#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩০
নিঝুম গাড়ি থেকে নামল। রিয়া গাড়ির ভেতর থেকে বলে উঠলো, “এটা তোমার বাসা?
নিঝুম মুখ তুলে তাকাল ভবনের দিকে। অতঃপর মাথা নাড়ল। রিয়া বলে উঠল, “যাও তাহলে, অনেক রাত হয়েছে।
নিঝুম বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ল। আজ এই প্রথমবার রিয়া কে তার অনেক ভালো মনে হচ্ছে। তা না হলে এই এতো রাতে তাকে লিফট দিত না সে। নিঝুম তাকে কিছুই বলে নি, নিজ থেকেই রিয়া তাকে নিজের গাড়িতে উঠতে বলেছিল।
দিয়া এই নিয়ে কয়েকবার ফোন করল তানিশার ফোনে , কিন্তু সে ফোন’ই ধরছে না। রিয়া বলে উঠে, “কিরে খবর পেলি?
দিয়া মাথা নাড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। নিঝুম কাঁধের ব্যাগ টা শক্ত করে ধরে বাড়ির দিকে হাঁটা ধরল। গাড়ি চলে যাবার শব্দ পাচ্ছে সে। কলিং বেল বাজাতেই মা এসে দরজা খুলে দিলেন। নিঝুমের মুখের দিকে তাকিয়ে চট করে বলে উঠেন, “কিরে তোর কি হলো আবার?
চোখের চশমা নামিয়ে উড়নার আঁচল দিয়ে মুছতে মুছতে ঘরে ঢুকল নিঝুম। চশমাটা আবারো চোখে পড়ে বলল, “কি হবে মা?
“এতো মন মরা লাগছে কেন?
ধক করেই কেমন একটা লাগল নিঝুমের কাছে। মা কি এতোটাই বুঝে তাকে। কথা ঘুরানোর উদ্দেশ্য চট করেই হেসে বলল, “হ্যাঁ মনটা খারাপ!
“কেন খারাপ? কেউ কিছু বলেছে। এই জন্যই বলি এতো রাত করে বাড়ি আসতে না। রাস্তার কোন বখাটে ছেলে নিশ্চয়ই কিছু বলেছে।
“না মা তেমন কিছু না।
“তাহলে?
“তিশা আপু আজ চলে গেছে।
“তিশা কে?
“ইফার আত্নীয়। আমি আপু বলেই ডাকতাম।
“কিন্তু কোথায় গেছে?
“তার দেশে, আজ রাতেই ফ্লাইট ছিল। তাই মনটা খারাপ।
“ওহ তাই বল। এতে মন খারাপের কি আছে। এসেছিল তো বেড়াতে, বেড়ানো শেষ এখন চলে গেছে। তোদের সাথে মায়া বাড়িয়ে এখানে থেকে তো লাভ নেই। যা মুখ হাত ধুয়ে আয় খাবার বাড়ছি।
“মা আমি খেয়েই এসেছি, ঘুমাবো এখন। তুমি খেয়ে নাও।
“কি বলছিস খেয়ে এসেছিস। একটু খেয়ে নে।
“না আর ইচ্ছে করছে না।
বলেই নিজের ঘরে ঢুকে পড়ল নিঝুম। কাঁধের ব্যাগ টা বিছানায় রেখে ওয়াশরুমে গেলো সে। চশমাটা খুলে চোখে মুখে জল ছিটিয়ে মুখ তুলে তাকাল আয়নার দিকে। সবকিছুই এখন ঝাপসা তার কাছে। নিজের মুখটা অবদি দেখতে পারছে না সে। মানুষের জীবনের প্রতি পাতায় মনে হয় এমনই ঝাঁপসা। তাই কেউ ইচ্ছে করলেই অন্যের জীবনের বই টা পড়ে নিতে পারে না। এই জন্য যে চশমা দরকার তা বোধহয় এখনো আবিষ্কার হতে পারে নি।
বিছানায় এসেই ধপ করে শুয়ে পড়ল নিঝুম। আজকের এই একটা রাত, এই একটা রাতে কতো কিছুই না বদলে গেল। একটা চক্রের মধ্যে থাকা তিনটি মানুষের জীবন! কিভাবে বদলে গেল! কে জানতো তিশা এমনভাবে চলে যাবে। আহনাফের হবে এমন হাল। আর তানিশা! ওর কথা কি বলবো, মেয়েটা যেখানে ছিল সেখান থেকেই ছুটে এসেছে। আচ্ছা ওর তো খুশি হবার কথা , তিশা চলে গেছে তার পথ থেকে। এখন তার পথ সহজ, আহনাফ কে পেয়ে যাবে সহজেই। কিন্তু তবুও সে কাঁদল!আহনাফের কষ্টে সেও কষ্ট পেল। কিন্তু কেন?
বোধ হলো তার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। সেও কি কাঁদছে, আহনাফের কষ্টে সেও তো কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু কেন? তবে কি তানিশা আর সে একই পথের যাত্রী!
নিঝুম দীর্ঘশ্বাস ফেলল, এসব কি ভাবছে সে। তার জীবনটা কেন জড়িয়ে নিচ্ছে এতে। কি দরকার জড়ানোর! ফোনটা বের করল, আচ্ছা আহনাফ কে কি একবার কল করবে। জিজ্ঞেস করবে , সে কেমন আছে ? কি করছে? তার মন কি এখনো খারাপ!
——
পরদিন ভোরে, নিঝুম চোখ মেলে তাকাল। কখন ঘুমিয়ে পড়ল সে! কিছুই মনে পড়ছে না। হাতের মুঠোয় এখনো তার ফোনটা। মনে পড়েছে, আহনাফ কে কল করবে কি না এসব ভাবতে ভাবতেই কি তবে সে ঘুমিয়ে পড়েছিল। বিছানা ছেড়ে উঠল। শরীরে এখনো কেমন এক ক্লান্তির অনুভব করছে। চোখের চশমা টা পড়ে ঘড়ির দিকে তাকাল নিঝুম। ৫.৩০ বাজে! এতো ভোরে উঠার কোন কারণ কি আছে? নিঝুমের ঘরে কোন বেলকনি নেই, আছে শুধু একটা জানালা। সেখানে দাঁড়িয়েই দেখল, আকাশ এখনো মেঘে ঢাকা। চারদিক আঁধার! আলোর একটু চিহ্ন নেই মাত্র। বসার ঘর থেকে হাঁটাহাঁটির আওয়াজ আসছে। মা বোধহয় তজবি হাতে হাঁটাহাঁটি করছে। বাবা নিশ্চিত নামাজ পড়তে গেছে। আসবে খানিকক্ষণ বাদে। আচ্ছা নামাজের সময় তো এখনো আছে, সে কি ফজরের নামাজ’টা পড়েই নিবে। নিঝুম চুল গুলো খোঁপা বাঁধতে বাঁধতে ওয়াশরুমে ঢুকল।
——
ভার্সিটিতে এসে এতোটা অবাক হবে এটা নিঝুমের ধারনায় ছিল না। সে ভাবতেই পারে নি আহনাফ আজ ভার্সিটিতে আসবে। তার মুখে গতরাতের ক্লান্তির বিন্দুমাত্র ছাপ নেই। কিভাবে সম্ভব! নিঝুম অবাক চোখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আহনাফের চোখ এতোক্ষণে পড়েছে নিঝুমের উপর। তারা সব বন্ধুরা মিলে এখানেই আড্ডা দিচ্ছিল। হাসতে হাসতে কথা বলছিল আহনাফ, ইশ দেখতে কি সুন্দরটা’ই না লাগছিল তাকে।
“আরে নিঝুম, দাঁড়িয়ে আছো কেন কি? আসো এখানে আসো।
নিঝুম এখনো ঘোরের মাঝে আছে। আহনাফ হাত টেনে এগিয়ে নিয়ে এসে বসাল তাদের সাথে। বট গাছটার নিচে বসে আছে সবাই। আহিম , আফিন, নীলাভ্র আর আহনাফ তারা চারজন’ই শুধু এখানে। অশান্ত কে চোখে পড়ছে না তার। তবে কি এখনো আসে নি অশান্ত। ইফা আর তিথি কে অবশ্য দেখা গেল এখন। আহনাফ গত ক্লাসের একটা টপিক নিয়ে সবাইকে লেকচার দিতে লাগল। স্বাভাবিক ভাবেই সবাই সেটা শুনছে। গতরাত এখন নিঝুমের কাছে দুঃস্বপ্ন বলে মনে হলো।
অশান্ত এসেছে! হাঁটতে হাঁটতে এখানে আসতেই আহনাফ মুখ তুলে তাকাল তার দিকে। মুহুর্তেই মুখের রঙ বদলে গেল। অশান্ত’র মুখটাও মলিন।নিঝুম কিছুই বুঝতে পারছে না। হইচই মুখর পরিবেশ এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে নিরব হয়ে গেল। অনেকক্ষণ পর অশান্ত ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা দেখা গেল। আহনাফ ও হাসল। অশান্ত কোমরে দুই হাত রেখে বলল, “এই মিস চশমিশ উঠো ওখান থেকে!
“কেন?
“এটা আমার জায়গা।
“কোথায়? এখানে কি আপনার নাম লেখা আছে।
“আলবাদ আছে, আহনাফের পাশে সবসময় শান্ত’ই বসে। তাই তুমি উঠো ওখান থেকে।
“ওটা অশান্ত হবে আর..
হঠাৎ মনে পড়ল সে আহনাফের পাশেই বসে আছে। এতোক্ষণ মাথায় ছিল না এটা। নিঝুম উঠে যেতে নিল। আহনাফ তার হাত চট করে ধরে বলল , “নিঝুম তুমি এখানেই বসো।
“তাহলে আমি বসবো কোথায়?
“ওখানে বস! লেট করে কেন এসেছিস। তোর আরো আগেই আশা উচিত ছিল। যখন আসিস নি তখন তোর জায়গা আর তোর নেই।
শান্ত চোখ ছোট ছোট করে তাকাল আহনাফ আর নিঝুমের দিকে। মুখ ভেংচি কেটে এসে বসল তিথির সাথে।তিথির দিকে ফিরে চট করে বলল, “তোমার এখানে কারো বসার জায়গা নেই তো।
তিথি দ্রুত মাথা নেড়ে বলল, “না না, নেই !
শান্ত আবারো মুখ ভেংচি কাটল। আহনাফ নিঝুমের কানের কাছে বলল, “জানো ওকে কেন এখানে বসতে দেই নি , ওর শরীর থেকে বিড়াল বিড়াল গন্ধ আসে।
আহিম হালকা কেশে বলল, “কিন্তু গতকাল রাতে কে যেনো বিড়াল কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছিল।
নিঝুম মুখ ফিরে আহনাফের দিকে তাকাল। বলে উঠল, “বিড়ালে না আপনার এলার্জি!
শান্ত বলে উঠল, “ওর নাম অমি! বিড়াল বিড়াল কেন করছো?
“যার যেটা নাম সেই নামেই ডাকছি।
শান্ত জোর গলায় ডাকল, “মিস চশমিশ!
“মানে!
“যার যেই নাম সেই নামেই তো ডাকছি!
নিঝুম রাগ সংগত করে হেসে বলল,
“তাইতো , তেমন আপনিও অশান্ত!
“ঝুম ঝুমাঝুম ঝুম!
“এই এই একদম আমার নামকে নষ্ট করবেন না।
“একশবার করবো।
আহনাফ নিঝুমের মাথায় হাত রেখে বলল, “ঠান্ডা ঠান্ডা ঠান্ডা!
অশান্ত গলা ফাটিয়ে হেসে বলল, “ওটা ঠান্ডা না, কুল কুল হবে । তাই না।
কথার অর্থ কেউই বুঝল না। শুধু মাত্র নিঝুম মুখ ফুলিয়ে বলল, অশান্ত!
—-
ক্লাস শেষে তিনজন দল বেঁধে বের হলো। দেওয়ালের ওপাশে থাকা তানিশার কন্ঠস্বর হতবাক করে দিল নিঝুম কে। এতোক্ষণ যেটা সবার কাছে আশা করছিল সেটা এখন তানিশার কাছে পাচ্ছে সে। হ্যাঁ গতরাতের প্রভাব এখনো আছে তার উপর। রিয়ার শান্ত গলার স্বর ভেসে আসছে, “তুই এতো কেন ভাবছিস!
“ভাবছি! কারণ আহনাফ বদলে গেছে।
“না ও ভুলে যেতে চাইছে।
দিয়া বলে উঠল, “হ্যাঁ তানিশা, আহনাফ ঠিক আছে। তুইই একটু বেশি বেশি ভাবছিস।
তানিশা কঠিন গলায় বলে উঠল, “আহনাফ কষ্টে আছে তোরা কেউ সেটা বুঝতে পারছিস না। আহনাফ হচ্ছে মুখোস ধারী একটা লোক। সেই দলের সঙ্গী হচ্ছে শান্ত! দু’জনে মিলে চাইছে আমাদের থেকে আলাদা হতে। তাই সবাইকে নিজের মতো করে নাচাচ্ছে তারা, তোরা কি কেউই সেটা বুঝতে পারছিস না।
পুরো কথাটা শুনে নিঝুম থমতম খেয়ে গেল। হঠাৎ ইফা তার হাত টেনে নিয়ে এলো সেখান থেকে। নিঝুম বলে উঠল, “এটা কি সত্যি ইফা!
“তুই এসবে পড়িস না নিঝুম।
“আহনাফ ঠিক নেই..
“হ্যাঁ ঠিক নেই , কিন্তু এতে আমাদের কারোর’ই কিছু করার নেই। কারণ সমস্যাটা একদম তার ব্যক্তিগত। সবার নিজের নিজের গোপনীয়তা থাকে নিঝুম।
তিথি বইগুলো হাতে শক্ত করে মুঠো ধরে কাঁপতে কাঁপতে বলল, “কিন্তু এভাবে একা কষ্ট পাওয়া কি ঠিক!
ইফা নিঝুমের হাত ছেড়ে দিল। তার চোখেও সেই একই প্রশ্ন। পাশ ফিরে মাঠের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো। তার ঠোঁটে হাসির কারণ কেউই বুঝলো না। ইফা কে উদ্দেশ্য করে তারাও তাকাল সেখানে। শান্ত আর আহনাফ দাঁড়ানো। দু’জনে ঝগড়া করছে কিংবা মারা*মারি। শান্ত আহনাফের মাথায় বই দিয়ে মেরে দৌড় দিল। আহনাফ ও ছুটছে তার পিছন পিছন। ইফা বল উঠল, “শান্ত ভাইয়া থাকতে তা সম্ভব না!
—-
বাসের জন্য দাড়িয়ে ছিল নিঝুম। হঠাৎ করেই বাইকের শব্দ আসতে লাগলো। খুব জোড়ে আসছে সেই আওয়াজ। নিজ মুখ ফিরে তাকাল। বাইক গুলো তার দিকেই এগিয়ে আসছে। সে ভয়ে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে রইল। বাইকগুলো দ্রুত গতিতে তার পাশ দিয়েই গেল। হঠাৎ থেমে যাবার শব্দ পেয়ে নিঝুম চোখ মেলে তাকাল। হেলমেট’র মুখ তুলে অশান্ত তাকাল নিঝুমের দিকে। বলে উঠল, “মিস চশমিশ!
একদল হাসির শব্দ। নিঝুম হা হয়ে তাকিয়ে রইল। এটা ছিল আহিম , নীলাভ্র আর অশান্ত। এই বজ্জাত অশান্ত তাহলে তাকে ভয় দেখালো। নিঝুম রেগে এগিয়ে যাবার আগেই তারা বাইক নিয়ে চলে গেল। রেগে মাটিতে এক পা দিয়ে বারি মারল নিঝুম। চোয়াল শক্ত করে বলল, “দেখে নিব এই অশান্ত!
“কার উপর এতো রেগে আছো?
নিঝুম হঠাৎ থতবত খেয়ে গেল। পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখল আহনাফ গাড়ির কাচ নামিয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। নিঝুম ধীরে ধীরে তার নামটা উচ্চারণ করল। আহনাফ হেসে গাড়ির দরজা খুলে বলল, “বসো!
নিঝুম বসল না দাঁড়িয়ে রইল। আহনাফ তার হাতে টেনে ধরে বসাল। নিঝুম অনেকটা অবাক হলো। আহনাফ তার হাত ছেড়ে গাড়ি ড্রাইভ শুরু করল। বলে উঠল, “সিট বেল্ট বাধো।
নিঝুম হতচকিয়ে উঠল। দ্রুত সিট বেল্ট বাঁধল সে। আহনাফ হাসল। বলে উঠল, “আমি মনে হয় তোমাকে ভয় পাইয়ে দিলাম।
“হ্যাঁ মানে না।
“কার উপর রেগেছিলে?
“অশান্ত’র!
“আবার জ্বালিয়েছে তোমায়।
“উনি সবসময়ই আমাকে জ্বালাতন করে।
আহনাফ হাসল। নিঝুম মুগ্ধ চোখে সেই হাসির দিকে তাকিয়ে রইল। আহনাফ বলে উঠল, “আমি জানি আমার হাসি সুন্দর, কিন্তু তুমি এভাবে তাকিয়ে থাকলে তো নজর লাগিয়ে ছাড়বে।
নিঝুম হেসে বলল, “আপনি সবসময় হাসবেন আহনাফ। হাসলে আপনাকে দারুন লাগে।
আহনাফ লজ্জা পেল। সে আবারো হেসে তাকাল নিঝুমের দিকে। নিঝুম হেসে বলে উঠল, “সত্যি বলছি আমি। গতরাতে যখন আপনি মন… থেমে গেল নিঝুম। না না গতরাতের ঘটনাটা তুলে ধরা একদম ঠিক হয় নি। আহনাফের মুখেও হাসিও চলে গেছে এখন। নিজের উপর’ই রাগ হতে লাগলো নিঝুমের। ঠোঁট কামড়ে মুখ ফিরিয়ে নিল সে। নিজেকে গালাগাল করতে লাগলো। আহনাফ স্পষ্ট স্বরে বলে উঠল, “সরি নিঝুম!
নিঝুম চমকে গেল। আহনাফ দ্বিতীয় বার বলল, “সরি! গতকাল তোমার সাথে ওভাবে কথা বলা আমার উচিত হয় নি।
নিঝুম চোখের পাতা ফেলে ফেলে তাকিয়ে রইল। আহনাফ হেসে বলল, “ক্ষমা করে দিও আমায়।প্লিজ গতরাতের কথা গুলো মনে রেখো না।
নিঝুম হেসে বলল , “ডিলেট!
“হ্যাঁ ..
“মেমোরি ডিলেট। অনেক আগেই করে ফেলেছি।
“উদ্ভট কথা বলো তুমি নিঝুম।
নিঝুম খিলখিলিয়ে হাসল। আহনাফ চোখ ফিরিয়ে তাকাল হাসির দিকে। গাড়ি থামিয়ে দিল সে। নিঝুম বাইরে তাকাল। কফি হাউসের সামনে তারা। আহনাফ নিঝুমের দিকে ফিরে বলল, “এই সুন্দরী! তুমি কি আমার সাথে এক কাপ কফি খাবে প্লিজ!
নিঝুম আবারো খিলখিলিয়ে হাসল। আহনাফও সেই হাসির সাথে যোগ দিল।
গরম কফির ধোঁয়া দেখছে নিঝুম। হঠাৎ কেন জানি এই কাজটা করতে ভালো লাগছে তার। আহনাফ কফি মগে চুমুক দিয়ে বলল, “তুমি জানো এই জায়গা টা আবার অনেক প্রিয়।
“অনেক শান্ত বলে!
“যাক তুমি শান্ত’র নামটা ঠিক ভাবে নিলে।
“না না আমি উনার নাম নেই নি।
আহনাফ মুখ টিপে হেসে বলল, “আমি শান্ত কে বলবো এই কথা।
“এই না না একদম না। আমি কখনো উনাকে ঠিক নামে ডাকবো না। কখনো না। আপনি আমাকে ফাসাচ্ছেন আহনাফ।
আহনাফ আবারো কফি মগে চুমুক দিল। নিঝুম ও এবার কফি মগে চুমুক দিচ্ছে। আহনাফ চোখ নামালো। তার হাতের দিকে তাকালো সে। গতরাতে অজান্তেই একটু আঘাত পেয়েছিল সে। সেই ক্ষত স্থান টা এখনো পুরোপুরি ভাবে শুকায় নি। শান্তও জানে না এই কথা। থাক না , না জানুক। নিজের কষ্ট গুলো একান্তই থাকুক। কিন্তু কতোদিন রাখবে সেটা জানা নেই। শান্ত ঠিক খুঁজে বের করবে। শান্তকে কিছু না বললেও অনেক কিছু বুঝে ফেলে সে। আহনাফ কোনমতে চায় না শান্ত তা বুঝুক। কখনো না!
নিঝুম এর মাঝেই ডাকল তাকে , “আহনাফ!
আহনাফ মুখ তুলে তাকাল। কিন্তু একি! এটা তো তিশা! খিলখিলিয়ে হাসছে সে। কফি মগে চুমুক দিয়ে বলছে, “কফিটা দারুন হয়েছে আহনাফ।
আহনাফ চোখ বন্ধ করে নিল। এটা তার কল্পনা। তিশা নেই চলে গেছে, তার জীবন থেকে চলে গেছে সে। আর কখনো ফিরে আসবে না কখনো। আহনাফ দ্বিতীয় বারের মতো চোখ মেলে তাকিয়ে দেখল নিঝুম বসে আছে। সে তার চশমাটা টিস্যু দিয়ে পরিষ্কার করছে। আহনাফ নিঃশ্বাস ফেলে কিঞ্চিত হাসল!
#চলবে….