মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️‍🩹 #Mishka_Moon {লেখনীতে} ||পর্ব_১৯||

0
538

#মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️‍🩹
#Mishka_Moon {লেখনীতে}
||পর্ব_১৯||

অহি চমকে পেছনে ঘুরলো। এ সময়ে সে অনুভবকে আশা করে নাই। মনে মনে আফসোস করতে লাগল কেনো রুম লক করে নাই! এখন কি উত্তর দিবে ভাবতে লাগল। অনুভব বোনের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাল। এগিয়ে এসে বোনের মাথায় হাত রেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“তুই আমার একমাত্র আদরের বোন। তোর কোনো ক্ষতি আমি সহ্য করতে পারব না। তাই এমন কিছু করিস না যাতে নিজে ক্ষতি হয়।”

বলেই অনুভব চলে যাচ্ছিল। অহি এত সময় মাথা নিচু করে রেখেছিল এখন মাথা তুলে হাত কচলাতে কচলাতে বলল,
” ভাইয়া আসলে আমি……..

অনুভব শান্ত চোখে তার দিকে তাকাল। হাত দিয়ে থামতে ইশারা করে বলল,”তুই যা ভেবেছিস আমি তাই বলেছি। তোকে আমি মে’রে ধ’রে বোঝাতে পারব না। তোর ঠিক ভুল দেখিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমার। তুই নিজেও জানিস সে তোর জন্য মঙ্গল জনক নয়।”

অহির চোখ দুটো টলমল করতে লাগল। কি করে সবাইকে বোঝাবে মনের কথা। অনুভব বোনের মনোভাব বুঝল। থমথমে গলায় বলল, “তুই তাকে বলবি ভদ্রলোক হয়ে দেখাতে তবেই আমি ভেবে দেখব।”

অহি দৌঁড় গিয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরল। নাক টানতে টানতে বলল, “ভাইয়া ইচ্ছে খুব কাঁদছিল।

অনুভব অবাক না হয়ে পারল না। হতভম্ব হয়ে বলল,
” কেনো কাঁদছিল?
“তোমার বিয়ের কথা শুনে।”

অনুভব মুচকি হেসে বলল,
“আমি তার সাথে কথা বলে নিবো। তুই টেনশন করিস না।

অহি সম্মতি দিতেই অনুভব রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। নিজের রুমে গিয়ে ফোন বিছানার উপর থেকে ফোনটা নিলো। কিছু একটা ভেবে ফোনটা পকেটে ঢুকেই ছাঁদে চলে গেলো। তাদের বাড়ির ছাঁদে হরেক রকমের ফুলে সমাহার। বাগানটা অবশ্য অহির। মেয়েটা ফুল অনেক বেশি পছন্দ করে। গাছগুলো অনুভবেরই এনে দেওয়া। যদিও গাছের বেশির ভাগ যত্নই অনিমা বেগম করেন। অনুভব ফুলগুলো হাত দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছিল আর ভাবছিল তার সাদাসিধা বোনটাকে নিয়ে রঙ্গনের মনে কি চলছে! দলের লোক লাগিয়ে যে কিছু করবে তারও উপায় নেই। এই অফার চয়ন তাকে দিয়েছিল। কিন্তু সে তা করতে পারে নি। কি করে করবে ছেলেটার উপর যে তার বড্ড টান। কিছু ভালোবাসা মনের কণে যত্ন করে রাখা থাকা। যা কেউ জানতে পারে না। রঙ্গনও বোধহয় আর কোনো দিন জানতে পারবে না। আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। মনে পড়ে গেলো ভার্সিটি লাইফের সেইদিন গুলো। রঙ্গনের সাথে তার প্রথম দেখা ভার্সিটির প্রথম ক্লাসে।

“অনুভব ক্লাসে ঢুকতেই একটা ছেলে তার সামনে একটা গোলাপ নিয়ে হাঁটু গেঁড়ে বসে বলল,” উইল ইউ ম্যারি মি?!

সাথে সাথে ক্লাসে হাসির রোল পড়ে গেলো। অনুভব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে রইল। জীবনে কখনো এমন পরিস্থিতিতে পড়েনি। তাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ছেলেটা উঠে দাঁড়াল। সবাই কে হাত দিয়ে ইশারা করে থামতে বলে নিজে হেসে অনুভবের কাঁধে হাত রাখল। অনুভব ইতস্ততবোধ করল ছাড়ানোর চেষ্টা করল। তা দেখে ছেলেটি হেসে বলল, ” আরে কুল আমার কোনো সমস্যা নেই। এমন করছিস কেন? আমি ভালো মানুষ আমার কোনো দোষ নেই। এরা আমাকে ডেয়ার দিয়েছিল যে এখন ক্লাসরুমে ঢুকবে তাকে বিয়ের প্রপোজ করতে হবে।”

অনুভব সবার দিকে তাকাতেই সবাই সম্মতি দিলো। ছেলেটি তখন তার কাঁধ ছেড়ে হেসে হাত বাড়িয়ে বলল, ” আমি রঙ্গন পাঠান।”

“অনুভব মির্জা।”
ছোট্ট জবাব তার।

রঙ্গন ভ্রু কুঁচকে বলল,” তুই কি মেপে মেপে কথা বলিস নাকি? শোন তোকে আমার ভালো লেগেছে আজকে থেকে তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড বুঝেছিস।

অনুভব কিছু বলার আগেই স্যার চলে আসে। রঙ্গন তাকে টেনে নিয়ে গিয়ে নিজের কাছে বসায়। অনুভব বুঝতে পারে ছেলেটা প্রচন্ড দুষ্ট। এর সাথে তার যাবে না। ইগনোর করে চলতে হবে। কিন্তু তার আশায় জ্বল ঢেলে রঙ্গন সব সময় তার সাথে লেগে থাকত। প্রথম প্রথম খুব বিরক্ত হতো। কিন্তু একদিন লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে বের হতে গিয়ে একটা সিনিয়র ভাইয়ের সাথে ধাক্কা লাগে। অনুভব স্যরি বলার আগেই নাক বরাবর ঘু’ষি মা’রে। প্রথম বর্ষের স্টুডেন্ট তারা সিনিয়রের সাথে টক্কর নেওয়া যাবে না। ভেবে বিষয়টা সমাধান করে নিতে চায়। কিন্তু সে কোনো কথাই শুনছিল না তাকে ধাক্কাতে থাকে। লাইব্রেরির এই ঘটনা একজন রঙ্গনকে বলতেই সে ছুটে আসে। হাতে নিয়ে এসেছে একটা বাঁ’শ। সিনিয়রটা তখন ওকে ছেড়ে রঙ্গনকে বলে,” কি রে মারবি নাকি? মা’র তো দেখি মা’র। রঙ্গন মারবে এমন সময় অনুভব তাকে পেছন থেকে জাপ্টে ধরে বলে,”ছেড়ে দে রঙ্গন ঝামেলা করিস না। কে শুনে কার কথা রঙ্গন চেচিয়ে চেচিয়ে বলছিল,
” তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের গায়ে হাত দিস? এতো সাহস তোর। আজকে তোকে আমি বুঝিয়ে ছাড়ব রঙ্গন পাঠান কি জিনিস।”

পরিস্থিতি খারাপ দিকে যাওয়াতে একটা স্যার এগিয়ে আসে। সবাইকে বকাঝকা দিয়ে লাইব্রেরি খালি করতে বলে। অনুভব রঙ্গনের হাত ধরে বাহিরে নিয়ে আসে। শান্ত হয়ে বসতে বলল। রঙ্গন রেগে কিছু বলার আগেই দেখল অনুভবের নাক থেকে র’ক্ত আসছে। সাথে সাথে উঠে দাঁড়াল ওকে নিয়ে একটা ফার্মেসিতে ঢুকল। ড্রেসিং করিয়ে দুজন এক সাথে বের হলো। তবুও রঙ্গনের আফসোস গেলো না। সে হতাশার স্বরে বলল,” তুই আমাকে না আটকালে ওকে আমি হসপিটালে পাঠিয়ে ছাড়তাম।”

“এই জন্যই তোকে আঁটকেছি। সিনিয়রের গায়ে হাত দিয়েছিস জানাজানি হলে তোকে ভার্সিটিতে থেকে বের করে দিতো।”

“দিলে দিতো। আমি ওতো ভেবে কিছু করি না।”
“শোন মাঝে মাঝে ভাবতে হয়। ভাবনা চিন্তা করে কাজ করতে হয়। যেমন ধরি মাছ না ছুঁই পানি।”

রঙ্গন না বুঝে বলল,
” মানে??

অনুভব মুচকি হেসে বলল,
” ওই বেডাকে আমরা ভার্সিটির বাহিরে দেখে নিবো।

রঙ্গন কিছু সময় বড় বড় করে তাকিয়ে থেকে হাসতে হাসতে অনুভবকে জড়িয়ে ধরল। গর্বের সাথে বলল,” এই না হলে তুই আমার দোস্ত। বলতে বলতে অনুভবের নাকে মাথা দিয়ে গুঁ’তা লাগিয়ে দিলো। বেচারা চেচিয়ে উঠল। সাথে সাথে রঙ্গন দূরে সরে দাঁড়িয়ে কানে হাত দিয়ে স্যরি বোঝাল। অনুভব হেসে ফেললো। অতঃপর বলল, “বাসায় যেতে হবে এখন।” রঙ্গন একা ছাড়ল না সে নিজেই তার সাথে যাওয়ার জন্য জেদ ধরল। বাধ্য হয়েই অনুভব নিয়ে গেলো। আকলিমা বেগমের বাসাতেই তখন অনুভব থাকত। রঙ্গনকে তার কাকিমনি খুব পছন্দ করত। তখন থেকেই তার যাতায়াত শুরু হয় সেই বাসায়।”

অনুভব অতীত থেকে ফিরে এলো। কিছু একটা বিড়বিড় করে ফোন বের করল। ইচ্ছেকে কল দিলো।

ইচ্ছে উদাস ভঙ্গিতে অন্যমনষ্ক হয়ে শুয়ে ছিল। হঠাৎ ফোন বাজতেই উঠে বসল। অচেনা নাম্বার দেখে ধরল না। রেখে দিলো কিন্তু আবার বেজে উঠতেই কথা না বলে কানের কাছে ধরল।

অনুভব গলা ঝেড়ে বলল, ” শুনলাম কেউ নাকি আমার বিয়ের খবর শুনে কান্নাকাটি করেছে।”

ইচ্ছে থতমত খেয়ে নাম্বারটার দিকে তাকাল। এমপি মশাই এই কথা কেমনে জানল? নিশ্চয়ই অহি বলছে। মনে মনে অহিকে কিছু বকাঝকা দিতে লাগল। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে অনুভব আবার বলল,” খবরটা কি মিথ্যা শুনেছি?”

ইচ্ছে রেগে গেলো। একে তো নিজের অনুভূতি বুঝতে পারছে না। দুইয়ে এই লোক খুঁইসটামি করতে তাকে কল দিয়েছে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“শুনুন নিজেকে কি মনে করেন? আপনি একটা কেনো একশোটা বিয়ে করলেও আমার কিছু যায় আসে না।”

অনুভব হেসে বলল,” একশোটা বিয়ে নয়। এক জনকেই করব যে একাই একশো।”

“তো করুন না! আমি শুনতে চেয়েছি নাকি?
” সে কে শুনতে চাইবে না?
“না।
“কিন্তু আমি বলতে চাই।

ইচ্ছে চুপ করে রইল। অনুভব মুচকি হেসে বলল,
” যদি বলি তুমি??

ইচ্ছে বড় বড় করে তাকাল। অতঃপর থমথমে গলায় বলল,” আপনার এসব রসিকতা শোনার ইচ্ছে আমার নেই। ফোন রাখুন যতসব।”

অনুভব গম্ভীর কণ্ঠে বলল, ” শোনো মেয়ে তোমার সাথে আমার রসিকতার সম্পর্ক নয়। আর আমি বিয়ে করলে তোমাকেই করব। কথাটা মাথায় গেঁথে নিও। রাখছি!

!!
অহি অনেক সময় ভাবনা চিন্তা করে রঙ্গনকে কল দিলো। রিং হতে হতে আবারও কথা গুলো সাজাতে লাগল। এই লোকের সাথে কথা বলে পারা যায়না। রঙ্গন সবে ক্রিকেট ব্যাট হাতে নিয়ে মাঠে নেমেছে। উঁহু খেলতে আসেনি। এ পথ দিয়েই যাচ্ছিল। ছোটদের খেলতে দেখে এসে ব্যাট কেড়ে নিয়ে বল করতে বলল। বাচ্চারা বিরক্ত হলেও মা’র খাওয়ার ভয়ে কিছু বলল না। কিন্তু বল আসার আগেই তার ফোনে কল আসলো। পকেটে থেকে ফোন বের দেখল অহি। একটা বাচ্চাকে ডেকে ব্যাট ধরিয়ে দিয়ে কল রিসিভ করে হাঁটতে লাগল।

“হ্যালো??
” বল?

“আপনার সাথে জরুরি কথা আছে।”

রঙ্গন টিটকারি মেরে বলল,
” অজরুরী লোকের সাথে জরুরি কথা?

অহি বিরক্ত হলো। বলল,
” আপনি চুপ করে আমার কথা শুনুন?

রঙ্গন কিছুটা অবাক হলো। অহি এভাবে কখনো বলে না। শান্ত কন্ঠে বলল, “ঠিক আছে বল?

অহি লম্বা শ্বাস টেনে বলল,
” ভাইয়া বলেছে আপনাকে ভদ্রলোক হতে। তবেই আমাদের নিয়ে ভেবে দেখবে।”

রঙ্গন না বোঝার ভান ধরে বলল,” কি ভেবে দেখবে?

“আপনার আর আমার কথা।
“কোন কথা।”

অহি চেচিয়ে বলল, “বিয়ের কথা।

রঙ্গন গম্ভীর কণ্ঠে বলল, “তোর ভাইয়ের কথা আমি কেনো শুনব? বিয়ে কি আমি তাকে করব? তুই ভদ্রলোক হতে বললে ভেবে দেখতাম। আর কিছু বলবি?”

অহি নাক টানতে টানতে বলল,” আপনি সত্যি করে বলুন তো আপনি কি আদোও আমায় ভালোবাসেন?

রঙ্গন গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

“ধর বললাম ভালোবাসি না তবে কি আমায় ফাঁ’সি দিবি! আবার যদি বলি ভালোবাসি তাহলে কি জামাই বানাবি?”

#চলবে….

||#নোট: অবশ্যই সবাই পড়বেন। গল্প প্রতিদিন রাতে পাবেন। তাই দিনের বেলায় কেউ গল্প চাইবেন না। ভাবনা চিন্তা করে লিখতে হয়। আশা করি বুঝবেন।💝||

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here