শুধু_তোমাকেই_চাই #শারমিন_হোসেন #পর্ব৪৪ (বর্ধিতাংশ)

0
396

#শুধু_তোমাকেই_চাই
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব৪৪ (বর্ধিতাংশ)

এভাবেই প্রতিটা দিন কা’টতে থাকে।
কে’টে গিয়েছে আরো চারটা বছর,,
কয়েক ধাপে পদোন্নতির মাধ্যমে জারিফ এডিসি হয়ে ময়মনসিংহে বদলি হয়েছে।মাস খানেক হবে জারিফরা ময়মনসিংহে এসেছে।জাহারা জয় খুব সুন্দর করে কথা বলে।তবে খুব দুষ্টামিও করে দু’জনে।আজ শুক্রবার ছুটির দিন।লিয়া জাহানারা বেগমের সাথে কিচেনে রান্না করতে ব্যস্ত।বেলা এগারোটা বাজতে চলছে।জাহারা গোলাপি ফ্রক পড়েছে। চুলগুলো দুইপাশে ঝুঁটি করা।জাহারা রুম থেকে বেরিয়ে কিচেনের দিকে আসতে যায়।সেইসময় জারার সাথে দেখা হয়।জারা জাহারাকে দেখে দুষ্টুমি করে বলে,,”হারিয়ে পাওয়া জাহারা।এদিকে কোথায় যাচ্ছো শুনি?

জাহারা নাক মুখ কুঁচকে গম্ভীর মুখায়ব করে ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,,”বলবো না।তোমাকে একদম বলা যাবে না। ফুপ্পি তুমি খুব খুউব পতা।তুমি আমাকে এভাবে ডাকো কেনো?আমার এত্ত সুন্দর নাম আছে।তাও তুমি হারিয়ে পাওয়া কেনো বলো আমাকে।আমি আমার বাবাকে বলে দেবো।আমার বাবা তোমাকে আচ্ছা করে বকে দেবে,হুহ।”

জারা কথাগুলো শুনছে আর মিটমিট করে হাসছে। জারা ঠোঁট চেপে হাসে। হাঁটু গেড়ে জাহারার সামনে বসে শান্ত গলায় বলে,,”তুমি তোমার বাবাকে বলে আমাকে বকা খাওয়াবে।ওকে ব্যাপার না।তবে আমি কিন্তু তোমাকে হারিয়ে পাওয়াই বলবো,হু।এই দেখ তোমার নামটা জাহারা।তুমিই ভেবে দেখো।তোমার নাম জাহারা কেনো হলো?”

জাহারা ছোট ছোট চোখ করে অসহায় ফেস করে ভাবতে থাকে। অবশেষে ভেবে কোনো কিছু না পেয়ে ভারী কন্ঠস্বরে বলে,,”কেনো?”

জারা নিঃশব্দে হেসে দুষ্টুমির স্বরে বলে,,”তোমার বাবা তো তোমার মাম্মাম কে হারিয়ে ফেলেছিলো। হারানোর অনেক অনেক দিন পর।তোমার মাম্মাম কে ফিরে পেয়েছিলো ‌।তারপর তোমাকে পায়।সেইজন্য জাহারা রাখে।যা হারিয়ে পাওয়া।তাই জাহারা।এবার বুজেছো তুমি?”

জাহারা কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করে উঠলো,,”তাহলে ভাইয়ের কথা বলো।ভাইকেও তো বাবা পেয়েছে।”

জারা প্রশ্ন শুনে থতমত খেয়ে যায়। কিয়ৎক্ষন ভেবে নিয়ে বলে,,”ভাইয়ের নাম জয়। তোমার বাবার ভালোবাসার জয় হয়েছিলো তাই জয়।”

জাহারা মুখ ভেংচি কে’টে যেতে যেতে বলে,,”তুমি মিথ্যে বলছো।তুমি পতা তাই মিথ্যে বলছো। মাম্মাম আমাকে ভাইকে বলে মিথ্যে বলা মহাপাপ।মিথ্যে বললে আগুনে পুড়তে হয়। আল্লাহ শাস্তি দেয়।আমি আমার মাম্মামের কথা বিশ্বাস করি।আমি তোমার বলা সব মিথ্যা কথা মাম্মামকে বলে দেবো,হুহ।”

জারা জাহারার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শব্দহীন হাসে।
লিয়া কিচেনে রান্না করছিলো।সেই সময় জাহারা গিয়ে লিয়ার একহাত ধরে টানতে টানতে বলে,,”মাম্মাম।তুমি জানো। ফুপ্পি খুব পতা।আমাকে আবার হারিয়ে পাওয়া বলেছে।তুমি ফুপ্পি কে খুব করে বকে দেবে হ্যা।”

লিয়া জাহারার দিকে একপলক তাকিয়ে মৃদু হাসে।তারপর শান্ত কন্ঠে বলে,,”জাহারা তোমার ফুপ্পি তোমার সাথে এমনি মজা করে।তোমাকে রাগাতে এমনটা বলে।তুমি তো গুড গার্ল।আর গুড গার্লরা কখনো সহজেই রেগে যায় না।বুঝলে এবার।”

জাহারা হাসি মুখে বলে,,”ওকে মাম্মাম।”

“আচ্ছা মামনি।তুমি রুমে গিয়ে ভাইয়ের সাথে খেলা করো কেমন।আমি কাজ শেষ করে এসেই তোমাদেরকে গোসল করিয়ে দেবো।”

লিয়ার কথা শুনে জাহারার কিছু মনে পড়ে।সাথে সাথে চঞ্চল কন্ঠে বলে,,”মাম্মাম বাবা তোমাকে ডাকছে তো।তুমি রুমে চলো। এক্ষুনি এক্ষুনি যেতে হবে।”

লিয়া বিরক্তিকর কন্ঠে বলে,,”জাহারা আমি কাজ করছি তো।কাজ শেষ হলেই যাবো।তাই আর কথা বলে না সোনা।তুমি ভেতরে যাও।”

এরমধ্যে জাহানারা বেগম বলেন,,”লিয়া তুমি যাও।দেখো দাদুভাই আবার কি করছে।আমি আছি তো।আর চারু আছে আমাকে হেল্প করবে।তুমি ছেলে মেয়েকে দেখো।”

লিয়া রুমে গিয়ে দেখে জারিফ বিছানার পাশে দাড়িয়ে আছে।জয় বিছানার মাঝখানে বসে আছে।লিয়া রুমে যেতেই জয় এক দৌড়ে এসে লিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে,,”মাম্মাম দেখো বাবা আমাকে জোর করছে।বাবা বলছে আমার চুল কাটাতে সেলুনে নিয়ে যাবে। আমি চুল কাটতে চাইনা মাম্মাম।এমনিতেই আমার চুলগুলো বোনের থেকে অনেক ছোট।বোনের চুল আমার থেকে বড়।চুল কাটলে পড়ে আমি বোনের থেকে আরো পিছিয়ে পড়বো।”

কথাটা শুনে লিয়ার হাসি পাচ্ছে।জারিফ আধা ঘন্টা যাবৎ জয়কে বলছে সেলুনে নিয়ে যাবে।জয় তখন থেকে একই কথা বলে চলেছে।চুল কাটলে বোনের থেকে পিছিয়ে যাবে।বোনের থেকে কোনো দিক হতেই পিছাতে চায়না।জারিফ বেজায় বিরক্ত ছেলের উপর।লিয়া একহাত জয়ের চুলের মধ্যে চালনা করে মিষ্টি গলায় বলে,,”জয় সোনা এই দেখ, মাম্মামের চুলগুলো কত্ত বড়। আর বাবার চুল দেখো। তোমার বাবার চুলতো ছোটো।তোমার বাবা তো নিয়ম করে চুল কাটে।তোমার বাবা কি কখনো এরকম টা বলেছে।শুনেছো কখনো তুমি?”

জয় দুদিকে মাথা নাড়ায়।যার অর্থ”না শোনেনি “লিয়া তখন বলে,,”এই যে তোমার চুলগুলো চারপাশ দিয়ে এলোমেলো হয়ে পড়েছে।দেখতে একদম ভালো লাগছে না।তুমি যদি সেলুনে গিয়ে সুন্দর করে হেয়ার কাটিং করো তবে তোমাকে দেখতে আরো বেশি সুন্দর লাগবে।এককথায় হেব্বি লাগবে।সবাই বলবে ছেলেটা কত সুন্দর মিষ্টি দেখতে।এবার তুমি কি করবে ভেবে দেখো।তুমি তোমার বাবার সাথে সেলুনে যাবে?কি যাবে না?”

লিয়ার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই জয় জারিফের হাত ধরে ঝাঁকিয়ে বলে,,”বাবা দ্রুত চলো।আমি চুল কাটতে চাই।চুল কাটলে তখন সবাই আমাকে বোনের থেকে সুন্দর লাগছে তাই বলবে।”

জারিফ ছেলেকে কোলে তুলে নেয়।মৃদু হাসে। ঠোঁট প্রসারিত করে বলে,,”জয় বাবা বোনের সাথে কম্পিটিশন কিসের তোমার।তুমিও দেখতে খুব মিষ্টি।বোনও খুব মিষ্টি।তোমরা দুজনেই খুব ভালো।আর তোমাদের দুজনকেই সমান আদর করি।তাই দু’জনের মধ্যে আর কম্পিটিশন নয়।”

জয় ঘাড় নাড়িয়ে হ্যা সূচক উত্তর দেয়।জারিফ লিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,,”থেংকিউ।আধা ঘন্টা ধরে জয় কে রাজি করাতে পারছিলাম না।আর তুমি তো পাঁচ মিনিটেই রাজি করিয়ে দিলে।তুমি তো দেখছি সুপার মম প্রতিযোগিতায় গেলে চ্যাম্পিয়ন হতে।”

লিয়া ভাব নিয়ে বলে,,”আই নো।আপনিও ট্রাই করেন সুপার ড্যাড হওয়ার। সপ্তাহে তো দুইটা দিন বাসায় থাকেন।এই দুদিন তাও যদি বাচ্চাদের কে ঠিকমতো সামলাতে না পারেন।আমি তো ভাবছি শুক্র,শনি এই দুইদিন আমি পুরো ছুটি নেবো।আপনি বাচ্চাদের খাওয়াবেন,গোসল করাবেন, এভরিথিং।”

জারিফ দৃঢ় কন্ঠে বলে,,”তুমি ছাড়া আমার বাচ্চাদের কে সামলো কারো পক্ষে সম্ভব নয়।এরা দু’জনেই সমান জেদি।আমার কাছে তো এদের আহ্লাদ,ডিমান্ড আকাশ ছুঁয়ে যায় সবসময়।তাই আমার দ্বারা এদেরকে সামলানো পসিবেল না।”

জয়ের হাত ধরে জারিফ বাইরে যাওয়ার সময় জাহারার গালে একটা চুমু খেয়ে বলে,,
“প্রিন্সেস তুমি মাম্মামের কাছে থাকো।আমরা দ্রুতই বাসায় ফিরে আসবো।আর প্রমিজ করছি বিকেলে তোমাদের সবাইকে ঘুরতে নিয়ে যাবো।সো মন খা’রাপ করো না।এবার হ্যাপি তো।”

জাহারা দাঁত বের করে হেসে বলে,,”ওকে বাবা। এত্ত এত্ত লাভ ইউ। উম্মাহ।”

[চলবে…ইন শা আল্লাহ]

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং।ধন্যবাদ সবাইকে।)

#এপ্রুভ_প্লিজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here