মায়াবিনী_(২) #Ayrah_Rahman #পর্ব_৪৫

0
415

#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_৪৫

______________

” মে আই কাম ইন ডক্টর মারুফ শেখ? ”

ঢাকা মেডিকেল কলেজ এর বিশিষ্ট নিউরোলজিস্ট ডক্টর মারুফ শেখ। মাত্র ই ক্রিটিক্যাল একটা অপারেশন শেষ করে কেবিনে আসতেই খানিকটা পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেয়ে দরজার দিকে তাকালো।

” আরে গরীবের মাটিতে হাতির পদধূলি! অবাক করা বিষয়! ”

আরুশ হাসলো। খানিকটা এগিয়ে গেলো মারুফ শেখের দিকে। ডেস্কের সামনে থাকা চেয়ারে বসতে বসতে বলল,

” কি করব বল! মাঝে মাঝে হাতির ও তো কত কিছুর দরকার পড়তে পারে! কি বলিস!”

মারুফ শেখ সহাস্যে বসতে বসতে বলল,

” খোঁচা মারা কথা আর গেলো না তোর আরুশ! সেই কলেজ লাইফে যেমন ছিলিস তেমনি আছিস”

” মানুষ বদলায় কথাটা মনে হয় সব ক্ষেত্রে যায় না! তা যায় হোক তোকে কাল রাতে যা বলছিলাম, বউটাকে একটু চিকিৎসা করে দে ”

” আরুশ আমার জানা মতে তোর চাচাতো বোন ও তো অনেক বড় নিউরোলজিস্ট! ডক্টর রৌদসী! ”

” হুম আপাতত সে দেশের বাহিরে আছে ”

” ওহহ”

“আমার একমাত্র বউ অসুস্থ তাই তুই তোর সব ডাক্তারী বিদ্যা কাজে লাগিয়ে যত তাড়াতাড়ি পারিস সুস্থ করে দিবি, ইউ নোও না, লেট আমার সহ্য হয় না”

মারুফ আরুশের দিকে তাকিয়ে ভ্রু বাকালো,

” ওহহ রিয়েলি! দীর্ঘ নয় বছর খুউউউব তাড়াতাড়ি না? ”

আরুশের মুখ টা চুপসে গেলো, আড় চোখে তাকিয়ে বলল,

“ইনডিরেক্টলি খোঁচা মারলি!”

মারুফ শেখ মাথা ডানে বায়ে নাড়িয়ে বলল,

” নাহ একদম না! আমি ডিরেক্টলিই খোঁচা দিলাম”

আরুশ ভ্রু কুঁচকে হাতে একটা পেন নিয়ে সেটার ক্যাপ খুলে মারুফের দিকে তাক করে বলল,

” এটা দিয়ে গুঁতা দিয়ে হার্ট একদম ছিদ্র করে ফেলবো বেশি কথা বললে!”

মারুফ হাতের পেন দেখিয়ে বলল,

” আমি কি বসে থাকবো? এটা দিয়ে গুতা দিয়ে তোর ব্রেন আউট করে ফেলব!’

আরুহী দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুই প্রফেশনাল ডাক্তারের অযাচিত ঝগড়া দেখছে, তারা দুজন ঝগড়ায় এতোটাই মশগুল যে আরুহীর উপস্থিতি তাদের নজরে এলো না , আরুহী ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে গেলো সামনের দিকে,

” আপনাদের কি আর কাজ নেই! বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করছেন কেন? ”

হঠাৎ আরুহীর কন্ঠ শুনতে পেয়ে দুজন ই আরুহীর দিকে থতমত দৃষ্টিতে তাকালো, আরুহী দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বসতে বসতে বলল,

” গুড ইভিনিং ডক্টর মারুফ শেখ ”

মারুফ শেখ আরুহীর দিকে তাকালো, তার চিনতে মোটেও কষ্ট হয় নি যে এই হলো আরুশের আরুহী।

সহাস্যে উত্তর দিলো,

” গুড ইভিনিং আরুহী চৌধুরী! কেমন আছেন?”

” ভালো থাকলে তো আর ডক্টরের কাছে আসছে না! আজাইরা প্রশ্ন না করে কাজের কথা বল! ”

মারুফের প্রশ্নের উত্তরে আরুহী কিছু বলার আগেই আরুশ ঠোঁট বাঁকিয়ে কথা টা বলে উঠলো।

” ডক্টর আমি না তুই! ”

আরুশ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল,

” দুজন ই ”

মারুফ শেখ ভ্রু জোড়া কুঁচকে বলল,

” নিউরোলজিস্ট আমি না তুই?”

” তুই ”

“তাহলে তুই চুপ থাক. ডিস্টার্ব করবি না! ”

কথা টা বলেই মারুফ পুনরায় আরুহীর দিকে তাকালো,

” তা আরুহীর চৌধুরী আপনি আপনার সমস্যা গুলো একটু বলেন! ”

আরুহী জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলতে লাগলো,

” আসলে ডক্টর বেশ কিছু দিন যাবত আমার মাথাটা হঠাৎ হঠাৎ চক্কর দিয়ে উঠে, আবার ঠিক হয়ে যায়, মাথার চারপাশে চিনচিন ব্যাথা করে, আর মাঝে মাঝে মাত্রা অতিরিক্ত ব্যাথা করে! বিশেষ করে যখন বেশি টেনসড থাকি কিংবা বিষন্নতা ঘিরে ধরে তখন ব্যাথাটা বেশি হয়। শরীর টা ভীষণ দুর্বল মনে হয়। আপাতত এই গুলোই! ”

মারুফ শেখ আরুহীর দিকে কিছু ক্ষন তাকিয়ে থেকে সন্দেহি কন্ঠে বলল,

” এতটুকু ই? কিছু লুকান নি তো! ”

আরুহী মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে বলল,

” নাহ, আপাতত লুকাই নি!”

আরুহীর কথা শুনে ডক্টর মারুফ শেখ পেপারে কিছু একটা লিখে বলল,

” আপাতত সিটি স্ক্যান এবং এমআরআই করেন আর রক্ত পরীক্ষা করে রিপোর্ট গুলো আমাকে দেখাবেন, বাকি কথা রিপোর্ট পেয়ে তারপর বলব, ল্যাবে আমার নাম বলবেন আর বলবেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রিপোর্ট জমা দিতে। দ্রুত করে আসবেন”

আরুহী উঠে দাঁড়ালো, আরুশ ভ্রু কুচকে একবার মারুফের দিকে আরেকবার আরুহীর দিকে তাকিয়ে বলল,

” এনি প্রবলেম? ”

আরুহী মুচকি হেসে বলল,

” আরে না! চলো পরীক্ষা করাতে হবে”

আরুশ উঠতে উঠতে বলল,

” হুম চলো ”

_________________

পরীক্ষা শেষে আরুহী করিডরে বসে আছে প্রায় ঘন্টা দুই। হঠাৎ ই আরুশের ইমার্জেন্সি অপারেশন পড়ে যাওয়ায় তাকে তৎক্ষনাৎ হসপিটাল ত্যাগ করতে হয়েছে, ডাক্তারদের এই এক জ্বালা! রাত নেই দিন নেই, সকাল নেই বিকেল নেই যখন ই ফোন আসবে তখনই হসপিটাল উপস্থিত হতে হবে এবার তুমি বাংলাদেশের যেই প্রান্তেই থাকো না কেন!

আরুহী কে বসিয়ে আরুশ গিয়েছে প্রায় এক ঘন্টা, আরুহী বসে বসে ফোন ঘাটছে।

” মেম আপনার রিপোর্ট রেডি, আপনি চাইলে এখনি নিয়ে নিতে পারবেন। ”

নিজের সামনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ তুলে তাকালো সে, উঠে দাড়াতে দাঁড়াতে মুচকি হেসে বলল,

” আপনি যান আমি আসছি ”

বলেই এক পলক হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে নিলো রাত তখন প্রায় দশটা। মোবাইল টা পকেটে ঢুকিয়ে হেটে গেলো রিপোর্ট আনতে।

রিপোর্ট নিয়ে সোজা ডক্টর মারুফ শেখ এর কেবিনে নক করতেই ভেতর থেকে আওয়াজ এলো,

” কাম ইন”

আরুহী মুচকি হেসে এগিয়ে গেলো সেদিকে।

মারুফ শেখ এর দিকে রিপোর্ট টা বাড়িয়ে বসলো সামনে, মারুফ শেখ মুচকি হেসে রিপোর্ট টা নিয়ে পেইজ উল্টাতেই মুখের হাসিটা গায়েব হয়ে সেখানে জমা হলো একরাশ গম্ভীরতা। আরুহী ভ্রু কুচঁকালো।

” এনিথিং রঙ ডক্টর? ”

মারুফ শেখ এক পলক আরুহীর দিকে তাকিয়ে আশেপাশে তাকালো,

” আরুশ কোথায়? ”

” আরুশ ভাই তো হসপিটাল গেছে ইমার্জেন্সি অপারেশন পড়ে যাওয়ায় তাকে যেতে হয়েছে ”

” ওহ, আপনি বাসায় যান, আমি আরুশের সাথে কথা বলব পরে ”

আরুহী ভ্রু কুঁচকালো,

” ক্রিটিক্যাল কিছু? আমাকে বলতে পারেন, আমি দুর্বল নই ডক্টর! অনেক কিছু সহ্য করার ক্ষমতা আমার আছে তাই আপনি বিনা দ্বিধায় বলতে পারেন ”

মারুফ শেখ শান্ত দৃষ্টিতে আরুহীর দিকে তাকালো,

” আপনি কি রিপোর্ট টা দেখেছিলেন? ”

” নো ডক্টর ”

” আপনি দেখলেই বুঝতে পারতেন! আমি পার্সোনাললি আপনাকে চিনি আরুহী চৌধুরী! এস অ্যা ফোর্স অফিসার হিসেবে আপনি যথেষ্ট বুদ্ধিমান আর এসব রিপোর্ট প্রতিনিয়ত ই আপনাকে দেখতে হয়! শত হোক হসপিটাল নিয়েও আপনি মিশন কমপ্লিট করেছেন! ”

আরুহী ভ্রু কুচকে রিপোর্ট টা তুলে নিলো, উল্টে পাল্টে কিছু ক্ষন দেখে রেখে দিলো সামনের ডেস্কে। মুখ ভঙ্গিতে কোন রুপ পরিবর্তন না দেখে মারুফ শেখ অবাকই হলো। আরুহী শান্ত দৃষ্টিতে ডক্টর মারুফ শেখ এর দিকে তাকিয়ে বলল,

” দেখলাম ”

” আপনার ইমিডিয়েটলি দেশের বাহিরে যেতে হবে আরুহী চৌধুরী! বাংলাদেশে এর চিকিৎসা থাকলেও আমি পুরোপুরি সে সকল যন্ত্রপাতি তে ভরসা করতে পারছি না! আপনার ব্রেনে যেই টিউমার টা আছে তা কিন্তু একদিনে হয় নি, দিন কে দিন এটি বেড়েছে! অবশ্যই সিমটম ও দেখা দিয়েছে যা আপনি বুঝে ও বুঝেননি, নিজের প্রতি অবহেলা করেছেন, আমি আরুশকে এটাই বলব আপনাকে দ্রুত দেশের বাহিরে নিয়ে যেতে নয়তো খুব খারাপ কিছু হয়ে যাবে, এটা এমন এক স্টেজে আছে যেকোনো সময় ব্লাস্ট হতে পারে, আর আপনি অবুঝ নন আরুহী। আমি কি বুঝার চাচ্ছি আপনি বুঝতে পেরেছেন!”

আরুহী দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ডক্টর মারুফ শেখ এর দিকে তাকালো,

” এখন যা কথা হবে তা যেন শুধু এই চার দেয়ালের মাঝে বন্দী থাকে ডক্টর! আপনি হয়তো জানেন বর্তমানে কিছু কুচক্রীর দল নারী পাচার বলেন আর মাদক আমদানি ই বলেন এমন কি যুব সমাজকে ওসব মাদকে এডিকটেড করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে, আমি ওই মিশনের মধ্যে ই আছি, প্রায় ৮০% কাজ হ’য়ে গেছে শুধু সুযোগে সৎ ব্যবহারের পালা, এই এলোমেলো অবস্থায় আমি কি করে আমার দায়িত্ব থেকে সরে যাই বলুন তো, আপনি কি পারবেন ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশনে একজন রুগীর ৮০% অপারেশন করে বেরিয়ে যেতে যেখানে আপনি জানেন অপারেশন সাকসেসফুলি হবে আর রুগীও বাঁচবে! ”

” কখনো ই না, ডাক্তার হিসেবে এটা আমার কর্তব্য, রুগীর প্রান বাচানোই তো আমার মতো ডাক্তার দের ধর্ম, এটাই আমাদের সার্থকতা ”

আরুহী হাসলো,

” তাহলে আমি কি করে এই ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশনে চলে যাবো শুধু মাত্র আমার কথা চিন্তা করে! ”

” কিন্তু আপনি অসুস্থ আরুহী, লাস্ট স্টেজে আছেন আপনি, এখন অপারেশন করলেও বাঁচা মরা আল্লাহর হাতে, আর সেখানে আপনি আপনার দায়িত্বের কথা চিন্তা করছেন! ‘

” আরুহী চৌধুরী নিজের দায়িত্বের হেলা ফেলা করে না ডক্টর, ভাগ্যে যা আছে তাই হবে বাট প্রমিস আমি খুব দ্রুতই কাজ শেষ করে চিকিৎসা করাবো ”

ডক্টর মারুফ কিছু ই বলল না, আরুহী অনুনয়ের স্বরে বলল,

” ডক্টর আমার একটা কথা রাখবেন? ”

” কি কথা বলুন ”

” যতদিন না আমি বলছি আপনি আরুশকে কিছু ই বলবেননা! ”

মারুফ শেখ চমকে উঠলো,

” এটা অন্যায়! ”

” দেশের কথা চিন্তা করে, দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে প্লিজ আমার অনুরোধ টা রাখেন ভাইয়া! আমি প্রমিস করছি তো! ”

ডক্টর মারুফ শেখ কিছু ক্ষন ভাবলো, ধীর কন্ঠে বলল “ঠিক আছে ”

আরুহী মুচকি হেসে ধীর পায়ে বেরিয়ে এলো কেবিন থেকে, মনে তার প্রবল ঝড় বয়ে যাচ্ছে যা উপর থেকে বোঝার উপায় নেই!

কি হবে তবে সামনে?

চলবে….

[ আজকের পর্বটা কেমন লাগলো জানাবেন প্লিজ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here