পদ্মমির #পর্ব_22 #ইলমা_বেহেরোজ

0
1444

#পদ্মমির
#পর্ব_22
#ইলমা_বেহেরোজ

তার থেকেও বেশি ঘাবড়ে যায় সিঁড়ির নিচে ভুবনকে দেখতে পেয়ে। আমির তাকাতেই ভুবন দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়। পদ্মজা ছাদের কোণে দাঁড়িয়ে একমনে চাঁদ দেখছে। চাঁদের আলো লুটিয়ে পড়েছে সর্বত্র। বাড়ির পিছনের কচুবনে ঝি ঝি ডাকচে। গান থামলেই সেই ডাক শোনা যায়। জোনাকি জ্বলছে তেলাকুচোর ঝোপে। জোনাকি পোকার মিট মিট আলো ওর শৈশবের এক বিস্ময়কর স্মৃতি। জোনাকির এমন আলো জ্বালানো দেখে খুব কৌতূহল হতো। বিস্ময় ভরা চোখে ভাবত, কিভাবে জোনাকি এই আলো জ্বালায়? বহুবার হেমলতাকে প্রশ্ন করেছিল, ‘আম্মা, ওরা কীভাবে আলো জ্বালায়?’ হেমলতা পদ্মজার মাথায় চুমু খেয়ে বলতেন,

‘আল্লাহ জানে।’ বড় হওয়ার পরও আলো জ্বালানোর মূল কারণ জানতে পারেনি। বিয়ের মাস কয়েক পর আমির জানিয়েছিল, ‘সন্ধ্যার পর জোনাকি পোকাদের আলো জ্বালানোর পিছনে মূল কারণ হচ্ছে, বিপরীত লিঙ্গের জোনাকিকে আকর্ষণ করা। সাধারণত পুরুষ জোনাকি পোকা স্ত্রী জোনাকি পোকাকে আকর্ষণ করার জন্য এভাবে আলো জ্বালায়। আর স্ত্রী জোনাকিরা পুরুষ জোনাকির আলো জ্বালানোর উপর ভিত্তি করে সঙ্গী নির্বাচন করে।” সেটা কীভাবে?” ‘আলোর তীব্রতা, ধরন এসব দেখে। যে পুরুষ জোনাকি দ্রুত আর উজ্জ্বল আলো জ্বালতে পারে স্ত্রী জোনাকিরা তাদের সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়।’ ‘স্ত্রী জোনাকিরা কি আলো জ্বালায় না?’ ‘স্ত্রী জোনাকিরাও আলো জ্বলায়।’ ‘তারা কেন জ্বালায়?’ ‘পুরুষ জোনাকির সংকেতে সম্মতি দিতে আলো জ্বালায়। যে পুরুষ জোনাকিকে কোন স্ত্রী জোনাকির পছন্দ হয়, তাকে আলো জ্বালিয়ে নিজের সমম্মতি প্রকাশ করে। মানে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই এবং তোমার আদরসোহাগ নিতে চাই।’ শেষ কথাটি আমির কৌতুক করে উচ্চারণ করল। পদাজা লজ্জা পেয়ে তার বুকে মুখ লুকোয়। আমির স্বীয় বধূকে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে বলে, ‘আমি হচ্ছি পুরুষ জোনাকি আর তুমি স্ত্রী জোনাকি।’ স্মৃতি রোমন্থন করে পদ্মজার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে। ভাবে, মানুষটা এখনো আগের মতো রয়ে গেছে। কিছুক্ষণ আগে আমিরের বলা কথাগুলো মনে পড়ে। ভাবে, ‘উনি কী চাচ্ছেন আমি নিজ থেকে এগিয়ে যাই? পুরুষ জোনাকির মতো আচরণ করি?’ পদ্মজা পুলকিত বোধ করে, লাজে রাঙা হয় মুখ। পরপর মানসপটে ভেসে উঠে কাটিয়ে আসা প্রতিটি মুহূর্ত, আমিরের উজাড় করে দেয়া ভালোবাসা। প্রথম রজনীর প্রতিটি মুহূর্ত তার মুখস্থ। বিশাল জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আমির ওর ঘাড়ে থুতুনি রেখে বলেছিল, ‘প্রথম যেদিন তোমাকে দেখি সেদিনই মনে মনে পণ করি তোমাকেই বিয়ে করতে চাই এবং তোমার আদরসোহাগ নিতে চাই।’ শেষ কথাটি আমির কৌতুক করে উচ্চারণ করল। পদাজা লজ্জা পেয়ে তার বুকে মুখ লুকোয়। আমির স্বীয় বধূকে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে বলে, ‘আমি হচ্ছি পুরুষ জোনাকি আর তুমি স্ত্রী জোনাকি।’ স্মৃতি রোমন্থন করে পদ্মজার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে। ভাবে, মানুষটা এখনো আগের মতো রয়ে গেছে। কিছুক্ষণ আগে আমিরের বলা কথাগুলো মনে পড়ে। ভাবে, ‘উনি কী চাচ্ছেন আমি নিজ থেকে এগিয়ে যাই? পুরুষ জোনাকির মতো আচরণ করি?’ পদ্মজা পুলকিত বোধ করে, লাজে রাঙা হয় মুখ। পরপর মানসপটে ভেসে উঠে কাটিয়ে আসা প্রতিটি মুহূর্ত, আমিরের উজাড় করে দেয়া ভালোবাসা। প্রথম রজনীর প্রতিটি মুহূর্ত তার মুখস্থ। বিশাল জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আমির ওর ঘাড়ে থুতুনি রেখে বলেছিল, ‘প্রথম যেদিন তোমাকে দেখি সেদিনই মনে মনে পণ করি তোমাকেই বিয়ে করব। তবে ভাবিনি প্রথম দিনই আমার কারণে এতোটা অপদস্ত হতে হবে তোমায়। অনেক চেষ্টা করেছি সব আটকানোর, পারিনি। সেদিনই বাড়ি ফিরে আব্বাকে বলি, আমি পদ্মজাকে বিয়ে করতে চাই। প্রথম প্রথম কেউ রাজি হচ্ছিল না। পরে রাজি হয়ে যায়। মনে হচ্ছে, চোখের পলকে তোমাকে পেয়ে গেছি।’ পদ্মজা নিশ্চুপ থেকে ভাবছিল, অবাধ্য, অজানা অনুভূতিদের সাথে যুদ্ধ করবে নাকি সখ্যতা করবে। ভাবতে ভাবতে গায়ে কাঁপুনি উঠে, অস্থির হয়ে পড়ে। অস্থির হয়ে পড়ে। শরীরের ভার ছেড়ে দিয়েছিল, কানে বাজছিল শুধু আমিরের কিছু কথা, ‘কথা বলো। আল্লাহ, আবার কাঁপছ! আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো, স্থির হতে পারবে। এই কী হলো?’ আমির দুই হাতে জড়িরে বাখে তাকে। সম্মোহনী এক অনুভূতির টানে দুজন এক হয়, শুরু হয় পথচলা। পদ্মজা হাসছে, বাঁধভাঙা আনন্দে বক্ষস্থলে শান্তির ফোয়ারা। নেমেছে। চোখের তারায় চিক চিক করছে জল। ও আকাশের দিকে তাকিয়ে হেমলতাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘তোমার কাছে কত ঋণ আমার। জন্ম দিলে, দুধ খাওয়ালে, পেলেপুষে বড় করলে, চলে যাবার আগে একটা সুন্দর মনের প্রেমিক পুরুষের হাতে তুলে দিয়ে গেলে। তুমি কখনো ভুল করোনি আমম্মা। তোমার এতো ঋণ আমি কী করে শোধ করব?’ রফিক মাওলা সিগারেট ধরিয়ে পারভেজকে বলল, ‘কী বলছে রে?’ পারভেজ বলল, ‘এতো দূর থেকে তো শোনা সম্ভব না।’ ওরা একটি পুরনো ভবনের ছাদের শ্যাওলা-ধরা কার্নিশে দাঁড়িয়ে আছে। চারপাশে গিজগিজ করছে মশা। হঠাৎ পারভেজ বলল, ‘একটা প্রশ্ন করব ভাই?’ রফিক শকুনের দৃষ্টিতে পদ্মজাকে দেখছে। দৃষ্টি স্থির রেখেই বলল, ‘বল।’ পারভেজ বলল, ‘মানে যে দুজনকে পাঠিয়েছেন ওরা তো অনেক দূর্বল, নতুন। আমির হাওলাদারের হাতে পড়লে -‘ রফিক আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলল, ‘ওরা আর ফিরবে না।’ ‘শুধু আমিররে একটু ঝামেলায় ফেললাম, স্তর দেখাইলাম।’ বলেই খ্যাকখ্যাক করে হাসতে লাগল। আমিরের মাথা ঝিমঝিম করছে। লাশ সরাবে নাকি ভুবনকে ধরবে? এ কেমন বিদঘুটে মুহূর্তের মুখে পতিত হলো সে। তালগোল পাকালে চলবে না। প্রথমে, হাতের কাছের বিপদ সামাল দেয়াটাই উত্তম পদক্ষেপ হবে। আমির দ্রুত আলমারি থেকে পুরনো এক চাদর নিয়ে তাতে লাশটি পেঁচায় তারপর লাথি দিয়ে লাশটিকে খাটের নিচে রেখে দৌড়ে রান্নাঘরে যায়। সেখান থেকে ঘর মোছার কাপড় নিয়ে সেটা ভিজিয়ে রুমের সামনের মেঝে মুছে। তার হাত কাঁপছে, বুক কাঁপছে, বার বার ছাদের সিঁড়ি দেখছে। মোছা শেষ করে তুরন্ত পায়ে।

চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here