#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৪৮
১৩৫.
রিফাতের গায়ে মারের দাগ।স্বাধীন ছোট্ট ছেলের এমন অবস্থা দেখে আঁতকে ওঠেন।কি করবেন বুঝতে পারছে না?হাঁটুর নিচে পচন ধরেছে।এমন জানোয়ার মতো মেরেছে তার ওপর তাদের একবারও জানানো হয়নি।আজ দুপুরে রিফাত কাঁপতে কাঁপতে বাড়ির উঠোনে রিকশা করে আসে।রিকশা থেকে নামতে গিয়ে মাটিতে পড়ে মা ব’লে কেঁদে ওঠে।রেনু গরুকে ঘাস দিতে নিয়ে হাত থেমে যায়।রিকশা থেকে রিফাত পড়ে গিয়ে মা ব’লে কেঁদে উঠেছে।সবটা দেখে কলিজা মুচড়ে ওঠে।তার আদরের সন্তানের এই অবস্থা কে করেছে।রেনু ঘাস ফেলে দৌড়ে ছুটে আসে।ছেলের মাথাটা মাটি থেকে উঠিয়ে উচ্চস্বরে কেঁদে উটে।বউয়ের কান্নার শব্দে স্বাধীন পুকুর পাড়ে মাছের জাল ফেলে ছুটে আসে।আর আসতেই এসব দেখতে পায়।ছেলেকে ঘরে রেখে ডাক্তার আনতে গঞ্জে যায়।
দেখুন,স্বাধীন সাহেব।সন্তানদের মানুষ করবেন ভালো কথা।কিন্তু সন্তান কোথায় আছে? কি করছে?এগুলো খেয়াল নিজে থেকে না করলে কেউ করবেনা।সন্তান আপনার,সে সন্তানকে এমন অমানুষের মতো মারবে আর আপনি চুপ করে থাকবেন।সন্তানের দোষ থাকলে তাকে শুধরানোর সুযোগ দিতে হয়।কিন্তু এভাবে মারাটা কোনো সমাধান নয়।ডাক্তার ওষুধ দিয়ে চলে যায়।রেনু ছেলের হাত ধরে বসে আছে।গায়ে একশ চার জ্বর। জ্বরটা আবার বেড়েছে।ছেলের কপালে জলপটি দিচ্ছে স্বাধীন।সে গম্ভীর মুখে বসে আছে।তার মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই।তার মনে কি চলছে?
এইদিকে ছোট ভাইয়ের এই অবস্থা দেখে মিলন,সাজু রাগে ফুঁসছে।
আজ তিনদিন পর পুতুল নিজে থেকে দরজা খুলেছে।অর্পণের দিকে নজর না দিয়ে চেয়ার টেনে চুপচাপ টেবিলে খেতে বসে।পুতুলকে দেখে অর্পণ এর মুখে হাসি ফুটে।সে ও অপর চেয়ার টেনে খেতে বসে।খাওয়ার এক পর্যায় পুতুল চিরকুট এগিয়ে দেয়।অর্পণ চোখের ভ্রু নাচিয়ে বলল,এতে কি আছে? পুতুল ওহ অর্পণের দেখাদেখি ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় বলল দেখতে।অর্পণ চিরকুট খুলে।
আমি কাল বাড়িতে ফিরে যাচ্ছি।মামাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
পুতুলের লিখাটা পড়ে বলল,
কেনো?তোমার কেন যেতে হবে?আমাকে বলো।আমি তাদের এখানে আনছি।
পুতুল মাথা নাড়িয়ে না বলল,
তার শুধু মামাকে না সবাইকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে।আর তার সাথে তার সেই ছোট গ্রামটাকেও খুব মিস করছে।
পুতুলের বলার ভঙ্গি দেখে অর্পণ বিরবির করে কিছু ব’লে।পুতুল শুনতে পায় না।সে নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে গেছে।
গ্রামে এমন ঘটনা নিয়ে বিচার বসেছে।হুজুর কি করে এমন অমানুষের মতো ছাত্রকে মারতে পারে।এটা নিয়ে দুই এক কথায় সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।হুজুরকে ছেড়ে দেয়।তাঁকে দুইদিনের মধ্যে গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেন।কিন্তু এতে মিলন,সাজু,কিংবা স্বাধীন এই ব্যাপারটা সহজভাবে নিতে পারে নিই।
রিফাত এর জ্ঞান ফিরে আসে।সে জানায় এই হুজুরের স্বভাব চরিত্র ভালো না।ছোট মেয়েদের গায়ে হাত দেয়।মেয়েরা তার ভয়ে বাসায় কিছু বলে না।আর ছেলেদের শুধু মারতে থাকে।যতখন পর্যন্ত সে শান্তি না পায়।রিফাতকে ঘুম পাড়িয়ে দুই ভাই একসাথে মাদ্রাসা থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকে।তাদের দুইজনের হাতেই ঢোল কলমি লতা রয়েছে।রাতের আকাশে বড় থালার মতো চাঁদ উঠেছে।সেই চাঁদের আলোয় চকচক করছে কাঁচামাটির রাস্তা।মিলন,সাজু হুজুরের জন্য বিশেষ আয়োজন সাজিয়ে রেখেছে।সে এই পথেই আসবে।
মাথায় টুপি গায়ে সবুজ পাঞ্জাবি।গায়ে আতরের গন্ধে মৌ মৌ করছে।হাতে লাঠি।
হাউমাউখাউ মানুষের গন্ধ পাও।হি,হি,হি।
অদ্ভুত হাসিতে কানটা ধরে গেলো।হুজুর মশাই কিছুটা ভয় পেলেন।একে তো পূর্নিমা রাত।তার ওপরে কোনো মানুষজন নেই।এই ফাঁকা রাস্তায় কে এমন করে হাসে।মনে মনে দোয়া পড়তে লাগলেন।কাঁপা অবস্থায় বলতে লাগল।
কে তুমি ভাই?সামনে আসছো ও না কেন?সাহস থাকলে সামনে আসো।
কি রে আবুল কালামের পোলা?কেমন আছোস তুই? আমারে ডাকোছ।আমি সামনে আইলে হুশ থাকব তোর।আমি এই বট গাছের পেতনী।তোর চৌদ্দ গুষ্টি শুদ্ধো আমারে ভয় পায়।আর তুই আমারে বেইজ্জত করস।তোর সাহস তোও কম না।আমারে দেখতে চাস।তাহলে এই দেখ আমি কে?
সাদা কাপড়ে বিশাল আকারের দৈত্যের মতো উঁচু হাওয়া ভেসে এসে একটু দূরে বিশাল লম্বা চুলগুলো ছেড়ে বসে আছে।দুই পা দুই দিকে ছড়িয়ে দিয়েছে।এমন ভয়ংকর দৃশ্য দেখে হুজুরের কলিজা কেঁপে ওঠে।হুজুর কাঁপতে কাঁপতে বলে।
ওরে বাবা-রে এটা কি রে?
লা ইলাহা ইল্লা আংতা সুবহানাকা ইন্নী কুংতুু মিনাজ জোয়ালিমিন।হুজুর দোয়া পড়তে পড়তে ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে যেতেই এক সাথে হি,হি,হি করে হেসে উঠে।
মিলন আমার কাঁধ থেকে তাড়াতাড়ি নাম।হুজুর মনে হয় বেহুশ।
দাঁড়া নামতাছি।মিলন সাজুর কাঁধ থেকে নেমেই নিজের মাথার ওপর থেকে কাক তাড়ুয়ার নামিয়ে সেটার ওপর থেকে লম্বা চুল এবং সাদা কাপড় সরিয়ে হুজুর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
আরে বাশঁস।ভাই এই পল্টি মুরগী দেখি ভয়ের ঠেলায় মাঝ রাস্তায় এক নাম্বার কাম সাইরা লাইছে।হুমমম।ছি,কি বিচ্ছির গন্ধ?
মনে হয় ভয় পাইছে।
ভয় পাইছে মানে খুব ভয় পাইছে।তয় আমগো কাম এহন শেষ হয় নাই।আরো বাকি আছে।ওর জ্ঞান ফিরাও।
হুম।ফিরাচ্ছি।আবার আগের রুপে চল।মিলন,সাজু আবার নিজেদের আসল রুপে চলে আসলো।হুজুরের জ্ঞান ফিরে আসতেই।
কি রে আবুল কালামে পুত।কেমন দেখলি?আমি খুব সুন্দরী পেতনী।তাই না বলল,
হুম,হু..ম খু..ব সু..ন্দ..র
ওমা,তাই বুঝি।চল,এখনই চল।তুই আমারে বিয়া করবি।বিয়ার পর তোরে আমি মানুষের র*ক্ত পান করামু!হেব্বি মজা হইবো।তারপর তোর গাড় ম*টকায়।আমি তোরে ক*টমট করে খামু।আহা মা*নুষের মাং*স সেই স্বাদ।কতদিন হইলো মানুষের মাং*স খাইনা।হুজুর সামনে আরো কয়েক কদম বাড়াতেই।সে উঠে উল্টো পথে দৌড় দেয়।কিন্তু পালাতে পারে না।ঢোলকলমি বারি মারতে মারতে বলল,
কি’রে আবুল কালামের পোলা?আমারে বিয়া না কইরা কই যাস।তোর বিয়া করতেই হইবো।তুই বিয়া না করলে আজকে শেষ।খাড়া তুই।হুজুর নিজের জান নিয়ে পালাতে লাগল।কিন্তু ঢোলকলমি বাড়িতে তার, হাত,পা,পিঠ কোনো কিছু রেহায় পায়নি।তবুও কোনো রকম জান নিয়ে পালালো।হুজুরের পাঞ্জাবি ছিঁড়ে গেছে মা’রের চোটে।সে পালিয়ে দূর হাওয়া হতেই মিলন,সাজু হাসতে হাসতে মাটিতে বসে পড়ে।
হু,মিলন।বেডা খচ্চর।সেই ভয় পাইছে।আর জীবনেও এই গ্রামে আসব না।
১৩৬.
পুতুল গ্রামে যাওয়ার জন্য কাপড়ের ব্যাগ গুছিয়ে রাখল।সকালেই রওনা হবে।এইদিকে অর্পনের রাগ লাগছে,আবার কান্না পাচ্ছে।কিন্তু সে কাঁদবে না।বউ তার ভালোবাসা একটুও বুঝে না।কেমন পাষাণী মেয়ে।বরকে তোও একবার জিজ্ঞেস করতে পারতো।তুমি যাবে?কিন্তু না তা করিনি।উল্টো নিজে একাই মামার বাড়ি চলে যাচ্ছে।অথচ যার মামা শ্বশুর বাড়ি।তাকে একটিবার বলো না।নিষ্ঠুর প্রিয়তমা।
কাল রাতে যার মনটা ছিল খুব খারাপ।এখন তার মুখে হাসি।মুখে মধু।তার এমন পাগলামিতে পুতুল সায় দিলো না।তাতে অর্পণের কি?প্রিয়তমা অবশেষে তাকে নিয়ে যাচ্ছে।এতেই তার আনন্দ ধরে না।সে এত আনন্দ কোথায় রাখবে।কোলবালিশে নাকি কলিজার ভিতরে বুঝতে পারছে না।এই প্রথমবার শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার ব্যাপারটা জোস।
উঠোনে পা রাখতে বাড়ির বারান্দায় ছোট ভাইকে দেখতে পায়।পুতুল নিজে এগিয়ে গিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে সালাম দিলো।রিফাত ফ্যাকাসে মুখে একটু হাসি দিয়ে বোনের কোলে মাথা রাখল।রিফাতের কাজে পুতুল অবাকই হয়।রিফাত কখনো তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে না।আজ কি হলো?হয়তো ভাইয়ের মন ভালো নেই।তাই ছোট ভাইয়ের কপালে ভালোবাসার পরশ একে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
এইদিকে নতুন জামাই বাড়িতে আসছে।রেনু তাড়াতাড়ি লেবুর শরবত করে দিলো।অর্পণ লেবুর শরবত অর্ধেক খেয়ে বাকিটুকু রেখে চলে গেলো।পুতুল তার কাজ কর্ম সব দেখেছে।বাকি শরবত টুকু যে তার জন্য বরাদ্দ সেটা আগেই বুঝতে পেরেছে।তাই কোনো বনিতা ছাড়াই চুপচাপ খেয়ে নিলো।
স্বাধীনের সাথে অর্পণ বাজারে এসেছে।স্বাধীনকে কোনো বাজার করতে দেয়নি।বরং নিজের মন মতো বাজার নিয়ে বাসায় পথে এগিয়ে যাচ্ছে।আজ দুপুরে রান্না হবে।টুকরিতে এত বাজার দেখে রেনুর মাথায় হাত।
আল্লাহ এত বাজার কে খাবে?
কেন?আমরা সবাই খাবো।
তাই ব’লে এত বাজার।আল্লাহ এগুলো নষ্ট হইবো।শুধু শুধু এত বাজার করলে।
কোনো নষ্ট হবে না।যা আছে সব রান্না করেন।আজ আমার তিন শালা পেট পুড়ে খাবে।তাদের সাথে আমি,আপনি,আমরা সবাই থাকব।
পুতুল ওড়না দুই পেচ দিয়ে তরকারি কা*টঁতে বসে।রেনু বড় রুই মাছ কা*টছে।মাছের পরে মুরগী মাংস পিছ পিছ করে নিচ্ছে।গরুর মাংস আলাদা বোলে রাখা।মিলন,সাজু আদা,রসুন,এবং পিঁয়াজের খোসা ছাড়িয়ে রাখছে।স্বাধীন অর্পণের এমন বাজার করায় খুশি হয়নি।কিন্তু ছেলেটা খুশি মনে যখন করতে চাইছে তখন না করেনি।তবে অর্পণের পরিবারকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।তারা আসছে।
দুপুর দুইটা মধ্যে সব রান্না শেষ।সবাই মিলে একসাথে ভোজন করছে।পুতুল শ্বশুর বাড়ি সবাইকে আসতে দেখে সালাম বিনিময় করে।রাবেয়া ছেলের এবং ছেলের বউয়ের খোঁজ খবর নিলো।তারা পড়াশোনা।তার ঢাকার দুই কামরা ছোট্ট সংসার কেমন লাগল?পুতুলের খুশীতেই রাবেয়া খুশী হলেন।
চলবে….
আসসালামু আলাইকুম।কেমন আছেন সবাই? গল্প কেনো দেওয়া হয়নি।আমি বাইকের সাথে ধাক্কা খেয়ে হাত এবং পা দুটোই প্রচন্ড আঘাত পেয়েছি।তবে ভাঙ্গে নিই।ঘা রয়েছে।কথা দিয়ে কথা রাখতে না পারায় আমি সত্যি সরি।
এখনোও পুরোপুরি সুস্থ নই।তবুও লিখেছি।গল্পটা শেষ পর্যায়।আস্তে আস্তে লিখে শেষ করে দিব।অপেক্ষা করানো জন্য আবারও সরি।