#তুমিময়_প্রাপ্তি🍁
#পর্ব_২৪
#মেহরিন_রিম
অবশেষে আদৃতের সেই গুরুত্বপূর্ণ মিটিং সম্পন্ন হয়েছে কাল। কথা ছিল মিটিং শেষ করে সন্ধ্যার দিকেই তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়বে। তবে তা হয়নি, আদৃত নিজেই বাধা দিয়েছে। আদৃতের এমন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করায় বেশ অবাক হয় সায়ান,পূর্ণ। দুদিন আগে যে আর একদিনও এখানে থাকতে চাইছিল না,সে কিনা কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পড় এখন ইনজয় করতে চাইছে। ব্যাপারটা হজম করতে কিছুটা কষ্ট হলো সায়ানের,এমনিতেও অনেকদিন হয়েছে মোহনার সাথে দেখা হয়না। তারও আর এখানে মন টিকছে না,তবে আদৃতের এক কথা তাড়া আরও একদিন পর যাবে।
এই দুদিনে ইশাকে বহুবার দেখেছে আদৃত, অনেক সময় ইচ্ছে করেই ইশার আশেপাশে চলে এসেছে তবে সেটা কাউকে বুঝতে দেয়নি। আর ইশা প্রতিবার ই আদৃত কে না দেখার ভান করে চলে গেছে, বিষয়টাতে আদৃত এর ভীষণ রাগ হয়েছে। আদৃত তো মনে মনে চাইছিল যেন ইশা এসে তার সঙ্গে ঝগড়া করে অন্তত। তবে সেই আশা আর পূরন হয়নি। তবে পূর্ণ ফাইজার থেকে যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রেখেছে। পূর্ণ চায়না তার জন্য ফাইজাকে কোনোরকম অস্বস্তিকর পরিবেশে পড়তে হোক। ফাইজা ব্যাপারটা কয়েকবার খেয়াল ও করেছে, ফাইজাকে দেখলেই পূর্ণ তার বিপরীত দিকে চলে যায়। অবশ্য এটা ফাইজার জন্য ভালোই হয়েছে।
তিনদিন এর জন্যই এসেছিল তাড়া, জহির সাহেব ঢাকায় ফিরে পরদিনই আবার কুমিল্লায় যাবেন। তবে এই অল্প সময়েই ইশা অনেক বেশি ইনজয় করেছে,পরিবারের সাথে লাস্ট কক্সবাজার ঘুড়তে গিয়েছিল দু বছর আগে। তারপর যাবো যাবো করে যার কোথাও যাওয়া হয়নি। তাই জন্যই ইশা আদৃতকে সম্পূর্নভাবে এড়িয়ে গেছে, সে তার মতো থাকুক তাকে কার কি।
তবে আদৃত দুদিনে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছে ফাইজার সঙ্গে কথা বলার,কিন্তু যখনই ওর দেখা পায় তখনই ইশা তার সঙ্গে থাকে। কথায় কথায় শুনেছিল ওরা কাল বিকেলেই চলে যাবে,এর মধ্যেই ফাইজার সঙ্গে কথাটা বলতে হবে আদৃত এর। পূর্ণ বরাবরেই নাছোড়বান্দা,ও একবার কিছু ভাবলে তাতেই অনড় থাকবে। তাই পূর্ণকে না জানিয়েই ফাইজার সঙ্গে কথা বলতে হবে। একটা উপায় ছিল,ফোনে কথা বলা। তবে ফোনে সবটা ঠিককরে বলা যাবে না।
রাতে ডিনার করার সময় আদৃতদের কিছুটা দূড়েই ইশা,ফাইজা,জহির এবং রুকসানা ছিলেন। আদৃত ভেবে নেয় আজকেই ফাইজার সঙ্গে কথা বলবে। অন্যসময় আদৃত সবার আগে খাওয়া শেষ করে রুমে চলে যায় তবে আজ ইচ্ছে করেই লেইট করছে। পূর্ণর খাওয়া শেষ হয়ে যাওয়ায় সে রুমে চলে যায়ার সায়ান ও তার পরপরই চলে যায়। আদৃত বিরক্ত হয়ে মনে মনে ভাবে, “মেয়েদের খেতে এতো টাইম লাগে!”
ইশা আর ফাইজা খাচ্ছে কম গল্প করছে বেশি। রুকসানা নিষেধ করায় এবার কথা না বলেই খাওয়া শেষ করে তারা। খাওয়া শেষে জহির আর রুকসানা তাদের রুমে চলে যায়। ইশা আর ফাইজাও নিজেদের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। ফাইজার ফোনে তখন ই একটা কল আসে, রুমে মাঝেমধ্যে নেটওয়ার্ক পেতে প্রবলেম হয় বলে ফাইজা ইশাকে বললো,
_ইশা তুই যা আমি দু মিনিট এ আসছি।
ইশাও ওকে বলে রুমে চলে যায়। আদৃত এর এতে বরং সুবিধাই হলো। ফাইজা একটু পাশে গিয়ে কথা শেষ করে পিছনে ঘুরতেই আদৃত তার সামনে এসে দাঁড়ায়।
হুট করে আদৃত কে দেখে ফাইজা কিছুটা ঘাবড়ে যায়। আদৃত তখনি স্মিত হেসে বলে,
_কেমন আছো?
ফাইজাও মুচকি হেসে উত্তর দেয়,
_জি ভাইয়া ভালো আছি,আপনি?
_হুম,ভালোই। ফাইজা,আই ওয়ান্ট টু টেল ইউ সামথিং।
_জ জি বলুন।
_কথাটা পূর্ণকে নিয়ে।
পূর্ণর কথা শুনে ফাইজার মুখটা মুহূর্তেই চুপসে যায়। এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে,
_আমিতো ওনার ব্যাপারে কিছু জানতে চাইনি।
_হ্যা তুমি জানতে চাওনি। বাট আই থিংক,কথাগুলো তোমার জানা উচিৎ।
ফাইজা নিচের দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলো।
___
পূর্ণর খুব বেশি সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস নেই, তবে মাঝেমধ্যে মন চাইলে একটা দুটো খেয়ে থাকে। ব্যালকনি তে এসে সিগারেট ধরাতে যাবে তখনি তার মনে হয় আশেপাশে কেউ নিরবে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। নিজের ধারণা অনুযায়ী পাশের ব্যালকন তে তাকায় পূর্ণ, ঠিকই ধরেছিল। ব্যালকনির গ্রিল এ মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে ফাইজা। মৃদু বাতাসে তার চুলগুলো সামান্য উড়ছে। তারই সঙ্গে কিছুক্ষন পরপর কেঁপে উঠছে তার শরীর। ফাইজা কি কাঁদছে? কিন্তু কেন?
অবাক চোখে সেদিকে তাকিয়ে থাকে পূর্ণ,ফাইজা অন্যদিকে ঘুরে থাকায় দেখতে পায়নি পূর্ণ কে। কিন্তু হঠাৎ করে কি হলো তার? পূর্ণর স্পষ্ট মনে আছে কিছুক্ষন আগে ডিনার এর সময় সে বেশ হাসিখুশি দেখেছিল ফাইজা কে। তবে এতটুকু সময়ের ব্যাবধানে সে কাঁদছে কেন? কিসের কষ্ট তার? নিজের চিন্তা থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য পূর্ণ মনে মনে ভাবে,
_আমার বোধ হয় এতকিছু ভাবা ঠিক হচ্ছেনা। ওর পারসোনাল লাইফ, কিছু একটা হতেই পারে তাই হয়তো কাঁদছে।
সিগারেটটা আবারো প্যাকেটে রেখে দেয় পূর্ণ। এই মুহূর্তে ব্যালকনি তে থাকাটা ঠিক হবেনা হয়তো, ফাইজা দেখলে অস্বস্তিতে পড়তে পারে। আরো একবার ফাইজার দিকে তাকিয়ে রুমে চলে এলো পূর্ণ। আদৃতের দিকে তাকাতেই দেখলো সে ল্যাপটপ এ কাজ করছে। রাত প্রায় একটা বাজে, পূর্ণও তাই আর দেড়ি না করে ঘুমোতে চলে গেলো।
___
_আপু?তোমার চোখগুলো এমন লাল হয়ে আছে কেন?
রেডি হতে হতে প্রশ্নটা করলো ইশা। ফাইজা হকচকিয়ে উঠে চোখে হাত দিয়ে বললো,
_ঐতো কাল চিংড়ি মাছ খেয়েছিলাম না, তাও এলার্জি টা বেড়েছে হয়তো।
_ঔষধ আনোনি?
_না,আনা হয়নি। আর চলেই তো যাবো এখম,বাসায় গিয়ে ঔষধ খেয়ে নেবো তাহলেই হবে।
ইশা চুলে বেণী করতে করতে ফাইজার দিকে তাকিয়ে বললো,
_আমার রাতে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল,তোমাকে তো পেলাম না পাশে।
_ঘুম আসছিলো না তাই ব্যালকনি তে বসেছিলাম।
_তোমার কি কিছু হয়েছে আপু?
ইশা সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বললো কথাটা। ফাইজা আবারো নিজেকে লোকানোর চেষ্টা করে বললো,
_না না কিছু হয়নি। তুই রেডি হয়ে নে, ছোট আব্বু অলরেডি একবার তাড়া দিয়ে গেছে।
ইশা আর কথা বাড়ালো না। জহির সাহেব তার পাঁচমিনিট পড়ে এসেই ব্যাগগুলো নিয়ে যান আর ওদের বেড়োতে বলে। ইশাও তার সাথেই রুম থেকে বের হয়। ফাইজা আবারো আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা করে, তবে সেটা খুব বেশি সম্ভব হচ্ছে না।
অত:পর সেও রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। দু কদম পা রাখতেই পিছন থেকে কারোর ডাক আসে,
_ফাইজা দাড়াও..
থেমে যায় ফাইজা, কণ্ঠ শুনেই বুঝতে পারে পিছনে পূর্ণ দাঁড়িয়ে আছে। ফাইজা ধীরেধীরে তার দিকে ঘুড়ে তাকায়। ফাইজার মুখটা দেখে পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে যায় রাতে সে কাঁদছিল। নিজের অজান্তেই প্রশ্ন করে বসে,
_ঠিক আছো তুমি?
ফাইজা অবাক চোখে তাকায় পূর্ণর দিকে। সেও জিজ্ঞাসার সুরে বলে,
_কী হবে আমার?
নিজের করা প্রশ্নে নিজেই অবাক হয়ে যায় পূর্ন। এমন প্রশ্ন করা তার উচিৎ হয়ন। কথা ঘোরানোর চেষ্টা করে হাত থাকা বইটা ফাইজার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
_হ্যা সেটাই। আসলে এই বইটা… আমি পড়েছি এটা, তুমি চাইলে এটা রাখতে পারো। সেদিন যে আমার জন্য বইটা নাওনি সেটা…
_দরকার নেই,আপনার কাছেই থাক। কখনো যদি সুযোগ হয়,নিজেই বরং পড়ে শোনাবেন। আসছি…
আর এক মুহূর্তও দাড়ালো না ফাইজা। তার শেষ কথাটায় পূর্ণ বেশ অবাক হয়। ফাইজা বেশ নরম কণ্ঠে বললো কথাটা। পূর্ণ ফাইজার এমন কথার অর্থ খুজে পেলোনা। স্থির দৃষ্টিতে কেবলই তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো…
#চলবে
[গতকাল গল্প না দেওয়ার জন্য দুঃখিত। জ্বর সঙ্গে প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা,তাই আজকেও খুব বড় করে লিখতে পারিনি। দোয়া করবেন আমার জন্য।
রিচেক করা হয়নি,তাই বানানে ভুল থাকতে পারে।
হ্যাপি রিডিং।]