#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩১
নিঝুম ফোনে আবহাওয়া’র খবর নিচ্ছে। তার মাথায় কিছু একটা ঘুরপাক খাচ্ছে। আজ অশান্ত’র একটা বন্দোবস্ত করতে হবে। সবসময় তার পিছনে লাগা। হুহ আজ দেখিয়ে দেবে সে। আজ বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা আছে। আজ অশান্ত কে এমন ভাবে ভয় দেখাবে না যে অশান্ত সারাজীবন মনে রাখবে। ভেবেই মুচকি হাসল নিঝুম।
তানিশা গাড়িটা পার্ক করে সবে ক্লাসের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরল। কিন্তু তবুও হঠাৎ কি মনে পড়ায় ক্যাম্পাসের দিকে হাঁটা ধরল সে। বট গাছটার নিচে বসে আছে আফিন, রিয়া আর দিয়া! দিয়া বসে আফিন আর রিয়া কে পচিয়ে যাচ্ছে। তানিশার দুটি আঁখি খুঁজছে আরেকজন কে। পেছন থেকে আহিম তার মাথায় বেড়ে বলল, “কিরে?
তানিশা ভ্রু কুঁচকালো। ঠিক আবারো কেউ মাথায় বাড়ি মারল। তানিশা মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে দেখল নীলাভ্র। এক গাল হেসে তার গাল টানল সে। তানিশা রুদ্ধ চোখে সামনে ফিরে বলল, “সমস্যা কি তোদের! কি শুরু করলি আমার সাথে।
“আরে কোন সমস্যা না, মনে হচ্ছে দিন দিন তুই বেঁটে হয়ে যাচ্ছিস!
“কিহহ?
“হ্যাঁ তাই।
তানিশা চুপ হয়ে গেল। এখন মনে হচ্ছে আবারো কেউ আসছে। আসুক ,ভালোয় ভালোয় গেলেই হয়। যদি এখন তার মাথায় বারি মারতে যায় তাহলেই খবর করে ছাড়বে। তানিশার খুব খেয়াল, হ্যাঁ তানিশার কাছ অবদি এসে পড়েছে সে। হাত উঠিয়ে নিয়েছে সবে , তানিশা সাথে সাথে ঘুরে তার হাত ধরে মুচড়ে দিল। ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠল সে। তাকিয়ে দেখল শান্ত!
“তুই!
“আহ লাগছে ছাড় আমায়।
তানিশা ইচ্ছে করে হাতটা আরেকটু মুচড়ে বলল, “আর বারি মারবি আমার মাথায়!
“না না কখনো না। ছাড় আমার হাত। কি শক্তি রে তোর।
তানিশা হাত ছেড়ে দিল। শান্ত হাতের দিকে তাকিয়ে দেখল হাত লাল হয়ে গেছে। শান্ত মুখ ফুলিয়ে বলল, “কি করেছিস তুই।
“যা করেছি বেশ করেছি। তোরা বার বার এসে আমার মাথায় বারি মেরে যাবি আর আমি কিছুই বলবো। বলতো তোদের মতলব টা কি?
আহিম হেসে তাকাল শান্ত’র দিকে। শান্ত তানিশার গলায় হাত রেখে বলল, “তুই ছোট খাটো একটা মানুষ!
“এই রাখ তো! আমি ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি! আমাকে তোর খাটো মনে হয় কোন দিক দিয়ে। খাটো তো ওই চশমিশ! তুই জানিস ও আমার ঠিক এইখানে পড়ে।
শান্ত হেসে বলল, “তুইও আমার এখানেই পরিস। তার মানে তুই আমার চেয়েও বেঁটে!
রিয়া মুখ ফুটে বলে উঠলো, “এই তোরা কি শুরু করলি। এতো কিছু থাকতে শেষে কি না এই টপিক।
“আহ! রিয়া আপার জ্বলছে, কারণ সেও একটু বেঁটে।
রিয়া মুখ ফুলিয়ে রইল। শান্ত হাসতে হাসতে সামনে এগিয়ে গেল। তানিশা দুই হাত বাহুতে গুজল। বোঝাই যাচ্ছে এখানে আবহাওয়া অনেক ভালো তবে আকাশের আবহাওয়ার ঠিক নেই। মেঘ গুলো জড়ো হচ্ছে, কোন একসময় ঝুম বেয়ে বৃষ্টি নামবে। খুব ভালো লাগবে , অনেক দিন হয়েছে বৃষ্টিতে ভেজা হয় না। আজ বৃষ্টিতে ভিজবে সে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। খুব অদ্ভুত ধরণের একটা শান্তি পাওয়া যায় এতে।
হঠাৎ তানিশা খুব অস্থির বোঝ করল। তার পিছনে আবার কেউ দাঁড়িয়ে , কিন্তু কে? সেও কি তার মাথায় এখন বারি মারবে। তানিশা অনুভব করছে সে তার হাত উঠালো। তানিশা ঘুরে তার হাত ধরে বলল, “এই তুই আবার কে?
তার মুখ থতমত বাকি সবাই হতবাক। আহনাফ দাঁড়ানো তার সামনে। তানিশা কাঁপতে কাঁপতে আহনাফের হাত ছেড়ে দিল। আহনাফ তার চুলের উপর পড়ে থাকা পাতাটা সরিয়ে বলল, “আমি!
হঠাৎ মুখ টিপে হাসির শব্দ পাওয়া গেল। তানিশা সাথে সাথে পিছন তাকাল। নাহ এখন আর হাসির আওয়াজ নেই সবাই চুপ। তানিশা অজুহাত দেখিয়ে বের হতে নিল, সাথে সাথে ধাক্কা খেল আহনাফের সাথে। বিচলিত হয়ে পড়ল সে। আহনাফ কপাল কুঁচকে আছে। কি করছে এসব সে? আহনাফ সামনে আসলেই সব যেন এলোমেলো হয়ে যায়। “সসরি” বলেই পাশ বেয়ে চলে যেতে নিল। হঠাৎ মনে হলো আহনাফ তার হাত ধরে ফেলল। বাকি সবাই এটা দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল। তানিশা বিস্মিত চোখে তার দিকে ফিরল। আহনাফ হেসে বলল, “সাবধানে চলাফেরা করো!
বলেই হাত ছেড়ে দিয়ে চলে গেল। তানিশা এখনো ঘোরের মাঝে। কিছু না বুঝেই আবার হাঁটা ধরল সে। কিছু দূর যেতেই দাঁড়িয়ে পড়ল সে। তখন কি হলো মনে করতে লাগল। তানিশা তার কাঁধের ব্যাগটা শক্ত করে ধরল। হঠাৎ কেন মনে আহনাফ এতে কোন চিরকুট দিল নাকি এটা তার কল্পনা। হেলুসেশন হচ্ছে নাকি তার। না না এটা হতেই পারে না। তবুও মন কে শান্ত করতে ব্যাগে হাত রাখল সে। কিছু একটা তো পেল। তানিশা তার মুঠো করে নিল। বের করতেই দেখতে পেল চিরকুট! তার ব্যাগে চিরকুট এলো কোথা থেকে? হতভম্ব সে! পুরো শরীর কম্পিত হচ্ছে তার। কি হচ্ছে কি তার সাথে। গলা শুকিয়ে আসছে বার বার। উত্তেজিত হয়ে পড়ছে। পানির বোতল বের করে ঠক ঠক করে পানি খেল সে। অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে অনেক সাহস করে খুলল সেই চিরকুট। বাহ্! কি সুন্দর হাতের লেখা। গোটা গোটা অক্ষরে লেখা আছে, “সরি ফর দ্যাট নাইট!
——
শান্ত’র কানে হেডফোন, সে দাঁড়িয়ে আছে সিঁড়ির পাশে। ক্লাসে যাবার কোন ইচ্ছা নেই তার। সেই তো স্যারের একগাদা লেকচার! কি করবে লেকচার শুনে, আহনাফের ধৈর্য্য আছে বটে, নাহলে এতো এতো লেকচার শুনে কিভাবে। শান্ত গেইম খেলেছ ফোনে। খুব মনোযোগ দিয়ে খেলছে সে। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে নিঝুম। অশান্ত তাকে দেখেও দেখল না। মিস চশমিশের এতে তেমন কিছু আসে যায় না। সেও এমন ভাব করল সে উপরে উঠছে। সিঁড়ি পেরিয়ে উপরে উঠে গেল সে। আবার উপর থেকে উঁকি মারল নিচে। বাইরে তাকাল, পুরো আকাশ এখন মেঘে ঢাকা। চশমিশ খুব সাবধানে নিচে নামল। অশান্ত পিছনে এক ধাপ সিঁড়ির উপর দাঁড়িয়ে আছে সে। খুব কৌশলে নিজের ব্যাগ থেকে বের করা কাগজে মোড়ানোটা পাউডার টা অশান্ত’র চুলের উপর ফেলল। অশান্ত কিছুই বুঝতে পারল না। নিঝুম হাতে মুঠ করে মুখ টিপে হাসতে লাগল। অতঃপর যেই না উপরে উঠতে যাবে অমনি অশান্ত তার দিকে ফিরল। চশমিশ দম বন্ধ করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। অশান্ত কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি আমার পিছনে দাঁড়িয়ে কি করছো?
“কিছুই না!
বলেই চশমিশ দৌড়ে চলে যেতে নিল। কিন্তু তার আগেই অশান্ত তার হাত ধরে দেওয়ালের সাথে ঠেকাল। চশমিশ সাথে সাথেই হাত মুঠ করে নিল। অশান্ত তার দিকে ঝুঁকে বলল, “কি করছিলে তুমি বলো তো?
“ককই কিছুই তো করি নি।
“একদম মিথ্যে বলবে না। আমি দেখেছি তোমায় কিছু করতে?
“কোথায় দেখলেন, মিথ্যে তো আপনি বলছেন। আমি তো ছিলাম আপনার পিছনে!
“কিন্তু তোমায় অনুভব করেছি আমি বুঝলে তুমি..
চশমিশ চোখ বড় বড় করে বলল, “কি বললেন?
অশান্ত হতবাক হয়ে গেল। একি বলছে সে! চশমিশ চোখের চশমা ঠিক করে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে অশান্ত’র দিকে। অশান্তি কথা ঘুড়িয়ে বলল, “দেখি তোমার হাত!
“ওমা কেন?
“আরে দেখি না!
বলেই তার হাত ধরল। নিঝুম হাতে মোড়ানো কাগজটা ফেলে দিল সাথে সাথে। অশান্ত সেটা বুঝতে পারল না। সে চশমিশের হাতের নখ পরিক্ষা করছে।
“একি করছেন?
“দেখি ওই হাত?
“আপনি জ্যোতিষী করবেন বলে ভেবেছেন নাকি?
“তুমি হাতের নখ বড় রাখো না।
“ছিঃ! বড় বড় নখ কেমন দেখায়। রাক্ষসের মতো!
“ওহ আচ্ছা! তাহলে রাক্ষসের মতো খামচি দাও কিভাবে?
“মানে!
“নখ তো বড় না। তবুও তোমার খামচি এতোটা জোড়ে লাগে কিভাবে?
“দেখবেন!
“মানে?
চশমিশ দ্রুত তার হাত বসিয়ে দিল অশান্ত হাতে। অশান্ত চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। চশমিশ মুখ টিপে হাসছে। অশান্ত দূরে সরে গেল সাথে সাথে। সুযোগ পেয়ে চশমিশ ভেগে গেল। যেতে যেতে বলল, “অশান্ত বোকা!
“এই এই তুমি আমাকে আবার খামচি মারলে!
“দেখুন দেখুন , খামচি টা অনেক সুন্দর! হিহি..
অশান্ত হাতের দিকে তাকাল। আসলেই হাতে নখের দাগ বসে গেছে। কিন্তু কিভাবে! এমেয়ে তো দেখছি সত্যি সত্যি রাক্ষস। অশান্ত হা হয়ে তাকিয়ে রইল শুধু!
#চলবে….