কাব্যের_বিহঙ্গিনী #পর্ব_২১ #লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

0
647

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_২১
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেহবিনের কথা শুনে মেহরব চৌধুরী অবাক হয়ে নিজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন। লজ্জায় তার মেয়ে মাইশা মাথা নিচু করে রইল। তখন দেখে মেহবিন বলল,,

“কি হলো নিজের হবু জামাইকে দেখবে না নাকি?”

মেহরব চৌধুরী মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

‘হ্যা হ্যা তা তো দেখবোই। কোথায় সেই ভাগ্যবান পুরুষ? যিনি আমার মেয়ের নজরে এসেছে।”

মুখরদের পরিবারের সকলে বাড়ি যাওয়ার জন্য উঠছিলেন। মুখরের মামারা চলে গেছেন এখন শুধু মুখররাই রয়েছে। তখন মেহবিন উঠে দাঁড়িয়ে বলল,,

“মিস্টার আলভি শাহরিয়ার একটু এখানে আসবেন?”

হুট করে নিজের নামে মেহবিন কে ডাকতে দেখে আলভি হকচকিয়ে গেল। ও কিছুটা আন্দাজ করেছে। ও উঠে দাঁড়াল আর বলল,,

‘জি আমাকে বলছেন?”

‘এখানে আপনি ছাড়া আর কেউ আলভি শাহরিয়ার আছে কি?”

আলভি মেহবিনের কথায় অপ্রস্তুত হয়ে গেল। আর ধীরে ধীরে এগিয়ে আসলো মেহবিনদের টেবিলের কাছে। ও আসতেই মেহবিন হেঁসে বলল,,

‘এই যে উনি আলভি শাহরিয়ার সন অফ আছলাম শাহরিয়ার। আর ইনিই সেই ব্যক্তি।”

আলভি সালাম দিল। মেহরব চৌধুরী হেঁসে সালামের জবাব দিল। আর মেয়ের দিকে তাকালো সে মুচকি হেসে তার বাবার দিকেই তাকিয়ে আছে। ছেলেটাকে তার পছন্দ হয়েছে দুজনেই ইস্টাবলিশ পরিবার ও ভালো তাই কোন কারন নেই না করার। তাই বলল,,

“তো আলভি আমি সহজ কথা সহজ ভাবেই শুনতে ভালোবাসি। তা তুমিও কি আমার মেয়েকে পছন্দ করো। মেহবিন যেভাবে বলল তা শুনে বুঝলাম এখানে শুধু আমার মেয়ে নয় তোমারও হাত আছে। তাই সরাসরিই বলো করবে আমার মেয়েকে বিয়ে?”

হুট করে মেয়ের বাবার এমন প্রস্তাব পেয়ে আলভি চমকে উঠলো। ওর ভেতরটা ধক ধক করছে। ও ওর পরিবারের দিকে তাকালো সকলে ওর দিকেই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। ও সেদিকে একবার তাকিয়ে মাইশার দিকে তাকালো আর বলল,,

‘জি স্যার আমি আপনার মেয়েকে পছন্দ করি আর বিয়ে করতে চাই।”

‘আলহামদুলিল্লাহ এ তো ভালো কথা তাহলে তোমার পরিবারের সাথে আমি কথা বলছি।”

মেহরব চৌধুরী উঠে আছলাম আর মাহফুজ শাহরিয়ার এর কাছে গেলেন আর মেহবিনের কথা অনুযায়ী উনি প্রস্তাব রাখলেন তাদের কাছে। উনারা একদম অবাক হয়ে গেলেন এতোক্ষণ সবাই সব কথা শুনেছে তাই আরো অবাক হলেন একবার দেখায়ই তিনি তার মেয়েকে তাদের বাড়িতে দিতে প্রস্তুত। তারা বললেন কিছুটা সময় দিতে তারপর জানাবে। মেহরব চৌধুরী চলে এলেন ওখান থেকে। মুখরের পরিবারের সবাই ভাবলো আজ নাফিয়ার বিয়ের কথা বলার জন্য এখানে এসেছিল আর হচ্ছে আলভির বিয়ের কথা অবশ্য আলভি আর মুখর দু’জনেই সমান বয়সের। মুখর কিছু দিনের বড়। তখন নাফিয়াই বলল আলভির বিয়ের কথা পাকা করতে সকলের মতামত নিয়ে সবাই বলল কথাবার্তা বলতে কারন পরিবার ভালো সবথেকে বড় কথা তিনি একজন মন্ত্রী আর তার মেয়েও বিসনেস করে যদিও তার ভাই মিহির চৌধুরীর সাথে যৌথ ভাবে। তাতে কি মেয়ে ভালো। সকলে এক জায়গায় বসলো কথা বলার জন্য। তখন মেহবিন ওখান থেকে উঠে এলো আর রেস্টুরেন্টের ছাদে চলে গেল। আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। আছিয়া খাতুন মাইশা কে নিজের কাছে বসিয়ে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে লাগলেন। সবাই কথা বলছে মুখর মেহবিন কে খুঁজলো না পেয়ে সেও উঠে এলো। আর খুঁজতে খুঁজতে ছাদে চলে এলো দেখলো আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মেহবিন। ছাদেই কতোগুলো ফুল গাছ ছিল মুখর সেখান থেকে কয়েকটা ফুল ছিঁড়ে মেহবিনের পাশে দাঁড়ালো। আর বলল,,

“আমায় অবিশ্বাস করো না বিহঙ্গিনী?”

মেহবিন মুখরের দিকে তাকালো আর মুচকি হেসে বলল,,

“যার প্রতিটা সাক্ষাতের ফুলে আমি, যার বর্ষনের ফোটায় আমি, যার অসীম ভালোবাসায় আমি, যার বিশ্বাসে আমি ,যার চাঁদমাখা রাতের অনুভূতিতে আমি,যার একাকী গহীন অনুভবে এ আমি,যার নির্ঘুম রাতের একাকী নিঃশ্বাসে আমি,যার আমায় ভেবে বিষাদে আমি, যার হুট করে মুচকি হাসির কারন আমি,যার আবেগ মাখা চিঠিতে আমি, যার কবিতায় আমি, যার যত্নে আমি, যার প্রাপ্তিতে আমি , যার প্রথম ও শেষ ভালোবাসায় আমি, যার পুরোনো প্রাপ্তির তারিখে আমি, তাকে কিভাবে অবিশ্বাস করি আমি।”

মেহবিনের কথায় মুখর মুগ্ধ হয়ে গেল আর মুচকি হেসে বলল,,

“তোমাকে যত দেখি তত অবাক হই তোমাকে বোঝা দায়। যাই হোক ফুলগুলো নিয়ে ধন্য করুন রানীসাহেবা।

মেহবিন হেঁসে ফুলগুলো নিলো। আর বলল,,

‘শুকরিয়া জনাব। এখন বলুন ঘটনা কি?

মুখর মেহবিন কে সব বলল তারপর এটাও বলল নাফিয়ার কথা। সব শুনে মেহবিন বলল,,

‘সমস্যা নেই। আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই নাফিয়া আপুর জন্য ভালো কিছু ভেবে রেখেছেন।”

“হুম অপেক্ষাটা ধীরে ধীরে দীর্ঘায়িত হচ্ছে বোধহয়।”

“আমি তো দেখছি ধীরে ধীরে কমে আসছে।”

“আমার কাছে দীর্ঘ লাগছে।”

‘সেই সারে চারটা বছর কাটিয়ে এসেছেন তখন দীর্ঘ লাগে নি। আর এখানে তো আর অল্প কয়েকটা দিন।আমার তো মনে হচ্ছে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আপনার অপেক্ষার অবসান ঘটবে ইনশাআল্লাহ।”

“ইনশাআল্লাহ অবশ্যই ঘটবে।”

তখন পেছন থেকে আওয়াজ আসলো,,

‘এই যে মনি এখানে কি করছো তুমি? আমি কখন থেকে তোমায় খুঁজছি।”

মেহবিন আর মুখর তাকিয়ে দেখলো সেই দশ বছরের বাচ্চা। মেহবিন হেঁসে বলল,,

‘কেন রাজকুমার আদর আমাকে খুঁজছিল কেন?”

“নিচে তোমায় বাবা আর দাদু ডাকছে। আর এই যে পুলিশ তোমাকেও তোমার বাবা ডাকছে তাড়াতাড়ি চলো।”

আদরের কথায় মুখর হাসলো আর বলল,,

“পুলিশ কি কথা আমি তোমার কি হই বলোতো সেই সম্মধোন করো না।”

‘মনি যদি আমার ফুপি হয় তাহলে তুমি হও ফুপা। আর আমি যদি ফুপিকে মনি বলি তাহলে তোমার সম্মধোন হয় মনা। তাহলে কি তোমায় মনা বলে ডাকবো পুলিশ?”

আদরের কথায় মুখর হা করে তাকিয়ে রইল আর মেহবিন হেঁসে উঠলো। মুখর নিজেকে সামলে বলল,,

‘না না থাক মনা বলতে হবে না। এর থেকে পুলিশই ঠিক আছে।”

“হয়েছে তোমাদের কথা এখন নিচে চলো।”

মেহবিন আর মুখর আদরের সাথে নিচে চলে গেল। ও যেতেই নাফিয়া হুট করেই মেহবিন কে জরিয়ে ধরলো। আর বলল,,

“তোমায় দেখে কতোটা খুশি হয়েছিলাম তা বলে বোঝাতে পারবো না মেহু। মনে হচ্ছিল এখনি জরিয়ে ধরি কিন্তু সবাই ছিল বলে আর ধরতে পারি নি। কেমন আছো তুমি?”

মেহবিন মুচকি হেসে নাফিয়া কে ছাড়িয়ে বলল,,

‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি?”

“আমিও আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি।”

‘আজ যা হলো মন খারাপ করো না আপু।”

“ধুর কি যে বলো তুমি মন খারাপের কিছুই নেই। আল্লাহ তায়ালা সবসময় তার বান্দার জন্য ঠিকই করেন। ইনশাআল্লাহ আমার শেষটাও অনেক সুন্দর হবে।”

“ইনশাআল্লাহ আপু। হুম এখন চলো একটু দাদিশাশুড়ির সাথে দেখা করা যাক।”

“হুম কিন্তু মেহু মন্ত্রীসাহেবের পরিবারের সাথে তোমার কি সম্পর্ক?”

“পরে জানা যাবে চলো।”

ওরা মেহরব চৌধুরীর ওখানে চলে গেল। মেহরব চৌধুরী হেঁসে মেহবিনের হাত ধরে বললেন,,

” ও হচ্ছে আমার ভাগ্নি মেহবিন। যদিও আপনারা ওকে চেনেন তবুও আমার ভাগ্নি হিসেবে তো চেনেন না তাই পরিচয় করিয়ে দিলাম।”

মেহবিনের পরিচয় টা শুধু মুখর আর মাহফুজ শাহরিয়ার এর কাছে ছাড়া সবার কাছে বিষ্ফোরণের ন্যায় ঘটলো। সবথেকে বেশি আছিয়া খাতুন তিনি বললেন,,

“তুমি মিথ্যা কথা বলতেছো না তো? তুমি মেহুর আসল মামা হও তো? কারন আমরা তো জানতাম ওর কেউ নেই ও এতিম।”

মেহরব চৌধুরী মুচকি হেসে বললেন,,

“না আমি সত্যিই বলছি।”

তখন মেহবিন বলল,,

“এসব ছাড়ো তো মামা তোমরা বিয়ের ডেট ফিক্সড করো।”

তখন আছিয়া খাতুন বললেন,,

“কেন ছাড়বে? তুমি জানাও নি কেন?”

“কারন তখন আপনারা আপনাদের মন মতো ভেবে নিয়েছিলেন আর যখন আপনাদের সাথে পরিচয় হয়েছিল তখন মামাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক ছিল না। তবে বিয়ের আগে হয়েছিল কিন্তু বিয়ের পর আপনারা আমার ব্যাপারে জানতে বা শুনতে চান নি।যাক পুরোনো কথা বাদ মামা তুমি বিয়ের ডেট ফিক্সড করো।”

মেহবিনের কথায় পুরোনো কথা কেউ তুললো না তবে সবাই বেশ অবাক হয়েছে। সবাই দুই মাস পর আলভি আর মাইশার বিয়ের ডেট ঠিক করলো। সবাইকে বেশ খুশি দেখাচ্ছে শুধু আছিয়া খাতুন বাদে। তিনি একটু সরে গিয়ে অন্য একটা টেবিলে বসলো। মেহবিন সেখানে গিয়ে ওনার পাশে বসলো আর সালাম দিল,,

‘আসসালামু আলাইকুম দাদিজান!”

আছিয়া খাতুন মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম।”

“কেমন আছেন আপনি? আপনাকে দেখে তো খুশি মনে হচ্ছে না।”

‘ভালো আছি। আর আমি খুশিই আছি আমার আরেক নাতির বিয়ে ঠিক হলো।”

“খুশি তো হতেই হবে মাইশা আপু তো আর আমার মতো এতিম নয়। তার স্ট্যাটাস আপনাদের থেকেও ওপরে। একজন মন্ত্রীর মেয়ে বলে কথা। আমার মতো কোন পরিবারহীন একাকী থাকা মেয়ে নয় সে।

মেহবিনের ঠান্ডা মাথায় অপমান টা বেশ প্রভাব ফেলল আছিয়া খাতুন এর ওপর। তিনি মাথা নিচু করে করলেন। তা দেখে মেহবিন বলল,,

“যাই হোক আপনাকে দেখে খুশি মনে হচ্ছে না। কিন্তু খুশি না হওয়ার কারন দেখছি কারন আমি তো রাজ রাজই রেখেছি আপনি বলেছিলেন কেউ যেন না জানে যে আপনার নাতি আমার হাজবেন্ড। আজ কিন্তু বাইরের কেউ জানতে পারে নি সে আমার হাজবেন্ড।”

এবার আছিয়া খাতুন মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বললেন,,

“তুমি ভালো আছো মেহু?”

মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

‘আমি খারাপ থাকি না সবসময় ভালোই থাকি আলহামদুলিল্লাহ।’

‘আমার কথার সোজা উত্তর দিতে পারো না।”

‘আপনার ব্যবহারে আর আপনার জন্যই দিই না।”

‘তুমি এমন কেন?”

‘কেমন?”

‘বেয়াদপ।”

“এই বেয়াদপ মেয়েটাকেই তো একদিন ভালোবেসে নিজের বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়েটার কেউ নেই শুনেই ভালোবাসা কোথা দিয়ে পালালো বলুন তো।”

কথাটা শুনে আছিয়া খাতুন চুপ মেরে গেলেন তখন মেহবিন বলল,,

‘যাই হোক আসছি নিজের খেয়াল রাখবেন।”

‘আমি যদি আমার কথাটা ফিরিয়ে নেই। তুমি কি আমাদের বাড়িতে আমাদের সাথে থাকবে নাতবউ?”

আছিয়া খাতুনের মুখে নাতবউ শুনে মেহবিন হাসলো আর বলল,,

‘মন্ত্রীর ভাগ্নি বলে কি এরকম বলছেন দাদিজান?”

“না আমি এমনিই বললাম?”

“ওহ আচ্ছা তাহলে বলছি না এখনি নয়। নাফিয়া আপুর বিয়েটা হোক আপনার কথা অনুযায়ী তখনি সবার সামনে আপনার নাতির বউ হিসেবে স্বীকৃতি নিয়ে যাব আর থাকবো। আচ্ছা দাদিজান আমার একটা কথা বলুন তো সত্যিই কি শুধু আমি পরিবার হীন বলে ওরকম একটা কথা বলেছিলেন যে নাফিয়া আপুর বিয়ের আগ পর্যন্ত আমি যেন কাউকে না জানাই যে মুখর শাহরিয়ার আমার হাজবেন্ড। আর কেউ যেন আমাদের ব্যাপারে কিছু জানতে না পারে‌। সত্যিই কি ঐ একটা কারন নাকি অন্য কোন কারন ছিল?”

মেহবিনের কথা শুনে আছিয়া খাতুন অবাক চোখে তাকালো আর বলল,,

“এখন বাড়ি যাওয়া লাগবে আমি উঠি।”

“এটা কিন্তু আমার উত্তর নয় দাদিজান।”

“ঐ একটাই কারন আর কোন কারন নেই।”

“একটা মানুষের পরিচয় হিসেবে কি শুধু তার পরিবারই সবকিছু তাঁর নিজের কোন কিছু গ্ৰহনযোগ্য নয়।”

তিনি দাঁড়িয়ে বললেন,,

“একটা কথা মনে রেখো মেহবিন তোমারে আমি আগেও ভালোবাসতাম আর এখনো বাসি। তোমার পরিচয় বা পরিবার তোমার ভালোবাসায় কোন কমতি হতে দেয় নাই। তবে নাতবউ হিসেবে তোমারে আমি তখন মানতে পারি নাই। হয়তো আজও পারি না।

“না পারার তো কোন কারন দেখছি না দাদিজান আজ।”

“সেই জন্যই আজ বললাম বাড়ি যাওয়ার কথা।”

বলেই তিনি তাড়াতাড়ি করে চলে গেলেন। তা দেখে মেহবিন হাসলো আর বলল,,

” দাদিজান আপনি আমাদের এই সাময়িক বিচ্ছেদের কারন হওয়ার জন্য নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন নি। এখনো আয়নায় নিজের চোখের সাথে নিজের চোখ মেলাতে পারেন না। এমনিতে ভালোবাসেন তবে নাতবউ হিসেবে কেন নয় এর পেছনের কারন টা কি ছিল দাদিজান?”

মেহবিন সবার কাছে গিয়ে বলল তার যেতে হবে নয়তো ফিরতে অনেক রাত হবে। মুখরের মা মেহবিন কে জরিয়ে ধরে কপালে চুমু খেলেন। মাইশা আর আলভি মেহবিনকে ধন্যবাদ জানালো। আর আদর সে তো কেঁদেই ফেললো এখনি তার মনিকে সে ছাড়তে রাজি না। আদরের মা আদরের তিনবছর থাকতে একটা এক্সিডেন্ট এ মারা যায়। আর যবে থেকে ওর মামার সাথে পরিচয় হয়েছে তবে থেকে মেহবিন ওকে অনেক আদর করে ওকে তাই আদর মনিকে চোখে হারায়। মেহবিন সবার থেকে বিদায় নিয়ে এগুতেই মুখর মেহবিনের কাছে গিয়ে বলল,,

“আজ আমরা একসাথেই যাই না।”

‘আমি এতোক্ষণ থাকবো কোথায় শুনি?’

“আমাদের বাড়িতে চলো না। দাদিজান কিছুই বলবে না।”

‘আমি জানি উনি কিছু বলবে না তবে আমি এখন আপনাদের বাড়িতে যেতে চাইছি না। একেবারে মাইশা আপুর বিয়ের মধ্যে যাবো।”

‘একটা জিনিস ভেবে দেখেছো আমরা কিন্তু এখন বিয়াই বিয়াইন।”

‘তো?”

“এইবার কিন্তু একটা লাইন মারাই যায়। কি বলেন বিয়াইন সাহেবা।”

“ফাউল কথা রাখেন তো।”

“এটা তোমার কাছে ফাউল কথা মনে হলো।”

“তা নয়তো কি? আপনি আপনার মতো আসুন আমি গেলাম আমার টেনের টিকিট রেডি।”

“তুমি ট্রেনে যাবে?”

“তো কি উড়ে উড়ে যাবো?”

“বিহঙ্গিনী সে উড়তেই পারে।”

“বিহঙ্গিনীর ডানা কোথায় যে সে উড়বে।”

“পয়েন্ট!”

“কাব্য আপনি কিন্তু!”

“আমি কি?”

“আস্ত একটা না থাক কিছু বললাম না। আমি গেলাম আল্লাহ হাফেজ।”

বলেই মেহবিন চলে গেল আর মুখর একা একাই হাসতে লাগলো। একটু দূর থেকে মুখরের পুরো পরিবার মুখরকে হাসতে দেখলো। এমনিতে ও বেশি হাসে না তার ব্যক্তিত্ববজায় রেখে চলে এমনিতে বেশ রাগী তবে মেহবিনের কাছে সবসময়ই অন্যরকম।

সেদিনের মতো সবাই তার আপন নীড়ে ফিরে গেল। মুখর রাতেই রওনা দিয়েছিল পরের দিন থেকেই আবার জয়েন করবে। সাতটার দিকে মেহবিন গ্ৰামে পৌঁছালো ও পাকা রাস্তায় নেমে সামনে এগুতেই কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল ওর বাড়ির সামনের বাড়ির থেকে আওয়াজ টা আসছিল। ও আর বাড়িতে না গিয়ে সেখানে গেল ওখানে গিয়ে দেখলো একজন মহিলা মারা গেছে। মেহবিন কে দেখে তাজেল আর নওশি এগিয়ে এলো। ওদের থেকে জানতে পারলো লোকটা এতোদিন হাসপাতালে ছিল আজ মারা গিয়েছে। মেহবিন বাড়ি আসতে নিল কিন্তু তখন চারজন মহিলা এলো একইরকম পোষাক পরা মেহবিন তাজেলকে জিজ্ঞেস করলে ও বলল এই এলাকায় কেউ মারা গেলে নাকি এই চারজনই গোসল করায়। মহিলাদের জন্য মহিলা চারজন আর পুরুষ দের জন্য পুরুষ চারজন রাখা হয়েছে এটা নাকি চেয়ারম্যান সাহেব করেছেন তাদের নাকি এই জন্য টাকাও দেওয়া হয়। সবার বাড়ির লোক গোসল করাতে পারে না বলে নাকি এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেহবিন এটা দেখে অবাক হলেও পরে ভাবলো বিষয়টা মন্দ নয় ভালোই। মেহবিনের সামনে দিয়েই মৃত লোকটাকে নিয়ে যেতে নিল কিন্তু মেহবিন তাতে অদ্ভুত কিছু দেখতে পেল । ও এগিয়ে গেল আর মৃত মহিলার কাছে গিয়ে চাদর একটু উঠালো চাদরটা উঠিয়ে ও পুরো অবাক হয়ে গেল। ও সবার দিকে একবার তাকালো আরেকবার বডিটার দিকে। সবই ওর দিকে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে। মেহবিন রোবটের মতো ওখান থেকে উঠে এলো। ও কিছুই বুঝতে পারছে না ওর এখন কি করা উচিৎ।

~ চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here