কাব্যের_বিহঙ্গিনী #পর্ব_১৭ #লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

0
647

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_১৭
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেহবিনের কথায় মুখর হাসলো। আর বলল,,

‘Or Kitne Intezer Or Kitne Sabr Karu!”

মেহবিন হেঁসে বলল,,

‘অপেক্ষা করতে করতে কি আপনি ক্লান্ত হয়ে পরেছেন?”

“তার অপেক্ষার যদি সারাজীবন ও অপেক্ষা করতে হয় তবুও ক্লান্ত হবো না। তাছাড়া তুমি এমন একজন মানুষ যার ওপর আমার মুগ্ধতা কখনো হাড়ায় না। সবথেকে বড় কথা
“আল্লাহ মানুষের উপর তার সাধ্যাতীত কোনো দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না!”
~সূরা বাকারা~২৮৬
এবং
ধৈর্য্য মানুষকে ঠকায় না,
বরং উত্তম সময়ে শ্রেষ্ঠ উপহার দেয়।
[সূরা যুমার – ১০]
আমিও সঠিক সময়ের অপেক্ষায় আছি। ইনশাআল্লাহ শেষটা সুন্দর হবে।

মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

“বিচ্ছেদ এমনভাবে হয়েছে যে গন্তব্যটাই বদলে গেছে। তার সাথে একজন মানুষকেও নিরবে বদলে দিয়েছে। যে মানুটা অপেক্ষা করতে জানতো না ধৈর্য্য ধরতে কষ্ট হতো। তার এখন সারাজীবন অপেক্ষা করতেও দ্বিধাবোধ হচ্ছে না।”

মুখরের চোখটা ছলছল করছে । ও বলল,,

“মাওলানা তারেক জামিল একটা কথা বলেছিলেন,

এমন ভাবে বিচ্ছেদ হয়েছে যে গন্তব্য বদলে গেছে। একজন মানুষ পুরো শহরকে নিশ্চুপ করে দিয়েছে।”

এ কথা শুনে মেহবিন ঘুরে দাঁড়ালো তখন মুখর বলল,,

“আমায় একটু জড়িয়ে ধরবে বিহঙ্গিনী?”

মেহবিন আবার মুখরের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো আর মুচকি হেসে মুখরের একদম কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। মুখর চোখে অশ্রু আর মুখে হাসি নিয়ে মেহবিন কে জড়িয়ে ধরলো। আর বলল,,

“তোমায় খুব ভালোবাসি বিহঙ্গিনী। আমি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত তোমার সাথে থাকতে চাই।”

বলতে বলতেই মেহবিনের কাঁধে মুখরের দুই ফোঁটা পানি পরলো। মেহবিন স্থির চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর মুখর ওকে ছেড়ে দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,,

‘নিজের খেয়াল রেখো আসছি! আল্লাহ হাফেজ ফি আমানিল্লাহ!”

মেহবিন মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,,

“ইনশাআল্লাহ। আপনিও নিজের খেয়াল রাখবেন। আল্লাহ হাফেজ।”

বলেই মেহবিন ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে হাঁটা ধরলো। পেছনে একবার ফিরে তাকালোও না মুখর সেদিকে তাকিয়ে রইল। সে কেন তাড়াতাড়ি করে একবার ও পেছনে না তাকিয়ে চলে গেল তা মুখর ভালো করেই জানে। ও গেট দিয়ে ঢোকা না পর্যন্ত তাকিয়ে রইল মুখর বাড়ির ভেতর ঢুকতেই মুখর গাড়ি নিয়ে চলে গেল। মেহবিন বাড়ি এসে ফ্রেশ হয়ে কাযা সালাত গুলো আদায় করে নিল। তারপর বিছানায় বসে ফোন স্কল করতে লাগলো।
_____________

“সে সব ছাড়ে কিন্তু ভালোবাসার মানুষের প্রতি মায়া ছাড়তে পারে না। কাউকে বলতেই পারে না শুধু এক চিলতে হাসি মুখে বিদায় নেয় সেই স্থান। কি অদ্ভুত ভালোবাসা তার। সে তার এই ছবির মতোই ঝাঁপসা তাকে দেখে মনে হয় ইশশ যদি তাকে একদম ভালোভাবে বুঝতাম।”

পোস্ট টা পাঁচ মিনিট আগে করা হয়েছে বিহঙ্গিনীর কাব্য এর আইডি থেকে। সাথে অনেক দূরের একটা ঝাঁপসা ছবি। কালো বোরকা হিজাব নিকাব মাথায় ক্যাপ পরা আর ক্যাপের ওপরে সোনালী রঙের কিছু জ্বলজ্বল করছে। পোস্ট টা চোখে পরতেই মেহবিন লিখলো,,

“তবুও তো সবসময় বুঝে ফেলেন।”

“বুঝতে পারলাম আর কই?”

“পারলেন না বুঝি?”

“বুঝতে পারলেও কিছু করতে পারি না। তাহলে সে বুঝতে পারার মূল্য রইলো কোথায়?”

“কি করতে পারলেন সেটা বড় কথা না বুঝতে পারাটাই বড় কথা।”

“বুঝতে পেরে কিছু না করতে পারার মতো ব্যর্থতা আর কিছুই হয় না।”

“বুঝতে পারেই বা ক’জন। এখনকার সময়ে ভুল বোঝাটা সহজ কিন্তু একটা মানুষের পরিস্থিতি এবং একজন মানুষ কে বুঝতে পারা সবথেকে কঠিন । সেখানে আপনি অনায়াসেই বুঝতে পারেন এটা আপনার অর্জন।”

ওপাশ থেকে কোন রিপ্লাই এলো না। তার কিছুক্ষণ পর বিহঙ্গিনীর কাব্য আইডি থেকে আরো একটা পোস্ট হলো দু’জনের একটা কাপল ছবি যেখানে কাব্য তার বিহঙ্গিনীর দিকে তাকিয়ে আছে। তার ক্যাপশনে লেখা।

“আমি আবারও চাই প্রেমে পড়তে! কিন্তু অন্যকারো নয় শুধু তোমার। আমি আবারও চাই প্রেমে পরতে উঁহু একবার নয় আমি বারবার পরতে চাই শুধু তোমার। আমার একান্তই ব্যক্তিগত শুধু তোমার।’

পোস্ট টা দেখতেই মেহবিনের মুখে হাসি ফুটে উঠল। সে মুচকি হেসে লিখলো,,

“তো পড়ুন না মানা করেছে নাকি কেউ?’

ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসলো,,

“না মানা করেনি আর কেউ মানা করলেই আমি শুনবো নাকি?”

“হ্যা সেটাও ঠিক।”

“আজকের দিনটা সবথেকে ভালো দিনের মধ্যে একটা ছিল।”

“ইনশাআল্লাহ আপনার রোজ রোজ এমন ভালো দিন আসুক।”

“আমিন।”

________________

“নিয়মিত তাকে ভালোবাসুন যাকে ভালোবেসে ঠকবেন না। তাকে ভালোবাসুন যে আপনার জন্য অপেক্ষা করে কখনো ক্লান্ত হয় না। তাকে ভালোবাসুন যে কখনো আপনার দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয় না। তাকে ভালোবাসুন যার ভালোবাসা আপনাকে মুগ্ধতায় আটকে থাকতে বাধ্য করে।”

পোস্ট টা কাব্যের বিহঙ্গিনী পেজ থেকে করা হয়েছে। এতক্ষন মুখরের এটা নিয়ে আফসোস থাকলেও এখন নেই। এখন আফসোস এর ওখানে মুখে ফুটে উঠেছে এক তৃপ্তির হাঁসি। কতোগুলো লাভ রিয়াক্ট কমেন্ট শেয়ার হয়েছে। ফেসবুকে বেশ জনপ্রিয় একটা পেজ কাব্যের বিহঙ্গিনী। কিন্তু কখনো এই নামের আড়ালের মানুষটাকে কেউ দেখেনি এমন কি তার নাম ও জানে না কেউ।

____________

রাত নয়টা এমন সময় মেহবিনের ফোনে চেয়ারম্যান সাহেব এর একটা কল এলো। মেহবিন ফোন ধরে সালাম দিল,,

“আসসালামু আলাইকুম!”

ওপাশ থেকে চেয়ারম্যান সাহেব এর কন্ঠ শোনা গেল।

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। আপনি আজ আসেন নি কেন?

“আমার পার্সোনাল কিছু কাজ ছিল। সন্ধ্যার পর বাসায় এসেছি।”

“ওহ আচ্ছা। কিন্তু আপনার জন্য মিশু রাগ করে আছে। সারাদিন আপনার অপেক্ষায় ছিল।”

মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো ওর মনে ছিলনা মিশুকে বলতে।ও বলল,,

“মিশু ওখানে আছে?”

“হ্যা আমরা সবাই ড্রয়িংরুমে ও সোফায় বসে আছে। সে রাতে খায় ও নি।”

“একটু ওর কাছে যান আমি কথা বলছি।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

শেখ শাহনাওয়াজ মিশুর কাছে গেলেন আর বললেন,,

“মিশু দেখো তোমার ফুলবন্ধু ফোন করেছে।”

মিশু ওর বাবার দিকে তাকিয়ে ফোনটা কানে নিয়ে বলল,,

“কেউ যেন আমার সাথে কথা বলতে না আসে। আমি সারাদিন তার অপেক্ষায় ছিলাম সে আসেনি কেন?”

মিশুর কথা শুনে মেহবিন একটু হাসলো। কথা বলবে না তবুও নিজের কাছে ফোন নিয়ে নিয়েছে। মেহবিন হেঁসে সালাম দিল,,

“আসসালামু আলাইকুম!”

মিশুর কোন আওয়াজ পাওয়া গেল না। তাই মেহবিন বলল,,

“সালামের জবাব দেওয়া ওয়াজিব। সালাম শুনে তার জবাব না দিয়ে একটা মুসলিম কখনো চুপ থাকতে পারে না।”

তখন মিশু বলল,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম।”

“কেমন আছো ফুল?”

“ফুল কে?”

“তুমি!”

“উঁহু আমি ফুল না, আমি মানুষ। বাবা বলেছে তুমি হলে ফুল।”

“আজ থেকে আমি তোমায় ফুল বলে ডাকবো।”

“কয়েকদিন ধরে ফুল বলে তো আমি তোমায় ডাকি।’

“তাতে কি আমিও ফুল বলেই ডাকবো।”

“আমাদের দুজনের নাম তাহলে সেইম সেইম হলো।”

“হুম আমাদের সেইম সেইম নাম। এখন বলো রাতে খাওনি কেন?

“তুমি আসো নি তাই আমি তোমার ওপর রাগ করেছি।”

‘তা কি করলে রাগ ভাঙবে?

‘কোন কিছুই করলে রাগ ভাঙবে না।”

“কাল যদি আমি অনেকক্ষন তোমার সাথে থাকি তবুও রাগ ভাঙবে না।”

মেহবিনের এ কথা শুনে মিশু খুশি হয়ে গেল আর বলল,,

‘সত্যি ফুল তুমি সত্যি কাল আমার সাথে অনেকক্ষন থাকবে।”

“হ্যা অনেকক্ষন থাকবো। এখন তুমি খেয়ে নাও।”

“আচ্ছা খেয়ে নেব। আচ্ছা কাল কখন আসবে তুমি? তুমি আসলে একজনের সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেব।”

“কার সাথে ফুল?”

“সেটা সিক্রেট তুমি আগে আসো তো? আর হ্যা কাল তোমার আরেকটা ছোট বন্ধু আছে না কি যেন নাম তুমি যাকে নেত্রী বলো তাকেও নিয়ে এসো ও খুব ভালো আমার কতো যত্ন করলো।”

“ওর নাম তাজেল। শেখ তাজেল!”

‘হ্যা হ্যা তাজেল ওকেও নিয়ে এসো কাল আমরা অনেক খেলবো।”

‘আচ্ছা ঠিক আছে। রাখছি আল্লাহ হাফেজ।”

“আল্লাহ হাফেজ।”

মেহবিন ফোনটা রেখে দিল। আর ভাবতে লাগলো কার সাথে মিশু ওর পরিচয় করিয়ে দেবে। এদিকে সবাই শেখ শাহনাওয়াজ আর মিশুর দিকে তাকিয়ে আছে। নুপুর বললেন,,

‘মেয়েটাকে নিয়ে আপনাদের দুজনের বাড়াবাড়িটা একটু বেশি না খালুজান।”

এ কথা শুনে মিশু বলল,,

‘ঐ নুপুর ডাক্তার তুমি চুপ থাকো। তুমি কোন কথা বলবা না।”

তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

“আমার মেয়ের যা ইচ্ছে হয় তাই করুক নুপুর তোমার কোন কথা না বলাই ভালো।”

“আসলে আমি তেমন কিছু মিন করিনি। আঙ্কেল আপনাদের কথা বাদই দিলাম মেয়েটার বা কি রাগ করেছে ওর ওপর তাতে ওর কি? মেয়েটাও মিশুকে এমনভাবে ওর সাথে কথা বলে যেন ওর পরম আত্মীয়। মিশু যাই করুক না কেন রেগে থাকুক জোরে কথা বলুক কতটা নম্র ভাবে সবসময় মিশুর সাথে কথা বলে। এটা সত্যি ভালো নাকি নিজের স্বার্থের জন্য ভালো হওয়ার নাটক করছে সেটাও তো চিন্তার বিষয় নাহলে জানা নেই শোনা নেই একটা মেয়ে এতো ভালো হবে নাকি। এখনকার সময়ে কাউকেই বিশ্বাস করা যায় না।”

শেখ শাহনাওয়াজ হেঁসে বললেন,

“তা যায় না তবে মেয়েটাকে যতদূর দেখেছি ততটুকু কে বুঝেছি মেয়েটা সবসময় আলাদা সত্যতা নিয়েই চলাচল করে। কাউকে দেখানোর জন্য সে কিছু করে না। কারন হয়তো মেয়েটা জানে ,

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘আল্লাহ কোমল, তিনি কোমলতাকে ভালবাসেন। আর তিনি কোমলতার প্রতি যত অনুগ্রহ করেন, কঠোরতা এবং অন্য কোন আচরণের প্রতি তত অনুগ্রহ করেন না’।
মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় আছে, একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আয়েশা (রাঃ)-কে বলেন, ‘কোমলতা নিজের জন্য বাধ্যতামূলক করে নাও এবং কঠোরতা ও নির্লজ্জতা হতে নিজেকে বাঁচাও। কারণ যাতে নম্রতা ও কোমলতা থাকে তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয়। আর যাতে কোমলতা থাকে না, তা দোষণীয় হয়ে পড়ে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫০৬৮)।

কিন্তু আফসোস সবাই এটা মানে না। যাই হোক মিশু চলো খেয়ে নাও এখন।”

‘হ্যা বাবা চলো আমার খুব খুদা লাগছে।”

“হুম চলো তবে একটা কথা মনে রেখো এরপর থেকে খাবারের ওপর রাগ করবে কখনো খাবারের ওপর করতে হয় না মিশু।”

“আমি কোথায় খাবারের ওপর রাগ করলাম আমি তো ফুলবন্ধুর ওপর রাগ করেছিলাম।”

‘এই যে তুমি তোমার বন্ধুর ওপর রাগ করে খাবার খেলে না। এটাই খাবারের ওপর রাগ করা।”

‘আচ্ছা পরে বোলো এখন চলো বাজপাখি কোথায় সেও তো আমি খাইনি বলে খায় নি। তুমিও তো খাওনি। চলো। আচ্ছা তুমি থাকো আমি বাজপাখি কে ডেকে নিয়ে আসছি।”

সে বাজপাখি ডাকতে ডাকতে আরবাজ এর রুমে গেল। আর ওকে নিয়ে এলো তারপর তিনজনে বসে খেতে লাগলো। বাকিরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলো। নুপুর আরো কিছু বলতো কিন্তু শেখ শাহনাওয়াজ এর কথায় চুপ করে রইলো।

পরেরদিন তাজেল এসেছে মেহবিনের কাছে পরতে। এসে সালাম দিয়ে বলল,,

“ডাক্তার কাল কহন আইছো?”

‘রাতে!”

‘ওহ আইচ্ছা তাইলে তো অনেকক্ষন ঘুরছো। পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা কিন্তু ভালো আছে তোমাগো দুই জনরে কাইল মেলা সুন্দর লাগতেছিল।

‘হুম!

তাজেল কিছু বললো না কিন্তু একটু পর পর মেহবিনের দিকে তাকাতে লাগলো। তা দেখে মেহবিন বলল,,

“কিছু বলবে নেত্রী?

‘আইজ আমরা জুলাপাতি করুম তোমার দাওয়াত রইল।”

“জুলাপাতি কি?”

‘তুমি জুলাপাতি বুঝোনা মানে হইলো আমরা সব ছোট পুলাপাইন নিজেগো বাড়ি থিকা চাইল ডাল দিয়ে একসাথে রান্না কইরা খামু।”

‘ওহ আচ্ছা চড়ুইভাতি!”

‘চড়ুইভাতি আবার কি? আমরা তো চড়ুই রে ভাত দিমুনা তাইলে চড়ুইভাতি কেমনে হইবো। তাছাড়া আমরা তো কহনো চড়ুইরে ভাত দিই না।”

তাজেলের কথায় মেহবিন হাসলো আর বলল,

“তোমার জুলাপাতির ভালো নাম চড়ুইভাতি।”

‘মানে শুদ্ধ ভাষা।”

‘হুম।”

“জুলাপাতিরে আবার চড়ুইভাতি রাখলো কোন হালায়। হেয় কি জুলাপাতি করবার যাইয়া চড়ুইরে খাইতে দিছিল।”

“হালা কোন ধরনের শব্দ নেত্রী?”

‘আরে ভুলে মুখ দিইয়া বাইর হইয়া গেছে। যাই হোক তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দেও।”

‘আমিও জানি না। আচ্ছা তোমাদের চড়ুইভাতি, মানে জুলাপাতি কখন?

‘এই তো বারোটার দিকে এহন যাইয়া যারা জুলাপাতি করবো তাগো সবার বাড়ি থেইকা চাল নিমু তারপর লাখড়ি খুটুম (কুড়ানো) তারপর চুলা খুদুম (মাটির ভেতর চুলা বানানো) তারপর সবাই মিলা রান্না করুম।”

“তোমরা রান্না করতে পারো?”

“আমরা ছোট না আমরা কেমনে পারুম। কিন্তু প্রতিবার নওশি আপা দেহায় দেয় হেয় তো আমাগো সাথে জুলাপাতি করে। আর আমরা রান্দি খুব ভালো না হওলেও খাওয়া যায়। কিন্তু হেইডাই আমাগো মেলা স্বাদ লাগে।”

“আচ্ছা!”

“তোমার দাওয়াত রইল কিন্তু।”

“এবার তোমাদের জুলাপাতি আমার বাড়িতেই করো না। আমিও একটু দেখতাম কিভাবে কি কর?”

“তাইলে তো ভালোই হইলো আমরা একটা জায়গা খুজতেছিলাম।”

‘আচ্ছা তাহলে এখানেই করো। আর হ্যা মিশুমনি তোমায় আজ আমার সাথে ওদের বাড়ি যেতে বলেছে।”

‘মিশুমনি কিডা ওহ চেয়ারম্যানের পাগল মাইয়া থুরি মাইয়া।”

‘হুম।”

তাজেল কে পড়ানো শেষ হলে তাজেল সবাইকে ডেকে মেহবিনের কথা বললো সবাই নিজেদের বাড়ি থেকে সব নিয়ে এলো। ওরা মোট সাতজন তাদের মধ্যে নওশিও একজন। ওরা সব করলো চুলা বানালো সব মেহবিন দেখলো রান্না করলো যা যা দরকার মেহবিন নিজের ওখান থেকে দিল। অতঃপর রান্না শেষ করে সবাই গোসল করতে গেল এসে খাবার খাবে‌। তার আগে কলাপাতা কেটে এনে রেখেছে তাজেল আর নওশি। সবার পথমে নওশি এলো মেহবিন নওশিকে জিজ্ঞেস করল,,

“তুমিও ওদের সাথে চড়ুইভাতি করো?”

‘ওরা তো আর রান্না পারে না। তাই ওদের সাহায্য করার জন্য আমি থাকি তাছাড়া আমার ভালো লাগে এটা।”

অতঃপর সবাই আসলে একসাথে কলা পাতায় এক সাথে খাবার খেলো। মেহবিন সবাইকে চকলেট ও দিল।সবাই খুশি মনে বাড়ি চলে গেল। দুপুর দুইটার পর মেহবিন তাজেলকে নিয়ে চেয়ারম্যান বাড়িতে গেল । বাড়িতে ঢুকতেই মেহবিন একটা মুখ দেখে একটু থেমে গেল। মিশু ওকে দেখেই দৌড়ে এসে ওকে নিয়ে একটা মেয়ের সামনে দার করিয়ে বলল,,

“ফুল ও হলো রাই!”

মেহবিন অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো,,

“রাই ! রাইফা আফনূর!”

~চলবে,,

বিঃদ্রঃ ছোট হওয়ায় জন্য দুঃখিত। আসলে একটু ব্যস্ত ছিলাম এর থেকে বেশি দেওয়া পসিবল ছিল না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here