুকলেন তখনই তো একটা আলোড়ন সৃষ্টি হলো। খেয়াল করেছেন, সবাই কেমন চুপ হয়ে গিয়েছিল? হা হয়ে ওনার দিকেই চোখ ছিল সবার।
– এটা কিন্তু মানতেই হবে নুপুর আপু, স‍্যার দেখতে বেশ হ‍্যান্ডসাম। আর ওনার পারসোনালিটিটাও খুব স্ট্রঙ্গ মনে হয়েছে আমার কাছে। দেখে কিন্তু খুব বেশি বয়স মনে হয় না স‍্যারের। এই ইমরান ভাই, স‍্যারের এইজ কতো?
– তিরিশ পার করেছেন তিনি।
– ওওও। তা বিয়ে শাদি কি হয়ে গেছে স‍্যারের?
– এ ব‍্যাপারে কিছু পাই নি। আসলে এই এঙ্গেলটা সেভাবে চেকই করিনি আমি।

একসাথে বিরক্ত হয়ে বললো নিতা আর নুপুর,
– ধুরো ! আসল জায়গাতেই খোজ নেন নাই? এটা কিছু হইলো?
– আরে আপনারা যে স‍্যারের কোয়ালিফিকেশন বাদ দিয়ে তার পারসোনাল লাইফের হিসটোরিতে ইন্টারেস্টেড বেশী হবেন তা যদি জানতাম তাহলে তাই দেখতাম।
– আচ্ছা বুঝছি বুঝছি! এখন আপনি সেই ইনফো খোজেন। আই এ‍্যাম শিওর বিয়ে না হলেও গার্লফ্রেন্ড তো নিশ্চয়ই আছে। এরকম বাঘা মাছ নদীতে একা থাকার কথা না।

হঠাৎ নুপুর খেয়াল করলো যে পৃথা চুপ হয়ে আছে,
– এই পৃথা! কি ব‍্যাপার, তুমি আজ এতো চুপচাপ কেন?
-হম? কই না তো আপু? আমি খাচ্ছিতো তাই…
– খাচ্ছো কোথায়? তখন থেকে তো শুধু চামচ নাড়াচ্ছো দেখছি। শরীর খারাপ করছে নাকি তোমার?
– না আপু। ঠিকাছি আমি। তোমরা কথা বলো।

নিতা ওদিক থেকে বললো,
– আচ্ছা পৃথা আপু, আপনার এই নতুন স‍্যারের ব‍্যাপারে কোনো কৌতুহল নেই? আপনি তো কিছুই জিজ্ঞেস করছেন না।
পৃথা মাথা নিচু করে ফেললো,
– তোমরা যা বলছো তা থেকেই তো সব জানছি।
– হমম।

বিকেলে অফিস শেষে সিয়াম এসে সবাইকে জানিয়ে দিয়ে গেল যে আজকের ডিনারের জন‍্য যেন সবাই রেডি হয়ে নেয়। যেহেতু অফিস থেকেই যাওয়া হচ্ছে তাই ডিনারটা একটু আরলি হয়ে যাবে। তাতে সবার সুবিধাই বটে। বাসায় পৌছতে বেশী দেরী হবে না।
রেস্টুরেন্টে এসে দেখা গেল পুরো একটা হলরুম ওদের জন‍্য বুক করা হয়েছে। রুমে চার দিকে খাবার সাজানো, বুফে স্টাইলে। মাঝখানে বসার জায়গা। খাবারের ভ‍্যারাইটি দেখে সবাই বেশ আপ্লুত হলো। স্বাধীন আর সিয়াম সবাইকে স্বাগত জানিয়ে খাবার শুরু করতে বলে দিল।
পৃথা নুপুরের সাথেই একটা টেবিলে বসলো। সাথে আরও দুজন ফিমেল কলিগ জয়েন করলো ওদের। হঠাৎ পৃথার চোখে পড়লো, স্বাধীন একদম ওর নাক বরাবর সামনের টেবিলটায় বসেছে। তাও আবার ঠিক ওর উল্টো চেয়ারটায়। পৃথাকে সরাসরি দেখতে পারছে ও। এবং সেই সুযোগটা ভালোই কাজে লাগাচ্ছে। একবারও পৃথার থেকে চোখ সরাচ্ছে না। কয়েকবার এ বিষয়টা খেয়াল করে পৃথা চোখ নামিয়ে ফেললো। ভীষণ অস্বস্তি বোধ হচ্ছিলো ওর।

খাবার নেওয়ার সময়ও ঘটলো বিপত্তি। অন্তত পৃথার কাছে বিপত্তিই মনে হলো এটা। সালাদ স্টেশনে খাবার নিতে গিয়ে পাশে এসে দাড়ালো স্বাধীন। হুট করে ওকে পাশে পেয়ে চমকে উঠেছিল পৃথা। স্বাধীন অন‍্যদের একবার দেখে ফিসফিসিয়ে বললো,
– তখন থেকে দেখছি খালি সালাদ ট্রাই করছো। মেইন ডিশগুলো টাচই করছো না। ডাইটে আছো নাকি?

পৃথা দাঁত কটমট করে বললো,
– আমার খাবারের দিকে না তাকালেও চলবে। এখানে তোমার আরো অনেক এমপ্লয়িরাই আছে, তাদের খোজ নাও গিয়ে। ওরা বরঞ্চ খুশি হবে।
– আমি তো আমার বউ এর খবর নিচ্ছি প‍ৃথা। স্বামী হিসেবে এই দায়িত্ব তো আমার আছে তাই না?
পৃথা সরাসরি স্বাধীনের দিকে তাকালো। তাচ্ছিল্যের হাল্কা একটা হাসি দিয়ে বললো,
– স্বামীর দায়িত্ব? এখন মনে পড়েছে তোমার?

স্বাধীন কিছুটা অপ্রস্তুত বনে গেল,
– পৃথা শোন…
– আমি কোনো কিছু শুনতে চাই না। প্লিজ কোনো ঝামেলা করো না। আজ সবার চোখ তোমার দিকে। হয়তো অনেকেই আমাদের কথা বলাটা নোটিস করছে। আমি এইদিকটাতে লাইমলাইট টানতে চাচ্ছি না। please don’t embarrass me.

এই বলে পৃথা আনুষ্ঠানিক একটা হাসি টেনে ওখান থেকে সরে গেল। সবাইকে বোঝাতে চাইলো যে ওদের মাঝে স্বাভাবিক কথা বার্তাই হয়েছে।

সেই রাতে স্বাধীন আর পৃথাকে এপ্রোচ করলো না। তবে পৃথার থেকে চোখ সরাতে পারলো না কোনোভাবেও। সরানোর চেষ্টা করলেও বারবার পৃথার দিকেই দৃষ্টি চলে যাচ্ছিলো ওর। এবং যতবারই ওদের চোখে চোখ মিললো ততবারই ও দেখলো পৃথার চোখ মুখ চোয়াল শক্ত হয়ে যেতে।

শেষ পর্যন্ত পৃথার অনুমানটাই ঠিক প্রমাণিত হলো। ডিনার শেষে ওদের বের হওয়ার পর স্বাধীন সবার কাছে থেকে পারসোনালি বিদায় নিল। পৃথার কাছে আসতেই ও নুপুরকে জিজ্ঞেস করলো,
– আপনাদের কারো যদি বাসায় যেতে অসুবিধা হয় তাহলে আমাকে বলতে পারেন। আমি লিফ্ট দিয়ে দিচ্ছি।
পৃথা কোনো কথা না বলে মুখ অন‍্যদিকে ঘুরিয়ে রাখলো। নুপুরই হেসে কথা বললো,
– Thanks a lot sir, কিন্তু আমার সমস‍্যা নেই। একাই চলে যেতে পারবো। পৃথা তুমি…
– না না নুপুর আপু। আমার লিফ্ট লাগবে না। আমিও একাই যেতে পারবো। আমি অভ‍্যস্ত হয়ে গেছি একা চলতে চলতে।
শেষের কথাটা ইচ্ছা করেই একটু জোর দিয়ে বললো পৃথা। স্বাধীনও বুঝলো ব‍্যাপারটা। তাই আর কিছু বললো না। বাকিদের থেকে বিদাই নিয়ে নিজের গাড়ি বের করে চলে গেল।

ওর চলে যাওয়ার পর নুপুর ফিরে তাকালো পৃথার দিকে,
– এই পৃথা, কি ব‍্যাপার বলো তো?
– কই কি ব‍্যাপার?
– স‍্যার কে আগে থেকে চেনো নাকি তুমি?
সতর্ক হয়ে গেল পৃথা,
– কককি বলছো আপু? না না। আআআমি ওনাকে চিন্তে যাবো কোন দুঃখে?
– ওওওও… তাই তো। রাশেদ ভাই তো বললোই স‍্যার দুই দিন আগেই ফিরেছেন দেশে। না, আমি জিজ্ঞেস করলাম এই কারণে যে আজ ডিনারে স‍্যারকে বেশ কয়বার তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেছি। শুধু আমিই না, আরো অনেকেই নোটিস করেছে ব‍্যাপারটা। তাই ভাবলাম আগের থেকেই পরিচয় আছে কি না তোমাদের।

মনে মনে প্রমাদ গুনলো পৃথা। যেই ভয়টা পেয়েছিল সেটাই হলো,
– না আপু, আমি স‍্যারকে আগের থেকে চিনি না। তোমরা ভুল দেখেছো বোধহয়। স‍্যার হয়তো অন‍্য কোথাও দেখছিলেন, তোমাদের মনে হয়েছে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি। একই ডিরেকশনে আসলে বসেছিলাম তো আমরা।
এবার মনে হলো নুপুর ওর কথায় যেন একটু বিশ্বাস করেছে,
– তাই হবে হয়তো। আমাদের আশপাশে আরও অনেকেই তো ছিল।
– সেটাই। আচ্ছা আপু, রাত বেশী হয়ে যাচ্ছে। আমি বরং আসি। কাল দেখা হবে।
– সাবধানে যেও পৃথা।
– ঠিক আছে।

পৃথা সবার থেকে বিদাই নিয়ে একটা ক‍্যাব ডাকলো। ক‍্যাব আসলে উঠে পড়লো ও। খেয়াল করলো না যে ক‍্যাবটার ঠিক পেছনে একটা ভেজেল গাড়ি ওকে ফলো করছে।

স্বাধীন রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গাড়ী নিয়ে মোড়েই দাড়িয়ে ছিল পৃথার অপেক্ষায়। এতো রাতে পৃথাকে একা কোনোভাবেই বাসায় পাঠাতে মন মানছিলো না ওর। তবে সামনে থেকে ওকে বিষয়টা বললে জীবনেও পৃথা মানবে না সেটাও জানে ও। তাই পৃথার ক‍্যাবকে ফলো করলো।
ক‍্যাবে ওঠার পরপরই পৃথার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। সারাটাদিনে এই প্রথম আনুষ্ঠানিকতার খোলস খুলে ফেলে বসেছে ও। এখন ওকে দেখার কেউ নেই। ও শান্তি মতন কাঁদতে পারবে।

কেন আজ এতোটা বছর পর ছেলেটা ওর সামনে আসলো? আর এসেই স্বামীর হক্ জাতাচ্ছে? এতোদিন কই ছিল এই স্বামী? এতোটা বছর নিজের স্ত্রীকে কেন একা রাখলো ও? কেন এতো কষ্টের মাঝে রাখলো? পৃথার ভীষণ রাগ উঠছে। হাত পা নিশপিশ করছে ওর।

বাসার নিচে এসে পৃথা ক‍্যাবের টাকা মিটিয়ে নেমে পড়লো। স্বাধীনের গাড়ি একটু পেছনেই ছিল। ও দেখলো পৃথাকে ভেতরে ঢুকে যেতে। বিল্ডিংটার দিকে তাকালো স্বাধীন। পৃথার নতুন ঠিকানা তাহলে এটা? আগের ঠিকানা বদল হয়েছে এটা ও জানতো তবে নতুনটার খবর আজ জানতে পারলো। কিছুক্ষণ থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেল স্বাধীন।
—————————

পৃথা বাসায় ঢুকতেই দেখলো ফুফু আর ওর ফুফাতো ভাই জর্জ এসেছে। জর্জের চেহারা দেখার সাথে সাথেই পৃথা গা গুলিয়ে উঠলো। এই অসভ‍্য মানুষটাকে নিজের ফুফাতো ভাই বলতে ভীষণ ঘিণ্ণা করে ওর। কেমন বাজে নজরে তাকায় সবসময় ও পৃথার দিকে। আর ওকে এই আষ্কারাটা দেন খোদ ওর মা মানে পৃথার বড় ফুফু। পৃথা ঢুকতেই প্রশ্ন করলেন ফুফু,
– কি রে পৃথা, এতো দেরী হলো কেন? এটা কোনো সময় বাড়ি ফেরার?
– ফুফু… আজ অফিসে… ডিনার ছিল।

বাঁজখাই কন্ঠে চিৎকার দিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হলো পৃথার সৎমা।
– দেখছেন আপা, মেয়ের কতো পা বাড়সে? অফিসের পরে আবার ডিনারে যায় বাইরে। এদিকে বাপ মা বোন কি খাবে তার কোনোই খেয়াল নাই। কোনো কিছু রান্না হয় নাই কিনতু তাতে ওর কোনো মাথা ব‍্যাথা নাই। ও তো ভালো মন্দ খেয়েই আসছে। পেট তো ভরাই নবাবিনির।

পৃথা হাত মুঠ করে চুপচাপ খোটাগুলো গিললো, কিছু বলতে পারলো না। শেষে ফুফু বললেন ওকে ফ্রেশ হয়ে আসতে। এক দৌড়ে রুমে চলে গেল পৃথা আর যেয়েই রুমের দরজা ভালো করে লক্ করে দিল। জর্জ বাসায় আসলে এটা করে ও। নিজের সেফটির জন‍্য করে।

ফ্রেশ হয়ে রুমের দরজা খুলতেই ভয় পেয়ে গেল পৃথা। ঝট করে পেছালো দুই কদম। জর্জ পিত্তি জ্বালানো হাসি দিয়ে ওর সামনে দাড়িয়ে। মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে বললো পৃথা,
– সরো সামনে থেকে।

জর্জের হাসি এতে আরও বেড়ে গেল। তার সাথে পৃথার রাগও
– কথা কানে যায় নাই? সরতে বলছি, সরো।

সরলো তো নায়ই, আরও এগিয়ে আসলো জর্জ,
– আমার সাথে সবসময় এরকম ব‍্যবহার করো কেন পৃথা পাখি? নিজের হবু স্বামীর সাথে কেউ এরকম করে?
– কিসের হবু স্বামী? কার হবু স্বামী? আমার? পাগল হয়ে গেছ তুমি? জানো না যে আমার বিয়ে হয়ে গেছে?

খুব জোরে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো জর্জ,
– বিয়ে? কোন বিয়ের কথা বলছো পৃথা পাখি? ওই পুতুল খেলা? বাল‍্য বিবাহ? ওসব ফালতু জিনিস আমরা আর মানি না সেটা কি জানো না তুমি? আর এতো বিয়ে বিয়ে যে করো, তোমার সেই বর কোথায়? সে আসেনা কেন তোমাকে নিতে? যেয়ে দেখ সেও ভুলে গেছে সেই ছেলে খেলা। তার চাইতে বরং আমাকে বিয়ে করে নাও, অনেক সুখ দিব তোমাকে পৃথা পাখি।

এই বলে জর্জ পৃথার চোখের থেকে নিজের চোখ সরিয়ে আস্তে আস্তে নিচের দিকে নিতে থাকলো। ইঙ্গিতটা বুঝে বমি আসলো পৃথার। সাথে সাথে আবার জর্জের মুখের ওপর দরজা লাগিয়ে দিয়ে দেয়ালের সাথে নিজের পিঠ ঠেকালো। চাপা কান্না চলে আসলো গলা দিয়ে। থামালো না সেটা পৃথা। বইতে দিল। এই হয়ে আসছে ওর সাথে। এইটাই হয়তো ওর নিয়তি।
………………
পরদিন সকালে অফিসে যেয়ে পৃথা দেখলো অনেক নতুন কাজ জমেছে সবার। স্বাধীন সবার মেইলে এসাইনমেন্টেস পাঠিয়েছে। সেগুলাই একটা একটা করে স্টাডি করছে সবাই।
টানা দেড় ঘন্টা পেইজগুলো পড়ার পর পৃথা ঘাড় ব‍্যাথা করতে শুরু করলো। চিন্তা করলো একটু চোখ মুখে পানি দিয়ে এসে আবার কাজ শুরু করবে। তাই ওয়াশরুমের দিকে গেল ও।

ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে করিডোর দিয়ে হাটতে গিয়ে হঠাৎ স্বাধীনের সামনে পরে গেল পৃথা। স্বাধীনও মাত্র ক‍্যাবিন থেকে বের হয়েছে। পৃথাকে দেখে ছোট্ট একটা হাসি দিল ও। পৃথা ভীষণ বিব্রত বোধ করলো তা দেখে তাই কিছু না বলে ওর পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাচ্ছিলো তবে পাশ থেকে স্বাধীন হাত ধরে ফেললো। থমকে গেল পৃথা। ঘুরে তাকাতেই দেখলো স্বাধীন তাকিয়ে আছে ওর দিকে,
– Preetha, we need to talk.

পৃথার কন্ঠে রাগী অভিমান,
– হাত ছাড়ো আমার।
– পৃথা প্লিস। এভাবে করলে কেমনে হবে? আমাদের কথা বলা উচিত পৃথা।
-আমার কোনো কথা নেই তোমার সাথে। এখন ছাড়ো।

পৃথার রাগী কথাগুলোয় স্বাধীনের হঠাৎ কি হলো তা ও বলতে পারবে না, তবে মেজাজের মাত্রা বেড়ে গেল ওর। সাথে সাথে পৃথাকে জোর করে টেনে নিজের ক‍্যাবিনে ঢোকালো । পৃথার বাধা দেওয়াতেও কোনো কাজ হলো না। ভেতরে ডুকে ক‍্যাবিনের দরজা লক করে দিল স্বাধীন। পৃথা দেখলো স্বাধীনের চেহারা একদম টান টান হয়ে গেছে। ও নিজেও তখন রেগে উঠলো,
-কি করছো? আমাকে যেতে দাও।

পৃথা দরজার দিকে যেতেই ওর হাত ধরে ওকে পিছিয়ে দিল স্বাধীন।
– আমার কথা না শেষ হওয়া পর্যন্ত কোথাও যাবা না তুমি।

এক মুহূর্ত নীরবতা কাটলো রুমটাতে। পৃথা এখনো ফুসছে তবে মুখে কিছু বলছে না দেখে স্বাধীন নরম হলো। ওর কাছে এসে দাড়ালো,
– পৃথা, আমি শুধু তোমার জন‍্য এসেছি। তুমি এটা কেন বুঝতে পারছো না?

ঝামটা দিয়ে উঠলো পৃথা,
-আমার জন‍্য এসেছো? এতো বছর পর আমার কথা মনে পরেছে তোমার?

অবাক হয় স্বাধীন,
-পৃথা এটা কি বলছো তুমি? আমি তো….
– বাস্। আমি কোনো কিছু শুনতে চাচ্ছিনা আর। আমার ভালো লাগছে না। প্লিস আমাকে যেতে দাও।

স্বাধীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে পৃথার দিকে তাকালো,
– Preetha….I love you.

থমকে যেয়ে তাকালো পৃথা স্বাধীনের চোখের দিকে। স্বাধীনও মনে হলো যেন একমুহূর্তের জন‍্য পৃথার চেহারায় কেমন একটা ভাব দেখতে পেয়েছে। তবে পরমুহূর্তেই সেটা উধাও হয়ে গেল। আবার রাগ জমলো পৃথার চেহারায় এবং তার সাথে যোগ হলো ক্ষোভ এবং অভীমান।
– But I have no such feelings for you.

এবার থমকে যাওয়ার পালা স্বাধীনের। পৃথার মুখ থেকে এ কথার শোনার আশা সে কোনো ভাবেও করেনি। একদম স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে পড়লো ও।

পৃথাও বুঝেছে যে স্বাধীন একথায় চমকে উঠেছে। ছেলেটা যেভাবে দাড়ানো ছিল ঠিক সেভাবে রেখেই ওর পাশ কাটিয়ে দরজার দিকে পা বাড়ালো পৃথা। স্বাধীন ওর পেছন পেছন আসেনি দেখলো ও। তাই সাবলীল ভাবেই দরজার নব ঘোরালো। তবে দরজাটা আর খুলতে পারলো না। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পৃথা দেখলো ও স্বাধীনের দিকে ঘুরে গেছে। স্বাধীন ওকে এক হাত দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে আরেক হাত দরজার দেয়ালে ঠেকিয়ে ওকে আটকে দিল। পৃথার পিঠ তখন দরজার দেওয়ালের সাথে লাগানো। ও চমকে স্বাধীনের চোখের দিকে তাকাতেই এক দৃঢ় দৃষ্টির সম্মুখীন হলো। ও মুখ টা খুলতেও পারলো না, তার আগেই স্বাধীন বলে উঠলো,
– আমার প্রতি তোমার কোনো ফিলিংস নাই তাই না? কোনো সমস‍্যা নেই। আমি তোমার মাঝে আমার প্রতি সেই অনুভূতি আবার জাগাবো।
তোমাকে আবার আমাকে ভালবাসতেই হবে পৃথা।
I will make you fall in love with me again.
At… any… cost.

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here