তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼 মিমি_মুসকান #পর্ব_৩২

0
364

#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩২

আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি পড়ছে, বৃষ্টির পানিতে সজীব হয়ে উঠছে সবকিছু। ভার্সিটির কেউ কেউ ভিজছে বৃষ্টিতে , আবার কেউ কেউ ছাতা মাথায় রওনাও হয়েছে। আবার কেউ কেউ দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে। তিথি হা হয়ে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলল, “যা! এখন ফিরব কি করে? আমি তো ছাতাও আনি নি।

নিঝুম বলে উঠল, “চিন্তা করিস না আমি এনেছি, এক ছাতার নিচে দুজন হেঁটে চলে যাবো।

ইফা বলে উঠল, “তোরা চাইলে আমি তোদের লিফট দিতে পারি।

তিথি আর নিঝুম দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল, “না! বৃষ্টির দিনে ছাতা মাথায় করে যাওয়াতে যেই মজা সেটা তোর গাড়িতে পাওয়া যাবে না।

তিথিও নিঝুমের কথায় সায় দিল। ইফা হেসে বলল, “তাহলে আমি গেলাম।
অতঃপর দৌড়ে হেঁটে গাড়ির অবদি পৌঁছাল সে।

নিঝুম পাশ ফিরে তাকাল। তানিশা শান্ত’র‌ হাত চেপে দৌড়ে বৃষ্টিতে নেমে পড়লো। শান্ত বলে উঠল, “আরে এটা কি করছিস?

“কি করছি আবার, বৃষ্টিতে ভিজছি।

“তাহলে আমাকে টানছিস কেন?

“তো একা একা ভিজবো নাকি, চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক তুই!

শান্ত দুই হাত প্যান্টের প্যাকেটে রেখে দাঁড়িয়ে রইল। তানিশা লাফিয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে। কোন মানে হয় এসবের! হঠাৎ তানিশা থেমে গেল। থতমত খেয়ে তাকিয়ে রইল শান্ত’র দিকে। শান্ত বলে উঠল , “কি হলো তোর আবার?

“শশশশশান্ত র*ক্ত!

“কি র*ক্ত!

“তোর গা বেয়ে র*ক্ত ঝড়ছে শান্ত।

“কি বলছিস আবোলতাবোল!

বলেই শান্ত তার শরীরে হাত রাখল। হাতের দিকে তাকিয়ে রইল তার হাত লাল হয়ে গেছে। আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে রইল তানিশার দিকে। বলে উঠল , “এটা কিই?

“তোর কি হয়েছে শান্ত!

আহনাফ , আহিম সবাই দৌড়ে এলো এই মুহুর্তে। আহনাফ অবাক কন্ঠে বলল, “শান্ত! তোর মাথা ফা”টল কি করে?

“আরে কি বলছিস এসব? আমার কিছুই হয় নি।

“তাহলে এসব কি?

“আমি নিজেও বুঝতে পারছি না কিছু।

আহিম ভ্রু কুঁচকে বলল, “এক মিনিট!

অতঃপর সামনে এসে শান্ত’র ঘাড়ে হাত রাখল। রক্তে*র মতো লাল লাল রঙ গুলো তার হাতে লাগল। আহিম হালকা কেশে বলল, “এগুলো র*ক্ত না, রঙ!

উপস্থিত সবাই অবাক। তানিশা এগিয়ে গিয়ে বলল, “দেখি দেখি!

দেখা গেল এগুলো সত্যি সত্যি রঙ। শান্ত চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবার মাঝে নিস্তব্ধতা! হাসবে না চুপ থাকবে কিছুই বুঝতে পারছে না। শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “এটা চশমিসের কাজ!

বলেই পিছন ঘুরল। তাকিয়ে দেখল চশমিসের রিক্সায় উঠছে। কিন্তু তার আগে তার মুখে বিজয়ের হাসি। হাত নাড়িয়ে বিদায় দিচ্ছে তাকে। আবারো মুখ ফুটে বলছে, “বাই বাই অশান্ত!

আফিন মুখ ফস্কে বলে ফেলল, “শেষে নিঝুম তোকে বোকা বানালো শান্ত!

শান্ত রক্ত*বর্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে ফিরল। আফিন সাথে সাথে চুপ হয়ে গেল। হন হন করে হেঁটে চলে গেল শান্ত!

——

আদ্রিয়ান স্যার যেখানে থাকে তিথিকেও সেখানেই পাওয়া যায়। এটা অবশ্য নতুন কিছু না। যে মেয়ে পড়াশোনার কাছে অবদি যায় না, নিঝুম সেই মেয়েকে লাইব্রেরিতে খুঁজে পায়। কারণ সেখানে আদ্রিয়ান স্যার উপস্থিত! এই মেয়ে রীতিমতো স্যারের প্রেমে পাগল হয়ে গেছে। স্যার ছাড়া আর কিছুই মাথায় নেই তার। সবসময় তার গল্প!

কিন্তু আজ সেই মেয়েকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বোঝা মুশকিল, কি হলো আবার! স্যারের ক্লাস অথচ তিথি নেই সেই ক্লাসে এটা হতেই পারে না। নিঝুম আর ইফার কাছে অবাক হবার মতো এর চেয়ে বড় আর কিছুই নেই।

নীলাভ্র ক্যাম্পাসের কাছ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। হঠাৎ দেখল গাছের নিচে টাইসের উপর বসে কে যেন কাঁদছে। নীলাভ্র একবার তার দিকে উঁকি মারল। তিথিও উঁকি মারল। তিথিকে দেখতে পেয়ে নীলাভ্র চুপচাপ হেঁটে চলে গেল। খানিকবাদেই তার পাশে কেউ বসল। তিথির তাতে কিছু যায় আসে না। কে বসল তা দেখার জন্য তার কৌতুহল নেই। তার সমস্ত মন হাতে থাকা কার্ডের উপর। এটা আরিয়ান স্যারের বিয়ের কার্ড। স্যার বিয়ে করছে, তাও অন্য কাউকে! ভাবতেই সে কি কষ্ট তিথির।

হাতের কার্ড টা কেউ নিয়ে নিল। তিথি মুখ ফিরে তাকিয়ে দেখল আহিম। আহিম হেসে বলল, “তাহলে তুমি এই কারণে কাঁদছ? স্যারের বিয়ে তো ভালো খবর, কোথায় গিয়ে মিষ্টি খাইতে চাইবে তা না করে এই করছো।

“এএই আপনি এখানে কি করছেন?

‘কিছুই না। নীলাভ্র বলল, কাঁদতে কাঁদতে কেউ সাগর বানিয়ে ফেলছে তাই তাকে দেখতে এলাম আমি।

“দেখা শেষ তো চলে যান

“চলেই তো যেতাম। কিন্তু এটা বুঝলাম না, স্যারের বিয়ের কার্ড তুমি পেল অথচ আমরা পেলাম না তা কি করে?

তিথি দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে রইল। আহিম বলল, “আচ্ছা থাক না বলতে চাইলে না বলবে। আমি উঠে যাচ্ছি!

উঠে যেতেই তিথি আরো জোরে কাঁদতে লাগল। আহিম পড়ল মহাবিপদে। সে বসে পড়ে তাকে শান্ত করতে লাগল। কিন্তু তিথি থামবার মেয়ে নয়। কোন গতিপথ না পেয়ে ব্যাগ থেকে চকলেট বের করে তিথির হাতে দিয়ে বলল, “থামো প্লিজ!

তিথি কান্না থামিয়ে,”আচ্ছা!

দীর্ঘশ্বাস ফেলল আহিম। কার্ড টা হাতে নিয়ে দেখল গোটা অক্ষরে পাত্রীর নাম লেখা। চমকে গেল সে! আরে এতো তিথির নাম।

“স্যারের বিয়ে তোমার সাথে।

“কে বলেছে আপনাকে?

“এই যে এখানে তোমার নাম লেখা দেখি!

তিথি নাক টানতে টানতে বলল, “ওই তো নামটাই এক কিন্তু মানুষ তো এক না। আমার ফুফাতো বোনের বান্ধবীর সাথে স্যারের বিয়ে। তার নামও তিথি! দেখলেন বিধাতার কি খেলা, নাম তো এক’ই ! পাত্রীটা আমি কি হলো কি হতো?

“কিছুই হতো না, তোমার সাথে স্যারের বিয়েটা হতো।

“ইশ কি ভালোই না হতো!

“এতো বিয়ের শখ তোমার

“আপনি কি বুঝেন বিয়ের মানে

“মানে বুঝে কি হবে, আমার বিয়ে শাদির কোন ইচ্ছা নাই।

“আমার তো আছে, দিন কার্ড দিন।

হাত থেকে কার্ড টা ছুঁ মেরে নিয়ে চলে গেল হন হন করে। এক মেয়ের এই কতো রুপ রে বাবা!

—–

আহনাফ আর শান্ত দু’জনেই শান্ত’র ফ্ল্যাটের ছাদের উপর বসে আছে।‌ আজকের আকাশটা খুব পরিষ্কার। চাঁদ কে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আজ। ছাদের এক কোনে আলো জ্বলছে , আহনাফের হাতে চিপসের প্যাকেট। এক প্যাকেট থেকে চিপস দুজনে খাচ্ছে। এই নিরব সময়ে চিপসের আওয়াজ অমি’র কাছে ভয়ের কারণ বলে মনে হচ্ছে। চিপসের এক একটা শব্দে লাফিয়ে উঠছে সে। মাঝে মাঝে আবার দেওয়ালের এদিক ওদিক শুকছে। তার গলার ঘন্টা টা বাজছে টুং টুং করে!

রাত অতোটাও গভীর না, এই তো ১০.১০ বাজল সবে। আহনাফ চিপস মুখে পুরে বলল, “এভাবে বসে থাকতে ভালো লাগছে না।

“তা আমি কি করবো?

“চল কিছু একটা খেলা যাক!

“ট্রুথ এন্ড ডেয়ার!

“আমাদের মাঝে ট্রুথের কি আছে, এমন কি আছে যা আমি জানি তুই জানিস না।

“তাহলে শুধুই ডেয়ার!

“তাহলে প্রথমে..

শান্ত উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আমি দেবো!

“বল!

“কোন একটা মেয়েকে কল কর এখন!

“আহ এটা তেমন কি ব্যাপার!

“ওয়েট! কথা এখনো শেষ হয় নি। কথাটা শেষ করতে দে। কোন একটা মেয়েকে কল করতে হবে, শুধু কল করলেই হবে না তার সাথে বসে থেকে ১০ মিনিট কথা বলতে হবে।

“আচ্ছা এটা তেমন কি ব্যাপার!

“ওয়েট..

“আরো আছে!

“ইয়েস , আমি জানি তুই এখন দিয়া কিংবা ইফা ওদের কল করবি। কিন্তু সেটা হচ্ছে না।

“তাহলে!

“দেখি তোর ফোন দে।

“আমি নাম্বার চুজ করতে পারব না।

“না, তুই চোখ বন্ধ রাখবি। আমি তোর ফোনের কন্টাক্ট নাম্বার গুলো স্ক্রল করবো। চোখ বন্ধ রেখেই একটা নাম্বার ক্লিক করবি তুই।

“তুই কি আমাকে পাবলিকের মা*র খাওয়াতে চাস , না তাহলে বল আমি এভাবেই গিয়ে খেয়ে আসি।

“আজব , এভাবে বলছিস কতো আজাইরা মেয়ে আছে তোর লিস্টে।

“দে করছি!

শান্ত খুব এক্সাইটেড। সে নাম্বার গুলো স্ক্রল করল। আহনাফ চোখ বন্ধ করেই একটা নাম্বারে ক্লিক করল। কল হচ্ছে, আহনাফ চোখ মেলল। শান্ত মুখ টিপে হাসছে, আহনাফ ভ্রু কুঁচকে আছে। কল রিসিভ হলো, ওপাশ থেকে গলার আওয়াজ ভেসে এলো,

“হ্যালো!

আহনাফ হতচকিয়ে উঠল। তানিশার আওয়াজ এটা। দ্রুত শান্ত’র হাত থেকে ফোনটা নিল সে। তানিশা চুপ হয়ে আছে। তার পুরো শরীর কাঁপছে, আহনাফ এতো রাতে তাকে কেন কল করলো? কিছু কি হলো তার। ফোনের স্ক্রিনে আহনাফের নামটা ভেসে উঠতে দেখে কম অবাক হয় নি সে।

আহনাফ চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে শান্ত”র দিকে। শান্ত ভাব নিয়ে ফোন দেখিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল, “টাইম স্টার্ট নাও!

আহনাফ দম নিল। হালকা কেশে বলল, “হ্যালো!

“হুম আহনাফ! আমি তানিশা..

“আমি জানি।

“তুমি আমায় কল করেছ।

“হ্যাঁ

“কিছু কি হয়েছে?

শান্ত ফোনে কান দিয়ে কিছু শোনার চেষ্টা করল। আহনাফ তাকে সরিয়ে দিয়ে বলল, “কিছু জিজ্ঞেস করার ছিল আমার।

“হুম বল!

“সরি।

“ওহ, কিন্তু তুমি তো এটা বলেছ। আমি চিরকুট পেয়েছি।

“ওহ আমি তো জানতাম না তাই, আচ্ছা সরি এতো রাতে কল করে বিরক্ত করার জন্য।

“ইটস্ ওকে।

“শুভ রাত্রি।

“হুম!

আহনাফ ফোনটা কেটে দিল। তানিশা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। হঠাৎ কেন জানি নিজেকে খুব একা লাগতে শুরু করল তার। দরজায় ওপাশে কেউ আছে। তানিশা বিছানায় সাথে সাথে ঘুমের ভান ধরল। তার বাবা দরজা খুলে মেয়েকে ঘুমন্ত দেখে চলে গেলেন।

“যা মাত্র ১ মিনিট, বাকি ৯ মিনিট কোথাও গেল।

“এটা তানিশা ছিল, অন্য কেউ হলো আধ ঘন্টা কথা বলতেও সমস্যা ছিল না।

“ওহ আচ্ছা!

“পানিশমেন্ট বল।

“সামনে এক মাস তোকে বাসে করে ভার্সিটি আসতে হবে।

“কি, শান্ত তুই জানিস আমি বাসে উঠতে পারি না। ওটা রিক্সা করে দে।

“নো নো নো বাস ফাইনাল। পানিশমেন্ট ইজ পানিশমেন্ট নো চিটিং!

আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। শান্ত’র মুখে বিজয়ের হাসি। সে এবার ছাদের এক কোনে এসে বসল। এই ছাদটায় এখন অবদি গ্লিল দেওয়া হয় নি। এর নতুন নয় তলা সবে হয়েছে, কাজ চলছে এখনো। তাই ছাদের দরজা সবসময় বন্ধ’ই থাকে। আজ শান্ত দাড়োয়ানের থেকে চাবি নিয়ে এখানে আসে। সে পা দুলিয়ে বসে পড়ল। আহনাফ বলল, “দে এবার তোর ফোন!

“আচ্ছা!

“কিন্তু তোকে কথা বলতে বলবো না।

“তাহলে!

“কোন মেয়েকে কল করে এখানে আসতে বলবি।

“ওহ আচ্ছা তারপর!

“তাকে দিয়ে প্রপোজ করাবি!

‘এসব তোর মাথায় কবে থেকে ঘুরতে শুরু করল।

“আমাকে ফাসিয়েছিস, মনে আছে।

শান্ত কিছুক্ষণ ভাবল। অতঃপর ফোনটা বের করে দিল আহনাফের হাতে। শান্ত চোখ বন্ধ করে। আহনাফ নাম্বার স্ক্রল করে এগিয়ে দিল। শান্ত ক্লিক করল। ফোন বাজছে, শান্ত ফোনটা হাতে নিয়ে বলল, “দেখি দেখি কে পড়ল!

আহনাফ মুখ টিপে হেসে বলল, “চশমিস!

“ওহ নো!

আহনাফ জোরে জোরে হাসতে লাগলো এবার।

“ভাই আমি নাম্বার চেঞ্জ করি!

“অসম্ভব!

“ওকে আনা আরো অসম্ভব!

“তো পানিশমেন্ট..

শান্ত ঠোক গিলল। আহনাফের ঠোঁটের কোনে হাসি। কল রিসিভ হলো,

“অশান্ত কি হয়েছে?

শান্ত চুপ! আহনাফ ঠোঁট কামড়ে আছে। নিঝুম আবার বলল, “এই অশান্ত কি হয়েছে? কথা বলবেন না ফোন রেখে দেবো।

“এই চশমিশ সর্বনাশ হয়ে গেছে।

“মানে!

“আআআআমার‌ হাত পু*ড়ে গেছে।

“কককি কি বলছেন এসব। আমাকে কল কেন করেছেন, ডাক্তার কে করুন।

“করেছি ধরছে না আর এদিকে..

শান্ত*র গলার স্বর কাঁপছে ভয়ে আর চশমিশ ভাবছে হয়তো অনেকখানি পু*ড়ে গেছে। চশমিস উত্তেজিত হয়ে গেল। বলে উঠল, “আপনি ঘরে কেন বসে আছেন। ফার্মেসী তে যান।

“আমার হাত খুব জ্বলছে, কিছু বুঝতে পারছি না আমি। বরফে হাত চুবিয়ে রেখেছি।

“ভালো করেছেন। আমি আসছি, আপনি পানি দিতে থাকুন!

বলেই ওপাশ থেকে ফোনটা রেখে দিল। শান্ত অবাক চোখে তাকাল আহনাফের দিকে। আহনাফ নিজেও অবাক। শান্ত উঠে দাঁড়িয়ে এক লাফ দিয়ে বলল, “ওহ আসছে!

“কিভাবে সম্ভব!

“ইয়ো ইয়ো আমি জিতে যাবো এখন!

“ওয়েট, দ্বিতীয় ধাপ এখনো বাকি!

“জিতে যাবো দেখে নিও!

বলেই বাঁকা হাসল শান্ত। এদিকে নিঝুম তড়িঘড়ি করে বের হতে নিয়ে আবারো ঘরে এলো। ঔষধ নিয়ে দরজা অবদি গেল। আবারো গেল হিনার ঘরে। হিনা কে ধরে এনে বলল, দরজা বন্ধ কর, আমি বাইরে যাচ্ছি। আম্মু জিজ্ঞেস করলে বলবি, আমার এক বন্ধুর এক্সিডেন্ট হয়েছে!

“কিন্তু কার?

“এসে বলছি!

বলেই নিঝুম দৌড়। ভাগ্যক্রমে কোনভাবে সিএনজি পেয়ে গেল সে। প্রথমেই কল করলো আহনাফ কে। আহনাফ শান্ত’র দিকে ফোন ঘুড়িয়ে বলল, “আমায় ফোন করছে,দেখ এখন না বলে আমাকেই আসতে।

—–

“হ্যালো!

“আহনাফ!

“হ্যাঁ বলো।

“শান্ত হাত পু*ড়িয়ে ফেলেছ।

“কি কিভাবে?

“জানি না, আমায় ফোন করেছিল। আমি যাচ্ছি আপনিও আসুন তো প্লিজ। কে জানে কতোটুকু পুড়ি*য়ে বসে আছে!

“আচ্ছা আচ্ছা আমি আসছি।

ফোন কেটে দিল। দুজনেই হাসতে লাগলো। আহনাফ বলে উঠল, “মেয়েটাকে খুব হয়রান করছি।

“দোষ তোর।

“ফোন করে কি আমি আসতে বলেছি?

“ডেয়ার কার ছিল?

“মিথ্যে বললে হয়রান কে করছে?

“তুই কেন বললি কোন মেয়ে এখানে আনতে হবে, এখন আমি ওকে গিয়ে বলি। চশমিশ তুমি কি এখন আমাকে প্রপোজ করতে আমার বাসায় আসবে, ও তো নাচতে নাচতে চলে আসবে তাই না

“না বলবি তা কেন? তোকে জ্বালানোর জন্য আসতে

“তাহলে তো উড়ে উড়ে চলে আসতো।

আহনাফ জোরে জোরে হাসতে লাগলো।

—-

নিঝুম তাড়াহুড়ো করে সিএনজি থেকে নামল। রিক্সা দিয়ে আসতে গেলে যেখানে ৬০ টাকা লাগতো সেখানে সিএনজি তার থেকে ১৫০ টাকা নিল। এতো রাতে তর্ক না করেই নিঝুম টাকাটা দিয়ে দিল। এর মাঝে আসতে গিয়েও দাড়োয়ান একগাদা প্রশ্ন করল। নিঝুম এক কথায় শুধু বলল, “আমি অশান্ত’র বন্ধু!

“অশান্ত , মানে শান্ত স্যারের..

“হ্যাঁ হ্যাঁ!

“আচ্ছা যান ম্যাডাম।

নিঝুম চোখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে রইল। কেউ তাকে ম্যাডাম বলেও সম্বোধন করল। ভাবনা বাদ দিয়ে দৌড়ে এসে লিফটে চড়ল। অশান্ত’র ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে কলিং বেল বাজিয়েই যাচ্ছে কিন্তু কেউই খুলছে না। রাগে নিঝুমের মাথা এখন ফেটে যাচ্ছে। সে আবারো কল করলো অশান্ত’র‌ ফোনে!

“হ্যালো!

নিঝুম ঝারি মেরে , “এই কোথায় আপনি? দরজা খুলছেন না কেন?

“তুমি আমায় ঝারি মারছো।

“দরজা খুলুন। বাইরে কেন দাড় করিয়ে রেখেছেন আমায়।

“আমি ছাদে!

“পো*ড়া হাত নিয়ে ছাদে কি করছেন?

“বাতাস খেতে এলাম।

*কি?

“আচ্ছা চশমিশ। আসলে..

“কি আসলে!

“আসলে আমার হাত পুড়ে যায় নি।

“তাহলে আপনি আমায় মিথ্যে বলেছেন।

“মানে তুমি কি একটু ছাদে আসবে।

নিঝুম দ্রুত শ্বাস নিচ্ছে। রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। চেঁচিয়ে বলল,”অশান্ত!

শান্ত কানের কাছ থেকে ফোনটা সরিয়ে বলল, “গেলো আমার কান!

নিঝুম দ্রুত আবার লিফটে উঠল। সেটা ছাদ অবদি এসে ঠেকল না। তার নিচতলায় এসে থামল। নিঝুম শুকনো ঠোক গিলল। এখানে তো সবটা অন্ধকার। ফোনের আলো জ্বালালো সে। কেন এলো সে এখানে মরতে। কি দরকার ছিল আসার। আচ্ছা ওটা অশান্ত তো, নাকি কোন ভূত। অশান্ত’র বেশ ধরে তাকে ডাকছে মা*রার জন্য। হায় হায় এখন কি করবে। চলে যাবে..

ভাবতে ভাবতে লিফট ছেড়ে নামল। হঠাৎ করেই কিসব আওয়াজ এলো কানে। লিফটে না উঠে দৌড়ে সিঁড়ির কাছে গেল। ছুটে এলো ছাদে। আহনাফ অন্ধকারে দাঁড়ানো, নিঝুমের তাকে চোখ পড়ল না। সে সামনে এগিয়ে গেল। ডাকতে লাগল, অশান্ত! অশান্ত আপনি আছেন!

“আমি এখানে চশমিশ!

নিঝুম এগিয়ে গেল। ছাদের একবারে শেষ মাথায় দাঁড়ানো অশান্ত। ভূতের ভয় সরে গেল , রাগ চাপল মাথায়। ধুমধাম করে হেঁটে গিয়ে বলল, “আপনি আমায় মিথ্যে কেন বললেন, জানেন আমি কতো কষ্ট করে দৌড়াদৌড়ি করে এসেছি। সিএনজির লোকটা আমার থেকে ১৫০ টাকা ভাড়া নিল যেখানে রিক্সা দিয়ে আসলে মাত্র ৬০ টাকা লাগতো।

“সরি

“কিসের সরি, কি সরি।
বলেই এগিয়ে গেল। আঙুলে তুলে কথা বলতে নিল। তখনই শান্ত তার হাত ধরে তাকে ঘুড়িয়ে নিল। হাতটা ছেড়ে দিয়ে পুরনায় ধরল। নিঝুম ছাদের একদম শেষ মাথায়। সে খামচে ধরে আছে অশান্ত কে। শান্ত হাসল। নিঝুম বলল, “আপনি কে?

“কে মানে?

“আমাকে মা*রতে চাইছেন কেন? আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি। অশান্তর বেশ ধরে আমাকে মার*ছেন।‌ঘুষ দিয়েছে উনি আপনাকে।

“আবোলতাবোল কি বকছো এসব।

“আপনি কে , অ্যাআ্যাআআ ছেড়ে দিন আমায়, আমি কিছু করি নি।

“এই চশমিশ! ছেড়ে দেবো তোমায

“এই না না এখান থেকে পড়লে আমি ম*রে যাবো

“তোমার শরীর খুঁজে পাওয়া যাবে না

“অশান্ত আপনি খুব খারাপ।

“হ্যাঁ জানি জানি। এখন শোন, আমি যা বলছি তাই বলো তাহলে তোমায়..

“আমাকে ছেড়ে দিবেন।

“হ্যাঁ তবে নিচে না।

“কিন্তু কি বলবো আমি

“আমি যা বলবো তা রিপিট করবে।

“মানে!

“বলো!

“কি

“আমি…

“আ..মি

“শান্ত কে

“অশান্ত কে!

“ভালোবাসি!

“কি

“বলো বলছি

মাথা নাড়িয়ে , ( না না )

“ওকে ঠিক আছে।
বলেই হাত ছেড়ে দিত নিল। নিঝুম শক্ত করে হাত ধরে দ্রুত বলল,
“আমি অশান্ত কে ভালোবাসি!

“জোরে বলো?

“আমি অশান্ত কে ভালোবাসি।

শান্ত হেসে নিঝুম কে সরিয়ে আনল। জোড় গলায় বলল, “আহনাফ বলেছে!

নিঝুম অবাক কন্ঠে বলল, “আহনাফ মানে!

আহনাফ অন্ধকার ছেড়ে বেরিয়ে এলো। মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, “সরি নিঝুম!

নিঝুম চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। অশান্ত মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, “সরি চশমিশ! এটা একটা ডেয়ার ছিল।

“কিহহহহ!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here