কাব্যের_বিহঙ্গিনী #পর্ব_২০ #লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

0
645

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_২০
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

দুপুরের খাবারের সময় শেখ শাহনাওয়াজ এর ফোন এলো। সবেই মেহবিন এর অর্ধেক খাওয়া হয়েছে। তার ফোন দেখে খাওয়া বাদ দিয়ে মেহবিন ফোনটা নিয়ে সালাম দিল ,,

“আসসালামু আলাইকুম!”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম! আপনি কি এখন হাসপাতালে?

“জি হাসপাতালেই।”

“আপনি কি একটু এখন আমাদের বাড়িতে আসতে পারবেন?”

“কেন কারো কিছু হয়েছে নাকি?”

“হ্যা আসলে রাইফা হুট করেই অজ্ঞান হয়ে পরে গিয়েছে।”

রাইফার কথা শুনে ও দাঁড়িয়ে পরলো। কিন্তু কি ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বসলো আর বলল,,

“কি হয়েছে উনার অজ্ঞান হলো কিভাবে? আপনাদের বাড়িতে ডক্টর নুপুর থাকে সে কোথায় গিয়েছে।”

“আসলে সে হাসপাতালে গেছে আজ নেই।”

“উনার জ্ঞান কি ফিরেছে নাকি এখনো অজ্ঞান হয়ে আছে।”

‘এখনো জ্ঞান ফেরেনি তাই তো আপনাকে ফোন করেছি।”

“কখন অজ্ঞান হয়েছে?”

“প্রায় দশ মিনিট হবে। আপনি প্লিজ আসুন।”

মেহবিন হাত ধুয়ে বলল,,

‘আসছি।”

এমনিতেও ও আজ তাড়াতাড়িই চলে যেত আজ তেমন ভীর নেই তাই ওর সিনিয়র ডক্টর বলেছেন তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যেতে। মেহবিন সিনিয়র ডক্টরকে বলে প্রয়োজনীয় সব নিয়ে বের হলো। আজ অনেকদিন পর আবুলের সাথে মেহবিনের দেখা হলো। ও তাড়াতাড়ি করে রিক্সায় উঠে বসলো। মেহবিন জিজ্ঞেস করল,,

“কেমন আছেন আবুল ভাই। বাড়ির সকলে ভালো আছে?”

“হ আফা ভালো আছে। তোমারে অনেকদিন পর দেইখা ভাল লাগতাছে। তা কোনে যাইবা বাড়ি নাকি?”

“না চেয়ারম্যান বাড়িতে যেতে হবে। ও বাড়ির বউ অজ্ঞান হয়ে গেছে। আপনি তাড়াতাড়ি চলুন।”

“আইচ্ছা।”

“ভাবি আর ফাতেমা কে তো পাঠিয়ে দিতে পারেন আমার বাড়িতে।”

“আইচ্ছা কমু নি।”

তার কিছুক্ষণ পরেই মেহবিন চেয়ারম্যান বাড়িতে চলে এলো। আবুল তো ভাড়া নেবেই না। মেহবিন জোর করে উনাকে টাকাটা দিল। ও বাড়ির ভেতরে ঢুকলো ও আসতেই শেখ শাহনাওয়াজ ওকে নিয়ে রাইফার ঘরে নিয়ে গেলেন। সকলে ওখানেই আছে। রুমের ভেতর গিয়ে দেখল রাইফা বিছানায়।এখনো জ্ঞান ফেরেনি। ও গিয়ে চেক করলো তারপর একটা ইনজেকশন দিয়ে বলল,,

“চিন্তার কোন কারন নেই। ইনজেকশন পুশ করলাম আরেকটু পরেই উনার জ্ঞান ফিরে আসবে। অতিরিক্ত টেনশন আর দূর্বলতার জন্য অজ্ঞান হয়ে গেছে। উনি বোধহয় ঠিক ঠাক ভাবে খাবার খান না।”

তখন সায়িদের মা সাহেদা খানম বললেন,

“মেয়েটাকে কতো বলি ঠিক মতো খাবার খেতে যদি শুনে আমার কথা। হয়ে গেল তো অসুস্থ। আর টেনশন কিসের এতো ছয়মাস ধরে বিদেশ ঘুরে এলো এতো বড় বাড়িতে সবার সাথে থাকে এখানে টেনশনের কি আছে।”

তখন মেহবিন বলল,,

“একজনের জায়গায় দাঁড়িয়ে কখনো অন্যের পরিস্থিতি বোঝা যায় না। তাই এসব নিয়েই কথা না বলাই ভালো। আর টেনশন এটা অনেক কারনে হতে পারে। বিদেশে ঘুরেছে বা এতো বড় বাড়িতে থাকে সবার সাথে থাকে বলে মনে জীবনে কোন টেনশন আসবে না এরকম তো কোন কথা নেই তাই না। নাহলে তো বড়লোকদের কোন টেনশনই থাকতো না। বরং বড়লোকদের আরো টেনশন আরো বেশি।শুধু মানুষ থাকলেই হবে না মন খুলে কথা বলার জন্যও তো মানুষ থাকতে হবে। কখনো কখনো অনেক ছোট কারনেও আমাদের অনেক টেনশন হয়। আজকাল টেনশন কোন বড় ব্যাপার নয়।”

মেহবিনের কথা শুনে সাহেদা খানম চুপ মেরে গেলেন। তখনি রাইফার জ্ঞান ফিরলো। ও সবার আগে মেহবিনের দিকেই তাকালো । মেহবিন জিজ্ঞেস করল,

“এখন কেমন লাগছে আমাকে আপনার? কোথাও কোন অসুবিধা হচ্ছে কি?”

রাইফা বলল,

“আমি ঠিক আছি এখন। হুট করেই চোখে অন্ধকার দেখলাম তারপর আর কিছু মনে নেই।”

মেহবিন শেখ শাহনাওয়াজ এর দিকে তাকিয়ে বলল,,

“ওনার জন্য কিছু পাতলা খাবার আনার ব্যবস্থা করুন। আর কিছু ওষুধ লিখে দিচ্ছি সেগুলো আনানোর ব্যবস্থা করুন।

মেহবিনের কথা শুনে আরিফা জামান আর সাহেদা খানম খাবার আনতে গেল। মেহবিন শেখ শাহনাওয়াজ কে জিজ্ঞেস করল,,

“ফুল কোথায়?”

“ও তো ঘুমিয়ে পরেছে।”

“ওহ আচ্ছা আর বাড়ির সকলে কোথায়? মিস্টার সায়িদকে খবর দেওয়া হয়েছে?”

“হুম ও বলেছে এখন আসতে পারবে না। আর বাকি সবাই নিজেদের কাজে মেয়েরা সবাই কলেজে গেছে। আপনি একটু রাইফার কাছে থাকুন। আমি গেলাম ওষুধ আনানোর ব্যবস্থা করি।”

“হুম!”

শেখ শাহনাওয়াজ চলে গেলেন। মেহবিন রাইফার দিকে তাকালো রাইফা ওর তাকানো দেখে মাথা নিচু করে নিল। হুট করে মেহবিন বলল,,

“সবথেকে হাঁসি খুশি থাকা মেয়েটা এমন ডিপ্রেশনে কিভাবে পরে গেল?”

মেহবিনের কথায় রাইফা মেহবিনের দিকে তাকালো আর বলল,,

“আমার পার্সোনাল বিষয়ে আপনার কথা না বললেও চলবে।”

‘ওকে আপনার হাতে দাগ কিসের রাইফা আফনূর?”

মেহবিনের কথায় রাইফা হকচকিয়ে উঠলো আর বলল,,

“মানে?’

“আপনার হাতে কারো আঙুলের গভীর দাগ দেখতে পেলাম মনে হয় কেউ অনেক শক্ত করে ধরেছিল হাতটা।হয়তো অনেক ব্যাথা। আপনার হাতে মারের দাগ কেন রাইফা আফনূর? এটা কিন্তু পার্সোনাল না প্রফেশনাল এজ এ ডক্টর হিসেবে।”

মেহবিনের কথা শুনে মেয়েটি থমকে গেল। মেহবিন হেঁসে বলল,,

“কি হলো বলুন না?”

“আমার কোন বিষয়েই আপনি কথা বলবেন না। আপনি শুধু একজন ডক্টর আর কিছুই না। আমাকে পার্সোনাল কোন প্রশ্ন করার অধিকার নেই আপনার।”

মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

“হুম হুম আপনি ঠিক বলেছেন আমি শুধু একটা ডক্টর।যাই হোক আসি নিজের খেয়াল রাখবেন। আর হ্যা একটা কথা নিজের আপনজন বলে অন্যায় করলেও ছেড়ে দেবেন এটা কিন্তু ঠিক না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। যেমনটা আগে করেছেন।”

বলেই মেহবিন বের হলো। বেরুতেই দেখলো মিশু চোখ কচলে কচলে হাঁটছে। তা দেখে মেহবিন বলল,,

“ফুল ওভাবে হাঁটলে তো পরে যাবে।”

মেহবিনের এমন কথায় মিশু তাড়াতাড়ি করে হাত নামালো আর মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আমি তো এখন ঘুমিয়ে নেই। তাহলে ফুল তুমি এলে কোত্থেকে তুমি তো আমার স্বপ্ন আসো।তুমি সত্যি সত্যি এসেছো নাকি?

মেহবিন এগিয়ে গিয়ে একটা চিমটি দিয়ে বলল,,

“আমি তোমার সামনে সত্যি সত্যি এসেছি।”

মিশু হাত ডলতে ডলতে বলল,,

“হ্যা তুমি তো দেখি সত্যি সত্যি এসেছো।”

“হুম।”

মেহবিন মিশুর সাথে কিছু সময় কাটিয়ে চলে গেল। সাহেদা খানম রাইফার ঘরে গিয়ে খাবার টা রেখে বলল,,

“আমি তো ভেবেছিলাম কোন সুখবর পাবো তা দেখি সে গুড়ে বালি।”

রাইফা কিছুই বললো না একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তার কিছুই ভালো লাগছে না। সাহেদা খানম চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর শেখ শাহনাওয়াজ ওষুধ এনে দিলেন রাইফা হালকা কিছু খেয়ে শুয়ে পরলো।

__________________

আজ শুক্রবার নাফিয়া কে দেখতে আসবে কিন্তু বাড়িতে না তারা একটা বড় রেস্টুরেন্টে দেখা করবে বলেছে। তা দেখে মুখর বলল,,

“আবার রেস্টুরেন্ট কেন? আমাদের বাড়িতে কি জায়গা কম আছে।”

তখন আছিয়া খাতুন বললেন,,,

“এতো কথা বইলো না নাতি ছেলেরা যা বলছে তাই হইবো। ভালোই ভালোই বিয়েটা হলেই হলো।”

“তুমি না অসুস্থ তোমার তো জার্নি করা ঠিক না।”

“তাই বইলা আমি যামু না নাকি। আমি যামু তো।”

“পরে কিছু হলে আমরা কিন্তু দায়ী থাকবো না বলে দিলাম।”

“আইচ্ছা।”

সেদিন মুখর বাড়ি ফিরেছিল ঠিকই কিন্তু আছিয়া খাতুন কে বলা হয় নি মুখরের অসুস্থতার কথা। তিনি আবার একটুতেই হায়পার হয়ে যায়। মুখর অনেকটাই সুস্থ কাল থেকে আবার ও জয়েন করবে। সবাই দুপুরের দিকে বেরিয়ে পরলো। রেস্টুরেন্টের রুমের মতো ওখানের একটা টেবিল বুকিং করেছে। ওখানে যেতেই দেখলেন ছেলেপক্ষ বসে আছে। নাফিয়া আজ সিম্পল গাউন পরেছে আর হিজাব বেঁধেছে। সে তার ভাইয়ের সাথেই চলছে। মুখরের সাথে মুখরের মামার ফ্যামিলি ও এসেছে আর মামাতো বোনটা মুখরের সাথে চিপকানোর ধান্ধায় আছে। মুখরের বাম পাশে নাফিয়া বসলো আর ডান পাশে মুখরের মামাতো বোন ফারজানা। সবাই দেখে মুখর কিছু বলতে পারলো না কিন্তু মনে মনে সে ভিশন বিরক্ত। সবাই মিলে কথা বলতে লাগলো। হুট করে ফারজানার হাতে পানির গ্লাস লেগে মুখরের ওপর পরে গেল।ওর শার্ট ভিজে গেল ও তাড়াতাড়ি করে উঠে দাঁড়ালো ফারজানা টিসু নিয়ে মুখরের শার্ট মুছে দিতে লাগলো। মুখর ওকে সরিয়ে দেবে এমন সময় রুমের দরজা খুলে আগমন ঘটলো বোরকা হিজাব পরিহিতা ডক্টর মেহবিন মুসকান এর প্রথমে মুখরের ফ্যামিলি দেখে অবাক হলেও পরে মুখর আর ফারজানা কে ওভাবে দেখে আরো অবাক হলো। ও কোন রিয়াকশন না দিয়ে সোজা হেঁটে ওদের পাশের টেবিলে বসে পরলো। এমন একটা ভাব যেন ও মুখরের পরিবার কে চেনেই না। আছিয়া খাতুনসহ মুখরের পুরো পরিবার মেহবিনকে এখানে দেখে কিছু টা চমকে উঠলো। সকলের দৃষ্টি মেহবিনের ওপর কিন্তু মেহবিনের দৃষ্টি তার ফোনে। মুখর ফারজানা কে সরিয়ে দিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে আস্তে করে বলল,,

‘এগুলো কোন ধরনের অসভ্যতা। এরপর এরকম করবি তো ঠাঁটিয়ে দুটো লাগাবো বেয়াদপ।”

ওর কথা শুনে ফারজানা সরে এলো। তখন মুখর সবার উদ্দেশ্যে বলল,,

“আপনারা নিজেদের মতো কথা বলুন আমি আসছি।”

বলেই ওখান থেকে ওয়াশরুমে চলে গেল। মেহবিন আড় চোখে সব দেখলো কিন্তু রিয়াকশন দিল না। তখন একটা ওয়েটার এলো মেহবিনের কাছে এসে অর্ডার জানতে চাইলে মেহবিন সব অর্ডার দিয়ে বলল,,

“আমার কিছু লোক আসবে তারা আসলে তারপর সার্ভ করবেন। আপতত একটা কফি দিন।

‘ওকে ম্যাম’ বলেই লোকটা চলে গেল। আছিয়া খাতুন কান উঠিয়ে সব শুনলেন। মেহবিনের কফি চলে এলে মেহবিন সেটা খেতে লাগলো। তখন মুখরদের টেবিলে ছেলের বাবা বললেন,,

“তাহলে আমাদের ছেলেকে পছন্দ হয়েছে তো মিষ্টার শাহরিয়ার?”

ছেলেটা দেখতে শুনতে খারাপ না। ভালোই আছে তা দেখে মাহফুজ শাহরিয়ার বললেন,,

“জি আপনার ছেলেকে আমাদের পছন্দ হয়েছে?”

“আমাদের ও আপনাদের মেয়েকে পছন্দ হয়েছে। তাহলে ওরা আলাদা ভাবে নিজেদের মধ্যে কথা বলুক।”

তখনি বাইরে কিছু বডিগার্ড রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে পরলো আর দুজন লোককে একজন মহিলা আর একজন পুরুষকে ঐ রুম দিয়ে ঢুকতে দেখা গেল। ওখানের একজন কে দেখে মাহফুজ শাহরিয়ার দাঁড়িয়ে পরলেন ওনার দেখাদেখি সকলেই দাঁড়ালেন কারন আগমনটা ছিল একজন মন্ত্রীর ,মন্ত্রী মেহরব চৌধুরীর। মেহবিন সেদিকে একবার তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দিল। এখানে কমিশনার এর ফ্যামিলি কে দেখে মন্ত্রীসাহেব অবাক হলেন। মাহফুজ শাহরিয়ার আর আছলাম শাহরিয়ার এগিয়ে গেলেন । হাজার হোক মন্ত্রী বলে কথা আর আছলাম শাহরিয়ার ও সামনে নির্বাচনে দাঁড়াবেন একটু সম্মান প্রদর্শন তো করতেই হয়। মেহরব চৌধুরী এগিয়ে এসে বললেন,

“একি সবাই দাঁড়িয়ে গেলেন কেন বসুন। আজ আমি কোন মন্ত্রী হিসেবে এখানে আসিনি তাই সম্মান প্রদর্শন করতে হবে না।”

সকলে বসলো তখন মাহফুজ শাহরিয়ার সালাম দিলেন,,

‘আসসালামু আলাইকুম স্যার।”

‘ওয়ালাইকুমুস সালাম কমিশনার সাহেব। তো কমিশনার স্যার এখানে? পুরো পরিবার কে সময় দেওয়া হচ্ছে বুঝি।”

‘তেমনটাই আর কি। কেমন আছেন আপনারা।”

‘জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনারা?

“জি আমরাও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”

“আচ্ছা আপনাদের মতো সময় কাটান। আর প্লিজ আমায় দেখে অপ্রস্তুত হবেন না।”

মন্ত্রী সাহেব ও তার মিসেস সোজা মেহবিনের টেবিলে গেল মেহরব চৌধুরী মেহবিনের পাশে আর তার মিসেস তার অপজিটে বসে পরলো। সেটা দেখে মুখরদের পরিবার পুরো শকড। মেহবিন এমনে কফি খেতে লাগলো যেন পৃথিবীতে কফি খাওয়ার থেকে ইমপোর্টেন্ট কিছু নেই। তা দেখে মেহরব চৌধুরী বললেন,,

‘আই এম সরি মা। একটু লেট হলো এখানে আমার দোষ নেই সব দোষ এই মহিলার।”

মেহবিন কিছুই বললো না। তখন মিসেস মেহরব বললেন,,

‘এখন সব আমার দোষ হয়ে গেল। তা মিটিং ছিল কার আমার না তোমার। সেখান থেকে বেরুতেই তো দেরি হয়ে গেল। আমার কোন দোষ নেই বলে দিলাম।”

মেহবিন এবার ও কিছু বললো না। তখন মেহরব চৌধুরী বললেন,,

‘এই কথা বলবি না। এতোদিন পর দেখা।

মেহবিন ঘড়ি দেখে বলল,,

‘আঠারো মিনিট পনেরো সেকেন্ড লেট তোমরা। এরপরেও তোমাদের সাথে কথা বলা উচিৎ আমার। আমি কিন্তু কিছু বলি নি তোমরাই বলেছিলে আমার আগে তোমরা এখানে থাকবে আর দেরি হলে আমার যা ইচ্ছা তাই করতে।”

‘সরি বললাম তো।”

‘শুধু সরি বললেই হলো?”

‘তা কি করলে আমার মায়ের রাগ ভাঙবে? কান ধরে সরি বললেই এই তো ধরছি।”

উনি কান ধরতে যাবে তার আগেই মেহবিন ওনার হাত ধরল আর বলল,,

“কি করছো তুমি? তুমি একজন মন্ত্রী হয়ে পাবলিক প্লেস এ কি করছো? তোমার সম্মান কোথায় তুমি জানো। পাবলিক প্লেসে কান ধরে রাগ ভাঙালে যে মানুষ গুলো খুশি হয় আমি তাদের মধ্যে নই। তারা তো বিবেকহীন যে তাদের খুশির জন্য একজন মানুষ তার সম্মান বিসর্জন দেয় এটা বুঝতে পারে না বরং তারা অন্যরকম খুশি হয় তাদের প্রিয়জন সবার সামনে কান ধরে রাগ ভাঙাচ্ছে বলে। আমি রাগ করে নেই।

মেহবিনের কথা শুনে মেহরব চৌধুরী হাসলেন সত্যিই তো এরকম টা ক’জন ভাবে। এদিকে মুখরদের টেবিলে সবাই অবাক চোখে ওদের টেবিলের দিকেই তাকিয়ে আছে। মেহরব চৌধুরী হেঁসে বললেন,,

“সত্যি তো?”

‘হুম!”

“তা তোমার গুনধর পুত্ররা আর পুত্রী কোথায়? তারা কি তোমার মতো মন্ত্রীর থেকেও বেশি ব্যস্ত নাকি।”

তখনি মেহবিনের থেকে বড় দুজন ছেলে আর মেয়ে সরি সরি বলতে বলতে এগিয়ে এলো। মেয়েটা এসে সোজা মেহবিনের অপজিটে তার মায়ের পাশে বসে পরলো। আর ছেলেটা মেয়েটার পাশে। তখন মেহবিন বলল,,

“কখন আসার কথা ছিল তোমাদের আমার থেকে তোমাদের বাড়ি কাছে তবুও তোমরাই দেরি করেছো।”

তখন মেয়েটা হেঁসে বলল,,

“আরে মেহু কথায় আছে মক্কার মানুষ হজ্জ পায়না ব্যাপারটা হলো তেমন।”

“হুম তাই তো দেখছি তা আরেকজন কই? আমাদের ড্যাশিং রাজকুমার কই?”

তখন মুখরের সাথে এন্ট্রি হলো দশ বছরের এক বাচ্চার। সে এসেই বলল,,

‘এই যে আমি আসলে কি বলো তো আসতে গিয়ে এই পুলিশের সাথে ধাক্কা। আমার হাতে চকলেট ছিল সেটা আমার এতো সুন্দর সাদা শার্টে লেগে গেল। পরে উনি আমাকে নিয়ে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে আমার শার্ট পরিস্কার করে দিল তাই দেরি হলো।”

মুখর এসে সব বলল আর মেহরব চৌধুরীর সাথে কুশল বিনিময় করলো আর নিজেদের টেবিলে চলে গেল। এমন একটা ভাব সে ও কাউকে চেনে না। এদিকে পাশে মন্ত্রীর পরিবার আছে বলে সবাই একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরেছে। মেহবিন ছেলেটাকে নিজের পাশের চেয়ারে বসালো। ওয়েটারকে ইশারা করলো খাবার দিয়ে যেতে ওয়েটার খাবার সার্ভ করলো। তখন এদিকে নাফিয়া আর ছেলেটাকে কথা বলতে পাঠানো হলো। ওরা ওখান থেকে বেরিয়ে টপ ফ্লোরে নেমে গেল। তখন নাফিয়া বলল,,

‘আপনার কিছু বলার আছে?”

ছেলেটা মুচকি হেসে বলল,,

‘না!”

‘মানে আমার সম্পর্কে সব জেনেও আপনি আমায় বিয়ে করতে রাজি।”

‘সব জেনে মানেও আমি যতটুকু জানি তাতে তো অসুবিধা নেই কোন।”

“তারমানে আপনি আমার সম্পর্কে সব জানেন না?”

“তেমন কি কোন কারন আছে যা এই বিয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ?”

নাফিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে নিশ্চিত ছেলেটা তার সম্পর্কে কিছু জানে না। সে বলল,,

‘কয়েক বছর আগে আমি পেটে আঘাত পেয়েছিলাম সেই আঘাতের ফলে আমার একটা সমস্যা তৈরি হয়। ডক্টর বলেছেন আমি নাকি কোনদিন মা হতে পারবো না। কারন মা হওয়ার চান্স শুধুমাত্র দুই পার্সেন্ট।”

কথাটা শুনেই ছেলেটার মুখের হাঁসি গায়েব হয়ে যায়। নাফিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,

‘আমি যতটুকু মনে হয় আপনাদের পরিবার কে জানানো হয়েছিল। কিন্তু আপনি জানেন না এটা ভেবে অবাক হয়েছি। তো এবার বলুন আপনি রাজি আছেন কি আমাকে বিয়ে করতে?”

ছেলেটা বলল,,

‘একটা মানুষের জীবনে বিয়েটাই সব না। যদি বাবা ডাকটাই না শুনতে পারি তাহলে বিয়ে করে লাভ কি?”

‘আপনার স্টেড ফরওয়ার্ড কথা শুনে আমি খুশি হয়েছি তাহলে এবার ওখানে যাওয়া যাক। আপনি আপনার পরিবার কে আপনার মতামত জানিয়ে দিন।”

ছেলেটা নাফিয়া কে ফেলেই চলে গেল।ও ওখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। তখন একটা ওয়েটার ওকে এসে একটা ফুল আর চিরকুট দিল। ও জানতে চাইলে ওয়েটার বলল বলা যাবে না। নাফিয়া ফুলটা নাকে ধরে তার সুবাস নিল তারপর চিরকুট খুলল,,

“পৃথিবীতে কোনকিছুই পারফেক্ট নয় যদি হতো তাহলে এতো সুন্দর চাঁদ হয়েও তার গায়ে দাগ থাকতো না। তাই কোন কিছু নিয়ে আফসোস করবেন না। ভরসা রাখুন আপনার রবের প্রতি শেষটা সুন্দর হবে ইনশাআল্লাহ।”

চিরকুট টা পরে অজান্তেই নাফিয়ার মুখে হাঁসি ফুটে উঠলো। সে হেঁসে ফুল আর চিরকুটটা ব্যাগে ভরে মুখরদের কাছে চলে গেল। ওখানে গিয়ে দেখতে পেল ছেলেটা তার বাবা মায়ের সাথে আলাদা করে কথা বলছে অন্য জায়গায়। ও যেতেই মুখর বলল,,

“কি বলল?”

“যা সবাই বলে আমি কিন্তু বলেছিলাম আমার সম্পর্কে আগে বলে দিতে এখন এখানে এসে?”

“আমার জানামতে বাবা বলেছে। তাদের কোন আপত্তি নেই দেখেই তো এখানে আসা হয়েছে।”

“জানি না আমি কিছু জানতেও চাই না। এখন আমি কফি খাবো অর্ডার করো।”

মুখর উঠে এক কাপ কফি অর্ডার করলো। মেহবিন রা নিজেদের মতো খাবার খাচ্ছে। মেহবিন সেই ছোট ছেলেটাকে খায়িয়ে দিচ্ছে। ছেলেটা মেহবিন কে অনেক কিছু বলছে। মেহবিন মুচকি হেসে শুনছে। কিছুক্ষণ পর মেহবিনদের খাওয়া শেষ। ছেলেটা তার মতামত জানিয়ে দিল আর ওখান থেকে চলে গেল। ছেলের মা বাবাকে বলা হয়েছিল তারা মুখরদের পরিবারের নাম টাকা দেখে লোভে পরেছিল তাই ছেলে কে জানায় নি।সবার হাসিখুশি মুখটা ছোট হয়ে গেল। কিন্তু নাফিয়া ঠিকই আছে সে কফি খাচ্ছে। মেহবিন সব দেখলো তখন মেহরব চৌধুরী বললেন,,

“বিলটা কিন্তু আমার নামে হবে।”

তখন মেহবিন বলল,,

‘এখানে ডেকেছে কে আমি না তুমি? একটা কথাও বলবে না। ট্রিট আমার দেওয়ার কথা তাই বিল আমি দেব।”

“ওহ হ্যা তুই তো বললি ট্রিট দিবি তা কি খুশিতে ট্রিট?”

মেহবিন ওর টেবিলে বসা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল ,,,

“বোনের জামাই পেয়ে গেছি তাই? তোমার মেয়ে একটা ছেলেকে পছন্দ করে তাই বলতে এখানে ডেকেছি তোমাদের। আনফরচুনেটলি সে এখানেই আছে।”

~চলবে,,

বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম। আজকের পর্বটা টুইস্ট এ ভরপুর ছিল। কয়েকদিন ধরেই দেখছি কেউই তেমন মন্তব্য করছেন না যা আমাকে গল্প লেখার আগ্রহ থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। গল্পটা কি ভালো লাগছে না আপনাদের।আজ সবাই বড় বড় করে মন্তব্য করে ফেলুন যাতে আমি মনোবল পাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here