খোলা_জানালার_দক্ষিণে #পর্ব_৫৪ #লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

0
321

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_৫৪
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

সুখ গুলোকে শুষে নিয়ে তিক্ততায় পরিপূর্ণ হয়েছে মন। এই যে লোকে বলে মেয়েদের নিজেস্ব কোনো বাড়ি হয় না। কিন্তু মেয়েদের ছাড়া কোনো বাড়িই সম্পূর্ণ হয় না। যে বাড়িতে নারী নেই। সেই বাড়িটা মরুভূমির মতোই মূল্যহীন। নারীই বাড়ির সৌন্দর্য। নারী ছাড়া বাড়ি তার সৌন্দর্য হারায়। সেই নারীকে কতই না তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয়। নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসেও সবার কাছে অবহেলিত হওয়ার নামই নারী। এই যে মেহেভীন নিজের বোনের মতো শেহনাজের ভালো চাইল। কিন্তু দোষটা তার হয়ে গেল! মুহুর্তের মধ্যে তার হৃদয়টা রক্তাক্ত করে দিল। বাবার বাড়িতে একটা কথা মাটিতে ফেলতে না দেওয়া মেয়েটাও আজ শশুর বাড়িতে এসে বিষাক্ত বাক্য গুলো চুপচাপ হজম করে, নিরব থাকে! মায়ের মুখে মুখে তর্ক করা মেয়েটা আজ কথা আঘাত ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। তবুও মুখশ্রী দিয়ে কোনো বাক্য উচ্চারন করে না। নিজের মেয়ের ভুল, ভুল। কিন্তু পরের মেয়ের ভুল অন্যায়! এই সমাজের নিয়ম এতটা জঘন্য কেন? পরের মেয়েকে যদি একাংশ নিজের মতো করে একাংশ ভালো দিত। তাহলে এই সমাজ থেকে অশান্তি নামক বাক্যটা বিলীন হয়ে যেত। মেহেভীন পাথর ন্যায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিয়াদ চৌধুরী রাগান্বিত হয়ে বলল,

–এবার তোমার শান্তি হয়েছে? এটাই তো চেয়েছিলে, তুমি! তোমাকে নিজের মেয়ের মতো করে রাখতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু তুমি প্রমাণ করে দিলে সবাই মেয়ে হবার যোগ্যতা রাখে না। তুমি আমাদের অশান্তি ছাড়া কিছুই দিতে পারোনি। আমাদের আলার করে তোমার হৃদয় শীতল হয়নি। এখনো কিসের জন্য এখানে দাঁড়িয়ে আছ? রিয়াদ চৌধুরীর কথায় মেহেভীনের ভিষণ করে বলতে ইচ্ছে করল, “আপনি আমাকে মেয়ে ভাবলে শেহনাজের মতোই আমার বলা সত্যি কথাটা যাচাই না করেই গ্রহণ করে নিতেন। আপনি আমার দোষ গুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন। আমার ভুল গুলো খুঁজে খুঁজে বের করে দিলেন। আপনি যেমন আজ শেহনাজের দোষটা আপনার ছায়া দিয়ে আড়াল করে দিলেন। আপনার জায়গায় আমার বাবা থাকলে-ও একই কাজ করত। কিন্তু বাড়ির বউদের যে বলতে মানা। নারী মেনে নিতে আর মানিয়ে নিতে পারলেই সেই নারীর জীবন সুন্দর। আপনি নিজের মেয়ের দোষটা দেখলেন না। আমার ভুলগুলো দেখিয়ে দিলেন। তাহলে আপনি আমার বাবা হলেন কোথায় আব্বা?” কিছু বাক্য ধারালো অস্ত্রের মতো হৃদয়ে আঘাত করতেই থাকে। তবুও তা প্রকাশ করার নিয়ম নেই। প্রকাশ করলেই যে হৃদয়টা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে। মেহেভীনের বাক্য গুলো কণ্ঠনালিতে এসে বেঁধে গেল। সে নিঃশব্দে স্থান ত্যাগ করল।

দখিনা বাতাস এসে মুনতাসিমের সমস্ত কায়া আলিঙ্গন করে যাচ্ছে। বিষাদের ছোঁয়ায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে, মুনতাসিমের মন। ভেতরটা অদ্ভুত ভাবে যন্ত্রনা করছে। বাবার থেকে এমন অপ্রত্যাশিত আচরণ একদম আশা করেনি সে। বাবারা তো সংসার ভাঙার কথা বলে না। বাবারা তো সংসার টিকিয়ে রাখে। তাহলে আমার বাবা সংসার ভাঙার কথা কেন বলল? আমার ভেতরটা যে বাবার ছোট্ট কথায় রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছে। সেটা কি বাবা দেখতে পেল না? যদি দেখতে পেত, তাহলে বাক্য গুলো কণ্ঠনালিতে আসার আগেই বাবার বুক কেঁপে উঠত। মেহেভীনের আঁখিযুগল রক্তিম বর্ন ধারণ করেছে। সে নিঃশব্দে আস্তরণের এসে বসলো। বাক্য গুলো আজ শব্দ হারিয়েছে। অনুভূতিরা শূন্য হয়ে গিয়েছে। মস্তিষ্ক অকেজো হয়ে পড়েছে। সমস্ত কায়া নিস্তেজ হতে শুরু করেছে। তখনই মুনতাসিম মেহেভীনের পাশে অবস্থান করল। মেহেভীন মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টিপাত করল। মানুষ টার মুশ্রীর দিকে দৃষ্টি পড়তে-ই মেহেভীনের ভেতরটা অদ্ভুত ভাবে শীতল হয়ে গেল। একবার নয়, দুই বার নয়, অসংখ্যবার এই চোখের মায়ায় পড়েছে মেহেভীন। কিন্তু আজ তার জন্য মুনতাসিম তার বাবার থেকে আলাদা হয়ে গেল। ভাবতেই ভেতরটা যন্ত্রনায় কাবু হয়ে আসছে। বুকটা হাহাকার করছে। সমস্ত কায়া অস্থিরতায় ছটফট করছে। মেহেভীন শান্ত কণ্ঠে বলল,

–আপনার বাবা সঠিক কথাই বলেছে। আমি আপনার যোগ্য না। আমি যেদিন থেকে আপনার জীবনে এসেছি। সেদিন থেকে আপনাকে আমি দুঃখ ছাড়া কিছুই দিতে পারিনি। আপনি আমায় ডিভোর্স দিয়ে দিন। আপনি বাবার পছন্দ মতো বিয়ে করে নিন। দেখবেন জীবনে সবশেষে সুখী মানুষটি হবেন আপনি। আমি জানতাম না আব্বা আমাকে এতটা অপছন্দ করে। মেহেভীনের প্রতিটি বাক্য আগুনে ঘি ঢালার জন্য যথেষ্ট ছিল। ডিভোর্স শব্দটা মুনতাসিমের ভেতরটা বিষাক্ত করে দিল। সে অন্য দিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–আমার মতো মানুষ পেয়েও যে বিচ্ছেদ চাইল! সে জীবনে আরো ভালো কিছু পাক। আপনি আপনার মন মতো জীবন সঙ্গী খুঁজে নিয়েন। আমার মতো নিকৃষ্ট মানুষের সাথে আপনার যায় না।

–আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন। আমি আপনার ভালো জন্য… মেহেভীনের প্রতিটি বাক্য বিষাক্ত করে তুলেছে মুনতাসিমকে। আজ যেন তার ক্রোধ শিরায়-উপশিরায় চলাচল করছে৷ মস্তিষ্ক টগবগ করে উঠছে। উত্তপ্ত মেজাজে দৃষ্টি অন্য দিকে রেখেই হাত দিয়ে মেহেভীনকে থামিয়ে দিল। অদ্ভুত ভাবে মুনতাসিমকে মেহেভীনের ভয় লাগছে! নিরবতার থেকে ভয়ংকর প্রতিশোধ ধরনীর বুকে দু’টো নেই। মেহেভীন মুনতাসিমের হাতে হাত ছুঁতে গেলে মুনতাসিম গর্জন করে উঠল।

–একদম আমাকে ছোঁবেন না। আমাকে ছোঁয়ার অধিকার আপনি হারিয়েছেন। খুব সহজে পেয়ে গেলে মানুষ মানুষের কাছে সস্তা হয়ে যায়। আমি আপনাকে বলেছিলাম ধরনীর বুকে মহাপ্রলয় আসলেও আমার ওপরে ভরসা রাইখেন। আমি সবকিছু ঠিক করে দিব। কিন্তু আপনি ধরণীর অশান্তিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। আপনার জীবনে আমার মূল্য কোথায়? আপনি আমার ভালোবাসা দেখেছেন। কিন্তু আমার নিষ্ঠুরতা দেখেন নাই। আমি যে কতটা জঘন্যতম মানুষ সেটা আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন। আমি আপনাকে অনুরোধ করে বলেছিলাম। আমার প্রতি অভিযোগ থাকলে বলবেন। আমি পুষিয়ে নিব। কিন্তু কখনো বিচ্ছেদের কথা মুখশ্রীতে উচ্চারন করবেন না। আমি বিষাক্ত হয়ে গেলে, আপনি জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবেন৷ তবুও আপনার প্রতি আমার এতটুকু মায়া কাজ করবে না। ভালোবাসা শেষ পরিনতি বুঝি মানসিক মৃত্যুদন্ড হয়? তাহলে সেই মানসিক মৃত্যুদন্ড নিয়ে জীবন পার করে দিব। তবুও যার কাছে আমার থেকে অন্যের মূল্যায়ন বেশি সেই মানুষের মুখ আমি দেখব না। আমি আর আপনার মুখ দেখতে চাই না। আপনি আর কখনো আমার সামনে আসবেন না। আমি আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিব। শেষের বাক্যটা উচ্চারন করার সময় কণ্ঠনালি কাঁপছিল। যেখানে ছেড়ে দেওয়ার কথা উচ্চারন করতেই ভেতরটা রক্তাক্ত হয়ে যাচ্ছে। সেখানে মানুষটাকে ছাড়া সে থাকবে কি ভাবে? ভাবনা গুলো আজ শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির তৈরি করে দিয়েছে। ভেতরটা কেমন জানি ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। এই যে অসহায় লাগার ব্যাপারটা বিধাতা ছাড়া বোঝার ক্ষমতা কারো নেই। চারদিকে এত মানুষ এত কোলাহল তবুও মুনতাসিমের নিজেকে ভিষণ একা লাগছে। তার পাশে বসে ভরসা দেওয়ার কেউ নেই। সে কেবল যন্ত্রনা সহ্য করার জন্যই জন্ম নিয়েছে! তার ভাগ্য এমন কেন? একদিন ভালো কাটলে এক যুগ কাটে আপন মানুষের দেওয়া আঘাতে! মুনতাসিমের মলিন মুখশ্রী মেহেভীনের মস্তিষ্ক সচল করে দিল। পারিবারিক অশান্তিটা খুব সিক্রেট একটা কষ্ট, না কাউকে বলা যায় আর না সহ্য করা যায়। প্রতিদিন এত এত অশান্তি হলে তো মাথা খারাপ হবেই। তার যেমন মুনতাসিম ছাড়া ভালোবাসার কেউ নেই। মুনতাসিমেরও তো সে ছাড়া ভালোবাসার কেউ নেই। সে যদি সবকিছু ঊর্ধ্বে গিয়ে মেহেভীনের পাশে থাকতে পারে। তাহলে সে কেন অল্পতেই ভেঙে পড়ে! সে তো আগে এমন ছিল না। বেশি ভালোবাসা পেলে মানুষ দুঃখ সহ্য করার ক্ষমতা হারায়। তবে কি মুনতাসিমের অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা মেহেভীনের দুঃখ সহ্য করার ক্ষমতা শুষে নিল। মুনতাসিম রাগান্বিত হয়ে উঠে চলে যাচ্ছিল। ভেতরটা অসহনীয় যন্ত্রনায় ছটফট করছে। জীবনে প্রথম মেহেভীনের ওপরে রাগ করল মুনতাসিম। সেই রাগ কতটা ভয়ংকর রুপ নিতে পারে৷ তার আভাস মেহেভীন পাচ্ছে। ভেতরটা কেমন জানি কু গাইছে! অদ্ভুত এক অনুভূতি! মন বলছে মুনতাসিমকে যেতে দিলে মস্ত বড়ো ভুল হবে। মেহেভীন মুনতাসিমের সামনে গিয়ে পথরোধ করে দাঁড়াল। মুনতাসিম রক্তিম আঁখিযুগলে মেহেভীনের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মুনতাসিমের আঁখিযুগলে প্রেয়সীকে নিয়ে কত-শত রাগ আর অভিযোগ দেখতে পাচ্ছে মেহেভীন। যে আঁখিযুগল ভালোবাসায় পরিপূর্ণ থাকতো। কিছু সময়ের ব্যবধানে সেই আঁখিযুগল বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। মুনতাসিমের আঁখিযুগলে ভালোবাসা ছাড়া অন্য কেউ দেখতেই ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। মেহেভীন মুনতাসিমকে শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে বলল,

–আপনি আমাকে খু’ন করে ফেললেও বাহিরে যেতে দিব না। আমার ভিষণ ভয় করছে। বুকের মধ্যে অসহনীয় যন্ত্রনা করছে। আপনি একটু শান্ত হন। আমি আপনাকে সবটা বুঝিয়ে বলছি।

–আমাকে ছাড়ুন বলছি। আজ আপনাকে আঘাত করার কথা দ্বিতীয় বার ভাববো না। আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েন না৷ দরকার পড়লে আপনাকে খু’ন করেই কক্ষ ত্যাগ করব। মুনতাসিমের হুংকারে কেঁপে উঠল মেহেভীনের সর্বাঙ্গ। তবুও শক্ত বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে মুনতাসিমকে। আজকে সে কিছুতেই মানুষ টাকে ছাড়বে না৷ মানুষটার যে রাগ বেশি। যাকে দেখলে মানুষটার রাগ বিলীন হয়ে যেত। আজ সেই মানুষটার ওপরেই মুনতাসিম রেগে গিয়েছে। সেই রাগের পরিনতি কতটা ভয়ংকর হতে পারে? ভাবতেই মেহেভীনের অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল। দু’জন ধস্তাধস্তি করতে করতে মেহেভীন কায়া নিস্তেজ হয়ে আসতে শুরু করল। তার হাতের বাঁধন আলগা হতে শুরু করেছে। সে মুনতাসিমের ক্রোধ নিবারণ করতে অনেকটা সক্ষম হয়েছে। কিন্তু কথায় থাকে না যার ভাগ্য সহায় হয় না তার থেকে দুঃখী আর কেউ নেই। দু’জনের চেচামেচিতে রিয়াদ চৌধুরী উপরে আসলো। তাকে দেখেই মেহেভীন দুরত্বে সরে আসে। রিয়াদ চৌধুরী গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–এটা ভদ্র লোকের বাড়ি! রজনীর শেষ প্রহরে এসে এমন অসভ্যের মতো চিৎকার চেচামেচি করছ কেন? দু’দিন পরে বাড়ি না গোরুর গোয়াল হয়ে যাবে। এত বছরের সব নিয়ম কানুন কয়েক দিনেই মাটির সাথে মিশে গিয়েছে। এমন অসভ্যের মতো আচরণ করা বন্ধ করবে নাকি আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে যাব। এতকিছু করে শান্তি হয়নি তোমাদের? এমন মানসিক ভাবে অত্যাচার করছ কেন তোমরা? রিয়াদ চৌধুরীর কথায় কোনো উত্তর করল না মুনতাসিম। দ্রুত কক্ষ থেকে বের হয়ে গেল। মেহেভীন মুনতাসিমকে স্পর্শ করার আগেই মুনতাসিম ধরা ছোঁয়ার বাহিরে চলে গেল। মেহেভীন দ্রুত কক্ষের বাহিরে যেতে চাইলে রিয়াদ চৌধুরী থামিয়ে দিয়ে বলল,

–তুমি কোথায় যাচ্ছো?

–উনি অনেক রেগে আছে আব্বা। উনাকে বাহিরে যেতে দিবেন না। আপনি অনুমতি দিলে উনাকে গিয়ে নিয়ে আসি?

–আমার ছেলের মস্তক খেয়ে শান্তি হচ্ছে না? এবার কি তার জীবন খাবে! তাকে একটু তার মতো থাকতে দাও। তার রাগ পড়লে একাই বাড়ি ফিরে আসবে। তার পেছনে যাওয়ার কোনো দরকার নেই।

–আপনি যতটা সহজ ভাবে বলছেন। ব্যাপারটা এতটা সহজ হলে এতটা যন্ত্রনা সহ্য করতাম না। যাকে দেখে মানুষটার রাগ শীতল হয়। তার ওপরে রাগলে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হয়। সেটা আপনাকে কে বোঝাবে আব্বা? মানুষটা যে ভিষণ রাগী। রাগ হলে নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। মানুষটার কিছু হলে আমি একদম নিঃস্ব হয়ে যাব। মেহেভীনের কথা গুলো রিয়াদ চৌধুরীর কর্ণকুহরে পৌঁছাল কি না কে জানে? তিনি নিজের কথা শেষ করেই মেহেভীনের থেকে অনেকটা দুরত্বে চলে গিয়েছে। রিয়াদ চৌধুরীর সামনে থাকায় মুনতাসিমের কাছে যেতেও পারছে না। এটা নিয়েও যদি অশান্তি হয়। এই যে অসহায় লাগার মতো বাজে অনুভূতি দু’টো নেই। মেহেভীন তাইয়ানকে ফোন দিয়ে বলল সে যেন মুনতাসিমের সাথে যায়। তাইয়ান বাহিরেই ছিল। সে মেহেভীনের কথা মতো মুনতাসিমের গাড়িতে গিয়ে উঠে বসল। মুনতাসিমের রাগ হলে সে নিরিবিলি প্রাকৃতিক স্থানে গিয়ে বসে থাকতে স্বাচ্ছন্ন বোধ করে। তাই তাইয়ান স্বাভাবিক রাগ ভেবেই অন্য কাউকে ডেকে তুলল না। রজনীর আঁধারে কি আর কেউ ক্ষতি করার জন্য বসে থাকবে? তাইয়ান কি জানে না। বাহিরের লোক বসে না থাকলে-ও ঘরের লোক বসে ঠিকই থাকে। মুনতািসমের কোনো দিকে হুস নেই। এই অশান্তি নামক শব্দটা জীবনটাকে একদম মূল্যহীন করে তুলেছে। সে গাড়িতে উঠেই চলে গেল। সেই দৃশ্যটা ছাদের কার্নিশ থেকে কেউ একজন দেখে তৃপ্তির হাসি হাসল। মুঠোফোনটা হাতে নিয়ে আনন্দ মিশ্রিত কণ্ঠে বলল,

–মুনতাসিম তাইয়ানকে নিয়ে একা বেড়িয়ে গিয়েছে। মুনতাসিমের সাথে আজ কোনো গার্ড যাইনি। এটাই সুযোগ এই সুযোগটা যদি লুফে নিতে না পারো। তাহলে জীবনে মুনতাসিমকে ধংস করতে পারবে না। মুনতাসিম আজকে ভিষণ রেগে আছে। ও রেগে থাকলে নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। তুমি দ্রুত জাফর ইকবালকে খবরটা পৌঁছে দাও। আমরা নিজে আর কিছুই করব না। তুমি বাহিরে বের হয়ো না। তাহলে মুনতাসিম কিন্তু আবার তোমাকে ধরে ফেলবে।

রজনীর মধ্য প্রহর হওয়াতে পথে তেমন গাড়ি নেই। কেউ গভীর নিদ্রায় ব্যস্ত কেউ বা রাত জেগে নিজের লক্ষ্য পূর্ণ করতে ব্যস্ত। এত ব্যস্ততার মধ্যে একটি অশান্ত হৃদয় গন্তব্যহীন ভাবে ছুটে চলেছে। মুনতাসিমকে এমন বেখেয়ালি ভাবে কোনোদিন গাড়ি চালাতে দেখেনি তাইয়ান। মুনতাসিম খুব দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছে। যেন এ শহর ছেড়ে পালাতে পারলেই সে বাঁচে। তাইয়ানের ভেতরটা ভয়ে কাঁপছে। সে ভীত কণ্ঠে বলল,

–স্যার গাড়ি আস্তে চালান। যেকোনো সময় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

–আমি তোমাকে আমার সাথে আসতে বলিনি। তবুও তুমি কেন এসেছ? আর যখন এসেছ তখন ভয় কেন পাচ্ছ? আমি ম’রে গেলে আমার সাথে তুমিও ম’রেও যাবে। আমি বেঁচে থাকলে তুমিও বেঁচে থাকবে। তুমি কি মরতে ভয় পাচ্ছ তাইয়ান?

–আপনার জন্য আমি সর্বদা মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে প্রস্তুত। তাইয়ানের কথায় মুনতাসিম শীতল দৃষ্টিতে তাইয়ানের দিকে দৃষ্টিপাত করল। তাইয়ান নির্ভয়ে মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। তাইয়ানের আঁখিযুগলে মুনতাসিমের জন্য কত ভালোবাসা! এই ভালোবাসার ক্ষতি মুনতাসিম জেনে-বুঝে করবে? সেটা কখনোই না। তাইয়ানের সামনে নিজেকে স্বাভাবিক করতে হবে।

জাফর ইকবাল গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন ছিলেন। মুনতাসিমের খবরটা কর্ণকুহরে আসতেই ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল। সে দ্রুত নিজেদের লোকদের হুলস্থুল করে ডেকে তুলল। মুনতাসিম যে এরিয়ার মধ্যে আছে। সেই এরিয়ার মধ্যে দ্রুত তিনটা ট্রাকের ব্যবস্থা করতে বলল। প্রতিটি সেকেন্ড যেন ঘন্টার সমান হয়ে গিয়েছে। জাফর ইকবালের সমস্ত কায়া থরথর করে কাঁপছে। পনেরো মিনিট হয়ে গেল। তবুও এখনো সবকিছু রেডি করতে পারল না! জাফর ইকবালের সবকিছু চূর্ণবিচূর্ণ করে দিতে ইচ্ছে করছে। কক্ষের সব আসবাবপত্র তচনচ করে দিতে শুরু করেছে। তখনই মুঠোফোনটা বার্তা নিয়ে আসলো। মুনতাসিম মাঝ পথে গাড়িয়ে থামিয়েছে। এই সুযোগে তারা কায়দা কৌশল সঠিক ভাবে প্রস্তুত করে ফেলল। জাফর ইকবালের হৃদয়টা আজ শীতলতা অনুভব করছে। মুখশ্রীতে তার তৃপ্তির হাসি।

–গাড়ি দাঁড় করালেন কেন স্যার?

–বুঝতে পারছি না তাইয়ান। একটু বাহিরে গিয়ে দেখবে কি সমস্যা হয়েছে? তাইয়ান একটু অবাক হলো মুনতাসিম এতটা স্বাভাবিক হয়ে গেল কি করে? সে অদ্ভুত চাহনিতে মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মুনতাসিম রাগান্বিত হয়ে বলল,

–তোমাকে যেতে হবে না থাক আমি যাচ্ছি। মুনতাসিমের কথায় তাইয়ান দ্রুত গাড়ি থেকে নামল। তাইয়ান গাড়ি থেকে নামতেই মুনতাসিম গাড়ি টান দিয়ে সামনের দিকে ছুটে চললো। তাইয়ান নিজেই নিজের ললাটে প্রহার করল। সে কেন মুনতািসমের ফাঁদে পা দিল? তাইয়ান দৌড়াতে শুরু করল। সে গার্ডদের কল করে দিয়েছে। তারা যেন গাড়ি নিয়ে দ্রুত উপস্থিত হয়। তারা অর্ধেক পথ চলে এসেছে। কিন্তু এখন সে মুনতাসিকে কিভাবে ধরবে? তাইয়ান আবার দৌড়াতে শুরু করে দিল। মুনতাসিম গাড়ির স্প্রিড সর্বোচ্চ বাড়িয়ে দিল। তাইয়ান যেন তাকে ধরতে না পারে। কিছুদূর যেতেই মুনতাসিমের দৃষ্টিতে তিনটা ট্রাকের দেখা মিললো। ট্রাকগুলো দ্রুত গতিতে তার দিকে ধেয়ে আসছে। মুনতাসিমের ভ্রুযুগল কুঁচকে গেল। তারা ভুল পথ দিয়ে গাড়ি নিয়ে আসছে। মুনতাসিম গাড়ি পেছাবে তার কোনো সুযোগ নেই। তাদের পাশ কাটিয়ে চলে যাবে এমন অবশিষ্ট জায়গা নেই। মুনতাসিমের বিচক্ষণ মস্তিস্ক যা বোঝার বুঝে ফেলছে। সে এটা ভেবে শান্তি পেয়েছে। যে তাইয়ানকে সে নিরাপদে রেখে আসতে পেরেছে। মুনতাসিম নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করার আগেই ট্রাক গুলো মুনতাসিমের গাড়িটা গুঁড়িয়ে দিল। কালো পিচ ঢালাই করা রাস্তাটা রক্তে ভেসে যেতে শুরু করল। মাটি খুব যত্ন সহকারে মুনতাসিমের দেহ থেকে বেড়িয়ে আসা রক্ত গুলো শুষে নিচ্ছে। রাস্তায় রক্তের ছাড়াছাড়ি দেখে তাইয়ানের অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল। পাশেই মুনতাসিমের রক্তাক্ত নিথর দেহটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে। শুভ্র পাঞ্জাবিটি রক্তে ভিজে নতুন রুপ নিয়েছে। তাইয়ানের সমস্ত কায়া অবশ হয়ে আসছে। আশেপাশেই দু-একজন মানুষ আসতে শুরু করেছে। মুনতাসিমের কোনো জ্ঞান নেই। দুই গাড়ির সংঘর্ষ হবার পর সাথে সাথেই কি সে জ্ঞান হারিয়েছে? মুনতাসিমের এমন ভয়ংকর অবস্থা দেখে তাইয়ানের ভেতর হাহাকার করে বলে উঠল, “মানুষটা বেঁচে আছে তো?”

চলবে…..

(আজকে অনেক বড় পর্ব দিয়েছি। তাই আজকে বড় বড় কমেন্ট চাই। আর মুনতাসিমকে মা’র’লে বলতে হবে না। নিজ থেকেই আমাকে ব’কা দেওয়ার জন্য হলে-ও আপনারা কমেন্ট করবেন। পরপারে ভালো থাকবেন মন্ত্রী সাহেব। আপনার সাথে এমনটা না হলে-ও পারত। আজকে আর কমেন্ট দেখতে আসব না। জানি তোমরা লবন মরিচ নিয়ে বসে আছ। সবাই রেসপন্স করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন। আপু আজ চলে গিয়েছে। এখন থেকে নিয়মিত গল্প দিব ইনশাআল্লাহ। তবে অবশ্যই আপনাদের কাঙ্খিত রেসপন্স পূর্ণ করতে হবে। সবাই ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আজকের পর্বটা একটু এলোমেলো লাগছে পারে অনেকটা চাপ নিয়ে লিখেছি তো। কয়টা দিন অনেক খানটি গিয়েছে। আজ বিশ্রাম নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনারা অপেক্ষা করতে থাকবেন। সেজন্য জোর করেই লিখলাম। সবাই ভালো থাকবেন। আজকের মতো আল্লাহ হাফেজ। শব্দসংখ্যা:২৩৬৭)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here