#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_২১ (বোনাস পর্ব)
#মেহরিন_রিম
নিজের ঘরের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে পায়চারি করছে ইশা। তার মুখভঙ্গি দেখে যে কেউ স্পষ্টভাবে বুঝে যাবে যে সে কোনো বিষয় নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করছে।
ঘড়িতে এখন সকাল নয়টা বাজে। ইশা ঘুম থেকে উঠেছে আরো এক ঘণ্টা আগে। গতকাল রাতে সেই আননোন নাম্বার থেকে যে ফোন করেছিল তার কণ্ঠস্বর ইশার কাছে বেশ পরিচিত মনে হয়েছে,রাতে ঘুমের ঘোরে থাকায় তা খুব বেশি লক্ষ্য না করলেও সকালে উঠেই বিষয়টা নিয়ে ভাবছে ইশা। আবার লোকটার কথাও বেশ অদ্ভুত লেগেছে ইশার কাছে,নিজে কল দিয়ে কিনা বলছে আমিই কল দিয়েছি! নাহ,এত চিন্তা মাথায় থাকলে তার পেটের ভাত হজম হবেনা।
ধাপ করে গিয়ে বিছানায় বসে পরে ইশা। নম্বরটা আরো কয়েকটা পড়ে নেয়,এতক্ষনে তার নম্বরটা প্রায় মুখস্তই হয়ে গেছে। ইশা নিশ্চিত সে এই নম্বর আগে কখনো দেখেনি, অবশেষে উক্ত নম্বরে সে আবারো কল করলো।
আদৃত এখানে এক বিশেষ মিটিং এ এসেছে, তবে অপর পক্ষের লোকেরা বিভিন্ন কারণে লেইট করছে। ফাইনাল ডিসিশন হয়েছে আজ বিকেলে মিটিং হবে।
আদৃত এমনিতে রোজ সকালেই ঘুম থেকে উঠে পড়ে। কাল রাতে যেহেতু অনেক দেড়িতে ঘুমিয়েছে তাই আজ একটু দেড়িতেই ঘুম থেকে উঠবে সে। এতক্ষনে তার ঘুম বেশ হালকা হয়ে এসেছে, ফোনকলের আওয়াজে ঘুমটা পুরোপুরিই ভেঙে যায় তার। উঠে বসে পাশ থেকে ফোনটা হাতে নিতেই দেখে ইশার কল, এইরে!মেয়েটা কিছু বুঝে গেলোনা তো? আদৃত ফোনটা রিসিভ করার আগেই কেটে গেলো। হাফ ছেড়ে বাঁচলো আদৃত, ইশা যদি জেনে যায় কলটা ও করেছিল তাহলে হাজারটা প্রশ্ন করবে যার উত্তর আদৃত নিজেও ঠিককরে জানে না।
তবে ইশার মাথায় যখন একবার চিন্তা ঢুকেছে তখন সে লোকটা কে তা জেনেই ছাড়বে। একবার রিসিভ হয়নি তো কি হয়েছে? আবারো একই নম্বরে কল করলো ইশা।
আদৃত কিছুটা নিশ্চিন্ত হওয়ার আগেই আবারো ফোনটা বেজে ওঠে। এখন আর কিছুই করার নেই আদৃত এর,বাধ্য হয়ে ফোনটা রিসিভ করলো সে।
_হ্যালো..
_আপনি সেই লোকটা না যে আমাকে রাতে কল করেছিলেন?
আদৃত কিছু না জানার ভান ধরে বলল,
_হুয়াট? কি বলছেন এসব?
_দেখুন ইয়ার্কি করবেন না। আপনার কণ্ঠস্বর টা আমার ভীষণ চেনা চেনা লাগছে,আপনি কে বলুন তো?
_ও আপনি সেই রাতের মেয়েটা? এক্স্যাক্টলি,আমারো আপনার কণ্ঠ খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। আপনি কে সেটা আগে বলুন।
_আমি কে মানে? আমি ইশা,আপনিই তো কল করলেন আমায়।
_ওওও….তুমি! এই মেয়ে তুমি আমার নম্বর পেলে কোথায়? আর মাঝরাতে কল দিয়ে আমায় বিরক্ত করছিলে কেন?
ইশা এতক্ষনে বুঝতে পারে এটা আদৃত। তবে তার কথাবার্তা কিছুই ইশার মাথায় ঢুকছে না।
_কি আবোলতাবোল বলছেন আপনি? আমি আপনার নম্বর পাবো কোথায়? আমি তো তখন শান্তিতে ঘুমোচ্ছিলাম।
_আচ্ছা,তাহলে তুমি বলতে চাইছো আমি তোমাকে কল করেছি! আরে তুমি ই তো প্রথম এ কল করলে তাই আমি কলব্যাক করলাম। আমি তোমায় ঐ রাতের বেলা কেন কল করতে যাবো শুনি?
ইশাও চিন্তা করে,আসলেই তো,উনি আমায় খামোখা কল করতে যাবেন কেন?
_এই মেয়ে,চুপ করে আছো কেন?
_হ্যা! না মানে আমার নআ মাথাটা ঘুরছে,আপনার কোন কথাই তো বুঝতে পারছি না। আপনি ই বা আমায় কল করবেন কেন? কিন্তু বিশ্বাস করুন,আমি সত্যিই আপনাকে কল করিনি।
_হুম বুঝলাম।
_কি বুঝলেন?
_তুমি তো বললে তুমি তখন ঘুমোচ্ছিলে। এখন বিষয়টা হয়তোবা এমন হয়েছে যে,তুমি ঘুমের মধ্যে কোনো স্বপ্ন দেখতে দেখতে সেই স্বপ্নের মাঝেই এই নম্বরে কল করেছিলে। আর আনফরচুনেটলি নম্বরটা আমার হয়ে যায়।
ইশা মাথায় কিছুই ঢুকলো না। সে অবাক হয়ে বললো,
_কিন্তু আমার তো এমন কিছু মনে নেই।
_লিসেন,আমরা অনেক সময় ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখি কিন্তু ঘুম ভাঙার পর স্বপ্নের কিছুই আমাদের মনে থাকেনা। তোমার ক্ষেত্রেও হয়তো তেমনই হয়েছে।
_কিন্তু আমিতো…
_আমি খুবই বিজি এখন সো তোমার সাথে ফালতু কথা বলার টাইম আমার নেই। আর হ্যা, যেহেতু তুমি ঘুমের মধ্যে আমায় কল দিয়েছিলে তাই আমার ঘুম ভাঙিয়ে আমায় ডিস্টার্ব করার পরও তোমাকে মাফ করে দিলাম। সরি বলতে হবেনা।
_আরে আরে,আমি সরি কেনই বা বলবো!.. যাহ কেটে দিলো ফোনটা!
আদৃতের কথাগুলো সব মাথার উপর দিয়ে গেছে ইশার। ওর কথাই মেনে নেবে কিনা এই নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে। কল হিস্টোরি চেক করে দেখার বুদ্ধিতা আর তার মাথায় সেই সময় এলোনা।
ফোনটা বিছানার উপর ফেলে নিয়ে বললো,
_আমার স্মৃতিশক্তি কি এতই লোপ পেলো সে স্বপ্নের বিন্ধুমাত্র কিছু আমার মনে নেই, স্ট্রেঞ্জ! উনি কি আমাকে বোকা বানাচ্ছেন? অবশ্য আমাকে বোকা বানিয়ে ওনার কি লাভ! ওনার কথাই বোধ হয় ঠিক তাহলে।
_একা একা বিড়বিড় করে কি বলছিস তুই?
ইশার ঘরে ঢুকে কথাটা বললো ফাইজা। ইশা উঠে দাড়িয়ে ফাইজার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
_আচ্ছা আপু স্বপ্নের কথা আমাদের কিছুই মনে থাকবেনা এমনটা হতে পারে?
_হুম,আমি ই তো অনেক সময় রাতে কি স্বপ্ন দেখেছি সকালে উঠে মনে থাকে না।
_ওওওও…. (কিছুটা টেনে বলল কথাটা)
_তোর এই অদ্ভুত প্রশ্ন ছাড়তো। খুশির খবর শোন।
_কি খুশির খবর?
_অনেকদিন দূড়ে কোথাও যাওয়া হয়না,তাই ছোট আব্বু বলেছে এবার দূড়ে কোথাও ঘুড়তে যাবে।
_কোথায়?
_সিলেট, দুপুরে লাঞ্চ করেই বের হবো আমরা।
মাথায় থাকা সব চিন্তা এক নিমিষে দূড়ে সরে গেলো ইশার। খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলল,
_সত্ত্যিইইইই! ইশ আমি কতদিন ধরে সিলেট যাওয়ার কথা ভাবছিলাম।
_হ্যা রে বাবা সত্যি। এখন না লাফিয়ে ব্যাগ গোছানো শুরু করে দে।
_হ্যা হ্যা অবশ্যই।
আদৃতের কথা একপ্রকার ভুলেই গেলো ইশা। মনের আনন্দে প্যাকিং শুরু করে দিলো সে।
___
শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে নিজের চুল মুছতে লাগলো আদৃত। ইশার কথা ভেবে এখনো হাসি পাচ্ছে তার, কি বোকা মেয়ে! আদৃত বললো আর সে বিশ্বাস করে নিলো।
ফোনকলের আওয়াজে আয়না থেকে চোখ সরিয়ে বিছানার দিকে তাকায় আদৃত। স্ক্রিনে ভেসে ওঠা নম্বরটা দেখেই মুখমণ্ডল জুড়ে বিরক্তি ফুটে ওঠে আদৃতের।
বিছানা থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করতেই অপর পাশে থাকা লোকটি বলে ওঠে,
_সরি স্যার,ডিসটার্ব করলাম আসলে একটা প্রবলেম হয়ে গিয়েছে স্যার।
_আবার কি প্রবলেম?
_আসলে আমাদের স্যার সকাল থেকে পাঁচ মিনিট পরপর টয়লেট থেকে কামিং এন্ড গোইং। বুঝতেই তো পারছেন স্যার,এখন এর মধ্যে মিটিং টা কি করে করবেন বলুন।
_দুদিন ধরে মিটিং এর ডেট পিছিয়ে চলেছেন আপনারা।
_খুবই দুঃখিত স্যার,কিন্তু আমার হাতে তো কিছুই নেই।
আদৃত বিরক্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
_মিটিং কবে দিতে পারবেন?
_এইতো স্যার একটু সুস্থ হলেই, কাল বা পরশুর মধ্যেই।
_ওকে
বিরক্ত হয়ে ফোনটা রেখে দিলো আদৃত। এই মিটিং এর জন্য চারটা দিন নষ্ট করেছে,মিটিং না করেই চলে গেলে সম্পূর্ন টাইম টাই লস।
পূর্ণও সেই সময় রুমে প্রবেশ করলো। আদৃতকে এভাবে দেখে বলল,
_কি হয়েছে,রেগে আছিস কেন এত?
_আরো দু দিন….
#চলবে
[বোনাস পার্ট ছোট হয়েছে বলে লজ্জা দিবেন না আশা করি।
হ্যাপি রিডিং।]