#মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️🩹
#Mishka_Moon
||পর্ব_১৮||
সারাদিন দুজন মিলে খুব আড্ডা দিলো। গল্পে এতোটাই মজে ছিল খাওয়ার কথাই ভুলে গেছে। ওই যে কথায় বলে না! গল্প কে করে অল্প! অনিমা বেগম তাদের জন্য রান্না করে রেখে গিয়েছেন। অহিকে বলে গেছেন দুজন গরম করে খেতে। অথচ সেও বেমালুম ভুলে গেছে। যখন মনে পড়ল তখন অলরেডি তিনটা বাজে। দুজনেই উঠে রান্নাঘরে গিয়ে খাবার গরম করে নিলো প্রথমে। অতঃপর খাবার বেড়ে নিয়ে নিয়ে সোফায় গিয়ে বসলো। উদ্দেশ্য মুভি দেখবে। অহি টি-টেবিলের উপরে ল্যাপটপ সেট করে 12th Fail মুভিটা চালু করে দিলো। এটা নিয়ে ফেসবুকে অহরহ পোস্ট দেখেছে। তবে পড়াশোনার চাপে দেখা হয়নি। ইচ্ছে মুখে খাবার নিয়ে অহিকে তারা দিয়ে বলল,
” আর কয়দিন দাঁড়িয়ে থাকবি? এখানে এসে খেতে বস।
অহিও গিয়ে বসলো। মুভি শেষ হওয়ার আগেই তাদের খাবার শেষ হলো। ইচ্ছে সোফার উপর অহির কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ল। অহি কিছু বলল না। শেষ সিনে গিয়ে বেচারি অহি একদম কান্না করেই দিলো। ইচ্ছে একবার তার দিকে তাকাচ্ছে একবার ল্যাপটপের দিকে তাকাচ্ছে। শেষমেষ উঠে বসে বলল,
“কি রে কাঁদছিস কেন? নায়ক আইপিএস হয়ে গেছে এখন তো খুশির হওয়ার কথা। কই সে যখন খাটল তখন তো চোখ থেকে পানি বের হলো না? এখন কেনো হচ্ছে??”
ইচ্ছের কথায় অহি থেমে গেলো। মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে বলল,
“তাইতো। এখন কেনো কাঁদছি!
ইচ্ছে আফসোসের সুরে বলল,
” এটা সত্য ঘটনার উপরে বানানো হয়েছে। শিক্ষণীয় একটা মুভি। আর আমাগো কিছু কিছু বাঙালি পোলাপাইন কি শিক্ষা নিলো জানিস??
“কিহ??
“জীবনে গফের গুরুত্ব অপরিসীম।”
অতঃপর দুজনেই হাসতে লাগলো। এগুলো নিয়ে মূলত ফেসবুকে ট্রল চলেছে টানা এক মাস। ইচ্ছে অহির হাত ধরে টেনে তুলে মুখে মুখে গান ধরে নাচতে লাগলো। এটা তার আগেকার স্বভাব হুটহাট নাচতে শুরু করা। এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো। অহি সোফায় বসে বলল,
“আমার মাথা ঘুরছে তুই খুলে দিয়ে আয়।
ইচ্ছে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই দেখলো। অনিমা বেগম হাতে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইচ্ছেকে দেখে হাসলেন। প্যাকেট খুলতে খুলতে বাসায় ঢুকলেন। পিছু পিছু অনুভবও আসলো। তবে ইচ্ছেকে কিছু বলল না। মুখ তার গম্ভীর। ইচ্ছে তার মুখ দেখে মনে মনে বলল, এই বেডার আবার কি হলো! অনিমা বেগম ডাকতেই দরজা বন্ধ করে তার কাছে গেলো। কাছে যেতেই একটা মিষ্টি মুখে দিয়ে দিলো। ইচ্ছে চিবাতে চিবাতে বলল,
” কিসের মিষ্টি গো আন্টি গো?
অনিমা বেগম অহির মুখেও একটা মিষ্টি দিয়ে বললেন,
“অনুভবের বিয়ে ঠিক করে আসলাম রে।
ইচ্ছের মুখ থেমে গেলো। বাকিটুকু গিলে খেয়ে বলল,
” মানে?কবে!!
“মানে আবার কি! বিয়ে রে বিয়ে আমার অনুভবের বিয়ে। আমার কত্ত শখ জানিস। ধুমধাম করে ছেলের বিয়ে দিবো। তুই কিন্তু সাতদিন আগেই আসবি।”
ইচ্ছে কিছু না বলে অনুভবের দিকে তাকালো। এখনো মুখ গোমড়া করে সোফায় বসে ফোন টিপছে। অতঃপর অহির দিকে তাকালো সেও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ইচ্ছের হঠাৎ মন খারাপ হয়ে গেলো। একটু আকটু খারাপ নয় খুব বেশি খারাপ লাগছে। তবে বুঝলো না তার সব থেকে অপছন্দের লোকের বিয়ে ঠিক হয়েছে এতে তার কেনো খারাপ লাগছে? ইচ্ছে মন চাইছে ছুটে চলে যেতে। সময় নষ্ট করলো না বলল,
” আমার এখন বাসায় যেতে হবে। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।
অনিমা বেগম বেশ কয়েকবার থাকতে বললেন। তবে ইচ্ছে রাজি হলো না। অহি উপরে গিয়ে ইচ্ছের ফোন আর ব্যাগ নিয়ে এসে তার হাতে দিয়ে বলল,
“চল এগিয়ে দিয়ে আসি।
ইচ্ছে শুধু মাথা নাড়াল। অহির সাথে বেরিয়ে পড়ল। অনুভব এতো সময় আঁড়চোখে ইচ্ছের ভাবগতি দেখছিল। চলে যেতেই সরাসরি সদর দরজার দিকে। আর বসলো না। উঠে নিজের রুমে যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলল,
“সময় বৃথা তুমি বললে না বোকা ভেবে গেলে আমারে, পরিণীতা তুমি একা আমি ঠিকই ভাবি তোমারে!”
.
ইচ্ছে মির্জা বাড়ি থেকে বের হতেই। বার বার চোখ মুছতে লাগলো। অহি প্রচন্ড অবাক হলো। বার বার জিজ্ঞেস করতে লাগলো,
” ইচ্ছে! সই আমার কি হয়েছে কাঁদছিস কেন? শরীর খারাপ লাগছে? কোথায় কষ্ট হচ্ছে বল আমায়?
উত্তর না পেয়ে জড়িয়ে ধরলো। ইচ্ছে এবার জোরে কেঁদে ফেললো। নাক টানতে টানতে অস্পষ্ট ভাবে বলল,
“আমি জানি না। তবে আমার কান্না পাচ্ছে খুব।
অহি বিশ্বাস করলো না। কারণ ইচ্ছে এমনি এমনি কাঁদার মানুষ নয়। তার মন অন্য কথা বলছে। তবে মস্তিষ্ক বিশ্বাস করতে চাইছে না। ইচ্ছেকে সময় দিলো স্বাভাবিক হতে। বেশ কিছু সময় পরে ইচ্ছে নিজে থেকেই তাকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
” আমি যাই এখন।
“দাঁড়া ড্রাইভার চাচাকে বলি তুই গাড়িতে যা।”
ইচ্ছে রাজি হলো না। বলল,
“না। আমি রিকশা বা অটোতে করে যাবো। থাক আসি।
ইচ্ছে হাঁটতে লাগলো। পিছন ফিরে দেখলো না তার সই অবাক পানে তার দিকে চেয়ে আছে। কারণ তার থেকে বেশি অবাক সে নিজেই হয়েছে।
রঙ্গন দূর থেকে সব কিছুই দেখলো। ইচ্ছে একটা রিকশা ডাক দিয়ে উঠে বসতেই রঙ্গন নিজেও গিয়ে উঠলো। ইচ্ছে অবাক হয়ে বলল,
” ভাইয়া আপনি??
রঙ্গন একটা টিস্যুর প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“কি হয়েছে??
ইচ্ছে নাক টানতে টানতে বলল,
” ওই খুঁইসটা লোকের বিয়ে।
রঙ্গন বুঝলো কার কথা বলছে। তাই জিজ্ঞেস করলো,
“তাতে তুই কাঁদছিস কেনো??
” জানিনা।
রঙ্গন লম্বা একটা শ্বাস নিলো। বড্ড মায়া কাজ করছে। বোনটার মাথায় হাত দিলে কি সে রাগ করবে! মন বলল করবে না দে। আগে কখনো ভাবনা চিন্তা করে কিছু করত না। কিন্তু আজ! এই বোনটাকে সে কত খুঁজে শুধু একটিবার দেখার আসায়। অবশেষে খুঁজে পেলো। তবুও কত বাঁধা মুখে বলতে পারলো না আমি তোর ভাই রে ইচ্ছে। বাহিরের শক্ত খোলসটা বেরিয়ে আসতে চাইলে। চোখ কাঁপছে বারবার। বুক চিরে কিছু দীর্ঘ শ্বাস বের হলো। চোখ থেকে পানি পরার আগেই নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো। বোনের মনোভাব বুঝতে তার সময় লাগলো। মাথার উপর হাত রেখে বলল,
“কাঁদিস না ইচ্ছে। তুই বললে আমি শুধু অনুভব মির্জাকে নয় ইলন মাস্কেও তুলে আনতে পারি।”
ইচ্ছে থেমে গেলো। অবাক চোখে রঙ্গনের দিকে চাইলো। একটু পরে মাথা নাড়িয়ে বলল,
” না। আমার কাউকে লাগবে না।
রঙ্গন মুচকি হেসে ইচ্ছের হাতে একটা কাগজ দিয়ে বলল,
” আমার নাম্বার আছে। লাগলে আমাকে কল দিস। এনে দিবো আর কাঁদিস না।”
বলেই চলন্ত রিকশা থেকে নেমে গেলো। ইচ্ছে তাকিয়ে রইলো। কেনো জানে না আজকে রঙ্গনের কথা শুনে বড্ড আপন লাগছিল। তবে এখন নিজেকে স্বাভাবিক করা দরকার নইলে দাদিজান হাজারো প্রশ্ন করবে। মাথা থেকে এমপি মশাই নামটা বাদ দেওয়ার চেষ্টা চালালো।
রঙ্গন একটা দোকানে ঢুকে সিগারেট নিলো। দোকানদারকে বলল,
“এই মাসে কত টাকার সিগারেট খেয়েছি হিসেবে করে ইশতিয়াক পাঠানের থেকে নিয়ে আসবি।”
দোকানদার মাথা নাড়িয়ে বলল,
” আচ্ছা ভাই।
রঙ্গন একটা বেঞ্চে টেনে নিয়ে গিয়ে বসলো। মুখে সিগারেট নিয়ে টি-শার্টের হাতা গুটিয়ে নিয়ে পকেটে থেকে ফোন বের করলো।
অহি রুমেই বসে ইচ্ছার কথা ভাবছিল। বার বার চেক করছিল কয়টা বাজে। তাদের বাড়ি থেকে ইচ্ছেদের বাড়ি যেতে বিশ মিনিট সময় লাগে। আরেকবার ফোন হাতে নিতেই রঙ্গনের কল আসলো। কল ধরতেই রঙ্গন বাজখাঁই গলায় বলে উঠলো,
” তোর ভাইয়ের পাখা গজিয়েছে তাইনা? মনে রাখবি তার পাখা ছাঁটতে আমার সময় লাগবে না। ”
অহি হকচকিয়ে উঠে বলল,
” মানে?
” ইচ্ছে কাঁদছিল কেনো?
অহি আমতা আমতা করে বলল,
“আসলে আমি জানি না।
রঙ্গন সাথে সাথে ধমকে উঠলো,
” জানিস না? কিসের সই তুই তার মন বুঝিস না?
“দেখুন এভাবে বলবেন না। আমি ওর মনোভাব বুঝেছি।
” তাহলে হুদাই ঢং করছিস কেন?
অহি চুপ করে রইলো। ইচ্ছেকে নিয়ে রঙ্গন এমন করছে কেনো! তার মাথায় আসলো না। তার ভাবনার মাঝেই আবার গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“শোন তোর ভাইকে ভালো হয়ে যেতে বলবি।
” ইশশ রে আমার ভাইকে ভালো হতে বলেছে! শুনুন আগে নিজে ভালো হোন।”
রঙ্গন হাসলো পায়ের পা তুলে বসে বলল,
“তুই জীবনে আসলে বোধহয় ভালো হয়ে যেতে পারি।”
অহি চোখ বন্ধ করে ফেললো। কিছু সময় পর আবার খুলে বলল,
” আচ্ছা আপনি কি আমার সাথে একটু ভালো করে কথা বলতে পারেন না? ইচ্ছের সাথে তো সেদিন মেলায় কি সুন্দর করে কথা বললেন। আমার সাথে কেনো বলেন না?
” কারণ তুই তোর ভাইয়ের বোন।”
“আজব তাহলে কি আমার আপনার বোন হওয়া উচিত ছিল?”
“থা’প্পড় চিনিস? কাকে কি বলতে হয় জানিস না?
অহি অভিমানী সুরে বলল,
” আমি আর আপনার সাথে কথা বলবো না। যেদিন ভালো ভাবে কথা বলতে পারবেন সেদিন কল দিয়েন।”
রঙ্গন টিটকারি মেরে বলল,
” সে আশায় থাকলে বুড়ি হয়ে যাবি।
” অশান্তিকর লোক একটা।
রঙ্গন মুচকি হেসে আকাশে দিকে তাকিয়ে বলল,
“খারাপ প্রেমিকরা কিন্তু ভালো জামাই হয়। বিশ্বাস না হলে বিয়ে করে দেখতে পারিস।”
অহি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,
” আপনি আমার প্রেমিক কবে হলেন?
“আমি কি একবারো বলেছি আমি তোর প্রেমিক?”
অহি রেগে ফোন কেটে দিলো। বদ লোক একটা। জীবনেও কথায় পারা যায় না। রেগে বিছানার উপর ফোন ছুড়ে মেরে বলল,
” তুই জীবনেও বউ পাবি না শ’য়তান।
তখনই পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো,
” কোন শ’য়তান জীবনে বউ পাবে না?”
#চলবে….