#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৩৮|
#শার্লিন_হাসান
(বিয়ে স্পেশাল ২💞)
দেখতে,দেখতে আর্থর হলুদের দিন চলেই আসে। খুবই ঝাঁক ঝমক ভাবেই হলুদের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। দিনটি মঙ্গলবার। আজকে আর্থর বিয়ে। শশী অফিশিয়াল ভাবে তার ওয়াইফ হবে। চৌধুরী বাড়ীতে ভীষণ ব্যস্ততা। সেরিন ও নিজের জামাকাপড় দেখছে কী পরবো বিয়েতে। শুভ্র তার জন্য শাড়ী আনেনি এই নিয়ে একটা অভিমান জমেছে সেরিনের। ভাইয়ের বিয়ের ব্যস্ততার ভীড়ে ভুলেই গিয়েছে সে। যদিও এরপর অনেকবার কুমিল্লায় আসা যাওয়া হয়েছে। মনে করে আর কিছুই চুজ করে আনেনি সেরিনের জন্য।
অধরা,আদ্রিতা তারা এগারেটা বাজে সাজতে বসেছে। সেরিন তখনো সাজতে যায়নি। সে নিচে সবার সাথে কথা বলছে। তখন মিরা ইসলাম সেরিনকে তাড়া দেখিয়ে বলেন,
“আদ্রিতা অধরার সাথেই সাজতে বসে যেতে। আবার যদি লেট হয়ে যায়?”
“মেঝো আম্মু আমার ওতো লেট হয়না।”
সেরিনের কথায় শুভ্র তার দিকে তাকায়। মুখ বাকিয়ে বলে,
“আসলেই লেট হয়না। যাওয়ার সময় আধ সাজে দৌড় মারে উনি। তখন গাড়ীতে বসে আফসোস করে। আম্মু ঠিকই বলেছে যাও তোমাদের তো আবার সময় লাগে বেশী।”
শুভ্রর কথায় আয়মান চৌধুরী সুর মিলিয়ে সুলতানা খানমকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
“তুমিও তো সেরিনের দলের লোক। লেট হয়না,হয়না বলে চারঘন্টা লেট করাও। তারপর দেখা যায় আধ সাজে গাড়ীতে দৌড়।”
সেরিন,সুলতানা খানম তাঁদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। সেরিনের শুভ্রর দিকে চোখ পড়তে শুভ্র যাওয়ার জন্য ইশারা করে। কিন্তু সেরিন তো অভিমান করে আছে। শুভ্রকে বুঝাতে অক্ষম সে। তাই চুপচাপ উপরে চলে যায়।
জান্নাতুল ফেরদৌস আবার অনেক আগেই সাজতে বসে গেছেন। উনি একটু সাজ গোছের পাগল। শুভ্রর মা তেহজিব ও সাজতো তবে সাধারণের মাঝে। এই সাধারণ সাজেই তাকে অসম্ভব সুন্দর লাগতো। যার সৌন্দর্যতা আজো ভুলতে পারেনি আরফিন চৌধুরী শুভ। ওতো প্রসাধনী ব্যবহার না করলেও নব্বই দশকের নায়িকা হিসাবে তাকে অসম্ভব সুন্দর লাগতো। জান্নাতুল ফেরদৌস কৃত্রিম প্রসাধনী ব্যবহার করলেও তেহজিব তটিনীর আশেপাশে ও এখন অব্দি যাননি।
শাওয়ার নিয়ে হেয়ার ড্রয়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে নিয়েছে সেরিন। তখন আবার শুভ্রর আগমন ঘটে। সে শাওয়ারের জন্য ওয়াশরুমে ঢুকে। সেরিন লেহেঙ্গাটা বের করে একনজর দেখে। অফ হোয়াইট কালারের ভেতর হাল্কা পিংক কালার লেহেঙ্গা। সাথে মেচিং গোলাপ ফুল যেগুলো শুভ্র এনে দিয়েছিলো। সেরিন লেহেঙ্গাটা পরিধান করে সাজতে বসে। প্রথমে চুলগুলো বেঁধে নেয়। কোমড় অব্দি গড়ানো চুলগুলো ছেড়ে তাতে গোলাপ গুঁজে দিয়েছে। সিথিতে মেচিং করা একটা টিকলি। ইয়ারে সেম টিকলির ইয়ার রিং। তেমন একটা সাজেনি সে। আজকে একটু তাড়াতাড়ি রেডি হওয়া কমপ্লিট হয়ে গেছে সেরিনের। শুভ্র আজকে অফ হোয়াইটের মাঝে হাল্কা পিংক কালারের পাঞ্জাবি পরিধান করেছে। শুভ্রকে শুভ্র লাগছে বেশ। মনে হয় শুভ্র ফুলের মাঝে হাল্কা পিংক কালার।
সেরিন জোর করে শুভ্রকে দাঁড় করিয়ে মিররে পিক তুলে নেয়। শুভ্রকে বলে দিয়েছে আগে নিচে গিয়ে পিক তুলবে তারপর যা করার করবে।
আর্থ আজকে বর সেজেছে তার প্রিয়তমার জন্য। আজকের দিনটা তার জন্য অনেক আনন্দের। চৌধুরী বাড়ীর প্রিন্সেস রাও অফ হোয়াইট কালারের লেহেঙ্গা পড়েছে। শুধু বউরা শাড়ী পড়েছে। শুভ্র,সেরিন থেকে শুরু করে প্রত্যেক কাপল পিক তুলেছে। তাঁদের বাড়ীর রাস্তাতেই তাঁদের অর্ধেক ফটোশুট করা শেষ হয়ে গেছে।
দেড়টার দিকে পাটওয়ারী বাড়ীতে আসে তারা সবাই। চৌধুরী পরিবারের সবাইকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। মেহের সেরিনকে টেনে ভেতরে নিয়ে আসে। মেয়ে পক্ষ বানিয়ে দেয়। সেই সাথে গেটে টাকা নিয়ে কিছুক্ষণ কথা হয়। মূলত মজার ছলেই। জানে আর্থ ফিক্সড করা এমাউন্টই দিবে। তাঁদের মজা-খুনশুটির পর আর্থকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে স্টেজে নেওয়া হয়। সেরিন ভেতরে গিয়ে প্রথমে শশীর সাথে দেখা করে। মেয়েটাকে অফ হোয়াইট কালারের গাউনে সাজানো হচ্ছে। খাওয়া দাওয়া, ফটোশুট কিছুটা শেষ হতে আর্থকে ভেতরে নেওয়া হয়। একটা নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করা হয় বিয়ে পড়ানোর জন্য। ফ্লোরের উপর বিছানা করে তাতে ফুল দিয়ে পর্দা করা। তার দুই পাশে দু’জনকে বসানো হয়। শশী কান্না করছে দেখে কিরণ পাটওয়ারী টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বলে,
“আমার কলিজা কান্না করতে হবে না। এই তো আমরা আমরাই।”
তখন আর্থ ভরা মজলিসে মুখ ফসকে বলে,
“ওটা আপনার কলিজা না। আমার কলিজা।”
আর্থর কথায় বাকীরা হাসলেও শশী বেশ লজ্জা পায়।
কাজী এবং হুজুর সহ বিয়ে পড়ানো শেষ করে। বর-বউকে একসাথে স্টেজে নেওয়া হয়। তারা আয়না দেয় দু’জনের হাতে। তখন সেরিন আর্থকে বলে,
“ভাইয়া কী দেখো আয়নায়?”
তখন আর্থ শুধায়, ” উপরওয়ালা আকাশের সত্যিকারের শশীটা আমায় দিয়ে দিলো? এক টুকরো চাঁদ।”
তখন সাফা বলে,
“বনু তুমি কী দেখো?”
“সবচেয়ে ভালো মনের মানুষটা।”
এই তো তাঁদের খুনশুটি দুই পরিবারে আরেকটু সুন্দর সময় কাটানো। আর্শিয়া, অক্ষর এসেছে বিয়েতে। আর্শিয়া শুভ্রকে একদমই আশা করেনি। তারউপর শুনেছে অক্ষর ও নাকী সেরিনকে পছন্দ করতো। যদিও আফসোস নেই এসবে। তবে ব্যপার কেমন জেনো! আর্শি শুভ্রকে পছন্দ করলেও শুভ্র বিয়েটা সেরিনকে করেছে। আবার অক্ষর সেরিনকে পছন্দ করলেও বিয়েটা করেছে আর্শিকে। শুভ্র ও আর্শির সাথে হাসিমুখে কথাবার্তা বলে।
সন্ধ্যার দিকে রওনা হয় তারা। প্লান করেছে ফ্রেশ হয়ে তারা কুমিল্লায় যাবে রাতের শহরে। মেঘনা ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে ঠান্ডা হাওয়া উপভোগ করবে। চৌধুরী বাড়ীতে আসে, সাফা,রাফা, মেহের। মাহী ব্যস্ত কুমিল্লায় যাওয়ার কিছুক্ষণ আগেই সে আসবে।
ফ্রেশ হয়ে সবাই চা-কফি খেয়ে নেয়। শশী চেন্জ করে থ্রি-পিস পড়ে নেয়। লিভিং রুমে সবাই বসে কথা বলছে। আদ্রিতা,অধরা,সেরিন,সাফা,রাফা,মেহের তারা আর্থর রুম সাজায়। রাতের ডিনার করেই তারা বের হবে। আর্থ,শশী ছাড়া।
ডিনার করতে,করতে সারেএ গারোটা পেড়িয়ে যায়। বাকীরা তাড়াতাড়ি ডিনার করে আর্থর রুমের দরজা দখল করে নেয়। শশীকে আগেই নিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়। আর্থ আসতে তার শালিকা মহল এবল বোনদের দাবি শুনে। বেশী কথা বাড়ায়নি টাকাগুলো সেরিনের হাতে দিয়ে দেয়। তখন শুভ্র বলে,
“এতে তাড়া কিসের ভাই?”
“অনেক কিছুর।”
ওদের কথা শুনে বাকীরা হাসে। আর্থ ভেতরে প্রবেশ করে দরজাটা লক করে ভেতরে যায়। শশী বসে আছে এক কোণে। আর্থর টায়ার্ড লাগছে বিধায় ধপাস করে খাটের উপর শুয়ে পড়তে সেটা ভে’ঙে যায়। বাকজটায় আর্থ শশী কেউই প্রস্তত ছিলো না। শশী দেরী না করে আর্থর কানে ধরে একটা টান দিয়ে বলে,
“এই তোমায় কে বলেছে এভাবে ধপাস করে শুয়ে পড়তে? আর কী খাট রাখো?”
“আরে খাট তো ভেঙেছি কিন্তু কাজের কাজ তো কিছুই করতে পারলাম না।”
“কী বললে তুমি?”
“ওই আর কী বলেছি।”
আমতা আমতা করে বলে আর্থ। শশী রাগ দেখিয়ে বলে,
“এখন মুখ দেখাবো কীভাবে? ছিঃ! বড়রা কী ভাববে?”
“এহহ্! এতো লজ্জা পাওয়ার কী আছে? আমরা তো জানি আমরা এখনো কিছু করিনি বাকীরা বুঝলে বুঝুক আমরা বাসর করেছি। আর ওতো লজ্জা পাওয়ার কী আছ? বাসর না করলে বুঝি আমরা দুনিয়ায় আসতাম?”
“এই তোমার মুখে কিছু আটকায় না।”
“এই তুমি বেশী লজ্জা পাচ্ছো তাই আরকী।”
“মুখটা বন্ধ রাখবে তুমি?”
“আরে এটা শুভ্র ভাইয়ার বদ দোয়া। ওকে জ্বালানো এবং পচানোর কারণে বলেছিলো আমি নাকী খাট ভাঙবো। খাট ঠিকই ভাঙলো অথচ কোন কিছুই করলাম না।”
“আবারে একই কথা বলছো?”
“তো কী করবো? এখন তুমি বলো? ”
“খাট এটা সরাও। আমার ঘুম পাচ্ছে।”
“খাট এক পাশ নাহয় ভেঙেছে আরেকপাশ তো ঠিক আছে। তুমি আমার উপর ঘুমাবে।”
“যদি ঘুমের মধ্যে কোলবালিশ ভেবে লা’থি মেরে পেলে দিই?”
“সমস্যা নেই তবে দেখেশুনে লা” থি মেরো। আমার এখনো বাসর করা হয়নি। বাবা ডাক শোনা কিন্তু বাকী আছে।”
” ঠোঁট কাটা বেডা একটা।”
“আসে আদর করি!”
আর্থ শশীকে ডায়মন্ড গিফ্ট করে। যদিও বা তারা টায়ার্ড। তাই আর্থ শশীর ঠোঁটে দু’টো চুমু খেয়ে শুয়ে পড়ে তাকে বুকে জড়িয়ে।
**********
বারেটার দিকে রওনা হয় সবাই মেঘনা ব্রিজের কাছে যাওয়ার জন্য। মাহী ও আসে তাঁদের সাথে। শহরের রাস্তায় গাড়ীর যনযাট একটুও কমেনি। ব্রিজের উপর একের পর এক গাড়ী আসছে যাচ্ছে। গাড়ী দু’টো নির্দিষ্ট জায়গায় পার্কিং করে তারা ব্রিজের উপর যায়। একেকজন একেক প্রান্তে। সেরিন শুভ্র একসাথে দাঁড়িয়ে আছে। সেরিন একটু চুপচাপ। শুভ্র আজকে খেয়াল করেছে। তেমন আনন্দ করতে পারেনি মেয়েটা। যদিও বা শুভ্র কিছুই বলেনি।
ঘণ্টা খানিকের মতো সময় কাটিয়ে আবারো দাউদকান্দির উদ্দশ্যে রওনা হয় সবাই। বাড়ীতে আসতে,আসতে ঘড়ির কাটা দুইটা পেড়িয়ে গেছে। শুভ্র,সেরিন কোন রকম ফ্রেশ হয়। আজকে টায়ার্ড থাকলেও শুভ্র সেরিনকে জিজ্ঞেস করে,
“আজকে তোমার মন খারাপ কেনো?”
সেরিন কিছু না বলে শুভ্রর বুকে হামাগুড়ি দিয়ে পড়ে। পা উঁচু করে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
“আই নিড ইউ!”
“আর ইউ ম্যাড? আমি প্রচুর টায়ার্ড।”
“আই নিড ইউ।”
কথাটা বলে সেরিন শুভ্রর অধর জোড়া দখল করে নেয়। পুনরায় শুধায়,
“আই নিড ইউ। তোমার ছোঁয়া পুনরায় সর্বাঙ্গে মাখার আমার ভীষণ ইচ্ছে হলো।”
শুভ্র আর কথা বাড়ায়নি। তার প্রিয় মানুষ তাকে চাচ্ছে, ভীষণ করে চাচ্ছে আর না করেনি। দু’জনেই ভালোবাসার সাগরে তলিয়ে গেলো।
#চলবে
#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৩৮|
#শার্লিন_হাসান
(বিয়ে স্পেশাল ২💞)
দেখতে,দেখতে আর্থর হলুদের দিন চলেই আসে। খুবই ঝাঁক ঝমক ভাবেই হলুদের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। দিনটি মঙ্গলবার। আজকে আর্থর বিয়ে। শশী অফিশিয়াল ভাবে তার ওয়াইফ হবে। চৌধুরী বাড়ীতে ভীষণ ব্যস্ততা। সেরিন ও নিজের জামাকাপড় দেখছে কী পরবো বিয়েতে। শুভ্র তার জন্য শাড়ী আনেনি এই নিয়ে একটা অভিমান জমেছে সেরিনের। ভাইয়ের বিয়ের ব্যস্ততার ভীড়ে ভুলেই গিয়েছে সে। যদিও এরপর অনেকবার কুমিল্লায় আসা যাওয়া হয়েছে। মনে করে আর কিছুই চুজ করে আনেনি সেরিনের জন্য।
অধরা,আদ্রিতা তারা এগারেটা বাজে সাজতে বসেছে। সেরিন তখনো সাজতে যায়নি। সে নিচে সবার সাথে কথা বলছে। তখন মিরা ইসলাম সেরিনকে তাড়া দেখিয়ে বলেন,
“আদ্রিতা অধরার সাথেই সাজতে বসে যেতে। আবার যদি লেট হয়ে যায়?”
“মেঝো আম্মু আমার ওতো লেট হয়না।”
সেরিনের কথায় শুভ্র তার দিকে তাকায়। মুখ বাকিয়ে বলে,
“আসলেই লেট হয়না। যাওয়ার সময় আধ সাজে দৌড় মারে উনি। তখন গাড়ীতে বসে আফসোস করে। আম্মু ঠিকই বলেছে যাও তোমাদের তো আবার সময় লাগে বেশী।”
শুভ্রর কথায় আয়মান চৌধুরী সুর মিলিয়ে সুলতানা খানমকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
“তুমিও তো সেরিনের দলের লোক। লেট হয়না,হয়না বলে চারঘন্টা লেট করাও। তারপর দেখা যায় আধ সাজে গাড়ীতে দৌড়।”
সেরিন,সুলতানা খানম তাঁদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। সেরিনের শুভ্রর দিকে চোখ পড়তে শুভ্র যাওয়ার জন্য ইশারা করে। কিন্তু সেরিন তো অভিমান করে আছে। শুভ্রকে বুঝাতে অক্ষম সে। তাই চুপচাপ উপরে চলে যায়।
জান্নাতুল ফেরদৌস আবার অনেক আগেই সাজতে বসে গেছেন। উনি একটু সাজ গোছের পাগল। শুভ্রর মা তেহজিব ও সাজতো তবে সাধারণের মাঝে। এই সাধারণ সাজেই তাকে অসম্ভব সুন্দর লাগতো। যার সৌন্দর্যতা আজো ভুলতে পারেনি আরফিন চৌধুরী শুভ। ওতো প্রসাধনী ব্যবহার না করলেও নব্বই দশকের নায়িকা হিসাবে তাকে অসম্ভব সুন্দর লাগতো। জান্নাতুল ফেরদৌস কৃত্রিম প্রসাধনী ব্যবহার করলেও তেহজিব তটিনীর আশেপাশে ও এখন অব্দি যাননি।
শাওয়ার নিয়ে হেয়ার ড্রয়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে নিয়েছে সেরিন। তখন আবার শুভ্রর আগমন ঘটে। সে শাওয়ারের জন্য ওয়াশরুমে ঢুকে। সেরিন লেহেঙ্গাটা বের করে একনজর দেখে। অফ হোয়াইট কালারের ভেতর হাল্কা পিংক কালার লেহেঙ্গা। সাথে মেচিং গোলাপ ফুল যেগুলো শুভ্র এনে দিয়েছিলো। সেরিন লেহেঙ্গাটা পরিধান করে সাজতে বসে। প্রথমে চুলগুলো বেঁধে নেয়। কোমড় অব্দি গড়ানো চুলগুলো ছেড়ে তাতে গোলাপ গুঁজে দিয়েছে। সিথিতে মেচিং করা একটা টিকলি। ইয়ারে সেম টিকলির ইয়ার রিং। তেমন একটা সাজেনি সে। আজকে একটু তাড়াতাড়ি রেডি হওয়া কমপ্লিট হয়ে গেছে সেরিনের। শুভ্র আজকে অফ হোয়াইটের মাঝে হাল্কা পিংক কালারের পাঞ্জাবি পরিধান করেছে। শুভ্রকে শুভ্র লাগছে বেশ। মনে হয় শুভ্র ফুলের মাঝে হাল্কা পিংক কালার।
সেরিন জোর করে শুভ্রকে দাঁড় করিয়ে মিররে পিক তুলে নেয়। শুভ্রকে বলে দিয়েছে আগে নিচে গিয়ে পিক তুলবে তারপর যা করার করবে।
আর্থ আজকে বর সেজেছে তার প্রিয়তমার জন্য। আজকের দিনটা তার জন্য অনেক আনন্দের। চৌধুরী বাড়ীর প্রিন্সেস রাও অফ হোয়াইট কালারের লেহেঙ্গা পড়েছে। শুধু বউরা শাড়ী পড়েছে। শুভ্র,সেরিন থেকে শুরু করে প্রত্যেক কাপল পিক তুলেছে। তাঁদের বাড়ীর রাস্তাতেই তাঁদের অর্ধেক ফটোশুট করা শেষ হয়ে গেছে।
দেড়টার দিকে পাটওয়ারী বাড়ীতে আসে তারা সবাই। চৌধুরী পরিবারের সবাইকে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়। মেহের সেরিনকে টেনে ভেতরে নিয়ে আসে। মেয়ে পক্ষ বানিয়ে দেয়। সেই সাথে গেটে টাকা নিয়ে কিছুক্ষণ কথা হয়। মূলত মজার ছলেই। জানে আর্থ ফিক্সড করা এমাউন্টই দিবে। তাঁদের মজা-খুনশুটির পর আর্থকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে স্টেজে নেওয়া হয়। সেরিন ভেতরে গিয়ে প্রথমে শশীর সাথে দেখা করে। মেয়েটাকে অফ হোয়াইট কালারের গাউনে সাজানো হচ্ছে। খাওয়া দাওয়া, ফটোশুট কিছুটা শেষ হতে আর্থকে ভেতরে নেওয়া হয়। একটা নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করা হয় বিয়ে পড়ানোর জন্য। ফ্লোরের উপর বিছানা করে তাতে ফুল দিয়ে পর্দা করা। তার দুই পাশে দু’জনকে বসানো হয়। শশী কান্না করছে দেখে কিরণ পাটওয়ারী টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বলে,
“আমার কলিজা কান্না করতে হবে না। এই তো আমরা আমরাই।”
তখন আর্থ ভরা মজলিসে মুখ ফসকে বলে,
“ওটা আপনার কলিজা না। আমার কলিজা।”
আর্থর কথায় বাকীরা হাসলেও শশী বেশ লজ্জা পায়।
কাজী এবং হুজুর সহ বিয়ে পড়ানো শেষ করে। বর-বউকে একসাথে স্টেজে নেওয়া হয়। তারা আয়না দেয় দু’জনের হাতে। তখন সেরিন আর্থকে বলে,
“ভাইয়া কী দেখো আয়নায়?”
তখন আর্থ শুধায়, ” উপরওয়ালা আকাশের সত্যিকারের শশীটা আমায় দিয়ে দিলো? এক টুকরো চাঁদ।”
তখন সাফা বলে,
“বনু তুমি কী দেখো?”
“সবচেয়ে ভালো মনের মানুষটা।”
এই তো তাঁদের খুনশুটি দুই পরিবারে আরেকটু সুন্দর সময় কাটানো। আর্শিয়া, অক্ষর এসেছে বিয়েতে। আর্শিয়া শুভ্রকে একদমই আশা করেনি। তারউপর শুনেছে অক্ষর ও নাকী সেরিনকে পছন্দ করতো। যদিও আফসোস নেই এসবে। তবে ব্যপার কেমন জেনো! আর্শি শুভ্রকে পছন্দ করলেও শুভ্র বিয়েটা সেরিনকে করেছে। আবার অক্ষর সেরিনকে পছন্দ করলেও বিয়েটা করেছে আর্শিকে। শুভ্র ও আর্শির সাথে হাসিমুখে কথাবার্তা বলে।
সন্ধ্যার দিকে রওনা হয় তারা। প্লান করেছে ফ্রেশ হয়ে তারা কুমিল্লায় যাবে রাতের শহরে। মেঘনা ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে ঠান্ডা হাওয়া উপভোগ করবে। চৌধুরী বাড়ীতে আসে, সাফা,রাফা, মেহের। মাহী ব্যস্ত কুমিল্লায় যাওয়ার কিছুক্ষণ আগেই সে আসবে।
ফ্রেশ হয়ে সবাই চা-কফি খেয়ে নেয়। শশী চেন্জ করে থ্রি-পিস পড়ে নেয়। লিভিং রুমে সবাই বসে কথা বলছে। আদ্রিতা,অধরা,সেরিন,সাফা,রাফা,মেহের তারা আর্থর রুম সাজায়। রাতের ডিনার করেই তারা বের হবে। আর্থ,শশী ছাড়া।
ডিনার করতে,করতে সারেএ গারোটা পেড়িয়ে যায়। বাকীরা তাড়াতাড়ি ডিনার করে আর্থর রুমের দরজা দখল করে নেয়। শশীকে আগেই নিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়। আর্থ আসতে তার শালিকা মহল এবল বোনদের দাবি শুনে। বেশী কথা বাড়ায়নি টাকাগুলো সেরিনের হাতে দিয়ে দেয়। তখন শুভ্র বলে,
“এতে তাড়া কিসের ভাই?”
“অনেক কিছুর।”
ওদের কথা শুনে বাকীরা হাসে। আর্থ ভেতরে প্রবেশ করে দরজাটা লক করে ভেতরে যায়। শশী বসে আছে এক কোণে। আর্থর টায়ার্ড লাগছে বিধায় ধপাস করে খাটের উপর শুয়ে পড়তে সেটা ভে’ঙে যায়। বাকজটায় আর্থ শশী কেউই প্রস্তত ছিলো না। শশী দেরী না করে আর্থর কানে ধরে একটা টান দিয়ে বলে,
“এই তোমায় কে বলেছে এভাবে ধপাস করে শুয়ে পড়তে? আর কী খাট রাখো?”
“আরে খাট তো ভেঙেছি কিন্তু কাজের কাজ তো কিছুই করতে পারলাম না।”
“কী বললে তুমি?”
“ওই আর কী বলেছি।”
আমতা আমতা করে বলে আর্থ। শশী রাগ দেখিয়ে বলে,
“এখন মুখ দেখাবো কীভাবে? ছিঃ! বড়রা কী ভাববে?”
“এহহ্! এতো লজ্জা পাওয়ার কী আছে? আমরা তো জানি আমরা এখনো কিছু করিনি বাকীরা বুঝলে বুঝুক আমরা বাসর করেছি। আর ওতো লজ্জা পাওয়ার কী আছ? বাসর না করলে বুঝি আমরা দুনিয়ায় আসতাম?”
“এই তোমার মুখে কিছু আটকায় না।”
“এই তুমি বেশী লজ্জা পাচ্ছো তাই আরকী।”
“মুখটা বন্ধ রাখবে তুমি?”
“আরে এটা শুভ্র ভাইয়ার বদ দোয়া। ওকে জ্বালানো এবং পচানোর কারণে বলেছিলো আমি নাকী খাট ভাঙবো। খাট ঠিকই ভাঙলো অথচ কোন কিছুই করলাম না।”
“আবারে একই কথা বলছো?”
“তো কী করবো? এখন তুমি বলো? ”
“খাট এটা সরাও। আমার ঘুম পাচ্ছে।”
“খাট এক পাশ নাহয় ভেঙেছে আরেকপাশ তো ঠিক আছে। তুমি আমার উপর ঘুমাবে।”
“যদি ঘুমের মধ্যে কোলবালিশ ভেবে লা’থি মেরে পেলে দিই?”
“সমস্যা নেই তবে দেখেশুনে লা” থি মেরো। আমার এখনো বাসর করা হয়নি। বাবা ডাক শোনা কিন্তু বাকী আছে।”
” ঠোঁট কাটা বেডা একটা।”
“আসে আদর করি!”
আর্থ শশীকে ডায়মন্ড গিফ্ট করে। যদিও বা তারা টায়ার্ড। তাই আর্থ শশীর ঠোঁটে দু’টো চুমু খেয়ে শুয়ে পড়ে তাকে বুকে জড়িয়ে।
**********
বারেটার দিকে রওনা হয় সবাই মেঘনা ব্রিজের কাছে যাওয়ার জন্য। মাহী ও আসে তাঁদের সাথে। শহরের রাস্তায় গাড়ীর যনযাট একটুও কমেনি। ব্রিজের উপর একের পর এক গাড়ী আসছে যাচ্ছে। গাড়ী দু’টো নির্দিষ্ট জায়গায় পার্কিং করে তারা ব্রিজের উপর যায়। একেকজন একেক প্রান্তে। সেরিন শুভ্র একসাথে দাঁড়িয়ে আছে। সেরিন একটু চুপচাপ। শুভ্র আজকে খেয়াল করেছে। তেমন আনন্দ করতে পারেনি মেয়েটা। যদিও বা শুভ্র কিছুই বলেনি।
ঘণ্টা খানিকের মতো সময় কাটিয়ে আবারো দাউদকান্দির উদ্দশ্যে রওনা হয় সবাই। বাড়ীতে আসতে,আসতে ঘড়ির কাটা দুইটা পেড়িয়ে গেছে। শুভ্র,সেরিন কোন রকম ফ্রেশ হয়। আজকে টায়ার্ড থাকলেও শুভ্র সেরিনকে জিজ্ঞেস করে,
“আজকে তোমার মন খারাপ কেনো?”
সেরিন কিছু না বলে শুভ্রর বুকে হামাগুড়ি দিয়ে পড়ে। পা উঁচু করে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
“আই নিড ইউ!”
“আর ইউ ম্যাড? আমি প্রচুর টায়ার্ড।”
“আই নিড ইউ।”
কথাটা বলে সেরিন শুভ্রর অধর জোড়া দখল করে নেয়। পুনরায় শুধায়,
“আই নিড ইউ। তোমার ছোঁয়া পুনরায় সর্বাঙ্গে মাখার আমার ভীষণ ইচ্ছে হলো।”
শুভ্র আর কথা বাড়ায়নি। তার প্রিয় মানুষ তাকে চাচ্ছে, ভীষণ করে চাচ্ছে আর না করেনি। দু’জনেই ভালোবাসার সাগরে তলিয়ে গেলো।
#চলবে