কাব্যের_বিহঙ্গিনী #পর্ব_২৩ #লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

0
701

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_২৩
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

(অনুমতি ব্যতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ)

ওপাশের আওয়াজ শুনে মেহবিন বলল,,

‘কে?”

‘তোমার মৃত্যু!”

“আমার মৃত্যু আপনি হতে যাবেন কোন দুঃখে। আমার মৃত্যু শুধু আমার রবের নির্দেশেই হবে তাই না। আপনি চাইলেও আমার মৃত্যু হতে পারবেন না কারন এই পৃথিবীতে আমার রবের নির্দেশ ছাড়া কিছুই হয় না। খুব বেশি হলে আমার মৃত্যুর একটা কারন হতে পারেন এছাড়া বেশি কিছু হতে পারবেন না।”

মেহবিনের এরকম কথা শুনে ওপাশের লোকটা অবাক হলেও পরে হেঁসে বলল,,

“আচ্ছা তোমার কথাই মেনে নিলাম। তোমার মৃত্যু হতে না পারলাম কিন্তু তোমার মৃত্যুর কারন নিশ্চয়ই আমি হতে পারবো।”

“দেখা যাক না কি হয়। কোন কিছুই এতো কনফিডেন্স এর সাথে বলতে হয় না। কে জানে কার মৃত্যু কখন হয়? এমন ও তো হতে আমি আপনার মৃত্যুর একটা কারন হয়ে গেলাম। যাই হোক এখন বলুন কে আপনি?

“তুমি যার কাজে খুব বাগড়া দিচ্ছো আজকাল সেই আমি অন্ধকারের রাজা!”

মেহবিন মুচকি হেসে বলল,

“নিশাচর!”

‘এই তো চিনতে পেরেছো। যাই হোক আমাকে ধরার পথে যতদূর পর্যন্ত গিয়েছো সেখানেই থেমে যাও এটা তোমার জন্যই ভালো।”

‘থামার জন্য আমি এই পথে যাই নি । একবার যখন এই পথে ঢুকে পরেছি তবে এর শেষ দেখেই ছাড়বো।”

‘সেটা দেখার জন্য তুমি শেষ পর্যন্ত থাকবে তো!”

‘না থাকার কারন দেখছি না।”

‘কারন টা না হয় আমিই দেব। যাই হোক নিজের খেয়াল রেখো এটা এখন খুব দরকার তোমার।”

এটুকু শোনার পরেই ফোনটা কেটে গেল। মেহবিন ফোনটা ট্রেস করার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুই পেলো না। ও বুঝতে পারলো একটা প্রাইভেট নাম্বার থেকে নন ট্র্যাকার ফোন থেকে কলটা করা হয়েছিল। ও ল্যাপটপ টা নিয়ে এ.এস হাসপাতালের সব খবর নিল। মুখর কিছু ফুটেজ দিয়েছিল সেগুলো ভালোভাবে চেক করলো। তেমন কিছু পেলো না ও খুব তাড়াতাড়ি নিজেই সব বের করবে ঐ হাসপাতালের সিসি ক্যামেরা হ্যাক করে নেবে কিন্তু এই জন্য ওকে ঐ হাসপাতালের কাছাকাছি যেতে হবে। তাছাড়া ওর কাছের ল্যাপটপ দ্বারা সব হবে না। অন্যকাউকে করাতে হবে মানে কোন হ্যাকারকে দিয়ে কাজটা করাতে হবে। মেহবিন ভাবলো এখন সময় নেই অন্য কাউকে দিয়েই করতে হবে ও একজন কে ফোন করে সব বলল আর এটাও বলল তার সকালেই সবকিছু চাই। সে জানালো সকালেই পেয়ে যাবে।

_________________

“ডাক্তার তুমি কিন্তু বদলাই গেছো?”

তাজেলের কথায় মেহবিন তাজেলের পড়া দেখা বাদ দিয়ে ওর দিকে তাকালো। আর বলল,,

‘আমি কোথায় বদলালাম নেত্রী?”

“বদলাও নাই কইতেছো কতোদিন হইয়া গেছে আমরা একসাথে বিকেলে হাঁটতে যাই না।”

“এখানে বদলালাম কোথায়?”

“তোমার এহন আগের মতো সময় নাই আমার সাথে ঘুরার। সময় পাইলেই চেয়ারম্যান বাড়িতে দৌড় মারো। ছুটির দিন ও তুমি ঐ বাড়িতে যাও।”

“আমি তো তোমাকেও সময় দিই।”

“এই দুই দিন দেও নাই পুরশুদিন তুমি ঢাকায় গেছিলা আর কালক্যা চেয়ারম্যান বাড়িতে আইয়া হেই যে বাড়ি ঢুকলা আর বাইর হও নাই।”

“আমার কিছু কাজ ছিল তাই বের হই নি।”

“তাইলে এহন কও তুমি বদলাও নাই।”

মেহবিন বুঝতে পারলো তার নেত্রী দুদিন সময় দেওয়া হয় নি বলে অভিমান করছে। তাই সে হেঁসে বলল,,

“নেত্রী আমার সাথে ঘুরতে যাবা আজ বিকেলে?”

মুহুর্তেই তাজেলের মুখে হাসি দেখা গেল। কিন্তু মেহবিন কে দেখাতে চাইলো না কিন্তু মেহবিন সেটা ঠিকই দেখলো। তাজেল নিজের হাসিটাকে চেপে রেখে বলল,,

‘আমার তো ঘুরতে ভাললাগে তুমি যদি নিয়া যাইতে চাও তাইলে যামু। আমি তো আর তোমার মতো বদলাই নাই আমি আমিই।”

মেহবিন তাজেলের হাত ধরে নিজের কাছে এনে নিজের কোলে বসিয়ে বলল,,

‘হুম নেত্রী তুমি তুমিই। তোমার মতো আর কেউ নেই তাই তো তোমায় আমি এত্ত এত্ত ভালোবাসি।”

তাজেল একটা বড় হাঁসি দিয়ে বলল,,

‘সত্যিই তুমি আমারে ভালোবাসো ডাক্তার?”

“হুম হুম সত্যি আমি আমার নেত্রীকে অনেক ভালোবাসি।”

তাজেল মেহবিনের কোল থেকে উঠে দাঁড়ালো আর হেঁসে বলল,,

‘আমিও তোমারে ভালোবাসি ডাক্তার।তুমি আমারে ভালোবাসো শুইনা আমি মেলা খুশি হইছি এই খুশিতে আজক্যা আমার ছুটি। ।

বলেই তাজেল নিজের ব্যাগ নিয়ে দৌড় দিল আর গেটের কাছে গিয়ে বলল,,

‘ডাক্তার বিকালে আমি রেডি থাকুম তুমি আসলেই যামু ঘুরতে মনে রাইখো।”

তাজেলের এরকম আচরনে মেহবিন হাসলো। এতক্ষন এসব করলো শুধু মেহবিনের সাথে ঘুরতে যাবে বলে। আজকাল সে বেশিক্ষন পরতে চায় না তবে প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন দেয় এই জন্য মেহবিন কিছু বলে না। ও খুশি মনে খাবার খেতে বসলো খাওয়া শেষ করে উঠতেই তখন মুখরের ফোন এলো। ফোনটা দেখেই ও মুচকি হাসি ফুটিয়ে ফোনটা ধরলো ও সালাম দেবে তার আগে ওপাশ থেকেই আগে সালাম শুনতে পেল,,

“আসসালামু আলাইকুম বিয়াইনসাব!'”

মুখরের বিয়াইন সাব শুনে মেহবিন হাসলো আর বলল,,

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। তবে আমি জানতাম মেয়েদেরকে সাহেবা বলে সাব নয়।”

“আমার মুখ আমি সাব বলবো বা সাহেবা তোমার তাতে কি?’

“আমার কিছু না। তবে ভুল হলে স্বীকার করা উচিৎ।”

“তোমাকে কে বললো আমি ভুল করেছি বরং আমি ইচ্ছে করে ভুল করেছি যাতে তুমি ঠিক করে দাও। তাছাড়া এটাকে ভুল বলে না গ্ৰামের মানুষজন বিয়াইসাব বিয়াইনসাব এইগুলাই বলে তুমিও তো গ্ৰামে থাকো তাই বিয়াইনসাব বললাম।

“নিজের ভুলগুলো সহজভাবে স্বীকার করতে শিখুন। তাহলে জীবনে বেশ উন্নতি করতে পারবেন।”

মেহবিনের কথায় মুখর হাসলো আর বলল,,

“সেটা আমি জানি তবে আমার মিসেস আমি সাবটা এমনিই বলেছি।”

“তা এখন আমার সাথে কে কথা বলছে আগে শুনি?”

“মানে?”

“মানে হলো এই যতদূর মনে হচ্ছে কলটা আমার বিয়াইসাহেব করেছিল । অতঃপর কথার প্রেক্ষিতে এখন মিসেস বলল মানে এখন আমার সাথে কথা বলছে কে আমার বিয়াই নাকি আমার মিস্টার।”

“দুজনেই কথা বলছিল তবে আপাতত এখন ইন্সপেক্টর মুখর শাহরিয়ার আপনার সাথে কথা বলবে।”

“ওহ আচ্ছা তা ইন্সপেক্টর মুখর শাহরিয়ার কি বলবেন বলে ফেলুন।”

“হুম সেটা হলো আমরা এ.এস হাসপাতালের বিরুদ্ধে একটা যথার্থ প্রমান পেয়ে গেছি। যার মাধ্যমে আমরা একটা একশন নিতে পারি তবে এই হাসপাতাল টা আমার আওতাভুক্ত নয়। তাই আমি নিজে কিছু করতে পারছি না। তবে হ্যা ঐ হাসপাতালে যে জেলার আওতামুক্ত সেখানের ডিসি কে জানিয়েছি ব্যাপারটা । তিনি বলেছেন তিনি আজকেই খুব তাড়াতাড়ি হাসপাতালটা সিল করবেন।”

‘হাসপাতাল সিল করবেন মানে ঐ হাসপাতালের ওনারই কি এর সাথে যুক্ত?”

“জি ম্যাডাম! ওনার একটা ভিডিওর মাধ্যমেই তো পুরো বিষয়টি বুঝতে পেরেছি। সবথেকে বড় কথা এর ক্রেডিট আপনার যায় আপনার হ্যাকার বন্ধুই ভিডিওটি আমায় পাঠিয়েছে।”

“আমি তো বলিনি আপনাকে পাঠাতে তাহলে পাঠালো কেন?”

‘কারন আমিও তোমার মতো তাকে কাজটা করতে দিয়েছিলাম তাই।”

‘ওহ আচ্ছা এমনিতেও আমি সকালে ওগুলো দেখেছি আপনাকে আরেকটু পরে পাঠাতাম।”

“ওহ আচ্ছা । আজ বিকেলে ঘুরতে যাবে?”

“কেন?”

“হাতে হাত রেখে তার, একটু চলতে চাই আবার!”

“বাহ বাহ!”

“যাবে কি না বলো?”

“না বিকেলে নেত্রীর সাথে ঘুরতে যেতে হবে।’

“তোমার নেত্রীকে আমি মানিয়ে নেব।”

“না থাক। আর তাছাড়া অনেকদিন পর আবার জয়েন হলেন তাই এখন আর বাঙ্ক করতে হবে না।”

‘আমি হলাম ইনচার্জ আমার ইচ্ছে আমি বাঙ্ক করবো তোমার তাতে কি?”

“আপনি ইনচার্জ দেখেই তো আপনার দায়িত্ব বেশি। নিজের দায়িত্ব থেকে কখনো পালাতে হয় না।”

“আরে আমার মিসেস এখন তেমন কাজ নেই। তাই যেতে চাচ্ছি।”

“দরকার নেই।”

“এমন করো কেন? আমি ম্যানেজ করে নিয়েছি আমাদের ডিসির সাথে কথাও বলেছি। আমি এখনো একটু অসুস্থ শুনে উনি দুপুরের পর থেকেই আমার ছুটি মঞ্জুর করেছেন তাছাড়া উনি আমার ওপর বেশ খুশি নিশাচর এর একটা একটা করে উইকেট পরছে তাই।”

“ওকে আপনার ইচ্ছা তবে আমি কিন্তু আমার নেত্রীর সাথেই ঘুরতে যাবো।”

“ওকে আমিও তোমার নেত্রীকে ম্যানেজ করে নেব।”

“যদি সে চায় তাহলেই আপনাকে আমাদের সাথে নেব।”

‘ওকে সমস্যা নেই তোমার নেত্রীকে আমি পটিয়ে নেব দেখে নিও।”

“ওকে আল্লাহ হাফেজ আমায় হাসপাতালে যেতে হবে।”

“ওকে আল্লাহ হাফেজ ফি আমানিল্লাহ।”

“ইনশাআল্লাহ!”

বলেই মেহবিন ফোন রেখে দিল। তারপর রেডি হয়ে হাসপাতালে গেল। দুপুর বেলা ব্রেকিং নিউজ এ এ.এস হাসপাতালের ঘটনা দেখে মেহবিন হাসলো। ও যে কাজটা তাড়াতাড়ি করতে পেরেছে এটা ভেবে খুশি হলো। এখন নিশাচর এর সাথে কথা বলতে পারলে ভালো লাগতো কাল যেগুলো বলেছিল সেগুলোর জবাব হিসেবে আজকের কাজটা নিজে তাকে দিলে ভালো লাগতো। ভাবতে ভাবতেই ওর ফোনে একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন এলো। ও কানে নিতেই শুনতে পেল,,,

“এই কাজের পেছনে তোমার হাত আছে তাই না?’

নিশাচরের আওয়াজ পেয়ে কেন যেন মেহবিনের মুখে হাসি ফুটে উঠল। ও বলল,,

“আমি হলাম মামুলি একজন ডাক্তার। আমি কিভাবে করতে পারি বলুন?”

“একদম আমার সাথে চালাকি করবে না। আমি জানি এর পেছনে কোন না কোন ভাবে তুমি আছো। কারন এর আগে এই বিষয়টা নিয়ে কোন সাধারণ মানুষ মাথা ঘামায় নি তুমিই ঘামিয়েছো।”

“আচ্ছা আপনার কেন মনে হয় আমিই আছি। আমি তো সাধারণ একজন মানুষ আমি কিভাবে এক রাতের ভেতরেই সব বের করতে পারবো।”

“না না তুমি সাধারণ নও তুমি আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো নও।”

‘তাহলে সত্যিই আপনার মনে হয় আমি আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো নই।”

“না নও তুমি। আর নও দেখেই তোমার মৃত্যু খুব নিকটে দেখে নিও।”

“মৃত্যু তো একটা মানুষের সবসময় নিকটেই থাকে। হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,,
‘ডান চোখ হতে বাম চোখের যতটা দূরত্ব,মৃত্যু তার চেয়ে নিকটে।’
যাই হোক এসব কথা এখন থাক।

“তোমার কি আমায় দেখে একটুও ভয় হয় না।”

“আমি আপনাকে দেখলাম কখন আজব! যে ভয় পাবো?

“দেখেছো দেখেছো তবে চিনতে পারোনি।”

“তারমানে বলছেন আমি আপনাকে দেখেছি।”তাছাড়া একটা কথা আমি ভেবেছিলাম এ.এস হাসপাতালের ওনারই বোধহয় নিশাচর কিন্ত এখন বুঝতে পারলাম আপনি সে নন।

“হুম দেখেছো তুমি আমায়। আর আমি এমন একজন যার নামতো সবাই শুনেছে কিন্তু মানুষ দেখেও দেখেনি। কারন আমি নিশাচর আর নিশাচর মানে অন্ধকার । অন্ধকারে কি কিছু দেখা যায়। তবে তুমি আমায় দেখে থাকলেও এরপর চাইলেও আর দেখতে পাবে না।”

বলেই ওপরপাশ থেকে কলটা কেটে দিল। মেহবিন তা দেখে গভীরভাবে কিছু ভাবতে লাগলো। তার কথা শুনে যে মেহবিন ভয় পেয়েছে এমনটা নয়। বরং সে অবাক হয়েছে যে নিশাচর কে সে দেখেছে। এই পর্যন্ত কতো মানুষকেই সে দেখেছে যাদের চেনে তাদের মধ্যে কন্ঠস্বর মিল নেই কারো। ও বেশি কিছু না ভেবে নিজের কাজে মন দিল।

_________________

তাজেল ভালো একটা জামা পরে পাকা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। তখন ওর সামনে একটা রিক্সা থামলো।আর রিক্সায় থেকে জিন্স প্যান্ট গায়ে সাদা গেঞ্জি ওপরে লেদারের জ্যাকেট আর মুখে মাস্ক পরিহিত লোক নামলো আর টাকা দিল টাকা পেতেই রিক্সাওয়ালা চলে গেল। লোকটা তাজেলের পাশে দাঁড়ালো। তাজেল তার দিকে একবার তাকিয়ে দেখলো তবে কিছু বললো না। তার দৃষ্টি রাস্তায় সে অপেক্ষা করছে তার ডাক্তারের জন্য। তাজেলের দেখাদেখি লোকটাও তাজেলের মতো রাস্তায় উঁকি মারছে। তাজেল তা টের পেয়ে বলল,,

“এই যে তুমি কি ছেলেধরা? তুমি কি আমারে ধইরা নিতে আইছো? পারবা না এইহানে একটা চিৎকার দিমু আর গ্ৰামের হগলে আইসা পরবো। পাশেই কুলসুম খেলতেছে ও তো আমারে চেনেই আমার চিৎকারেই হেয় বুঝবো আমি বিপদে পরছি।”

তাজেলের কথা শুনে লোকটা বড় বড় করে ওর দিকে তাকালো। আর বলল,,

‘তোমার কেন মনে হলো আমি ছেলেধরা? আর আমি যদি ছেলেধরা হই তাহলে তোমাকে কেন ধরবো। তুমি কি ছেলে নাকি?”

তাজেল এবার লোকটার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,,

“ঐ আমি ছেলে হমু কোন দুঃখে?”

‘তুমিই তো বললে আমি ছেলেধরা আর ছেলেধরা হলে তো শুধু ছেলেদেরকেই ধরবে তাই না।”

‘ছেলেমেয়ে কোন ভেদাভেদ নাই সবাইরেই ধরে কিন্তু ওগো তো ছেলেধরা কয় তাই কইলাম।”

‘ওহ আচ্ছা। কিন্তু তোমার কেন মনে হলো আমি ছেলেধরা?”

“মুখটুখ ঢাইকা আইছো আবার আমার পাশে দাঁড়াইড়া দাড়াইয়া আমারে নকল করতেছো। মনে হইতেছে আশেপাশে তাকাইয়া দেখতেছো লোক আছে নাকি‌। সুযোগ পাইলেই উঠাই নিয়া যাইবা।

‘আরে না না আমি তো তোমার মতো কারো জন্য অপেক্ষা করছিলাম।”

“এই এই খাড়াও তোমার কন্ঠ চেনা চেনা লাগতাছে । কিডা তুমি আর কার জন্য অপেক্ষা করতেছো?’

তখন লোকটা নিচু হয়ে মাস্কটা একটু সরিয়ে বলল,,

“তোমার ডাক্তারের জন্য নেত্রী!”

তাজেল হা করে তার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা তুমি!”

তাজেলের কথায় মুখর হাসলো আর বলল,,

“হুম নেত্রী আমি।”

“আগে কইলেই হইতো যে তুমি। হুদাই এতোকথা খরচ করলাম।”

“আমি কি জানতাম তুমি আমায় চিনতে পারবে না। উল্টো ছেলেধরা ভেবে বসবে।”

‘তুমি তো মুখ ঢাইকা আইছো তাই চিনি নাই।”

“তোমার ডাক্তারও তো সেদিন মুখ ঢেকে আমার সাথে কথা বলছিল। তখন তো তুমি তাকে চিনে ছিলে।”

‘তুমি আর ডাক্তার এক নাকি। ডাক্তাররে আমি ভালোমতো চিনি আর রোজ দেহি। তোমারে কি দেহি?”

‘সেটাও ঠিক বলেছো। এই যে আমার দিকে তাকাও আর ভালো করে চিনে রাখো। এরপর থেকে এভাবে দেখলে ফট করেই চিনে ফেলবে।”

‘ধুরু তোমার পাইলে তাকাইয়া থাকতে আমার শরম করে।”

“আরে লজ্জার কি আছে আমি তো তোমার ডাক্তারের জামাই।”

‘হেই জন্যই তো বেশি শরম করে আমার।”

তাজেলের এমন কথায় মুখর হাসলো। আর বলল,,

‘ওহ আচ্ছা তাহলে আর তাকাতে হবে না।”

‘তুমি এইহানে কি কর পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা?”

‘তোমার ডাক্তারের সাথে ঘুরতে যাবো আজ।”

মুখরের এমন কথা শুনে তাজেল কোমরে হাত রেখে গম্ভীর গলায় বলল,,

‘ডাক্তার আমার সাথে ঘুরতে যাইবো তোমার সাথে না।”

‘আরে আমিও তো তোমাদের সাথে ঘুরতে যাবো।”

‘তোমারে নিমু না।”

‘কেন নেবে না? আমি কি তোমার ঘাড়ে চড়ে যাবো নাকি।”

“তোমার মতো মানুষ আমার ঘাড়ে চরলে আমি থাকমু নাকি। আমার ঘাড় ভাইঙ্গা যাইবো না।”

‘আরে আমি তো হেঁটে হেঁটেই যাবো তোমাদের সাথে।”

‘না তোমারে নিমু না আমি।”

“কেন নিবে না।”

“আমি আর ডাক্তার খালি ঘুরুম আজক্যা।”

‘ওমন করো কেন নাও না একটু তোমাদের সাথে। তোমাকে চকলেট আইসক্রিম কিনে দেব।”

“ঐডা তো ডাক্তার আমারে মাঝে মাঝেই খাওয়ায়।”

‘আচ্ছা তোমার যা মন চায় তাই কিনে দিমু।”

“ঘুষ দিতেছো তুমি আমারে।”

“তুমি ঘুষ ও চেনো?”

“আরো মেলা কিছু জানি।”

“আচ্ছা আমাকে একটু নাও না তোমাদের সাথে।”

তাজেল মুখরের দিকে তাকালো মুখর ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। ও ওভাবে তাকানো দেখে তাজেল হাসলো আর বলল,,

“তোমারে নিমু আমি এমনিই এতোক্ষণ মজা করছিলাম আমি।”

“তুমি তো দেখি খুব পাকা।”

তাজেল দাঁত কেলালো আর বলল,,

“ডাক্তারের জামাই তুমি তোমারে না নিলে ডাক্তার মন খারাপ করবো না।”

‘কিন্তু তোমার ডাক্তার কি বলেছে জানো? তোমার ডাক্তার বলেছে তুমি যদি বলো তাহলেই আমি সাথে যেতে পারবো। আমাকে সাথে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ তোমায় নেত্রী।”

“হ হ আর ধন্যবাদ জানান লাগবো না। কিন্তু ডাক্তার আসে না ক্যা কতোক্ষণ হইয়া গেল এই সময়ই তো আসে।”

“চলো দুজনে এগিয়ে দেখি।”

“আইচ্ছা চলো!”

তাজেল আগে গেল আর মুখর তাজেলের পেছন পেছন যেতে লাগলো। একটু আগাতেই মেহবিন কে দূরে দেখা গেল রিক্সায় আসছে। ওরা দুজন ওকে দেখে দাঁড়িয়ে পরলো। তখনি একটা গাড়ি পেছন থেকে মেহবিনের রিক্সাটাকে ধাক্কা মারলো। মেহবিন রিক্সা থেকে পরে গেল তখনি পেছনের গাড়ি থেকে কয়েকটা লোক বেরিয়ে মেহবিনের দিকে এগিয়ে গেলো।

~চলবে,,

বিঃদ্রঃ কালকেই বলেছিলাম গল্প দেরিতে মানে রাতে আসবে। তাই এটা নিয়ে কেউ আমাকে কিছু বলতে পারবেন না। আর আজকের পর্ব কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু। ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here