#মেঘের_আড়ালে_রোদ
#পর্ব_৪১
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
সময় কারো জন্য থেমে থাকে না। মেঘলা চলে গেছে আজ দুইদিন।
মহুয়া হাতের ঘড়িটার দিকে তাকালো। সময় দেখে নিলো আর পাঁচ মিনিট তারপরেই ট্রেন ছেড়ে দিবে।
মহুয়া দুই একবার জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো। মনে মনে বলে উঠলো, ‘ আপনি তো আসেন, একবার বলেন যেও না।’
বুকে সব না বলা যন্ত্রণা গুলো চাপা দিয়ে ছুটলো নিজের গন্তব্যে। চোখে ভিজে উঠতে চাইলে চোখ বন্ধ করে রাখলো।
কি হবে সামনে..? কিছুই জানে না মহুয়া সে ছুটছে নিজের বাড়িতে মামা মামি কি ওকে দেখে জড়িয়ে ধরবে নাকি তাড়িয়ে দিবে!! তাড়িয়ে দিলে সে কোথায় যাবে..??
বাড়ি থেকে সবাই কে বলে বের হলেও কেউ থাকতে বলেনি ছোঁয়াও না। শুধু বললো সাবধানে থেকো খুব জলদি দেখা হবে।
মহুয়া শুধু মুচকি হাসলো। এটাই হয়তো শেষ দেখা। সে আর কখনো এখানে আসবে না তাদের মুখোমুখি হবে না৷
আমেনা বেগম যখন বললো,’ আহনাফের বিয়েতে তুমি আসবে, না আসলে কষ্ট পাব।’
মহুয়া জোর পূর্বক তাকিয়ে হেঁসে ছিলো। ভেতরে মনে হচ্ছিল কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
তিন ঘন্টা পর গাড়ি থেকে নেমে রিক্সায় উঠে গেল। মনে হাজারো ভয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাড়ির দিকে।
বাড়ির সামনে এসে মহুয়া বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে।
বাড়ির আশপাশে কেমন আগাছায় ভরে গেছে। মহুয়া এক পা এগিয়ে যাচ্ছে আর বুকের ভেতর কাপছে। দরজার সামনে টুকা মারলো কয়েক বার।
অনেক সময় চলে গেল খট করে দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো মহুয়ার মামি।
মহুয়া মামিকে দেখেই ভয়ে মাথা নিচু করে নিল।
বৃদ্ধ মহিলা মহুয়াকে দেখে অশ্রুসীক্ত চোখে তাকিয়ে বললো।
~ মহুয়া!…
মহুয়া ভয়ে চুপসে গেছে।
~ মহুয়ারে তুই এতোদিন পর কই থাইকা আইলি.??
মহুয়াঃ মামি..
মহুয়া আর কিছু বলার আগেই মহুয়ার মামি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
মহুয়া থমকে গেল কিছু সময়ের জন্য। কখনো যেই মহিলা ভালোবেসে ওর হাতটাও ধরেনি আজ ওকে জড়িয়ে ধরে আছে। এটাও বিশ্বাস করতে হবে.? মহুয়া কি স্বপ্ন দেখছে!.?
মহিলা মহুয়াকে ছেড়ে টেনে ঘরে নিয়ে গেল।
মহুয়া কে বসিয়ে পানি এনে দিল।
মহুয়া মাথা নিচু করে বললো,’ মামি আমি আগে ফ্রেশ হয়ে আসি।’
মামিঃ গরম পানি করে দিব.?
মহুয়াঃ না, না প্রয়োজন নেই মামি।
মামিঃ তাহলে ফ্রেশ হয়ে আয়।
মহুয়া আশেপাশে তাকিয়ে বললো,’ মামি মামা, ভাই,বোন ওরা কই.??
মামি আঁচলে মুখে গুঁজে চোখের পানি মুছে বলে উঠলো, ‘ তুই আগে গোসল করে খেয়ে দেয়ে একটু ঘুমা তারপর তোর সাথে অনেক গল্প করবো। ‘
মহুয়া বার বার অবাক হচ্ছে মামির আচরণে। কি হয়েছে.? এটা তো মহুয়ার সেই মামি নয় এতোটা চেঞ্জ কিভাবে হলো.? মাথায় এতো এতো প্রশ্ন নিয়ে নিজের সেই ছোট ঘরটার দিকে যেতে নিলে ওর মামি ওকে আঁটকে ঘরের সবচেয়ে সুন্দর রুমটা ওকে দিল।
মহুয়া রুমটার দিকে তাকিয়ে ভাবলো,’ কতো শখ ছিল একদিন এই রুমে ঘুমানোর কখনো আশেপাশেও আসতে দিত না মিম আর আজ এই রুম মামি আমাকেই দিয়ে দিল!!.? কিছু তো একটা হয়েছে না হলে মামি এতোটা পাল্টে যেত না। বাকিরা সবাই কোথায়.?
____________
অফিস থেকে বাসায় আসতেই রায়হান সাহেব মেঘলা কে ডাকলো।
মেঘলা ফ্রেশ হয়ে এসে রায়হান সাহেবের পাশে বসলো।
রায়হান সাহেবঃ কি হয়েছে তোমার.?? ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করছো না কারো সাথে কথা বলো না।
মেঘলাঃ অফিসে ঝামেলা তাই ঠিক ভাবে সময় পাচ্ছি না।
রায়হান সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ আমাকে তুমি কাজ, অফিস সম্পর্কে শিখিও না মেঘলা। যা হয়েছে ভুলে যাও। তোমার আম্মু কষ্ট পায় তোমাকে এভাবে দেখলে।’
মেঘলা কিছু না বলে উঠে নিজের রুমের দিকে চলে গেল। রায়হান সাহেব তাকিয়ে রইলো মেয়ের যাওয়ার দিকে।
মেঘলা রুমে এসে দরজা বন্ধ করে কফির মগ হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে গেল।
আজ দুই দিন শ্রাবণ একবারও কল দেয়নি। ওর কি একবারও মেঘলার কথা মনে পড়েনি? মেঘলা কি শ্রাবণের মনে একটুও জায়গা করে নিতে পারেনি..? চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে মেঘলা চোখের পানি মুছে মোবাইল হাতে নিয়ে মহুয়া কে কল দিল মোবাইল বন্ধ। আজ মহুয়ার চলে যাওয়ার কথা মেয়েটা চলে গেছে.? মামা মামি কি ওকে বাসায় জায়গা দিয়েছে.?? মেঘলা চুপচাপ বসলো খুব টেনশন হচ্ছে মেয়েটার জন্য।
মেঘলা বসে হেলান দিয়ে আকাশের তাঁরা গুণতে শুরু করলো। ছোট থেকেই মেঘলার এটা অভ্যাস। যখন সে ভীষণ চিন্তিত থাকে তখনি আকাশের তাঁরা গুণতে শুরু করে।
দূর থেকে এক জোরা চোখ তাকিয়ে আছে মেঘলার বারান্দার দিকে। মেঘলা কি তা জানে? উঁহু জানে না। প্রতিরাতে শ্রাবণ অফিস থেকে ফেরার পথে তাকিয়ে থাকে মেঘলার বারান্দার দিকে একবার চোখের দেখা দেখে চলে যায় নিজের বাড়িতে।
_______________
মহুয়া ঘুমানোর চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারলো না৷ রুম থেকে বের হয়ে পুরো বাড়ি একবার ঘুরে দেখলো এক বছরে বাড়িটা কতোটা পাল্টে গেছে।
মামির রুমে উঁকি দিয়ে দেখলো মামি জায়নামাজে বসে আছে।
মহুয়া হাসলো এই প্রথম মামিকে জায়নামাজে দেখলো।
চলে যেতে নিলে উনি ডাকলেন। মহুয়া রুমে গিয়ে চুপচাপ বসলো।
মামিঃ কোথায় ছিলি এতোদিন মহুয়া.? কেমন আছিস.?
মহুয়াঃ আলহামদুলিল্লাহ মামি ভালো।
মামিঃ কোথায় ছিলি বললি না। আচ্ছা যখন তোর মন চায় বলিস।
মহুয়াঃ মামা আর….
মহুয়া আর কিছু বলার আগেই ওর মামি বলে উঠলো , ‘ তোর মামা আর পৃথিবীতে নেই। তুই পালিয়ে যাওয়ার পর ছেলে পক্ষ পাঁচ লাখ টাকা দাবী করে এক টাকাও কম নিবে না। তোর মামা তো পাঁচ লাখ এনে খরচ করে ফেলে ছিল তখন হাতেও টাকা ছিল না বাধ্য হয়ে তোর জায়গায় মিম কে বিয়ে দিয়ে দেই। অন্যের সন্তানের জীবন নষ্ট করতে গিয়ে আল্লাহ আমাকে বুঝিয়ে দিল আল্লাহ ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেননা। মেয়ের টেনশনে সারাদিন চুপচাপ হয়ে গেল তোর মামা ঠিক তখনি দুই ছেলে না জানিয়ে বিয়ে করে নিয়ে আসলো কয়েকদিন আমাদের সাথেই ছিল তারপর ওদের বউ নিজেদের সাথে নিয়ে শহরে চলে গেল। আমাদের আর খুজ খবর নেয়নি।প্রথম প্রথম এক দুই বার কল দিয়ে খুঁজ নিলেও এক সময় একদম যোগাযোগ বন্ধ করে দিল। মিম একদিন কান্নাকাটি করে পালিয়ে আসলো আমাদের বাড়ি। প্রতিরাতে মাইর খাইতে খাইতে আমার মাইয়াডার মুখের দিকে তাকানো যায় না। ওরা পাওয়ারফুল লোক পুলিশ নিয়ে এসে ওরে নিয়ে গেল। ৬০বছরের আধা বুড়া স্বামী আমার মেয়েটার বয়স তো ১৮ ও হয় নাই। মেয়ের টেনশনে টেনশনে তোর মামা স্টোক করে ঘুমেই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। দুই ছেলে আসলো কিন্তু বউরা পরের মেয়ে তারা আসলেই কি না আসলেই কি। মেয়েটাও বাবার শেষ মুখ দেখতে পারলো না ওরা আর আসতে দেয়নি কোনো যোগাযোগ রাখেনি।
শেষ করে মহুয়ার দিকে তাকালো। মহুয়ার চোখে জলে ভরে উঠলো।
উনি চোখের জল মুছে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ এইগুলো আমাদের পাপের শাস্তিরে মহুয়া। অনেক অন্যায় করেছি তোর সাথে কোন মুখে ক্ষমা চাইবো। আমাদের ঘরের লক্ষী বের হয়ে যেতেই সুন্দর গুছানো সংসারটা ভেঙে গেল।
মহুয়া আর এক মুহূর্ত বসলো না বের হয়ে রুমে চলে গেল। কেমন জেনো সব কিছুর জন্য নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে। ওইদিন না পালালে মিমের জীবন সবার জীবন এমন হতো না।
____________
সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে মহুয়া বাহিরে বের হতেই অবাক হলো। চোখ কচলে আবার তাকালো।
মেঘলা হেঁসে এসে মহুয়া কে জড়িয়ে ধরলো সাথে ছোঁয়া।
মহুয়া দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো ওদের।
ওদের ফ্রেশ হতে দিয়ে মহুয়া আসলো রান্না ঘরে ওর মামি বারবার নিষেধ করলো। মহুয়া উনাকে বের করে দিয়ে নিজের সকালের নাস্তা তৈরি করে ওদের আগে খাবার দিল।
ছোঁয়াঃ মেহু তোদের বাড়িটা খুব সুন্দর।
মহুয়া হেঁসে বললো,’ তোমাদের বাড়ির এক কোনা হবে।”
ছোঁয়াঃ এভাবে বলো না সুন্দর ভীষণ ছোট হলেও।
মেঘলা চুপচাপ খাচ্ছে,’ তোমাকে বার বার কল দিয়ে বন্ধ পাচ্ছিলাম। খুব টেনশন হচ্ছিলো।’
মহুয়ার মামির দিকে তাকিয়ে চুপ করে গেল। ওর টেনশন ছিল মহুয়াকে বের করে দিল নাকি মারধর করলো।হয়তো মোবাইল নিয়ে আঁটকে রেখেছে। অনেক কিছু ভেবে ছোঁয়া কে কল দিয়ে চলে আসলো। মহুয়াকে ভীষণ আপন মনে হয়।
মহুয়া তো ভীষণ খুশি ওদের পেয়ে সাথে মামিও।
মামিকে এতোটা ভালো আচরণ করতে দেখে ছোঁয়া বলে উঠলো, ‘ কি ব্যাপার এতো ভালো হলো কিভাবে.? ‘
মহুয়াঃ রাতে সব বলবো।
_______
মেঘলা ছোঁয়া এসেছে দুইদিন। দুইদিনে মামি ওদের অনেক আপন করে নিয়েছে নিজের মেয়ের মতো আদর যত্ন করেছে।
মেঘলা বললো খুব জলদি ওরা মিমের শশুর বাড়ি যাবে কিন্তু তার আগে একটা জায়গায় যেতে হবে আজ। মিমের ঝামেলা শেষ করবে বলে কথা দিল।
তিনজন মিলে রেডি হয়ে বের হলো। মেঘলা মহুয়াকে একটা কালো শাড়ি পড়িয়ে দিল সাজগোজ ছাড়াই ভীষণ সুন্দর লাগছে৷
নিজেদের গন্তব্যে এসে মেঘলা মহুয়াকে নিয়ে ঢুকলো। প্রায় রুম গুলো অন্ধকার।
মহুয়াঃ এখানে তো…
মেঘলাঃ চুপপ এখন কোনো কথা হবে না।
মহুয়াকে একটা রুমে নিয়ে গেল।
লাইট জ্বালাতেই নিচে গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকতে কাউকে দেখে বুক ক্ষনিকের জন্য কেঁপে উঠল।
মহুয়াঃ পলাশ।
রুমে লাইটের আলো পেয়ে পিটপিট করে তাকালো পলাশ। চোখের সামনে মহুয়াকে দেখে প্রথম চিনতে পারেনি।
ছোঁয়াঃ কে উনি.?
মেঘলাঃ উনার পরিচয় অনেক কয়টা বলবো! তার থেকে ভালো এখন শুধু দেখে যাও।
পলাশ মহুয়াকে দেখে শুয়া থেকে উঠে বসে তাকিয়ে থাকে। দাঁড়িয়ে মহুয়াকে ছুতে আসলে মহুয়া কয়েক পা পিছিয়ে যায়।
মহুয়া রুম থেকে বের হয়ে যেতে নিলে মেঘলা হাত ধরে বলে উঠে,’ বাকি সবার শাস্তি আমি দিয়েছি। কাউকে ছাড় দেইনি কিন্তু এই বিশ্বাসঘাতকের শাস্তি তুমি নিজে দিবে।মহুয়া ভুলে গেলে হবে না সে তোমার সাথে অন্যায় করতে না চাইলেও হাজারো মেয়ের স্বপ্ন ইজ্জত শেষ করেছে ওদের নরকে ঠেলে দিয়েছে।
মহুয়া পেছন ফিরে পলাশের দিকে তাকালো। চুল বড়বড়, দাঁড়ি মুখ ভর্তি হয়ে গেছে, পড়নের কাপড় ছিড়া কেউ দেখলে পাগল ছাড়া কিছুই বলবে না।
মহুয়া শক্ত চোখে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ ওর খাবার বন্ধ করে দাও। প্রতি সপ্তাহে একটা রুটি আর এক গ্লাস পানি দিবে। এভাবে যতোদিন বাঁচে। খাবারের যন্ত্রণার চেয়ে পৃথিবীতে এর চেয়ে বড় শাস্তি আমি মনে করি কিছুতেই নেই।’
পলাশ আজ ছটফট করলো না। হয়তো নিজের ভুলগুলো আজ চোখে পড়েছে।
এখান থেকে বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়াতেই ছোঁয়া বলে উঠলো, ‘ শহরে যেহেতু এসেছি চলো একটু শপিং করে যাই। ‘
মেঘলাও না করলো না মহুয়ার মন খারাপ ইচ্ছে না থাকলেও ওদের সাথে গেল।
শপিং মলের সামনে গিয়ে থমকে গেল সবাই। মেঘলা মাক্স দিয়ে মুখ ঢেকে নিল আর মহুয়া চুলগুলো সামনে এনে কেটে পড়তে চাইলো তবুও ওদের দেখে ফেললো নির্জন।
নির্জনঃ আরেএ আমার দেখো কি ভাগ্য দুই ভাবি আর সাথে ব…..
আহনাফ ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই নির্জন হেঁসে বললো, ‘ বোন আরকি। দুই ভাবি আর উনাদের বোনের সাথে দেখা হয়ে গেল।’
আহনাফঃ চোখে কম দেখলে আমার কাছে আয় চশমা দিয়ে দিব ওটা উনাদের বোন নয় আমাদের বোন।
নির্জন মুখ ভেংচি কাটলো।
শ্রাবণ হেঁসে বললো,’ দিন দিন পুলিশে গিয়ে নিজের মধ্যে মেয়েলি সব ভাব নিয়ে নিচ্ছিস। ‘
নির্জনঃ তোমরা দুইজন আমার পিছু না দৌড়ে নিজের বউদের ধর।
আহনাফ ছোঁয়া কে ঢাক দিতে ছোঁয়া থেমে গেল।
মহুয়া মেঘলা চলে গেল ভেতরে।
ওরা কিনা কাটা শেষ করে বের হলো আহনাফ বা শ্রাবণ কেউ ওদের সাথে কথা বললো না ডাকও দিলো না।
নির্জন এসে টুকটাক ফাজলামো করলো।
ছোঁয়া ওদের বিদায় জানিয়ে মেঘলা মহুয়ার সামনে গাড়িতে উঠে গেল।
রাগে দুঃখে মেঘলার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। খুব সুন্দর করে সেই জল আড়াল করে নিলো মেঘলা।
মহুয়া চুপচাপ বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
একবারও তাকালো না আহনাফ। তাহলে কি সব ক্ষনিকের ভালো লাগা ছিল!.? বিয়ে করে নিচ্ছে পুরুষ মানুষ হয়তো এমনি। মনে মনে কতো কথা ভেবে নিল মহুয়া।
বাড়িতে এসেও তেমন কথা বললো না কেউ। ছোঁয়া বুঝতে পারছে মহুয়া মেঘলার মুখ এমন ভার কেন।
মামি সবাই কে ডেকে গেল কিন্তু কেউ আর নামলো না খেতে।
রাতে মোবাইল বন্ধ করে ঘুমিয়ে গেল মহুয়া।
মেঘলার ঘুম আসছে না রুম থেকে বের হয়ে পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখলো। মামির রুমে উঁকি দিয়ে দেখে উনি জেগে আছে। মহুয়া হেঁসে বললো,’ মামি কি করছেন!.??’
মামি একটা এলবাম বন্ধ করে বললো, ‘ আসো মেঘলা।’
মেঘলা ভেতরে গিয়ে টুকটাক কথা শুরু করলো। দুইজন কয়েক দিনে বেশ মিশে গেছে। মামি বললো,’ চলো তোমাকে এই বাড়ির সবার ছবি দেখাই। এই এলবাম অনেক পুরোনো মহুয়া কখনো দেখেনি। ‘
মেঘলাঃ এটাতে ওর আব্বু আম্মুর ছবি আছে.?
মামিঃ হুম
মেঘলাঃ কেন দেখেনি কখনো.?
মামিঃ আমি এটা কখনো বের করিনি। আজকাল প্রায় বের করা হয় একা একা থাকি মন খারাপ হলে ছবি গুলো দেখি আর নিজের পাপের জন্য মাফ চাই।
মেঘলা আগ্রহ নিয়ে এলবাম হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখতে শুরু করলো।
অনেক পুরোনো ছবি চোখে পড়ছে। আসতে আসতে এলবামের মাঝ পৃষ্ঠা গুলোতে এসে চোখ আটকে গেল মেঘলার পাগলের মতো একের পর এক পৃষ্ঠা পাল্টাতে শুরু করলো। মামির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ এই বাচ্চা মেয়েটা কে.? আর পাশের মহিলা পুরুষটি কে…???’
মামি কাঁপা কাঁপা হাতে হাতবুলিয়ে বললো,’ এটা মহুয়ার বড় বোনছিল আর উনারা ওর আব্বু আম্মু। একটা এক্সিডেন্টে বড় বোন মাহি আর ওর আব্বু মা-রা যায় এই কথা শুনেই ওর মা ও তিনদিনের দিন ঘুমের মধ্যে না ফেরার দেশে চলে যায় মহুয়া একদম এতিম হয়ে যায় তখন আমি ওকে বুকে আগলে নেই। ‘
মেঘলা কথা বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না একদম চুপ হয়ে গেল অথচ শরীর কাঁপছে, ঠোঁট, চোখ কাপছে। কাঁপা কাঁপা পায়ে রুম ছেড়ে নিজের রুমে চলে আসলো। মহুয়া গভীর ঘুমে মেঘলা গিয়ে ওর পাশে বসে তাকিয়ে রইলো। কাঁপা কাঁপা হাত মহুয়ার মাথায় রেখে বলে উঠলো, ‘ সেই পিচ্চি বোনটা আজ এতো বড় হয়ে গেছে। চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি পড়লো মহুয়ার গালে।’
চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।